জুম্মার নামাযের পরে ভিসি স্যারের জুতো ছুঁয়ে সালাম করতে করতে শনিবার সকাল নয়টার পরীক্ষা পিছিয়ে দেখেছি অত্যন্ত সৎকর্মশীল ভাইদেরকে। দেখে বলার উপায় নেই, আগের রাতেই ঐ একই ভাইয়ারা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে হুম্মু** পুত বলে টিভি স্ক্রিনে সাদরে স্বাগত জানাচ্ছিলেন...
কাজকম্মে কর্মচারীরা কম যান না। বুয়েটের ব্যাংকে একবার গেলাম টার্ম ফাইনালের ফি জমা দিতে। কাউন্টারের ঐ পাশের ভদ্রলোক চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বললেন, দাঁড়ান- চা খায়া আসি। উনি চা খেতে গেলেন। ফিরলেন পদ্মা সেতু বানানোর যোগাড়যন্ত্র করে। অনেক ঘুরাঘুরি করে এসেছেন বলে স্বভাবতই উনার জেটল্যাগ হবার কথা। ঐ জেটল্যাগ কাটাতে উনি পাশের বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে আম্বিয়াকে কতদিন ধরে চেনেন, আজমল হুসেন ক্যামনে করে অফিসের সমস্ত কাজকর্ম উনাদের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন- এইসব নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন।... পরীক্ষার ফিস্ জমা নিয়ে যে পরিমাণ দেরী বুয়েটে করা হয়, সেটার একটা গাণিতিক সমষ্টি করা হলে বুয়েটের পরীক্ষা পেছানোর সাথে সমানুপাতেই থাকার কথা।
পেশাদার ছাত্রদের কথা বাদ, আমাদের মতো গরীব মেধাবী ছাত্রদের জন্যে পরীক্ষা দেয়ার পরের আধঘন্টাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো। আমাদের মতো সুন্দর করে কেউ পরীক্ষার প্রশ্ন ক্যাফের সামনে পোড়াতে পারতো না। আমি নিশ্চিত, তোমরা যারা এই যুগে ক্রিমিনাল কেস খেলো ম্যালা- তারাও পারো না। ...
ক্লাস আমরা ভালোবাসিনি কখনো, ভালোবেসেছিলাম ক্লাসে আসাটাকে।
ভালোবেসেছিলাম, ছোট্ট- ম্লান মনোরম মনোটোনাস মাঠওয়ালা ক্যাম্পাসটাকে।
এই লেখাটা, সেই ক্যাম্পাসটা নিয়েই।
উত্তাল মার্চের স্মৃতিতে বুয়েটের ছাত্ররা সীমানা প্রাচীরগুলো রাঙ্গাতে চাচ্ছে মুক্তির রঙে। এখানে আছে বিস্তারিত উল্লেখ।
ছাত্রদের প্রাথমিক লক্ষ্য বুয়েট শহীদ মিনার থেকে পলাশী মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশের (৬৫০+৬৫০) ১৩০০ ফিট দেয়ালে দেয়ালচিত্র আঁকা। ব্যাক ক্যালকুলেশন করে হিসাব মিলানো বা পাশের জনের খাতা দেখে মেকানিক্যাল ড্রয়িং এর মতো এই কাজ শেষ করা সম্ভব না। কাজেই ফাঁকিবাজেরা মনে হয় দায়সারা ভাবে রিপিট এড়ানোর চেষ্টা এ যাত্রা করবে না।
আগামীকাল ২৩ মার্চ থেকে সন্ধ্যা থেকে দেয়ালগুলো চুনকাম করার মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হবে। তারপর শুরু হবে আঁকাআঁকির কাজ। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে নাকি কাজ শেষ করার ইচ্ছা।
বুয়েটিয়ানেরা চাইছে এই উদ্যোগটিকে কেবল নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে। আপনি যদি আগ্রহী হন, তবে আপনি কাজ করতে পারেন আমাদের ডিজাইন টিমের সাথে, আপনি চাইলে হাত লাগাতে পারেন আঁকাআঁকিতে, রঙ করাতে, চাইলে আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন আপনার একটা আইডিয়া শেয়ারের মাধ্যমে, আপনারা চাইলে আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন অর্থ সহায়তার মধ্য দিয়েও।
আল্পনা আঁকার প্রথম দিন, অর্থাৎ ২৩ মার্চ সন্ধ্যা থেকেই বুয়েট ক্যাফেতে বসবে বুথ। বুথে সবাই অর্থ প্রদান করতে পারবেন। এছাড়া যারা দূরে আছেন, তারা টাকা পাঠাতে পারেন-
Tanvir Arafat Dhrubo
A/C No: 34282557
