ওয়েম্বলি, আউলা এবং আমরা

সুহান রিজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন সুহান রিজওয়ান (তারিখ: শুক্র, ১০/০৬/২০১১ - ১০:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অদ্রোহ আনাড়ি হাতে ভুস করে আমার মুখের উপর সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললো, "স্যার যা করেন, মঙ্গলের জন্যেই করেন।"

আগামীকাল দুইটা কুইজ, একটা ক্লাসটেস্ট, দেড়টা ভাইভা আর অদ্রোহের সামনে একগাদা ছড়ানো গ্রাফপেপার। অতএব যা বোঝার, বুঝে নিলাম। রুমে ঢুঁকতে না ঢুঁকতেই এরকম আপদকালীন পরিস্থিতিতে আমিও একটু দিশেহারা না হয়ে পারি না। পিঠ থেকে ভারী ব্যাগটা নামিয়ে তাই বললাম, " ইয়ে,... শোন অদ্রোহ- আজকে গরমটা একটু বেশিই পড়েছে অবশ্য, তার মাঝে রাত জেগে এতটা পড়ালেখা করার ধকল নিস্‌ না রে ভাই। আয় একসাথে খেলাটা বরং দেখে আসি, এরপর না হয় কাল সকালে ..."

অদ্রোহ আমার কথায় কান না দিয়ে সামনের গ্রাফপেপারটাকে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, "এই দ্যাখ, ওপেনিং স্কোয়াডে চিচারিতোকে তো স্যার খেলাচ্ছেনই। আর চিচারিতো যদি- ধর মাঝমাঠ থেকে এইরকম একটা বল ফাঁকায় পায়- তাহলে মনে কর প্রথম গোলটা পেতে... "।

আগ্রহী পাঠকের জন্যে ব্যাপারটা মনে হয় এই পর্যায়ে ব্যাখ্যা করা দরকার।

২৮মে, ২০১১- শনিবার রাতে ওয়েম্বলির নতুন স্টেডিয়ামে হয়ে গেলো ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণী শিরোপার খেলা - উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনাল। ফুটবলে আগ্রহী দর্শক মাত্রই জানেন, এবারের ফাইনাল হয়েছিলো দুই হাই প্রোফাইল ইউরোপীয় জায়ান্ট- ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর স্পেনের বার্সেলোনার মাঝেই। খেলার ফলাফলও বোধহয় অজানা নয় কারোই, সে প্রসঙ্গে তাই আর যাচ্ছি না।...

ফুটবলে লাথি মারতে না পারলেও ফুটবলে লাথি মারা দেখতে আমরা বাঙ্গালিরা বড় সুখ পাই। একজন আদি-অকৃত্রিম-কালোপানা বাঙালি- মুখেমারিতংজিদানকাকা টাইপ সমর্থকের মতোই ফুটবলের প্রতি আমারও এইরকম ভালোবাসা। সে ভালোবাসা থেকেই আমি ২৮ তারিখ রাত্রে ভাতডাল খেয়ে, দাঁত খিলাল করে, দুটো বুকডন দিয়ে- এককথায় রীতিমত প্রস্তুত হয়ে- যাত্রা করলাম পলাশীস্থ আহসানউল্লাহ হলের দিকে। উদ্দেশ্য, ফাইনালটা বেশ আয়েশ করে ৪২" ব্রাভিয়া টিভিতে দেখা। আমার জীবনে সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

যা হোক- দেখতে পেলাম, অদ্রোহের মিলিমিটার স্কেলে অঙ্কিত ওই গ্রাফ পেপারে ওইটুকু গুটিগুটি করে লেখা হয়েছে মেসি, ইনিয়েস্তা, জাভিদের নাম আর ইয়া দামড়া দামড়া স্কেলে রীতিমত কিলোমিটার স্কেলের ফ্রন্টে লেখা হয়েছে রুনি, গিগস্‌ আর ভিদিচের নাম। আচ্ছা, 'স্যার' বলতে তাহলে স্যার এলেক্স ফার্গুসনকেই বোঝানো হচ্ছে !!

দেখেই মাথায় রক্ত চড়ে যায়, আমার কাটালান স্বত্ত্বা আমায় অদ্রোহের ওই গাণিতিক বিশ্লেষণ মেনে নিতে বাঁধা দেয়। বলি, "ফালতু প্যাঁচাল এইসব বন্‌ কর। খেলা দ্যাখতে আসছি, খেলা দ্যাখমু- তোর ঐ স্যার না ম্যাডাম- কী য্যান কইলি..."

অদ্রোহ পেশাদার ম্যানচেস্টার সমর্থক, আবেগে গলাটা ধরে আসে তার- "এতোদিন ধরে স্যারের নুন খাচ্ছি, আর আমার দোস্ত হয়ে তুই স্যারকে চিনলি না !! ... আফসোস, এই যুগের পোলাপান তোরা- ভালা দল সাপোর্ট করিস কিন্তু ভালা সাপোর্টার আজতক হইতে পারলি না..."

অদ্রোহের রুমমেট- আরেক বন্ধু আবির, আজকের সাপলুডু ম্যাচে সে নিরপেক্ষ সাপোর্টার। তার দল আর্সেনালকে আগেই বার্সেলোনার সাপে খেয়ে নিয়েছে। নিরপেক্ষতার পরম পরিচয় দিয়ে সে বললো, "আইজকার ম্যাচে হেব্বী মজা হইবো !! "

অদ্রোহের গ্রাফ বিশ্লেষণ হেলায় সরিয়ে রেখে আমি বলি, "এইসব আজেবাজে হিসেব সরিয়ে রেখে সাইকোমেট্রিক চার্টটা এঁকে ফেলো তো সোনা !! ...একঘন্টা বাকি এখনো ম্যাচের, কাজে লাগা ওইটা।"

অদ্রোহ এতো সহজে নিবৃত্ত হয় না। "না না, তুই বিষয়টা খেয়াল কর- চিচারিতো যদি দৌড়ের উপরে থাকে, তাহলে এই সময় ফাঁকায় দাঁড়ায়া থাকলে ক্যারিক একটা থ্রু পাস ছাড়লেই... "

ব্যাটার বকানিতে বিরক্ত হয়ে আমি ফেসবুকে ঢুঁকি। ফাহিম ভাইয়ের স্ট্যাটাস দেখলাম, বার্সার ওপেনিং স্কোয়াডে পুয়োল নাই। মাশকেরানো খেলবে। নগদে দুইটা হার্টবিট মিস হয় আমার। ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিট দশজন নিয়েই খেলতে হবে কি না, ভেবে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কুফা লক্ষণ, কুফা লক্ষণ।

দুই ধরণের স্ট্যাটাসের প্রাবল্য দেখা যায় খোমাখাতার বাড়িপাতায়। এক দল লালে লাল হয়ে বলছে, 'প্রথম ম্যানচেস্টার আমার শেষ ম্যানচেস্টার, জীবন ম্যানচেস্টার আমার মরণ ম্যানচেস্টার। ম্যানচেস্টার, ম্যানচেস্টার, ম্যানচেস্টার...'।

আরেকদলের স্ট্যাটাসে বলা হচ্ছে, 'মোরা একটি সুন্দর ম্যাচের জন্যে ওয়েট করি, মোরা একটি মেসির গোলের জন্যে অস্ত্র ধরি... '। এইদলের প্রোফাইল পিকচারে মেসির ছবি- হাত উপরে তুলে গোল উদযাপনের ভঙ্গী, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। অজ্ঞাত কারণে খোঁচা খোঁচা দাড়ির মেসির সাথে নিউ হোটেল ছালাদিয়ার সাইনবোর্ডের ছাগলের মিল খুঁজে পাই আমি। ইয়া আল্লাহ, এইগুলা কী দেখতেসি আজকে !! কুফা লক্ষণ, কুফা লক্ষণ...

সোয়া বারোটার দিকে ঘর ছেড়ে আমরা তিনজন- আমি, অদ্রোহ, আবির- টিভিরুমের দিকে রওয়ানা দেই। ঝুঁকি নিয়ে লাভ কি, আগেভাগে গিয়ে সিট দখল করা যাক। টিভিরুম তখনো ফাঁকাই ছিলো, অতএব বেশ আরাম করে একদম টিভির সামনের তিনটা চেয়ারে বসে যাই আমরা। খানিকপর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক কাফেলা প্রবেশ করতে থাকে রুমে। ম্যানচেস্টারের জার্সির চেয়ে বার্সেলোনার জার্সির সংখ্যা কম বলে মনে হয় আমার। তবে গলা বার্সেলোনারই বেশি শোনা যাচ্ছে। ম্যানচেস্টারের লোকেরাও পিছিয়ে নেই। 'গ্লোরি, গ্লোরি, ম্যানচেস্টার !!' সুরে তাল মিলিয়ে সমর্থকেরা খানিক পরপরই রুমে একটা আধ্যত্বিক আবেশ নিয়ে আসছে। মুন্ডিত মস্তকের কয়েকজন হাতে নাঞ্চাক্কু ও রামদা নিয়ে এককোণে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাই, পরণে রেফারির হলুদ জার্সি। শুনলাম, অফসাইড গোল বা হ্যান্ডবল নিয়ে ঝামেলা হলে এদের প্রয়োজন হয়।

হলের মায়া কাটাতে না পারা কয়েকজন বড় ভাইকেও দেখতে পাই, খেলা দেখার জন্যেই আজ রাতে হলে এসেছেন তারা। এদের মাঝেও তিনটা ভাগ। একদল ম্যানচেস্টার সমর্থক, একদল বার্সেলোনার। আরেকদল কোন দলের তা বোঝা যায় না, অফিস ফেরত ক্লান্ত চাকুরের মতোই বেশ গৃহী অবস্থায় তারা চেয়ার দখল করেছেন। আমার বামপাশে আরেকজন ম্যানচেস্টার সমর্থক বড় ভাই এসে বসেন। এইরে, ডানপাশে অদ্রোহ আর বামপাশে আরেকজন !! কুফা লক্ষণ, কুফা লক্ষণ...

তুমুল উত্তেজনার মাঝে খেলা শুরু হয়।

তীব্রগতি নিয়ে বার্সেলোনার হাফে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ম্যানচেস্টার। গোছালো কোন আক্রমণ না হলেও বার্সেলোনার ডিফেন্সকে তারা ভীষণ ব্যস্ত রেখেছে। বার্সা গোলরক্ষক ভালদেজ দুইবার বিপদে পড়ে গিয়েছিলো আরেকটু হলেই। জবাবে গুছিয়ে নিয়ে পালটা আক্রমণে যাবার চেষ্টা করছে বার্সেলোনা। এইরকম একটা পালটা আক্রমণ থেকেই ম্যানচেস্টারের পেনাল্টি বক্সে এভরার হাতে বলের ছোঁয়া লেগে গেলো।

'হ্যান্ডবল !! হ্যান্ডবল !! প্লান্টিক, প্লাণ্টিক !!' উত্তেজনায় চীৎকার করে ওঠে টিভিরুমের একাংশ। আমার পেছনে এক অত্যুৎসাহী বার্সেলোনা সমর্থককে দেখতে পাই, জুনিয়র এক ছোকরা- রেফারির মায়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে তাকে বড় ব্যাগ্র দেখায়।

'চোপ !! একদম চোপ !! প্লান্টিক কারে কয় বোঝস্‌ ?? এক থাপপড় মাইরা কানপট্টি গরম কইরা দিমু !! হুমুন্দির পোলারা ডাইভ মাইরা ফাইনালে উঠসোস- আবার কথা কস্‌...' মুশকোমত এক বড় ভাই নিব্বৃত্ত করেন তাকে।

গলা এগিয়ে এনে আবির ফিসফিস করে বলে, ' বোঝস্‌ নাই ?? উনি রিয়াল মাদ্রিদের সাপোর্টার !!'

মাঝমাঠেই খেলা হতে থাকে, বার্সেলোনা এতোক্ষণে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। মোটামুটি তাদের পায়েই বল থাকে, কিন্তু ভয় ধরানো আক্রমণ যাকে বলে- সেটা করতে পারে না তারা। অদ্রোহ পকেট থেকে তার গ্রাফ কাগজখানা বের করে আরেকবার খুঁটিয়ে দেখে, শুনতে পাই বিড়বিড় করে বলছে, 'এইখানে বল গেলে গিগস তাড়া করবো, বল পাইবো জাভি। জাভির কাছে পার্ক যাওনের আগেই, বল যাইবো ইনিয়েস্তার কাছে। ইনিয়েস্তা দিবো বিস্কুটেরে, বিস্কুট আবার জাভিরে... ' এইভাবে অদ্রোহ একটা চক্রক্রমিক রাশির মাঝে আটকা পড়ে যায়।

পেছনের বার্সা সমর্থক ছোকরা একাই হুইসেল বাজিয়ে মাঠ গরম করে রেখেছে। ক্ষণে ক্ষণে রুনি-ভিদিচকে গালাগাল আর মেসি-ভিয়ার ভুল ধরে সে খেলার গতি কমাতে দিচ্ছে না। খেলার গতি অবশ্য এমনিতেই কমছে না, বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এরই মাঝে মাঝমাঠ থেকে জাভি দৌড়ে চমৎকার এক পাসে বল দিয়ে দিলো ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা পেদ্রোকে। আগুয়ান ফন ডার সারকে বোকা বানিয়ে পেদ্রো বল ঠেলে দিলো জালে।

' গোওওওওওওওল !!! গোওওওওল !! '

উল্লসিত বার্সা সমর্থকেরা জায়গায় দাঁড়িয়ে নেচে নেয় দুই পাক, আমার পেছনের ছোকরা হুইসেল পকেটে ঢুকিয়ে ভুভুজেলা বের করে একটা। আমিও "গোল, গোল !!" বলে নেচে উঠতে গিয়ে থেমে যাই। দুইপাশের দুই লাল শয়তান শীতল চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি ঢোঁক গিলে নেই। মনে পড়ে গেছে, দুই বছর আগে উয়েফা ফাইনালে বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার দ্বৈরথের পরের দিন সকালে আউলা হলের পেছনটায় একটা বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গিয়েছিলো, লাশের পরনে ছিলো বার্সার জার্সি।

খেলা আবার মাঠে গড়ায়। গোল খাবার পর ম্যানচেস্টারই বেশি চেপে খেলছে, বার্সাকে ধীরগতির মনে হতে থাকে। আর এই আত্মতৃপ্তির ফল হাতেনাতে টের পায় তারা। ডান উইঙে ক্যারিকের সাথে ওয়ানটু করে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা রুনি বর্ষীয়ান গিগসের সাথে আরেকটা ওয়ানটু করে নেয়। ফাঁকা বার্সেলোনার ডিফেন্সের মাঝ দিয়ে রুনির অসাধারণ ফিনিশ !! গোল !!

বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করে জার্সি খুলে তা উদযাপন করেছিলো আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, তার বুকে লেখা ছিলো - 'দানি খাড়কে, আমরা তোমায় ভুলবো না।'

উয়েফা ফাইনালে রুনির গোল উদযাপন করতে পরণের ম্যানচেস্টারের জার্সি খুলে আমার ডানপাশ থেকে উঠে উদ্বাহু নৃত্য করতে লাগলো অদ্রোহ, দেখতে পেলাম- তার বুকে লেখা- 'কার্লা ব্রুনি, আমি তোমায় ভুলবো না।'

ম্যানচেস্টার সমর্থকেদের চীৎকারে কান পাতা দায়। বামপাশের বড়ভাই সজোরে আমার উরুতে চাপড় মেরে বললেন, 'বাঘের বাচ্চা !!'

আবির গলাটা একটু এগিয়ে এনে বললো, 'কইসিলাম না তোরে, হেব্বী মজা হইবো ?? অখন দ্যাখ, আইজকা চাইরটা গোল হইবো।'

বুকটা আরেকবার কেঁপে ওঠে আমার, আরো দুইটা গোল ?? ... কুফা লক্ষণ, নিশ্চিত কুফা লক্ষণ।

একটু পরেই টেলিভিশন রিপ্লের চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রায়ান গিগস সামান্য অফসাইডে ছিলেন গোলটার সময়। আমার পেছনের ভুভুজেলা বাজানো ছোকরা সরব হয়ে উঠে। 'কি গোল দিলো ঐটা, কানা নাকি হালারা !! পুর্‌রা অফসাইড...'

নাঞ্চাক্কু হাতের মুন্ডিত মস্তকের রেফারিরা কোণা থেকে এগিয়ে আসে। ফ্যাসিবাদী আক্রমনের মুখে ছোঁড়া চুপসে যায়।

খেলা এগোয়। বার্সা একের পর এক গোলের সুযোগ মিস করতে থাকে।

'গু খায় নাকি শালারা ?? ' - পেছন থেকে এক বার্সা সমর্থক হতাশ স্বরে বলে।

'স্যার যা করেন, ভালোর জন্যেই করেন।' আনাড়ি ভাবে সিগারেট টানতে টানতে উদার স্বরে হাস্যজ্বল অদ্রোহ বলে।

একটু পরেই হাফটাইম আসে।

অদ্রোহ সিগারেট খেতে খেতে হাতের গ্রাফপেপারটা খুলে লাল শয়তানদের একাংশকে স্যার ফার্গির তরফ থেকে স্ট্রাটেজিটা ব্যাখ্যা করতে থাকে। আমি হাত-পা ছোড়ার অবসর পেয়ে একটু মুখে পানি দিয়ে আসি। ভুভুজেলা বাদককে দেখলাম এক বোতল ডিউ সাবাড় করছে। আহা, কত পরিশ্রমই না করেছে ছোকরা। রেফারি আর কতক্ষণই বা হুইসেল বাজালো, পুরোটা সময় তো ও-ই বাজিয়েছে।

হাফটাইমের পর পুনরায় খেলা শুরু হলো। দর্শকের সংখ্যা বেড়েছে টিভি রুমে। সবাই একটা চমৎকার ফুটবল ম্যাচ দেখার প্রত্যাশায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ম্যানচেস্টারের আগ্রাসন দেখা যায়। এবং এবার অপেক্ষাকৃত দ্রুত বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কাটালানেরা। এরপর, হঠাৎ করেই, কিছু বোঝার আগেই মেসির সাথে বেমানান রকমের বামপায়ের গোলা, হতভম্ব ফন ডার সারের পাশ দিয়ে বল চলে গেলো জালে।

একটা মুহুর্ত সবাই চুপ। গোল !!!

এমনকি বার্সা সমর্থকেরাও হতচকিত। ম্যানচেস্টার সমর্থকেরাও হাতে তালি না দিয়ে পারে না। দুয়েকটা গালি ছুটে যায় ভিদিচের দিকে। বার্সা সমর্থকেরা তাকে বোকচো* বলে দাবি করতে থাকে, ফুটবল চেতনার সাথে একদমই যায় না এটা।

আগুণে ঘি দিতেই যেন, ভুভুজেলা বাদক দাবি করতে থাকে সে গতকাল থেকেই জানতো, যে মেসি আজকে গোল করবেই। এইজন্যেই সে কাল অমুককে বলেছিলো... ইত্যাদি। আমি হতাশ চোখে ছোকরার দিকে তাকাই। এমন নিপুণ ভবিষ্যদ্বক্তা হয়েও এই অল্প বয়েসেই অক্টোপাস পলের পথ অনুসরণ করে তাকে মারা যেতে হবে। এমন মুখরা একটি ছোকরার বেঁচে থাকার অধিকার আজকের এই ফুটবল বিশ্বে একদমই নেই।

অম্লান অদ্রোহকে ম্লান দেখায়। হতাশ স্বরে সে বলে, 'এই রকম গোল দিলে আর কি করার আছে...'

আবিরের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য করে একটু পরেই চার নাম্বার গোল। ডান উইং দিয়ে সেই মেসি। তেরচা ভাবে ঢুঁকে পড়ে বলটা বাড়িয়ে দিলো সে ভিয়ার দিকে, ম্যানচেস্টার ডিফেন্সে সামান্য ভুলের কারণে বক্সের ঠিক বাইরে বল পেলো ভিয়া। এবং দারুণ দর্শনীয় গোল !!

আউলা তো আউলা, পলাশীর সমস্ত বার্সা সমর্থকেদের গলার স্বর ঢেকে দিয়ে এইবার ছাত্রী হল থেকে চিৎকার শোনা যায়। স্লোগানের ছিরি কী- "আমার ভাই, তোমার ভাই - ভিয়া ভাই !! ভিয়া ভাই !! " এবং " করবো কাকে বিয়া, শুধুই ডেভিড ভিয়া !!"

আমি এবার দুই লাল শয়তানকে উপেক্ষা করেই তাদের সামনে উঠে নেচে নেই খানিক।

খেলার এরপরের অংশটা শুধুই একতরফা বার্সেলোনার। শেষের দিকে মরিয়া ম্যানচেস্টারের একের পর এক আক্রমণ সামলেও পালটা আক্রমণেও ভালো করছিলো কাটালানেরা।

ম্যানচেস্টার সমর্থকেদের সমন্বিত আবেদন শোনা যায় আরো একবার। আগুয়ান রুনির পা থেকে বল যখন একবার বার্সার পেনাল্টি বক্সে ভিয়ার হাত ছুঁয়ে যায়। এইবারও হতাশ করেন রেফারি- হ্যান্ডবলপ্রেমীদের। পেছনের এক ম্যানচেস্টার সমর্থক দাবি করে রেফারির শশুড় বাড়ি স্পেনে বলেই এতো ন্যাকারজনক সিদ্ধান্ত দিলো সে।

একসময় শেষের বাঁশি বাজে। অদ্রোহ মাথার চুল খামচে বসে থাকে। ভুভুজেলা বাদক ভুভুজেলা বাজায়। বার্সা সমর্থকেরা হাসিমুখে 'উয়েফা মোবারক!!' বলে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করতে থাকে। নিরপেক্ষ সমর্থকেরা খেলা দেখে মজা পেয়েছে। পরপেক্ষ সমর্থকেদের মাঝে রিয়াল সমর্থকেরা ব্যাজার- চেলসি সমর্থকেরা মহাখুশি।

আমি উদাস স্বরে অদ্রোহের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলি- 'ব্যাপার না দোস্ত, খেলায় তো হারজিত আছেই... কথা হইলো ম্যানচেস্টার ভালো খেলসে...'

অদ্রোহ আমার এই উদারতা সহজভাবে গ্রহণ করে না। আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে এক চেলসি সমর্থককে সে বলে, ' বা* খেলেন মিয়া আপনারা, একটা চ্যাম্পিয়নস লীগ অখনো জিত্তে পারেন নাই- হুদাই ফাল পারেন... '

উত্তেজিত অদ্রোহ টিভি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আবির একটা ফিচেল হাসি হেসে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে, 'দেখসোস, কীরাম মজা হইলো ?? ... অহন রুমে আরো মজা হইবো !! '

তাদের অনুসরণ করে ক্রমশ ফাঁকা হতে থাকা টিভি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে আমার হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়। মনে পড়ে যায়, সম্ভবতঃ বুয়েট জীবনের শেষ চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালটা এইমাত্র দেখে ফেললাম বন্ধুদের সাথে। আগামী ফাইনালে আমরা সবাই একত্রে থাকবো কি ??...

চমৎকার এই রাতটার জন্যে হৃদয় থেকে আহসানউল্লাহ হলের সকল বড়ভাই, বন্ধু ও ছোটদেরকে আমি মন থেকে একটা ধন্যবাদ দেই।

পুনশ্চঃ

গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে পাঁজরে আমি একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করি। একটা ভয়ের স্রোত আমার মেরুদণ্ড বেয়ে নিচে নেমে যায়। বার্সার জার্সি পরিহিত সেই বেওয়ারিশ লাশটার কথা মনে পড়ে যায় আমার। হয়তো আমিও সেই পরিণতিই বরণ করতে যাচ্ছি।

...খানিক পরেই আসল ঘটনাটা বুঝতে পারি। ঘুমের মাঝে মেকা সকারুজের রাইটব্যাক অদ্রোহ পাঁজর বরাবর এক লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিয়েছে আমায়। এইরুপ ন্যাক্কারজনক ফাউলের প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে সরোষে কিছু বলতে যাবো আমি, শুনি অদ্রোহ বিড়বিড় করে বলছে, ' স্যার যা করেন, মঙ্গলের জন্যেই করেন।'

একমুহুর্ত বিছানার ছারপোকার কথা চিন্তা করে অদ্রোহের কথা আমি এইবার নিঃশব্দে মেনে নেই।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি
প্রভুখণ্ড সুহান। মারাত্মক! কোট করতে গেলে পুরা লেখাই কোট করতে হবে!!!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- বস !!

guest_writer এর ছবি

ওইদিন জেগে থাকার অনেক চেষ্টার পর রাত ঠিক ১২ঃ৪৪ঃ৫৯ এ নিদ্রা মাসির ঠেলায় ম্যাচখান মিস করছিলাম......
আইজ আপনার জফ্রুল্লাহ ব্র্যান্ড ধারা বর্ণনা বেশ উপকার করল গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভালো খেলা হয়েছে, লাইভ না দেখে মিস করেছেন।

সাফি এর ছবি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আপনার ইমোটা এর্চেয়ে অনেক বেশি হাত্তালি পাবার দাবিদার বস !!

অনিকেত এর ছবি

আহা আহা---হাসতে হাসতে চোখে পানি--- কী যে চমৎকার বর্ণনা আর সেই সাথে আমার প্রিয় দলটার বিজয় গাঁথা আমার প্রিয় লেখকের কলমে পড়ার আনন্দ---ইংরাজীতে একেই বলে Explosive Mixture!!!!
যুগ যুগ জিও---

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

হেহে, বিজয়ের আনন্দের সাথে অমন দাঙ্গাবাজ-পাখনাবাজ ছেলেপুলের সাথে খেলা দ্যাখার আনন্দ; সত্যি সে এক বিস্ফোরক মিশ্রণ ...

ধন্যবাদ অনিকেতদা।

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

দারুণ লেখসস ব্যাটা। আমি রশিদ হলে দেখসি। কয়েকডায় ফেইল কর, তাইলে আগামী চাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালও দ্যাখতে পারবি। আর তুই রাইতের কালে অদ্রোহের লগে হুঁতসস কোন দুঃখে। জানসতো কার্লা ব্রুনিও কিন্তু মহাসংক্রামক নিউক্যাসেল ডিজিজে আক্রান্ত।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সংক্রামক রাণীক্ষেত রোগাক্রান্ত হলে কী হবে, অদ্রোহ কিন্তু টিভিরুমে যাকে বলে- পেশাদার সমর্থক। সে এক অন্য অদ্রোহ...

আয়নামতি1 এর ছবি

খেলাটা দেখেছিলাম বলে লেখাটা খুব বেশিই ভালো লাগলো। কিন্তু বার্সা ৩টা গোল করেছিলো না? ৪টা কখন হলো চিন্তিত নাকি

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

চারটা গোল বলতে ম্যাচের মোট গোল সংখ্যাকে বুঝিয়েছে সে। বার্সার তিনটা, মানু ক্লাবের একটা।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ইয়ে, আয়নামতি- উত্তরটা তো ধৈবতই দিয়ে দিয়েছে। ...

আর, চাইলে কি গোল আরো দু'চারটা দিতে পাত্তুম না ?? দেঁতো হাসি

আয়নামতি1 এর ছবি

আবার জিগায়! হাতে সময় থাকলে আরো দুটো না তিনটে দিতে পাত্তুম বৈকি শয়তানী হাসি

সংসপ্তক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি সেরাম হইসে!
আমি তো একগাদা ব্রিটিশ ফেরত খাটাশের পুত্রদের সামনে খালি কইসি, কিয়ের ম্যান ইউ, খ্যালে ওম্যান ইউ এর মত.......রিয়াকশান দেখা পলায়া জান বাচাইসি। ভায়োলেন্স দিয়া জোর করে মনের শান্তি আনলে আনুক। বার্সার মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তা যতদিন বেঁচে আছে অন্য কারো ফুটবল খেলার মানে নাই।

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কী বলেন, ম্যানইউর খেলা তো ভালোই লাগে আমার। আর্সেনাল আর ম্যানচেস্টারই পছন্দের দল ইপিএলে...

তবে বার্সা তো বার্সাই দেঁতো হাসি

সাস এর ছবি

বার্সার মস্তানির মাঝে একমাত্র বিনোদন ছিল ম্যাচের মাঝে প্রায়ই অম্লানের নগ্নগাত্রে লম্ফঝম্ফ আর বালসুলভ তুবড়ি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আবার্জিগস !!!

tanjim এর ছবি

সুহান...আপনার এই লিখাটা অসম্ভব ভাল হয়েছে।মনে পড়ে গেলো ২০০৬ সালের আর্জেন্টিনা-জার্মানির খেলার কথা।ফজলে রাব্বি হলের টিভি রুমে সেদিন সর্বসাকুল্যে ৩ আদমি শ'দুয়েক আর্জেন্টাইন সাপোর্টারের সামনে জান বাজি রেখে সে কি নাচটাই না নেচেছিলাম।
দেঁতো হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ইয়ে, প্রায় সমান সংখ্যাক দর্শক নিয়েই যা দেক্লাম সেদিন, তাতে উগ্র আর্জেন্টাইন্দের সামনে ২০০ ইশটূ ৩ রেশিওতে বাঁচাটা একটু কঠিনই মনে হচ্ছে। তায় আবার বিশ্বকাপ...

নাহ, এলেম আছে জর্মনদের দেঁতো হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দেঁতো হাসি

যাদুকর () এর ছবি

সুহান ভাই,আপনাআপনি একটা কথা মুখ দি‌য়ে বের হয়ে গেল: জাহাপনা তুসি গ্রেট হো,তোফা কবুল করো (প্রপার ইমোটা পেলাম না) ঢাকাই্যা যাদুকর

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ধন্যবাদ যাদুকর।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দেঁতো হাসি

হাসিন এর ছবি

দারুণ লিখেছেন

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

হাসি

দ্রোহী এর ছবি

খেলা শুরুর প্রায় ঘন্টা দশেক আগেই আমি ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম
"Barcelona 3 - Man Utd 1"

পরদিন একজন জানতে চাইলেন, ক্যামনে কী? আমি তাকে বোঝালাম, যে খেলা হয়েছিল ওয়েম্বলিতে। লন্ডনের টাইমজোন হচ্ছে GMT আর আমার টাইমজোন হচ্ছে GMT+10

সুতারাং, খেলার ফলাফল আমি দশ ঘন্টা আগেই জানতে পেরেছিলাম। দেঁতো হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বড়পীরকে স্যালুট হো হো হো

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

মোরা একটি মেসির গোলের জন্যে অস্ত্র ধরি... '।

আমি কিঞ্চিত এই দলে বৈ কী! দেঁতো হাসি

দুইপাশের দুই লাল শয়তান শীতল চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি ঢোঁক গিলে নেই।

হো হো হো

দুই বছর আগে উয়েফা ফাইনালে বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার দ্বৈরথের পরের দিন সকালে আউলা হলের পেছনটায় একটা বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গিয়েছিলো, লাশের পরনে ছিলো বার্সার জার্সি।

চিন্তিত

করবো কাকে বিয়া, শুধুই ডেভিড ভিয়া !!

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

চরম ভাই চরম!!! চলুক

স্বপ্নডানা এর ছবি

অম্লান ভাইয়ের লম্ফ কাহিনির আরও বিস্তারিত বর্ণনা চাই আপনার কাছ থেকে। কারণ সেদিন বেশি পিছনে বসেছিলাম।

গালিব এর ছবি

অসাধারন হইছে।

চতুর্বর্গ_(কী কয় আরেকজনের নাম??) এর ছবি

আপনি আরো কয়েকদিন আইসা হলে থাইকেন, এই লেখাডি ভাল্লাগে।

মৌনকুহর. এর ছবি

হাসতে হাসতে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কবি মৃত্যুময়, স্বপ্নডানা, গালিব, চতুর্বর্গ, মৌনকুহর- পড়বার ও মন্তব্য করবার জন্যে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

সজল এর ছবি

অনেক ভালো লিখেছেন। ব্রাভো!

একটা জিনিসই বুঝি না, ক্লাব ফুটবল নিয়ে মানুষ এত পাগলামি করে কেন!!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কস্কি মমিন!

কি, কি কইলেন ?? আমরা পাগলামি করি ?? ঐ নাঞ্চাক্কু আন... রেগে টং

অদ্রোহ এর ছবি

ঠিকাছে।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ঐ ব্যাটা, আনাড়ি হাতে সিগ্রেট টানা স্বীকার কল্লি তাইলে ?? দেঁতো হাসি

পুতপবিত্র এর ছবি

লাশ পড়ার বিষয়টা কি আসলেই সিরিয়াস? কখনো শুনি নাই তো ।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

না সিরিয়াস না, নিছক ঠাট্টা।

পুতপবিত্র এর ছবি

যাক । স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম চোখ টিপি

Nabil Ahsan Noor এর ছবি

সুহান, নাবিল বলছি, তোর ক্লাশমেইট। লিখা টা ভাল হয়েছে। বার্সা ফাইনাল টা জিতেছে, তাতে আমি মোটেও অখুশি হই নাই। তবে আমার একটা ঘটনা মনে পরে গেল। deja - vu বলতে পারিস ইন এ সেন্স। ঠিক তিন বছর আগে আমি এই আউলা হল এই ছিলাম, আমার ম্যান-ইউনাইটেড vs চেলসি ফাইনাল দেখার জন্য। ফাইনাল এ যখন রোনাল্ডো পেনাল্টি টা মিস করলো, মুস্তাকিম মাথা নিচু করে ফেল্লো, আমি হা করে চেয়ে থাকলাম। মনে মনে ধরেই নিলাম, নাহ, এইবার আর হলো না, চেলসি নিয়ে গেল কাপ টা। যখন টেরি জাল এ বল ঢুকাতে পারল না, আমি প্রথমে চুপ করে আগে দেখলাম, যা দেখছি, তা কি সপ্ন? এই রকম ও কি আবার হয় নাকি? যখন শিউর হলাম, আমি এত উচুতে একটা লাফ দিসি, আমার মনে আসে, এই রকম লাফ টাফ দেই নাই কখনো। মুস্তাকিম তখনো মাথা নিচু করে ছিল। একটু পর ও নিজেও এমন তিড়িং বিড়িং করা শুরু করল...হাহা, আর মুস্তাকিম কে তো তোর চেনা আছেই। এমন ভাবে নাচানাচি করলাম, মনে হচ্ছিলো, এখনি কাপ জিতে গেসি। আসলে মুহুর্ত গুলো সত্যি অম্লান। বার্সা জিতাতে আমি ধরেই নিচ্ছি, সেই আনন্দের এক চিলতেও কম পাশনাই, আরো বেশি ও হয়ত পেয়েছিস। এইসব মুহুর্ত কবে ফিরে আসবে, তা হয়ত জানা নেই, তবে মনের ফ্রেমে বাধাই করে রেখে দিয়েছি আমি সেই দিনটি। মজার ব্যাপার, আমার সাথে কিন্তু সেদিন ও ছিল - ডানে অদ্রোহ, বামে আবির। red-devilz দের বিজয়ের সাথে সাথে আবির আমাকে আলিঙ্গন করে নিয়েছিল, আর পাগলা মুকিম এর কথা বাদ ই দিলাম। ও যে কোথায় হারায়ে গিয়েছিলো, বলা মুশকিল।
আপাতত, বার্সার বিজয় উল্লাসের মাঝে আমি আমার ক্লাব নিয়ে এত গুলো কথার জন্য আগেই খমা চেয়ে নিলুম। আর ভালো কথা, তোকে সামনা সামনি কনগ্রাচুলেট করা হয় নাই। কনগ্রাটস ফর কঙ্কয়েরিং দি ইউরোপ আগেইন as দি বেটার টিম।
blau-grana al vent... Blue and claret flowing in the wind un crit valent.....
এবং, Glory Glory Manunited, as the Reds go marching on-on-on....

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দীর্ঘ মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ নাবিল।

কার দল জিতলো, কার দল হারলো- কার দল সেরা, সেটা নির্দেশ করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। হলরুমে সকলে একত্রে খেলা দেখার মজাটা ফোটানোই এই লেখার উদ্দেশ্য ছিলো। মনের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার জন্যে আর কি !! দোষ অবশ্য আমারই, দূর্বল কলমে ( নাকি কি-বোর্ড !!) রম্য লেখার অপচেষ্টা করা ঠিক হয় নি।

সামনাসামনি 'কংগ্রাচুলেট' করার দরকার নাই বন্ধু, বার্সেলোনা জিতেছে নিজেদের কৃতিত্বে- আমার মতো সমর্থকেদের কৃতিত্ব নাই এতে। হাসি

মন্তব্যের জন্যে আবারো ধন্যবাদ।

তারিক রিদওয়ান এর ছবি

ভাই আপনি সত্যিই দারুণ লিখেন!!! অসাধারণ! হাসি

আশফাক আহমেদ এর ছবি

এই লেখাটা কেম্নে মিস করলাম? অসাধারণ বললেও কম বলা হবে।

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।