আমি রিকশা থেকে নেমে ফুলের দোকানগুলো করস করার আগেই মিছিলটা চলে এলো। মশাল মিছিল। আমার বন্ধু রাশেদ-উপন্যাসের মশাল মিছিলটা সঞ্চারী বা স্থায়ী বাদ দিয়ে কেবল একটা কথাই তালে তালে ঝমাঝম রেলগাড়ির মতো বলছিলো। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। এই মিছিলটাও দেখি একটা কথাই বলছে। ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’
আমার এতো ভালো লাগলো !!
... মিছিলটার পিছু পিছু আমি পিজি পর্যন্ত এগোলাম। এরপর ঘুরলাম আবার। মিছিল আরো অনেক দূর যাবে বলে মনে হয়। আমি বাংলা একাডেমীর দিকে এগোলাম।
এই বছর এর আগে দুইবার মেলায় ঢুঁকলেও সময় নিয়ে আজকেই প্রথম আসা। আশা, সময় নিয়ে দেখবো পুরোটা। মেলায় ঢোঁকার মুখে দীর্ঘ লাইনটা আজকে দেখলাম না। হয়তো মেলা এখনো জমে নি, হয়তো অফিস ফেলে লোকজন আসতে পারেনি এখনো।
মেলায় ঢুঁকে আমি তারেক ভাইকে ফোন দিলাম। জানলাম তার আসতে দেরী হবে। মেহদী ভাইকে ফোন দিলাম এরপর। ফোন ধরলো না কেউ ওই প্রান্তে। সবশেষে পলাশকে ফোন দিলাম। এরপর কী হইলো জানে শ্যামলাল, কারণ দেখলাম ফোনের নেটওয়ার্ক শুদ্ধু উধাও।
বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না হয়তো, তবে কিন্ডল কিনে হয়। কিন্ডল ফায়ারের খরচ উসুল করতে ঠিক করেছি এই মেলায় খুব বেশি বই কিনবো না। আর একটা কারণ হলো, গত বইমেলায় কেনা বইগুলোর অন্ততঃ তিনটা এখনো আমার খাটের বালিশের পেছনে শোভা বর্ধন করছে। অতএব এবার সাবধান।
ইতস্ততঃ মেলায় ঘুরি। খুব বেশি নতুন বই এসেছে বলে মনে হয় না। মতিউর রহমান চৌধুরীর সাংবাদিক জীবনের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত একটা বই ভালো লাগলো। কেনার লিস্টে রাখলাম মুনতাসীর মামুনের ১৩ নং সেক্টর আর শামসুল হুদা চৌধুরীর একাত্তরের রণাঙ্গন। শেষের দুটা বই খুব সহজলভ্য অবশ্য, কিন্তু দাম মনে হয় মেলায় কিছু কম পড়বে।
লিটল ম্যাগ চত্বর থেকে একটা পোস্টার কিনে ফেললাম দুম করে। এইখানে অন্ততঃ পরিচিত কাউকে আশা করেছিলাম। তবে শুদ্ধস্বরের সামনে গিয়ে দুইজনকে দেখে ফেললাম। একজন অরফিয়াস, অন্যজন টুটুল ভাই। টুটুল ভাইয়ের চেহারা দিনকে দিন খোলতাই হচ্ছে, এটা তাকে বলার পর তার আক্ষেপের সীমা রইলো না। বরং কোন রুপবতী তরুণীর মুখে এ জাতীয় শংসা বচন তার প্রত্যাশিত, জানতে পাই।
শুদ্ধস্বরের বইগুলো কিন্তু বেশ মন কাড়ে আমার। কালাশনিকভের গোলাপ আর ইউডক্সাসের গোলক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ- বই দুইটা শর্টলিস্টের পূর্বের লিস্টে যোগ করি। এইসব মানসাঙ্ক কষবার ফাঁকেই দেখা হয় ডিপার্টমেন্টাল জুনিয়র রাহেলের সাথে, থিসিস মেট আসকারের সাথে।
অরফিয়াস বিদায় নিয়ে ধানমন্ডিতে চলে যাবার আগেই সাক্ষাৎ হয় কুইজার দম্পতি রুশ্মুশের সাথে। তাদের সাথে মেলা প্রায় চক্কর দিয়ে নিই একবার। দেখা হয় ধ্রুবর সাথেও।
তারেক ভাইয়ের ফোন আসে এরপর। গিয়ে দেখি তার সাথে আরো একজন অতিথি। মণিকা আপা। আমরা ধীরে ধীরে মেলা ঘুরি। নিনিষ স্কেলে দশম মাত্রার গোবেচারা মানুষ বিডিয়ার ওরফে শামা ওরফে একজন বোকা মানুষ ওরফে অতন্দ্র প্রহরীর সাথে দেখা হয়। তাকে বেশ কিছুক্ষণ ল্যাং মারি আমরা।
এরপর ঠিক হয় মেলার পাশের শিববাড়িতে চা-সিগারেট খেতে যাওয়া হবে। যেতে যেতে বোঝা যায় মেলার বাইরে স্টল না বসানোর সুফল। হাউকাউ চ্যাঁচামেচি নেই। খুব শান্ত পরিবেশ। বলতে ভুলে গেছি, এবার মেলায় ধুলোর প্রকোপও নেই একদম।
এরপর সবাই সিগারেট খায়, আমি চা খাই। দলে এসে যোগ দেয় নির্জন সাক্ষর আর নূপুরাপা। কোন পানীয়তে কী কী ভিটামিন থাকে, এইসব গুরু গম্ভীর আলোচনা করে লোকে। তারেক ভাই আর নির্জন্ন সাক্ষর কোথায় যেন চলে যায় এরপর, আমরা সেবাতে চলে চলে যাই।
সেবা ছাড়া একুশে বইমেলা হয় নাকি !! বিডিয়ার দেখলাম একের পর ক্লাসিক নামাচ্ছে, তার সাথে কোয়ালিশনে নূপুরাপা ওয়েস্টার্ন। গেস্ট হলে অনেক সুবিধা- আমি মণিকাপাকে ত্রিরত্নের নৌবিহার দেই এক কপি, বিডিয়ার দেয় থ্রী কমরেডস।
এরপরে শুদ্ধস্বরে আরেকবার গিয়ে গাদাগাদি করে বই দেখতে দেখতেই মেহদী ভাই সস্ত্রীক চলে আসেন পিটার পার্কারের বেশে। এসেই চংভং ছবি তুলতে থাকেন। পাপকর্ম সম্পাদন করে ফিরে আসেন তারেক ও নির্জন সাক্ষর ব্রাদার্সও।
এরপর সবাই খানিক বাংলা একাডেমীর তথ্যকেন্দ্রের সামনে খানিক বসে। মেলা শেষ হয় নয়টায়, শেষ মুহুর্তে সবাই একসাথেই বের হয়।
সবাই আলাদা হয়ে যায় টিএসসি থেকেই। হেঁটে হেঁটে শাহবাগ এসে দেখা যায় রাস্তা অবরোধ করে আছে এখনো ছাত্ররা। ওরা রাস্তায় নেমেছে, সরছে না। গান গাইছে।
বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা আজ জেগেছে...
আমি বাসায় এসে নেটে বসি একটু, কিন্ডলে পরশুরামের ভূষন্ডীর মাঠ পরে হাসবার চেষ্টা করি।
...নতুন বইয়ের গন্ধের তুল্য কিছু নেই, মাই ফুট। মিরপুরের আলোকদী গ্রামের মতো সস্তা আবেগ এইসব। বরং ভালো এই যান্ত্রিক বইটাই। কত আবেগ হীনতায়ও কাদেরের হাসির মতো অমলিন এটা, কত চকচকে।
মন্তব্য
ফাঁসি চাই
facebook
ফাঁসি চাই।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
বুকের সকল ঘৃণা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে আজ আমরা ভারমুক্ত হই। ভদ্র সেজে চুপ থাকা আর পোষাচ্ছে না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এটা ঠিক মেলায় এবার ধুলো নেই, আর বাইরের হাউকাউ নেই। মেলা অনেকটা ছিমছাম লেগেছে এবার। আমি প্রতিদিন বড় আড্ডাটা মিস করি।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
তোমার রাজা মহারাজা, করজোরে মাগবে বিচার
ঈয়াসীন
ঘুমানোর আগে লেখাটা পড়লাম । স্যার পলাশের কেরামতি, তারেক ভাই, মেহদী ভাই, আশু ভাই আর বইমেলা সবার কথা মনে করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মাঝে মধ্যে মেলার খোজ খবর দিও। এতে যদি কিছু স্বাদ পাই।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ফাঁসি চাই।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
নতুন মন্তব্য করুন