শেষ পর্যন্ত বহু কাঙ্খিত ওয়াই-ফাই জোন পাওয়া গেল। যদিও এই মুহূর্তে ওয়াই-ফাইএর খুব বেশি দরকার নেই আমার। কিন্তু দরকার না থাকলেও উপরে আকাশের বদলে একখানা ছাদ আছে এমন কোনো জায়গায় ওয়াই-ফাই না থাকলে কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসে। এমনিতেই প্রায় পনের ঘন্টা হতে চলল ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু, এমেসেন, এমাইয়ারসি, টুইটার, জিপ্লাস ইত্যাদি থেকে দূরে আছি। দুই একবার দুই এক জায়গায় ওয়াই-ফাই সংযোগ পেয়ে গেলেও টেস্ট করার জন্য হুট করে মোবাইল থেকে ফেসবুকে ঢুকে টেস্ট করা যাচ্ছে না। গুগলও সম্ভবত ব্লকড এখানে। গতকাল প্রথম ওয়াই ফাই সংযোগ পাবার সাথে পরীক্ষা করার জন্য তাই মোবাইলের ব্রাউজার থেকে ঢু মারতে হলো সচলায়তনে। খেয়াল করে দেখলাম গুগলের ওপর এমনভাবেই নির্ভরশীল হয়ে গেছি যে কোনো ওয়েবসাইটের নামই মনে আসছে না হুট করে। খেয়াল করে দেখলাম বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে এখন আমার ঢোকা হয় ফেসবুকে কারও শেয়ার করা লিঙ্ক থেকে, বা গুগলে সার্চ করে পাওয়া লিঙ্ক থেকে। এইসব সময় কাটানোর মতো ওয়েবসাইটগুলো ব্লক থাকার পরেও ওয়াই-ফাই সংযোগ থাকলে কেন যেন ভালো লাগে। এয়ারপোর্টে ওয়াই ফাই আছে। কিন্তু সংযোগ এক্টিভেট করার জন্য চালু মোবাইল নাম্বার লাগবে। যেই নাম্বারে একটা কোড পাঠাবেন জনাবেরা, সেই কোড দিয়ে ভেরিফাই করে ইন্টারনেট চালু করতে হবে। যেখানে নানা দেশ থেকে নানা রকম মানুষ এসে কিছু সময় প্রয়োজনের সময় কাটাবে, সেখানে তাদেরকে ফ্রি ইন্টারনেট দিতে চাইলে লোকাল ফোন নম্বর দিয়ে ভেরিফাই করে নিতে হবে, এর পেছনে কোনো স্বাভাবিক যুক্তি খুঁজে পেলাম না।
এইসব কারণে ওয়াই-ফাইয়ের পিপাসা মেটাতে এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোর স্মরণাপন্ন হতে হলো। বেশ কয়েকটা কেউকেটা টাইপের রেস্টুরেন্ট খুঁজে খুঁজে ওয়াই-ফাই জোন না পেয়ে শেষে এখানে দাঁড়ানো হাসিমুখ মেয়েটাকে যথাসম্ভব ধীরে জিজ্ঞেস করলাম ওয়াই-ফাই আছে কিনা তাদের রেস্টুরেন্টে। সে খুশি হয়ে উঠল, নিচ থেকে একটা কাগজে লেখা ওয়াই-ফাই ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড লেখা একটা বড় সাইনবোর্ড টাইপের কাগজ বের করে সামনে ধরে চাইনিজ স্টাইলে বলল, ‘ওঁয়াইও-ফাঁই, ইয়েস, ইয়েস’। মেয়েটার সাথে সাথে আমিও খুশি হয়ে গেলাম। কিন্তু শুধু ওয়াই-ফাইএর জন্য তো আর বসা যাবে না। তাছাড়া বেশ ক্ষুধাও লেগে গেছে ততক্ষণে। তাই সহজে যাতে বুঝতে পারে এরকম যথাসম্ভব চাইনিজ উচ্চারণে বললাম, ‘মেনু!’। মেয়েটা মেনু এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ফঁলো মি,স্যার’।
রেস্টুরেন্ট সিলেকশানে আমার মতো অন্য অনেকেরই ওয়াই-ফাই যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর এটা বোঝা গেল রেস্টুরেন্টে উপস্থিত মানুষের মধ্যে নন-চায়নিজদের আধিক্য দেখে। অন্য রেস্টুরেন্টের তুলনায় এখানে বিদেশী লোকের সংখ্যা একটু বেশি মনে হলো আমার। সম্ভবত এদের অনেকেরই সাংহাইয়ে একটিভ সিমকার্ড নেই। অনেকের সামনেই ল্যাপটপ খোলা, কেউ কেউ স্মার্টফোনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, কেউ খাওয়া দাওয়া করছে, আট দশ বছরের দুইটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। চামড়া ঝুলে গেছে এমন দুইজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সোফায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছের, সম্ভবত ফ্লাইটের মধ্যবর্তী সময়ে একটু ঘুমিয়ে ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টায়।
আমাকে এখানে আরও অনেক সময় কাটাতে হবে। আমার দুই ফ্লাইটের মধ্যে সময় প্রায় চব্বিশ ঘন্টা। সস্তার টিকিট কাটতে গিয়ে ফ্লাইট শিডিউলের অবস্থা চাইনিজদের ইংরেজির মতো অনেকটাই। তাই কিছুটা সময় এখানে কাটাতে পারলে ভালোই হবে। ওয়াই-ফাইএর সাথে সাথে রেস্টুরেন্টের পরিবেশটাও পছন্দ হলো। উপরের তলার মতো ছাদ আর দেয়ালে নানা কারুকাজ করে সূর্যের আলো না আসার ব্যবস্থা থাকায় তুলনামূলক ভাবে আরামদায়ক অন্ধকার। রেস্টুরেন্টের লাইটের রংটা উষ্ণ হলেও পরিবেশ বেশ শীতল। সেটা আলোর তীব্রতা আর রেস্টুরেন্টের অবস্থান সবকিছু মিলিয়ে। সাথে চমৎকার আরামদায়ক ভলিউমে পরিচিত যন্ত্রসংগীত বাঁজছে।
আমি ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করলাম। হালকা ভলিউমে ‘হোয়ারেভার ইউ গো’ এর ইন্সট্রুমেন্টাল শুনতে শুনতে হাসিমুখ মেয়েটার দেয়া ওয়াই-ফাই পাসোয়ার্ড দিয়ে ওয়াই-ফাই কানেক্ট করে ফেললাম। চেয়ারে একটু গা এলিয়ে দিয়ে এবার শান্তিতে মেনুর দিকে তাকাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। মাঝে মাঝে ছোট খাট সিদ্ধান্ত নিতেও বেশ ভালো লাগে।
দুপুর দুইটার মতো বাজে। এখনও প্রায় দশ ঘন্টার মতো বাকি আছে আমার ফ্লাইটের। সাথের বড় সাইজের লাগেজ আর একটা মাঝারি হ্যান্ডব্যাগ লাগেজ ডিপোজিটে রেখে ঝাড়া হাত পা হয়ে গেছি। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গা এলিয়েই মেনুর পাতা খুলে ওল্টাতে থাকলাম। আমি মানুষ হিসেবে অলস। যে কোনো রকম অ্যাডভেঞ্চার থেকে কয়েকশ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করি সবসময়। খাবারের ব্যাপারে এটা আরও বেশি সত্যি। ভোজনরসিক হলেও খাবার চেখে দেখার ব্যাপারে আমি বেশিরভাগ সময় পরিচিত গন্ধ, নাম আর রঙের সাথে যাবার পক্ষপাতি। বিশেষ করে এরকম দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে এরকম জায়গায় খাবার নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষার প্রশ্নই আসে না। তাই আমি মেনু দেখে খুঁজে পেতে দেখতে ভালো এবং নামে কিছুটা চেনা গন্ধ আছে এরকম একটা খাবার নেবার সিদ্ধন্ত নিলাম। ফ্রাইড রাইস উইথ বিফ শর্ট রিবস।
দাম লেখা আছে ঊনষাট ইয়েন। খুব একটা সস্তা হলো না সম্ভবত। কিন্তু এয়ারপোর্টের ভেতরে খুব একটা সস্তা কিছু পাওয়ার আশা করাটা ভুল। বিদেশি চেইন শপ হিসেবে সাবওয়েতে ঢু মেরেছিলাম একবার। কিন্তু শুধু শুকনা সাব খেয়ে চব্বিশ ঘন্টা পার করে দিতে ইচ্ছে হলো না। ম্যাকডোনাল্ডেসের বিশাল একটা দোকান দেখা যাচ্ছে কিন্তু সম্ভবত কোনো বিশেষ কারণে সেটা বন্ধ। যদিও খাবারের দাম আরেকটু কম হলে ভালো হতো আরেকটা কারণে। পকেটে থাকা চায়নিজ টাকা এই খাবারের দাম দেবার সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে। হাওয়াই জাহাজে চাপার আগে আগে আরেকবার খেতে চাইলে পকেটে থাকা কানাডিয়ান ডলার ভাঙ্গাতে হবে। এখানে আসার আগে আরেক তলা নিচে ডলার ভাঙ্গানোর খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। একবার ভাঙ্গাতে পঞ্চাশ ইয়েন গচ্চা দিতে হবে কমিশনের নামে। কিন্তু সম্ভবত আর কোনো বিকল্প নেই আমার হাতে। তাছাড়া লাগেজগুলো খোয়ার থেকে ছাড়িয়ে আনতেও কিছু টাকা লেগে যাবে। অতএব পঞ্চাশ ইয়েনের মায়া ত্যাগ করার সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলাম।
সময় কাটানোর জন্য লিখতে বসবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। সাথে আনা কিছু বা আইপ্যাডে পড়াশোনা করেও সময় কাটিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু দেখতে দেখতে লিখে ফেলাটাই সময় কাটানোর জন্য উপাদেয় মনে হলো। দুপুরের খাবারের সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। রেস্টুরেন্ট অনেকটাই খালি এখন। একটু আগে বসে থাকা অনেকেই উঠে চলে গেছে। কিছুক্ষণ আগের ব্যস্ত সময় কাটানো ওয়েটাররা নিজেদের ভেতরে খুনসুটি করছে একপাশে।
আমার খাবার এসে গেছে। ছবির সাথে খাবারের চেহারা মোটামুটি মিলে গেছে দেখে ভালো লাগল। খাবার দেখে অরুচি হলে আমি খেতে পারি না। সাথে একটা ছোট কাপের মতো বাটিতে ক্লিয়ার সুপ টাইপের কিছু একটা দিয়েছে। চামচ দিয়ে তুলে দেখলাম ভেতরে এক টুকরা গরুর মাংস। সম্ভবত মাংস সহ জাল দিয়ে বানানো স্যুপ। স্যুপের চেহারা দেখে পছন্দ না হলেও এক চুমুক খেয়ে দেখলাম। বেশ ভালো খেতে স্যুপটা। খাবার বেশ গরম। আমার যেহেতু তাড়া নেই তেমন তাই খাবার জিহবা সহ্য করতে পারে এরকম ঠান্ডা হতে দেব বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলাম।
পানি খাওয়া দরকার। আবার পয়সা দিয়ে মিনারেল ওয়াটার কিনতে হবে নাকি ভেবে একটু মেজাজ খারাপ হলো। অনেক রেস্টুরেন্টেই এখন প্রচুর খাবার দাবার খেলেও একটু পানির ব্যবস্থা থাকে না। রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া দাওয়া করার পরও পানি না দেয়ার ব্যবস্থাটা আমার খুব বিরক্তিকর লাগে। এমনকি হাজার পনেরশ টাকা দিয়ে বুফে খেতে গেলেও আলাদা করে পানি কিনে হয়। সাথে পানির একটা বোতল ছিল। মনে পড়ল সেটা হ্যান্ড লাগেজটার সাথে লকারে রেখে এসেছি। তাই দুরদুর বুকে ওয়েটারকে ডেকে পানি চাইলাম। রোজা রমজানের দিন বলেই কিনা জানি না, সম্ভবত শেকলে আটকা না পড়া কোনো ছোটখাটো শয়তান আমার রোজা ভাঙ্গানোর জন্য বিনামূল্যেই পানির ব্যবস্থা করে দিল। আমি কার শুকরিয়া আদায় করব ভেবে না পেয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মতো এই বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলাম।
খাবার কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। খাবার মুখে তোলার জন্য একটা চামচ আর চপস্টিক দিয়ে গেছে। আমি চপস্টিক দিয়ে খেতে পারি না। শেখার চেষ্টা করিনি এমন না। অনেকদিন নিজে নিজে চেষ্টা করে সুবিধা করতে না পেরে একবার চায়নিজ রুমমেটের কাছে চপস্টিক দিয়ে খাওয়া শেখার ট্রেনিং নিতেও শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার আগ্রহ ট্রেনিংএর মোটিভেশনাল লেকচার পর্বেই শেষ হয়ে হিয়েছিল। তার প্রথম পরামর্শ ছিল, প্রচন্ড ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমি যেন চপস্টিক দিয়ে বাদাম খেতে চেষ্টা করি। সেই থেকে চপস্টিক দেখলেই আমার সেই কথা মনে পরে যায়। কিন্তু ক্ষুধার্ত অবস্থায় কেন যেন কখনই আমার সামনে বাদাম থাকে না। এইজন্য চপস্টিক দিয়ে খাওয়া শেখার প্রজেক্টটাও আমার অধিকাংশ প্রজেক্টের মতো বাকি থেকে গেল।
একটা চামচ দিয়ে খেতে সমস্যা হয় আমার। একটা ছুরি চাইবার জন্য ওয়েটারকে ডাকলাম হাতের ইশারায়। কিন্তু আমার জানা কোনো ভাষাতেই তাকে ছুরি বোঝাতে পারছিলাম না কী চাচ্ছি আমি। আমি যতই বুঝাই সে মেনু নিয়ে এসে এই আইটেম সেই আইটেম দেখিয়ে প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে। পরে নিরুপায় হয়ে হাত দিয়ে গলায় পোচ দিয়ে জবাই করার ভঙ্গি করে বোঝাতে হলো। এখানকার ইংরেজির অবস্থাও অনেকটা আমাদের দেশের ইংরেজির মতো মনে হল। বড়রা অনেকেই ইংরেজি প্রায় বোঝে না বললেই চলে। বা বুঝলেও বলতে পারে না কিছুই। কিন্তু যে বাচ্চাদু’টা খেলছিল, তারা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি, কথা-বার্তা বেশিরভাগ ইংরেজিতেই বলছে। আর পাশে বসে থাকা তাদের বাবা-মাকে দেখলাম নিজেদের মধ্যে আর বাচ্চাদের সাথে চায়নিজে বাতচিত করেতে। সম্ভবত গ্লোবালাইজেশানের এই যুগে আমাদের দেশের বাবা-মার মতো চায়নিজ বাবা-মারাও সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। যদিও এরকম দুই-একটা স্যাম্পল দেখে এরকম একটা সিদ্ধান্তে এসে পড়া কঠিন। তবে এদের বাচ্চাদের ইংরেজির দরজাটা আমাদের দেশের বাচ্চাদের চেয়ে কম খোলা বলেই মনে হলো। এয়ারপোর্টে খেয়াল করে দেখলাম যেসব বাচ্চা ট্যাব বা স্মার্টফোনে গেম খেলছে বা কোনো সাইটে ঢুকে আছে তার সবই চায়নিজ ভাষায়। সেদিক থেকে আমাদের বাচ্চারা না চাইলেও ইংরেজির কিছুটা স্পর্শ পেয়েই যায়। এতে ভালো হচ্ছে কি খারাপ হচ্ছে সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়, বিধায় এই লেখায় সেই আলোচনা টেনে এনে লেখাকে আলোচনা ভারাক্রান্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলাম।
খাবার যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশ ভালো খেতে। পরিমাণ আমার পেটের পরিমাণের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী না হলেও মানানসই। রাইস আর বিফ রিবসের স্বাদও আমার পরিচিত আকাঙ্ক্ষিত স্বাদের সাথে মিলে গেল। বিফ রিবসের অংশটা কিছুটা লেমোনেটেড, বেশ ভালোই সেদ্ধ করা হয়েছে। অনেক বিদেশি খাবারের মতো আধাসেদ্ধ হবে বলে যে আশঙ্কা করছিলাম সেটা সত্যি না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম। সাথে কিছু সবজিও আছে, ব্রকলি আর নাম না জানা কোনো একটা সবজি। সবজি অংশটা কিছুটা আলুনি লাগলেও পুরো খাবার আর রেস্টুরেন্ট ভাগ্যে কিছুটা পুলকিত হলাম।
এই পুরো যাত্রায় আসলে পুলকিত হবার খুব একটা সুযোগ পাইনি। সস্তার ফ্লাইট দেখতে গিয়ে মোটামুটি ফেঁসে গেছি। ঢাকা থেকে ভ্যাঙ্কুভার যেতে সময় লাগছে বেয়াল্লিশ ঘন্টার মতো। ঢাকা থেকে কুনমিং আড়াই ঘন্টার ফ্লাইট। এরপর তিনঘন্টার ট্রানজিটে কুনমিং থেকে সাংহাই। সাংহাই তে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা অপেক্ষার পর আবার বারো ঘন্টার ফ্লাইট পৌছুবে ভ্যাঙ্কুভারে। যদিও এ সবই জানা কথা। সাংহাইয়ে চব্বিশ ঘন্টা থাকা হবে ভেবে বরং কিছুটা খুশিই হয়েছিলাম। অন্তত দিনের বেলাটা কিছুটা হলেও শহরের আশেপাশে ঘুরে দেখব ভেবেছিলাম, টিকেট কাটার সময়। আগের বার চায়না সাউদার্নে ভ্যাঙ্কুভার থেকে দেশে ফিরেছিলাম। মাঝখানে বারো ঘন্টার ট্রানজিট ছিল সেবার। এয়ারলাইন্স থেকেই বেশ ভালো একটা হোটেলে নিয়ে গিয়েছিল নিজেদের গাড়িতে করে। কিন্তু সেবার পুরো ট্রানজিটের সময়টাই রাতের বেলা হওয়াতে কিছুই দেখা হয়নি সেবার। কিন্তু এবার আসার সময় জানতে পারলাম চব্বিশ ঘন্টার ফ্লাইটেও হোটেল বা কোনো কিছুরই ব্যবস্থা করবে না এয়ারলাইন থেকে। নিজের জায়গা নিজেই খুঁজে নিতে হবে। এর সাথে আছে লাগেজের ঝামেলা। বিশাল সাইজের লাগেজ প্রত্যেক এয়ারপোর্টেই কালেক্ট করে টেনে বেড়াতে হচ্ছে।
একবার ভাবলাম চব্বিশ ঘন্টা সময় এমন আর কী! এয়ারপোর্টেই কাটিয়ে দেবো। লাগেজ ডিপোজিটে লাগেজগুলো রেখে কোনো বেঞ্চ বা চেয়ারে বসে বেশ ঘুমিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু দেখলাম চব্বিশ ঘন্টার জন্য লাগেজ রাখতে গেলেও প্রায় দেড়শ ইয়েনের মতো খরচ হয়ে যাবে। ভাবলাম এই খরচের মধ্যে কোনো হোটেল পেয়ে গেলে খারাপ হয় না। ক্যালিফোর্নিয়া যাবেন এরকম দুইজন বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছিল কুনমিং আসার পথেই। এয়ার লাইন্স থেকে হোটেল দেয়া হবে না, ব্যাপারটা ওনারা জানতেন আগে থেকেই। এজন্য ওনারা আগে থেকেই বুকিং দিয়ে এসেছেন। কিন্তু দেখা গেল এয়ারপোর্টের যে হোটেলে ওনাদের বুকিং সেখানে বলছে ওনাদের বুকিং আগামীকাল সকাল সাতটা থেকে। ওনারা বয়স্ক মানুষ, এতটুকু জার্নিতেই বেশ কাহিল হয়ে গেছেন। অবশ্য ধকল কম যায়নি। অল্প সময়ের মধ্যে দুইটা ফ্লাইট। লাগেজ খুঁজে নিয়ে আবার চেক-ইন করা। দৌড়ের ওপরই ছিলেন দুইজন। এয়ারপোর্টে রাত কাটালে ওনারা হয়ত অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এর মধ্যে কথা বার্তা বলে জানা গেল ওনারা ক্যালিফোর্নিয়া যাচ্ছেন মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের কাছে। কাকতালীয়ভাবে সেই আপু আর ভাইয়াকে আমি চিনি। এইসব পরিচয়ের সূত্রে ওনাদের হোটেল খোঁজার যাত্রায় আমিও সঙ্গী হয়ে গেলাম।
এয়ারপোর্টের ভেতরেই দুইটা হোটেলের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু দুটার কোনোটাতেই সিট পাওয়া গেলো না। আমরা কিছুক্ষণ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে লাগেজ জমা দিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতরে রাত কাটিয়ে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। কিন্তু লাগেজ ডিপোজিটের ওখানে গিয়ে দেখলাম অফিস ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে। একটা এয়ারপোর্ট, যেখানে সারারাত ফ্লাইট যাতায়াত করে, পুরা এয়ারপোর্ট যাত্রীতে ভরপুর সেখানে লাগেজ ডিপোজিট রাখার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ অফিস কেন বন্ধ হয়ে যাবে সেটা ঠিক বোধগম্য হলো না। কিন্তু সেই জিনিস বুঝিয়ে বলার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশে পাশের চায়নিজ কাউকে এক অক্ষর ইংরেজি বোঝাতে যতটুকু অঙ্গভঙ্গী করতে হলো তাতে মনে হলো এই নিয়ে নতুন বাংলা-ইংলিশ-চায়নিজ ফিউশান নাচের একটা বেশ ভালো ওয়ার্কশপ নামিয়ে দেয়া যায়। আমাদের অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই কিনা আল্লাহ তায়ালা দুইজন চায়নিজভাষী ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতাদের পাঠানোর সময় সবসময় কেন আরবী, চায়নিজ ইত্যাদি দুর্বোধ্য ভাষা ইন্সটল করে পাঠাতে হবে এটা আমার কখনি মাথায় ঢোকে নি। মনে আছে যখন নামাজ কালাম করতাম ঠিক মতো তখন মাঝে মাঝেই কবরের পরীক্ষার প্রশ্ন আউট করে দিতেন মসজিদের ইমাম সাহেব। মুনিকার নাকীর নামের দুইজন আরবিভাষী ফেরেশতা নাকি আরবি ভাষায় ভাইভা নিবেন কবরে ঢোকার সাথে সাথেই। সেটার প্রথম প্রশ্ন থাকবে, ‘মার রাব্বুকা?’। সেটার উত্তর পৃথিবীতে বারবার মুখস্ত করলেও নাকি তখন মনে থাকবে না আমাদের মতো পাপী বান্দাদেরর। আমার সবসময়েই মনে হতো একটা পরীক্ষায় যদি প্রথমেই একটা দুর্বোধ্য ভাষা দিয়ে পরীক্ষার্থীকে ভরকে দেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে পরীক্ষাটা ঠিক ফেয়ার হয় না। আমাদের মুখ দিয়ে আরবি ভাষায় মুখস্ত উত্তর বের করার চেয়ে ফেরেশতাদের বাংলা ভাষা কম্পাটিবল করে বানালে কী এমন আসত যেতো এটা নিয়ে আল্লাহর কাছে আমার সবসময়েই একটা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেই অভিযোগ ঠিকমতো জানানোর আগেই দুই চায়নিজ ভাষী ফেরেশতা এসে ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করে চায়নিজ উচ্চারণে ‘হোতেল? হোতেল?’ বলে আমাদের টানাটানি করতে শুরু করল। নানা রকম ইশারা ইঙ্গিত আর কসরতের পর তারা আমাদের বোঝাতে সক্ষম হল যে, এয়ারপোর্টের নিকট দূরত্বে তাদের পরিচিত হোটেল আছে আর সেখানে সিটও আছে। ভাড়া কেমন জিজ্ঞেস করার জন্য সদ্য উদ্ভাবিত মুদ্রা ব্যবহার করে প্রশ্ন করায় তারা তাদের মোবাইল বের করে সেখানে একটা কয়েকটা ডিজিট চেপে উত্তর জানালো ২৬৮ ইয়েন।
হঠাৎ আগন্তুক ফেরেশতাদের সাথে যাব কিনা এটা নিয়ে আমাদের তিনজনেরই একটু দোটানায় পড়ে গেছি। সম্ভবত একা একা হলে আমি বা নতুন পরিচয় হওয়া আঙ্কেল-আন্টি কেউই সাহস করতেন না এদের সাথে এত রাতে কোথাও কিছু না বুঝে যেতে রাজি হতে। কিন্তু কয়েকজন একসাথে হয়ে গেলে কীভাবে যেন কিছু কনফিউশান দূর হয়ে যায়। তাই নিজেদের মধ্যে একটু বাতচিত করে লাগেজগুলো ফেরেশতাদের ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে একটাতে আমি চেপে বসলাম। আরেকটাতে ওনারা দুইজন উঠলেন। একটু ভয় লাগছিল। এমনিতেই বেশ রাত, প্রায় দেড়টা বাজে। এর মধ্যে বলতে গেলে ভালো করে কিছুই না বুঝে একেবারে অপরিচিত, দালাল টাইপের দুইজনের ট্যাক্সিতে চেপে বসাটা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ হলো এটা ভাবতে ভাবতেই একটা হোটেলের সামনে এনে ফেরেশতারা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে ফেলল। কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
তারপর আবার সেই একই ভাষার সংগ্রাম। অনেক সংগ্রাম করে হোটেলের রিসেপশানে নিজেদের প্রয়োজন, ভাড়া রুম ইত্যাদি নিয়ে একমত হওয়া গেল। আঙ্কেল আন্টির ফ্লাইট আগামীকাল দুপুর একটায়। ওনাদের জন্য টাইমিংটা দারুণ হলেও আমার জন্য খুব একটা লাভ হলো না। কারণ আগামীকাল দুপুর বারোটার আগেই চেক আউট করতে হবে হোটেল থেকে। তারমানে প্রায় বারো ঘন্টা আমাকে সেই এয়ারপোর্টেই কাটাতে হবে। এই সস্তার ফ্লাইট নেয়ার জন্য আরেকটা ভোগান্তি পোহাতে হলো, সেটা হলো এই লাগেজ। প্রত্যেকটা এয়ারপোর্ট থেকেই লাগেজ নিজে কালেক্ট করে আবার নতুন করে চেক-ইন করতে হচ্ছে। গত চার পাঁচ বছরের ঢাকা ভ্যাঙ্কুভার যাতায়াতে অন্তত একবারও প্রত্যকে এয়ারপোর্টে লাগেজ টানা হেচড়ার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বেশিরভাগ প্রবাদ প্রবচনের ওপর আমার অনাস্থা থাকলেও, ‘সস্তার তিন অবস্থা’ প্রবাদটার সত্যতা এবার হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
আমরা চায়নিজভাষি ফেরেশতাদের হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম। দারুণ কিছু না হলেও এক রাত ঘুমানোর জন্য বেশ ভালো রুম। রুমে ঢুকে মনে হুলো জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় জিনিস কিছুই নেই ওখানে। ততক্ষণে বেশ পিপাসা পেয়ে গেছে। ক্ষুধাও লেগেছে বেশ খানিকটা। এত রাতে ভালো কিছু জুটবে না। আসার সময় রিসেপশানে মিনারেল ওয়াটার, আর কিছু স্ন্যাক্স দেখেছিলাম। আপাতত এই দিয়েই ক্ষুধা মেটাতে হবে ভেবে রিসেপশানের দিকে রওনা দিলাম। তিন ইয়েন দিয়ে একটা মিনারেল ওয়াটার আর দশ ইয়েন দিয়ে এক প্যাকেট ওরিও বিস্কুট কিনে রুমে ফেরত এসে গোসল করে বিছানায় এসে ঘুমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলাম।
বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই মনে হলো কী যেন একটা নাই। অনেকদিনের অভ্যাস ঘুমানোর আগে মোবাইলে এখানে ওখানে ঘুরে ফিরে কিছু সময় কাটানো। আবার রিসেপশানে দৌড়ালাম। যথাসম্ভব ধীরস্থিরভাবে যথাসম্ভব চায়নিজ উচ্চারণে বলার চেষ্টা করলাম, ‘ওঁইয়া-ফাঁই?’। এইবার কিন্তু ওদের বুঝতে কষ্ট হলো না। তবে সেটা সম্ভবত আমার উচ্চারণের পারঙ্গমতার জন্য না। ওয়াই-ফাই শব্দটা সম্ভবত আর কোনো ভাষার আলাদা শব্দ হিসেবে নেই। এটা এখন মানুষের কাছে অক্সিজেনের চেয়েও দরকারি শব্দ। কারণ অক্সিজেনের জন্য মানুষের কাছে আলাদাভাবে চাইতে হয় না। ওয়াই-ফাই বলার সাথে সাথে রিসেপশানের মেয়েটার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সম্ভবত অনেক্ষণ পর সহজভাবে একটা কথা বুঝতে পারার আনন্দে। অথবা এটার জন্য তার কাছে সহজ সমাধান আছে এই আনন্দে। মেয়েটার ইয়েসের উত্তরে আমি প্রশ্নবোধক চোখে এবার বলি ‘পাসওয়ার্ড?’ কিন্তু সে বুঝতে পারে না। সে বলে, ‘গিম মি ইয়ো আইফোন’। বুঝলাম সে আমার ফোন চাইছে। ভাবভঙ্গীতে বোঝা গেল সে নিজেই কানেক্ট করে দিতে চাইছে। আমি ফোনটা তার হাতে দিতেই সে হাসিমুখে ওয়াই-ফাই কানেক্ট করে হাসিমুখে ফোনটা ফেরত দিতে দিতে বলে উঠল, ‘ওঁয়াই-ফাঁই, ওঁয়াই-ফাঁই’।
মন্তব্য
ত্রিমাত্রিক জটায়ু?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধুর, কমেন্ট করতে আসলাম জটায়ু সংক্রান্ত একটা জোকস মারতে, দেখি সত্যানন্দ-দা আগেই আমার ভাত মেরে দিয়েছেন!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
কইয়া ফালান। কি আছে জীবনে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কইরা ফালান।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হেহে চেষ্টা করলাম আরকি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভ্যাঙ্কুভার (ফের) ঘুরতে যান, নাকি (ফের) পড়তে?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ঐ পর্বের নাম কি? ভ্যাঙ্কুভারে ভয়াবহঃ কানাডায় ক্রন্দন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
উহু ওটা হবে ভ্যাঙ্কুভার ভয়ংকরঃ কানাডায় কান্দায়
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হ, নিজের নীতিগত অবস্থান ত্যাগ করে এটার সাথে ঐকমত্য জানালাম।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
রামাদ্বানের পবিত্রতা বজায় রাখুন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
অপবিত্রতার আপনি কি দেঝলেন?
সেটা আমার আর কল্যাণদার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অতএব নীতিগত ভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেল যে, চায়নায় কিঞ্চিৎ চিন্তিত তথা সাংহাইতে সাংঘাতিক কিছু ঘটার আশঙ্কা সত্ত্বেও আখেরে সময় আপনার ভালই কেটেছে। তা না হলে চিত্তে এত রস আসলো ক্যামনে?
একেবারে টইটম্বুর; দেখেননা লিখেছে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হে: হে: হে:
এই এক যন্ত্রণা! লিখলাম কোনখানে, আর সেট হইল কুন হানে।
গজব পড়ছে!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হেহে আপাতত ঘুরতে। কিছুদিন ঘুরি, ফিরি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আপনার লেখা বেশ মিস করতে ছিলাম, তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিছিলাম যে আপনারে খোচামু না
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হেহে। দেখছেন ভালো সিদ্ধান্ত নিছেন যে? খোঁচানো ছাড়াই লেখা নামায় দিলাম। তাও আবার একেবারে এয়ারপোর্টে বইসা বইসা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো কিন্তু দারুণ আপনার
দেবদ্যুতি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এক লেখায় এতো নীতিগত সিদ্ধান্ত? একনেকের বৈঠক ফেল মারবেতো!
সুন্দর হইছে লেখা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হেহে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে তো সমস্যা নাই। সমস্যা বাস্তবায়ন করতে গেলে সমস্যা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
২০০৯ সালের সাংহাই ভ্রমণের কথা মনে পড়ে গেল। সে এক অভিজ্ঞতা ছিল বটে! জীবনের প্রথম বিদেশ সফর। বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই বেশ ঘটনা-টটনা ঘটছিল। ভাষার সমস্যা তো ছিলই। যাই হোক, সেসময় ভেবেছিলাম "ভিনদেশে চীনদেশে" নামে এক সিরিজ লিখব। লেখা হয়ে ওঠেনি আর।
আপনার লেখাটা বেশ ভালো লাগল পড়তে। আদর্শ ব্লগরব্লগর যাকে বলে আরকি।
বেশ আগের স্মৃতি নিয়ে লিখলে কিন্তু সত্যের সাথে কল্পনা মিশে দারুণ একটা মিশেল তৈরি হবার কথা। লিখে ফেলেন না!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বুখে আয় বাবুল ।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
সেই সব দিন আর নাই, আজকাল বাবুলরা আর বাবুলদের বুখে আসতে চায় না সুজন্দা। উপ্রে আমার সরল আহ্বানে সাক্ষী সত্যানন্দের জবাবটা দেখেন!
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ইয়ে, আমার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেনু?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আয়া পড়ছি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এরকম সুন্দর সাবলীল ভাষা পড়লে আমার একটা কথায় মনে আসে।
ভাষা ন্যুডুলস। স্লুরুৎ।
-----------------------------------
ইচ্ছে মত লিখি
http://icchemotolikhi.blogspot.in/
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সাংহাই এ কিছু জায়গায় wifi ব্যবহার করার সময় মোবাইল নাম্বার না লাগলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাগেই যেমন KFC, pizzahut । মোবাইল নাম্বার চায় ফিরতি মেসেজে কোড পাঠায় ।
হুম wifi এর চিনা ভাষা উ-সিয়েন হলেও wifi বললেই সবাই বুঝে, আপনার অভিজ্ঞতা জেনে ভালো লাগলো
হ্যাঁ মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে ওয়াই ফাই পাসওয়ার্ড দেয়ার ব্যাপারটা বিরক্ত লেগেছে। তাহলে মানুষ ল্যাপটপে কানেক্ট করবে কীভাবে? আর এয়ারপোর্টের মতো জায়গায় যেখানে মানুষের লোকাল সিম থাকার সম্ভাবনা নেই সেখানে যদি ওয়াই ফাই দিয়ে একটু আপনজনের কাছে খোঁজ পাঠাতে না পারে তাহলে সেই ওয়াই-ফাই তো অর্থহীন। ওয়াই-ফাইএর চাইনিজ পরিভাষা জেনে ভালো লাগল।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সব্ভবত অপবাবহার রোধ করতে এই ব্যবস্থা। হাসপাতাল, শপিং মল, রেল স্টেশন সব জায়গায় মোবাইল নাম্বার চায়।
বিদেশী টুরিস্টদের জন্য সমস্সাই বটে
- ইয়েন নয় ইউয়্যান।
- ভবিষ্যতে গণচীনে ফেরেশতাদের হোটেল আর বিনা পয়সার যত্রতত্র ওয়াই ফাই এড়িয়ে যাবে। প্রথমটা অনিরাপদ আর দ্বিতীয়টা পোকামাকড়ের ঘরবসতি, মায় ছারপোকাসহ।
- গণচীনের বড় এয়ারপোর্টগুলোতে ডে রুম বা ঘন্টা ভাড়ার বিছানা কখনো আমার চোখে পড়েনি। এই কারণে একবার ১৫০ ডলার দিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য পুলমানে থাকতে হয়েছিল। সে কথা মনে পড়লেই গা জ্বলে।
- সাঙহাই-কুয়াঙচৌ-এর মতো এয়ারপোর্ট যেগুলোতে ২৪ ঘন্টা ফ্লাইট আছে সেগুলোও কীভাবে যেন রাতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। তখন একেবারে ভূতড়ে অবস্থা।
- আমি নিজে চপস্টিক ব্যবহারে দড় না, কিন্তু কী করে যেন চপস্টিক দিয়ে বাদাম তুলে খেতে পারি। এটা মনে হয় আমার মত সব নবিসই পারে।
- এয়ারপোর্টের রেস্টুরেন্টে খাবার সময় টিস্যুপেপারটা পর্যন্ত কিনতে হয়েছে এমন 'চামার' অভিজ্ঞতা আছে। এইজন্য এয়ারপোর্টে কেএফসি/ম্যাকডোনাল্ডস জাতীয় দোকান ছাড়া অন্যত্র পারতপক্ষে যাই না।
- অফলাইনে ব্যবহার করা যায় এমন কোন ট্রানস্লেটর পেলে মোবাইলে আপলোড করে রাখবে। বিপদে অনেক কাজে দেবে।
- ভ্রমণের সময় সাথে কিছু পাই/কেক ধরনের জিনিস, বাদামের প্যাকেট এসব রাখবে। খুব কাজে লাগে। কোন বদরাগী অফিসার ফেলে দিলেও আফসোস থাকে না।
- উত্তর আমেরিকা যাতায়তের জন্য পারতপক্ষে চায়না ইস্টার্ন বা চায়না সাদার্নে উঠবে না। এগুলো এখনও ডমেস্টিক মানের বিশেষ ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। খুব ঠ্যাকায় পড়লে এয়ার চায়না বা ড্রাগনে উঠতে পারো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- ফেরেশতাদের হোটেলে যাওয়াটা আসলেই ঠিক হয় নি। যেটা বললাম একা থাকলে হয়ত কখনোই যেতাম না। ওনারা সাথে থাকায় কীভাবে কীভাবে যেন যাওয়া হয়ে গেল।
- যাক আপনার খরচের কথা শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। যদিও বিপদ হতে পারত। কিন্তু অন্তত খরচটা খুব বেশি হয়নি।
- যেখানে রাত বারোটা একটায় ফ্লাইট এসে নামছে সেখানে বিভিন্ন অফিস বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ সার্ভিসগুলো কীভাবে পাবে? শিফট করে লোক রেখে দিলেই তো হয়। বরং রাতের বেলাতেই সার্ভিসগুলো আরও বেশি দরকার।
- না আমি বাদামও খেতে পারি না চপস্টিক দিয়ে। তবে খেল দেখানোর জন্য একটা চপস্টিক দিয়ে টিপ দিয়ে দিয়ে একটা একটা করে ভাত তুলে খেতে পারি। কেউ চপস্টিক নিয়ে বেশি কিছু বলতে আসলে এই টেকনিক দেখিয়ে দেই।
- আমি যে রেস্টুরেন্টটাতে বসে ছিলাম সেটা এই হিসাবে বেশ ভালো। চলনসই দাম এর সাথে ওয়াইফাই আছে, ল্যাপটপ চার্জ করার পোর্ট আছে। প্রায় পাঁচ ছয় ঘন্টা বসে ছিলাম তারপরেও কেউ উঠে যেতে বলেনি। এর মধ্যে প্রায় সাত আট বার পানি চেয়ে খেয়েছি। তাতেও কেউ আপত্তি করে নি। হাসিমুখে পানি দিয়ে গেছে। দোকানটার নাম হোপস্টার।
- ট্রান্সলেটরের কথাটা মাথায় রাখলাম। জরুরী জিনিস। যে হোটেলটাতে গিয়েছিলাম ওদের দেখি এই ব্যবস্থা। মোবাইলে না। তিন চার পাতার একটা বইতে এরকম অনেকগুলো বাক্য ইংরেজি আর চায়নিজ ভাষায় লিখে রেখেছে। কিছু বোঝাতে হলে সেটা বের করে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এর পরের বার চায়না দিয়ে গেলে এরকম অফলাইন ব্যবস্থা করে যেতে হবে।
- প্রতিবার মনে করি হালকা খাবার নেবো সাথে। নেয়া আর হয় না।
- চায়না সাউদার্ন কিন্তু আমাকে (পরিচিত বন্ধুদেরও) ভালো সার্ভিস দিয়েছে। দারুণ হোটেল দেয়। লাগেজ নিয়েও সমস্যা হয় নি। যখন শুরু হলো তখন সম্ভবত সার্ভিস কিছুটা খারাপ ছিল। সেই ভরসায় চায়না ইস্টার্নের টিকিট কাটা। কিন্তু সস্তার মূল্য ওরা কড়ায় গণ্ডায় উঠিয়ে নিয়েছে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কুনমিং থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে আমার পাশে যে যাত্রী ছিলেন উনার কাছে শুনেছিলাম, টরেন্টো থেকে চায়না ইস্টার্ন উঠেছেন। সাংহাই একদিন এক রাত হোটেল এ ছিলেন, এরপর কুনমিং ফ্লাইট । সস্তার তিন অবস্থা
সবই বুঝি।
..................................................................
#Banshibir.
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইয়ে, মানে বোঝেনই তো।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আহ কতদিন পর এয়ারপোর্ট থেকে এরকম লেখা পড়লাম।
আগে কনফু তিথি লিখতো দেশে ফেরার সময়।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
লেখার জন্য এবার থেকে লং ট্রানজিটের শিডিউল করব তাহলে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
প্রার্থণা করি আপনার আরো লম্বা লম্বা ট্রানজিট পড়ুক!
আমরাও আরো সাংঘাতিক লেখা পাই!!
____________________________
হেহে।। চায়না ইস্টার্নে আর পদধূলি দিতেছি না
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমার ভাই, তোমার ভাই,
ওঁয়াই-ফাঁই, ওঁয়াই-ফাঁই’।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হাহাহা। লেখা সুস্বাদু হইসে!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ত্রিমাত্রিক ভাইয়া, আমি ক্যালগেরি থেকে গুয়াংযু হয়ে ঢাকা যাচ্ছি, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স এ। ১৫ ঘন্টার ওয়েটিং টাইম, ওরা হোটেল দিবে বলেছে, এতদিন চিন্তা হয় নি, এখন হঠাৎ মনে হলো, আমার কি ভিসা/ পারমিট লাগবে হোটেলে যেতে, যদিও লাগেও সেটার জন্য কি আমাকে পে করতে হবে, নাকি এয়ারলাইন রাই সব ব্যবস্থা করে দিবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনন্যা
নতুন মন্তব্য করুন