ধরা যাক, কোনো এক শুক্রবারের বিকেলে আপনি ফুটবল খেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে যথা সময়ে পৌছে গেলেন আজিমপুরের অগ্রনী স্কুলের সামনে। এবং যথারীতি আপনি আবিস্কার করবেন আপনি ছাড়া সেখানে আর কেউ উপস্থিত নেই। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, আলেকজান্দার গ্রাহামবেল সাহেব-কে শতকোটি ধন্যবাদ জানিয়ে আপনি আপনার মোবাইলের সাহায্য নেয়া শুরু করে দিতে পারেন।
প্রায় দশ মিনিট পরে সার্কিট-হাউস মসজিদের দিক থেকে ঘুম ঘুম চোখে আগমন ঘটবে এক লিকলিকে গড়নের যুবকের; যথারীতি তার কানে থাকবে মোবাইল। আপনার হাত নাড়ানোর পর-ও সে আপনাকে অগ্রাহ্য করে আরো কিছু সময় কানে ফোন ঠেকিয়ে রাখবে। তারপর আপনার পাশে বসে বলবে,"আমি ঘুমায়ে পরসিলাম - তুই কখন আইসস ??" এরপর খানিক হাই তুলে দেরিতে নীচে নামার জন্য পোলাপানের মুন্ডুপাত করে বলবে- 'হালার বাঙালীর টাইমের ঠিক নাই রে... " নিখুঁত সময় মেনে চলা এই যুবকের ভাল নাম 'গেদু'- ঠাট্টা করে কেউ কেউ রুপক ও বলে থাকে।
রুপকের দেখা পেয়েই পাশের বিল্ডিং থেকে সুকেশী এক যুবকের আর্বিভাব ঘটবে। এই যুবকের সর্বাঙ্গ থেকে আপনি অপরিসীম ক্রোধ বিচ্ছুরিত হতে দেখবেন। মুখের কথাকে কাজে পরিনত করতে পারলে ইতিমধ্যে সে শ'পাঁচেক বার জেল খাটতো। রক্ত-গরম করা সুরে সে আপনাকে জানিয়ে দেবে তার হাতে পাশের বাসার আংকেলের আসন্ন মরনের কথা ; পাশের বস্তির সাহু-মাহুর উচ্ছেদ যে তার বাম-হাতের কাজ- এ গুরুত্বপুর্ন তথ্য ও আপনি অবগত হবেন। 'আঠারো বছর বয়স কভু মাথা নোয়াবার নয়'- এ কবিতা সীমান্তর জন্য-ই বোধহয় লেখা হয়েছিলো।
প্রায় এক-ই সাথে আগমন ঘটবে মোটু তুর্য এবং লালু তুর্যের। নেতা সুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে লালু বেরিয়ে পরবেন মোটু এবং সীমান্তকে নিয়ে, কলোনীর জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে তার এই ভুমিকা প্রশংসার দাবি রাখে।
খানিক পর কৃশকায়- খর্বকায় একজন দশ নম্বর জার্সিধারীর আগমন ঘটবে। কয়েকটি দুর্বোধ্য ডাক্তারী শব্দ উচ্চারনের পর চারপাশের অপ্রতুল লোক-সংখ্যা দেখে রাজীব ভাই সরোষে বলে উঠবেন,"বা... , (!!!)বলসিলাম আমারে ডাকিস না, পোলাপাইন আইবো না- চ্যা... (!!) । খেলাও হইবো না- আমি বাসায় কি কাজ ফেইলা আসছি জানোস ??" এরপর তিনি জানাবেন তার ভাইরাস দোষে-দুস্ট কম্পিউটারের শিশুতোষ সমস্যার কথা। সংসারী রাজীব ভাইয়ের বিস্তারিত বিবরন ধীরে ধীরে দেব।
এর-ই মাঝে চলে আসবে আতিফ আর শিমুল। আতিফ বল নিয়ে এক কোনে স্কিল প্র্যাকটিস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর শিমুল ভারিক্কী সুরে বাংলাদেশের আই-সি-এল জনিত সমস্যা সমাধানে তার মতামত ব্যক্ত করবে।
তখন-ই হয়ত আপনি প্রথম খেয়াল করবেন যে ইতিমধ্যে কানে মোবাইল নিয়ে ধড়িবাজ চেহারার যে যুবকটি প্রায় চার-পাঁচ বার পুকুর ঘুরে এসেছে ; তিনি ও প্রকৃত পক্ষে খেলতেই এসেছেন। আপনি তখন পরিচিত হবেন ফুটবল দলটির এক-মাত্র 'পাপী' সদস্য নাফিস ভাইয়ের সাথে। তিনি এসেই নায়িকা মৌসুমীর বিভিন্ন নাচের মুদ্রা দেখিয়ে অথবা আতিফের কাছে 'জার্মানী-তে আচার পাওয়া যায় কি না' এ জাতীয় প্রশ্ন করে সকলের হাস্য-রসের উদ্রেক ঘটাবেন। নাম-করনের সার্থকতা প্রমান করতে খানিক পর তাকে অগ্রনীর দারোয়ান সম্প্রদায়ের সাথে খুনঁসুটি করতে ও দেখা যেতে পারে।
হাফ-প্যান্ট পরে এর-ই মাঝে চলে আসবেন মারুফ ভাই। মুখ ভার করে রেখেই তিনি জানিয়ে দেবেন জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের সাম্প্রতিক সমস্ত গসিপ।
দুই তুর্য এবং সীমান্তের আগমনের সাথে সাথে সমবেত সকলে মাঠে ঢুকে পড়বে, সেখানে টিটু এবং তার বন্ধুরা ইতিমধ্যে প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছে। আপনার ভাগ্য ভালো থাকলে বার্র্ষিক ছুটি'র কোনো দিনে আলোচিত চরিত্র-গুলো ছাড়া ও আপনি দেখতে পারবেন 'ভাম্বা' অনীক; 'মজুমদার' সাদ, 'বাবা' নিবিড় ভাই, 'দ্রগবা' মিয়াঁদাদ ভাই, 'ইঞ্জিন' রাজিন ভাই ; 'বাটপাড়' আনান ,'চুঁনো' তাম্মাম-দের। ...আর ভাগ্য খারাপ থাকলে মাঠে উপস্থিত থাকবে দুই 'গপ্পী' রুম্মন এবং ফরিদ...(!!!!)- আর আপনি ('মাজন' সুহান স্বয়ং) তো উপস্থিত আছেনই !!
খেলা শুরু'র ঠিক এক মিনিট আগে মাঠে এসে ছোটো প্রমিত টিম গঠনে ব্যাপক সমস্যার সৃস্টি করবে। অজুহাত হিসেবে ঘাগু এই ছেলেটি আপনাদের অক্লেশে জানাবে যে সে 'ঝালকাঠি' বা 'টেকনাফ' থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছে। গপ্পো আর কাকে বলে !!!
অবশেষে আযানের ঠিক পাঁচ মিনিট আগে খেলা শুরু হবে। প্রথম মিনিট দশেক খেলায় 'জোগো বনিটো' আনবার চেষ্টা চললেও তারপর-ই আসল ফুটবল শুরু হবে। মাঝমাঠ থেকে ক্যাঁতরানি শুরু করে রাজীব ভাই বলটা হারিয়ে ফেলবেন ঠিক পোস্টের সামনে। আতিফের নেয়া শটটা গোল হয়েছে না হয়নি এই নিয়ে দুটো দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। আতিফ তার স্বভাব-সুলভ নীঁচু (!!)গলায় জানাবে যে এটা অবশ্যি গোল। অপরদিকে মারুফ ভাই "এই-টা গোল হইলে গোলের বাজারে গোলের আর দাম থাকবো না..." জাতীয় বাক্য বলে তীব্র আলোড়ন সৃস্টি করবেন। অবশেষে রুপকের মধ্যস্থতায় খেলা আবার শুরু হলে ও রাজীব ভাই-এর খেলার ধরন নিয়ে তার দলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেবে। দলীয় এই রেশারেশি আবার সুরু হবে খানিক পরেই ; এবার বিষয় আরো তুচ্ছ। নাফিস ভাই অভিযোগ করবেন যে রাজীব ভাই থ্রো হওয়ার পরে ও খেলা চালিয়ে গেছেন ; প্রতিবাদে শিমুল জানাবে যে একটু আগে নাফিস ভাই-এর দল ও একই কাজ করেছে। উদীয়মান নেতা তুর্য এর সমাধান করতে এসে চেস্টাকৃত ভারী গলায় "থাপ্পড় থাপ্পড় " বলে পরিস্থিতি আরেকটু জটিল করে তুলবে। ...
...এই রুপ নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং কয়েকটি ছোটো-খাটো ইনজুরি প্রাপ্তি'র মধ্য দিয়ে খেলা শেস হবে। এরপর আবার প্রত্যাশা সাইনবোর্ডের নীচে। আবার চলবে রাজীব ভাইয়ের ম্যাচ বিশ্লেষন ; মারুফ ভাই-এর সিগারেট ; রুপকের ফোনকল ; পাপীর অভিনয়। শিপন, 'মামা' প্রমিত বা শাহেদের উপস্থিতি আড্ডায় যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। সময় ফুরোলে আবার সবাই যে যার পথে... পরের শুক্র-বারে ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এভাবেই চলে সময়...।
... ...এদের মত অমার্জিত, অ-সংস্কৃত, দস্যি-দের সাথে থাকা যায় ??? জানি, জানি- আমার মত আপনার উত্তর ও হবে "না , কিছুতেই না"। কিন্তু কি করি বলুন ; বৃহস্পতি-বার এলেই তো মন চঞ্চল হয়ে উঠে। ভাবুন তো একবার- মারুফ ভাইয়ের গপ্পো; নাফিস ভাইয়ের অভিনয় ; রাজীব ভাইয়ের ক্যাঁতরানি ছাড়া একটি শুক্রবারের বিকেল ??? অ--স--ম্ভ--ব ! ! ! !
আজিমপুর বেঁচে থাকুক; জয়তু আজিমপুর এফ.সি !!!!!
মন্তব্য
আজিমপুর বেঁচে থাকুক
দারূণ লেখা, পুরা আমাদের কুর্মিটোলার মাঠের কথা মনে হইলো
দাদা, নেক্সট টাইম লেখার শেষে নাম বা নিক কিছু একটা দিয়েন ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
ধন্যবাদ, আমি নতুন লেখক বলে নিক দেয়া- জাতীয় কাজ গুলো আমার কাছে স্পস্ট নয় এখনো...
অনুগ্রহ করে নিয়মটা জানাবেন কি ??
চমৎকার লেখা। ঝরঝরে বর্ণনা।
আপনি সচলায়তনে নিবন্ধন করে থাকলে আপনার নিবন্ধন নাম এবং ই-মেইল ঠিকনা লেখার শেষে জুড়ে দিন। এটাই নিয়ম।
যেহেতু সম্পাদনা করার অপশন নেই, মন্তব্যে নামটা জানিয়ে যেতে পারেন। নিয়মিত লিখুন।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
চমত্ কার লেখা। পড়তে ভালো লাগলো। একটু বানানের দিকে খেয়াল রাখবেন, তাহলেই দৌড়বে
আপনাকে ধন্যবাদ...
লেখার অভ্যাস আমার পুরোনো হলে ও অভ্র ব্যবহারে আমি এখনো দুর্বল- কারন পিসিতে লেখা শুরু করেছি অল্প কিছুদিন মাত্র...
বানান দুর্বলতার জন্যে লজ্জিত...
লজ্জার কিছু নেই, বোঝাই যাচ্ছে, এটা প্রযুক্তিগত সমস্যা। বেশি বেশি অভ্র/ফোনেটিকে লিখতে থাকলে সমস্যা কেটে যাবে নিশ্চিত।
জলদি পরের লেখাটা নামিয়ে ফেলুন!
-----------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী,
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
আমার ছোটোবেলা কেটেছে, চিটাগং এর আগ্রাবাদ সি.জি.এস কলোনি-তে।
সবার চরিত্রের সাথে মিল রেখে নাম রাখা-টা একটা শিল্পের পযর্ায়ে ছিল।
সত্যিই আজ এত বছর পরেও নামগুলো স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল।
লেখা ভাল লেগেছে...ধন্যবাদ
আজিমপুর জায়গাটা ভালো না আমি আগে থেকেই জানি। আপনি কলাবাগান বাসা ভাড়া নেন। ঐখানে সবাই সময়ের মূল্য বোঝে
লেখা
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
এহেন বিশ্বকাপ ফুটবলারদের তো একদিন গিয়ে দেখে আসতে হয়....
আপনি ভাই অসাধারন লেখেন......
( জয়িতা )
নতুন মন্তব্য করুন