ইউরোপের সবচে উঁচু শৃঙ্গটি সুইজারল্যান্ডে। টপ অব ইউরোপ নামেই পরিচিত জাংফ্রো শৃঙ্গ। সেখানে যেতে হয় ইন্টারলেকেন থেকেই(ছবি-3)। আরো দুটি পর্যটকপ্রিয় জায়গায় যাওয়া যায় ইন্টারলেকেন থেকে। পূর্বদিকে হচ্ছে ফার্স্ট; মালভূমি মতন জায়গা, সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডের পাহাড়গুলোর দৃশ্য দেখা যায় সবচে ভালো। একেবারে পশ্চিমদিকে রয়েছে শিল্টহর্ন; ঘুরন্ত রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে। জেমস্ বন্ডের ছবির অভিনয় দিয়েই এই ঘুরন্ত রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন হয়েছিল। সুতরাং টু্যরিস্টদের কাছে শিল্টহর্ন খুবই জনপ্রিয় একটি জায়গা (ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ছবি-2 দেখুন)। আমরা থাকবো মাত্র দু'দিন এখানে। সুতরাং তিনটি জায়গা দেখা সম্ভব নয়। তাছাড়া আবহাওয়া ঠিক ক্যালেন্ডার মেনেই বৈরি চেহারা নিয়ে নিয়েছে। সকালে নাস্তা খেতে খেতে পাহাড়ি জায়গাগুলোর লাইভ ছবি দেখলাম টিভিতে। কুয়াশায় অন্ধকার হয়ে আছে চারদিক। পর্যটকদেরকে নিষেধ করা হচ্ছে আজকে পাহাড়ে না যেতে। বিপুল দামী ট্রেনের টিকেট করে যদি যাইও, দূরের পাহাড় কিছুই দেখতে পাবো না। ঠিক করলাম, সাধারণ ট্রেন যতদূর যায় সে পর্যন্ত যাবো। তারপর যদি আবহাওয়ার উন্নতি হয় তবে পাহাড়ি ট্রেনে চড়ে যাবো টপ অব ইউরোপে। ইন্টারলেকেন থেকে গ্রিন্ডেনওয়ার্ল্ড পর্যন্ত এলাম সাধারণ ট্রেনেই। আসার পথে ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখছিলাম নব্বই ডিগ্রি কৌণিক ভঙ্গিতে সোজা খাড়া হয়ে উঠে যাওয়া পাহাড়। আর সেই শীর্ষ থেকে জলপ্রপাত হয়ে ঝুলছে জলের ধারা। মেঘকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে এত উপর থেকে পানির এই পতনের দৃশ্য সত্যিই অপার্থিব মনে হয় (ছবি-4)। গতিশীল ট্রেনের শিশির মাখা কাঁচের ভেতর দিয়ে খুব ভালো ফ্রেম ধরা যাচ্ছিল না ক্যামেরায় তবু সব দৃশ্যকেই ধরে রাখতে টিপে যাচ্ছিলাম ক্লিক ক্লিক। ট্রেন ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছিল আরো উঁচুতে। পাহাড়ের স্টেশনগুলোতে নামের পাশে লেখা থাকে উচ্চতাও (ছবি-5)। গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের পর সাধারণ ট্রেন আর যায় না। স্টেশন সেখানে এমন উচ্চতায় যে মেঘ এসে প্রায়ই ঢেকে ফেলছিল প্ল্যাটফর্ম। গ্রিন্ডেলওয়াল্ডে ঘন্টাখানেক ঘুরে বেড়ালাম ছাতা হাতে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, অপূর্ব সুন্দর সব শ্যালে আর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করলাম প্রাণভরে (ছবি-6, 7, 8)। আর কবে আসা হবে সুইজারল্যান্ড এরকম আশংকায় আবহাওয়া খারাপ হওয়া সত্ত্বেও চড়ে বসলাম ক্লাইনশেডেগের পাহাড়ি ট্রেনে। সাধারণ ট্রেন থেকে যথেষ্ট ছোট এসব ট্রেনের লাইনের মাঝে আরেকটি খাঁজকাটা পাত থাকে (ছবি-9)। এই খাঁজগুলো ট্রেনটিকে পাহাড়ি পথে নিরাপদ রাখে। ট্রেনের জানালার পাশের ছো্ট্ট টেবিলমত জায়গায় পাহাড়ি এলাকার ম্যাপ দেয়া (ছবি-10)। এতদূর এসেও অন্তত: টপ অব ইউরোপে যেতে পারবো না এই দু:খেই মনটা ভার হয়ে গেল। পাহাড়ি ট্রেন যখন এঁকেবেঁকে রওয়ানা দিলো (ছবি-11), দেখলাম বোকার মত ট্রেনলাইনের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে বোকাসোকা সুইস গরুগুলো (ছবি-12)। সুইস গরুর গলার ঘন্টা খুবই বিখ্যাত (যারা দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে ছবিটা দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই নায়ক-নায়িকার প্রেমচিহ্ন হিসেবে এই ঘন্টার কথা মনে রেখেছেন)। ইউরিয়া ছাড়াই মোটাতাজা গরুগুলোর গলার ঘন্টাধ্বনি শোনা যাচ্ছিল সারাটা পথ জুড়ে। লক্ষ করলাম যখনই মেঘে মেঘে পাহাড় ঢেকে যায় ও গরুগুলো দেখা যায় না তখনই বেশি জোরে জোরে বাজে গলার ঘন্টাগুলো।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন