বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ
"গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" চলছে মহা আড়ম্বরে। আকাশে-বাতাসে পতাকা, টিভিরুম- ক্যান্টিনে তর্ক, ফেসবুকের স্ট্যাটাসে গলাগলি-গালাগালি।
মোটের উপর বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের খেলা দেখে খুব প্রীত হয়েছি, এমন বলা যাবে না। আর্জেন্টিনা প্রথম খেলায় কোনমতে জিতলো, ব্রাজিলকেও বেগ পেতে হলো বিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করতে। ইতালি-ফ্রান্স-ইংল্যান্ড করলো ড্র। সাম্প্রতিক সময়ের সেরা দলটি নিয়ে বিশ্ব কাঁপাতে আসা স্পেন তো হেরেই বসলো অঘটনের জন্ম দিয়ে। প্রথম রাউন্ডে দুর্দান্ত খেলে মনে আতঙ্ক তুলে দিয়েছিলো জার্মানি। গতি-টিম কেমিস্ট্রি-পাসিং ফুটবলে অদম্য সেই জার্মানিকে মনে হয়েছিলো বিশ্বকাপ ঘরে তুলতেই তাদের আসা।
হিসাব-নিকাশ পালটে গেলো দ্বিতীয় রাউন্ডের শুরুতেই। ফরাসী ফুটবল শিল্পের মৃতপায় রুপ দেখলাম। উড়ন্ত জার্মানিকে মাটিতে নামিয়ে আনলো পুঁচকে সার্বিয়া। ইংল্যান্ডকে নিয়ে কিছু না বলাই ভালো, এই একটা ফুটবল দল- যাদের মিডিয়ার প্রতিবার ধারণা থাকে তাদের দল এবার কাপ নিয়ে যাবে- বাস্তবে মাঠে এদের দেখলে ঢাকা লীগের রহমতগঞ্জ টাইপ ফুটবল দলগুলোর কথা মনে হয়। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে এখনো পর্যন্ত মন ভরিয়েছে আর্জেন্টিনা, বলা ভালো লিওনেল মেসি'র দল। আহা !! মেসির মত একটা খেলোয়াড় যদি বিশ্বকাপ না পায়, সেটা ইতিহাসে কী বাজে একটা আক্ষেপ হয়েই না থাকবে। মেসি তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে !!!!
বিশ্বকাপের আসল মজাটা বোধহয় আড্ডায়। কখনো এমন আড্ডায় যে অংশ নেয়নি, তার পক্ষে কিছুতেই ধারণা করা সম্ভব না- কী ভীষণ তীব্র থাকে এইসব আড্ডার ঝাঁজ়। বুয়েট ক্যাফের নিষ্কর্মা কর্ণারে একেকটা আড্ডা ভয়ানক জমে উঠতো। আড্ডার মূলধারা অবশ্যই ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। যুক্তি দিয়ে শুরু হয়ে এইসব আড্ডা অনেক আগ্রহোদ্দীপক দিকে গড়ায়। কেউ আর্জেন্টিনাকে ন্যাংটুপুটু লোকের দল বলে আখ্যা দেয়, কারো দাবি উত্তর কোরিয়ার সাথে মাইকনের গোলের একমাত্র কারণ তার হলদে জার্সির সাথে শিশুসাহিত্যের দুষ্টু-চরিত্র সুলভ চেহারা।... দুঙ্গা-ম্যারাডোনা ছাড়াও আড্ডায় বাজির দর থাকে, 'ন্যাড়াডোনা' ভেরন থাকে, গুণগুণিয়ে গাওয়া ওয়েভিং ফ্ল্যাগ থাকে।
নতুন ধরণের একটা বিশ্বকাপ যুদ্ধ চলে খোমাখাতায়। একেকজন বিশ্ব কাঁপানো স্ট্যাটাস মারেন !! কেউ ছড়া লেখেন, কেউ কোন বিশেষ দেশের পতাকায় মূত্ররত শিশুর ছবি আপ্লোডান...। ভালোই লাগে দেখতে। তবে এই সব অগণিত বিশ্ব কাঁপানো স্ট্যাটাসের মাঝে মনে গেঁথে আছে ছড়াকার স্বপ্নাহত ভাইয়ের দুর্দান্ত সেই ছড়াটা।
"দূরে যাও বাকিরা, কাছে আসো শাকিরা !!!"
দিনলিপি
বিশ্বকাপের মৌসুমে ফুটবল ছাড়া আর কিছুই বলবার মতন নাই।
তবু সপ্তায় দুই দিন নিয়ম করে ফুটবলে লাথি মারি। আজিজের মাশ্রুমাড্ডা কয়েকদিন মনে হয় আধমরা, সেইখানে যাওয়া হয় না। খোমাখাতায় ঝগড়া করি। ফ্যান্টাসী লীগে বেশ কয়েকজন সচলের সাথে ফুটবলে পয়েন্ট কামাই। নতুন কিছু বিশেষ পড়ি না। ল্যাপটপে সেইভ করা অজস্র ই-বুকের মাঝে হঠাৎ কোন কোন গল্প সংকলন কি ইতিহাস বই নিয়ে চোখ বুলাই। গান-টান বিশেষ শুনি না। খেলা দেখার পাশাপাশি ইএসপিএন-এর মায়ান্তি ল্যাঙ্গার'রে ভালো করে দেখতে থাকি...
... এবং বুয়েট
বুয়েটে অনির্দিষ্টকালের জন্যে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কাল। হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো, এবং সেটা পালিতও হয়েছে। নিষ্কর্মা কর্ণারে এই বিশ্বকাপে আর আড্ডা হবে না, প্রতিটা হলে নতুন কিনে আনা ৪২ ইঞ্চির ব্রাভিয়া টিভি'র পর্দায় দল বেঁধে খেলা দেখাও আর হবে না।
বিভিন্ন পত্রিকার বিবরণ পড়লে মনে হয় বিশ্বকাপের খেলা দেখা উপলক্ষে ক্লাস না করতে চাওয়া ছাত্রেরা মারামারি করে বন্ধ করে দিয়েছে বুয়েট। বিষয়টা আসলে তা নয়। বরং তা এতোটা তুচ্ছ, যে বর্ণনা করলে লজ্জিত হতে হবে। ছোটভাইদের মাঝে অভাব রয়েছে শ্রদ্ধাবোধের, বড়ভাইদের মাঝে অভাব রয়েছে সহনশীলতার। দোষ কাকে দেবেন ?? ... চরম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ একটা রাষ্ট্রের চমৎকার একটা ক্ষুদ্রায়তনিক উদাহরণ হয়ে উঠছি আমরা। শ্রদ্ধাবোধ নেই, সহনশীলতা নেই, স্মৃতিশক্তি নেই, মূল্যবোধ নেই।
ব্রাজিলের সাথে ম্যাচের পূর্বে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন উত্তর কোরিয়ার জং সে তাই।
...আমরা নিমতলী অগ্নিকাণ্ড ট্রাজেডিতে কাঁদি না, আমরা বুয়েট ছাত্র সম্রাটের অকাল মৃত্যুতে কাঁদি না, আমরা পাহাড় ধসে পড়া মানুষের মৃত্যুতে কাঁদি না। আমরা কাঁদি কেবল ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলে...
মন্তব্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাল লাগল।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
শেষটা খুব ভালো লাগল ।
অল্প কিছু ছাত্রের কারণে আমাদের সম্পর্কে দাগ পড়তে পারে না , পড়বে না ।
আমি অবশ্য ফুটবল ফ্রিক না, ব্রাজিল এর জন্য এট্টু পাগল এই আর কি।
আর্জেন্টিনাদের চান্সে একটু খোঁচানো ছাড়া ফুটবল নিয়ে তেমন লাফালাফি করি না, সময় ই পাই না
_________________________________________
ৎ
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
হুম ... আমাদের অফিসের দুই ডাইরেক্টর কট্টর আর্জেন্টিনা, সারাদিন এর-ওর পিছে লেগে থাকেন আর্জেন্টিনা কাপ নেবে কিনা সেই ব্যাপারে বাজী ধরতে ... আমি কঠিন ব্রাজিল সাপোর্টার হয়েও তাদের এই এহেন গুন্ডামি থেকে রেহাই পেতে আজ সহাস্য বদনে বলেছি -' ভাই, আর্জ়েন্টিনা আর ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলবে আর কাপ নেবে আর্জেন্টিনা'। তারা খুব খুশি কিন্তু মিনিট পাঁচেক পর আমার কথার শ্লেষ ধরতে পেরে রে রে করে আমার রুমে ছুটে এসে বললো - 'আপনি কি আর্জেন্টিনাকে অপমান করলেন?'
