বইমেলায় প্রথম দিন ঢুকেই দেখি ভাষা শহীদদের ভাস্কর্যের নীচে জটলা। বাংলা ভিশন সরাসরি সমপ্রচার করছে। লেখক, প্রকাশক, পাঠকদের সাথে কথা বলছেন আলী ইমাম আর দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন নতুন বইয়ের। ইমামভাইকে দেখেই দাঁড়ালাম। অনুষ্ঠান শেষে আমাকে দেখে, অনেক বছর পর, তিনি উচ্ছসিত হয়ে উঠলেন। পরিচয় করিয়ে দিলাম আমার বউ রেহনুমার সাথে। ঠিক তখনি দেখি নাসরীন জাহান একটি চশমা-পরা মিস্টিমুখের বিদেশি বিদেশি দেখতে মেয়েকে নিয়ে হাজির। ইমাম ভাইকে বললেন এই কবির কবিতার বইটা প্রচার করতে টিভিতে। ইমামভাই বললেন, আমার অনুষ্ঠান তো শেষ হয়ে গেছে, মিলনকে ধরো। ইমদাদুল হক মিলন বইমেলার অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন চ্যানেল আইতে। নাসরীন জাহান ওদিকে ছুটলেন কবিকে নিয়ে। আমি রেহনুমাকে বললাম, নতুন কবিকে চিনেছো? মেঘ! সামহোয়ার ইন বস্নগের মেঘ। আফসানা কিশোয়ার। রেহনুমা কথা বলতে আগ্রহী। তারপর ঠিক হলো ওদের ব্যস্ততা কমলে কথা বলবো।
তারপর স্টুডেন্ট ওয়েজ। সৈয়দ মুজতবা আলীর আট খন্ড কিনলাম। আগামী থেকে কিনলাম, মাসুদা ভাট্টির তরবারির ছায়াতলে আর বাংলাস্তান। রেহনুমা কিনলো পাঠক সমাবেশ থেকে আরজ আলী মাতুব্বরের তিন খন্ড। এত ভারী ভারী খন্ড লন্ডন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটছি আমরা। তখন আবার পাওয়া গেলো বর্ধমান হাউজের নীচে নাসরীন জাহান ও আফসানা কিশোয়ারকে। রেহনুমা কথা শুরু করলো। তারপর কবির সাথে স্বল্পক্ষণের আলাপ। ফোন নাম্বার বিনিময়। যদিও বাংলাদেশে থাকতে ফোন করা হয়নি বা আর দেখাও হয়নি। তবে অন্যপ্রকাশ থেকে আফসানা কিশোয়ারের কমাযুক্ত শিরোনামের কবিতার বই 'পাল্টায় নারী, বাহারি' কিনেছি। সেখান থেকে আপনাদের জন্য একটি কবিতা:
মেয়েলি আড্ডার আড়ালে
বালিকারা (ভূতপূর্ব) কল্লোলে রোমন্থন করে মেয়েবেলা,
আছে হাসি, বোধের আদান-প্রদান, থাকে রূপের বিশ্লেষণ,
বরের স্বভাবচরিত বিষয়ক টুকরো শব্দের ফুলঝুরি,
সন্তানের প্রতি ভালোবাসার ফল্গুধারার অপার প্রকাশ;
বালিকারা সব বলে, বলে না কেবল আপন মনের
অতল খবর, তাদের সম্মিলিত আড্ডায় স-ও-ব থাকে,
থাকে না শুধু একে অন্যের অনুভব ছোঁবার
সেই কৈশোরিক সবুজ শপথ। তাই আড্ডার শুরু
থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত তারা রয়ে যায় সেই একা,
তাদের কপালে নারী কিংবা মহিলা হবার পথে
পা বাড়ানোর চিরন্তন বলিরেখা, শেষ পর্যন্ত
বালিকারা 'নারীত্বে' বড় বেশি- বেশি একা।
(আফসানা কিশোয়ার)
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন