আকাশটা থমথমে হলেও বৃষ্টি থেমেছে। `বিউড` থেকে `ক্র্যাকিংটন হাভেন` মাইল তিনেক দূরে। পৌঁছাতে সময় লাগলো না। ছোট রাস্তার পাশে দু/তিনটা গাড়ির পার্কিংয়ের জন্য জায়গা করা।
রাস্তা ঘেঁষেই মহাসাগর আটলান্টিকের শুরু। জলের সীমানা ঘেঁষেই সোজা উঠে গেছে পাহাড়। ঢেউয়ের দাপট আর বাতাসের ধাক্কায় পাহাড়গুলো নানা কায়দায় ক্ষয়ে যাচ্ছে। আর তাতে নানা টুকরো টুকরো পাহাড়ি ভাষ্কর্য তৈরি হয়েছে উপকূল জুড়ে। নিচে পড়ে যাওয়ার ভয়। তাই ঠিক ঝুলে থাকা পাথরের কিনারায় গিয়ে ছবি তোলা যাচ্ছে না। অথচ স্থানীয় এক লোক দেখলাম তার ডালমেশিয়ান কুকুরটাকে নিয়ে বিনাক্লেশে পাহাড় বেয়ে উঠে এলো উপরে।
সমুদ্র থেকে অনেক উপরে পাহাড়ে ভেজা ঘাসে দাঁড়িয়ে অনেক নিচে হালকা একটু বালুর তটের দিকে এরকম তাকিয়ে থাকাটা নিজেদের কাছেই বোকামি লাগছিল।সুতরাং ম্যাপ দেখে কাছেরই আরেকটা জায়গা ওয়াইড মাউথ বে`র দিকে রওয়ানা দিলাম। সেখানে সৈকতটা পায়ের নাগালেই থাকবে, এই আশায়।
নামে যতই চওড়া ভাব আনা হোক না কেন, কক্সবাজার দেখা চোখে পৃথিবীর কোনো সৈকতই প্রশস্থ মনে হয় না। তারপরও ওয়াইড মাউথ বে`র দুই মাথায় দুইটা আলাদা কারপার্ক। বড় বড় ঢেউ আসছে সৈকতে। এই ঠান্ডায় ও ধুসর মেঘলা আকাশের নিচেও কয়েকজন সার্ফিং করছে।তবে সাঁতরাতে দেখলাম না কাউকে। সার্ফিংয়ের জন্য নিরাপদ থাকলেও অনেক সৈকতকে সাঁতারের জন্য নিরাপদ মনে করা হয় না। আমরা সৈকতে হাঁটাহাঁটি করতে পারলেই খুশি।
প্রচুর বিশালাকৃতির পাথর পড়ে আছে সৈকতে। সেসব পাথরের গায়ে তাজা সবুজ শৈবাল থেকে শুরু করে আটকে শামুক-ঝিনুক। সমতল নয় সৈকতটা। তাই অনেক জায়গায় পানিও জমে আছে। বেশি দূর দৃষ্টি যায় না। একেবারে ধূসর হয়ে আছে আকাশ। সমুদ্রের দিকে তাকালেও ধূসরতার ফোরগ্রাউন্ডে ঢেউ ভেঙ্গে পড়ার সাদা ফেনা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সব সৈকতের চরিত্র একরকম হয় না। নিজস্ব আলাদা চরিত্রের সৈকত আমার ভালোই লাগে। বিক্ষিপ্ত হাঁটাহাঁটি করলাম কিছুক্ষণ আমরা।
বালি, পাথরের সাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের খেলা দেখলাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। যখন মনে হলো যথেষ্ট হয়েছে, তখন আবার ছুটলাম নতুন দৃশ্যের খোঁজে। নানারকম দৃশ্য দিয়ে মনকে চাঙ্গা করে তুলতে হবে।
সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। বসক্যাসেলে যাওয়ার ক্ষীণ ইচ্ছা আমাদের। সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য কি ক্যাসেল দেখা হবে নাকি আবার নামবো সমুদ্রের পাড়ে এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি বসক্যাসেলের ওয়েলকাম সাইনবোর্ড। খুবই সরু রাস্তা। রাস্তার পাশে গাড়ি থামাতে গেলে যানজট সৃষ্টি হবে। যদিও রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই। তবু গাড়ি থামানোর জায়গা খুঁজতে খুঁজতেই পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠে গেলাম একদম পাহাড়ের চূড়ায়। পাহাড়ের নীচে বসক্যাসেলের ছোট্ট শহর।
উপর থেকে শহরের দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথে মনে পড়লো বসক্যাসেলের সাম্প্রতিক মিডিয়াখ্যাতির কথা। উঁচু উঁচু পাহাড়ের ঠিক পাদদেশে যেখান দিয়ে নদীর মত জলের ধারা বয়ে যাওয়ার কথা সেখানেই গড়ে উঠেছে এই শহর। কয়েক মাস আগে একটানা কয়েক ঘন্টা বৃষ্টিতে যখন পাহাড় ঝেঁপে পানি নেমে আসলো তখন শহরের একমাত্র রাস্তাটা হয়ে গেল নদী।
সব গাড়িগুলো গেল ভেসে। বেশিরভাগ বাড়ি কয়েকঘন্টা ডুবে থাকলো জলের নিচে। সে ছবি টিভি চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। ফ্ল্যাশ ফ্লাডিং নিয়ে সেই সুযোগে আতংক ছড়িয়েছে মিডিয়াগুলো। তখনও মনে হয়েছে, পাহাড়ের চূঁড়ায় উঠে নিচের ছোট্ট বসক্যাসেল শহরকে দেখে আবারো মনে হলো ফ্লাডজোনে শহর বানালে বন্যা না হয়ে উপায় কি। পার্কিং খুঁজতে খুঁজতে শহর লাগোয়া পাহাড়ের চূঁড়ায় উঠে গেছি প্যাঁচানো রাস্তা দিয়ে। এখন আর নিচে নামার সাহস হলো না। আমরা এগিয়ে গেলাম সামনের শহরের দিকে। সেখান থেকে হাইওয়ে ধরে কটেজে ফিরবো।
পাহাড় আর সৈকতের পাশে সুন্দর ছোট ছোট শহর। হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয় বন্দর সুবিধার কারণে শহরগুলো তৈরি। পাথুরে এলাকা। পাথরের টুকরা দিয়েই বানানো বাড়িঘর এমনকি দেয়াল।
এখন পর্যটকের সংখ্যা কম। রাস্তায় গাড়িও খুব কম। সাইকেলে চড়ে অনেক পর্যটক ঘুরে বেড়ায় কর্নওয়াল। সেরকম একটা দলের সাথে দেখা রাস্তায়।
দিনের আলো কমে যাচ্ছে। ফিরে যাবো কটেজে। তবু বিখ্যাত টিনটাজেল শহরটাকে একটু বুড়ি-ছোঁয়া দিয়ে গেলাম। সমুদ্রের ধারে সুন্দর সাজানো বাড়ি ঘর।
কিংবদন্তির রাজা আর্থারের ক্যাসেলে যাবো কাল। আজ চোখে পড়লো ক্যাসেল-হোটেলটা।
হোটেলের বাইরে রাখা বেঞ্চে বসলে পাহাড় আর জলের এক অনিন্দ্যসুন্দর ক্যানভাস দেখা যায়।
সেখান থেকে কম আলোতে আবছা আবছা দেখা যায় আর্থারের ক্যাসেলের ভগ্নাবশেষ।
মন্তব্য
ভাইজান ভালোইতো ঘুরান দিলেন। জায়গাটা জোশ, আপনার তোলা কিছু ছবিও দারুন হয়েছে। ও ভালো কথা লোকাল ড্রিংসের খোঁজতো দিলেন না? কিছু কি এনেছেন?......সরি ভাই আমার ভ্রমন কাহিনী পড়লেই জিবটা সুরসুরি দেই......মনে হয় ভ্রমনের সাথে পানীয় আর ফুডটা অনেক গুরুত্বপূর্ন......যাইহোক......আরো ভ্রমন কাহিনীর আশায় থাকলাম...নিজের ট্রিপে কাজ দিবে আশা করি।
গ্লোবালাইজেশনের যুগে লোকালেরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
পরের পর্বে দেখি একটা কাহিনী বলার চেষ্টা করবো।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সুন্দর ছবি শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ। নিজে অনেক ঘোরাঘুরির মাঝে থাকলেও ওখানে যাওয়া হয়নি।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমাদেরকে কিছু ঘুরাঘুরির খবরাখবর দিন। আপনার সাথেই গল্পে গল্পেই না হয় ঘুরলাম।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আহা...আমি যদি যেতে পারতাম/
ধন্যবাদ
_____________________________
টুইটার
যেতে তো পারেনই। ঠিক এখানে না পারলেও অন্য কোথাও। নতুন জায়গায়। আগে না দেখা জায়গায়।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ছবিগুলো দারুণ। অবশ্য আকারে ছোট হওয়ায় একটা অপূর্ণতা থেকে যায়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার ছবিতো বড় ছিলো। কিন্তু সচলায়তনে ততো বড় ছবি দেয়া যায় না। নিজেই ছোট করতে হলো বসে বসে। আরো অনেক ছবি আছে। ফেইসবুক বা ফ্লিকারে দেব পরে।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন