ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে বসে আমাদের দলের একমাত্র দুশ্চরিত্র আড্ডাবাজ, কবির হাতের খবরের কাগজের বিনোদন পাতাটা বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো। চলন্ত লোকাল বাসের ভীড়ে দুতিন টাকা দামের যেসব সংবাদপত্রে নানারকম রগরগে সংবাদ অভূতপূর্ব কল্পনাশক্তির মিশেল দিয়ে পরিবেশন করা হয়, মীরপুর থেকে আসবার পথে কবির তারই একটা বাগিয়ে নিয়েছে। টিচার ফরহাদ আমায় সৌরশক্তি সংক্রান্ত কী একখানা ভিনদেশ ...
ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে বসে আমাদের দলের একমাত্র দুশ্চরিত্র আড্ডাবাজ, কবির হাতের খবরের কাগজের বিনোদন পাতাটা বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো। চলন্ত লোকাল বাসের ভীড়ে দুতিন টাকা দামের যেসব সংবাদপত্রে নানারকম রগরগে সংবাদ অভূতপূর্ব কল্পনাশক্তির মিশেল দিয়ে পরিবেশন করা হয়, মীরপুর থেকে আসবার পথে কবির তারই একটা বাগিয়ে নিয়েছে। টিচার ফরহাদ আমায় সৌরশক্তি সংক্রান্ত কী একখানা ভিনদেশী আবিষ্কারের এমনভাবে শোনাচ্ছিলো, যেন ওটা টম ক্ল্যান্সীর কোন দুর্ধর্ষ স্পাই থ্রিলার। আড্ডার চতুর্থ সদস্য হিসেবে ঘুমকাতুরে নান্টু নিজের নামের প্রতি প্রায় সর্বদাই সুবিচার করে থাকে। থেকে থেকে হাই তুলে সে কেবল তার বেঁচে থাকার তথ্যটাই জানান দিয়ে যাচ্ছিলো কোনমতে।
-" এইসব পত্রিকার খবরগুলো কিন্তু বেশ রে !! " কবির মুখ খুললো। " মানে, নানান রকম অদ্ভূত খবর আর গুজবের কথা জানা যায়। ভাবা যায় না- মানুষের এতো রকম বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহ থাকতে পারে !! "
-" আরে বুঝলি না, এসব হলো লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার চেষ্টা, " টিচার ফরহাদ নিজের গুরুত্বপূর্ণ মত ব্যক্ত করলো। " ব্যবসাই যদি করতে চাস- তবে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ না করলে চলবে কি করে; কেন, ইকোনমি-৪০৩ কোর্সটার মাঝে পড়িসনি- ঐ যে..."। এরপরে ফরহাদ ছেলেটা রউফ স্যারের ঘুমপাড়ানো ক্লাসের ক্লাসনোট হতে গড়গড় করে কিছু দুর্বোধ্য অংশ আউড়ে গেলো, সেগুলোর কিছুই বুঝতে পারলাম না।
আধা-ঘুমন্ত নান্টূ পর্যন্ত জেগে উঠলো সেই ক্লাস লেকচার শুনে। "এই ফরহাদ, ভাই তোর পায়ে পড়ি- একটু থাম। কী শুরু করলি তুই,... এই যে, এই... পিপুল ছেলেটাকেই দেখ। ... দেখ কীরকম গুড বয়ের মতন চুপচাপ বসে আছে। আরে এইরকম বিরক্ত করলে ক্যাফেটরিয়ায় মানুষ ঘুমুতে পারে ?? ..."
-" ওফ, যত্তসব ফালতু বকোয়াজ পোলাপান !! " কবির বিরক্তি প্রকাশ করে। " বলছিলাম যে আজকাল অনেক চটকদার খবরের কাগজ বেরোয়, তার মাঝে এরা শুরু করে দিলো অর্থনীতির আলাপ... "
-" যাই বল, পত্রিকার পাতায় অনেক লোক কেবল পড়ে খালি বিজ্ঞাপনের পাতাটাই। " ফরহাদ জানায়। "মানে, বেকারদের কথাই ধর। অথবা বাসা-বাড়ি ভাড়া চায় এমন লোকেরা। বিজ্ঞাপন ছাড়া গতি কীসে এদের..."
মুরুব্বিয়ানা ফলানোর এহেন সুযোগ আমি হাতছাড়া করি না। " না না, সব বিজ্ঞাপন আসলে- মানে ঠিক নির্ভরযোগ্য না। ঐ যে নজরুল হলের জগুদা আছেন না ?? চিনিস তো। উনিই বলছিলেন, মানে ওই যে টিউটর চাই বলে যেসব বিজ্ঞাপন পত্রিকায় দেয়া হয়, তাদের মাঝে অনেকেই ওসব বিজ্ঞাপন দেয় স্রেফ প্রতারণা করবার জন্যে। আবার ঐ যে ম্যারেজ মিডিয়া বা পীর ফকিরের কেরামতি... মানে এসব বিজ্ঞাপনগুলো বিলকুল ভুয়া... "
-" তা বলে বিজ্ঞাপনের দরকারতো আর অস্বীকার করা যায় না। " কবির বলে।
-" সেটা আর বলতে হয় না কি।", ফরহাদ বলে। "... আরে ঐ কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেই তো আমার হারুণ মামা গত পরশুই বেশ মোটা বেতনের একখানা চাকরিতে ঢুকলো..."
পিঠে প্রবল এক চাপড় খেয়ে বাক্যটা অসম্পূর্ণই রাখতে হলো টিচার ফরহাদকে।" চাকরিতে ঢুকেছে ?? বলিস কি রে, বেতন কত পাবে সেইটে আগে বল..."
প্রশ্নকর্তা আমন্ত্রণের অপেক্ষা না করে আমাদের সামনেই একখানা চেয়ার টেনে বসে পড়েন। আমাদের আড্ডাপ্রিয় চারমূর্তি সমস্বরে খুশিতে চিৎকার করে উঠি, " মজিদ ভাই !! তুমি !! "
হ্যাঁ- অন্য কেউ নন, ইনি আমাদের সেই চিরচেনা মজিদ ভাই, মজিদ আহমেদ- পৃথিবী জুড়ে বিচিত্র সব এডভেঞ্চার করে যিনি বলতে গেলে কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়ে গেছেন। হঠাৎ দেখলে মনে হবে মজিদ ভাইয়ের বয়সটা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝেই আটকে আছে। কিন্তু আমাদের মজিদ ভাই আরো কড়া ঘুঘু। তার জবানীতে বর্ণিত সমস্ত কাহিনীর স্থান-কাল-পাত্রের মাঝে সমন্বয় করলে তার বয়স নিশ্চিত নব্বইয়ের কোটা পেরিয়ে যাবে। এই হয়তো মজিদ ভাই লন্ডন টাওয়ারের রাজকীয় রত্নভাণ্ডারে ঢুকে চুরি করে আনলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস খোদাই করা মাইক্রোফিল্ম, কখনো হয়তো ডাকাত সর্দার আল কাপোনের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে আনলেন অপহৃত হলিউড চিত্রতারকাদের, পরমুহুর্তেই হয়তো আর্কটিক সাগরে ভেসে পড়লেন ভিনগ্রহ হতে আগত বেতারবার্তার মর্মোদ্ধার করতে।
সেই মজিদ ভাই- মনমেজাজ ভালো থাকলে- আমাদের সাথে ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে বসে কালেভদ্রে শুনিয়ে দেন তার অভিযানগুলোর কথা। যেমন, আজ মজিদ ভাইয়ের মুখের স্মিত হাসি দেখে বোধ হচ্ছে- তার মনটা বেশ উৎফুল্ল।
-" হ্যাঁ রে, বাঁদরের দল - আমিই। " মৃদু হেসে বলেন মজিদ ভাই। " কিন্তু তার আগে তুই বল ফরহাদ- কী যেন বলছিলি তোর মামার চাকরির কথা ?? "
- " বলছিলাম, খবরের কাগজের কথা। আমার মামা ঐ খবরের কাগজে একখানা চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেছিলো। ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে চাকরিটা। বেতন পাক্কা পঁচিশের কোঠায়। হুহ, বিজ্ঞাপনের যুগ বাবা..."
মজিদ ভাইয়ের মুখখানা একটা বাঁকা হাসিতে ভরে গেলো। " তুই ছোকরা একটা একের নম্বরের রামছাগল। হেহ, বিজ্ঞাপন - বিজ্ঞাপন চেনাচ্ছিস আমায় ?? তুই জানিস এই বিজ্ঞাপনের জোরেই আমার বন্ধু লুইজি আরমান্দো এখন নিউইয়র্কে বিশাল এক রেস্তোঁরার মালিক ?? তুই জানিস, এই বিজ্ঞাপন কীভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছিলো রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধ ?? তুই জানিস...নাহ থাক- এসব তো তোর জানবার কোন মানেই হয় না..." উত্তেজিত মজিদ ভাই হঠাৎ মুখের লাগাম টেনে একদম চুপ হয়ে গেলেন।
গল্পের গন্ধ পেয়ে ব্লাডহাউন্ডের ক্ষিপ্রতায় আমরা সামনে ঝুঁকে আসি। " ইয়ে, মজিদ ভাই- মানে কী যেন বলছিলেন - ঐ কী সব বিজ্ঞাপন আর আপনার বন্ধুর কথা..."
-" উহুঁ, উহুঁ, কিছু নয়। কিছুই বলিনি আমি..." মজিদ ভাই নিরুত্তর।
দুশ্চরিত্র হলেও কবির ছেলেটা জাতে ঠিক। একছুটে কোথা হতে মজিদ ভাইয়ের প্রিয় সিগারেটের একটা প্যাকেট হাজির করলো। বারুদে আগুণ ধরতে ঠিক এই ফুলকিটারই প্রয়োজন ছিলো।
-" বলুন না মজিদ ভাই, দিনটাও মেঘলা। মানে গল্প শোনাবার জন্যে এইটেই একটা- মানে- পরিস্থিতি যাকে বলে..." কোবরে অনুনয় শুরু করে দিলো।
হাত নাড়িয়ে তাকে থামিয়ে দিলেন মজিদ ভাই। সিগারেটে বড়সড় একটা টান দিয়ে গল্পের আরম্ভ করলেন এরপর।
-" আমি তখন আছি ইতালিতে। এলাকাটা লম্বারডি, ইতালির এই অংশটার রাজধানী হলো মিলান শহর। ইতালির মোট শিল্প-কারখানার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এই এলাকাটায়। আমি অবশ্য ঠিক এইসব শহুরে অঞ্চলে ছিলাম না। ছিলাম ইতালি সুইজারল্যান্ড সীমান্তের লুগানো হ্রদের তীরের একটা ছিমছাম গ্রামে। ফ্রান্সের সংঘবদ্ধ কুখ্যাত অপরাধী চক্র ইউনিয়ন কর্স তখন সুইস সীমান্তের এ অঞ্চল দিয়ে ইতালিতে হেরোইন পাচার করছে বলে ইন্টারপোলের ঘোর সন্দেহ। অতএব ইন্টারপোলের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে আমায় পাঠানো হয়েছে ওঅঞ্চলে।
ফ্রেঞ্চ টুরিস্ট পরিচয় দিয়ে গ্রামের একটা বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে আছি। খাই, দাই, চোখ আর কান খোলা রেখে ঘুরে বেড়াই। ইন্টারপোলের সূত্রে প্রাপ্ত খবরটা নেহাত গুজব বলেই বোধ হচ্ছে। এভাবে দিন পাঁচেক কাটানোর পর একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বোধ হলো গ্রামের লোকেদের হট্টগোলের শব্দটা যেন অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ একটু বেশিই। মধ্যবয়স্ক গৃহকত্রী আন্দ্রিয়া জানালো, ভোরবেলা লুগানো হ্রদের ধারে নাকি অচেতন অবস্থায় গাঁয়ের লোকে দেখতে পেয়েছে এক শহুরে বেশভূষার লোককে। আপাততঃ ধরাধরি করে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে গ্রামের একমাত্র ক্যাফেতে।
বলতে নেই, নিস্তরঙ্গ গ্রাম জীবনে এটা অবশ্যি একটা বড় আলোড়ন। অতএব নাস্তার পরে আমিও পা চালিয়ে চললাম ক্যাফের দিকে। ক্যাফে মালিক বুড়ো দান্তের সাথে গত কয়েকদিনে বেশ ভাব জমে গেছে আমার। ক্যাফেতে ঢুকে দেখি লোকে টইটম্বুর। গ্রামের ছেলে-বুড়ো সকলে মিলে দেখতে এসেছে এই তামাশা। ভীড় ঠেলে যখন একেবারে ভিতরে ঢুকলাম তখন স্মেলিং সল্ট শুঁকিয়ে মাত্র জ্ঞান ফেরানো হয়েছে লোকটার।
ভয়াবহ চমকে উঠলাম, যখন দেখলাম হতভাগ্য এই লোক আর কেউ নয়- আমার বন্ধু লুইজি আরমান্দো। হাঁকডাক করে লোকজনের ভীড় সরিয়ে দিলাম। বুড়ো দান্তে ততক্ষণে এনে দিয়েছে গরম কোকোর পাত্র। ধরে খাইয়ে দেবার পর লুইজির মুখে কিছুটা রক্ত ফিরে এলো।
-" বন্ধু লুইজি, কী হয়েছিলো তোমার ?? এইখানে এইভাবে অজ্ঞান অবস্থায় তুমি এলে কী করে ?? " লুইজি একটু ধাতস্থ হয়ে মুখে বুলি ফোটানো শুরু করতেই প্রশ করলাম।
-" মজিদ, ভাই- আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছি। আমার বড় বিপদ। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এই সময় তোমার মত একজন বন্ধু আমার খুবই প্রয়োজন ছিলো। " লুইজি কাতরস্বরে বললো।
'কী বিপদ' জানতে চাইবার পরে লুইজি আর্তনাদ আর হাহাকার মিশিয়ে যা বললো, তা বেশ কষ্টকর বটে। লুইজির পিতা গিওর্গি আরমান্দো ছিলেন একজন ধনী ইতালিয়ান জমিদার। অথচ তিনি শেষ জীবনে অমিতব্যয়ী আর জুয়াড়ি হয়ে পড়ায় মৃত্যুর পূর্বে লুইজির জন্যে রেখে যেতে পেরেছিলেন কেবল বসতবাড়িটা আর সামান্য কিছু টাকা। বন্ধুবর লুইজি পেশায় একজন চিত্রকর। খুব একটা পসার তার তখনো জমে ওঠেনি। এই অবস্থায় পিতার মৃত্যু আর হঠাৎ আর্থিক অনটন তাকে একটা বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তারপরেও লুইজি ভালোমতই চালিয়ে নিচ্ছিলো সব, গোল বাঁধালেন কাউন্ট লরেঞ্জো। এনরিকে লরেঞ্জো। ইতালির আন্ডারগ্রাউন্ড অপরাধীদের সাথে তার নাকি ভালো সখ্যতা, বলে সকলেই- প্রমাণ কেউ আজ পর্যন্ত করতে পারেনি। কাউন্ট অঢেল টাকার মালিক। তার সমস্ত আইনানুগ ব্যবসার মাঝে রিয়েল এস্টেট এজেন্সীর ব্যবসাই প্রধাণ। সেইটের জন্যেই কাউন্ট লরেঞ্জোর মনে ধরে যায় আমাদের লুইজির বসতবাড়িটা।
নানা রকম ভয়ভীতি কাউন্ট গত বছরদুয়েক ধরেই দেখিয়ে যাচ্ছিলেন লুইজিকে। উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে পারেননি। অঘটন ঘটলো কাল রাতে। পরলোকগত পিতার সুবাদেই না কিকে জানে, লুইজির রক্তে সামান্য জুয়ার টান রয়েছে। গতরাতে মাতাল অবস্থায় হোটেলের বারে কাউন্ট লরেঞ্জোর সাথে জুয়ায় বসে লুইজি। হারতে হারতে মরিয়া হয়ে নেশার বসে বাজি ধরে ফেলে তার বাড়িটাই। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। বাড়ির মালিকানা কাল রাতেই লুইজিকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে কাউন্ট। আর মাতাল লুইজিকে ফেলে দিয়ে এসেছে লুগানো হ্রদের তীরে।
-" ভাই মজিদ, " কাঁদোকাঁদো গলায় বললো লুইজি। " তোমার সাহায্য আমার এই মুহুর্তে ভয়ানক দরকার। ওই বদমাশ কাউন্টের কাছ হতে আমার বাড়িটা আমায় উদ্ধার করে দাও ভাই। তোমার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।"
ভেবে দেখলাম, হাতে এখন তেমন কোন কাজ নেই আমার। ইন্টারপোলের সূত্র ধরে এই গ্রামে আরো কিছুদিন বসে থাকার চাইতে বরং বন্ধু লুইজির সাথেই যাই না কেন, আর কিছু না হোক বদমাশ কাউন্টের সাথে অন্ততঃ একটু খেলাধূলা তো করা যাবে। এইসব সাতপাঁচ ভেবে অবশেষে ঘন্টা দুয়েক পরেই আমি বেরিয়ে পড়লাম লুইজির সাথে। গন্তব্য সেভেসো শহর। বিদেশের শহর হলেও আমাদের মফস্বলের সাধারণ শহরগুলোতথেকে এমন কিছু আলাদা নয় ওটা। মিলান থেকে প্রায় ২০ কিমি উত্তরে শহরটা, ঠিক মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সেভেসো নদী।
সেই সন্ধ্যায় সেভেসোর একমাত্র হোটেল ভেরেচ্চি ব্রিয়াঞ্জার খাবারঘর সংলগ্ন বারে বসে থাকতে দেখা গেলো লুইজি আরমান্দো আর মজিদ আহমেদকে। প্রতি সন্ধ্যায় না কি কাউন্ট লরেঞ্জো রাতের খাবার খেতে আর সামান্য নির্দোষ জুয়া খেলতে আসেন এই বারে। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতি হলো না আমাদের। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাত ধরতে না ধরতেই বারের কর্মচারী আর স্থানীয় খদ্দেরদের চাঞ্চল্য দেখে বুঝতে পারলাম কেউকেটা কারো আগমন ঘটেছে। শহরে ঢুকেই এখানকার থানায় ইন্টারপোল সূত্রে খবর নিয়েছি টুকটাক। কাউন্ট লরেঞ্জোকে চিনতে বেগ পেতে হলো না আমার। কালো টুইডের স্যুটে কাউন্টকে দেখাচ্ছিলো সিনেমার পর্দা থেকে উঠে আসা খাঁটি গডফাদারদের মতই।
-" এই হলো কাউন্ট। " অন্যদিকে চেয়ে নিচুস্বরে বিড়বিড় করে আমায় বললো লুইজি। " আর ঠিক তার সাথে যে সাড়ে ছ'ফুট লম্বা দানবটিকে দেখছো- সেভেসো শহরে সে ব্যাটা সবচেয়ে ঘৃণিত নাম- কাউন্টের পোষা গুণ্ডা, রোক্কো কার্লো। কাউন্ট লরেঞ্জোর সকল অন্যায় কাজের দোসর- কাউন্টের নির্দেশে নিজের ভাইয়ের গলা কাটতেও দ্বিধা করবে না ব্যাটা। দশাসই শরীরের জন্যে গত অলিম্পিকে ওয়েট লিফটিং এ ইতালি দলে সুযোগ পেয়েছিলো। দেশ ছাড়ার আগেই মদ খেয়ে মাতাল হয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে সেই দল থেকে নাম কাটা যায় ..."
-" চমৎকার একটা জোড়া।" আনমনে বিড়বিড় করে বললাম আমি। অপেক্ষা করলাম কাউন্ট মেন্যু দেখে খাবার অর্ডার করা পর্যন্ত। তারপর উঠে দাঁড়ালাম। " দেরী করে লাভ কি, কাউন্টের সাক্ষাৎটা সেরেই আসি। "
-"পাগল হলে নাকি ?? " চাপাগলায় উত্তেজিত স্বরে বললো লুইজি।" মার খেয়ে ভূত হয়ে যাবে তো ..."
সে কথায় কান না দিয়ে হাত ছাড়িয়ে রওনা দিলাম আমি। কাউন্টের টেবিল থেকে হাত দশেক দূরে থাকতেই আমার পথ আটকালো কার্লো। " কি চাই ?" ঘেউঘেউ স্বরে বললো সে। " খাবার সময় কাউন্টকে বিরক্ত করা চলবে না। "
ঠান্ডাস্বরে বললাম, " আমার বন্ধু লুইজি আরমান্দোর সাথে জুয়ায় জোচ্চুরি করে তার বাড়িটা কাউন্ট অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো। "
-" তোর আর তোর বন্ধুর মতো ফকির-মিসকিনদের সাথে কথা বলেন না কাউন্ট। দূর হ এখান থেকে। " প্রভুভক্ত কার্লো হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দিলো আমায় বুকের কাছটায়।
-" বিরক্ত করো না। গা থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে তোমার বদমাশ।"
তেতে উঠলো কার্লো। " বাদামি ইঁদুর, তোর এতো বড় স্পর্ধা !! আজ তোর একদিন কি আমার ..." কথা শেষ না করেই ঘুঁষি চালালো সে...
পরমুহুর্তে যা হলো, সেভেসো শহরের লোকেরা পরবর্তী অনেকদিন ধরেই নিশ্চিতভাবেই তা মনে রেখেছিলো। অলিম্পিক ওয়েট লিফটার রোক্কো কার্লো বিকট শব্দ করে আছড়ে পড়লো মাটিতে আর পরেই কোঁকাতে থাকলো। আর আমি, মজিদ আহমেদ- এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লাম কাউন্টের সামনের চেয়ারে।... "
ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারে তখন সূঁচপতন নীরবতা। মজিদ ভাই একটু থামলেন। বললেন , " আহ হা, সেই রাম আছাড়টার কথা মনে করে তো আমার আবার তেষ্টা লেগে গেলো রে..."
এই ইঙ্গিত বুঝতে আমাদের কারোরই কষ্ট হলো না। গল্পের এই পর্যায়ে এসে মজিদ ভাই থামেন, এইটাও কারো কাম্য নয়। অতএব আমিই ছুটে একটা ঠাণ্ডা সেভেনাপের বোতল নিয়ে আসলাম মজিদ ভাইয়ের জন্যে।
আলতো একটা চুমুক দিয়ে মজিদ ভাই আবার গল্প শুরু করলেন। "... হ্যাঁ, যা বলছিলাম। আমি এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লাম কাউন্টের সামনের চেয়ারে।
কাউন্টের মুখে মৃদু হাসি। কার্লোর পতন দেখে বেশ আমোদিত হয়েছেন বলে মনে হলো। " বসুন বসুন সিনর মজিদ। আপনি যে আসবেন তা জানতাম... দুপুরবেলাতেই খবর পেয়েছিলাম লুইজি আরমান্দো শহরে ফেরত এসেছে, সাথে বাদামী চামড়ার এক লোক। তখন থেকেই অপেক্ষা করে আসছিলাম, আপনার সাথে দেখা করে চোখ জুড়িয়ে নেবো। হে হে, তা বসুন না। কি খাবেন বলুন- খালি পেটে আবার আলোচনা করা যায় না...হে হে ..."
-" ঠাট্টা রাখুন কাউন্ট। খেতে আসিনি আমি। কী জন্যে এসেছি তা আপনারও অজানা নয়..."
-" আহা !! এতো তাড়াহুড় করলে চলে ?? দেখুন তো আপনার বন্ধু ওদিকে কেমন সুবোধ ছেলের মতন বসে আছে..."
তাকিয়ে দেখলাম ইতিমধ্যেই জনাচারেক ষণ্ডাগোছের লোক ঘিরে ধরেছে লুইজিকে। কাউন্টের দিকে চেয়ে কোনরকম নির্দেশের অপেক্ষা করছে তারা।
-" বুঝলেন তো !! অযথা চ্যাঁচিয়ে কী লাভ বলুন। তার চাইতে আগে খাওয়া শেষ করে নেই। তারপর আমার বাড়িতে বসেই না হয় সমস্ত আলোচনা করা যাবে। ..."
বুঝলাম আর কিছু করবার নেই। নীরবে বসে রইলাম কাউন্টের খাওয়া শেষ না হওয়াতক। কাউন্ট ধীরে সুস্থে উঠলো, তার লোকেরা তার ইঙ্গিতে লুইজিকে ঘিরে ধরে বাইরে বের করে নিয়ে গেলো। এরই মাঝে কোমর চেপে ধরে উঠে দাঁড়িয়েছে কার্লোও। হোটেলের বাইরে অপেক্ষা করছিলো তিনটে গাড়ি। প্রথমটায় উঠলো কাউন্ট, দ্বিতীয়টায় গুন্ডাগুলো তুলে নিলো লুইজিকে, আর শেষ গাড়িতে চেপে বসলাম আমি আর কার্লো রোক্কো। মিনিট পনেরো গাড়ি ভ্রমণের পর বুঝে নিলাম কাউন্টের বাসভবনে পৌঁছে গেছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমে কার্লো ইঙ্গিত করলো প্রাসাদোপোম বাড়িটির ভেতরে যাবার। ভেতরে একটা চমৎকার বসার ঘরে বসানো হলো আমায়, আগে থেকেই সেখানে দেখলাম রয়েছে লুইজি। বেচারা আতঙ্কে মরোমরো প্রায়। ঘরে বেশ কয়েকজন ষন্ডা দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দিকে তীক্ষ্মচোখে নজর রাখবার ছলে।
খানিক পরেই এলো কাউন্ট। দেখলাম স্যুট ছেড়ে ড্রেসিং গাউন গায়ে চড়িয়েছে সে ব্যাটা। হাসিমুখে পাইপ ধরিয়ে কাউন্ট বললো, " তারপর সিনর মজিদ, বলুন কী বলবেন।"
- " কী বলবো তা তুমি ভালোই জানো কাউন্ট। আমার বন্ধু লুইজির মুহুর্তের ভুলে তুমি তার বসতবাড়িখানা হাতিয়ে নিয়েছো। ওটা ফেরত চাইতে এসেছি আমরা। "
-" আহা, ওভাবে বলবেন না সিনর মজিদ। কী চমৎকার জায়গায় বাড়িখানা রয়েছে দেখেছেন ?? খাসা একখানা সরাইখানা হবে ওখানে। কত অনুনয় করেছিলাম আপনার বব্ধুকে- তা তিনি কানেই নিলেন না। অগত্যা কী আর করা, বাধ্য হয়েই..."
-" এ তোমার অন্যায় কাউন্ট। যা হোক, বাজিতে পঞ্চাশ হাজার লিরা খুইয়েছে আমার বন্ধু, টাকাটা আমি নিয়ে এসেছি। তুমি বরং এটা নিয়ে বাড়িটা ফেরত দেবার ব্যবস্থা করো। ..."
-" আর যদি না দেই ?? " কাউন্টের মুখ গম্ভীর।
-" তাহলে কী আর করা !! সাবধান হয়ে যাও। দেখলেই তো তোমার স্যাঙ্গাত কার্লোর কী দশা করলাম..."
-" বটে, বাদামি বাঙ্গালি; তুই আমার বাড়িতে বসে আমায় হুমকি দিস !! ", রাগে ফেটে পড়লো কাউন্ট। " তোর এতো বড় স্পর্ধা !! এই, এ দুটোকে নিয়ে সেলারে বন্দী করে রাখ। কাল সকালেই আগে আমি ওই বাড়িটা গুঁড়িয়ে দেবো। তারপর এই দুই আহাম্মকের ব্যবস্থা কী করা যায়, ভেবে দেখবো..."
কার্লোর ঘটনাটা ষন্ডাগুলোকে সাবধান করে দিয়েছে। যে কারণে দুই ব্যাটা পিস্তল তাক করে রাখলো আর বাকিরা রীতিমত গার্ড অফ অনার দিয়ে আমায় আর লুইজিকে নিয়ে গেলো সেলার রুমের দিকে। আমি এক থাকলে সমস্যা হতো না, বুঝিসই তো !! গোল বাঁধলো সাথে গোবেচারা বন্ধুটি থাকায়...
সেলার রুমটা কাউন্টের প্রাসাদের একপ্রান্তে। জানালাবিহীন একখানা ঘর, বাতিটাতি কিছু নেই। তারমাঝে হুড়োহুড়ি করে আমাদের ঠেলে দেয়া হলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে চোখে কিছু পড়ে না। কী আর করা, লুইজির মরাকান্না শুনতে শুনতে পেটে খিদে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙ্গলো পাঁজরে একখানা জোরালো লাথি খেয়ে। চোখ কচলে-টচলে দেখলাম কার্লো রোক্কো দাঁড়িয়ে আছে। বললো, " এই যে বাদামি ছুঁচো !! ওঠো। খানা খেয়ে নাও, আখেরি খানা। নেহাত মানুষ আমরা খুবই ভদ্র আর অতিথিপরায়ণ। নইলে... " আর কিছু না বলে খাবারের থালাটা রেখে বেরিয়ে গেলো ব্যাটা। ধীরে সুস্থে উঠে লুইজিকেও জাগিয়ে তুললাম। খাবার দিয়েছে দেখলাম শুকনো রুটি আর এক বোতল পানি। কী আর করা, প্রথমেই রুটিগুলো পানি দিয়ে গিলে নিলাম। রাতে সেলার রুমখানা ভালোমত দেখতে পারিনি। দিনের আলোয় বুঝলাম মাথার উপরে একখানা স্কাইলাইট রয়েছে। সেখান দিয়েই আলো আসছে।
লুইজি যখন 'ও গো !! আমার কী হবে গো -বাড়িখানা চলে গেলে আমি কী নিয়ে বাঁচবো গো... ' এইসব বলে সময় কাটাচ্ছিলো আমি তখন সেলার রুমে গাদা করে রাখা জিনিসপত্রগুলো দেখতে লাগলাম। কী নেই সেখানে। পুরোনো ফেলে দেওয়া কোট, বাতাস বেরিয়ে যাওয়া ফুটবল, খবরের কাগজের ডাঁই, ব্যবহৃত গ্যাসমাস্ক, এমন কি দুটো বড় আকারের সিলিন্ডার পর্যন্ত দেখতে পেলাম। চেষ্টা করলে ঐ সিলিন্ডার দুখানা দিয়ে বাড়ি মেরেই দরজাখানা ধসিয়ে দেয়া যেতো, কিন্তু যে পরিমাণ শব্দ হবে তা চিন্তা করেই ও কাজ আর করলাম না। কিছু যেহেতু করবার নেই, বরং খবরের কাগজের স্তূপটাই দেখতে লাগলাম বসে বসে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না, যখন দেখলাম ওই খবরের কাগজের মাঝে একখানা জুতোর বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনখানা ছিঁড়ে ঢুকিয়ে নিলাম পকেটে, দুর্বৃত্ত কাউন্ট লরেঞ্জো এনরিকোর সেলার রুমে অবহেলায়- অযতনে এ জিনিস লুকিয়ে ছিলো ভেবে হতবাক না হয়ে পারলাম না !!!
এরপরে আর বেশিক্ষণ কাটলো না। খানিক পরেই দরজা আবার খুলে গেলো। কাউন্ট লরেঞ্জোর মুখে দেখতে পেলাম বেশ চওড়া এক হাসি। " তারপর সিনর মজিদ, " হাস্যমুখী কাউন্ট বললে। " তোমার দোস্তোর সাধের বাড়িখানা বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে এসেছি- একথাই তোমায় জানাতে এলাম। ভাবলাম, তুমি শুনে খুশি হবে। "
বেচারা লুইজি একে শিল্পী মানুষ। দীর্ঘক্ষণ ধরে এই চাপ সহ্য করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো সে, এখন এই খবরে বেচারা একেবারে ভেঙে পড়লো। " ওহ মজিদ, আমি যে শেষ হয়ে গেলাম বন্ধু- একেবারে পথে বসলাম!! "
-" দুঃখ করো না লুইজি।" দাঁতে দাঁত চেপে বললাম আমি। " বেঁচে থাকলে এর সুদ সহ তোমায় আমি ফিরিয়ে দেবো এই কাউন্টের কাছ হতে। "
-" ঠিক বলেছেন সিনর মজিদ, 'বেঁচে থাকলে' - তবেই !! " , শয়তানী এক হাসিতে ফেটে পড়লো কাউন্ট। " নাহ, বেশি কষ্ট দিয়ে আপনাদের মারার ইচ্ছে নেই আমার। আজ বিকেলেই কোন এক দুর্ঘটনায় সেভেসো নদীতে আপনারা দুইজন ডুবে যাবেন। আর কাল সকালে স্থানীয় পত্রিকায় আসবে- ' শিল্পী লুইজি আরমান্দো এবং তার বন্ধু মজিদ আমেদ অজ্ঞাত দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।'... ব্যাস- সহজ সমাধান। "
দেঁতো হাসি হেসে বেরিয়ে গেলো কাউন্ট আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা। প্রায় অর্ধমৃত লুইজির কাছে গিয়ে বললাম, " ক্ষমা করো বন্ধু । এইবার আমি তোমার কোন উপকার করতে পারলাম না। ..."
নীরবে বসে রইলাম দুইজন। অপেক্ষা করছিলাম কোন অলৌকিকের। হঠাৎ-ই, বেলা প্রায় একটার দিকে শুরু হলো গুমগুম একখানা শব্দ। অস্বাভাবিক চওড়া রকমের একটা শিসের শব্দ শুনলাম খানিকক্ষণ। স্কাইলাইট দিয়ে দেখলাম আকাশ ঢেকে গেছে ধূসর রকমের মেঘে !! বাইরে শুনলাম কাউন্টের লোকেরা উত্তেজিত গলায় হাঁকডাক শুরু করেছে বেশ। হঠাৎ মনে হলো দম আটকে যেন। সেলার রুমের কোণা থেকে খুঁজে গ্যাসমাস্কগুলো নিয়ে এসে পরে নিলাম আমরা। বাইরে তখন চ্যাঁচামেচি রীতিমত চরমে। তারপর হঠাৎ করেই সব চুপচাপ। একদম চুপ। কোন সাড়াশব্দ নেই। ঘন্টাখানেক এই অবস্থায় থাকবার পর কাউন্ট আর তার লোকেদের নাম ধরে ডেকে দেখলাম আমি। কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। জোরে জোরে ধাক্কা দিলাম দরজায়, ফলাফল একই। উত্তেজিত আমি দ্রুত লুইজিকে নিয়ে হাত লাগালাম ঘরের কোণা হতে সিলিন্ডার বয়ে এনে দরজায় ধাক্কা দিতে। দুম দুম দড়াম !! কোন বাঁধা এলো না দেখে আমাদের কাজের গতি গেলো বেড়ে। মিনিট আটেক পরেই শক্ত সিলিন্ডারের আঘাতে খুলে এলো দরজার পাল্লা।
বাইরে বের হওয়া মাত্রই আবারো নাকে এলো তীব্র এক ধরণের গন্ধ। ভাগ্যিস, সেলার রুমে প্রচুর গ্যাস মাস্ক মজুদ ছিলো। ফিরে গিয়ে নিয়ে এলাম সবগুলো। মুখে লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা দুইজন। অদ্ভূত !! অবিশ্বাস্য !! প্রাসাদ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাউন্ট আর তার স্যাঙ্গাতদের দেহ। তারচেয়েও বড় কথা, কোনটাতেই প্রাণ নেই !! সন্দেহ হলো, কোন বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়েছে ব্যাটাদের। কিন্তু কিছুতেই ভেবে পেলাম না- কে হতে পারে আমাদের এই অজ্ঞাত পরিচয় বন্ধু।
তবে বাইরে বেরিয়ে আর দেরী করলাম না। কাউন্টের গাড়িতে উঠেই ভেগে পড়লাম ঐ এলাকা থেকে। কাউন্ট আগেই বলে দিয়েছিলো, তবুও সন্দেহ নিরসনের জন্যে ঘুরে এলাম একবার লুইজির বাড়ির সামনে থেকে। সে বাড়ির অস্তিত্ব দেখলাম না। কাজেই এরপর কাজ সহজ। কাউন্ট নেই- কিন্তু তার কোন চ্যালা এখনো জীবিত থাকতে পারে এই আশঙ্কায় লুইজিকে পাঠিয়ে দিলাম নিউইয়র্কে আর আমি চলে গেলাম আমার মূল কাজে, ইউনিয়ন কর্সের পেছু ধাওয়া করতে। "
... মজিদ ভাই থামলেন। ক্যাফেটরিয়ার নিষ্কর্মা কর্ণারের নিয়মিত চার সদস্য - আমরা- একে অপরের মুখ চাইলাম কিছুক্ষণ। তারপরেই প্রশ্ন ছুঁড়লাম একের পর এক।
-" সে কী !! কীভাবে হলো !! "
-" মানে, মজিদ ভাই- কাউন্ট লরেঞ্জোকে কে মারলো- কীভাবে মারলো- তার কিছুই তো..."
বরাভয় মুদ্রায় একখানা হাত তুলে যাবতীয় গ্যাঞ্জাম থামিয়ে দিলেন মজিদ ভাই। " ... 'সেভেসো ডিস্যাস্টার '। ১৯৭৬ সালের সালের জুলাই মাসের দশ তারিখ সেভেসোর ইফমাসা কারখানায় এক বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়ে সাদা ধূলোর মত দেখতে ডাই-অক্সিন গ্যাস। সেভেসোর আকাশ হতে ত্রিশ মিনিট ধরে চলে এই ধূলাবৃষ্টি। ভয়ানক এই গ্যাসের প্রভাবে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রাণ হারায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গবাদি পশু। মানুষজনের অবশ্য তেমন একটা প্রাণহানি হয় নি- কিন্তু শিশু আর বৃদ্ধদের লিভারের সমস্যায় ভুগতে হয়েছে দীর্ঘদিন। ইফমাসা কারখানার সবচেয়ে কাছের বাড়িটাই ছিলো ওই বদমাশ কাউন্টের। বুঝলি, খোদার মার আটকায় কে !! পাপের ফল ভোগ করতে হবে না ব্যাটাদের !! বদ্ধ সেলার রুমে থাকাতেই তো বেঁচে গেলাম সে যাত্রা। তায় সে ঘরে আবার পেয়ে গেছিলাম গ্যাস মাস্ক !! " মজিদ ভাই একখানা সুখের হাসি দিলেন।
- " কিন্তু তাতেও যে সব প্রশ্নের জবাব মেলে না মজিদ ভাই।" টিচার ফরহাদ হিসেব মেলাতে পারে না। " সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েও তোমার বন্ধু লুইজি আরমান্দো নিউইয়র্কে রেস্তোঁরা খুলে বসেছে বলেছিলে যে, তবে ?? বাড়ির দলিল কি খুঁজে পেয়েছিলে পরে ?? "
-" রেখে দে তোর দুপয়সার বাড়ি। মনে নেই কাউন্টের সেলার ঘরে খুঁজে পাওয়া সেই জুতোর বিজ্ঞাপনের কথা ?? ... আরে, ওটা কোন সাধারণ জুতোর বিজ্ঞাপন নয় রে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধে গেটিসবার্গ যুদ্ধের নাম শুনেছিস না ?? শোন তবে। ১৮৬৩ সালে কনফেডারেট জেনারেল জেমস প্যাটিগ্রিও যখন তার সেনাদল নিয়ে পেন্সিলভেনিয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন- তখন তার সৈন্যদলের অবস্থা বেজায় করুণ। ইউনিফর্ম ছেঁড়া- মার্চ করছে খালি পায়ে। এই অবস্থায় তার চোখে পড়ে গেটিসবার্গ কম্পাইলার পত্রিকায় এক দোকানে চমৎকার জুতা পাওয়া যাচ্ছে বলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। ব্যাস !! তক্ষুণি যাত্রার গতিপথ পালটে গেটিসবার্গের দিকে যাত্রা শুরু করে তার বাহিনী। বেচারা জেনারেল যদি জানতেন সামনে কী দুর্ভোগটাই না তার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। পথেই তাদের সামনে পড়ে যায় শত্রুপক্ষ ইউনিয়ন বাহিনী। তিনদিনের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দুই পক্ষের প্রায় ছয় হাজার লোক প্রাণ হারায়। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয়টা হয় ইউনিয়ন বাহিনীর। ...
বুঝলি তো এইবার, আমেরিকার গৃহযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এই বিজ্ঞাপনটার মূল্য কত হতে পারে ?? ওয়াশিংটনের স্মিথসন ইনস্টিটিউট কোন দরদাম করা ছাড়াই নগদে দিয়েছিলো পচাত্তর হাজার ডলার...
হে হে, বুঝলি তো- একখানা বিজ্ঞাপনের মূল্য কত হতে পারে, সেটা আমার ভালোই জানা রয়েছে... "
এই বলেই হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে মজিদ ভাই বললেন, " এই যাহ, যা বলতে এসেছিলাম। চটপট একশোটা করে টাকা ফেলো তো সকলে। না না, কোন ওজর আপত্তি চলবে না। জলদি !! চটপট !! "
আমাদের হতবাক মূর্তির সামনে চারটা একশো টাকার নোট পকেটস্থ করে মজিদ ভাই কী যেন একটা বের করলেন মানিব্যাগ থেকে। " এই নে, চারটে টিকিট। আমাদের চড়ুইভাতি প্রোডাকশন হাউসের নাটক কাল বিকেলে- বেইলী রোডে। দেখতে যাবি অবশ্যই..."
এই বলে আমাদের কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই মজিদ ভাই বেরিয়ে গেলেন ক্যাফেটরিয়া হতে। নিষ্কর্মা কর্ণারের নীরবতা ক্ষুন্ন করে খানিকপর ঘুমঘুম স্বরে নান্টু বললে, " মজিদ ভাই কি নিজের নাটকের বিজ্ঞাপন করে গেলে নাকি রে ?? ..."
মন্তব্য
দুইবার গেলে তো বিপদ, ব্যাটারে একবারই পাঠা।
ঈশানের বইডা ফেরত দিস
লেখা ভালৈছে।
অফটপিকঃ বিজ্ঞাপনের কথা দেইখা মনে পইড়া গেলো। কয়দিন আগে নজরুল হলের ঐদিকের দেয়ালে দেখলাম একটা বিজ্ঞাপন টাইপ টানানো, "হুজুর দেওয়ানবাগীকে চাঁদে দেখা গেছে" ।। মজিদ ভায়ের সাথে এই ব্যাটার দেখা হওয়া জরুরী।
হুজুরের লিঙ্ক
_______________________________________________
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
হ, বইখানা ফেরত দেয়া যায়। কারণ যেই লিঙ্ক দিলি- তাতে মজিদ ভায়ের পরবর্তী গপ্পের নাম পেয়ে গ্লাম। " হুজুরবন্দের ফান্দে- বন্দী মজিদ কাঁন্দে"...
যাজ্ঞা, ট্যুর ভালামত দিস। আর কালা হৈস না, তাইলে দেক্তে আমার মত হই যাবি...
_________________________________________
সেরিওজা
মজার, অবশ্যই মজার। কিন্তু অন্যান্য গল্পগুলোতে তোমার একটা 'সিগনেচার টাচ' থাকে, এখানে ওটা মনে হচ্ছে নেহায়াতই ধূসর। নাকি আবার তোমার কাছে চাওয়াটা একটু বেশী বলেই এমন মনে হলো ... হতেও পারে!
কিছু টাইপো শুধরিয়ে নিও।
ভালো লাগলো। খুব ব্যাস্ত নাকি? বহুদিন পর উদয় হলে!!
===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
যেই না ব্লগার- তায় আবার 'সিগ্নেচার টাচ'...
গল্প ঠিক জমেনি বোধহয়- তার জন্যে বোধহয় আমার সাথে সময় স্বল্পতাকেও একটু দায়ী করা যায়। দৌড়ের উপর ছিলেম কদিন...
পড়বার জন্যে ধন্যবাদ বস।
_________________________________________
সেরিওজা
ভালো লাগলো। (এক জায়গায় লুইজির কথোপকথন খানিকটা অনুবাদের মত শোনাচ্ছিলো)
love the life you live. live the life you love.
পড়েছেন বলে ধন্যবাদ। ... হুম, মনে হচ্ছে সংলাপে সমস্যা আছে কিছু...
_________________________________________
সেরিওজা
আগুন!!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
আপ্নে তো ভাই দেখি ব্যাডভেঞ্চার পাইলেই আগুণ জ্বালায়া দ্যান !!
_________________________________________
সেরিওজা
ঘনাদা-সুলভ গল্প ভালু পাইলাম। মিয়া আপনার এই সিরিজটা আজকেই প্রথম দেখলাম। গপাগপ পড়ছি। তবে কথা কি, নারীলোলুপ কবির'কে এখনও তেমন কিছুই করতে দেখি নাই, মজিদ ভাইও সে লাইনে যান নাই। সেইটুকু ফ্লেভার আনলেই মাসুদ রানাও...
চড়ুইভাতি প্রোডাকশন হাউসের নাটকে বিবেকের রোল কর্তে চাই। যোগাযোগ ঠিকানা দেন।
আচ্ছা, এই চড়ুইভাতি প্রোডাকশনের সঙ্গে নজু ভাইয়ের কোনো আঁতাত নাই তো?
(আগেরটায় অনার্য সঙ্গীত নজুভাইরে জড়াইছিলেন। এইটাতে আমি জড়াই)
চামে চিকনে মন্তব্য করে অধমের ঘাড়ে সিরিজ চাপানোর মতলব করছেন বুঝি ?? ... সিরিজ না রে ভাই, আশ্বিনে ভদ্রে দুয়েকটা ইন্টারেস্টিং তথ্য পেলে গল্পের ছলে চালিয়ে দেয়া আর কি...
রানার কথা বলছেন ?? হেহে, সে ব্যাটা তো নমস্য- এতো বয়েস হলো,তবুও ব্যাটার মুরোদ যায় না...
আর প্রোডাকশানের খবরটা স্বয়ং নজু ভাই দিয়ে যেতে পারেন... ;p
_________________________________________
সেরিওজা
ঠিকাছে।
গ্যাস মাস্ক পড়ার বদলে পরতে হবে।
কাকস্য পরিবেদনা
নজর বটে মেম্বরের !!! ... যাক, ঠিক করলাম।
যাজ্ঞা, আট সপ্তাহ তো লগিন কইরে কাটালেন- এবার একটু ঘুরেটুরে আসেন, অন্যান্যদেরো রেকর্ড ভাঙ্গবার সুযোগ দিন।
_________________________________________
সেরিওজা
ভাল লেগেছে, তবে আপনার গোয়েন্দা গল্প সিরিজের অন্য গল্পগুলির মতো অতটা ভাল লাগেনি। অনেকটা প্রত্যাশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম তো এইজন্যই বোধহয় ঠিক মন ভরলো না। আরো একটা জম্পেশ ব্যাডভেঞ্চার গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
হতাশ করেছি বোধহয়- কী আর করা...
আরো জমাট করবার চেষ্টা করবো না হয়। ধন্যবাদ পড়ার জন্যে।
_________________________________________
সেরিওজা
এই গল্পটায় মজিদ ভাইরে কেম্নজানি অফ-ফর্ম মনে হৈল। দীর্ঘ পিয়েল জুড়ে মজিদ ভাইয়ের নতুন নতুন জমাটি চাপাবাজির কিচ্ছা শোনানোর দাবি জানাইলাম....
আচ্ছা, ফরহাদ টিচার্ফাইটার না হৈয়া সরাসরি টিচার কেন? আমার কাছে টিচার্ফাইটার কথাটা সুন্দর লাগে....
------------------------------------------------------------
চতুর্বর্গ
চিরকালে অনফর্মে টেনি-ঘনা ছাড়া কেউ ছিলো নাকি কভু ?? ...
তা যাক, পিয়েল্টিয়েলে পড়াশোনা বাদ্দিয়ে মজিদে মাত্তে হবে না, তুমি বাবা বরং টিচার্ফাইটগিরি করে বেড়াও।
আর, ফরহাদ টিচার বলেই তো আড্ডা মারার সময় পায়- টিচার্ফাইটার হলে কি আর তা পারতো নাকি !! ...
_________________________________________
সেরিওজা
টিচার্ফাইটিং কর্মু? আস্তে কন বড় ভাই, পোলাপাইন হাস্তে হাস্তে ক্যাফের ছাদখানই না উড়ায়া দেয়! ওসব ফর্হাদের মতোন অমানুষদের কাজ, আম্রা করুণভাবে কোনরকমে চাট্টি করে খাই।
পিয়েলে নয়া গল্পে না ফাঁদলে কিন্তু নিষ্কর্মা কর্ণারের পিপুল এন্ড গং রে পাশের্ভবনের আঁতেল কর্ণারে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে রাখচি।
--------------------------------------------------------
চিরপুরাতন চতুর্বর্গ চট্টোপাধ্যায়
এটা বেশি জমেনি সুহান।
আর ইয়ে.....
নায়কের নাম মজিদ, ব্যাপারটা এলটু কেমন হয়ে গেল না?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
মজিদ নাম পছন্দ হলো না বুঝি ?? বেশ, পরেরবার নাম পালটে রুদ্র ঝড়েশ্বর করে দেবো...
পড়েছেন বলে ধন্যবাদ, না জমায় দুঃখপ্রকাশ...
_________________________________________
সেরিওজা
ভালু পেলাম।
গল্পের কাঠামো নিয়ে একটা কথা মনে হলো, অনেক পাঠক যে খেদ জানিয়েছেন তার মূল কারণ এইটা হতে পারে। সেভেসো ডিস্যাস্টার আর গেটিসবার্গ, এই দুটো জিনিস পরস্পরের সঙ্গে এতোটাই অসম্পৃক্ত যে ক্লাইম্যাক্সে একটার জায়গায় দুটো আলাদা ফোকাল পয়েন্ট গজিয়ে গেছে। আর সেভেসোর পেছনে মজিদ ভায়ের কোনো হাত নেই, ঐ বিজ্ঞাপনটা গুদাম ঘরে চোখে পড়াটাও বিরাট কিছু কৃতিত্বের কাজ নয় (অন্ততঃ এই রকম সুপারহিরোর পক্ষে), ফলে ঘনাদা-মার্কা কীর্তির লেভেলে এই গুল্পটি পৌঁছোয় নি। তা নইলে লেখা খুবই তরতরে, পড়ার সুখে কোনো ঘাটতি হয় না।
যাব্বাব্বা, গভীর রাতে এইরকম একখানা বিশ্লেষণ পেয়ে বেশ ইয়ে বোধ করছি। মানে, এতজন পাঠকের সময় এইভাবে নষ্ট করা কোন কাজের কথা নয়- তাই বেশ সংকোচ হচ্ছে আর কী...
তা যাক, মজিদের গল্প ভবিষ্যতে আরো আসলে এদিকে আলবাত খেয়াল রাখবো।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ পাঠুদা।
_________________________________________
সেরিওজা
এইটা ওইদিইনই গেরিলা কায়দায় পইড়া ফালাইছি। ভাল্লাগছে।
সবসময়ের ব্যাডভেঞ্চার গপ্পের মতোই।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আপনে মিয়া লোক সুবিধার না। সারাদিন তো কাটাকুটি করেই মানুষ মারেন, এবার তো হাসায়েই মানুষ মেরে ফেলবেন।
_________________________________________
সেরিওজা
হ্যাঁরে, এত ব্যাডভেঞ্চার গপ্পো ফেঁদে হেদিয়ে মরছিস, জেবনে কয়টা অ্যাড বা ব্যাডভেঞ্চার করেচিস, বল দিকিনি?
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
নে নে, থাম এবার। নাহয় দুয়েকটা পাহাড়টাহাড় দেখে ফেলেচিস কম্বল আর মায়ের আঁচল ভেদ করে, এ নিয়ে আর বড়াই করতে হবে না।
_________________________________________
সেরিওজা
এ ধরনের গল্প ফাঁদার সবচেয়ে বড় হ্যাঁপা হচ্ছে ফ্যাক্ট এর সমান্তরালে ফিকশনকে সঙ্গতিপূর্ণভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেটা করতে প্রচুর গলদঘর্ম হতে হয় বৈকি।
তোর ব্যাডভেঞ্চারগুলো পড়ার সময় অনেক কিছু শিখতে পারি। এখানে তোর দেয়া প্রায় প্রতিটা বৈদেশ এবং ইতিহাস সম্পর্কিত রেফারেন্স এবং টার্ম, ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি কিন্তু দেখার চেষ্টা করি, তাই সামান্য চাপাবাজি করলে কিন্তু ধরা পড়ে যাবি। এর ফলেই বুঝা যায় এ ধরনের একটা গল্প তৈরীতে কি পরিমান ছুটাছুটি করতে হয় আন্তর্জালময়- শুধুমাত্র একটা একলাইনের ক্লু উপস্থাপন করার জন্য।
গল্পটা লিখে তুই কতটুকু লেখিয়ে-স্বার্থকতা অর্জন করলি, কিম্বা কয়টা পাঠকের মনোরঞ্জন করলি সেটা আমার কাছে মুখ্য নয়; যেটা মুখ্য সেটা হল, এই দেশের এক কোনে বসে, বিজাতীয়- সম্পূর্ন অপরিচিত সভ্যতা, সংস্কৃতি আর ভৌগলিক সত্যাসত্য গুলোকে একাট্টা করে, ঐতিহাসিক ঘটন-সংঘটন গুলোকে একসাথে মিশিয়ে ছোট ছোট কাহিনী গড়ার মাধ্যমে, তোর একটা সুন্দর কিছু তৈরী করার অসামান্য প্রয়াস--
তোকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশা করি ব্যাডভেঞ্চার অক্ষুন্ন থাকবে।
ধৈবত
ধন্যবাদ তোর এই চমৎকার মন্তব্যটার জন্যে। ব্লগে লেখা ঠিক এই কারণেই, পাঠকের মিথস্ক্রিয়ায়- যারা লিখতে চায়- নিজেদের তারা ঝালিয়ে নিতে পারে সরাসরি আগুণের আঁচে।
আমার নিজের মনে হয় সত্যটাকে কেবল সত্য বলে বিবৃতি দেবার জন্যে গল্প নয়- যেটা এই গল্পে ( গল্প হয়নি যদিও) খুব করুণভাবে বোঝা গেছে। প্রেমেন্দ্র মিত্র আর বিভূতিভূষণের স্বার্থকতা ওখানেই- যখন ফ্যাক্টসের পাশাপাশি ঘনাদার আর শঙ্করের কর্মকাণ্ড আরোপিত বলে মনেই হয় না। এজন্যেই তারা লেখক।
তোর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো স্বভাবতই। পরের ব্যাডভেঞ্চারের মালমশলা যোগাড় হয়েছে। আশা করি এরপর গল্পটাই ভালো লাগবে, চেষ্টাটা না।
_________________________________________
সেরিওজা
গুড। কুইক কুইক নামিয়ে ফেলুন।
নতুন মন্তব্য করুন