প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার,
আশা করি ভালো আছেন। আপনার সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য পড়ে, বলা যেতে পারে বাধ্য হয়েই আপনাকে লিখতে বসা। যা লিখব তার অনেক কিছুই আপনি জানেন, হয়ত আমার চেয়ে ভালোই জানেন। তারপরেও আপনার কর্মব্যস্ত দিনের মধ্যে কোনো অবসর সময়ে আমার চিঠিটি পড়ে ফেললেও ফেলতে পারেন এই ভরসায় লিখতে বসলাম।
২০১৩ তে শাহবাগ আন্দোলনের সমসাময়িক সময়ে মৌলবাদি, হেফাজতি এবং সর্বোপরি জামাত শিবিরকে খুশি করার জন্য চারজন ব্লগারকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শুরু হওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ২০১৫ সালের বইমেলায় বাংলা একাডেমির ছত্রছায়ায় তথাকথিত বিতর্কিত বই প্রকাশের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত অশ্লীল এবং ধর্মবিরোধী লেখার অভিযোগ দেখিয়ে প্রবল জনসমর্থনের মধ্য দিয়ে লেখক এবং ব্লগার রাজিব হায়দারকে হত্যা করে ইসলামি মৌলবাদি গোষ্ঠী। ২০১৫ এর বইমেলা প্রাঙ্গনে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয় একই অভিযোগে। এরপর অল্পসময়ের ব্যবধানে ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়, নীলয় নীল, ফয়সল আরেফিন দীপন সহ আরও বেশ কয়েকজনকে সেই একই অশ্লীল এবং ধর্মবিরোধি বই এবং ব্লগ লেখা এবং প্রকাশের জন্য। হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে আহত করা হয় শুদ্ধস্বরের পরিচালক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে, সচলায়তনের ব্লগার, কবি, লেখক তারেক রহিম এবং রণদীপম বসুকে। এই এক বছরে এই সব হত্যাকান্ড এবং হামলার তদন্তের ব্যপারে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির খবর আমরা পাই নি। তদন্তের অগ্রগতির খবর না পেলেও প্রায় প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মন্ত্রী-মিনিস্টার, চুনোপুটি লেখক, বামাতি আন্দোলকগোষ্ঠী আর হালের পিনাকি ভট্টাচারিয়া পর্যন্ত নানা সময় নানা রকম চটকদার ঈশপের গল্প আর উপদেশের বাণী নিয়ে হাজির হয়েছেন। একদিকে আনসারুল্লাহ, আনসারাল ইসলাম, জামাত-শিবির অশ্লীলতা আর ধর্মবিরোধিতার কারণ দেখিয়ে হত্যা করেছে লেখক ব্লগারদের আর অন্যদিকে তাদের প্রচারবিভাগ আর অপরাধ হা(লা)লকা প্রমাণ করার উইং হিসেবে কাজ করে আসছে সরকার থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তি। আমি যদি ভুল করে না থাকি, এইসব প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় আমরা আপনাকে সাথে পেয়েছি। আপনাকে ধন্যবাদ।
গত ২০১৫ সালের বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনি বন্ধের ঘটনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি মুক্তচিন্তার এই বন্ধুর পথে আমরা সরকারকে পাশে পাবো না। বরং মৌলবাদি গোষ্ঠী যখনই বই প্রকাশ এবং মুক্তচিন্তা নিয়ে কোনো দাবি করেছে সরকার তখনই সেই দাবি পূরণে প্রবল উৎসাহে ঝাপিয়ে পড়েছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত বইমেলায় গত এক বছরের মধ্যে নিহত হওয়া কোনো লেখক বা প্রকাশকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয় নি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে যে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাপারেই তারা ছিলেন অনুপস্থিত। যে মেলা লেখক আর চিন্তকদের ধারণ করার কথা সেই মেলার জন্য এটা যে কত বড় অশ্লীল আর কদর্য বিষয় এটা লিখে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। শুধু বাণিজ্যে ঘাটতি হবে, লোকজন নাখোশ হবে এইসব ভেবে যখন বইয়ের প্রকাশক থেকে লেখক, একাডেমির পরিচালক থেকে অধ্যাপক যখন এইসব ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে বক্তৃতা সেমিনার করতে বসেন তখন তাঁদেরকে আর বাণিজ্যমেলার আয়োজক বিক্রেতাদের থেকে আলাদা করা যায় না।
এইসব ঘটনার ধারাবাহিকতা এবং ঐতিহ্য রক্ষায় প্রত্যাশিতভাবেই এবারের মেলায় বন্ধ করে দেয়া হলো ব-দ্বীপ প্রকাশনির স্টল, গ্রেফতার করা হলো ব্লগার ও লেখক শামসুজ্জোহা মানিককে। একজন সন্ত্রাসীর অস্ত্র জব্দ করার মতো করে সংগ্রহে থাকা বই পুস্তকও জব্দ করা হলো। একই ধরণের ঘটনা অবশ্য আমরা দেখেছি ২০১৩ সালে চারজন লেখককে গ্রেফতারের ঘটনার সময়েও। দাগী সন্ত্রাসীদের মতো করে নিজেদের ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্র (কলম, পেন্সিল, কী-বোর্ড, মনিটর, সিপিউ) নিয়ে তাদের ছবি প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়। এবারের বইমেলা শুরুর আগেই অবশ্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ডঃ শামসুজ্জামান খান নিশ্চিত করেছিলেন এবারের মেলায় ‘উস্কানিমূলক’ বই বেশ কঠোর হাতেই দমন করা হবে। তবে এটা তিনি নিশ্চিত করেন নি যে এই ‘উস্কানি’র ফিল্টার হিসেবে জামাত-শিবির আর বাঁশেরকেল্লার তৈরি করে দেয়া মানই যে সর্বশেষ মান হিসেবে গ্রাহ্য হবে। অবশ্য উনি নিজেও সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, বইটি পড়ে উনি শিউরে উঠেছেন এবং যে সাংবাদিক ওনার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি বাসায় গেলে উনি যে তাঁকে শিউরে ওঠার দৃশ্যটি আবার মঞ্চস্থ করে দেখাবেন সেটি নিশ্চিত করেছেন।