নিমতলীর কথা আমরা ভুলে গেছি, সম্রাটের নামটিও আমরা ঠিক মতো জানিনা, পাহাড় ধসে করুন মৃত্যু আমাদের খুব বিচলিত করেনি ... আমরা এখন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা'র হয়ে বাজী ধরতেই যে ব্যাস্ত !!!
===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
দারুণ লাগলো।
উদ্ধৃতি
"গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" চলছে মহা আড়ম্বরে।
না, অন্য কোথাও নয়! এই বাংলাদেশেই...
বুয়েটের ঘটনার পরেও কি আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে?
-----------------------------------
কুটুমবাড়ি
.. চরম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ একটা রাষ্ট্রের চমৎকার একটা ক্ষুদ্রায়তনিক উদাহরণ হয়ে উঠছি আমরা।
tells you the whole story.
ভালো লাগলো রে সুহান।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
...আমরা নিমতলী অগ্নিকাণ্ড ট্রাজেডিতে কাঁদি না, আমরা বুয়েট ছাত্র সম্রাটের অকাল মৃত্যুতে কাঁদি না, আমরা পাহাড় ধসে পড়া মানুষের মৃত্যুতে কাঁদি না। আমরা কাঁদি কেবল ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলে...
এই লাইনগুলা পড়ে পাঁচতারা দাগাতে লগইন করলাম...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
বিপ্রদা! কতকাল পরে দেখলাম তোমাকে লগাইতে!
এক্সপ্রেস তো ছুটছে। বিপ্রতীপ কোথায় হারাচ্ছে? মা কে নিয়ে লেখা আরেকটাও অমন কবিতা তো পড়তে পারছি না।
সুহান ভাইয়া, কদিন আগেই জেনেছি, বুয়েটে যে এক ওভারব্রীজ আছে, সেও নাকি কোন এক মেধাবীর প্রানের বিনিময়ে। কেবল, যে ব্রীজটার দুইটা কোর্ডিনেট যোগ করেছে, তারই মেধার বুঝি কমতি ছিল।.
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
এই জায়গাটায় এসে আমার বুকটা কেমন মুচড়ে উঠলো। কারণ এই প্রসঙ্গে আমি কদিন আগে অনেক কথা বলেছি বন্ধুমহলে...
আশা রাখি আমরা একটা সময় সঠিক হবো, বদলে যাবো...
খুব সুন্দর লেখা ভাইয়া...
হয়তো মানসিক কষ্ট সহ্য করতে করতে আমরা মনো-কষ্টসহিষ্ণু জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছি। এখন তাই বৈশ্বিক আনন্দে আনন্দিত হয়ে উদ্বেলিত হতে চাই...
-- শফকত
------------------------------------------------------------------------------------------------
চমৎকার।
ছড়াখানা অসাধারণ। ধুগোদা'র জন্য শাকিরার ভগ্নীপতির নাম্বার চাই...
ভার্চুয়াল পাঁচ তারা! এফ বি তে শেয়ার দিলাম।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
আমরা তো স্ট্যাটিস্টিক্যালি পৃথিবী'র সুখীতম জাতি, তাই আমাদের কোন দুঃখ পুষে রাখা হয় না। চলছে যেমন চলুক।
লেখায় পাঁচতারার ছায়া দিয়ে গেলাম।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
পড়বার এবং মন্তব্য করবার জন্যে সকলকে ধন্যবাদ।
_________________________________________
সেরিওজা
দারুণ।
পাঁচতারা...
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নতুন মন্তব্য করুন