ভালবাসার বিস্তার ও এলিজি ফর আইরিস

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শুক্র, ২৪/১১/২০০৬ - ৬:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমার এখন সিনেমা দেখার সময় চলছে। বিস্তর সময় হাতে। মাথায় সিনেমা বানানোর পোকা ভন ভন করে। হাতের কাছে যা পাচ্ছি দেখছি। তবে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি এমন বাণিজ্যিক ছবি তালিকা থেকে বাদ। তবে মাহবুব মোর্শেদের তালিকার ছবিগুলো হাতের নাগালে আসেনি। আগে সমসাময়িক ছবিগুলো দেখতে চাই। পুরনোগুলো দেখার সময় সবসময়ই থাকছে। আজ দুপুরে দেখলাম আইরিস। ক্যাম্ব্রিজের দর্শনের অধ্যাপক ও উপন্যাসিক আইরিস মারডককে (1919-1999) নিয়ে ছবি। আইরিস মারা যাওয়ার পর তার স্বামী ইংলিশের অধ্যাপক জন বেইলির লেখা স্মৃতিকথা 'এলিজি ফর আইরিস' অবলম্বনে বানানো হয়েছে ছবিটি। আইরিস নিজে লেখক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তার উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র হয়েছে। তিনি বুকার প্রাইজ পেয়েছেন। সুতরাং জন বেইলির স্মৃতিকথা যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল ও অনেক প্রশংসা পেয়েছে। অসম্ভব ভালবাসতেন বেইলি তার স্ত্রী আইরিসকে। ছায়ার মত অনুসরণ করতেন স্ত্রীকে। কিন্তু তা নিজের স্বামীত্ব খাটিয়ে স্ত্রীর স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য নয়। সে কারণেই স্ত্রীর সাথে তার বেশ কিছু পুরুষ-বন্ধুর শরীর-ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জেনেও জন তাকে ছেড়ে যান না। বরং ব্যক্তি ও সৃষ্টিশীল আইরিসকে নিবিড় ভালবাসা দিয়ে ঘিরে রাখেন। ভালবাসার পরিধি যে কত বড় হতে পারে, কি প্রকান্ড হতে পারে এর বিসত্দার তার ছোঁয়া পাওয়া যায় জনের লেখায় আর ছবিটিতে। লাবণ্যের জন্য শোভনলালের ভালবাসা স্বীকৃতি পায় বিয়েতে, তেমনি জন যদিও আইরিসের অন্য বন্ধুদের তুলনায় একটু কম আকর্ষণীয় তবু তার জীবনসঙ্গী হয়ে যান। তারপর পুরোটা জীবন, অলজিমার্স রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পর্যন্ত জন আগলে রাখেন আইরিসকে। তাদের এই গভীর ভালবাসার ছবি আইরিস। জনের চরিত্রে জিম ব্রডবেন্ট তুখোড় অভিনয় করেছেন। এ কারণে সেরা পাশর্্ব-অভিনেতার অস্কার বা এ্যাকাডেমি পুরষ্কার পান তিনি। তবে চলচ্চিত্রকার হিসেবে রিচার্ড আইরকে তেমন বাহবা আমি দিতে পারছি না। মূলত: থিয়েটারের পরিচালক হওয়াতে তার মধ্যে চলচ্চিত্রের ভাষা বা ক্যামেরার ভাষা প্রয়োগের চেষ্টা কম। গল্প বলা, চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলা ও অভিনেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে চরিত্রানুগ অভিনয় আদায় করার মধ্যেই তারা পুরো মনোযোগ ঢেলে দেন; বেশিরভাগ থিয়েটার পরিচালক যারা চলচ্চিত্র বানাতে আসেন তাদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায়। তারপরও ছবিতে কিছু দৃশ্য ছিলো যা ফিল্মিক। মৃতু্যর ঠিক আগে নার্সিং সেন্টারে থাকতে গিয়ে করিডোরের আলো-আঁধারে যে দৃশ্যে আইরিস মসত্দিষ্কবিকৃত মানুষের মত নাচের ভঙিমায় দোলে; সেটি খুব মনকাড়া হয়েছে। ধীরে ধীরে অলজিমার্সের কারণে শব্দ ভুলে যাওয়ার দৃশ্যগুলো খুব ফিল্মিক হয়েছে। তবে দৃশ্য বা সিনেমাটোগ্রাফির চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে চরিত্রানুগ অভিনয়। জিম ব্রডবেন্টের ইমপ্রোভাইজেশন, যেসব দৃশ্যে সে সংলাপগুলো নিজের মত করে বলে। শেষ বিচারে প্রায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক জন ন্যাশের জীবনিভিত্তিক চলচ্চিত্র 'বিউটিফূল মাইন্ড'-কে আমি আমার প্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় আইরিসের চেয়ে অনেক উঁচুর দিকে রাখবো। আইরিসকে আমি ওতোটা উঁচুতে জায়গা দিতে পারি না।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।