এবার এইসব পুরানো কথা আবার নতুন করে বলার কারণে ফিরে আসি। আজকে বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় আপনার একটি বক্তব্য পড়লাম। সিলেটটুডে পত্রিকার রেফারেন্সে আমি বরং আপনার করা সেই বক্তব্যকে সরাসরি মনে করিয়ে দেই,
প্রথমত আমি কোনো স্টল বন্ধ করার পক্ষে নই। তবে যে বইটির কারণে স্টলটি বন্ধ করা হয়েছে, সেটির কয়েকটি লাইন আমাদের বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পড়ে শুনিয়েছেন। আমি কয়েক লাইন শোনার পর আর সহ্য করতে পারিনি। এত অশ্লীল আর অশালীন লেখা। এই স্টলটিকে আর অন্য দশটি সাধারণ স্টলের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। তিনি বলেন, আমি মনে করে লেখালেখির সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে। আর যে বইটির বিষয়ে কথা হচ্ছে, আমার অনুরোধ কেউ যেন এই বইটি না পড়ে।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো আপনি ‘যে’ কথাটি বলেছেন সেটি কোনো নতুন কথা নয়। গত দুই তিন বছর ধরে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এই একই ধরণের কথা শুনে অভ্যস্ত। যেটা উল্লেখ করার মতো বিষয় সেটা হলো কথাটি বলছেন ‘আপনি’।
দীর্ঘ সময় ধরে নানা রকম স্বার্থান্বেষী, পদপ্রত্যাশি, আপোষকামী বুদ্ধিজীবীদের ভীড়ে আপনি একজন ব্যতক্রমি উদাহরণ হয়ে আছেন। আমাদের প্রজন্ম থেকে শুরু করে আমাদের চেয়ে তরুণতর প্রজন্মের অনেকেরই শৈশব, কৈশোরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, মুক্তচিন্তা বিষয়ক চিন্তা ভাবনার জগতে আগমন আপনার হাত ধরে। এরপর আমরা বড় হয়েছি। আমাদের অনেকেরই নিজস্ব চিন্তা ভাবনা এবং চেতনার জগৎ তৈরি হয়েছে। আপনার যুক্তি এবং চিন্তা কখনও ভুল মনে হয় নি এমন নয়। কিন্তু সবকিছুর পরেও আপনি দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের মতো মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করে এসেছেন, আমাদের পথ দেখিয়েছেন, আমাদের পাশে থেকেছেন। জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে বা টাকাপয়সার লেনদেনে আমরা যখন অনেক বড় বড় রাঘব বোয়ালকে বিক্রী হয়ে যেতে দেখেছি, আপোষ করতে দেখেছি, আপনি সেরকম অনেক সময়েই আমাদের ভরসা দিয়েছেন। অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দারের হত্যার পর গুটিকয় মূলধারার লেখকদের মধ্যে থেকে আপনি কলম ধরেছেন। আমাদের ভরসার জায়গাটা শক্ত হয়েছে। শাহবাগে গিয়ে আপনি নিজের ভুল স্বীকার করেছেন, তরুণ প্রজন্মের সাথে শ্লোগান দিয়েছেন, সুশীল বুদ্ধিজীবীদের বকে দিয়ে কলাম লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে বিবৃতি দেয়া পঞ্চাশ বুদ্ধিজীবীকে বকে দিয়েছেন। আমাদের ভরসার জায়গা শক্ত হয়েছে।
আর সেই শক্ত ভরসার জায়গা থেকেই আজ আপনাকে লিখতে বসেছি। রাজিব হায়দারকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে যে কথাটি শুনতে হয়েছে সেটা হলো, ‘তুমি কি রাজিবের লেখা পড়ে দেখেছ?’ অভিজিৎ রায়ের হত্যার পরে, অনন্ত বিজয় বা ওয়াশিকুর বাবুর হত্যার পরেও একই ধরণের প্রশ্ন শুনেছি। এই জায়গায় একটা কথা স্পষ্ট করে আপনাকে বলে রাখতে চাই, এই ধরণের বিষয়ে অনেক প্রগতিশীল মানুষও এই প্রশ্নটি করেন। তবে সেই প্রশ্নের উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন। যেমন আমি অনেককেই বলতে শুনেছি, “যারা বলছে এই বইয়ে ধর্মবিরোধী কথা আছে, মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কথা আছে তারা নিজেরা কি এই বই পড়েছে?” অনেককেই উপসংহার টানতে দেখেছি যে যারা ধর্মান্ধ, মৌলবাদি তারা এইসব বই না পড়েই অন্যের শোনা কথায় নাকি এইসব বই নিষিদ্ধের দাবি জানায় বা বইয়ের লেখককে হত্যা করার হুমকি দেয় বা বা সুযোগ পেলে হত্যা করে। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, হয়ত যে বইগুলোর কথা বলা হয়েছে সে বইগুলো আসলে যথেষ্ট পরিমাণে অনুভূতিতে আঘাত করে না, হয়ত বইগুলো যথেষ্ট অশ্লীল নয়, এইজন্য বারবার প্রশ্ন করা হয়, ‘তুমি কি বইগুলো পড়ে দেখেছ?’ মৌলবাদিরা প্রশ্ন করে এটা বুঝাতে যে, বইটি এত খারাপ যে এর জন্য হত্যা করা যায়, আর অনেক প্রগতিশীল প্রশ্ন করে এই কারণে যে বইটি হয়ত এত খারাপ নয়, বা এতটা উস্কানিমূলক নয়। যে কারণে অনেকেরই বারবার বলতে হয়, ‘ওরা তো বইটি পড়েই নি’। আপনার আজকের কথা শুনে ঠিক সেরকমই মনে হল। ঠিক কতটা অশ্লীল হলে একটি বই পড়তে মানুষকে নিষেধ করা যায়?
আমি বলতে চাই, কী হবে যদি ওরা বইটি আসলেই পড়ে? আসলেই বইটি তাদের যথেষ্ট পরিমাণে আহত করে? তখন আমি কী বলব বইটির ব্যপারে? আমি কি বলব, "প্রথমত আমি কোনো স্টল বন্ধ করার পক্ষে নই। তবে ... ... "? আপনার যদি মনে না থাকে তাহলে আমি আপনাকে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনি নিজেই কিছুদিন আগে ‘কিন্তু’ নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন। আপনার কি মনে হচ্ছে না এই বাক্যে এই ‘তবে’ শব্দটি ব্যবহারের কারণে বাক্যের প্রথম অংশটি গুরুত্ব হারিয়েছে? আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনার বলা, 'বইটি এতই অশ্লীল যে আমি সহ্য করতে পারি নি' কথাটি রাজিব হত্যার পর 'রাজিবের লেখা এতটাই অশ্লীল যে যে কোনো সুস্থ মানুষই এতে আহত হবে' কথাটির মতো শোনাচ্ছে না?
আপনি জানেন গ্যালিলিওর আবিষ্কার সেই সময়ে কত মানুষের মনে, অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছিল। সৌভাগ্যজনকবভাবে গ্যালিলিও ঠিক ছিলেন বলেই ঘটনাটি আমরা জানি। কিন্তু এমনও হতে পারত গ্যালিলিও আসলে ভুল করেছিলেন। গ্যালিলিও হয়ত মিথ্যা বলেছিলেন। যদি গ্যালিলিওর আবিষ্কার একশ বছর পর ভুল প্রমাণিত হতো তাহলে কি সেই সময় রাষ্ট্র কর্তৃক গ্যালিলিওকে শাস্তি দেয়া সঠিক হয়ে যেত? একজন মানুষ যখন একটা বই লেখে, একটা মতবাদের কথা বলে, কোনো কিছু নিয়ে মন্তব্য করে সেটা ভুল হোক আর ঠিক হোক, সত্য হোক আর মিথ্যা হোক, শ্লীল হোক আর অশ্লীল হোক সেটার জন্য তার কোনো শাস্তি প্রাপ্য হতে পারে না। আপনি সেটা কাউকে পড়তে নিষেধ করতে পারেন না। বিশেষ করে যখন সেই মানুষটি সেই কাজের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ঠিক সেই প্রসঙ্গে আলোচনার সময়।
আপনার সাম্প্রতিক মন্তব্যের সাথে, হুমায়ুন আজাদকে হত্যাচেষ্টার পর আজাদের পাক সার জমিন বইটি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের ‘কারণ যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না।’ বাক্যের সাথে বিশেষ কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন কি? আজাদের এই বইটি মেলায় বিক্রী করা হচ্ছে কি? বা যে স্টল এটি বিক্রী করছে সেটি নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে ইচ্ছে করছে। আপনি কি আপনার অগ্রজ সহলেখক হিসেবে হুমায়ুন আজাদকে কখনও একটু বুঝে শুনে সতর্ক থেকে লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন? হুমায়ুন আজাদের অনেক বই নিয়ে অশ্লীলতা আর ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সময়। আপনি কি সেই বইগুলো পড়ে দেখেছেন? সেগুলো কয়েক লাইন পড়ার পর কি আপনি সহ্য করতে পেরেছেন? যে স্টলগুলো এই বইগুলো বিক্রী করছে তাদের কি আপনি আর আট দশটি স্টলের সাথে তুলনা করতে পারেন?
মানুষের লেখার এবং চিন্তা করার অধিকার দেয়ার জন্য সেই চিন্তাটির সঠিক হবার প্রয়োজন নেই, শ্লীল, মার্জিত হবার প্রয়োজন নেই, বিশেষ কোনো মানুষের রুচির ফিল্টারে পাশ করে আসার দায়বদ্ধতা নেই। হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায় বা শামসুজ্জামান মানিকের লেখা বইয়ের চিন্তা যদি ভুলও হয়, অশ্লীলও হয়, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষের মনে আঘাতও দেয় বা তাদের কাছে অশ্লীলও মনে হয় তাতেও কিছু যায় আসে না। আপনি বা আমরা কেউ বলতে পারি না, ঐ বইটি পড়ো না ওই বইটি পড়লে তুমি নষ্ট হয়ে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো লেখা সরাসরি কোনো সম্প্রদায় বা মানুষকে হত্যা বা ক্ষতি করার কারণ হিসেবে না দাঁড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত সেই লেখাটিকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়া করানো যায় না। প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে ২০১৩ সালে আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যায়। যে লেখাগুলো সরাসরি কিছু মানুষকে হত্যায় প্ররোচিত করার জন্য লেখা হয়েছিল। এই ধরণের কিছু ক্ষেত্রে আমরা কেবলমাত্র লেখার অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি।
আপনাকে যখন লিখতে বসেছি, এই সুযোগে প্রাসঙ্গিক আরও কিছু কথা বলে ফেলি। আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন, আমার দেশ পত্রিকায় লেখাগুলর প্রসঙ্গে যখন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় তখন অনেক সাংবাদিক, সম্পাদক বুদ্ধিজীবী বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে মাহমুদুর রহমানের পাশে দাঁড়ায়। একইভাবে আপনি কিছুদিন আগে যাদের নিয়ে লিখেছেন, সেই পঞ্চাশ বুদ্ধিজীবী কিন্তু বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বার্গম্যান নামক জামাতের ভাড়াতে লেখকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন এইসব লোকদের কিন্তু রাজিব হায়দার বা শামসুজ্জামান মানিকের পাশে পাবেন না। কারণ বাকস্বাধীনতা তাদের কাছে ইস্যু মাত্র, তাদের মূল এজেন্ডা এই দেশে জামাত শিবিরের পথকে প্রশস্ত করে দেয়া অথবা ভবিষ্যতে কিছু অর্থ আগমনের পথককে সুগম করা।
অনেক কিছু লিখে ফেললাম। আপনি ভুল স্বীকার করতে পারেন বলেই লিখলাম। আপনি আমাদের লোক বলেই লিখলাম। এখন পর্যন্ত আপনাকে খাঁটি মনে হয় বলেই লিখলাম। আপনার কথার গুরুত্ব অনেক মানুষের কাছে অনেক জরুরি বলেই লিখলাম। শ্লীল অশ্লীল বা উস্কানির ওপর ভিত্তি করে যে বই নিষিদ্ধ করা যায় না, আশা করি আপনি সেটি বুঝবেন। বইয়ের কাজই তো উস্কানি দেয়া, মানুষকে আহত করা, পুরোনো ধারণাকে বিপন্ন করা। যে বই চিন্তাকে উস্কে দেয় না, চেতনাকে বিপন্ন করে না, নিজেকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় না সে বইয়ের সাথে বাচ্চাকে খুশি করার জন্য ঝুনঝুনিওয়ালা খেলনার পার্থক্য কোথায়?
আপনি ভালো থাকবেন। আমি বিশ্বাস করি আমাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য আপনার ভালো থাকার এখনও খুব প্রয়োজন আছে।
ইতি
আপনার একজন পাঠক
মন্তব্য
খবরটা পাবার পর থেকে এত মনঃকষ্টে ভুগছিলাম যে বলার নয়। প্রথমে ধরেই নিয়েছিলাম যে পত্রিকাটা স্যারকে 'মিসকোট' করেছে। পর পর আরো দু'তিনটে পত্রিকায় প্রায় একই রিপোর্ট দেখে বুঝলাম--হয় সব পত্রিকা এক সঙ্গে যোগসাজস করে লিখেছে, অথবা স্যার *আসলেই* কথাটা বলেছেন!
আমি জানিনা স্যার কী ভেবে কথা গুলো বলেছেন--আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় জাফর স্যারের মত মানুষের মুখ থেকে কোন একটা বই পড়তে নিষেধ করার মত কথা শুনতে পাব। কিন্তু সেটাই হয়েছে।
স্যারকে নিয়ে আমার বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ---সেটা শুধু আমার না--আরো অনেকেরই। চারিদিকে বেটে খাটো মানুষের ভীড়ে আমরা যখন প্রানপনে মাপের বাইরের মানুষ খোঁজায় ব্যস্ত--স্যার ছিলেন আমাদের কাছে একমাত্র 'পার্টিকুলার সল্যুশন' (যারা ডিফারেন্সিয়াল ইক্যুয়েশন পড়েছেন--তারা বুঝবেন আমি কি বুঝাতে চেয়েছি)। যে দেশে ৯৫ ভাগ বুদ্ধিজীবি পানির দরে নিজের মস্তক-বিবেক বন্ধক দিয়ে দেন--একমাত্র স্যারকে দেখেছি ঘাড় গোঁজ করে বিরুদ্ধ-স্রোতে পাল তুলে দিতে।
তাই সঙ্গত কারনেই স্যার আমাদের কাছে এক অনিবার্য বাতিঘর।
আর তাই স্যারের মুখে এহেন সংলাপ প্রলাপের মত শোনায়।
আমি এবং আমরা অনেকেই স্যারকে চিনেছিলাম নানান পরীক্ষিত দুঃসময়ে--চিনেছিলাম আমাদের বিবেকের সমান্তরাল একটি লাইন বলে---চিনেছিলাম অন্ধ রাতের একমাত্র প্রদীপ বলে। তাই আমি এইটা ভাবতে চাই না যে স্যার নিজের ভুল বুঝতে পারবেন না।
আমি মনেপ্রানে চাই--আপনি ভুলটা টের পাবেন--এবং সম্ভব হলে ( কারন আমাদের দেশে ভুল স্বীকারের কোন উদাহরণ নেই--এক আপনি ছাড়া) ভুলটা স্বীকার করবেন।
এইটুকুই চাওয়া!
এইটুকুই চাওয়া।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। খুশি হলাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কথা আপনার কাছে 'বালখিল্য' মনে হয় না জেনে।
কিন্তু তার অন্যান্য কথার মত এই কথার সাথে আমি ও প্রায় একমত। মানুষের মনে দুঃখ দিলে জবাবদিহি থাকা উচিত। যেমন খালেদা জিয়ার মুক্তি যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে controversy ব।
তিরিশ লাখ শহীদও কিন্তু কারও কারও মনে দুঃখ দিয়েছিলেন। সেটারও তাইলে জবাবদিহিতা করতে হয় নাকি? মনে দুক্ষু দিলেই যদি জবাবদিহিতা করতে হয় তাহলে আপনারও আমার কাছে জবাবদিহি করা উচিৎ। আপনার যুক্তির দৈন্য দশা আমার মনে দুক্ষু দিয়েছে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
''বইয়ের কাজই তো উস্কানি দেয়া, মানুষকে আহত করা, পুরোনো ধারণাকে বিপন্ন করা। যে বই চিন্তাকে উস্কে দেয় না, চেতনাকে বিপন্ন করে না, নিজেকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় না সে বইয়ের সাথে বাচ্চাকে খুশি করার জন্য ঝুনঝুনিওয়ালা খেলনার পার্থক্য কোথায়?'' এক্দম মনের কথা। দারুন লিখেছেন।
ধন্যবাদ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের চোখে এই লেখা পড়বে বলে মনে হয় না। উনি ব্লগ থেকে দূরের মানুষ। উনার কোন শিক্ষার্থী/ভক্ত/পাঠক উনাকে এই লেখা ইমেইল করলে বা প্রিন্ট করে দিলে তাহলে হয়তো উনি এটা পড়লেও পড়তে পারেন।
ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে,অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সচলায়তনের 'ত্রিমাত্রিক কবি'র লেখা পড়ুন আর না-ই পড়ুন তাতে তিনি যা বলেছেন (অথবা তিনি বলেছেন বলে প্রকাশিত হয়েছে) সে ব্যাপারে তাঁর দায় হ্রাস পায় না। আমরা বরং কয়েকদিন অপেক্ষা করে দেখি তিনি এই বক্তব্যকে অস্বীকার করেন কিনা বা এই বক্তব্য থেকে সরে আসেন কিনা।
বইমেলাতে বাংলা একাডেমি ও পুলিশের তৎপরতা প্রমাণ করে যে এই ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্রের অবস্থানটি কী। তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমি ও পুলিশের তৎপরতার বিপক্ষে কোন বক্তব্য না দেয়ায় বা পদক্ষেপ না নেয়ায় এটিও স্পষ্ট যে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকারের অবস্থান এখানে অভিন্ন। আলোচ্য বইগুলো অথবা রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকারের দৃষ্টিতে আপত্তিকর বইগুলো কেবলমাত্র যে একুশের বইমেলায় বিক্রি হয় তা নয়। এগুলো সারা বছর কোন না কোন দোকানে (ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল) বিক্রি হয়। সেই বিক্রির ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা জারী না হওয়ায় অথবা বইগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করায় বোঝা যায় যে, রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকার শুধুমাত্র একুশের বইমেলার 'পবিত্রতা' রক্ষার্থে আগ্রহী। এর বাইরে ঐসব বই নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই।
বাংলাদেশ যে ধরনের রাষ্ট্র সে ধরনের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকারের মধ্যকার পার্থক্যের মোটা দাগটি ক্রমশ বিলীন হয়ে আসছে। অনেক দেশেই উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় নিয়োগগুলো বিশুদ্ধ রাজনৈতিক। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এখন নির্বাহী পর্যায়ের নিয়োগগুলোও অনেক দেশে পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সূত্রগুলো ধর্মগ্রন্থের বিধান নয় যে তার পরিবর্তন হবে না। ফলে এই পরিবর্তনগুলো ঠিক না ভুল সেটা এক বাক্যে বলা যাবে না। সময়ই নির্ধারণ করবে এর ভবিষ্যত কী হবে। কিন্তু এই মধ্যবর্তী সময় যেটা আমরা পার করছি সেখানে ভুল সিদ্ধান্তের দণ্ড সাধারণ নাগরিকদের বহন করতে হবে। সরকারকে কিছু দিন পর পর জনগণের কাছে ভোট চাইতে যেতে হয় বলে তার চেষ্টা থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠের পছন্দের বাইরে না যাবার। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি সরকারের রাজনীতি প্রভাবিত হয় তাহলে তারও চেষ্টা থাকবে সরকারের সুরে অনুরণিত হবার। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র আর সরকার মিলেই গোটা দেশ নয়।
বুদ্ধিজীবি শব্দটিকে আমরা যদি সদর্থে নেই তাহলে বলা যায় কালের স্রোতকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করার, জনগণকে পথের দিশা দেখাবার, অচলায়তন ভাঙার, মুক্তবুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর কাজটি বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর। তাঁরা সবসময় রাষ্ট্রযন্ত্র বা সরকারের সুরে গান গাইবেন না। যা কিছু মানবতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রগতিশীলতা, মুক্তবুদ্ধির পক্ষে তাঁরা সেসবের পক্ষে যাবেন। এতে যদি রাষ্ট্রযন্ত্র বা সরকারের বিপক্ষে যেতে হয় তবে তা-ই সই। যে বুদ্ধিজীবি এই কাজটি করতে পারবেন না তখন তিনি যত প্রতিভাবান হোন না কেন তিনি আর লোকমান্য থাকেন না। ইনক্যুইজিশনের খাঁড়ার নিচে দাঁড়িয়ে যদি এমন পক্ষ নিতে হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তখন আমাদের দেখতে হবে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য ইনক্যুইজিশনের খাঁড়া আছে কি না।
***************
একবার এক ভারতীয় রাজনীতিবিদকে বলতে শুনেছিলাম, ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়দের যুগ পার হয়ে পৃথিবী এখন বৈশ্য যুগে আছে। তাঁর ভাবনাটাকে ভুল বলার উপায় নেই। কিন্তু বৈশ্যচিন্তা খুব ভয়াবহ, কারণ এটি পৃথিবীর সবচে’ মধুর ও আকর্ষণীয় বস্তু অর্থের সাথে জড়িত। বৈশ্যচিন্তা সমাজের সকল যন্ত্রের মগজে আক্রমণ করে থাকলে সেটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ।
ওনাকে অনেকেই মেইল করেছে। ওনার অনেক ছাত্র এই ব্লগেও লিখে থাকেন। উনি চাইলেই লেখাটা পড়তে পারেন। কিন্তু সেটাও এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। তাহলে আমি নিজেই ব্লগে না লিখে স্যারকেই মেইল করতাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এই লেখার উদ্দেশ্য কী সেটা বোধগম্য। আমিও আমার মন্তব্যে বলেছি, "অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সচলায়তনের 'ত্রিমাত্রিক কবি'র লেখা পড়ুন আর না-ই পড়ুন তাতে তিনি যা বলেছেন (অথবা তিনি বলেছেন বলে প্রকাশিত হয়েছে) সে ব্যাপারে তাঁর দায় হ্রাস পায় না"। যাকগে, ১৭ই ফেব্রুয়ারীতে দেয়া তাঁর বক্তব্যের ব্যাপারে আজ ২০শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তিনি কিছু বলেছেন বলে শুনিনি। আমরা বরং আরও একটু অপেক্ষা করি এবং দেখি সাইকেলের পেছনের চাকা সামনের চাকাকে অনুসরণ করে কিনা।
অন্য সব বুদ্ধিজীবি, যারা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো প্রকাশ্যে কিছু বলে ফেলেননি তারাও আসলে 'কিছু না বলে' নিজেদের অবস্থানটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আশা করি অচিরেই বইমেলার মতো দেশের অন্য সব কিছুও এমন আলমের ১নং পঁচা সাবান দিয়ে ধুয়ে ধব্ধবে ফর্সা বানিয়ে ফেলা হবে।
জাফর স্যার বই পড়তে নিষেধ করতে পারেন, সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ।। মুক্ত চিন্তা আর প্রগতিশীলেরা যদি সব কিছুর ঊর্ধ্বে না থাকতে পারে তাহলে দেশ এক গভীর সঙ্কটের জাঁতা কলে পরে যাবে । জাতি আজ মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছেনা কেন?? আমরা কেন সব সময় অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে চলি?? অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতেই হবে, যার-যার অবস্থান থেকে আমরা প্রতিবাদ করি।। প্রতিবাদের ভাষা এক হলে জাতি প্রগতিশীল হবে।।
নাস্তিকতা এটা না যে অন্যের ধর্মকে ছোট করা, অশালিন ভাষার গালি দেয়া। যে বই অন্যকে ছোট, অশালিন ভাষা শেখায় তা থেকে সবারই দুরে থাকা উচিত। জাফর স্যার যদি এমন কথা বলে থাকেন তাহলে উনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সবাই দূরে থাকার আগে কাউকে তো বইটা পড়ে বলতে হবে যে ভাই সবাই দূরে থাকো। এই প্রথমে পড়া দুর্ভাগা লোকটি কে হবে? সে যদি প্রথমে পড়েই খুব কষ্ট পেয়ে শিউরে ওঠে তাহলে কী হবে?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ত্রিমাত্রিক কবি, একেবারে মনের কথা লিখেছেন, আপনার লেখার সাথে পুরোপুরি সহমত।
সোহেল ইমাম
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
১।অন্যের ধর্মানুভুতিতে আঘাত না দিয়ে স্যার লেখালেখি করার পরামর্শ দিয়েছেন।এরকম একটা গড়পড়তা,উর্বর মস্তিষেকর ভাবনা স্যারের মাথা থেকে আসবে এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে।বইটি না পড়েও স্যারের ধর্মানুভুতি আঘাত পেয়েছে,স্যারের বই গুলো পড়েও ত জামাত-হেফাজতের ধর্মানুভুতি আঘাত পায়।ধর্মানুভুতি রক্ষার জন্য স্যার কি তাহলে লেখালেখির স্টাইল পরিবর্তন করে বোরখা পরা মেয়েটি বা ফুটন্ত গোলাপ ধরনের বই লিখবেন? ২। গ্রামে ছোট ছেলে বড় ছেলের মত পড়া লেখায় খারাপ করলে পাড়াপড়শীরা টিপ্পনী কেটে বলেন-'সাইকেলের সামনের চাকা যেদিকে যাবে পেছনের চাকাও সে দিকে যায়।' আশা করি স্যার নিজের ভুল বুঝতে পারবেন এবং হুমায়ুন আহমেদের পথে হাটবেননা।
ধরুন, আপনার এই লেখা পড়ে আপনাকে আমার চরম গালি দিতে ইচ্ছে হল। এখন মডারেটর কি আমাকে সেই কমেন্ট করার সুযোগ দিবেন? কিংবা এটাও বলতে পারি অতিথি লেখকদের কমেন্ট করার ক্ষেত্রে মডারেশন এর নিয়ম রাখার কারণ কি? বাক স্বাধীনতার মহান দাবীদারদের তো যেকোন মন্তব্য সাদরে বিনা মডারেশনে গ্রহণ করার কথা।
যাই হোক, আমার গালি দেওয়ার কারণ আপনাকে উসকে দেওয়া কিংবা আহত করা কিংবা স্বাভাবিক সাধারণ ভদ্রলোক যে অশ্লীল গালি দিতে পারে না সে ধারণাকে বদলে দেওয়া। 'খুব ভাল হয়েছে' মার্কা কমেন্ট করা আর বাচ্চাকে ঝুনঝুনি দেওয়া তো একই জিনিষ এ কথা মেনে কি মডারেটর কি অশ্লীল গালিওয়ালা কমেন্ট প্রকাশ করবেন?
বাক-স্বাধীনতার পক্ষে যাঁরা বলছেন এক্ষেত্রে তাঁদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এর কারণ কি? নাকি ব্লগে বাক-স্বাধীনতা নেই, ব্লগে লিখতে হলে ভাই তাকে ব্লগের নিয়মকানুন মেনে লিখতে হবে কিন্তু বাংলা একাডেমী বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান কোনরকম নিয়মনকানুন রাখতে পারবেন না।
আপনি কিন্তু 'খুব ভালো হয়েছে' টাইপ ঝুনঝুনিওয়ালা কিছু বলেন নি। তারপরেও আপনার কমেন্ট কিন্তু প্রকাশ হয়েছে।
ব্লগকে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করুন। একটি নির্দিষ্ট প্রকাশনি একটি নির্দিষ্ট ধরণের বই ছাপতে বা না ছাপতে চাইতেই পারে। এরকম প্রকাশনি থাকতে পারে যারা শুধু বিজ্ঞানের বই ছাপতে চায়, কেউ বা শুধু ধর্মের বই ছাপতে চায়। বইয়ের মান বিচারের ক্ষমতাও প্রকাশকের সম্পাদকের থাকে।
কিন্তু আপনি কোনো বিশেষ ধরণের বই ছাপার জন্য যদি নিজেই প্রকাশনি খুলে নিজের মতো করে ছাপতে শুরু করেন তাহলে আমি আপনাকে বাঁধা দিতে পারব না। আপনি আমাকে গালি দিতে চাইলে আপনি নিজেই একটি ব্লগ খুলতে পারেন। চাইলে ফেসবুকেও গালাগাল দিতে পারেন। আমি চাইব আপনার সেই গালাগালের অধিকার বজায় থাকুক। সেই গালাগালের জন্য পুলিশ আপনার কম্পিউটার জব্দ করতে আসলে আমি ঠিক প্রতিবাদ করব।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
জনাব এলেবেলে (যাচাই কড়া হয়নি), মূল লেখা থেকে একটুখানি উদ্ধৃত করছিঃ
এরসাথে আপনার দাবীকৃত নিম্নোক্ত অংশের-
চিহ্নিত অংশের সম্পর্ক কোথায়? একটু ব্যাখ্যা করবেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ওটা পড়ার পর কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তার কাছ থেকে এমনটা কোনদিনই কেউই আশা করিনি!
হতাশ।
একটা বইয়ের জন্য স্টল বন্ধ করে দিলে বা সেই বই না পড়ার অনুরোধ জানালে কেন যেন হেনরিক হাইনের একটা কথাই মনে পড়ে
- আতোকেন
১। বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে হুবহু একই কথা পাচ্ছি, কথাটার কি কোনও রেকর্ড আছে?
২। এখন পর্যন্ত কি স্যারের অফিসিয়াল কোনও প্রতিবাদ এসেছে? আমার চোখে পড়েনি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
না কোনো প্রতিবাদ আমার চোখে পড়েনি। আর সব মিডিয়াতে এক খবরই আসছে। দেখা যাক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অপেক্ষায় আছি শান্ত'দা। মাহফুজ আনাম কবলিত মিডিয়ায়, সকল পক্ষ থেকেই দাঁড়ি কমা সেমিকোলনসুদ্ধা হুবহু একই রকম নিউজ দেখে একটু বিভ্রান্ত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কারোর কথা শুনেই এখন আর বিস্মিত হই না। এই লেখা থেকেই জানলাম স্যারের বক্তব্য কোন এক 'অপাঠযোগ্য' বই নিয়ে, যেটা কি না অবিশ্বাসের ভাইরাস-আক্রান্ত, ছুঁলেই রোগাক্রান্তির সম্ভাবনা আছে জাতীয় কিছু। প্রতিক্রিয়াটি যথাযথ, পড়তে পড়তে কিছু কথা মনে আসছিল, শেয়ার করি-
১) বই বা টেক্সট কি আদৌ খুব নিরীহ কোন জিনিস? না। এর কন্টেন্টও ভায়োলেন্ট হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণ আমরা এই লেখাতেই পাই। তাহলে বইকেও কি মডারেশনের মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত? এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে আমি দেখেছি (এবং গুণীজনমাত্রেই জানবেন) আপাতদৃষ্টে নিরীহ এই বস্তুটি একটি মানুষের খোল-নলচেসহ কিভাবে তাকে বদলে দিতে পারে। সে অর্থে বই অত্যন্ত ক্ষমতাশীল একটি জিনিস। তাহলে 'রক্তপাত' না হওয়া পর্যন্ত একটা বইকে নিষিদ্ধ করার জন্য অপেক্ষা করাই কি নিয়ম হবে?
২) আমার মনে হয় অন্যান্য দেশগুলোর প্রেক্ষিতে বাক-স্বাধীনতা, সেন্সরশীপ এর নিয়ম-নীতিগুলোর একটা ইতিহাস-ভিত্তিক তুলনামূলক পর্যালোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি ইতিমধ্যে কেউ শুরু করে থাকেন এখানে লিংক দিতে পারেন, পড়তে আগ্রহী।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
আজকাল আর হতাশ হইনা । কারন তাহলে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলবো । জাফর ইকবাল স্যার এর আগেও ভুল করেছেন । ভবিষ্যতেও করবেন । তবে এর আগেও স্যার ভুল বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন । অপেক্ষায় থাকলাম কখন স্যারের বোধদয় হবে ।
মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
=============================
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি
হতাশ হতে হতে আমার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে। তাই এখন কোন প্রতিক্রিয়াই হয় না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ভোতানুভূতিতে আঘাত দিলে সেটার শাস্তি কী?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমরা ভাই বোনরা কোনো সময় যদি খবর পেতাম, ওই বইখানা নিষিদ্ধ হচ্ছে বা পড়তে মানা, আমরা ঠিকই হস্তগত করে ফেলতাম। এত্ত বদের বদ ছিলাম সব। ভাল-খারাপ-অখাদ্য-অশ্লীল যা পড়েছি জীবনে বদহজম তো হয় নাই। আমরা জানি রিডিং ফর প্লেজার কি। আমার পোলাপানগুলারেও বদ বানাবো। দোয়া চাই।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আপনি যে টপিকে লেখাটা লিখেছেন, সেটা আসলে শেষ পর্যন্ত একটা সুপ্রাচীন, থিয়োরেটিকাল প্রশ্ন---- "সেন্সরশীপ কি ঠিক? কতটুকু সেন্সর করা ঠিক? ", সেটার একেবারে শতভাগ সঠিক উত্তর পাওয়াটা যেকোনোখানেই মুশকিল। পাঠকের যদি কোনো লেখা পড়ে "আহত হওয়ার" অধিকার থাকে, তাহলে সেই লেখা অন্যকে না পড়ার "অনুরোধ" করা কি অনধিকার চর্চা?
আর আপনার মাহমুদুর রহমানের উদাহরণটিও বেশ ঝামেলার। তার আমার দেশ পত্রিকায় ব্লগারদের কথিত ইসলাম বিরোধিতা নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়, আরিফুর রহমানের লেখা, সত্য-মিথ্যার মিশেলে। সেখানে মিথ্যা অপবাদ ছিলো, কিন্তু কাউকে সরাসরি হত্যা করার আহ্বান জানানো হয়নি, সেই আহ্বান জানানোর দায়িত্ব তখন কাঁধে তুলে নিয়েছিলো হেফাজত, আর সেটা কার্যকর করার দায়িত্ব নিয়েছিলো কিছু জঙ্গী। মিথ্যা প্রতিবেদনের দায় মাহমুদুরের, কিন্তু হত্যার দায় তার কতটুকু? বলবেন তো, যে মাহমুদুর এই লেখা না ছাপালে ব্লগাররা টার্গেট হতোনা, অর্থাৎ কিনা মাহমুদুর "উস্কানি" দিয়েছিলেন। সেই একই "উস্কানির যুক্তি" চইলে "ইসলাম বিতর্ক"কে নিয়েও করা যায়।
পোস্ট লেখককে আক্রমণ নয়, শুধু এটুকু বলতে চাই যে এই প্রশ্নের উত্তর এতো সহজ নয়, বুঝবেন আশা করি। ধন্যবাদ।
---কৌতুহলী
ধরেন মাহমুদুর রহমান তার পত্রিকায় ছাপালো, অমুক এলাকার হিন্দুরা মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে। এই খানে সে শুধু মিথ্যা কথাই বললো। এখন এই খবরের জের ধরে যে মুসল্লিরা এলাকার হিন্দুদের মেরে-কেটে একাকার করে ফেলবে, সেটার দায় তাইলে মাহমুদুর রহমানের নাই?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপনার নির্দিষ্ট প্রশ্নটির উত্তর আমি দেবো এরকম---হ্যাঁ, দায় আছে।
আরেকটু তলিয়ে ভেবে দেখি, দায় কেনো আছে? মাহমুদুর এই খবরটি যদি মেক্সিকোয় বসে ছাপতো, যে মেক্সিকোর টিহুয়ানা শহরে এক হিন্দু এক মসজিদ ভেঙেছে, লোকে এইটা নিয়ে তেমন গা করতো না, আর আমি বলতাম, দায় খুব বেশী না, ভুল খবর, দুঃখপ্রকাশ করলেই শেষ।
এখন আসি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সাংবাদিক মাত্র এই জিনিসটা জানা কর্তব্য যে এখানে হিন্দু-মুসলিম ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা মেক্সিকো থেকে অনেক বেশী, ইতিহাসে এইগুলা অনেকবার হয়েছে, এইসব খবর প্রকাশে তাই অতিরিক্ত সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ একটু ভুলের কারণে কোনো 'মব' গিয়ে হয়ত কারো বসতবাড়ি উজাড় করবে আর কারো হয়তো প্রাণও নেবে। দায়িত্ববান সাংবাদিক এই খবর ছাপার আগে ১০ বার ভাববেন, সেই দায়িত্বে গাফিলতির পরিণামও তাই গুরুতর।
সোজা কথায়, বিষয়টা এই দেশে "অত্যন্ত স্পর্শকাতর" দেখেই এখানে মাহমুদুর রহমানের দায় আছে।
এখন সেই একই স্পর্শকাতরতার যুক্তি দিয়ে নবীর নামে কূৎসামূলক কোনো লেখাকেও অভিযুক্ত করা যায়। এখন লেখাটি "কতটা" কুৎসামূলক, সেটা আরেক প্রশ্ন। মনে রাখতে হবে, আমরা সচলায়তন পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছি না, জানতে চাইছি আম-জনতা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা।
আরেকটা প্রশ্ন তোলা যায় যে, খবরটা তো নির্জলা মিথ্যা, আর অন্যটা তো মতামত মাত্র। সমস্যা হল, একদম শতভাগ নিজর্লা মিথ্যার থেকে, সাধারণত ৭০ ভাগ মিথ্যা বা ৮০ ভাগ মিথ্যাই বেশী দেখা যায়। তেমন ধরেন মসজিদ ভাঙার খবর----আসলে হয়ত দেখা যাবে মসজিদের বেড়া তৈরী হয়েছিলো অন্য কারো জমিতে, তারপর হয়ত শালিশ হলো, সেখানে ঠিক হলো বুধবারের মধ্যেই বেড়া সরিয়ে নেওয়া হবে, আর জমির মালিক যখন ১ দিন আগেই মঙ্গলবার বেড়া সরিয়ে নিতে গেলো, মসজিদ কমিটির এক মেম্বার ভাবলো, আমার পুরোনো ঝালটা ঝাইড়া নেই, ভেবেই দিলো হুংকার--বেটা কতবড় সাহস হিন্দু হইয়া মসজিদে হাত দেস! ----ব্যাস, এইটাই হয়ত মাহমুদুরের মতো কেউ আপনার দেয়া হেডিংয়ে ছেপে দিবে। দায় সেই ক্ষেত্রেও গুরুতরই।
----- কৌতুহলী
আপনার বক্তব্য ফলো করলে কি তাহলে আমরা এটাও বলতে পারি যে - পাব্লিক ডিস্কোর্সে শুধু আমাদের ব্যক্তিগত বা সঙ্খ্যালঘিষ্ঠ-গোষ্ঠীগত "যুক্তি", ঔচিত্যবোধ, নীতিবোধ আর স্বপ্রণোদিত সমাজহিতৈষণার আত্নতৃপ্তিদায়ক গজদন্ত-মিনারে বাস করলেই চলবে না - বরং সেখান থেকে নেমে এসে "প্রাসঙ্গিক স্থানিক ও কালিক বাস্তবতা"-কেও ঐ ডিস্কোর্সের ক্ষেত্রে একটা অবধারিত ফ্যাক্টর হিসেবে গন্য করতে হবে এবং সেইমত তার সাথে ডিল / সমঝোতা করতে হবে? উপেক্ষা করা যাবে না? বাস্তবতার স্বভাবসুলভ অযাচিত আগ্রাসনে করা যাবে না বাস্তববিমুখ মান-অভিমান-রাগারাগি? তাহলে তো সরকার আর জাফর ইকবালের প্রতিক্রিয়ায় খুব একটা ভুল ধরা যাবে না, বরং বলতে হবে পোস্টলেখকই বাস্তবতা-বিবর্জিত ছেলেমানুষী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। আপনি কি বলেন?
****************************************
আপনার প্রশ্নের একদম শতভাগ সঠিক উত্তর আমি জানি না, আমার বক্তব্য ছিলো যে মাহমুদুর রহমানের উদাহরণ আনাটা আলোচনার পরিণতিকে আরো জটিল করেছে, এটুকুই। । তবে হ্যাঁ, আমার মতে, বাস্তবতা তো ফ্যাক্টর হওয়া উচিৎ অবশ্যই, যার সাথে কথা বলছেন, তার বাস্তবতা আমলে নেয়াটাই স্বাভাবিকতা। তবে অনেকগুলা যদি/কিন্তু আছে, ----যেমন ধরেন "পাবলিক ডিসকোর্স"এর সংজ্ঞায়নে।
আজ থেকে মাত্র এক জেনারেশন আগেও পাবলিক ডিসকোর্স বাংলাদেশে সম্ভবত সীমাবদ্ধ ছিলো সংবাদপত্র, রাজনীতিবিদের মেঠো বক্তৃতায়। একাডেমিক সার্কেলের বইপত্র দূরে থাক, বইমেলার বইয়ের প্রগতিশীল বইয়েরও পাঠক ছিলো হাতেগোনা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। গত ১০/১৫ বছরে এই চিত্রের বিপুল পরিবর্তন হয়েছে, মধ্যবিত্ত যেমন বেড়েছে প্রবলভাবে, তেমনি ফেসবুক/ব্লগের মত টেকনোলজির কারণে শহুরে মধ্যবিত্তের বাইরের শ্রেণীর অনেক মানুষ এখন খুব সহজেই বই/প্রগতিশীল লেখা/সাকিব আল হাসানের কন্যার ছবি/"নাস্তিক ব্লগ" দেখে ফেলতে পারছেন। ফেসবুক শেয়ারের কল্যাণে, প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুতের সরবরাহ নেই এমন ঘরে বসেও এক ১৫ বছরের কিশোর তার গঞ্জ-থেকে-ধার-করে-আনা স্মার্টফোনে আসিফ মহিউদ্দিনের স্ট্যাটাস পড়ে বলে উঠছে, নাউজুবিল্লাহ!
বাংলা ব্লগ গত ১০ বছর ধরে অনুসরণ করি, ব্লগ জগতে এই পরিবর্তনটা খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখেছি----একসময় যেটা ছিলো মূলত প্রবাসী-উচ্চশিক্ষিত-হোমসিক-ছাত্র আর বামপন্থা পড়াশোনা করা/প্রগতিশীল ছাত্র-সাবেক ছাত্রদের আড্ডা, সেটা পরবর্তীতে আরো অনেক বিস্তৃত রুপ পেয়েছে। আর ফেসবুকের কথা তো ছেড়েই দিলাম। "পাবলিক ডিসকোর্স" এর ময়দান তাই এখন অতি সুবিশাল।
আরো অনেক যদি/কিন্তু আছে।
---কৌতুহলী
অবশ্য বাস্তবতার সাথে ডিল করার ব্যাপারে 'সমঝোতার' বিকল্পও বোধহয় আছে। যেমন, বাস্তবতাকেই বদলে দেয়ার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু ইতিহাসে বোধহয় এটা বারবারই প্রমাণিত - অন্তত আমাদের কন্টেক্সটে সেটা এখনো সমান সত্য - বাস্তবতাকে বদলাতে হলে কঠিন বাস্তবতার ধরাধামেই পূর্ণাবয়বে এবং পূর্ণ দায়িত্বে অবতীর্ণ হতে হবে বাস্তবতার সব প্রতিকুলতা মোকাবেলার সর্বতোরকম শক্তি ও সামর্থ্য নিয়েই। বাস্তবের চেয়েও বড় বাস্তব হয়ে উঠতে হবে। অবশ্যই থাকতে হবে সহগামী ক্রিটিকাল / ইফেক্টিভ মাস। এসবের মনে হয় কোন বিকল্প নেই -- ধরি মাছ না ছুঁই পানি স্টাইলে মেঘলোক থেকে বাস্তবলোকের বিড়ালের গলায় ঘন্টা পরানোরও কোন বাস্তবসম্মত শর্টকাট পদ্ধতি নেই। কোনকাটই নেই।
কোন ব্যক্তিবিশেষকে তাই, আমার মনে হয়, এনিয়ে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। দোষাদুষি, কান্নাকাটিতে কোন ফায়দা হবে না।
(ডিসক্লেইমারঃ আমার মন্তব্যদুটি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত দেয়ার উদ্দেশ্য করা নয়। কিছু কস্টিক কথাবার্তা মনে হয় তারপরও বেরিয়ে গেছে, তবে সেটা দুঃখ থেকে, কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে নয়)।
****************************************
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কোন স্টল বন্ধের পক্ষে নয় , অথচ তিনি একটি ফ্রি পরামর্শ দিয়েছেন পাঠকদের । পাঠকদের তিনি পরামর্শ দিয়ে অশ্লীল ও অশালীন বই 'ইসলাম বিতর্ক' যেন কেউ না পড়ে । এখন এখানে একটি প্রশ্ন , জাফর ইকবাল একজন লেখক হয়ে একজন লেখকের বই পড়তে পাঠকদের কি করে না বলেন ?
দ্বিতীয়ত , জাফর ইকবাল শুনেছেন 'ইসলাম বিতর্ক' বইটিতে অশ্লীলতা আছে আছে অশালীনতা । এখন কেউ যদি বলে আপনার কান কুকুরে কামড়াচ্ছে আপনি সেক্ষেত্রে কি করবেন ?
শফিক বাঙালী
এই কথার ওপরে আর কিছু নেই। অনেক ধন্যবাদ চমৎকার লেখার জন্য।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অসাধারণ!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন