সপ্তাহ শেষ হয়ে আসলেই ভাবতে শুরু করি, এইই শেষ সপ্তাহ। এরপর সব ঠিকঠাক করে নেবো। আইন্সটাইনের স্পেসটাইম কন্টিন্যুয়ামের জটিল সূত্রের কোনো অনুসিদ্ধান্ত অনুযায়ী বয়স কোনো এক ফাঁকে ত্রিশ অতিক্রম করে গেছে তাও সম্ভবত বছরখানেক আগে। যদিও এই ত্রিশ বছরে স্থান অতিক্রম করার মাত্রাটা সেই হারের সাথে পাল্লা দিতে পেরেছে এটা কোনো মানদণ্ডেই বলা যাবে না। অবশ্য পদার্থবিদ্যার সূত্রের কোন ফাঁকির পাল্লায় পড়ে হিসাবের খাতায় কেবল সময়ের হিসাবই লেখা হয় আর হাঁটাপথের হিসাব শূন্যের কোঠায় পড়ে থাকে সে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করতে গেলে হয়ত পদার্থবিদ্যার অলঙ্ঘনীয় কোনো নিয়মের ফাঁদে পড়ে আরও কিছু সময় কোনো ফাঁকতালে বেরিয়ে যাবে। এইসব ভাবতে ভাবতে প্রতি সপ্তাহের শেষে বা শেষের দিকে যখন সপ্তাহান্ত ঘনিয়ে আসে ঠিক তখনি ভাবি দ্রুত ছুটতে হবে, অন্তত আরেকটু দ্রুত। যথেষ্ট দ্রুত চলতে শুরু করলে সময়ও নাকি থমকে দাঁড়ায়, এই প্যাচের কথাটাও আইন্সটাইন সাহেব কোনো এক সূত্রের ফাঁকে নাকি বলে গেছেন। কিন্তু সময়কে থমকে দেয়ার মত দ্রুত ছুটতে পারা খুব সহজ কাজ হলে এই সূত্র জানার জন্য আমাদের আইন্সস্টাইন সাহেব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না হয়ত।
দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে দ্রুত ছোটা হয় না আর। আর ছোটাছুটিতে আমার বরাবরের অনীহা আর ভয়। অনেক ভাবনা চিন্তার আর পরিকল্পনার পরেও আজকেও বিছানায় যেতে প্রায় পাঁচটা কি ছয়টা বেজে যায় বরাবরের মতো। তারপর প্রতিদিনের মতই কিছুক্ষণ গড়াগড়ি। এদিক ওদিক। কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা। কিছু হিসেব মেলানোর চেষ্টা। পেট কিছুটা ক্ষুধাও টের পায়। পেটে কিছুটা দিয়ে তারপরে ঘুমাবো চিন্তা করে ভাবলাম একবার উঠে পেটের জন্য আয়োজন করতে গেলে ঘুম আসার যতটা সম্ভাবনা ছিল সেটাও কেঁচে যাবে।
বরং একটা বই পড়া যাক। বাতি নিভিয়েছি বিছানায় আসার সময়। অতএব কাগজের বই পড়া চলবে না। আর বাতি জালালে ঘুম আসার যে সামান্য সম্ভাবনা আছে সেটাও মিলিয়ে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে, অতএব আইপ্যাডই ভরসা। তবে কয়েকদিন অব্যবহৃত থাকায় হয়ত দেখা যাবে চার্জ নেই। অবশ্য বিছানার মাথার কাছেই একটা চার্জিং সকেট। চার্জে দিয়েও দিব্যি পড়ার কাজটা চালানো যায়।
কিছুদিনের অনভ্যাস হেতু বই পড়তে গেলেই চট করে ঘুম চলে আসে কোনো ফাঁকে। এই আগমন অবশ্য বিজ্ঞানের কোন সূত্র মেনে হয় এটা নিয়ে কোনো বিজ্ঞানী কিছু বলে গেছেন কিনা সেই বিষয়ে কোনো ধারণা আমি পাই নি। সূত্র না জানলেও টোটকা পদ্ধতি হিসেবে ঘুম আসানোর পদ্ধতি হিসেবে বই পড়ার চেষ্টাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কঠিন একটা বই পড়া যাক বরং।
এই বইটা শুরু করে বেশ কয়েকদিন বেশ ভালোভাবে ঘুমানো গেছে। অনেকদিন পড়ব পড়ব করেও পড়া হয়নি। গত পাঁচ দিনে মোটে দশ পৃষ্ঠা এগিয়েছে পড়া। যদিও এই কচ্ছপসুলভ গতির পেছনে বইয়ের দোষ কতটা আর আমার বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা মনের প্রভাব কতটা এই নিয়ে কোনো জটিল অঙ্ক কষা হয়নি। তাই আমি নিজের সুবিধার্থে এই ফলাফলকে একক ভাবে বই আর তার লেখকের ওপর চাপিয়ে দেই। তাছাড়া পাঠককে যথেষ্ট পরিমাণ বিক্ষত করার সুনাম এই লেখক ইতিমধ্যে কুড়িয়েছেন। সুতরাং সেই সিদ্ধান্ত নিতে পরিচিত পাঠকদের থেকে এতদিন শুনে আসা মন্তব্যও সাহায্য করে। তাই আবার ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ পড়তে শুরু করি।
আজকে আর ঘুম আসে না, পড়া এগিয়ে যায় বেশ খানিকটা। বরং গত পাঁচ দিনের চেষ্টা দুষ্পাচ্য ভাষাকে কিছুটা অন্তত কিছুটা পাচনের জন্য সম্ভবত মগজকে কিছুটা হলেও তৈরি করেছে বলেই মনে হয়। বেশ দ্রুত আগাতে থাকে ‘অন্তর্জলী যাত্রা’। বেশ খানিকটা সময় পার হয় সম্ভবত। কিন্তু যে যাত্রার উদ্দেশ্যে হাতে নেয়া হলো সেই উদ্দেশ্য আজকে সম্ভবত খুব সহজে সফল হবে না সেটা টের পাই।
মর্নিং শোওজ দ্যা ডে বা উঠতি মূলা পত্তনেই চেনা যায়। এটা নিশ্চয়ই কোনো বিজ্ঞানির কথা নয়। অতএব এই কথার সত্যি হবার দায় কতটুকু সেই সন্দেহ করে ফেলে নিজেকে কিছুটা চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে উন্নীত করার লোভটুকু সামলে রাখা কঠিন হয়। তারপরে হঠাৎ করে মনে হয়। আজকেই শুরু হোক না কেন। আরেকটু দ্রুত চলার পথে থমকে যাওয়া সময়ের সাথে আজকেই যদি দেখা হয় মন্দ কী!
অতএব কমলকুমার পড়ে থাকে কোনো এক বত্রিশ পৃষ্ঠায়। যেখানে সেই দেহের অথৈ সৌন্দর্য্য যেমন বা সন্ন্যাস লইয়াছে, স্তম্ভিত বৃদ্ধকে মুহূর্ত্তের মধ্যেই চরিত্রবান করিয়াছে। সীতারাম আমিত্ব অহংকার বর্জ্জিত, কিন্তু মানুষের দন্তপাতি অদৃশ্য হইলেও, জিহবা যেহেতু আপন স্থানে বসিয়া রস উপলব্ধি করিতেছে। সেহেতু উদ্ভিন্নযৌবনার হেমদেহ স্পর্শে বৃদ্ধের গায়ে যেন মাংস লাগিল। সীতারাম কী যেন বলিনেন। সে উপেক্ষা করিল। আমিও আপাতত আমার অন্তর্জলী যাত্রার পরিকল্পনা উপেক্ষা করিলাম।
শীতকাল এখনও বিদায় নিয়েছে এটা বলা যাবে না। তারপরেও শীতপ্রধান এই দেশের তুলনায় এই শহরে শীত পরে না বললেই চলে। একটা পাতলা জ্যাকেটেই এতদিন কাজ চালিয়ে নিতাম। বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে টরোন্টোতে যাওয়ার জন্য একটা মোটাসোটা জ্যাকেট কিনেছিলাম মাসখানেক আগে। সেটা কেনায় সুবিধা হয়েছে আরও। এখন আর আগের মতো দুই তিন পরত পোষাক গায়ে চাপানোর কথা চিন্তা করতে হয় না। কোনো মতে একটা টিশার্টের ওপর জ্যাকেটটা চাপালেই নিজেকে এখানকার ঠান্ডার জন্য যথেষ্ট অভিযোজিত মনে হয়। এখন যেহেতু বেশ সকাল জুতাটাও পড়তে হবে। অতএব বাসার পাজামার ওপর আরেকটা মোটা পাজামা, টিশার্টের ওপর জ্যাকেট আর মোজার ওপর জুতা পায়ে গলিয়ে জ্যাকেটের এক পকেটে বাসার চাবি আর আর এক পকেটে মোবাইল আর মানিব্যাগটা ভরে বেরিয়ে পড়লাম।
