শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের আজকে ম্যাচেও গ্যালারী টইটম্বুর, টাইগারদের টসে জিত, গাজীতে নাকাল গেইল... চিত্রনাট্যের যা কিছু পরিবর্তন, তা ওই মাশরাফির বদলে নেয়া শফিউলে। ১৭ রানে ৩ বার তেকাঠি পতন- বরাবরের মতোই সিরিজে বিপদে উইন্ডিজ। খুলনা থেকে ঢাকায় বল না নিতে পারলেও কিরন পোলার্ড জানান দিচ্ছিলেন স্টেডিয়াম থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কতক বল পাঠালেও পাঠাতে তিনি পারেন। সাথে থাকলো সাহসী ব্রাভোর ফিফটি। ব্রেক থ্রু এনে দিলেন দলের নতুন তুর্কি মমিনুল। আর মাহমুদুল্লাহ-শফিউল ভাগ করে করে নিলেন উইন্ডিজের লেজ। স্কোর ২১৭/১০- আগের ম্যাচের চাইতে ছক্কা পরিমাণ বেশি সেটা।
এই ছক্কাটা অব্যবহৃত থেকে যাবে, ম্যাচের দ্বিতীয়াংশের শুরুটা সেটাই জানালো- ঠিক গতকালকের ম্যাচের মতো। ১৩তে ৫ না হলেও ৩০এ ৩। ২-০তে পিছিয়ে পড়ে ২-৩ এ উইন্ডিজের সিরিজ জয়ের মঞ্চ রেডি।
হতে দিলেন না ‘ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপটেন’ মুশফিক। আর সাথে রইলো তার ডেপুটি, সেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ- সুনীল মনোহর গাভাস্কারের চোখে যিনি বিশ্বের সেরা আট নাম্বার ব্যাটসম্যান। সিরিজ জুড়েই রিয়াদ ছিলেন বাংলাদেশের আনসাং হিরো, আজকের ৯১ রানের পার্টনারশিপে শয়ের উপরের স্ট্রাইকরেটে ৪৮।
এরপর শুরু ফাইটব্যাক। বিস্ময় স্পিনার সুনীল নরেন (রোহান কানহাইয়ের ব্যাটিং যদি কানাইয়ের বাঁশি হতে পারে শঙ্করীবসুর কলমে, তাহলে নারাইনের নরেন হতে দোষ কোথায় ) ফেরালেন দুই কান্ডারীকে। ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটসম্যান মমিনুল আর নাসির, বল ঘুরছে, দর্শকেরা দুলছে, ঢাকার রাস্তায় কুয়াশা ছেয়ে যাচ্ছে, রাস্তা নিশ্চুপ হচ্ছে।
ঘরপোড়া গরুর মতো ঢাকাবাসী ভয় পাচ্ছে আরেকটা এশিয়া কাপ ফাইনাল ট্রাজেডির। আর খেলাটাকে টেনে নিচ্ছেন মমিনুল-নাসির। হবে বোধহয়, হতে পারে।
হওয়ার আগে মরণকামড় দিয়ে গেলেন নরেন, মমিনুলকে। সোহাগ গাজী নাকি ব্যাট চালাতে পারেন জাতীয় লীগে, শুনেছিলো টাইগার সমর্থকেরা, দেখলো আজ। ২১৪তে দলকে রেখে তিনিও যখন ফিরে গেলেন, তখন কিন্তু দর্শক প্রস্তুত একটা সিরিজ বিজয়ের জন্যে। নাটকটা জমিয়ে দিলেন এনামুল হক মণি। সিরিজের বেশ কিছু দৃষ্টিকটু সিদ্ধান্তের সাথে যোগ হলো রাজ্জাকের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তটাও। সেটা হয়ে যেতে পারতো সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও।
নাসির হোসেন তা হতে দিলেন না। ওডিয়াই সিরিজে রান পান নি চার নম্বরে খেলে, নাসির হোসেন আরেকবার বোঝালেন- সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশের ওয়ানডে উন্নতির পেছনের মূল কারণগুলোর একটি হলো দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়ে তার ফিনিশিং দেয়ার কাজটা। মাইকেল বেভান বা যুবরাজ সিং পেতে বাংলাদেশকে এখনো হাঁটতে হবে বহুদূর, তবে সিঙ্গেল স্পেশালিস্ট নাসির হোসেন কিন্তু সেই সার্ভিস দিয়ে দিচ্ছেন দলকে নিয়মিতই।
এরপর ইলিয়াস সানির বোকামো নাটক হলো, প্রধানমন্ত্রীর দুইবার পতাকা ওড়ানো হলো, নাসির হোসেন উইনিং শটও নিলেন দুইবার।
ঢাকা তখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে। পতাকা চলে এসেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, ভেঁপু বাজছে, ‘টাইগার্স নে তো বাজা দিয়া উইন্ডিজো কা, ব্যান্ড’ – এই জাতীয় স্থূল কথাতেও আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে।
সিরিজ জয়ের তাৎপর্যটা, আমার মতো আম দর্শকের কাছে মনে হচ্ছে, অন্যত্র। তিনটে ক্লোজ ম্যাচই প্রায় বের করে এনেছিলো উইন্ডিজ, ৩-২ এ জেতা সিরিজটা টাইগাররা ৫-০তে জিততে পারতো একটু এদিকওদিক হলেই। এই একটা জায়গায় ধরা পড়ে অভিজ্ঞতার ফাঁক।
দলের সেরা খেলোয়াড়টা ছাড়াই সিরিজ জিতে নিলো মুশফিক বাহিনী, অভিনন্দন বাঘের বাচ্চাদের। এতো নিয়মিত জেতার অভ্যাস করে ফেলাটা কাজের কথা খুব, ক্রাইসিস সিচুয়েশনে জেতার সম্ভাবিলিটিটাও বাড়ে।
... সেই এশিয়া কাপ দিয়েই শুরু। কাগজে কলমে এখন তো বাংলাদেশ এশিয়ার দ্বিতীয় সেরাই, এশিয়া কেটে ‘বিশ্ব’ আর দ্বিতীয় সেরা কেটে ‘শ্রেষ্ঠ’ লেখাটা খুব দুরুহ বলে মনে হচ্ছে না আর। আকরাম খানের ফিফটি আর কাগজ কেটে আশরাফুলের অভিষেক সেঞ্চুরির খবরে বছর মেতে থাকার সময় পার। বাঘের গর্জন এখন নিয়মিতই শুনেছে বিশ্ব, শুনবে আরো। পূবের সূর্যের মতোই ধ্রুবসত্য এটা এখন।
মন্তব্য
কেন জানি মনে হচ্ছিলো আপনার একটা পোস্ট আসবে এই বিজয়কে উতসর্গ করে, তাই হলো। দারুণ।
ফারাসাত
বাঃ চমৎকার বিশ্লেষন। ভাল লাগলো।
টেম্পারমেন্ট একটু উন্নত করতে পারলে এই দল একদিন অনেক বিষ্ময়ের জন্ম দেবে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
জয়বাংলা!
পূবের সূর্য শিরোনামেই বোধ হয় একটা অনন্যসুন্দর একটা গান শুনলাম বিটিভি-তে, জেতার ঠিক পর পর, চমৎকার সুর আর কথা! অনুরোধ রইল সম্ভব হলে লিঙ্ক এখানে রাখার, লেখাটা আর গানটা একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকবে
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
বিজয় থেকে বিজয়ে শিরোনামে এই সংগীতটা আসলেই সুন্দর।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
খেলা নিয়ে লেখা (অন্যান্য লেখা তো অবশ্যই) কি যে ভালো লেখেন আপনি। আর জিতছি বলে এমনিতেই তো মন ফুরফুরে।
বাঘের গর্জন বিশ্বের নিয়মিত শোনার দিন আসছে।
স্বপ্ন এখন আরও বড় কিছুর। হবেই হবে!
--বেচারাথেরিয়াম
ঐ নতুনের কেতন উড়ে, তোরা সব জয়ধ্বনি কর !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
চমৎকার। খুব তাড়াতাড়ি একটা লেখা দরকার ছিল। সাকিবকে ছাড়াও জেতা যায়, তামিম বা মাশ্রাফি পারফর্ম না করলেও আমরা জিততে পারি, এই কনফিডেন্সগুলা দরকার ছিল। খুব সহজেই হতে পারত ৫-০। কিন্তু শেষমেশ সিরিজ যে হাতছাড়া হয়নি সেটা একটা বিশাল তৃপ্তি।
এই জয়ের সাথে দুই-একটা বরাহকে এই মাসে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখলে (কমপক্ষে আদেশ হোক ফাঁসির) বিজয়ের মাসে আর খুব বেশি চাওয়ার থাকবে না।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভাই, ক্রিকেটের মত জটিল জিনিষ বুঝা আমার কর্ম নয় । আমি শুধু বুঝি, লাল সবুজ পতাকার ঐ আকাশে ওড়াওড়ি । আসুন একটি গান শুনি মনের সুখে...
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা...
http://www.esnips.com/displayimage.php?album=4515736&pid=33041635
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
স্পষ্টতই এগিয়ে যাচ্ছি। জুটি দাড়িয়ে যাচ্ছে, সেরা প্লেয়ারদের নক ছাড়াও ম্যাচ বের করে নিচ্ছি, বোলার'রা তাদের অবস্থান ধরে রাখছে, সর্বপরি নিয়মিত ম্যাচ জিতে জেতার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। এখন আর যথাসাধ্য ভাল খেলার দিন নেই, সেরা দলগুলোর বিপক্ষে জয়ই চাই। আরও বেশি ম্যাচ চাই বড় দলগুলোর বিপক্ষে, তারা আমাদের দেশে আসুক, আমরা তাদের দেশে যাই। ব্যবধান আছে- কিন্তু দূরে দূরে থাকলে ব্যবধান কমে কবে?
এক বুক হতাশা আবার অনেক আসার ফুলকি, খেলোয়াড়দের প্রতি অভিমান আবার তাদের জয়ে চোখভেজা উল্লাস এইসব কেবল দিতে সক্ষম এই আমাদের ক্রিকেট দলটি। আর একটু টেম্পারমেনট ধরে খেলতে পারলে অনেক কিছুই করতে পারবে টাইগাররা। এগিয়ে যাক আমাদের এই বিজয় রথের পথচলা।
সুহান, লেখাতো চমৎকার। নতুন করে বলার না। তবে নারাইন কে নরেন বানানোর প্রয়োজনীয়তা দেখিনা। আমরা তো আর অনন্দবর্জ্য না। রম্য হলে ঠিক ছিল, কিন্তু ম্যাচ রিপোর্টিং ধাঁচের এই লেখায় খেলোয়াড়দের নাম স্ঠিক উচ্চারণে লেখাটাই কাম্য থাকবে।
আরেকটা ব্যাপার লেখায় উঠে আসে নাই, এই জয়ের কৃতিত্ব কিন্তু দ্রোহী আর হাঁটুপানির জলদসু্যরও। সঠিক সময়ে টিভি/কম্পিউটার বন্ধ রেখে ওনারা ঠিকই দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দিয়েছেন।
আবার বলে। দ্রোহীদার সোনার ছেলেরাই তো জিতাইলো
অন্তত একজনের ব্যাপারে আমারো তাই মনে হয়েছে
-বেশ লেখছো।
-গতকাল রিয়াদ আর মুশফিকের আউট হওয়ার স্টাইলটা ভাল্লাগে নাই। টু মাচ অ্যাগ্রেসিভনেস। দুইজনেরই তখন এরকম শট খেলার দরকার ছিল না কোন। আর ফাস্ট বোলিং এর দুর্বলতাটা কাটানো জরুরী হয়ে যাচ্ছে। আমি ৫-০তে জয় আশা করছিলাম।
-আর টি২০তে উইন্ডিজকে হারাইলে আমারাই টি২০ চ্যাম্পিয়ন কি কও
---------------------
আমার ফ্লিকার
_____________________
Give Her Freedom!
ক্রিকেট যেন জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। তবে প্রায়শঃই তা সাধারন ম্যারম্যারে জীবনের নয়, গৌরবময় মহান অনিশ্চয়তার জীবনের। এই অনিশ্চয়তায় কালকে বাংলাদেশের ললাটে যুক্ত হতে পারতো ব্যর্থতার আরেকটি বিরহ কাব্য। ম্যাচসেরা মাহমুদুল্লাহ, সিরিজ সেরা মুশফিক, অন্যতম পারফর্মার গাজী, আর নবাগত মোমিনুল, এদের কারো ব্যাটিংই পছন্দ হয় নি, যদিও এদের হাত ধরেই এসেছে গতকালের জয়। মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ যেন শুরু থেকেই স্লগ ওভারের ব্যাটিং করছিলেন, সে কারনেই আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। নবাগত তরুন মোমিনুল স্পষ্টতঃই স্নায়বিক চাপে ভূগছিলেন ভীষনভাবে, সেই চাপের মাঝেও ক্রস ব্যাটে কিছু কার্যকর শট খেলতে পেরেছেন বলেই রক্ষা। গাজীর ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল সে বোধ হয় শেষ ওভারে ১৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে। এদের মাঝে আশ্চর্য্য ব্যাতিক্রম নাসির হোসেন, শুধুমাত্র এই তরুনের কাছ থেকেই পেয়েছি প্রত্যাশিত পরিণত আচরণ। নাসিরের কালকের ইনিংসটি সোনার জলে লিখে রাখার মতো একটি ইনিংস, আইসিসি কাপে আকরামের সেই প্রবাদতুল্য ইনিংসটির মত।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
সুহান ভাল লেখে --এইটা তো জানা কথা
সুহানের লেখা সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ায় যখন সে খেলা নিয়ে লেখে--এইটাও সকলে মানি
সুহানের লেখা রক্তকণিকায় আহুন জ্বালায় যখন সে লেখাটা হয় আমাদের দেশের খেলা নিয়ে--ক্রিকেট নিয়ে--
দুর্দান্ত একটা সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসছি--সেই আনন্দকে চৌগুনা করে দিল সুহানের এই লেখা--
মাভৈঃ
হ।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ আপনাকে, লেখাটার জন্য।
টাইগারদের প্রতি অভিনন্দন।
আর আবেগাভিভূত হয়েছি, সিরিজ জয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করায়।
নতুন মন্তব্য করুন