ইংলিশ গ্রাম দেখতে হলে লোকে ডেভন যায়। ডেভন ইংল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিম দিকের কাউন্টি। খোদ লন্ডন শহরই ইংল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত। ডেভন আরেকটু দক্ষিণে বলা ভালো দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের এলাকা। লন্ডন থেকে ডেভন পেরিয়ে তারপর যেতে হয় কর্নওয়াল। একেবারে শেষমাথা এই দেশ-দ্বীপের। শেষমাথায় `ল্যান্ডস্ এন্ড` বলে একটা জায়গাও আছে। কর্নওয়াল বিখ্যাত তার উপকূল-অঞ্চলের জন্য। বিবিসির কোস্ট অনুষ্ঠান দেখলে ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ডের উপকূল দেখার জন্য আকুল হবে যেকেউ। অনেকদিন ঘুরাঘুরি হয় না বলে এবার আমরা কর্নওয়ালই বেছে নিলাম।আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গ্রাম ও উপকূল দুটোই দেখা।
থাকার কটেজটা একটা গন্ডগ্রামেই নেয়া হয়েছিল। গ্রামের নাম `উইক সেন্ট মেরি`। গ্রাম মানে একেবারেই গ্রাম। দোকান আছে মোটে একটা, সেটা আবার পোস্টঅফিস। আলু-রুটি যা কিছু কিনতে হয় তা কিনতে হবে এই পোস্টঅফিস থেকে। ছুটির দিন রোববার সেটা খোলা থাকে ১২টা পর্যন্ত। আমরা পৌঁছেছি শনিবার রাত ৩টায়। ঘুম থেকে উঠতে উঠতেই ১১টা। সকালের নাস্তার জন্য চা আর কফি তাই ধার নিতে হলো আমাদের কটেজলেডি গেইনর-এর কাছ থেকে। পাশের কটেজে বিরাট এক পাহাড়ি কুকুরসহ এসে উঠেছে এক মাতৃপ্রধান পরিবার। মা ও দুই কিশোর-কিশোরী। গেইনরের মিস্টি চেহারার কুকুরিটা সেই পাহাড়ি কুকুরকে আগের রাতে দেখেই প্রেমে পড়েছে। সকালে ছাড়া পেয়েই তারস্বরে দরজায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে তার প্রেমভাব জানান দিচ্ছে। তবে ভুলে কুকুরিটা বেছে নিয়েছে আমাদের কটেজের দরোজা। কুকুরির প্রেমের চিতকারে আতংকিত হয়ে আমাদের দলের সদস্যরা যারা তখনও ঘুমিয়েছিল তারা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো। দক্ষিণ-এশিয়ার লোকজনের কুকুর-ভীতি মারাত্মক। আমাদের দুর্ভোগ দেখে গেইনর বাধ্য হলো তার কুকুরকে ঘরে বন্দী করতে। রাতে অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে কটেজে ঢুকেছি। দিনের আলোয় কটেজটাকে বাইরে থেকে দেখলাম। গাছ লতাপাতায় ঘেরা পাহাড়ের দিকে মুখ করা ঝুলবারান্দার শান্তি-শান্তি কটেজ।
ভেতরে আয়োজনও মন্দ না। তিনটা বেডরুমে মোটমাট ৬ জনের থাকার ব্যবস্থা নিচতলায়। আর কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই এক বিশাল লিভিংরুম, গোছানো রান্নাঘর ও ডাইনিংস্পেস। ঘুমানোর সুবিধা মাথায় রেখে কেনা বিরাট নরোম সোফা, ঘরের কোণায় বিশাল প্লাজমা টিভি। কটেজের উঁচু চাল আর কাঠের ফ্রেম মিলে লিভিংরুমটা আমাদের সাথে সাথেই মনে ধরে গেল। এখানেই বিছানা পাতা যায় কিনা তা নিয়ে রাতে প্রথমেই কিছুক্ষণ জল্পনা-কল্পনা চলেছে। লিভিংরুমের সাথে ঝুলবারান্দা, সেখানে পা রাখলে দেখা যায় বাড়ির কাঁটাতারের বেড়া ছাড়িয়ে উঁচু নিচু সবুজ প্রান্তর। ফার্মের মোটাতাজা গরুগুলো নির্বিঘ্নে ঘাস চিবোচ্ছে। দূরে পাহাড়ের উঁচু নিচু ভাঁজের খেলা। বাগানের এক কোণায় দেখলাম বসার বেঞ্চ/টেবিলে বাহারি পাতা পরে জায়গাটাকে আরেকটু বুনো আরেকটু প্রাকৃতিক করে রেখেছে।
আগেরদিন সন্ধ্যা থেকে একটু একটু বৃষ্টি পড়ছে। ছবি তুলে রাখবার মত যুতসই না আকাশটা। নাস্তার জটিলতার সমাধান হয়ে গেলো। লন্ডন থেকে নিয়ে আসা গরুর ভুনা আর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিশাল ও পাতলা চাপাতি দিয়ে পেট ঠেসে ভরে আমরা বেরুলাম কাছের বড় শহরের উদ্দেশ্যে। গ্রামের রাস্তায়ও দেখি নানা রকমের সাইনপোস্ট দেয়া।
স্যাটন্যাভের যান্ত্রিক মন্ত্রণায় রাতভর জঙ্গলের চিপাগলি দিয়ে ঘুরে ঘুরে আসতে গিয়ে গাড়ির তেল শেষ। যাত্রার শেষদিকে জঙ্গলের মাঝে এটা একটা বিরাট আতংক হয়ে দেখা দিয়েছিল। সবাই গল্প-গান থামিয়ে চোখ আটকে রেখেছিল তেলের কাঁটায়। সে আতংক দিনের আলোয়ও যায়নি। কারণ গন্ডগ্রামের আশে-পাশে কোনো ফিলিং-স্টেশন নাই। গেইনর অবশ্য আশা দিলো বিপদে পড়লে ওকে ফোন দিতে। সে তখন জ্যারিকেনে করে পেট্রোল এনে দেবে।
কাছের বড় শহর `বিউড` প্রায় ছ' মাইল দূরে। যাওয়ার পথে প্রথমেই যে ফিলিং-স্টেশন চোখে পড়লো তাতেই পেট্রোল ভরে আমরা নিশ্চিন্ত হলাম আগে। সুপারস্টোর মরিসন বন্ধ হয়ে যাবে চারটার আগেই। সুতরাং পরের কয়েকদিনের খাবার কেনার জন্য ছুটলাম সেখানে। আশা ছিল কেনাকাটা করতে করতে আকাশটা আলো দেয়া শুরু করবে। সেরকম কিছুই ঘটলো না। গাড়ি ও নিজেদের খাবার মওজুত হওয়ার পর রওয়ানা দিলাম উপকূলের উদ্দেশ্যে। গতকাল রাতের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার জন্য স্যাটন্যাভ-টা খুলে রেখে ম্যাপ নিয়ে বসলাম। কাছেই উপকূল ওয়াইড-মাউথ বে, ক্র্যাকিংটন হ্যাভেন। প্রথমে সেখানেই গিয়ে থামলাম আমরা।
মন্তব্য
ম্যাপের ছবিটা কর্নওয়াল কাউন্টির ওয়েবসাইট থেকে নেয়া। বাকীগুলো আমার ক্যামেরার।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
দক্ষিনে কেবল কেন্টারবারি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া হয়নাই এখনো ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ল্যান্ড'স এন্ডে গিয়েছিলাম একবার। গত রোজায় আমার এক ভাগ্নে ছিল নিউ কোয়ের পাশে ছোট্ট এক শহরে। দেখতে গিয়েছিলাম সেখানে। তারপর তার সাথে মাটির শেষ সীমানায়।
খাড়াইয়ের ওপর আছড়ে পড়া বিশাল সেই ঢেউয়ের স্মৃতি এখনো ভূলতে পারিনি।
@ফরিদ
এ লেখাটা কদিন আগে পোস্ট করে আবার ডিলিট করেছিলেন মনে হয়? সেই লেখায় মন্তব্য দিয়ে বোতামে চাপ দিয়েছি, বলে পোস্ট নাই
লেখা কিন্তু চমৎকার হয়েছে! ছবি গুলোও!
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ছবি দেখে বেহেশত বেহেশত লাগতেছে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ইশ! কী শান্তিময় জায়গা!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ছবিগুলি অসাধারণ। বিশেষ করে কটেজের সামনের রাস্তা আর ঐ ঝরাপাতার আমন্ত্রণ। গাংচিলেদের ছবিটিও। আরো ছবি এবং লেখার অপেক্ষায় রইলাম...
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই .....
হুমম, পরের পর্ব। ছবিগুলোর সাইজ ছোট করার কথা ভাবলেই লেখার ইচ্ছা কর্পুর হয়ে যায়।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
অবশেষে SMC-র দেখা পাওয়া গেল। আরেকটু হলে তো SMC-হীনা সচলায়তন বিবস্ত্র হয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গেছিল!! (রেফঃ জ্বীনের বাদশার পোস্ট)
রেফারেন্সের লিংক লাগবে।
এরকম কিছু পেলাম না। গুজব নাকি?
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন