একজন মানুষ কেন রোগাক্রান্ত হচ্ছে সেই বিষয়ে জ্ঞান আমাদের ধীরে ধীরে বাড়ছে একথা সত্যি, কিন্তু একটা প্রশ্নটা কিন্তু অনেকটা অজানা বা অনালোচিতই থেকে যাচ্ছে, রোগের অস্তিত্ব আসলে এখনও টিকে আছে কীভাবে বা কেন? আমরা জানি, উচ্চ-চর্বিযুক্ত খাবার তৈরি করতে পারে হার্টের রোগ, অতিরিক্ত সূর্যের আলো ত্বকের ক্যান্সারেরে একটা কারণ হতে পারে, কিন্তু আমাদের কেন তাহলে উচ্চ-চর্বির খাবার খেতে ভাল লাগে বা কেন আমরা সূর্যের নীচে অলস সময় কাটাতে পছন্দ করি? লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তন প্রক্রিয়া আমাদের এমন অবস্থায় কেন নিয়ে আসেনি যে আমাদের আমাদের ধমনীগুলোর সমস্যা নিজেই নিজেই ঠিক হয়ে যাবে বা পুড়ে যাওয়া ত্বক নিজেই নিজেই আগের অবস্থানে ফিরে আসবে অথবা আমাদের উচ্চচর্বির খাবার খেতে ইচ্ছেই করবে না? কোথাও পুড়ে গেলে আমরা ব্যথা পাই কেন? বা ব্যথাই আমরা পাই কেন, ব্যথা ব্যপারটা একেবারেই না থাকতে পারত না? লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পরেও আমরা কেন এখনও এত সহজেই সংক্রমিত হই রোগজীবাণু দিয়ে?
বইটা শুরু হয়েছে এভাবেই, কিছু প্রশ্ন দিয়ে। ডারউইনিয়ান প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া কেন ধীরে ধীরে এইসব জিনকে বাতিল করে দেয়নি যেগুলো আমাদের বিভিন্ন রোগের আক্রমণে অসুস্থ হয়ে যেতে দেয়? প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া কেন শুধু সেইসব জিনকেই সিলেক্ট করেনি যেগুলো আমাদের শরীরকে একদম ত্রুটিহীন করে তুলত বা কোন ক্ষতি হলে সেটাকে খুব সহজে পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে? বা এমন কোন ব্যবস্থা করতে পারত না যাতে আমরা বুড়ো হতাম না? এই প্রশ্নগুলোর একটা সাধারণ উত্তর দেয়া হয়, সেটা হল, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া আসলে অতটা শক্তিশালী কোন প্রক্রিয়া নয়- কথাটা আসলে মোটা-দাগে ভুল এটাকে বরং এভাবে বলা যেতে পারে আমাদের শরীর হল অনেকগুলো প্রক্রিয়ার সচেতন (আক্ষরিক অর্থে নয় অবশ্যই) বোঝাপড়ার ফসল, সেটাকে ভালোভাবে বুঝতে পারলেই কেবল উপরের প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া যাবে।
শুরুতেই বেশ আগ্রহ জাগানিয়া। বিবর্তন সম্পর্কে মোটা-দাগে কিছুটা ধারণা আছে বিবর্তন নিয়ে কিছু পপুলার সায়েন্সের বই পাড়া থাকার কারণে। বিবর্তন এর সাথে সম্পর্কিত সহজ কোন বই পেলেই পড়ে ফেলার চেষ্টা করি। আমরা আজকে আজকের মানুষ যে প্রক্রিয়াটার কারণে মানুষ, সেটা সম্পর্কে জানার আগ্রহটা আমার মনে হয় আসলে খুব স্বাভাবিক। রিচার্ড ডকিন্সের একটা বিতর্ক বা বক্তৃতায় বোধহয় শুনেছিলাম বইটার নাম, মাথায় ছিল অনেকদিন ধরেই, একদিন চোখে পড়ায় হুট করে কিনে ফেললাম। কেনার পরে বেশিরভাগ বইয়ের ভাগ্যে যা ঘটে তাই ঘটল, বেশ কিছুদিন অনেক না পড়া বইয়ের মধ্যে পড়ে থাকল।
অনেকদিন পড়ে কিছুটা সময় পেয়ে ধুলা ঝেড়ে বইটা পড়া শুরু করলাম। বেশ সহজ ভাষায় লেখা, আমার মত নবিস পাঠকও বেশ বুঝতে পারছে। বিবর্তনের খুব বেশি টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলেও বুঝতে সমস্যা হয়নি বইটার মূল বক্তব্য। বইটার নাম 'Why We Get Sick - The New Science of Darwinian Medicine'. প্রায় আড়াইশো পৃষ্ঠার বইটা, পুরো বইয়ের বক্তব্য এই লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, বা সেটা আমার উদ্দেশ্যও নয়, আমি একটা ছোটখাটো একটা রিভিউ লিখে পাঠকের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলেই লেখাটাকে সার্থক মনে করব।
বইটা সম্পর্কে রিচার্ড ডকিন্সের একটা কমেন্ট করেছিলেন যেটা আসলে বইটা সম্পর্কে আমাকে আগ্রহী করে তোলে। ডকিন্স ওই বিতর্কেই একজন প্রশ্নকর্তাকে বলেছিলেন, "Buy two copies and give one to your doctor" আমি সাধারণত কোটেশনের উপর ভিত্তি করে কাজ করি না, কারণ অধিকাংশ কোটেশনই শুনতে ভাল হলেও খুব বেশি জেনারালাইজেশান থাকে যেটা শেষ পর্যন্ত মূল বক্তব্যকে খাট করে। কিন্তু এই কোটেশনটা বেশ মজা লেগেছিল। ভেবেছিলাম বইটা পড়ে দেখতে হবে আসলেই। যদিও বইটা পড়ে আমার মনে হয়নি একজন ডক্টর এই বিষয়গুলো জানবেন না, কিন্তু তারপরে যে কথাটার কারণে বইটা পড়তে আগ্রহী হয়েছিলাম সেটা আপনাদেরকেও জানিয়ে দিলাম আরকি।
বইটা আমাদের অসুস্থ হবার আপাত-দৃশ্যমান কারণ (যেটাকে বায়োলজিস্টরা 'প্রক্সিমেট কজ' বলেন) নয় বরং বিবর্তন-গত কারণ নিয়ে আলোচনা করে। আমাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হল কোন রোগের প্রক্সিমেট কারণ নিয়ে আলোচনা করা, যেমন সর্দি লাগলে আমরা হয়ত বলব, 'কালকে সারারাত ঠাণ্ডার মধ্যে ঘোরার ফল' কিন্তু ঠাণ্ডার মধ্যে ঘুরলেই সর্দি হবে কেন? নিশ্চয়ই এটার পেছনে কোন বিবর্তন-গত ব্যাখ্যা আছে! এই বইটা আসলে আমাদের সেই আলোচনার দিকেই নিয়ে যাবে। একটা রোগকে ভালভাবে বোঝার জন্যে তার পেছনের 'প্রক্সিমেট কজ' আর 'ইভল্যুশনরই কজ' দুটাই বুঝতে হবে, কারণ একটা আরেকটার পরিপূরক, একটাকে এড়িয়ে গিয়ে আরেকটাকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়ার সুযোগ নেই।
বিবর্তন সম্পর্কে খুব বেশি পড়াশোনা না থাকলেও বইটা পড়তে তেমন কোন সমস্যা হবে না বলেই আমার ধারণা। বরং বিবর্তন সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা ভেঙ্গে যেতে পারে বইটি পড়লে। বইয়ের প্রথম দিকেই বিবর্তন সম্পর্কে বেশ কিছু জনপ্রিয় ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। যেমন গ্রুপ সিলেকশন বা লেমিংদের দলগত আত্মহত্যার বিষয়গুলো এসেছে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। শেষ পর্যন্ত ন্যাচারাল সিলেকশনের সিলেকশন কার ওপরে হয়, কোন দল, গোষ্ঠী, প্রজাতি, নাকি জিনের ওপরে এসব সাধারণ বিষয়গুলোও পরিষ্কার হবে। প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসেছে মাস্টারপিস 'দ্যা সেলফিশ জিন'-এর কথাও।
বইটি শুরু হয়েছে বিবর্তনের কিছু প্রাথমিক ধারণা দিয়ে। বেশ কিছু কৌতূহলোদ্দীপক ব্যপার এসেছে বিভিন্ন জায়গায়, 'জ্বর কি আসলে উপকারী নাকি অপকারী', 'হিংসা (সেক্সুয়াল মেট সিলেকশানের ক্ষেত্রে)', 'সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম', 'চাইল্ড অ্যাবিউজ', 'স্বপ্ন', 'আমরা কেন বুড়ো হই' এরকম আরও অনেক। শেষের দিকে এসেছে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং চ্যাপ্টার, 'সেক্স অ্যান্ড রিপ্রোডাকশান', 'আর মেন্টাল ডিসঅর্ডারস ডিজিজেস?', 'ইভল্যুশন অব মেডিসিন'। 'ক্যান্সার' আর 'অ্যালার্জি' সম্পর্কেও নতুন অনেক কিছু জানা হল।
হাতে সময় থাকলে এখনই শুরু করে দিন। সময় ভাল কাটবে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি।
মন্তব্য
বিবর্তন সম্পর্কে আমারো সীমিত জ্ঞান আহরন পপুলার সায়েন্সের বই থেকে। ডকিন্সের এনসেসটরস টেইল নিয়ে পড়ে আছি অনেকদিন ধরে। ধুলো ঝেড়ে আবার শুরু করতে হবে। এই বইটার সম্পর্কেও ব্যাপক আগ্রহ তৈরী হলো আপনার লেখা থেকে । চ্যাপটার গুলো নিয়ে আরেকটু আলোচনা করলে ভালো লাগতো। নেস আর উইলিয়ামস ঐ শুরুর প্রশ্নগুলোর উওর কি দিলেন তা জানতে ইচ্ছে করছে। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখার জন্য।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ধন্যবাদ। আসলে বেশ কিছু চ্যাপ্টার, বিবর্তনের প্রাথিমিক ধারণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ কেন হয়, কেন টিকে আছে এরকম অনেক কিছু উদাহরণ দিয়ে বোঝানো আছে। মাঝখান থেকে দুই-একটা টপিক র্যান্ডম-পিক করা যেত হয়ত। দেখি, পারলে চ্যাপ্টার নিয়ে আলোচনা করব সামনে কোন লেখায়
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভাল রিভিউ। কিন্তু একটাও উত্তর বলে দিলেন না, এটা কি ঠিক হল?
আফনে গিয়ানি মানুষ, আমি তো ভাবছি আফনে উত্তরগুলান এমনিতেই জানেন
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভাল লাগল, ইয়ে মানে ডকিন্স যখন ২ কপি বলেছে কিনেই ফেলেন, কিন্তু সেটা আপনার ডাক্তারকে না পাঠিয়ে অধম অণুকে পাঠিয়ে দিন
facebook
মেইল অ্যাড্রেস ইনবক্স না করলে ক্যাম্নে পাঠাবো?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
পড়ার আগ্রহ জাগলো মনে। ধন্যবাদ!
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আপনাকেও ধন্যবাদ
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সবই বুচ্ছি।
..................................................................
#Banshibir.
আপনে তো পীরসাহেব আপনে আবার বুঝবেন না ক্যামতে? আপনের ইশারা ছাড়া তো লেখাই হইত না!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
(আসলে বুজিনাই )
..................................................................
#Banshibir.
এত বুইঝা করবেন কী!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
খুব ভাল বুক রিভিউ হইসে, এমন ভাবে কইলেন মনে হইল বাসে উঠলে যেমন হকারদের রিভিউ শোনা যায় "এই বই পড়লে জানতে পারবেন মাথার চান্দিতে তিল থাকলে কি হয়?"
দুই একটা চ্যাপ্টার কষ্ট করে অনুবাদ করলে কি হইত। বইটা পড়ার জন্য আসলেই আগ্রহ জাগছে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অনুবাদ বড় কষ্টকর কাজরে ভাই, ওই কাজ আমারে দিয়ে হবে না, আমি হইলাম ফাঁকিবাজ লোক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
গাছের মগডালে তুলে মইটা হাপিস করে দিলেন?
এবার মগডাল থেকে নামেন, আর নামার ঘটনাগুলা আমাদের জানান
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
নতুন মন্তব্য করুন