দীর্ঘদিনের অনভ্যাস। সকালবেলাটা কাজ না থাকলে বিছানার সাথেই কাটানো হয়। আর কাজ থাকলে কোনোরকমে উঠে খেয়ে না খেয়ে দৌড়। আশেপাশে তাকানোর সময় বা ইচ্ছে খুব একটা হয়ে ওঠে না। আজকে সেইসব ঝামেলা নেই। তাই বেশ একটা সুখী সুখী ভাব নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। নিজেকে একটু শাবাসিও দিলাম মনে মনে। যদিও জানি কালকে থেকে আবার যা ছিলাম তাই হয়ে যাবো। বাসা থেকে কয়েক ব্লক পার হয়ে এলাম হাঁটাপথে। এখনও সূর্য ওঠেনি। উঠি উঠি করছে হয়ত। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার পরিমান এখনও বেশ কম। হুশ হাশ করে দুই একটা গাড়ি ছুটে চলছে। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট এখানে চালু হয়ে যায় সম্ভবত পাঁচটারও আগে। দুই একটা পাব্লিক বাসও তাই রাস্তায় দেখা যায়। এই সময়টা আমার অচেনা।
রাস্তার দোকানপাট এখনও খোলেনি। দেশে হলে বড়সড় দোকানপাট না খুললেও রাস্তার পাশের একটা-দুইটা সস্তা হোটেলে পরোটার জন্য আটা আর ডাল সবজির জন্য ফুটপাথে বসে সবজি কাটতে দেখা যেত। দেখা যেত টং দোকানের পাশে বনরুটি, কলা আর চা দিয়ে রিকশাচালকদের দিনের প্রথম খাবার। টং এর চেয়েও আরও ছোটো কিছু চা-পান-বিড়ির দোকানে শ্রমজীবী মানুষের মুখরতা। শান্তিনগরে মোড়ের সামনে এসে কোদাল আর টুকরি হাতে জমা হওয়া শ্রমিকের দল। আরেকটু দেরি হলে বাবার মটর সাইকেলের পিছে কোমর জড়িয়ে বসে থাকা স্কুলগামী কোনো ঘুমঘুম বালক অথবা বালিকা। এখানকার ভোর সেই হিসেবে পানসে। রাস্তার হুশহাশ গাড়ির সাথে ধোপদুরুস্ত দৌড়ানোর পোষাক আর কানে হেডফোন লাগিয়ে দৌড়ে পাশকাটিয়ে গেল সাস্থ্যসচেতন এক চৈনিক বালিকা। ছোট্ট একটা কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন এক বৃদ্ধ দাদু। আমাকে ধীর পায়ে অতিক্রম করে যাবার সময় বেশ উচ্ছ্বাসের সাথে শুভ সকাল জানিয়ে গেলেন। এখানে একটু বয়েসী লোকজন সুযোগ পেলেই আলাপ জুড়ে দেন। আমি আপাতত আলাপ এড়ানোর জন্য জোড় গলায় শুভ সকাল বলে একটু জোড়ের সাথে পা চালালাম।
রাস্তার উল্টোদিকে বিশাল জায়গা জুড়ে কবরস্থান। কবরস্থান এত সুন্দর হতে পারে সেটা এখানে না আসলে আমি বিশ্বাস করতাম না। আমাদের দেশে কবরস্থান মনে হয় ইচ্ছে করেই একটা ভীতিকর স্থান করে রাখা হয়। স্যাতসেতে একটা ভূতুড়ে জায়গা। এই জায়গাটা এখানে একটা সাধারণ পার্কের চেয়েও সুন্দর। সবুজ ঘাসে ঢাকা বিশাল প্রান্তর। সারি সারি কবর কিন্তু বিশাল গাছপালা দিয়ে জঙ্গল বা স্যাতসেতে বানিয়ে রাখা হয় না। অনেক কবরের পাশে ক্রুশ পোতা আছে। অনেকগুলোর সামনে স্মৃতিফলক। কোথাও কবিতা বা একটা দুইটা বাক্য লিখে রাখা। অনেকগুলোতেই দেখা যাবে সবুজ ঘাসের ওপর রেখে যাওয়া ফুলের তোড়া। অনেকেই এখানে হাঁটাহাঁটি করতেও আসে। এলাকার পার্কগুলো কোনোটাই এত বিশাল জায়গা নিয়ে খোলা প্রান্তর না। আমিও মাঝে মধ্যে ঢুকে পড়ি। রাস্তা পার হয়ে ঢুকে পড়ি আজকেও।
একজন বৃদ্ধা একটি কবরের সামনে ফুল হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁট অল্প অল্প করে কাঁপছে। সেটা কি কফিনে শুয়ে থাকা প্রিয়জনের জন্য প্রার্থনার প্রচেষ্টা নাকি বয়সজনিত পেশী নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা সেটা বোঝা গেল না। আমি বৃদ্ধাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম সামনে। এখানেও বেশ কয়েকজনকে দেখা গেল কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। কবরস্থানের একপাশে বেশ বড় জায়গা জুড়ে ওয়ার সেমেটারি। সারি সারি ছোট ছোট স্মৃতিফলক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মৃত সৈন্যদের অনেকের স্থান হয়েছে এখানে। সেখানে অবশ্য কোনো ফুল রাখা নেই কোনো কবরেই। সম্ভবত তাদের আপনজন আর তেমন কেউ অবশিষ্ট নেই।
এতক্ষণে একটু একটু আলো ফুটতে শুরু করেছে। এই সময়টাকেই সম্ভবত হুজুরেরা একটু কায়দা করে গলার গভীর থেকে উচ্চারণ করেন সুবেহ সাদিক হিসেবে। অনেকদিন পরে এই শব্দটার কথা মনে পড়ল। ছোটবেলায় শেখা মাখরাজ আর তারতিলের সব শিক্ষার স্মৃতিচারণ করে বেশ কয়েকবার হলকুমের ভেতর থেকে উচ্চারণ করার চেষ্টা করলাম। এইসব বিদ্যা কখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে কেউ এখন আর বলতে পারে না। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অনাগত অন্ধকার সময়ে কোনোমতে জান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য হয়ত এইসব মাখরাজ, তারতিল দরকার হবে।
এইসব উস্কানিমূলক ভাবনা দূরে রেখে হালকা মেজাজে একটা লেখা দাঁড়া করানোর চেষ্টা করব এমন চিন্তা করে লেখাটা শুরু করেছিলাম। অনেকটা জোর করেই ভুলে যাবার চেষ্টা বলা যেতে পারে। এক বছর আগে ঠিক এরকম কোনো সময়ে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার ঠিক একশ হাত দূরেই অভিজিৎ রায়কে কোপানো হচ্ছিল। আমি চিৎকার শুনতে পাইনি। শুনতে পেলেও কাছে এগিয়ে যাবার সাহস পেতাম, এ কথা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না। সেই রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় কয়েকটা মটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখে একটু পাশ কাটিয়ে শাহবাগের দিকে হেঁটে গেলাম আমি তারেক আর পাণ্ডবদা। ততক্ষণে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে চলে গেছে কিছু সৎকর্মশীল অনুভূতিপ্রবণ ধর্মভীরু মানুষ।
জানলেও বা কী করতাম! পাশ কাটিয়েই যেতাম কোনোভাবে। এখন যেমন পাশ কাটিয়ে চলছি সবকিছু। সবাই যেমন পাশ কাটিয়ে চলছে। আমাদের কথকরা বলছেন, লেককরা লিখছেন, রকমারিতে ঝকমকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, পাঠকরা পড়ছেন, আয়োজকরা আয়োজন করছেন, বিবৃতিদাতারা বিবৃতি দিচ্ছেন, যাঁদের শিউরে ওঠার কথা তাঁরা শিউরে উঠছেন। প্রকাশকরা বই প্রকাশ করছেন, সৎকর্মশীল ইমানদার মানুষেরা অভিজিৎ রায়দের হত্যা করছেন, যাদের হত্যা করা যাচ্ছে না বা করতে দেরি হচ্ছে গ্রেফতারকারকরা তাঁদের গ্রেফতার করছেন। অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে এএএক বছর হয়ে গেছে। এর পরে আরও কত মানুষ হত্যা করা হয়েছে, আরও কত মানুষ হত্যা করা হয়নি। এর মধ্যে অনেক ফুল ফুটেছে, অনেক ফুল ফোটেনি, একটা কমলালেবু আকৃতির চাঁদ অনেকবার উঠেছে আবার অস্ত গিয়েছে। ফুটপাথে লেগে থাকা অভিজিতের রক্ত আর মগজ বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে কোনো এক ফাঁকে, রোদে পুড়ে বাষ্প হয়ে গেছে কোনো রৌদ্রতপ্ত দিনে। সেই ধুয়ে যাওয়া শুকনো ফুটপাথে ফুল হাতে হেঁটে গেছে কত প্রেমিক। কত প্রেমিকা সেই ফুল ফেলে দিয়েছে নিদারুণ তাচ্ছিল্যে। এত এত এত ঘটনা চারপাশে। এত এত আনন্দের উৎস, এত বেদনার সমাহার। এই সমাহারে ছোটখাটো একটা দু’টা ঘটনাকে আঁকড়ে ধরে মন খারাপ করার কোনো মানে নেই। তাই সবার মতো আমিও ভুলে যাবার চেষ্টা করছি। বড় হবার জন্য, দ্রুত ছোটার জন্য নাকি পিছুটান থাকতে নেই, অতীত আঁকড়ে ধরে থাকতে নেই। এটা পদার্থবিজ্ঞানের কোনো সূত্র সমর্থন করে কিনা না জানলেও এই কথাটা যে সত্যি তা আমি আশে পাশের বড় মানুষদের দেখে বুঝতে পারি। বড় হতে গেলে সম্ভবত ভুলে যেতে হয়। আমারও মাঝে মধ্যে বড় হতে খুব ইচ্ছে করে।
মন্তব্য
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সোহেল ইমাম
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
..........................................
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
..........................................
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
...যাদের হত্যা করা যাচ্ছে না বা করতে দেরি হচ্ছে গ্রেফতারকারকরা তাঁদের গ্রেফতার করছেন। অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে এএএক বছর হয়ে গেছে। এর পরে আরও কত মানুষ হত্যা করা হয়েছে, আরও কত মানুষ হত্যা করা হয়নি। এর মধ্যে ...
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ফেইসবুকে বলা কথাটাই আরেকবার বলি মানুষ এতোকিছুর পরেও রকমারী ছাড়তে পারেনা কেন?
যখন দেখি অভিজিৎদাকে নিয়ে শোক করার এক ঘন্টা পরেই রকমারির বিজ্ঞাপন
তখন আসলে কেমন লাগা উচিত?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আমি মানতেই পারি না ব্যাপারটা। এত নির্লজ্জ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কালকে খেয়াদি দেখালেন ঐ জায়গাটা।
বিস্মরণ এখন অভিযোজন ক্ষমতার মতো দরকারি। ভুলে যাও, ভুলিয়ে দাও..
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হ্যাঁ এখন শুধু ভুলে যাওয়ার, ভুলিয়ে দেয়ার, বদলে যাওয়ার, বদলে দেয়ার সময়।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হঠাৎ করে কখনো আমাদের মনে কোন প্রয়াত প্রিয়জন এসে উঁকি দেন। আমাদের মনে হয় না - তিনি আর নেই। উলটো মনে হয় তাঁর আলয়ে গেলে আবার বুঝি তার দেখা মিলবে। সেই মানুষটার সাথে শেষ যেবার দেখা হয়েছিল তখন আমরা কেউই বুঝতে পারিনি সেটিই আমাদের শেষ দেখা ছিল। প্রতিটি সোনালী মুহূর্ত এভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়, প্রতিটি প্রতিস্থাপন-অযোগ্য মানুষ এভাবে চিরতরে হারিয়ে যায়।
আমি দেখতে পাই সময় কেবল খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। কখনো কোন এক কালে একটি সৃষ্টিশীল আন্দোলন বা অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটিকে নিতান্ত দৈব বলে মনে হয়। মেঘের আড়ালে সূর্যের হাসির আশ্বাসকে তামাশা বলে মনে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না যে সময় কেবল খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। কিন্তু - "প্রতিটি প্রতিস্থাপন-অযোগ্য মানুষ এভাবে চিরতরে হারিয়ে যায়" - বিষণ্ণতাই মনের সাধারণ অবস্থা হয়ে ওঠে। যদিও ঐ মানুষগুলির মন্ত্র ছিল - এই বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে উঠতে হবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন