১
বাসার কাছের মসজিদে প্রথম জামাত আটটায়। ক'দিন ধরে বেশ ঠাণ্ডা পড়ছে এখানে, আজ সকালে উঠে দেখি টিপটিপ বৃষ্টি আর কনকনে বাতাস। ধীরেসুস্থে রেডি হয়ে তাই দশটার জামাতেই গেলাম। গত এক বছর ধরে ইতালিতে ছিলাম আর দুইমাস হলো আছি জার্মানিতে; একটা ব্যাপার বেশ চোখে পড়ে - জার্মানির লোকজন অনেক বেশি বর্ণ সচেতন। বলছিনা যে রেসিস্ট বা সিরিয়াস কিছু, কিন্তু রাস্তায় বা রেস্টুরেন্টে বা ক্লাসে লোকজনের "কিভাবে যেন' তাকানোটা বেশ ফিল করা যায়। ইতালিতে এইটা ছিলো প্রায় জিরো পার্সেন্ট, এখানে অনেক বেশি। আজকে সকালে পাঞ্জাবি পড়ে মসজিদে যাবার সময়ও দেখলাম অনেকের অবাক দৃষ্টি। অবাক হওয়াটা অস্বাভাবিক না, কিন্তু পুরো ভঙ্গিটাই যেন কেমন ঋণাত্নক মনে হয় আমার কাছে।
বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদগুলাও কেমন নিরানন্দ হয়ে যায়। মনটাই বুড়িয়ে যায় বুঝি। এই বড়বেলাতেও ঈদের দিন পিচ্চিগুলাকে দেখলে মনটা একদম ভালো হয়ে যায়। পিচ্চিগুলার ভাবসাবও সার্বজনীন - আজকে ঈদের জামাতে দেখি পুরো মসজিদ জুড়ে পিচ্চিদের দৌড়াদৌড়ি আর হাসি-খুশি, বাবাদের কোল ছেড়ে বন্ধুদের সাথে পাকনামি, বুড়ো আংকেলের কোর্তার কোণা ধরে টানাটানি; একই ব্যাপার দেখে এসেছি দেশে, পাড়ার মসজিদে। দুনিয়ার সব পিচ্চিই এক, বড় হইলেই যত সমস্যা।
শুক্রবার আমার সপ্তাহের সবচেয়ে ব্যস্ত দিন - একখান ক্লাস, একটা ল্যাব, আবার বিকাল থেকে তিন ঘন্টার ভাষাশিক্ষা ক্লাস। পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়ে ঈদ হলো শুক্রবার। ক্লাস এমনিই করিনা, ল্যাবের অ্যাসিস্টেন্ট আর ভাষা ম্যাডামকে একটু খানি তেল দিয়ে ওই দুইটাও ম্যানেজ করা গেলো।
শহরে বাংলাদেশি ছাত্র হাতেগুণে দশজন হবে, আগেই বলেছি। এদের মধ্যে আমাদের জনাসাতেকের আমদানি আবার এই বছরেই, সুতরাং এর আগে এখানে ঈদের অনুষ্ঠান বলে কিছু হয় নাই। এবারে আমরা বেশ প্ল্যান করে মোটামুটি একটা আয়োজন করার চেষ্টা করলাম। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, রান্নাবান্না। বাজার-সদাই করা হলো তিন দিন ধরে টুকটাক করে। ঝামেলা লাগলো থালাবাসন নিয়ে; সবাই এখানে একা একা থাকে - পিচকা সাইজের সব হাঁড়িপাতিলে রান্না করে, এখন বড় রান্নার বড় পাতিল কোথায় পাই? আমাদের দুই এক্সপার্ট কুক কিভাবে কিভাবে যেন সবকিছু ম্যানেজ করে ফেললো। তবে যেইটা হইলো, একটু পরপরেই জিনিসপত্র শিফট করা লাগলো - এই পাত্র থেকে ওই পাত্রে, এই প্লেট থেকে ওই সসপ্যানে। অবশ্য দিনশেষে পোলাও, রোস্ট, চিংড়ি, গরু সামনে পেলে এইসব ছোটখাট ঝামেলার কথা মাথাতেই থাকেনা। সাথে ছিলো অ্যারাবিয়ান দোকান থেকে মিষ্টি। শন পাপড়ি আর সন্দেশের মিলমিশ একটা স্বাদ, চমৎকার জিনিস। বড় রান্না হলে যা হয়, বেঁচেও গেলো অনেক কিছু। আগামীকাল ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনীতে তাই পরোটা মাংস সাঁটানোর পরিকল্পনাটাও পোক্ত হলো!
২
ঈদের সময়টা ফেসবুককে একটু বেশিই ভালো লাগে আমার - সবার বিচিত্র এবং আনন্দময় সব স্ট্যাটাসের কারনে। কোরবানীর গরুর পশ্চাদ্দেশের ছবিতে বন্ধুদের ট্যাগ করেছে দেখলাম একজন! কেউ আবার স্ট্যাটাসে জানান দিচ্ছেন সক্কালবেলা দেশে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ঈদ মোবারক জানিয়ে গালি খাওয়ার কথা। কেউ বলছে স্পেশাল কি রান্না হচ্ছে, কেউ শোনাচ্ছে ঈদের দিন ক্লাসে আর ল্যাবে বসে বিচ্ছিরি ঈদ কাটানোর কথা আর বেশির ভাগই সবাইকে জানাচ্ছে ঈদের শুভেচ্ছা। আমার এক ডাক্তার-কাম-কবি বন্ধু দেখলাম ছড়া লিখেছে :
"হে গরু,
তোমার অবদান যায়নি ভুলে বাংলার ঘাস-তরু
তোমার রক্ত যুগে যুগে পড়েছে পথে-ঘাটে
তোমার গোবর মাথায় নিয়ে কত মানুষ হাঁটে
তোমার হাম্বা ধ্বনি
মনে করিয়ে দিলো আজ আমায় কোরবানী। "
যে যেখানে যেমন থাকুন, সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
মন্তব্য
-লেখা পড়ে ভাল লাগলো।
-শেষের ছড়াটায় জাঝা
-আপ্নাকেও ঈদ মোবারক
---------------------
আমার ফ্লিকার
হা হা হা ! এতোসব আনন্দের কথা লিখলেন তবু লেখাটা জুড়ে একটা নিঃসঙ্গতাই খেলা করছে।
ঈদ মুবারক।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ঠিক ধরে ফেললেন তো!
আপনাকেও ঈদ মোবারক।
"Life happens while we are busy planning it"
ছবিতে ডয়েশ লেখা দেখলাম মনে হৈলো ।
সংযোজন - হমম... আগের পোস্ট পৈড়া ক্লিয়ার হৈলো কেমনে কি ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
উলমে আছেন দেখলাম আপনি। আমার এক সিনিয়ার আছেন উলমে, যাবারও ইচ্ছে আছে।
"Life happens while we are busy planning it"
লেখা ভাল লাগছে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ডাংকে!
"Life happens while we are busy planning it"
আমার ধারণা ছিলো আখেনে বাংলাদেশী স্টুডেন্ট আরো বেশি হবে। আমাদের ঈদ পার্টি আজ। ছড়াটা জোশ হইছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ছড়ার কপিরাইট এবং কৃতিত্ব পুরাটাই বন্ধুবরের।
আমারও তাই ধারণা ছিলো, খোঁজখবর নেয়ার আগ পর্যন্ত!
"Life happens while we are busy planning it"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আজকে দুপুরে আরেক দফা আমরাই বুলডোজার চালাইলাম মাংসের ডেগের উপরে, এই আর কি
"Life happens while we are busy planning it"
আপনাদের মত প্রবাসীদের কথা ভেবে মনটা একটু খ্রাপ হলো...
লেখায়
_________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
আমি তো তাও অনেকের সাথে বেশ ভালো ঈদ করলাম, তবে সবার কথা ভাবলে আসলেই মন খারাপ লাগে।
"Life happens while we are busy planning it"
ঈদ মোবারক রাফি ভাই। আপনাকে এমনই নিয়মিত দেখতে চাই সচলের পাতায়।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
- পাঞ্জাবি পড়ে রাস্তায় বের হলে লোকজন উৎসুক হয়ে তাকায়, কারণ এই জিনিষটার সাথে কেউ পরিচিত না। যেমন আমি লুঙ্গি পরে প্রথম প্রথম যখন এক তালা টু তিন তালা করতাম, তখন সবাই একবার আমার খোমার দিকে তাকাতো আরেকবার আমার পরোনের জিনিষের দিকে তাকাতো। আমি সন্দিহান হয়ে দুইহাতে ঢেকে লুঙ্গির ইজ্জত বাঁচাতাম!
কিন্তু পরে যখন জিনিষটা দেখে (এবং জেনে) সবাই মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেলো। এখন আর কেউ তাকায় না।
এইটা বললাম কারণ, আমার মনে হয় না তাদের তাকানোটা বর্ণবাদিতার কারণে হয়!
একটা ভালো কথা বলি। আজকে সন্ধ্যায় ক্রিসমাস মার্কেটে ঘুরেন। দেখবেন 'ঈদ মেলা', 'ঈদ মেলা' একটা ভাব আসবে মনের মধ্যে। ঈদের সময় মেলায় গেলে যেমন হাউকাউ, ঠেলাঠেলি, পাড়াপাড়ি, কামড়াকামড়ি হয়, তেমনি মজা পাবেন। মানে বললাম, ঐরকম একটা স্বাদ পাবেন আরকি। তবে দুধের হাউশ মাঠায় মেটাতে হবে, এই যা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ক্রিসমাস মার্কেট খুবই ভালো জায়গা, আর এখনকার শনিবারগুলাতে লোকজনের ভিড়ে কঠিন অবস্থা হয়। খুবই ভালো লাগে, অনেকটাই ঈদের মতন, আপনে যেমন বললেন। আমরা সকাল থেকেই বাইরে, প্রথমে গেলাম সানডে মার্কেটে। কঠিন দামে জটিল সব জিনিস, একটা সেইরকম লেদার জ্যাকেট দশ ইউরো, একটা প্লেট দশ সেন্ট আর দুইখান কাপ-পিরিচ পঁচিশ সেন্ট দিয়া কিনা হইলো। তারপর সিটি সেন্টারে অনেকক্ষন ঘোরাঘুরি।
পাঞ্জাবির ব্যাপারে আপনার পয়েন্ট ঠিকাছে, অভ্যস্ততার ব্যাপার তো আছেই। তবে আমি জাস্ট তুলনা করার জন্য বলছি, এইখানে "তাকানো" ব্যাপারটা অনেক বেশি দেখি ইতালির চেয়ে।
"Life happens while we are busy planning it"
লেখাটা পর্যাপ্ত ভাল লেগেছে
লেখায় কইশা মাইনাস ঈদের খানাপিনার কথা কওনের লাইগা, আমি সারাদিন অফিস কইরা বাড়িত গিয়া ১ তরকারি রাইন্ধা খাইসি, পরে অবশ্য শাহান গরু রাইন্ধা আনছে। নাহলে মুরগী কোরবানী কইরাই ঈদ করা লাগত। আর ধুগোদার সাথে সহমত, তাকানোটা এখানেই আছে তবে বর্ণবাদী হিসাবে না, আমরা যেমন নাইজেরিয়ান বা তার আশেপাশের লোকজনের আলখিল্লা বা উৎকট কালারের কাপড় দেখলে তাকাই, ব্যাপারটা সেরকম আরকি।
লেখা ঈদের সেমাইয়ের মতই মজাদার আর মিষ্টি হয়েছে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন