ক।
‘তোর বাবা বলতেছিলো তোকে লন্ডন পাঠায়ে দিবে নাকি আগামী মাসে,’ তূর্যকে বলেছিলেন মা। ‘ এই নিয়ে ফয়েজ চাচার সাথে কথাও হইছে নাকি দুই-একবার।’
এই কথা শুনেই আশঙ্কায় হঠাৎ ভারী হয়ে গিয়েছিলো তূর্যের বুকের ভেতরটা, তবু চেষ্টা করেই গলার স্বরটা কাঠকাঠ করে তুলেছিলো সে। মা’কে বলেছিলো, ‘দ্যাখো আম্মা, ওই লন্ডন-ফন্ডন যাওয়া আমারে দিয়া হবে না। জুয়েলদের সাথে আমার কথা হইছে এর মাঝে, আগরতলায় যাবার রাস্তা খুঁজতেছে ওরা। আমিও ওদের সাথে যাবো ঠিক করছি, যুদ্ধে যাবো। তুমি আব্বারে বইলো।’
মা অবশ্য প্রথমে রাজি হননি বাবাকে এই কথা বলতে। তবে দুইদিন ধরে বাসায় পানি পর্যন্ত মুখে না দেয়ার ফলে মা’র কাছে আর উপায় থাকেনি কোনো। নিচু স্বরে চলা বদ্ধঘরের সেই আলোচনায় কান পেতে তূর্য কেবল শুনেছিলো মা হঠাৎ রেগে গিয়ে বাবাকে বলছেন- ‘আমার ছেলে যুদ্ধে চলে যাইতে চায়- আমার কলেজে পড়া ছেলে- তুমি তারে নিষেধ পর্যন্ত করবা না ??’
বহুদূর থেকে তূর্য আব্বার গলা শুনতে পায় যেন, ‘ আমি ওদের কোনমুখে মানা করি, বলো ! আর তোমার ছেলেকে তো চেনো... সে যুদ্ধে না গেলে আর কার ছেলে যাবে বলতে পারো ?? ওর বয়েসী সবাই যুদ্ধে না গিয়ে লন্ডন চলে গেলে দেশটা কী করে স্বাধীন হবে ??’...
সে-ই প্রথম তূর্যের মনে হয়েছিলো, তার বাবাকে সে চেনে না- বোঝে না ঠিকই; বাবা তাকে ঠিক বোঝেন, চেনেন।
এরপর বন্ধুদের সাথে নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে আর কোন পিছুটান ছিলো না তূর্যের। গন্তব্য সেই আগরতলা। পথে স্বামীবাগ আউটফলের সেই অমানুষিক দৃশ্য। পঁচে ফুলে ওঠা অগণিত মানুষের লাশ। কাপড় আছে কারো শরীরে, কারো নেই- ওদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই। গন্ধের চেয়ে বিবমিষায় বেশি- মুখ চেপে ধরে বমি করে দিয়েছিলো সে।...
এরপরে আরো অনেকগুলো স্বামীবাগ পেরিয়ে আসে ওরা, পাঁয়ে হেঁটে, পথ কিংবা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। শেষমেষ সেই আগরতলা ক্যাম্প। সেই বিশাল শরণার্থী শিবির। আর ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কিছুদিন পরেই দেখা ফটো সাংবাদিক তপন চ্যাটার্জীর সাথে। তার মুখেই সে শুনতে পেলো সব। তাকে- তার মতো আরো অনেককেই- দরকার ওদের।
‘কিন্তু যুদ্ধ করতে এসে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে এভাবে চলে যাবো ??’ বিমূঢ় গলায় -তপন নয়- নিজেকেই যেন প্রশ্ন করেছিলো তূর্য।
‘যোদ্ধারা তো যুদ্ধ কেবল একভাবেই লড়ে না কমরেড,’ তপন বলেছিলো ভারী গলায়। ‘যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করাটা এখন অস্ত্র ধরার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কম গুরুত্বপূর্ণ নয় এই যোদ্ধাদের কাছে খাবার আর অস্ত্র পৌছানোর জন্য টাকা সংগ্রহ করাটাও।’
কথাটা মনে ধরেছিলো তূর্যের। তারপরে সেই তপনেরই মাধ্যমে এক মালবাহী বিমানে সোজা কলকাতা, দলের অন্য সদস্যদের অধিকাংশই তখন সেখানেই ছিলো। তার দলে ঢোকা নিয়ে কোন সমস্যাই হলো না। তবে বাবা-মা’র কথা ভেবে নিজের আসল নামটা আর দিলো না সে। লিস্টিতে দলের সবার নাম তুলবার সময় কোচ ননী বসাককে তুর্য বলেছিলো, ‘... উহুঁ, ননীদা- এইটা না। এইটা কাটেন- ঐ নামটা দিমু না। আমার নামটা তূর্য হাজরা লেখেন। ...তূর্য নামে আমারে আম্মা ডাকে।’
আর এখন, শিয়ালদা থেকে ছেড়ে আসা এই কু-ঝিকঝিকে দুলতে দুলতে কাজী সালাউদ্দিন ভাবে- শেষপর্যন্ত পেপারে তূর্য হাজরার নামটা আসেও যদি; আম্মা কি জানবেন যে এই তূর্য হাজরা আর তার তূর্য একই ব্যক্তি ??
তূর্য হাজরা নামের শেষার্ধ্বটা যার কাছ থেকে ধার করা, সেই প্রতাপ শংকর হাজরা বসে আছে কাজী সালাউদ্দিনের ঠিক উলটো দিকে। তার গাঁ ঘেষে জানালার পাশেই বসা নুরুন্নবী, প্রচন্ডে গরমে ঘেমে একাকার হয়ে আছে সে। সালাউদ্দিন যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে মাঠে এলেও নুরুন্নবী তা আসেনি, সে কেবল একদিনের ছুটি নিয়ে এসেছে।
নুরুন্নবীর কাছে মনে হয় সমস্ত কিছুই যেন অতি দ্রুত ঘটে গেছে। গত পরশু বিকেলেই তো অফিসার্স মেসে মেজর আসোয়ান থাপার ঘরে হঠাৎ তলব। ‘নুরুন্নবী, তোমাকে তোমার দেশের দরকার। পরশু মাঠে নামতে হবে তোমায়, গেট রেডি। কালকেই তোমাকে নিয়ে যাওয়া হবে।’
পরের বিশটা ঘন্টা কেবল গেলো যাত্রায়। বনগাঁ থেকে বিগ্রেডিয়ার যোশীর জিপে চেপে বাগডোগরার বিমানঘাঁটি, বিমানে করে ব্যারাকপুর। ব্যারাকপুর থেকে গাড়িতে ফোর্ট উইলিয়াম, সেই অন্ধকার ঘর- সেই পরিচিত শিখ অফিসার। সবশেষে আট নং থিয়েটার রোড, প্রবাসী সরকারের কার্যালয়ে মেজর চৌধুরীর হাস্যজ্জ্বল মুখ। ক্লিয়ারেন্স নিতে হলো সবক’টা জায়গা হতেই। সেই সাথে নিশ্চিত করতে হয়েছে- আগামী কালই ফোর্ট উইলিয়ামে ফিরে রিপোর্ট করবে সে।
ভাবতে ভাবতে নুরুন্নবী আড়মোড়া ভাঙ্গে। এতটা কষ্ট করে আসা কি কাজে লাগবে আজ বিকেলে ?? কতদিন প্র্যাকটিস করে না সে, যদি খেলা প্রচণ্ড খারাপ হয় তার ?? যদি তার ভুলেই গোল খেয়ে বসে দল আজ ??... এইসব দুশ্চিন্তা জোর করে ঠেকিয়ে রাখতে চায় নুরুন্নবী। আসোয়ান থাপার কন্ঠ অনুকরণ করে নিজের মনেই সে নিজেকে বলে, ‘ ওয়েক আপ সোলজার, ওয়েক আপ। জেনে রাখো, এটা শুধুই আরেকটা ফুটবল ম্যাচ না...’
কু-ঝিকঝিক, কু-ঝিকঝিক। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে নিয়ে ট্রেন চলেছে কৃষ্ণনগর, নদীয়া।
খ।
আমহার্স্ট স্ট্রিটে প্রতাপ হাজরার বড়দার বাসাতেই গত মাসে এক ঘরোয়া আড্ডায় আলী ইমাম ভাই কথাটা বলেছিলেন তাকে, ‘ বুঝলা পিন্টু- যুদ্ধে বিদেশী জনসমর্থন আদায়ের বিষয়টা আসলে ছোট কইরা দেখার মতো কিছু না। তোমাদের সবাইরে কলকাতায় দেইখা আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে, বুঝ্লা। ... এইখানে তো খালি তোমাগো মোহামেডানেরই অন্ততঃ ৬-৭টা পোলা আছে। ঢাকা লীগের আরো পোলাপান খুঁজলে পাওন যাইবো। তোমাগো সবটিরে নিয়া একটা ফুটবল টিম করার কথা ভাবতেছি আমি- বুঝ্ছো। আইএফএ’র কয়েক জায়গায় আলাপও কইরা আসছি, আপত্তির কিছু দেখি নাই অগো মাঝেও। তুমি কি কও?’
আইএফএ মানে ভারতীয় ফুটবল এসোসিয়েশন- জানতো পিন্টু। আপত্তি করার কোন কারণ খুঁজে পায়নি সে, বরং সায় দিয়েছিলো ইমাম ভাইয়ের কথায়। একত্রেই গিয়েছিলো আট নং থিয়েটার রোডে প্রবাসী সরকারের কার্যালয়ে। এবং গিয়ে বেশ অবাকই হয়ে গিয়েছিলো।
প্রবাসী সরকারের কর্মকর্তা শামসুল হক সাহেব বলতে গেলে লাফিয়ে উঠিছিলেন উত্তেজনায়। ‘ভাই, আপনারা একদম ঠিক সময়ে এসেছেন। আমরা অলরেডি চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিলাম, বুঝলেন ! স্বাধীন বাংলা বেতারে যেমন আমাদের কন্ঠযোদ্ধারা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন- ঠিক সেইভাবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পগুলোতে ট্রেনিং নিতে আসা ফুটবলারদের নিয়ে একটা ফুটবল টিম বানাবার চিন্তা আমাদের মাথায় এসেছে সম্প্রতি। আমরা কেবল আসল মানুষগুলোর সন্ধানে ছিলাম। ... আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। কাজ শুরু করে দেন, আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব- সবই হবে !’
এরপরে দেখতে দেখতে হয়ে গেলো সব, পিন্টুর মনে পড়ে। খুব তাড়াতাড়িই অফিসিয়াল চিঠি চলে এলো- ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলামের সই করা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করা হবে অচিরেই। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ খেলে বেড়াবে এই দল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনসমর্থন যোগাড় করবে। অর্থ যদি আসে কিছু, তবে তা জমা হবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ফান্ডে, অস্ত্র কেনা হবে তা দিয়ে।
সীমান্তের কাছের এক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের ফিটনেস ইন্সট্রাক্টরে চাকরিটা ছেড়ে বেরিয়ে এলো পিন্টু। ততদিনে শামসুল হক সাহেবেরই প্রতিষ্ঠা করা বাংলাদেশে ক্রীড়া সমিতি থেকে এগিয়ে এসেছেন আলী ইমাম, লুতফর রহমান আর সাইদুর রহমান প্যাটেল। ভারতের আকাশবানীতে প্রচারিত হলো একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অবস্থানরত ফুটবলারেরা যেন রিপোর্ট করেন মুজিবনগরে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল তৈরী হবে।
এরপরে হলো ট্রায়াল। ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় থেকে বেছে নেয়া হলো প্রায় ৩০ জন, সালাউদ্দিনের মতো অল্প কয়েকজন এসে যোগ দিলো পরে।
পার্ক সার্কাস এভিনিউর কোকাকোলা বিল্ডিংটাই আবাস এখন পিন্টুদের। প্রতিদিন সকালে কোচ ননীদার হাঁক ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ওদের। শৃঙ্খলা বিষয়ে ভয়ানক কড়া লোক ননী বসাক। পান থেকে চুন খসলেই বাড়তি তিন চক্কর, ধুর !! তবে তাই বলে আদরেরও কমতি নেই তার তরফ থেকে।
‘বয়েজ,’ মাটিতে আঁকা পজিশন বুঝিয়ে মার্কিং স্টিক দুলিয়ে দুলিয়ে বলেন ননীদা। ‘দুনিয়াতে বহু লোকে ফুটবল খেলে। তার মাঝে হাজার হাজার লোকে তোমাদের চেয়ে ভালো খেলতেই পারে। কিন্তু একটা কথাই মনে রাখবা বয়েজ, পুরা দুনিয়ায় তোমরা ছাড়া আর এমন কোন ফুটবল দল নাই- যারা নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্যে খেলতেসে। ... সো মাইন্ড জাস্ট ওয়ান ড্যাম থিং। ইউ আর নট হিয়ার টু প্লে দা গেম অনলি, ইউ আর হিয়ার টু ফাইট ফর ইউর কান্ট্রি !!’
ননীদার কথায় বুকের ভেতর কেমন যেন লাগে এই ফুটবলারদের। সন্ধ্যায় গলা ছেড়ে সেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে গলা মেলানোর সময় সবাই যেন একটু বেশি আবেগ দিয়েই গায়, ‘ তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি ...’
‘পিন্টু ভাই, ’ জানালায় গুণগুনরত পিন্টুর পেছনে গলা শোনা যায় ইস্ট এন্ড ক্লাবের স্টপার আশরাফ আলীর। ‘প্রতাপদারে খায়া নিতে কন। তার নাকি আবার মাথা ধরসে, শুইয়া রইছে।... কয় খাইবো না।’
এই একটা কথাতেই পিন্টু এক মুহুর্তে ভাবরাজ্য ছেড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয় ১৯৭১ এর জুলাই মাসে। আশরাফ খেয়েছে কি না, সে প্রশ্নটা করে প্রতাপের ঘরের দিকে যায় পা বাড়ায় পিন্টু। মনে মনে দুঃখ হয় তার প্রতাপের জন্যে। বিব্রতও হয়। আবারো কী বলে প্রতাপকে সুস্থির করবে- মাথায় আসছে না তার।
প্রতাপের মানসিক অবস্থা ভালো না গত কয়েকমাস ধরে। ২৫শে মার্চের রাতে তার সামনেই ওদের পাড়ায় আগুণ লাগিয়ে দিয়েছিলো মিলিটারি। প্রাণ নিয়ে কোনমতে পালিয়ে এলেও প্রতাপের দূঃস্বপ্নে এখনো হানা দিচ্ছে সেই কালো রাত।
পিন্টু পাশের ঘরে যায়, প্রতাপ খাটে শুয়ে রয়েছে উপুড় হয়ে। ‘প্রতাপ, আর দেরী নাই বেশি ম্যাচের। সাড়ে তিনটায় বাইর হইতে হইবো। খাবি না তুই ??’ প্রতাপের পাশে বসতে বসতে বলে পিন্টু।
প্রতাপ মাথা তুলে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে শোয়। কেমন একটা ঘোরলাগা গলায় ফিসফিস করে সে বলে, ‘ পিন্টু রে, আমার আবার মাথাব্যাথা হইতেছে। চোখ বুজলেই সেই আগুণে পোড়ার গন্ধ, সেই মেশিনগানের ক্যাটক্যাট আওয়াজ ফিইর্যার আসে আসে রে...সব ক্যামন যেন লাল লাল দেহায় ...’
ঢাকার খেলাপাগল মানুষদের কাছে অতিপরিচিত সেই প্রতাপের মুখটা সেই মুহুর্তেই পিন্টুর কাছে যেন অসহায় এক কিশোরীর মুখ হয়ে যায়। ওয়ারী ক্লাবের হকি মাঠের বাঁধা লেফট ইন প্রতাপ, বকশীবাজার ক্রিকেট ক্লাবের টু-ডাউন ব্যাটসম্যান প্রতাপ, ফুটবল মাঠের মোহামেডানের বাম উইঙে দুরন্ত গতির সেই প্রতাপ- নিজের সমস্ত প্রতাপ হারিয়ে ছোট্ট একটা শিশুর মতো পিন্টুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে সশব্দে।
পিন্টু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সেটা ফেলা ছাড়া তার অবশ্য আর কিছু করার থাকেও না।...
গ।
নদীয়া সীমান্ত দিয়ে নাকি ইতিমধ্যে হাজার পাঁচেক লোক ঢুঁকেছে সকাল থেকে। আরো আসছে নাকি। জায়গা হবে তো শেষ পর্যন্ত স্টেডিয়ামে ?? নদীয়ার ডিসি দীপককান্তি ঘোষ চিন্তায় পড়ে যান। বড়জোর হাজার বিশেক মানুষের জায়গা হতে পারে এই স্টেডিয়ামে, এর বেশি হলেই তো ঝামেলা বাওয়া।
‘ওহে নগেন,’ ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে মুখের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি চুলকে নিয়ে বলেন ডিকে ঘোষ। ‘শহরের ভেতরে পোস্টার টানিয়েছো ঠিক মতো ?? এদিকে আমাদের এলাকা থেকেও লোক আসবে তো ঠিকঠাক ??’
টেঁরি কাটা চুলে হাত চালিয়ে নিয়ে নগেন বলে, ‘ কী বলচেন স্যার ! পোস্টার বলে পোস্টার !! শহর ছেয়ে দিয়েছি না এদ্দম পোস্টারে ??... স্বাধীন বাংলা দলের নামকরা স্টার প্লেয়ারদের একেবারে ঠিঁকুজি পযন্ত তুলে দিয়েচি পোস্টারে। বিজ্ঞাপণে স্যার কোনরকম ঘাটতি পাবেন না। এদিকে মাইকিং করেও জানান দেয়া হয়েচে শহরের ভেতরে।’
‘হুম। বেশ, বেশ।... কিন্তু ওপার থেকে এতো লোক আসচে কী করো বলো তো বাপু।’ ডিকে ঘোষ চিন্তিত গলায় বলেন। ‘ সকাল থেকে আসচেই দেকচি। ওই দ্যাখো, পুব গ্যালারী তো জয়বাংলার পতাকায় ছেয়ে গিয়েচে একেবারে !!’
‘ওটা স্যার,’ নগেন বলে। ‘ মালুম হচ্চে... ঐ স্বাধীন বাংলা বেতারের কাজ। বেতারে নাকি এই ম্যাচের কতা ফলাও করে বলা হয়েছে স্যার, মানে আমাদের রতন শুনেচে বলছিলো।’
‘যাই বলো, এই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রটা কিন্তু বেশ দারুণ বুঝলে !!’ ডিকে ঘোষ দাঁড়ি চুলকানো ভুলে গিয়ে বলেন। ‘ আমি কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে শুনি ওদের গানগুলো। খাসা গায় বুঝলে...’
চুনী গোস্বামীকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়, মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। ‘দীপকদা, ইদিকে এসো তো একটু। ঝামেলা হয়েচে একটা।’
হাত ধরে চুনী গোস্বামী ডিকে ঘোষকে টেনে নিয়ে যান খেলোয়াড়দের কাছাকাছি। স্বাধীন বাংলা আর নদীয়া দলের ফুটবলারদের ভীড়ে ভরে আছে জায়গাটা। রেফারিদেরও দেখা যাচ্ছে পাশেই, স্থানীয় খেলাগুলো চালানো হয় যাদের দিয়ে –ওরাই এসেছেন। প্রচণ্ড কোলাহল চারপাশে। প্রায় হাজার পনেরো লোক এসে বসে গেছে স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে। বাঁশি, তালি, হই হট্টগোলে ভরে আছে পুরো এলাকাটা।
‘কি, কি সমস্যা হলো আবার ?... সব তো রেডিই মনে হচ্চে। চারটে বেজে গেছে তো। খেলা শুরু করে দিচ্ছো না কেন ??’ ডিকে ঘোষ বলেন।
‘আরে ওটাই তো সমস্যা দাদা।’ চুনী গোস্বামী কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলেন। ‘ স্বাধীন বাংলার খেলোয়াড়েরা বলচে মাঠে নামার আগে তাদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দিতে হবে। আর সাথে ওদের ওই স্বাধীন বাংলার ফ্ল্যাগও উড়াতে দিতে হবে বলচে। নইলে তারা নাকি মাঠে নামবে না।’
ডিকে ঘোষের কপাল কুঁচকে গেলো। ‘ সে কী কথা, খেলবে না মানে !! ... আরে ফ্ল্যাগ ওড়ানোটা যা তা ব্যাপার মনে করেছে নাকি এরা। আরে ডিপ্লোমেটিক একটা ব্যাপার আছে না !!’
স্বাধীন বাংলা দলের কোচ ননী বসাকের সাথে আগেই পরিচয় হয়েছে ডিকে ঘোষের। ননী বসাক এগিয়ে এলেন পিন্টুকে সাথে নিয়ে। ‘ ঘোষ বাবু, এই উপকারটা করুন। ফ্ল্যাগটা নিয়ে আমাদের ছেলেদের মাঠে নামতে দিন। দেখছেন তো- এম্নিতেই কত দর্শক মাঠে পতাকা নিয়ে এসেছে।’
ডিকে ঘোষ অস্বস্তিতে আবার দাঁড়ি চুলকালেন। না মানে, দর্শকেরা সাথে পতাকা এনেচে- সে তো অন্য ব্যাপার। কিন্তু, আনুষ্ঠানিক পতাকা তোলা মানে তো ... মানে বোঝেনই তো দাদা। একটা বিষয় আছে না- যুদ্ধকালীন অবস্থায় একটা নিউট্রাল প্রভিন্স থেকে আমি কী করে ... মানে ...’
‘দেখুন ঘোষ বাবু, আমাদের ফুটবল টিমের খেলতে আসার আসল উদ্দেশ্য কিন্তু আপনিও জানেন। আমাদের যুদ্ধের সমর্থনে জনমত গঠন। এখন পতাকা ছাড়া খেলতে কি নামা যায়, বলুন ?? আর যুদ্ধের মাঝে প্লেয়ারদের পতাকা নিয়ে নামাটা বিশাল একটা সাইকোলজিক্যাল বুস্ট হবে কিন্তু তরুণ দর্শকদের জন্যে। উই নিড মোর ফাইটারস্ ফ্রম দেম।’ ননী বসাক জোরালো গলায় বলেন।
‘আহা, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কি আমার টান কম দাদা- এসব বলচেন কেন।’ ডিকে ঘোষ বলেন। ‘কিন্তু পতাকা ওড়ানোর মানেটা তো বোঝেন। এখনো তো আমাদের সরকার কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি আপনাদের। এই সময় পতাকা ওঠানোটা মানে..’
‘স্যার, ’ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক পিন্টু এগিয়ে এসেছে ততক্ষণে। ‘ বেশি সময় নেবো না আমরা কিন্তু। ... একবার তাকিয়ে দেখুন স্যার, এই মানুষগুলো শুধু খেলা দেখতে তো আসেনি। এদের অনেকেই এসেছে তাদের স্বাধীন দেশের নামটা মাইকে শোনা যাবে, এই আশায়। এই পতাকাটা নিয়ে মাঠে নামলে- এই মানুষগুলো স্যার- ভরসা পাবে। বুঝতে পারবে, আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। প্লিজ স্যার, আর মানা করবেন না স্যার। আমরা এই পতাকাটা ওড়ানো ছাড়া মাঠে নামবো না।’
‘চেপে যান স্যার, ’ টেঁরি কাটা নগেন কখন যেন চলে এসেছে এই কথোপকথন শুনতে। ‘পতাকা ওড়ানোটা বড্ড বেশি ঝুঁকির কাজ হয়ে যাবে। আইএফএ ক্ষেপে যেতে পারে স্যার !!’
ডিকে ঘোষ চুনী গোস্বামীকে নিয়ে দুই পা সরে আছেন পেছনে। ‘ কি বলো হে চুনী, খুব কি একটা ঝামেলা হবে নাকি পতাকা ওড়াতে দিলে ?? কি মনে হয় তোমার ??... সময়ও তো আর বেশি নেই। পাবলিক রেগে যেতে পারে এবার টিমগুলো মাঠে না নামলে...’
‘আমার মনে হয় দিতে পারেন দাদা। ঝুঁকি একটা আছে তা ঠিক, তবে প্রচারের কথাটাও ভাববার মতোই কিন্তু। মুক্তিযুদ্ধে নদীয়া সরকারের সাহায্যের বিষয়টা গণমাধ্যমে আসলে ক্ষতিটা কীসে...’
পিন্টুর হাতের লাল সবুজের মাঝে সোনালী রঙের মানচিত্রটার দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন দীপককান্তি ঘোষ। ‘ বেশ, মাইকে প্রচার করতে বলো। প্রথমে দুই দলের জাতীয় সঙ্গীত হবে। এরপরে পতাকা নিয়ে স্বাধীন বাংলার প্লেয়ারেরা মাঠে একটা চক্কর দেবে...। নগেনটা কোথায় গেলো, ওকে বলো ব্যবস্থা করতে।...’
ডিকে ঘোষ জানতেন না, বিনা অনুমতিতে দেশের অভ্যন্তরে অন্য একটি দেশের পতাকা ওড়াতে দেয়ায় আগামীকালই তিনি তার পদ হতে সাসপেন্ড হবেন। এবং ইন্ডিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন থেকে বাতিল করা হবে নদীয়ার সদস্যপদ। সে অন্য আরেক গল্প।
সবই হলো এরপরে। প্রথমে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে নদীয়া একাদশের খেলোয়াড়েরা গাইলো ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। এরপরে মাইকে বাজলো রবি ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা...’ আর সবশেষে স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করতে নামলো পিন্টুদের দল। আর সেই মুহুর্তেই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চীৎকার শোনা গেলো। ‘জয় বাংলা!!’
সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। পাগলের মতো ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’ স্লোগানে চতুর্দিক কাঁপিয়ে তুলেছে খেলা দেখতে আসা দর্শকেরা। কুষ্টিয়া থেকে প্রচুর মানুষ এসেছে সীমান্ত পেরিয়ে, তাদের উল্লাসটাই বেশি দেখবার মতো। নদীয়ার লোকেরাও এই অভূতপূর্ব দৃশ্যটি দেখে আবেগ চেপে রাখতে পারছে না, অনেকের চোখেই জল।
‘তুমি দেখো চুনী, ’ ফিসফিস করে গলা নামিয়ে বললেন ডিকে ঘোষ। ‘ খুব তাড়াতাড়িই ওরা স্বাধীন হয়ে যাবে। খুব তাড়াতাড়িই।’ দীপকবাবুর অবশ্য ফিসফিসিয়ে কথাটা বলবার প্রয়োজন ছিলো না। তাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী দর্শকটির চোখজোড়াই তখন ঝাপসা।
ফুটবল মাঠেই মৃত্যু হোক তার- এমন একটা ক্ষ্যাপাটে ইচ্ছা মনের ভেতরে তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে; কিন্তু এই মুহুর্তে পাগলা এনায়েত আর ক্যাপটেন পিন্টুর হাতে ধরা পতাকাটি দেখে ননী বসাকের মনে হচ্ছিলো মৃত্যুর জন্যে এর চেয়ে ভালো উপলক্ষ কেউ কখনো পায় নি। গত তিরিশটা বছর মাঠের সবুজে কাটিয়ে দিলেও এরচেয়ে সুন্দর কোন দৃশ্য ফুটবলে তিনি কখনোই দেখেন নি।
ঘ।
নদীয়ার সেন্টার ফরোয়ার্ডের হেডটা বেরিয়ে গেলো বারের অন্ততঃ পাঁচ হাত ওপর দিয়ে। নুরুন্নবী আরেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আরো একবার বাঁচা গেছে, সেইভ করতে হয়নি তাকে।
প্র্যাকটিসের অভাবটা ভোগাচ্ছে, নুরুন্নবী বেশ বুঝতে পারছে। আর খেলার শুরু থেকেই এদিকে ভালো চাপাচ্ছে নদীয়া। পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলেছে গুমোট গরম, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে বৃষ্টির কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
বল কুড়িয়ে আনবার আগে নুরুন্নবী দেখতে পেলো ডাগআউটে বসে থাকা ননী বসাক উঠে দাঁড়ালেন। বোঝাই যাচ্ছে -মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠছে তার। এগিয়ে এসে প্রবল বেগে হাত-পা নেড়ে কী কী সব নির্দেশও দিলেন তিনি পিন্টুকে, দেখা গেলো।
গোলকিক করলো নুরুন্নবী। সেন্টারের পর বিশ মিনিটের মতো কেটেছে। এই পুরো সময়টা হোম টিম দারুণ প্রেস করেছে। পুরো খেলাটা চালাচ্ছে তারাই। স্বাধীন বাংলা দল কুলিয়েই উঠতে পারছে না তাদের সাথে। বিপক্ষের অর্ধেকেরও বেশি খেলোয়াড় তাদের হাফে, মনে হলো নুরুন্নবীর।
নুরুন্নবীর গোলকিক ততক্ষণে নদীয়া দলের মিডফিল্ডারের ফিরতি হেডে এসে পড়েছে তাদের হাফেই। আবার আক্রমণে নদীয়া। আইনুল আর খোকন চেষ্টা করেও আটকাতে পারছে না ওদের দেয়া পাসগুলো । বল চলে এসেছে স্বাধীন বাংলার গোলপোস্টের বাম পাশে, কর্ণার ফ্ল্যাগের কাছে। নুরুন্নবী প্রস্তুত হচ্ছে আরেকটা আক্রমণ ঠেকাতে।
বামপ্রান্ত থেকে ওদের বেঁটে উইঙ্গারটা গোলমুখে ক্রস করবার ঠিক আগের মুহুর্তেই দারুণ ট্যাকলে বল কেড়ে নিলো আশরাফ। জোরালো একটা হাততালি শোনা গেলো দর্শকদের কাছ থেকে। স্বাধীন বাংলা দল মাঠে ভালো কিছু করলেই জোরালো সমর্থন দিচ্ছে ওরা। আবার মোহনাবাগানের হয়ে কলকাতা লীগে একসময় নিয়মিত মাঠে নামতো বলে হয়তো তালিটা আশরাফই পেলো, কে জানে- মনে হয় নুরুন্নবীর। আশরাফ ততক্ষণে পাস বাড়িয়েছে এনায়েতকে। সেন্টার সার্কেলের ঠিক নিচ থেকে বলটা ধরলো এনায়েত, তার চারপাশে সম্ভাব্য সকল পজিশনে মার্কার দিয়ে ঘিরে রেখেছে নদীয়া।
ঠিক তখনি, ম্যাজিকের মতোই- ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং এর গত মৌসুমের নতুন তারকা এনায়েত বুঝিয়ে দিলো- কেনো তার ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়া বদমেজাজের খ্যাতি সত্ত্বেও ননীদা তাকে আদর করে ‘পাগলা’ বলে ডাকেন। দারুণ এক ব্যাকভলিতে পেছনের অমলেশের সাথে দুর্দান্ত এক ওয়ান-টু-ওয়ানে বল বের করে নিয়ে মুহুর্তে সে চলে এলো সেন্টার সার্কেলের অপরপ্রান্তে। এরপর দুই ডিফেন্সিভ মিডের মাঝ দিয়ে বাম উইং এর তূর্যের দিকে বাড়ালো একটা নিখুঁত পাস। তূর্য হাজরা রুপী ১৭ বছরের কাজী সালাউদ্দিন তীর বেগে ছুটলো পায়ে বল নিয়ে, সামনে তার দক্ষিণ এশিয়ার নবতম দেশটিতে ধর্ষিত মানবতার প্রতি পাশ্চাত্যের অবহেলার এক জমাট অদৃশ্য ডিফেন্স।
নদীয়ার গোললাইনের পেছন দিকে দাঁড়ানো ফটো সাংবাদিক তপন চ্যাটার্জী প্রস্তুত হয়ে ওঠে ক্যামেরা হাতে। সালাউদ্দিনের খেলা সে আগে দেখেছে, এই দৌড় তার চেনা। হবে এবার, একটা কিছু হবেই।
সেই ক্লাস নাইনে পড়ার সময়কার চুন্না ওস্তাদের উপদেশ ভেসে আসে সালাউদ্দিনের কানে, ‘সালাউদ্দিন, তোর হবে। তর মাঝে ফুটবলটা আছে।’ নদীয়া জেলার আগুয়ান রাইটব্যাকটাকে সেকেন্ডের ভগ্নাশে দারুণ এক স্টেপওভারে ছিটকে দিতে দিতে সালাউদ্দিন বোঝালো, তার আছে- তার হবে। নদীয়ার পোস্টের সামনের কিপার বাদে এই হাফে আর রয়েছে মাত্র তিনজনের বাঁধা, সালাউদ্দিন বল নিয়ে ছুটছে বাম পাশের টাচলাইন ধরে। ওদিকে মাঝমাঠ থেকে নদীয়ার ডিফেন্সের দিকে দৌড়ানো শুরু করেছে প্রতাপ হাজরা।
সেন্ট্রাল ডিফেন্সের খেলোয়াড়টাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই থেমে গেলো সালাউদ্দিন। দুইজনের ব্যবধান প্রায় পাঁচ গজের মতো থাকতেই বামপায়ে এগিয়ে আসা স্টপারটার মাথার উপর দিয়ে গোলমুখে ক্রস করলো সালাউদ্দিন।
অবাক বিস্ময়ে নুরুন্নবী চেয়ে দেখে - নিখুঁত, একেবারে কাঁটাকম্পাসে মাপা নিখুঁত একটা ক্রস। একটা বড়ম্যাচে একজন স্ট্রাইকারের স্বপ্নের মতো আরাধ্য এই রকম ক্রস, যার পরে ফিনিশিংটা কেবল আনুষ্ঠানিকতাই থাকে। স্ট্রাইকারের মাথার ন্যূনতম ছোঁয়া পেলেই এই বলের গতিরোধ করা অসাধ্য যে কারো।
ডাগআউটে দাঁড়িয়ে থাকা ননী বসাকের মনে হয় তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে এখনি। তপন চ্যাটার্জী ক্যামেরার শাটারে আঙ্গুল রেখে স্থিরমূর্তি, গালের দাঁড়ি চুলকানো বন্ধ করে দিয়ে নিজের অজান্তেই পাশে বসা চুনা গোস্বামীর হাত চেপে ধরেছেন ডিকে ঘোষ। ঠিক এমনি ভাবেই নানা ভঙ্গিতে প্রায় ফেটে পড়তে প্রস্তুত গ্যালারীর হাজারো দর্শক, তাদের অপেক্ষমাণ চোখ দেখতে চায় কী ঘটলো – কী ঘটবে পরের মুহুর্তটিতে। কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামের হাজার পনেরো দর্শক তাকিয়ে দেখলো ক্লিয়ার করতে লাফিয়ে ওঠা দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে জ্যা-মুক্ত তীরের মতো হঠাৎ বেরিয়ে এসেছে একটা মাথা, প্রতাপ শংকর হাজরা।
সেই একটি মুহুর্ত যেন প্রতাপ হাজরার কাছে মহাকালের বিস্তৃতি পেলো। উড়ন্ত প্রতাপ জানে তার টাইমিং ছিলো নিখুঁত, জানে- তার একটি স্পর্শই যথেষ্ট তার মাথা থেকে পুরোন ঢাকার সেই বিভীষিকার স্মৃতি চিরতরে মুছে দিতে। গোল করলেই...
‘স্মৃতি’ !!
অকস্মাৎ জেগে ওঠা এই একটি নির্দোষ শব্দই থামিয়ে দিলো প্রতাপ হাজরার বাদবাকি সমস্ত কিছু। নিশ্চিত গোলের সামনে দাঁড়ানো গোলকিপারের পাশাপাশি এই শব্দটাই এনে দাঁড় কড়ালো অপরিসীম দ্বিধার জমাট দেয়াল আর প্রতাপের মার্কিং-এ এনে দিলো শত সহস্র কল্পিত ডিফেন্ডারকে। মুহুর্তেই প্রতাপ শংকর হাজরার মাথায় ফিরে আসে অগণিত গোলাগুলির শব্দ, স্টেডিয়ামের সমস্ত গ্যালারীর আওয়াজ ছেয়ে গিয়ে প্রতাপ হাজরার কানে বাজে কেবল মানুষের আর্তনাদ, প্রতাপ হাজরার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।...
সাদাকালো বলটা কোথায় গেলো ?? ওটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর। দপদপে লাল আলোর মাঝে প্রতাপ হাজরা হারিয়ে ফেলেছে সেটা।... হয়নি, হেড করা হয়নি। প্রতাপ পারে নি, প্রতাপেরা পারে না।
পুরো কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামকে হতাশায় দাঁড় করিয়ে রেখে পানি চোখে উড়ন্ত প্রতাপ হাজরা নেমে এলো মাটিতে। হতাশায় চীৎকার করে উঠবার পূর্বক্ষণেই তার মনে হলো কিছু একটা ঘটছে। ডানচোখের কোণায় আবছা মতো কিছু একটা নড়তে দেখে ফিরে তাকালো প্রতাপ।
কখন যেন ডান উইং থেকে নীরব দৌড়ে ডি-বক্সে পৌঁছে গেছে শাহজাহান !! প্রতাপ নিজের অজান্তেই ডামি খেলে ফাঁকা করে দিয়েছে তাকে আর সালাউদ্দিনের অবিশেষণসম্ভব ক্রস মাটিতে পড়ে উঠে আসছে শাহজাহানের পায়ে। জোরালো ভলি। গোলকিপারের আওতার বাইরে বামপাশের পোস্টে বাতাস লাগিয়ে জালে জড়ালো সাদাকালো গোলকটা, কয়েক সেকেন্ড আগেও যেটা ছিলো প্রতাপের পৃথিবী।
এক মুহুর্ত নীরব থাকার পরেই হঠাৎ জীবিত হয়ে উঠলো স্টেডিয়ামটা।
গ্যালারীতে উড়তে থাকা লাল-সবুজ-সোনালী মানচিত্রগুলোর দিকে তাকিয়ে ক্যাপটেন পিন্টুর মনে হলো সারা পৃথিবীতে যেন এখন ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ ধ্বনি ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। হবেই তো, পিন্টু জানে- ইতিহাসে এই প্রথমবার স্বাধীনতার জন্যে লড়াইরত একটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ফুটবল দল প্রতিপক্ষের জালে বল ঢোকালো।
ডাগআউটের আশেপাশে তখন অদ্ভূত প্রতিক্রিয়া সকলের। কেউ হাসছে, কেউ পাগলের মতো লাফাচ্ছে, বয়স্কদের কেউ কেউ কী করবে বুঝতে না পেরে কেঁদেই দিয়েছে হয়তো। ‘জয় বাংলা’ গর্জনে ফেটে পড়া গ্যালারীর উচ্ছ্বাসের মাঝেও ননীদা শান্ত। তার হাত চেপে ধরে লাফাচ্ছেন দলের ম্যানেজার তান্না ভাই। ‘দাদা, কী গোল দিলো দেকসে্ন !!’
ননীদা অস্ফুটে বললেন, ‘ আমরা পাঁজর দিয়ে দূর্গঘাঁটি গড়তে জানি !!’
উত্তেজনা এই কথা এড়িয়ে যায় ম্যানেজারের কান। তিনি তখন ব্যস্ত গোল উদযাপনে।...
গলা তুলতেই হয় ডিকে ঘোষকেও। ‘ ওহে নগেন... কোথায় গেলে ?? আরে মাইকের আওয়াজটা বাড়াও। এদিকে যে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।’...
... সেই মুহুর্তে পাঁচশো মাইল দূরের ঢাকার ফার্মগেটে তুমুল হট্টগোল। বোমা ফেলেছে গেরিলা বাহিনী। এন্ড ইটস নট কোয়ায়েট অন দ্যা নদীয়া ফ্রন্ট হিয়ার টু। লাল সবুজের জার্সিতে এগারোটা ছেলে সুদূর বারোশো মাইল দূরের একদল সামরিক অফিসারকে পাঠাচ্ছে বার্তা- আমরা লড়ছি।
... কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামের আকাশে মেঘ কেটে যাচ্ছে, রোদ উঠছে।...
তথ্যসূত্রঃ
১। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল- উইকিপিডিয়া
মন্তব্য
বিঃ দ্রঃ
খেলা বর্ণনায় কল্পনার আশ্রয় নেয়া হলেও উপরে বর্ণিত ঐতিহাসিক সমস্ত চরিত্র, স্থান, ঘটনা বাস্তব। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই নদীয়া জেলায় তাদের প্রথম প্রীতি ম্যাচটি খেলে। স্বাধীন বাংলা দল প্রথমে গোল করলেও খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়েছিলো।
সংযোজনঃ
অমি রহমান পিয়ালের সৌজন্যে ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা দলের দু'টো ছবি এখানে যোগ করে দিলাম ।
সুহান পোলাটা মানুষ না। অসাধারণ একটা লেখা। সালাউদ্দিনরে কোনোভাবে পড়ানো যাইতো।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
কথা দিলাম সুহান ভাই, কাজী সালাউদ্দিন এই লেখাটা পড়বেই।
দারুণ সুহান! থেমে থেমে চোখে পানি চলে আসছিলো।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ সজল ভাই
অসাধারণ লাগলো সুহান, অসাধারণ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চোখের জল আটকে রাখা গেল না! কতভাবেই না যুদ্ধ করেছি আমরা!অসাধারণ।।।।।।।।।।
সুবর্ণনন্দিনী
কেঁদে ফেলেছিরে ভাইডি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
অস্থির উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে লেখাটা পড়েছি---
কী অসামান্য ঘটনা, আর কী অসামান্য তার বিবরণ---
সুহানের যাদুর কলম স্থান-কালের অলংঘ্যনীয় ব্যবধান ঘুঁচিয়ে দিয়ে মুহূর্ত্তেই আমাকে নিয়ে গেল নদীয়ার মাঠে, সেই দিনটায়---
সুহান আমাদের সচলায়তনের শ্রেষ্ঠতম গল্পকার---এই কথাটা আর বারবার প্রমান করার কিছু নেই--- এত অল্পবয়েসে এমন মুন্সিয়ানা এসেছে তার কলমে--ভাবতেই অবাক লাগে--!!
তবে সবচাইতে বড় ধন্যবাদটা প্রাপ্য স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথাটা সামনে নিয়ে আসার জন্যে। অন্যদের কথা জানিনা, লজ্জার সাথে স্বীকার করছি, আজকের আগে আমি নিজেও জানতাম না।
ধন্যবাদ সুহান
জয় বাংলা---!
অনেক অনেক ধন্যবাদ বস এরকম দিলখোলা প্রশংসার জন্যে। এই লেখা পড়ে যদি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সম্পর্কে দু'-চারজন লোকও ঘেঁটেঘুঁটে দেখে, সেটাই অনেক বড় প্রাপ্তি হবে
জয় বাংলা !!
পরীক্ষা চলে। ফেসবুকিং ব্লগিং সব বন্ধ। খালি গেমস খেলি আর গান শুনি। মাঝে মাঝে পড়ালেখা করি। এখনো করতেছিলাম আরকি। কিন্ত চোখে ধুলা পড়লে খুব সমস্যা হয়। ঝাপসা দেখি সবকিছু।
নাকি চশমার কাঁচ ঘুলা হয়া গেছে বুঝতাছিনা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ব্যাঙের সর্দি !!
থাঙ্কুশ।
দুর্দান্ত। দুর্দান্ত। অসাধারণ সুহান ভাই। অনেকদিন এরকম গল্প পড়িনি। মনে হল যেন খেলার মাঠে আমিও বসে আছি। এই সালাউদ্দিন কি বাফুফের সভাপতি সালাউদ্দিন?
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
হ্যাঁ ভাইয়া। ইনিই সেই কাজী সালাউদ্দিন। আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাগলা এনায়েত, সালাউদ্দিন, অমলেশ সেন- এরা ঢাকার মাঠ কাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন। প্রতাপ হাজরা - ভুল না হলে- এখনো হকি অঙ্গনের বিখ্যাত সংগঠক
অসাধারণ... দারুণ...
সবাই বলে দিয়েছে যা বলার, আমি শুধু দিয়ে গেলাম।
দারুণ সুহান! দুর্দান্ত!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
থাঙ্কস বস !!
লেখক সুহান ভাই আর ট্যাগে 'গল্প', 'মুক্তিযুদ্ধ', 'স্মরণ' এই তিনটা জিনিস দেখেই জিভে জল চলে এসেছিল। প্রথমে ছোট মুখে ছোট্ট একটা অভিযোগ করি, দু'এক জায়গায় মনে হয়েছে ইতিহাস পড়ছি। কিন্তু সেটা সামান্য অংশেই। বাকিটুকু বিশেষ করে শেষ অংশের খেলার বর্ণনা, উফফ ! অসাধারণ
হিল্লোল
থাঙ্কস। ... হ্যাঁ, অনেক অংশেই কাজ করা যায় গল্পটা নিয়ে। একবার লিখে ফেলা মানেই তো শেষ না- আমি নাহয় একটূ ফাঁকিবাজি করলাম এখানে
দুই-তিন বছর আগে কে যেন আমার মতি নন্দী সমগ্রটা মেরে দিয়েছে। খেলা নিয়ে ওনার অনেক উপন্যাস আছে, পারলে পড়ে ফেলো। ঠকবে না, এদ্দম নিশ্চিত !!
পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছি, গল্পের অজস্র দর্শকের সাথে নিজের চিৎকারটাও শুনতে পাচ্ছিলাম !!
সুহানরে, একদম ঐ মাঠে নিয়ে গেলি!!
অসাধারণ। আবার একবার একইভাবে ফুটবলের মাঠে এরকম দেখতে চাই, জানিনা সেদিন কবে আসবে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
থ্যাঙ্কস মেইট
অসাধারণ। অপূর্ব।
দারুণ, দুর্দান্ত! স্রেফ পড়েই গেলাম, পড়েই গেলাম।
কাকতাল, ইনভিকটাস মুভি খানার রিভিউ আসিতেছে শীঘ্রই!
facebook
ঘণুদা !!
এইটা রাতে ইফতার খেয়ে আবার পড়তে হবে। এখন মাথা তাজঝিম তাজঝিম করছে
খালি ইফতার খাওয়ার মতলব দেখি !!
সুহান, আমার খুব প্রিয় একজন লেখক মতি নন্দীর লেখা পড়লেই আমার মনে হত, আমাদের দেশে কেন একজন মতি নন্দী নেই? এখন আমার আর সেই দুঃখ নেই। কারণ আমাদের সুহান আছে। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে লেখাটা পড়ে।
সেই। আমাদের সুহান আছে। ইনভিকটাস ১৯৭১ লিখার মত একজন সুহান রিজওয়ান।
..................................................................
#Banshibir.
একই কথা আমিও ভাবছিলাম। দু'দিন আগেই মতি নন্দীর সমগ্রটা রিভিশন দিলাম।
মতি নন্দী সমগ্রটা কি ধার পেতে পারি, পড়ার জন্যে? আনন্দমেলার পূজাবার্ষিকী সংখ্যায় পড়া বেশ কয়েকটা বড় গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। আমি ঢাকায় থাকি, মোহাম্মদপুরে।
মতি নন্দী আমার একজন খুব খুব খুব (অন্ততঃ তিনবার) প্রিয় লেখক। মিথ্যা না বলি, তার সাথে তুলনা করায় সেইরকম খুশি হইলাম সাফি ভাই !!!
জোকস এপার্ট, কোন ক্রীড়া লেখকের পক্ষেই মতি নন্দীর মতো করে লেখা সম্ভব না। এটা ওই অনেকটা হোমসের মূর্তির কাছে গিয়ে ফেলুদার সেলাম দেয়ার মতন ব্যাপার। বাংলা লিটারেচারে উনি একাই একটা জেনার
অপূর্ব, অপূর্ব। ধন্যবাদ দেবার ভাষা জানা নেই। শুধু বলব স্যাইলউড।
ভাল থাকুন সতত।
কবি_নীরব
আরেকটা লেখা শেয়ার করলাম এখানে।
অস্ত্র হাতে নয়, ফুটবল পায়ে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ।
সুহান, উপরে সাফির মতি নন্দীর সাথে তুলনাটা আমারও পছন্দ হয়েছে। চালু থাকুক তোমার কলম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখা দিয়ে সময়কে থামিয়ে দেয়া যায়, সুহান সেটা পারে। সালাউদ্দীনের ক্রস, প্রতাপের লাফিয়ে ওঠা আর শাহজাহানের ভলি, তারপর বলের জালে জড়ানো- পুরো ঘটনাটাই তো থেমে যাওয়া সময়ের ফ্রেমে দেখে নিলাম।
সুহানের সচলায়তনে প্রথম নিকটা ছিলো 'শব্দশিল্পী', আমি বলতাম শব্দের কারিগর। কেনো বলতাম, সেটা এই লেখাই প্রমাণ করে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অনেক অনেক আগে যখন সচলে লেখা দিতাম, ( ঐরকম লেখা এখন কোন অতিথি লিখলে মাইর একটাও মাটিতে পর্বো না ) তখন সবাই খুব সাহায্য করতেন। এখন এই যে নেট্টেট ঘেঁটে একটা- হোক ছাইপাঁশ- লেখার একটা চেষ্টা করি; এই ধুগো, হিমু ভাই, কনফু ভাই, ফাহা ভাই, পাণ্ডবদা, ইশ্তি ভাই, নজু ভাই, দ্রোহী - এইরকম আরো অনেক অনেক বড়ভাই সাহায্য না করলে সেটা কিছুতেই হইতো না।
ধুগো, আপনার কমেন্ট পইড়া সেই জমাট পুরানো দিনের কথা মনে পইড়া গেলো
দেশে আসেন ম্যান, আপনারে দেখার খুব ইচ্ছা- চাচীর দোকানে চা খাওয়ামু আপনেরে
দারুণ! অপূর্ব!! দুর্দান্ত!!!
পড়ে মনে হল তপন চ্যাটার্জির হাতে না, ক্যামেরাটা ছিল আপনার কাছে।
লেখা নিয়ে প্রশংসা করার ভাষা আমার জানা নেই। সুহান রিজওয়ান একদিন অনেক বড় লেখক হবে সেটাও বলার প্রয়োজন নেই বোধহয়। এরকম একজন লেখকের সাথে একই প্লাটফর্মে আমিও লিখি কিছু আবজাব সেটাই আমার কাছে গর্বের। লেখাটা পড়ে আসলেই চোখের পানি আটকাতে পারিনি। ভাবতে ভাল লাগে কিছু বিশুদ্ধ অনুভূতি এখনও জমা আছে মনের গভীর কোন কোনায়। সুহানের মত লেখকরাই পারে সেই অনুভূতিগুলোকে বের করে নিয়ে আসতে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
এই কাহিনী নিয়ে একটা সিনেমা বানানো গেলে কেমন হয়
দারুন সুহান ভাই। একটি সত্যকারের অসাধারন গল্প। যেকোন দিক দিয়েই।
..................................................................
#Banshibir.
থ্যাংকস ফাস্ট বয়
অযথা প্রশংসা আর না করি। সুহান যে দুর্ধর্ষ গল্পকার, এটা কারো অজানা নয়। অন্য কথা বলি। এই গল্পটা নিয়ে একটা চমৎকার নাটক হতে পারে। সম্ভব হলে সিনেমার দাবী জানাতাম, কিন্তু সে অনেক হ্যাপার কাজ। সচলেই নাটকবাজ লোকজন আছে অনেক, ভেবে দেইখেন।
আমার নিজেরও ধারণা- যেটা মিলে গেছে অনেক পরিচিত ফুটবলপ্রেমীর সঙ্গেই- এই দলটাকে নিয়ে একটা দারুণ সিনেমা হতে পারে। খেয়াল করুন, সেই প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা থেকেই নামকরণ গল্পের- ইনভিকটাস।
খেলা নিয়ে সিনেমা বানালে সেটা যে কী পরিমাণ আবেগ তৈরি করতে পারে দর্শকের মাঝে- সেটা বর্ণনা দুঃসাধ্য। স্বাধীন বাংলা দলের আরো সদস্য হারিয়ে যাবার আগেই কেউ এ কাজটা করলে বড় ভালো হতো
অসাধারণ।
---------------------
আমার ফ্লিকার
শরীরের লোম খাড়ায় গেছে।
সুহান ভাই,এত্ত চমৎকার কিছু পড়ার সৌভাগ্য করে দেবার জন্য ধন্যবাদ ।
চমৎকার সুহান ভাই। পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে আসলো।
অসাধারন।
জয় বাংলা।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
কিন্তু খেলার সাথে রাজনীতি মেশানো তো ঠিক না।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এইটা ভালো হইছে
চোখের সামনে সব দেখতে পেলাম যেন!
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র কখনো বানালে তোমাকে তার চিত্রনাট্য লিখতে হবে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চিত্রনাট্যের জন্যে নজু ভাই আছেন কিন্তু
অসাধারণ
পড়তে পড়তেই চোখ ভরে গেলো জলে। এমন করে কিভাবে লিখেন?
উপরে বলা হয়ে গেছে, তারপর ও বলছি, অসাধারন আপনার লেখা। মোনে হচ্ছিলো আমিও স্টেডিয়ামে দাড়িঁয়ে আছি, চিৎকার করছি, "জয় বাংলা"
স্বাধীন বাংলা ফুটবল নিয়ে তেমন কিছু জানতাম না। সুহান রিজওয়ান এর অসাধারণ লেখায় সব যেন ছায়াছবির মতো ভেসে উঠল। কত ভাবেইনা বাঙালি যুদ্ধ করেছে । স্যালুট।।
গায়ের রোমকুপগুলো দাড়িয়ে গিয়েছিল পড়তে পড়তে! অসাধারণ সুহান!!! এমন টানটান উত্তেজনা বর্ননা যেন চোখের সামনেই দেখে পাচ্ছি প্রতাপ হাজরার লাফিয়ে ওঠার দৃশ্যটা। সালাউদ্দিন ভাই কি এই লেখাটা পড়বেন?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
উপরে এক পাঠক বলেছেন তিনি সালাউদ্দিন সাহেবকে পড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। তাকে চিনি, ভরসা রাখা যায়
এই জায়গাটুকু স্পষ্ট হলো না। বনগাঁ থেকে গাড়িতে বা ট্রেনে করে কোলকাতায় তথা ফোর্ট উইলিয়ামে অথবা থিয়েটার রোডে পৌঁছানোটাই তো সহজ আর কম সময়ের ব্যাপার। আর বনগাঁ থেকে ব্যারাকপুর তো আরো কাছে। সেখানে বনগাঁ থেকে শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরা বিমানবন্দরে গিয়ে প্লেনে চাপতে হলো কেন? ব্যারাকপুরের এয়ারপোর্ট বলতে কি দমদমকে বোঝানো হলো? “সেই অন্ধকার ঘর- সেই পরিচিত শিখ অফিসার” কথাটাই বা কেন বলা হলো? নাকি এখানে না বলা অন্য কোন গল্প রয়ে গেছে? নূরুন্নবী খন্দকারের জন্য সহজ ছিলো বনগাঁ থেকে কৃষ্ণনগরে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া। তাতে অবশ্য কোলকাতার প্রাকটিস সেশনটা ধরা যেতো না।
গল্প নিয়ে মন্তব্য করাটা আর দরকার নেই। মুক্তিযুদ্ধের গল্প খুঁজতে হয়রান হয়ে গিয়ে যারা ‘গুলমোহর রিপাবলিক’ খুঁজে পায় তাদের অন্ধচোখ কোনদিন এই গল্প খুঁজে পাবে না। মুক্তিযুদ্ধের নাটক-সিনেমা বানাতে গিয়ে যারা শেষ পর্যন্ত ‘মেহেরজান’-এ গিয়ে ঠেকে তারাও এই গল্পটার চিত্রায়ণযোগ্যতা বুঝতে অক্ষম। তবে আশার কথা হচ্ছে মেধাবী, দেশপ্রেমিক, উদ্যোগী মানুষ একেবারে বিরল নয়। তাদের কারো না কারো চোখে এই গল্পটা পড়বে বলে আশা রাখি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডব, তোমার মতো আমিও আশাবাদী।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
পান্ডবদা, এই অংশটা সরাসরি তুলে দিয়েছি নুরুন্নবী সাহেবীর ফিচার থেকে - তালিকার তিন নং রেফারেন্স দ্রষ্টব্য। ও অঞ্চল সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় বলতে পারলাম না কোন পথটা সরলতর হতো।
আমাদের মাঝে এখন সেই দেশপ্রেম কই? আমার এতো খারাপ লাগছিলো যখন লেখাটা পরছিলাম। আজকের আমাদের প্রজন্ম আর সেই প্রজন্মের মানুষদের মাঝে কি এতোই ফারাক? তাহলে আমরা কেনো পারিনা?
যাইহোক লেখাটা অসাধারন। আশা করি আপনাদের লেখাই আমাদের এই প্রজন্মকে আবার সেই মূল্যবোধের সন্ধান দিবে। আশা করি একদিন ভোর হবেই।
ইন্টারেস্টিং, এবং কঠিন প্রশ্ন। আমার ধারণা কিছু হায়েনা বাদ দিলে দেশপ্রেম অনুভূতিটা এখনো অনেক প্রবল দেশের বেশিরভাগ মানুষের ভেতরেই। তবে সময়ের একটা প্রভাব থাকে মানুষের আচরণে। ৭১'এর সময়ের কোন তরুণের দেশের প্রতি টান আমাদের চাইতে অবশ্যই বেশি হবে- কারণ সেটাই সময়ের দাবি ছিলো।
ইতিহাস পড়েন বেশি করে। দেখবেন আপনিও দেশকে নিয়ে নতুন করে গর্বিত হবেন, নতুন করে ভোরের স্বপ্ন দেখবেন
সুহান এটা বোধয় আমার পড়া সেরা একটি লিখা, পড়তে পড়তে দুবার চোখ মুছতে হল, কতটা ছুয়ে গেছে হয়ত বুঝতে পারছেন।
এই গল্পটা থেকে নাটক বানানো হউক।
সহমত
অসাধারণ। কিছু কিছু ঘটনা জানতাম কিন্তু বর্ণনার মধ্য দিয়ে ঘটনাকে এমন নাটকীয় আর চিত্ররূপময় ( রবীন্দ্রনাথের ভাষায়) করার দক্ষতা খুব কম লেখকের আছে।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
সুহান ভাই, পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে আসলো।
ভাই, মনে হচ্ছিল আমি ও সেই গেলারীতে বসা ছিলাম.....
শুধু এই লেখাটা দিয়ে ই আমরা আমাদের নিজের মুভি বানাতে পারি ....সচলের কেউ কি উদ্যোগী হবেন ?
সুহান আমাদের সময়ের সেরা লেখিয়ে হবে!
দৌড়াতে থাকরে ব্যাটা! স্যালুট কইরা গেলাম!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সুলিখিত গল্প। ভাল লেগেছে।
পরিচিত শিখ অফিসার কি উবান?
এই একি সালাউদ্দিন কি বসুন্ধরার সোবহান ও জলপাই মইনের আপোশরফার ব্য়াবস্থা করেছিল?
জ্বী।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মুজিব বাহিনীর ওবান ?? না মনে হয়- ইনি সাধারণ কেউ হবেন। উপরের লিঙ্কে নুরুন্নবী সাহেবের প্রবন্ধটা দেখতে পারেন
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো, ট্যাগে কি সত্যি সত্যিই "গল্প" শব্দটা দেখলাম?
অসাধারণ লেখা, সুহান!
পড়তে পড়তে গায়ে রীতিমতো কাঁটা দিচ্ছিলো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কান্না আটকে রাখতে পারলাম না ভাই। মনে হচ্ছিল আমি নিজেই যেন প্রতাপ হাজরা, আমিই যেন গোল মিস করে ফেলেছি।
হয়ত দেশের জন্য কাঁদতে পারি বলেই এখনও বাঙ্গালী আছি।
-বিপ্লবী স্বপ্ন
কালকেই পড়েছিলাম । কমেন্ট করতে যা দেরী। "আউটফলের" এর বাংলা কি হবে? ঐ প্লেসটায় "আউটফলের" লিখলেন কেন বস? বাংলা শব্দ লিখলে কি অন্যরকম লাগতো? শুধু কৌতুহুল থেকে জিজ্ঞে করা। "আউটফলের" শব্দ নিয়ে আমার আপত্তি নেই।
দু-র্দা-ন্ত লেখা।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
আউটফলের বাংলা আসলে আমার মাথায় আসে নি। লেখার টানেই লিখে ফেলা।
মন্তব্য করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অসাধারণ একটি লেখা। যে লেখায় সময়কে সফলভাবে ফ্রেমে বন্দী করে ফেলেছেন। নাম গুলো পড়ে অনেক পুরনো সব স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠলো। সেই সব দিন। তখনও ঢাকা স্টেডিয়াম, বঙ্গুবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম হয়ে ওঠেনি। তখনও আবাহনী স্পোর্টিং ক্লাবের জন্ম হয়নি। তখনও ক্রিকেট এত জনপ্রিয় হয়নি। ফুটবলই ছিলো আমাদের প্রাণপ্রিয় খেলা। মনে পড়লো, সালাউদ্দিনের ডাক নাম ছিল, তুর্য।
আর মনে পড়লো, 'মুক্তিযুদ্ধ'। মনে পড়লো নয়, যেন বাস্তবেই সেই সময়টাতেই দাড় করিয়ে দিলেন। আবেগ ধরে রাখতে পারিনি।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, মুক্তযুদ্ধের একটি দিককে সুন্দর ভাবে তুলে আনবার জন্য।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অসাধারণ। লেখক কে ধন্যবাদ দিয়ে এর মাহাত্ত্ব বোঝানো যাবেনা। আমরা বর্তমান প্রজন্ম আপনার এমন লেখা থেকেই আশাবাদী হবো আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবো। আর ভবিষ্যত প্রজন্ম জানবে ইতিহাস.........
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সুহান ভাই,
আপনি গল্প বললেও মনে হচ্ছে ঠিক চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম পুরো ম্যাচটা।
এককথায় অসাধারণ বর্ণনা। একেবারে কাঁদিয়ে ছাড়লেন।
নির্ঝরা শ্রাবণ
শেষের দিকে এসে একেবারে জমে গেলাম!!!
রৌদ্রটা এই খান থেকে অনেকখানি তেজ নিয়ে নিয়েছিল নিশ্চিত................
_____________________
Give Her Freedom!
অসাধারণ !!
"বাংলাদেশ" চিত্কারের শব্দ যেন আমার কান ফাটিয়ে দিলো !!
আর কিচ্ছু বলার নেই !
অসাধারন লেখা । পড়ে চোখের পানি আটকায়ে রাখতে পারিনাই ।
ভাই শুয়ে শুয়ে পড়তেছিলাম ক্রসটা করার পর উত্তেজনায় বসে পরছি। আর গোল দেয়ার পর তো কথাই নাই। খুব সুন্দর করে লিখসেন। ধন্যবাদ।
প্রভুখন্ড।।
আবছায়া
কেবল বিনম্র শ্রদ্ধা---
সুবর্ণনন্দিনী, অমিতাভদা, কড়িকাঠুরে, হিল্লোল, শমসের ভাই, কবি নীরব, আবছায়া, বাপ্পীহায়াত ভাই, ধৈবত, আইলসা, ব্যাঙের ছাতা, কাকেশ্বর কুচকুচে, স্যাম, বিলাস, দিগন্ত বাহার ভাই, কিষাণ, কিবরিয়া, লাবণ্যপ্রভা, বিপ্লবী স্বপ্ন, সজীব ভাই, নির্ঝরা শ্রাবণ, ফাইয়াজ ভাই, প্রিয়মদা, রকিব, নোবেল ভাই-
পড়বার এবং ধৈর্য্য স্বীকার করে মন্তব্য করবার জন্যে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কিছু সদস্য ইতোমধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন, অনেকেই পা রেখেছেন বার্ধক্যের কাছে। সম্ভব হলে আপনারা তাদের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত ঘটনাবলী সংগ্রহ করে আন্তর্জালে দিয়ে দেবেন প্লিজ। তাদের এই স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করে রাখা খুবই দরকার। আপনাদের মতো সচেতন পাঠক- ইতিহাস আগ্রহীদের প্রয়াসেই এটা সম্ভব কেবল।
আবারো, অনেক ধন্যবাদ !!
গল্পটার বিষয়বস্তু খুবই থ্রিলিং, অধিকাংশ পাঠকের কাছেই বেশ ইমোশনালও। তবে শুধু গল্পশৈলীর বিচারে দেখলে এটা সুহানের সেরা সৃষ্টি নয়। মানে, স্বদেশীয় নয়, ফলে ইমোশনটা বড় ফ্যাক্টর নয়, এমন কোনো পাঠকের অবস্থান থেকে। আর তাছাড়া গল্পটার অধিকাংশই সরাসরি চলে এসেছে ওই সাক্ষাৎকারটা থেকে, সুহানের নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা এখানে কম বিস্তার পেয়েছে।
সহমত। ধরা যাক সুহান রিজওয়ানের গল্পসমগ্র অন্য কোন ভাষায় অনুদিত হল। তাহলে ঐ ভাষার কোন নেটিভ পাঠক কি এই গল্পটাকে সুহানের অন্যতম সেরা গল্প বলবে? সম্ভবত না। নিশ্চিতভাবে আমরা সুহানের কাছ থেকে এরচেয়ে সুলিখিত গল্প পড়েছি। উপরে আমার করা মন্তব্যে সুহানের উত্তর থেকে বোঝা যাচ্ছে এখানে উদ্ধৃতাংশও ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু পাঠকের পক্ষে সেটা আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। এটা নিয়ে আমরা সুবিমল মিশ্র, হাসনাত আবদুল হাই বা অদিতি ফাল্গুনীর সফল এক্সপেরিমেন্ট দেখেছি। সুহানও অমন কিছু করলে গল্পের প্রেজেন্টেশন ভিন্ন মাত্রা পেতে পারতো। সুহান সেটা করবে কিনা সেই চয়েসটা একান্ত তারই। আমরা কেবল আমাদের কেমন লাগলো সেটা বলতে পারি মাত্র।
ইমোশনের যথাযথ, পরিমিত ও সময়োপযোগী ব্যবহার করতে পারাটা শুধু মুন্সীয়ানার ব্যাপার নয় এটা লেখকের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের জাতীয় দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ খেলা থাকলে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো কেন 'লগান' বা 'চাক দে ইন্ডিয়া'র মতো মুভিগুলো বার বার দেখায়। কারণ, ইমোশনের যথাযথ ব্যবহার করতে পারায় এই মুভিগুলো প্রয়োজনের সময় কার্যকর টুল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পেরেছে। সুহানের গল্পটা নিয়ে মুভি হলে সেটাও একই রকম ফল দেবে বলে মনে করি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইমোশন নিয়ে আমার বক্তব্যটা একটু অন্য ছিল। আমি বলতে চেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধ-সম্পর্কিত বলে এই ঘটনাটা এমনিতেই বাংলাদেশী পাঠকের কাছে ইমোশনাল। সেটা নিয়ে স্রেফ ঠিকভাবে লিখতে পারলেই লেখক পাঠককে স্পর্শ করতে পারবেন। তার বাইরে আরেকটা প্রশ্ন আসে, এই ঘটনাটা একজন নিরপেক্ষ পাঠকের কাছেও ইমোশনাল কি না। সেটার উত্তরও হ্যাঁ। এবং এক্ষেত্রে এই দুটোতেই লেখকের বিশেষ কোনো দক্ষতার প্রয়োজন নেই, পাঠক ওই ইন্টারভিউটা সরাসরি পড়লেও অনেকটাই একই রকম অনুভূতি হত।
চাক দে ইন্ডিয়া'র গল্পটা প্রথম ধরনের ইমোশন নিয়ে নয়, মহিলা টিমের হকি খেতাব জেতার ঘটনাটা জনমানসে তেমন উত্তেজনাকর ঘটনা নয়। সিনেমাটায় দ্বিতীয় ধরনের ইমোশন খুব সফলভাবে ফোটানো হয়েছে।
ঠিক কৌদা। আসলেই গল্পটা অনেকটাই সাক্ষাৎকার আর প্রবন্ধভিত্তিক হয়ে গেছে
ইনভিকটাস ছবিটা আগে দেখিনাই, গতকাল আপনার লেখা দেখে মনে পড়ল, ছবিটা দেখা বাকি আছে, তাই দেখে ফেললাম, এইজন্য আপনার একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য।
আর লেখাটা এখন পড়লাম, যা বলতে চাই তা বাকীরা আগেই বলে ফেলেছেন। এমন হৃদয়স্পর্শ করা লেখাটার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এমন চমৎকার লেখা অব্যাহত থাকুক।
পড়তে গিয়ে সারা শরীর কেমন যেন ছমছম করছিল।প্রতাপ হাজরার মিসের সময় গ্যালারীর সবগুলো লোকের সাথে আমার হৃৎপিণ্ডও যেন থেমে গিয়েছিল।গোল হবার পর আমিও যেন ঝাপসা চোখ আর বুজে আসা গলা নিয়ে অস্ফুট স্বরে গাইছি--"আমার সোনার বাংলা......"
দিফিও-1, পথিক পরাণ , মৃতুময় ঈষৎ, নজরুল ভাই, তিথীডোর, রাতঃস্মরণীয়, প্রৌঢ় ভাবনা, শিমুলাপা , অনার্যদা, মরুদ্যান, শান্ত ভাই- আপাতত দৌড়ের উপর আছি। আপনাদের একসাথে একটা বিশাল ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম পড়বার জন্যে !!
দারুণ আপনার লেখা
আপনার ভক্ত হয়ে গেলাম
চোখে আনন্দাশ্রু। অনেক বড় একজন লেখক হও সুহান, আমরা গর্ব করে বলব, এতো আমাদের সুহান।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অসাধারণ... অথৈ আবেগে ভাসলাম...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। এত চমৎকার একটা লেখা। হবে সুহান, তোমাকে দিয়ে আসলেই হবে।
নগেন, ডিকে ঘোষ, চুনী গোস্বামীর কথোপকথনের অংশটুকুতে চ/ছ-এর ব্যবহার একটু মিশে গেছে। দেরিতে লিখলেও এমন গল্প যদি পাওয়া যায়, তাও ভালো। পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
তৃতীয়বার পড়ে শেষ করলাম ....লাজওয়াব!
আলোকিতা, অস্বাভাবিক, কুঙ্গ থাঙ, তানিম ভাই, জাহিদ ভাই- অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের !!
অপ্রদা, থ্যাঙ্কস আপনাকেও। সামান্য কিছু টুকটাক ভুল আছে লেখায়- পরে সময় করে শুধরাবো আশা করি
খুব বেশি ভালো লাগলো। আপনার বর্ণনা অসাধারণ!
অসাধারন!! দূর্দান্ত লিকেচিস!!! বুখে আয়
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
গল্পটা যেদিন দিয়েছিলে সেদিন-ই পড়েছি।
ভাবতে ভালো লাগে তোমার সাথে এক-ই প্ল্যাটফর্মে টুক্টাক লেখালেখি আমিও করছি
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
রু , সিমন ভাই, রিশাদ- থ্যাঙ্কিউ
অসাধারন লিখেছেন ভাই......পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা লাইভ দেখছি......এরকম আরও লেখার প্রত্যাশায়ে থাকলাম
“তূর্য হাজরা রুপী ১৭ বছরের কাজী সালাউদ্দিন তীর বেগে ছুটল পায়ে বল নিয়ে, সামনে তার দক্ষিণ এশিয়ার নবতম দেশটিতে ধর্ষিত মানবতার প্রতি পাশ্চাতের অবহেলার এক জমাট অদৃশ্য ডিফেন্স।”
সুহানের কাছ থেকে 'মতি নন্দীর কিশোর সমগ্র' নেওয়ার সময়'ও জানতাম না বাংলাদেশে ইতোমধ্যেইএকজন মতি নন্দী আবির্ভূত হয়েছে। ধন্যবাদ প্রিয়ম'কে, সে আমাকে পড়তে না বললে এমন অসাধারণ একটা গল্প পড়া'ই হত না।
নতুন মন্তব্য করুন