স্খলিত আপেলের জন্য আশংকা-২

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৫/২০০৭ - ১১:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


জানালার ফাঁক গলে দেখা ঘাসের পাপোষে লেপ্টানো রৌদ্রের উজ্জ্বলতা যতটা মনে ধরেছিল রাস্তায় বের হয়ে আসার পর তা আর স্থায়ী হয়না বরং ফুটপাত থেকে ঠিকরে আসা আলোর গনগনে উষ্ণতাকে কষে থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে করে আজাদের তারচে‘ সকালের মিঁউ মিঁউ বেড়ালছানার মত উম উম নরোম আলোটাকে সহানুভূতিমাখা বলে মনে হয় ওর হয়তোবা ওর পাংচারড্ মনের আকুল অবস্থার সাথে খাপ খায় বলেই। গলায় আটকানো কাঁটার মতো মনপিন্ডের ভেতরে খচ খচ করে খোঁচাচ্ছে মিথ্যাটা এখন, কেন যে হঠাত্ করে নিজের এথনিক পরিচয়টা গোপন করলো আজাদ নার্সটার কাছে নিজেই তার হদিস পায় না। হতে পারে পিতা হিসেবে আরো বেশি সংখ্যক রমণী, বিচিত্র জাতির ও বর্ণের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার, উপযোগিতার সম্ভাবনাকে আরো প্রশস্থ করার একটা লোভী আকাঙ্খা কাজ করছিলো মনে সেইসাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিলো যার সুযোগ নিয়ে নার্সটাকে তথ্য দিয়ে এসেছে জাতিগতভাবে সে স্পেনিশ। ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের যেকোনো দেশের নামই জলপাই-বাদামী রংয়ের ত্বকের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মনে হতো না কিন্তু নামের সাথে হাসান দেখে কেন জানি নার্সটাই তাকে স্পেনিশ বলেই অনুমান করলো আর আজাদও নিজের বংশ পরম্পরার এক বিপুল সম্ভাবনা মুহুর্তের মধ্যে আঁচ করে ফেলে ফরমের জাতিসত্ত্বার কলামে স্পেনিশ শব্দটা যোগ করার পক্ষে নিজের মত দিয়ে দিলো। কথাগুলো মনের ভেতর কিছুক্ষণ গরম কড়াইয়ে শিমবীচি ভাজার মত নাড়াচাড়া করার পর এখন আর অসত্য তথ্যটাকে ততটা অনৈতিক মনে হচ্ছে না আজাদের বরং এই সামান্য তথ্যের কাট-পেস্টের কারণে অমিত সম্ভাবনার দরোজা খুলে যাচ্ছে ভেবে নিজেরই পিঠ নিজে চাপড়ে দেয়ার প্রবল ইচ্ছা হয় তার।

ঘরে পৌঁছে বিয়ারের ক্যান খুলে রকিং চেয়ারে আধশোয়া ঝুলে পড়ে আজাদের আবার মনে পড়ে আজ শনিবার, একমাস আগেও এই দিনটির ভিন্ন এক মানে ছিল তার জীবনে। দু‘জনের সপ্তাহের ইঁদুর দৌড়ের পাঁচটি দিনের পর শনিবার তাদের একান্ত গোপন রুটিনে তারাচিহ্ন দেয়া বার ছিলো শারীরিক উত্সবে মাতবার যখন দুজনের মোবাইল বন্ধ থাকতো আর ল্যান্ড লাইনের ফোনের শব্দটাকে তারা ধরে নিতো পাশের বাসার নষ্ট হয়ে যাওয়া কলিংবেল। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণেই কিনা আজ আজাদের মনে হয় শরীরের মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশের তাদের এই চিরচেনা সাপ্তাহিক খেলাটি আসলে ততোটা শরীর-উদ্র্ধ হয়ে উঠেনি কখনও বরং সপ্তাহ ভরে জমে ওঠা শরীর-মনের ক্লেদেরই এক যজ্ঞ ছিলো। নতুবা চার বছরতো একাত্ম হওয়ার জন্য স্বল্প সময় নয় তবু কেন অকস্মাত্ এই তাবত্ রোমকূপের শিহরণ ওঠা ভালবাসা তাজা থাকতেও নুপুর কর্পোরেট আলোচনার সহজ ভঙ্গিমায় বলে ফেলতে পারলো, আসি। যেন খোলস খুলে চলে যাচ্ছে সাপ নতুন ঋতুর ডাকে তেমনি অতীতটা অতি বিশিষ্ট আবর্জনার মত করে গোলাপী রিসাইক্লিং-এর ব্যাগে ভরে বাসার গেটের বাইরে মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ির জন্য জমা রেখে ভিন্ন রাস্তার দিকে বাঁক নিয়ে চলে গেছে নুপুর। এই শনিবার সকালবেলা আজাদের মত দেহজ উত্সবের অতীত স্মৃতি তারও মনে পড়ছে কিনা সেকথা আজাদের জানবার কোনো উপায় নেই তবে গত সপ্তাহেই আজাদ স্বপ্নঘোরে ওহি পাওয়ার মত এই অদ্ভুত পদ্ধতিটি পেয়ে যায়, শনিবার সকালবেলা-নুপুর ও তার সম্পর্কের টানাপোড়েনকে একটা পরাবাস্তব রূপ দেয়ার।

গতসপ্তাহের মতই ছুটির দিনের পত্রিকাটির পাতাগুলো উল্টাতে থাকে আজাদ আজ আবার যদি অন্য কোনো ক্লিনিকের ঠিকানা মেলে এবং সেইসাথে আরো একটি শনিবার সকালে নতুন এক সম্প্রদানের সুযোগ তৈরি হয় আজাদের এই আশায়। পৃথিবীর স্বাভাবিক প্রকৃতিতে কোথাও একটা বড় গন্ডগোল ঘটেছে এমন ভাবনাকে খুব বেশি ধর্মচিন্তা থেকে উদ্ভূত পাপী-মনের মানুষের আত্ম-বিশ্বসের অভাববোধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভাবলেও আজাদের মনেও এখন সন্দেহ দোলা দিতে থাকে যে সেরকমই দিকেই বোধহয় এগুচ্ছে ভূ-গোলক। প্রায় বিনাচেষ্টাতেই ক্লাসিফায়েড সেকশনের শুরুতেই পেয়ে যায় এরকম আরো কয়েকটি ক্লিনিকের ঠিকানা এবং বেছে বেছে শহরের অন্যপ্রান্তের একটি ক্লিনিক ঠিক করে বিজ্ঞাপনটা পড়তে শুরু করে সে:

Bright, healthy, active men needed for a serious purpose of helping infertile couples. Generous expenses paid per sample of sperm donated.


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।