ইব্রাহিম জোয়ারদার ছবি আঁকেন। সংবাদপত্রে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির তথ্য ফাঁস- যানজটে আটক গাড়ির জানালায় ভিনদেশি রাষ্ট্রপ্রধাণের আত্নজীবনী বিক্রেতার হাতে ঘামের গন্ধ- সিনেমার রঙিন পোস্টার- মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ'র অনুপস্থিতি সত্বেও ইব্রাহিম জোয়ারদার ছবি আঁকেন। ক্যানভাসে পেশীবহুল, স্বাস্থ্যবান, রোদেপোড়া মানুষ আসে- নগরের পলকে গতিশীল জীবন আসে- মানুষের ফরমায়েশী মুখমন্ডল আসে। প্রদর্শনী লন্ডনের লেইস্টার গ্যালারীতে চলে- চলে ধানমণ্ডির শোভিত গ্যালারীতেও। সমালোচকেরা বলেন, ইব্রাহিম জোয়ারদার বড় জোরে তুলি ঘষেন- রঙের প্রাবল্যে তার শিল্পকর্ম ফভিজম ধারায় পড়ে। ইব্রাহিম জোয়ারদার হেনরি মাতিসকেই গুরু মানেন, মাতিস স্বয়ং ফভিজমের প্রবর্তক দলের সদস্য- অতএব ফভিজম ধারার ফসিল তার শিল্পে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়। অথচ শিল্পী নিজে সেটি স্বীকার করেন না, বরং দাবি করেন, পিটার পল রুবেন্সের ধারার অনুসারী স্বনামধন্য রেনোঁয়ার আঁকা ছবির সাথে তার অঙ্কিত ছবির সাদৃশ্য রয়েছে। শিল্পীর গলার স্বরে আবছা অহমিকা, প্রগাঢ় আত্নবিশ্বাস। শিল্পীর হাতে তুলি।
শিল্পী কেন ছবি আঁকেন। ও শিল্পী, আপনি কী কারণে ছবি আঁকেন ?? ... ইব্রাহিম জোয়ারদার এই প্রশ্নে বিব্রত হন না ইদানীং, বিরক্ত বরং। কাঠুরে গাছ কাটে, দুয়োরাণী দুঃখী হয়, মানুষ সঙ্গম করে, ঈশ্বরে পৃথিবী বানায়- ছবি না এঁকে শিল্পীর গত্যন্তর কোথায় ?? অতএব শিল্পী ছবি আঁকেন। তাহলে ঐ যে কী সব শোনা যায়; প্রলেতারিয়েত মানুষের বিমূর্ত হতাশা- মণ্ডের ক্যানভাসে বন্দী ঘড়ির টিকটিক- সোনার নৌকায় ধান তুলে দেবার পূর্বেই অমরত্বের নিশ্চিতকরণ এইসব; লোকে তবে যা যা বলে সকলি ভুল, মিছে, অসত্য বটে??... শিল্পী করেন এ কথার প্রতিবাদ। না না; শিল্পী তো সময়কে ধরে রাখতেই চান ঠিক ঠিক- মানুষের যা গল্প, সেটিকে রঙের ভাষায় লেখাও শিল্পীর কাজই বটে। নইলে আর শিল্প, যেটাকে লোকে বলে, কী ??... তাহলে ঠিক আছে। চলুক। যেমন চলছে। শিল্পীও ছবিই আঁকুন।
তবু একদিন ভোর উঠে উঠে- রাত ঘুমঘুম - বসতবাড়ির দুয়ারে দ্বাররক্ষক সবুর মিয়ার সম্ভাব্য অনুপস্থিতি নিয়ে নীচু স্বরে স্বগোতক্তি; এবং ইব্রাহিম জোয়ারদারের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পাওয়া যায়। তারা দুইজন। প্রথমজন কথা বলে না, ছিটের কাপড়ের শার্ট। কথা বলে দ্বিতীয়জন, চোস্ত পায়জামা- এলো লম্বা চুল- অগোছালো জুলফি- চশমা চোখে। দ্বিতীয়জন মুখরা রমণীর মত উঁচু স্বরে কথা বলে, প্রথমজন বয়সে ভারী- দেয়ালে ঝোলানো পেইন্টিং দেখে- ফভিজমের প্রাবল্য বিচারে আনমনে বিড়বিড় করে বোধ করি। তারা শিল্পীর জন্যে ফরমায়েশ নিয়ে এসেছিলেন- তারা দুইজন কাজ সাধেন। উঁচু স্বরে এইটুকু বলে বক্তা, অগোছালো জুলফির, স্বর নামিয়ে আনে। বসার ঘরের এককোণে বসে পড়ে সকলে। বয়স্ক অবাচাল লোকটি এবার নীচু স্বরে বলে সেই রহস্যময় কাজের কথা; পারিশ্রমিক হিসেবে নাকি দেয়া হবে এমন কিছু- যা ব্যাখ্যাতীত। পৃথিবীর সুন্দরতম ছবির কথাটি উচ্চারণ করে বয়স্ক লোকটি নিঃশব্দ হয়ে যায়, ঘড়ি টিক টিক করে চলে, চশমা চোখের এলো লম্বা চুল তখন পারিশ্রমিকের কথা বলে। ইব্রাহিম জোয়ারদার কথা বলার অবকাশ পান না; তার পূর্বেই তারা দুইজন বেরিয়ে যান। এভাবেই কোন এক ভোর উঠে উঠে-রাত ঘুমঘুম সকালে শিল্পীর নতুন কাজের সূচনা হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, দ্বাররক্ষক সবুর মিয়ার অনুপস্থিতি শিল্পীকে আর ভাবায় না।
ইব্রাহিম জোয়ারদার তবু ভাবিত হন। এ কি সম্ভব আদৌ হবে তার পক্ষে ?? শিল্পী তিনি, ছবি আঁকেন- এমন ছবি- যা প্রাণের সঞ্চার করে জলেতে, আলোয়, ছোট্ট চড়ুই পাখিতেও। প্রমাণ দেখতে চাইলে পাঠক অথবা ছবির সমালোচকেদের ইকবাল রোডের ইট রঙের ঐ দালানে কিংবা মিন্টু রোডের ডাকবাংলো আদলের ঐ প্রাসাদে যেতে অনুরোধ করি। ইকবাল রোডে আজকাল পানির অভাব হয় না নাকি, ইব্রাহিম জোয়ারদারের আঁকা পাহাড়ি ঝর্ণাটির স্রোত নাকি শুধু ইলিয়াস আলীর বাসা নয়- জল সংকটে ভুগতে থাকা সমস্ত ইকবাল রোড বাসিন্দার জলের অভাব মেটায়। মিন্টু রোডে সংবাদপত্রিকার অবাক সংবাদ কলামের অপেশাদার খবর সংগ্রাহকেরা জমায়েত করে আজকাল, ছোট্ট দুটো চড়ুই পাখি সকালের রোদে- দুপুরের মেঘে-বিকালের বৃষ্টিতে ডানা ঝাঁকায় নাকি; ক্যানভাস থেকে নেমে এসে। আপনি বিশ্বাস করবেন না, জানি- লোকেরা তবু বিশ্বাস করে। লোকেরা বিশ্বাস করে এবং অপরিচিত লোকেরা ইব্রাহিম জোয়ারদারের কাছে ফরমায়েশ বহন করে আনে; যার পুরষ্কার বা পারিশ্রমিক ব্যাখাতীত।
ইব্রাহিম জোয়ারদার তুলির আঁচড়ে পাহাড়ি ঝর্ণায় পানির স্রোত বইয়ে দেন, ইব্রাহিম জোয়ারদার ইজেল থেকে হোক পাখি-তবু চড়ুই বারান্দার রোদে নামিয়ে আনেন এবং ইব্রাহিম জোয়ারদার গভীর রাতে ঘুমঘুম শহরে নির্ঘুম পায়চারি করেন। কে, কবে, কখন - আদৌ কখনো- পেরেছিলেন নাকি, সেটা তিনি বিস্মৃত হন। গুরু হেনরি মাতিস পারেন নি, পল রুবেন্সও নয়। দা ভিঞ্চি পেরেছিলেন বলে ইতিহাস মনে করতে পারে না। দালি, রেঁনোয়া, এডগার দেগা মুখ খারাপ করায়। রাফায়েল কি ক্যামিল পিসারো ?? ... না বোধক। সেরা ভাস্করেরাও কেউ পেরেছিলেন কি ?? জেমস আল ফ্রেসার নয়, হেনরি মুর নন। শিল্পী জেনে আশ্চর্য হন আলেহান্দ্রো আলগার্দি কী আন্তোনিও ক্যাভানোও পারেন নাই। সবার সেরা মাইকেল এঞ্জেলোও না। কেউ জানে না। কেউ পারে নাই। ইব্রাহিম জোয়ারদার পারবেন অথবা পারবেন না সে বিষয়ে সন্দেহ থাকে কিন্তু রাত গেলে ভোর আসে নিঃসন্দেহে। আমরা ভোরে শিল্পীর মাঝে তাগিদ দেখতে পাই।
ইব্রাহিম জোয়ারদার ছবি আঁকতে বসলে সকাল হয়। শিল্পীর হাতে তুলি, হাতে জোর নেই। তুলিতে রঙ থাকে, শিল্পীর আত্নবিশ্বাস নেই। পৃথিবীর সুন্দরতম ছবি আঁকতে বসে শিল্পী বারংবার বিভ্রান্ত এবং অসফল। ছবি আঁকা হয়। সেটি হয়তো সুন্দর ছবি হয়- হয় সুন্দরতর ছবি- কিন্তু পৃথিবীর সুন্দরতম ছবিটি অধরাই থেকে যায় প্রতিবার। ইব্রাহিম জোয়ারদারের কাছে অপরিচিত দুইজন কাজ নিয়ে আসে, কাজ শেষে তাকে নাকি দেয়া হবে রহস্যময় কোনো পারিশ্রমিক। সেই পুরষ্কার কী হবে- মেথুশেলার নয়শো বছরের জীবন, প্যান্ডোরার বাক্স অথবা পামীর মালভূমি হতে হাত বাড়ানো উচ্চতার এক টুকরো তুলো মেঘ ??... এ বিষয়ে শিল্পীর কোন কিছু অজানা, যেমন অজানা থাকে পৃথিবীর সুন্দরতম ছবি। শিল্পী অতএব একটি সুন্দর ছবি আঁকবার চেষ্টা করেন মাত্র- কে জানে, হয়তো সেটা অলৌকিকে শ্রেষ্ঠতম কিছু হয়ে উঠবে বলে তার আশা থাকে। কিন্তু এতে হয় না কিছু তেমন, বরং শেষ রাতে বারংবার দুইজন অজ্ঞাত লোক ফিরে ফিরে আসে ছবির প্রত্যাশায়। এভাবে একেকটা ভোর আসে। এইভাবে ইব্রাহিম জোয়ারদার ছবি আঁকায় ডুবে যায়।
এরপর আমন্ত্রণপত্র আসে। বরাবর- শিল্পী ইব্রাহিম জোয়ারদার, হতে- লুইজিয়ানা স্টেট অফ মর্ডার্ণ আর্ট অথবা কলোরাডো ডেনভার আর্ট মিউজিয়াম কিংবা ঐ লুইজিয়ানা স্টেট অফ মর্ডার্ণ আর্ট হতেই। শিল্পী অপারগতা প্রকাশ করেন যেতে। ভয়ে নয়, অর্থলোভে নয়, সম্ভাব্য যাত্রাক্লান্তির কারণে নয়- অন্য কোন কারণে। এমন নয় যে শিল্পীর ভয় নেই, এমন নয় যে তার অর্থলোভ কিংবা অর্থের তাগিদ নেই। এমন হয়, কারণ ভোর হতে না হতে ছিটের কাপড়ের শার্ট আর অগোছালো জুলফির দুইজন আসে। তাদের আসতে হয়। "ও ইব্রাহিম জোয়ারদার, ছবি এঁকেছেন ?? ... ছবি নিতে আমরা ফিরে আসবো কিন্তু। "... শিল্পী তাই চেষ্টা করে যান।...
অতঃপর মুখমন্ডলের ফরমায়েশ আসে। তৈলাক্ত মুখ- উঁচু চিবুক; ঠিকঠাক আঁকা চাই। ইব্রাহিম জোয়ারদার কিন্তু ফরমায়েশ নেন না এখন। সময় নেই, সময় নেই, কাজটা শেষ করা চাই তাঁর। ফরমায়েশদাতা অনুরক্ত হন না। এইসব কথা টুকটাক ছড়ায়। সমালোচকেরা বলে, অপ্রতিভাবান পরিশ্রমী শিল্পী ইব্রাহিম জোয়ারদার হয়তো নিজের কাজের ধারায় পরিবর্তন আনতে চাইছেন। অথবা হয়তো দেরীতে হলেও ফভিজম অনুগামিতা ছেড়ে তিনি নিজের স্বকীয়তা খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু এইসব কথায় ইব্রাহিম জোয়ারদার কান দেন না কিন্তু। তিনি জানেন রাত ঘুমঘুম বেলায় তার কাছে নীচু স্বরে কথা বলা আর মুখরা রমণীর স্বরে কথা বলা দুইজন লোক আসবেই। "ও শিল্পী, এখনো ছবি আঁকা হয় নাই আপনার ?? ... আঁকবেন কিন্তু, ঠিকঠাক হওয়া চাই সব। "...
এরপরে যা হয়, আপনারাও তা জানেন। প্রথমে গুজব, এরপরে বিশ্বাসযোগ্যতা। লোকজনে সকলে সেটাকে তাই মেনেও নিতে শুরু করে। নাকি প্রখ্যাত শিল্পী ইব্রাহিম জোয়ারদার ছবি আঁকা বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি আর কোন প্রদর্শনীতে যোগ দেন না। অথবা তিনি এখন আর কাজ করেন না। কিংবা তার হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অতএব ভীড়- সরকারী কর্মকর্তা কী বেসরকারী দূরদর্শন- রিডার্স ডাইজেস্ট কী দিনবদলের স্থানীয় পত্রিকা। কোন জবাব আসে না। লোকজন কিছুদিন অপেক্ষা করে, উঁকি মারে, তাদের সারাদিনই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কী না জিজ্ঞেস করে কড়া গলায় কৈফিয়ত চায় কেউ কেউ। দরজা খুলে না। অথবা দরজা খুলে কেবল গভীর রাতে। বয়স্ক অবাচাল আর চোস্ত পায়জামার দুইজন দরজায় এসে দাঁড়ায়। সবুর মিয়া কখনোই, কোনো এক অব্যাখনীয় কারণে, এদের আটকায় না। অথচ তারা হয়তো তার সামনে দিয়েই এসে দরজায় দাঁড়িয়ে যায়। "ইব্রাহিম সাহেব, ছবি আঁকা হইসে আপনার ?? ... একটু দেখেন না ভাই, তাড়াতাড়ি করতে পারেন কি না। ছবিটার জন্যে অপেক্ষা করে আছে সবাই..."।
এই সমস্ত ভোররাতগুলোর মাঝেই একদিন, যেটি আসলে একরাত, মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর ইব্রাহিম জোয়ারদার বুঝে উঠেন- তিনি আসলে এরকম ছবি- ফরমায়েশের সুন্দরতম ছবিটি- আঁকতে পারবেন না কখনো। এটা প্রতিভা কী পরিশ্রমের জন্যে নয়, তার চেয়ে শতঅযুত গুণ প্রতিভাবান কী পরিশ্রমী কেউও কখনো এ ধরণের কিছু আঁকতে পারেন নি। ইতিহাসে অন্ততঃ নেই। তবে আছে কোথাও। ইব্রাহিম জোয়ারদার জানেন অথবা তার মনে পড়ে কীভাবে এরকম একটি ছবি আঁকা হয়। নিশ্চিত হতে ইব্রাহিম জোয়ারদার গভীর রাতেই পড়বার ঘরে যান। খোঁজেন। বই পড়েন, বইয়ে খুঁজে পান। এইসবের মাঝেই শিল্পী নিশ্চিত হয়ে যান। ডোরিয়ান গ্রে'র ছবি আঁকা সম্ভব হয়তো। মৃত ছবিকে জীবন ফিরিয়ে দেয়াও সম্ভব। কিন্তু সম্ভব নয় নতুন এমন একটি ছবির জন্ম দেওয়া। এ সাধ্যতীত। পৃথিবীর সুন্দরতম ছবি আঁকবার চেষ্টায় তিনি বামন রয়ে যাবেন, এ সত্য অনুধাবনে শিল্পী আর চন্দ্রমুখী হাত বাড়ান নি। পড়বার ঘরে ইব্রাহিম জোয়ারদার তাই নির্ঘুম এবং ভোর হয়ে আসে।
এরপরে যথারীতি তারা আসে। তারা দুইজন। প্রথমজন কথা বলে না, ছিটের কাপড়ের শার্ট। কথা বলে দ্বিতীয়জন, চোস্ত পায়জামা- এলো লম্বা চুল- অগোছালো জুলফি- চশমা চোখে। দ্বিতীয়জন মুখরা রমণীর মত উঁচু স্বরে কথা বলে, প্রথমজন বয়সে ভারী- দেয়ালে ঝোলানো পেইন্টিং দেখে- ফভিজমের প্রাবল্য বিচারে আনমনে বিড়বিড় করে বোধ করি। ইব্রাহিম জোয়ারদার কথা না বাড়িয়ে কেবল জানিয়ে দেন, এ ছবি আঁকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। পৃথিবীর সুন্দরতম ছবিটি আঁকতে তিনি অপারগ থেকে যান। তার উত্তরে লোকদ্বয় কিছুটা বিস্মিত, বিভ্রান্ত খানিক, অনেকটা হতাশ হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক জন নিশ্চুপ হয়- হয়তো স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায়, তবে প্রশ্ন করেন বয়স্ক জন। সেটা অন্তিম প্রশ্ন হয়, না হয়ে উপায় থাকে না।
- "আপনি, ইব্রাহিম জোয়ারদার, যুগশ্রেষ্ঠ শিল্পী, পৃথিবীখ্যাত চিত্রকলা বিশারদ; সমালোচকেরা কথা কয় আপনার বৈচিত্র্য নিয়ে, ছবির মাঝের জড় কিংবা জীব অথবা এই উভয়ের মাঝেই প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে পারেন আপনি, আপনার চিত্রকর্ম ঠাঁই পায় শতাব্দীসেরা চিত্রকর্মের সমারোহের ভিনদেশি গ্যালারীতে- সেই আপনি, শিল্পী ইব্রাহিম জোয়ারদার, পৃথিবীর সুন্দরতম ছবিটি আঁকতে পারেন না ?? ... কেন ?? কী কারণ ??"
শিল্পী প্রশ্নের চোখে চোখ রেখে বলেন, "কারণ সুন্দরতম ছবি সকলে আঁকতে পারে না। আমার কাছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ ক্যানভাস নাই। আমার কাছে এতো গাঢ় লাল রঙ নাই..."
মন্তব্য
গল্পটা নিয়ে লেখকের ভালই খানাতল্লাশি চালাতে হয়েছে বোধহয়, গল্পের পরিশীলতা অন্তত সেদিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করে। যাই হোক, ম্যাগনাম ওপাসের জন্ম ইব্রাহিম জোয়ারদার দিতে না পারুন, এই লেখকের ম্যাগনাম ওপাস এই গল্প যাতে না হয় ...(লেখকের প্রতি প্রত্যাশার পারদ বেশ চড়ে গেল কিনা! ) ।
আরেকটা কথা,তোর বই বের হলে সেটার প্রথম রিভিউ আমি বুকিং দিলাম,সচলায়তন সাক্ষী।
অদ্রোহ।
ধন্যবাদ হে রানারাপ দলের দলপতি
মন্তব্য বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়েছে...
_________________________________________
সেরিওজা
বাংলাদেশের পতাকাটাকে কি ফভিস্ট বলা যায়? এদের সবুজটা আবার আলাদা। বাংলাদেশের সিনেমার পোস্টার, যেটা হাতে আঁকা হতো, সেটার মধ্যে ফভিস্ট আঁচড় আছে। ভালোই মনে করালা। যাই হোক, অপ্রাসঙ্গিক কথা বাদ দিই।
গল্পটা ভালোই লাগল। তবে অণুগল্পের তুলনায় কিছুটা বড় কি? মানে পূর্ণাঙ্গ গল্পই কেন না?
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নাহ, আমাদের পতাকা ফভিস্ট নয়। সে রঙ আরো তীব্র...
অণুগল্প ট্যাগের কারণ নেই কোন- ট্যাগে ছোটগল্প দেখায় না, তাই এটা দেয়া...
_________________________________________
সেরিওজা
ধন্যবাদ ভায়া।
_________________________________________
সেরিওজা
পুঁদিচ্চেরি!
সে তো পন্ডিচেরি। সেই যে গেলোবার আমার মামা......
_________________________________________
সেরিওজা
আমি বলছি পুঁদিচ্চেরি মানে ব্যাপার অতি ঘোরালো। ফের কুরুবকের মত বকবক করলে এক চড়ে কান কানপুরে উড়ে যাবে...
আর নাক নাসিকে...
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ভালো লাগলো।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ধন্যবাদ ওডিনদা !!! এই সুত্রে এস্টেরিক্সের কমিক্সগুলো দান করে যদি কিছু পুণ্য করে নিতেন, তবে বেশ হতো...
_________________________________________
সেরিওজা
আমার কাছে সফট কপি আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেকদিন পর লিখলি।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
হ দোস্তো...
_________________________________________
সেরিওজা
পইড়া তো মাথা ঘুইরা গেলো।
জটিল হৈসে।
পাগল মন
পড়বার জন্যে ধন্যবাদ।
_________________________________________
সেরিওজা
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
_________________________________________
সেরিওজা
প্রথমেই গল্পকারকে বিশাল অভিনন্দন চমৎকার একটি গল্প উপহার দেয়ার জন্য। এরকম গল্প সুহান রিজওয়ান আরো লিখুক সেই শুভেচ্ছা রইলো।
আমি নিজে একটা ভালো গল্প পড়লে যে আনন্দ পাই সেটার কারণে বেশিরভাগ সময়েই গল্পটার ছোটখাট দিকগুলোর প্রতি তেমনটা সমালোচকের দৃষ্টিতে তাকাই না। গল্প পড়ে একটা সর্বোপরি উপলব্ধি জন্মায় পাঠকের মনে, সবকিছুকে ছাপিয়ে কোনো একটা বোধ তৈরি হয়, যেমনটা হয় একটা কবিতা পড়লেও।
কিন্তু সচলায়তনে এক সময় নতুন গল্প আসলে তার সমালোচনার চল ছিল, যেটা এখন থাকলেও অনেকটা স্তিমিত। সমালোচনার প্রয়োজন আছে, সমালোচনায় সবচেয়ে লাভবান হন গল্পকার নিজেই, সমালোচনা থেকে অনেক কিছুই শেখা যায়। সে কারণেই আমি সচলদের বলব এই গল্পটার সমালোচনা হোক। সেটা পাবার যোগ্যতা অন্তত এই গল্পের আছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কয়েকটা পর্যবেক্ষণ আছে।
গল্পটির পরতে পরতে গল্পকারের পরিশ্রমী দিকটা স্পষ্ট। এই গুণটা সবসময় দেখা যায় না। এর জন্য সুহানকে আমি পছন্দ করি, সে দিন দিন বেশ ভাল রকমের পরিশ্রমী হয়ে উঠছে। কিন্তু বেশি পরিশ্রম অনেক সময়ে বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যদি লেখক গল্পের চাইতে ফ্যাক্টের পিছনে বেশি শ্রম দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার কোনো একটা বই খুব সম্ভবত 'সফদার আলীর মহা মহা আবিষ্কার'য়ের উৎসর্গপাতায় তার এক বন্ধুর করা একটা কথা লিখেছিলেন। ফ্যাক্টের বাহুল্য একটা গল্পকে শুধু ধ্বংসই করে, রস জোগায় না। 'শিল্পী' গল্পে হয়ত সেরকম কোন ব্যাপার বেশি ঘটে নি, কিন্তু শুরুর দিকে একটু মনে লেগেছে। গল্পের নায়ক ইব্রাহিম জোয়ারদারের শিল্পী প্রতিভা ফুটিয়ে তুলতে প্রচুর নাম এসেছে, তাদের নান্দনিকতার বিশ্লেষণ এসেছে, কার সাথে ইব্রাহিম জোয়ারদারের ছবির তুলনা চলে সেই আলোচনা হয়েছে। যদিও কী এবং কতটুকু লিখবেন সেটা লেখকেরই বিবেচনা ও দায়, তবু আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, আরেকটু কম হলেও হয়ত পারত।
বর্ণনার ভাবটা একটু বেশি মনে হলো। হয়ত এটাও একটা স্টাইল।
সব প্রশ্নবোধক বাক্যের পরেই প্রশ্নবোধক চিহ্নটা দুবার করে দিয়েছেন, সেটা চোখে লাগার মত। গঠনের জোরেই বাক্যের জোর প্রকাশ পায়, চিহ্নের জোরে নয়। তাই না?
আরো বেশি বেশি গল্প লিখুন সুহান রিজওয়ান, সেই আশা করছি।
ভালো লাগলো। কিন্তু অনুগল্পের বিচারে এটা একটু বড় হয়ে গেলো না? নাকি ক্লাইম্যাক্সের উত্থান অানবিক হলেই সেটা অনুগল্প?
আরে, রুশাফি ভাইয়ের একটা মন্তব্য চট করে মাঝে চলে এসেছে দেখছি !!
... অণুগল্প ট্যাগ দেয়ার কোন কারণ নাই, ছোটগল্প নামের অপশন খুঁজে না পাওয়াতেই এই পলিমারঅণুকে অণু বলতে চেয়েছিলাম। সে ট্যাগ তুলে দিয়েছি।
ধন্যবাদ পড়েছেন বলে।
_________________________________________
সেরিওজা
ফাহা ভাইকে বিশাল একটি প্রতি অভিনন্দন এই আলোচনাটির জন্যে। ভাবতে ভালো লাগে- এইসব গল্পগুলো মনোযোগে পাঠক পড়ছেন, লেখকের প্রশংসা করছেন, লেখককে গল্পের বাহুল্য দোষগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন-যেগুলো হয়তো লেখক নিজে কখনো ধরতে পারতেন না। এই ধারাটির জন্যেই সচলায়তনে আসা, সচলায়তনের বাঁধনে আটকে যাওয়া...
...ফ্যাক্টের বিষয়টা পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম। বিচারক তো শেষকালে তাঁরাই।
ব্যক্তিগত ভাবে এই গল্পে আমি চেষ্টা করেছি বর্ণনা কিছু দীর্ঘ করবার। আমার পূর্বাপর অগল্পসমস্ত একটি আপাত অদৃশ্য শব্দসীমায় আটকে যেতে দেখে নিজেই প্রয়াস করেছি সেই সীমা পেরুনোর। হয়তো অথবা নিশ্চয়, এ গল্পে সে প্রয়াস দৃষ্টিকটু ছিলো।
প্রশ্নবোধকের বিষয়ে আমার উদ্দেশ্য- প্রশ্নে জোর আরোপ করা নয়। আমি নিজে আমার সমস্ত রচনায় প্রশ্নের স্থলে প্রশ্নবোধক চিহ্নের দ্বৈত আরোপ করি। কেনো, কারণ জানিনে। ধরে নিন দুর্বল লেখকের আরো একটি- স্টাইল বলতে বাঁধো ঠেকে- শনাক্তকরণ চিহ্ন...
আবারো ধন্যবাদ সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্যে।
_________________________________________
সেরিওজা
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথীডোর...
_________________________________________
সেরিওজা
সুহানরে সবসময়ই আমি অনেক বড় মাপের গল্পকার মানি। এখানেও তাই মানলাম।
ফাহা ভাইয়ের কথাটা আমারও মনে হইছে। জল সমাধান আর পাখির কুজন দিয়েই পরিষ্কার ইব্রাহীম জোয়ারদারের শিল্পী প্রতিভা। টেকনিক্যাল টার্মগুলা আরেকটু এড়াইতে পারলে পাঠকের সুবিধা হইতো।
গল্পের শেষে টীকা দিয়ে ফভিজম বুঝাইতে হইলে বিপদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মাটিতে পা রাখার জন্যে মন্তব্যের শেষাংশই মনে ঢুকায়া নিলাম...
_________________________________________
সেরিওজা
অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়া হল সুহান...
বেশ পরিশ্রম করেছেন এ গল্প লিখতে গিয়ে... বোঝা যায়...
আর আপনার অন্য গল্পগুলোর তুলনায় এ গল্পের বর্ণনার ভাষা খানিকটা ভিন্ন মনে হল এবং এ ভিন্নতাটুকু ভালো লাগলো...
---------------------------------------------------------------
নির্জলা নৈবেদ্য
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
পড়বার এবং মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ মউ...
_________________________________________
সেরিওজা
অসাধারণ গল্প। গল্পকারের মুন্সিয়ানা ফুটে উঠেছে একদম। বিশাল অভিনন্দন।
এরকম আরো চাই।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ ধন্যবাদ !!!
_________________________________________
সেরিওজা
অভিনন্দন সুহান, সুন্দর এই গল্পটার জন্য।
ফাহা ভাই অনেক গুরত্বপুর্ণ একটি বিষয় সামনে এনেছেন। তবে আমি বলব, তুই এই বিষয়গুলোকে সিরিয়াসলি ফলো করবি নাকি নিজের মতো করে লিখে যাবি এর পরিপুর্ণ স্বাধীনতা এবং বিবেচনা তোর। তোর যদি মনে হয় এই পদ্ধতিতে লিখতে তুই স্বচ্ছন্দ বোধ করছিস আর গল্প ভালোও হচ্ছে, তাহলে তাই কর।
আর তুই দিনে দিনে আরো পরিণত গল্পকার হয়ে উঠছিস এটা অনস্বিকার্য।
---- মনজুর এলাহী ----
কী যে সব বকিস আজকাল...
যাকগা, ঘুমানোর আগে তোরে ধন্যবাদ দিয়ে গ্লাম পড়বার জন্যে...
_________________________________________
সেরিওজা
অনেকদিন পর গল্প লিখলেন মনে হয়। গল্প ভাল লেগেছে।
প্রচুর শিল্পীর নাম চলে আসার ব্যাপারটা, ফারুক হাসান যেটা বলেছেন, আমার কাছে অতটা চোখে লাগেনি। তবে একেবারেই যে লাগেনি, তা নয়। আমার যেটা মনে হয়েছে, গল্পের আয়তন যদি আর একটু বড় হতো, আর নামগুলো যদি একটু ছড়িয়ে যেতো তাহলে হয়তো আর নামের আধিক্য আছে এমন মনে হতো না। তবে সব মিলিয়ে গল্পটা বেশ ভাল লেগেছে। আপনি যে অনেক ভাল লিখেন এটা তো আর নতুন করে বলার কিছু নাই।
আমি ঠিক এভাবেই ভাবছিলাম। মনে হচ্ছিল গল্পের ক্যানভাস ও ব্যাপ্তি আরেকটু বেশি হলে শিল্পের টেকনিকালিটির বর্ণনা ও নামগুলোর আমদানিতে ভালো ব্যালেন্স আসতে পারত।
পড়েছেন বলে ধন্যবাদ বইখাতাপু..
উম্ম, হ্যাঁ- গল্পটা নিয়ে মনে হচ্ছে আরো কিছু কাজ করা যেতো। পাঠকের পাঠপ্রতিক্রিয়া সরাসরি এভাবে পেয়ে যাওয়াটা ব্লগের একটা উল্লেখযোগ্য দিক...
আর আপনার লেখাও পাচ্ছি না কিন্তু বহুদিন।
_________________________________________
সেরিওজা
সারছে! দাঁত সব নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার যোগাড়!
আমি শিল্প প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার কাছে কেবলই মনে হয় কোনো এক চিত্রকর রঙ নিয়ে খেলে একটা সাদা রুমালে হাত মুছে সেটা ঘরের কোণে ফেলে রাখলে, কয়েক দশক পরে সেটাও বিমূর্ত চিত্রকলা হয়ে উঠতে পারে। প্রদর্শনীতে গিয়ে মাথা চুলকে, ভ্রু কুচকে, ঘাড় কাত করে, শরীর বাঁকা করে- ইত্যকার হরেক রকম ভঙিমায় দেখার চেষ্টা করেছি। ফলাফল হয়েছে কঁচু। এমনকি চিত্রকর্মের শেষে শিল্পীর স্বাক্ষরটাও বুঝি নাই।
সেদিক থেকে গল্পটা আমার কাছে শুধু কঠিনই না, ব্যাপক কঠিন লাগলো। তবে, একেবারে শেষের লাইনে এসে বুঝলাম সব কিছুই। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ ক্যানভাস এক আর এক সাগর রক্তলাল রঙের তুলির আঁচরে পৃথিবীর সুন্দরতম চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা কোনো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর নেই।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হেহে, বিশ্বাস যান - সত্যজিতের ঠিক এই কাহিনী নিয়া একটা গল্প আছে, নাম মনয় 'বর্ণান্ধ' !!!
_________________________________________
সেরিওজা
গলপটা ওর একটা ইংরেজি গল্প আছে - 'অ্যাবস্ট্রাকশন', সেইটার অনুবাদ। বাংলা অনুবাদের নামটা মনে নাই। আর বর্ণান্ধ ওরই আর একটা ইংরেজি গল্পের অনুবাদ- নাম শেডস অফ গ্রে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
অনেকদিন পর লেখা। স্বরূপে সুহান। চমত্্কার।
ধন্যবাদ নৈষাদ'দা।
_________________________________________
সেরিওজা
নিজে একটা লেখা বা গল্প লেখার সময় এতো ভাবি না, যতোটুকু ভাবছি আপনার গল্পে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাতে। আমার মতো মূর্খের কথায় গুরুত্ব দেবার দরকার নেই। কিন্তু আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাবার আগ্রহ থেকে কথা গুলো বলছি।
ধরুণ জয়নুল আবেদীনের সেই বিশ্বখ্যাত গরুর গাড়ি; কাঁদায় আটকে পড়া চাকাটা যে গাড়োয়ান ঠেলছে, তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, খাদ্যাভাবে আসলে তার গায়ে, গাড়ি টানা গরুগুলোর চেয়ে বেশী জোর নেই। ছবিটা ভাল করে দেখলে বা চিন্তা করলে বোঝা কঠিন নয় যে, কোথাও একটা অমিল আছে বা থাকতে পারে। গাড়োয়ানদের গায়ের গঠন এবং বাংলাদেশের অস্থিচর্মশার সম্বল মানুষদের সংস্কৃতি, কাদায় আটকে যাওয়া চাকা ঠেলে তোলা গাড়োয়ানের সঙ্গে মেলে না। কারণ গরুর গাড়ির একতৃতিয়াংশ জুড়ে গাড়োয়ানের বিরাট শরীর। গাড়োয়ানদের এতো বিষাল বপু কখনো আমি দেখিনি। হতে পারে ঐ শিল্পকর্মের গাড়োয়ান সত্যিই এমন ছিলেন। কিন্তু সেটা ব্যাতিক্রম।
সেই বিখ্যাত শিল্পকর্ম দেখে এক পশ্চিমা শিল্পী বলেছিলেন; তোমাদের নকল করার দরকার কী! নিজস্ব শিল্পেই তো তোমরা বিখ্যাত! কিন্তু আমাদের শিল্প বিখ্যাত হয় পশ্চিমা কেউ সিটি অফ জয় বা সির্দ্ধাথ নামে লিখলে। আমাদের গল্প বলে অনেক পশ্চিমা শিল্পী নোবেল পেয়েছেন!
কিন্তু দেখেবেন তথাকথিত উন্নত বিশ্বে আমাদের বা অন্য কারো শিল্প বা শিল্পী আছে বা নাই তা নিয়ে এতো মাথাব্যাথা নেই। তাদের ধারণা শিল্প আমার আগে বা পরে ছিল, আছে বা হবে এটা আমার শিল্পকে প্রভাবিত করতে পারবে না। কারণ, আমি ছবি আঁকি বা লিখি আমার অভিজ্ঞতা, আমার চারপাশ নিয়ে। কিন্তু আমাদের শিল্পে পশ্চিমের উদৃতি, উদাহরণ বা সম্মিলন না থাকলে আমারা শিল্পী হয়ে উঠি না।
গল্প লেখার চেয়ে গল্পের সমালোচনা সহজ। সেই সহজ জায়গা থেকে বলছি, আপনার গদ্য ঈর্শনীয়! সেখানে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। গোদনাইল থেকে নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টসে কাজে আসতে একজন তরুণী বাসে বা রিস্কায় উঠতে চেষ্টা করছে। ভীড় ঠেলে একজন রিক্সাওয়ালা যাত্রী নামিয়ে নতুন ভাড়ার সন্ধান করবে। কুলি বাবুর বোঝা রিক্সায় তুলে দিয়ে নতুন বোঝার সন্ধান করছে।
পুজামণ্ডপের ছবি এবং অলংকরণের কাজ পেয়েছে একজন শিল্পে নিরক্ষর অথচ পেশাদারী আঁকিয়ে। একই সময়ে তাকে বিভিন্ন পুজা মণ্ডপে কাজ করতে হচ্ছে, কিন্তু আদোও সে হিন্দু নয়! এদের গল্প আপনার হাতে দুর্দন্ত হবে নিশ্চিৎ।
আপনাকে এতো অনুরোধ করছি তার কারণ, আপনার ভেতর সেই সব মানুষদের দৈনন্দিন সংগ্রাম তুলে ধরার শক্তি আছে। আপনাদের মতো লেখকদের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠবে আমাদের সংস্কৃতি, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের কাছে। উল্টোটাতো আছেই।
অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আপনি আরো নিয়মিত লিখুন।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্যে ধন্যবাদ। আমার নিজের মনে হয় শিল্পের কোন দেশ-কাল-জাতি ভেদ নেই। আজ যা শিল্প, তা দেড়শো বছর পূর্বেও শিল্প ছিলো, আজি হতে শতবর্ষ পরেও সেটিকে শিল্প বলেই গণ্য করা হবে। ...
আবারো ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্যে।
_________________________________________
সেরিওজা
মন্ত্রমুগ্ধ। ফভিজম ভালো লাগে না....তবে ভালো না লাগানোটাই মনে হয় এর সার্থকতা।
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
ব্যক্তিগত ভাবে আমারো ফভিজম ভালো লাগে না। বরং সুররিয়ালিজম ধারার কাজকর্ম বেশ আগ্রহোদ্দীপক ঠেকে। ...
ধন্যবাদ পড়েছেন বলে।
_________________________________________
সেরিওজা
ওয়েলকাম ব্যাক সুহান! প্রত্যাবর্তনটা একটু সময় নিয়ে হলেও ঠিক আছে।
গল্পের মধ্যে আসা জার্গন আর নামগুলোকে আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়নি। এই ক্ষেত্রে আমি ফা-হা আর অন্যদের থেকে ভিন্নমত পোষন করি। মূল গল্পটাই এমন যে সেখানে কাহিনীর যৌক্তিকতার প্রমাণের জন্য এই বর্ণনা, এই প্রসঙ্গ, এই তুলনাগুলো দরকার হয়ে পড়ে। সেখানে পাঠককে একটু খাটতে হয় বটে, তবে সে খাটুনিটা আনন্দের।
পাঠকের স্বস্তির জন্য গল্পের পরিসর আরেকটু বাড়ানো যেত কিনা সে প্রশ্নে বইখাতার সাথেও কিঞ্চিত দ্বিমত পোষন করি। গল্পকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তে দেয়া উচিত। পাঠকের কথা ভেবে গল্প লিখলে বাজারী লেখক হওয়া যাবে - শিল্প নির্মাণ হবেনা।
আমার আপত্তি যথারীতি সুহানের গল্পের শেষের প্যারাগ্রাফ নিয়ে। এই গল্পের শেষটা তার "গল্পঃ শহরে যখন গল্প নেই"-এর মত হয়ে গেছে। আমার আপত্তি এই পুনরাবৃত্তির জন্য না, আপত্তি হচ্ছে অদরকারী একটা ট্যুইস্ট দেবার চেষ্টা করার জন্য। ট্যুইস্টটা আবার বাকি গল্পের ভাষা বা টোনের সাথে ঠিক খাপ খায়না।
সুহান আমাদের কথা শুনবে, সেখানে তার শেখার কিছু থাকলে শিখবে, শেষে তার মত করেই লিখবে - এটাই ঠিক। তার আগের অনেক গল্প নিয়ে করা প্রবল সব সমালোচনার স্রোতে তাল সামলে নিজের স্টাইল আর ভাষা নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা আশার কথা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গল্পের শেষে আমি নিজে প্রায়শই দ্বিধায় পড়ে যাই, তাড়াহুড়ো করি- সমাপ্তির সুর ঠিক থাকলেও লয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে অজান্তেই...
শেষের প্যারা নিয়েই কাজ করতে হবে দেখছি।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা পান্ডবদা।
_________________________________________
সেরিওজা
_________________________________________
সেরিওজা
ভালো লাগলো গল্পটা, সুহান।
তার আগের অনেক গল্প নিয়ে করা প্রবল সব সমালোচনার স্রোতে তাল সামলে নিজের স্টাইল আর ভাষা নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে পাণ্ডব দা'র এই কথাটা মনে পড়ছিলো সর্বাগ্রে !
নিয়মিত গল্প লিখো সুহান । এটাই বোধকরি তোমার আসল জায়গা ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
ধন্যবাদ সুপান্থদা, উপদেশ মেনে চলবার যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।
_________________________________________
সেরিওজা
এই জায়গাটা খুব আরোপিত মনে হলো। ভালো লাগলোনা।
আপনার নিরাবেগ গল্প বলার ধরন আমার খুব পছন্দ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ রানা মেহের...। শেষটা করতে পারিনি বলেই মনে হচ্ছে।
_________________________________________
সেরিওজা
গল্পের ভালমন্দ দিক সম্পর্কে কিছু বলতে ইচ্ছা করতেসে। অভয় দিলে বলি
ভাল দিকঃ দুর্দান্ত প্লট। তার চেয়েও দুর্দান্ত গল্পের শেষটা।
খারাপ দিকঃ গল্পের প্রথম পার্টটা পড়ে মনে হয়েছে, তুই পাঠককে তোর স্টুডেন্ট মনে করে ঝাড়া লেকচার দিয়ে যাচ্ছিস। দু-একজন বিজ্ঞ পাঠক হয়তো তোর কথা ধরতে পারছে, আর আমরা যারা পেছন সারির পাঠক তাদের এন্টেনার ওপর দিয়ে যাচ্ছে সব।
এইডা কিডা ড়ে ??
... খারাপ দিকটাই মনে রেখে দিলাম। আশা করি এতে আপত্তি নাই।
_________________________________________
সেরিওজা
নীড়পাতায় আসার প্রায় লগে লগেই পড়স্লাম... অহন বুইড়া আঙ্গুল দেখাইয়া গ্লাম...
"চৈত্রী"
আরে, আপনার তো আমি বিশাল পাংখা
গ্রাসিয়া...
_________________________________________
সেরিওজা
গল্প ভাল লাগছে সুহান মিয়া তবে একটা প্রশ্ন আছে, শেষের লাইনটাই কি তোমার আগে মাথায় আসছে?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
নিবির্ভাই, মন্তব্য দেরীতে দেক্লাম, রাগ কর্বেন্না
... উত্তর হচ্ছে- না। এই গল্পটা বরং আমি শুরু থেকেই তৈরী করেছি, শেষ থেকে নয়...।
_________________________________________
সেরিওজা
গল্পটা চমৎকার লাগলো।
শুরুতে পাঠককে এডুকেটেড করার একটা ব্যাপার আছে, ওটা আরেকটু পরিমিত হলে মনে হয় ভাল লাগতো বেশি।
শেষের লাইন নিয়ে বলি- একটু আচমকা এসেছে লাইনটা। অথবা বলা যায়, একটু সহজেই এসে গেছে। পুরো গল্পের মেজাজ বা বর্ণনার সাথে মিশে নাই ঠিকমতো। কীভাবে আনা গেলে ভাল হতো জানি না। উপরে নিবিড়ের কথাটা আমারও মনে হয়েছে। আমার নিজের একবার এমন হয়েছিলো, একটা গল্পের শেষটা মাথায় চলে এসেছিলো আগে, পরে পুরো গল্পটা জুড়ে শেষটার কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি শুধু।
সুহানের এই গল্পটা পড়ে মনে হয়েছে, শেষের যে পাঞ্চ লাইনটা, সেটা একটু বেমানান। ভাল করে ব্যাখ্যা করতে পারবো না হয়ত। তবে, আমি দেখেছি, শেষ লাইনে চমক আসে যেসব গল্পের, সেগুলোর গঠন এত ভারী বা পরিশ্রমী হয় না আসলে। আরেকটু হাল্কা কিসিমের হয় সেগুলোর বেড়ে ওঠা। কিন্তু সুহানের এই গল্পটা যেটুকু ভরবেগ নিয়ে এগুচ্ছিলো, তার তুলনায় ব্যাপারটা হার্ড ব্রেক হয়ে গেছে। শেষটা আরেকটু মসৃণ করলে আমার কাছে হয়তো আরও বেশি ভাল লাগতো।
বেশি বেশি লিখো সুহান, তোমার গল্পের জন্যে অপেক্ষায় থাকাটাও ভাল লাগার।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কনফু ভাইয়ার মন্তব্য পেয়ে আসলেই খুব ভালো লাগছে।
... আপনার বিশ্লেষণটুকুই খুব সম্ভব সমস্ত পাঠকের পাঠপ্রতিক্রিয়ার নির্যাস। উপরে পান্ডবদা, রানাপু, ফাহা ভাই সকলেই প্রায় একই কথা বললেন। শেষ খারাপ যার, সবই খারাপ...
আপনিও লিখেন না অনেকদিন, আশায় আছি...
_________________________________________
সেরিওজা
তুই দিন দিন ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছিস। সেল্যুট!!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
থ্যাঙ্কস সিমনভাই। গরীবের ব্লগে চিকা মার্বার জন্যে...
_________________________________________
সেরিওজা
এদ্দিন এই গল্প চোখে পড়ে নাই। আইজ পর্ল।
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
গ্রাসিয়া সিনর...
_________________________________________
সেরিওজা
অনেক কথা বলা হয়ে গেছে।
পোস্টের দিনই পড়েছি, কেবল মুগ্ধতা জানাতে এই কমেন্ট।
প্রিয় গল্পকারকে ধন্যবাদ পড়বার জন্যে...
_________________________________________
সেরিওজা
নতুন মন্তব্য করুন