Sonali Bank, BUET Branch
contact: 01923273793
ব্যাচ ০৮
যারা মানিগ্রাম বা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে টাকা পাঠাতে চান তাদের জন্য-
Priyom Mozumdar
Contact : 01818074889
national ID: 1594120418072
ব্যাচ ০৫
হিসাব ক্রসচেকের জন্য- যারা ব্যাংক বা অনলাইনে টাকা পাঠাবেন, তারা দয়া করে অবশ্যই অবশ্যই Soumik Mohian (ব্যাচ ০৬) কে ফেসবুকে মেসেজ করে জানিয়ে দিবেন। কোন কারনে যদি টাকা থেকে যায়, তাহলে আশা করা যায় চাঙ্খারপুলের পেছনে না- আল্পনা আঁকার ব্যপ্ত করার পেছনেই সেটা ব্যয় হবে।
পেপ্যালের জন্যে থাকছে এই আইডিঃ Paypal ID:
যখন ছাত্র ছিলাম, তখন নিশ্চিত ছিলাম- আপলাশীডিএমসি কেবল বাঁশের চাষই করা হয়। সে ধারণার এখনো যে খুব পরিবর্তন হয়েছে, তা নয়। তবে এখন মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। মনে হয় গুচ্ছের ইঞ্জিনিয়ারিং বই- নির্লজ্জ প্রক্সি আর নীল হলুদ খাতার ক্যাম্পাসটা খুব একটা বাজে ছিলো না। আমি জানি, ফেসবুকের রঙিন ছবির চাইতে সেই মনোছবির পিক্সেল অনেক বেশি উজ্জ্বল।
আশা করি সেই ক্যাম্পাসটা এবার মুক্তির রঙে রঙিন হবে। সবার অংশ নেয়ার দাবিটা তাই থাকলো।
আমাদের মতো ডানাভাঙা- বা উড়তে থাকা ডানামেলা- শালিকেরা তো আর হৃদয়ের দাবি রাখার বেশি করতে পারি না...
মন্তব্য
এবং সেই সাথে স্বাধীনতার চেতনাকে সুরে,বাদ্যে, ছবিতে, ছন্দে, সংলাপে, কবিতায় সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ২৬ শে মার্চ বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- 'সত্ত্বায় স্বাধীনতা, চেতনায় বাংলাদেশ' ।
সেখানে জাতীয় সংগীতের অর্কেস্ট্রেশন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারটা বুঝলাম না :-/
মানে হচ্ছে জাতীয় সংগীতের একটা ইন্সট্রুমেন্টাল পারফর্মেন্স অর্কেস্ট্রার আদলে করা হচ্ছে।
আসেন,বুঝে যাবেন
চমৎকার উদ্যোগ। আসতে তো পারছি না, দূর থেকে মনের রঙ্গেই না হয় রাঙ্গিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
লেখায়
- মেফিস্টো
ভালো প্রচেষ্টা।
সচলের লেখকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইদানিং প্রথম আলোতে যুদ্ধপরাধীদের বিচার, রায়, শাহবাগ নিয়া ফালতু কিছু রিপোর্ট আসতেছে। রিপোর্ট গুলা দেখে মনে হয় ছাগুদের মনের কথাগুলাই তারা সরাসরি লিখছে। কিন্তু এই ব্যাপারে কেউ গা করছে বলে মনে হচ্ছে না । কোথাও এই সব লেখার প্রতিবাদ করে কোন লেখা দেখছি না। সচলের লোকজন কি কিছু লিখবে? আমাদের উদাসীন থাকার কারণেই কিন্তু উইকিতে গোলাম আজম, সাইদীদের মহামানব মনে হয়।
-পলাতক
সুন্দর প্রচেষ্টা! সকলের অংশগ্রহণে সফল হয়ে উঠুক।
============================
কত আর রবে দেশ রাহু গ্রাস কবলে?
সমূলে উপড়ে ফেলি দূর্নীতি সবলে।
যে দেয়ালগুলো রাঙানো হবে সেগুলো বুয়েট কর্তৃপক্ষের বানানো দেয়াল। তাই জিজ্ঞেস করি, এই কাজের জন্য ভিসি অফিস, ডিএসডব্লিউ অফিস, চীফ ইঞ্জিনিয়ারের অফিস - এসব জায়গা থেকে যথাযথ অনুমতি নেয়া হয়েছে তো? না নেয়া হয়ে থাকলে আগে লিখিত অনুমতি আদায় করুন, তারপর কাজে নামুন।
উপরের কথাগুলো কেন বললাম সেটার সপক্ষে দুটি উদাহরণ দিচ্ছি।
এক, গত চল্লিশ বছরে বুয়েটে পড়ুয়াদের মধ্যে অন্যতম সেরা চিত্রকর ছিলেন '৮৫ ব্যাচ আর্কিটেকচারের জাহিদ হাসান। ক্যাফের সামনের লাল দেয়ালটিতে নব্বই পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তার একটি অসাধারাণ দেয়ালচিত্র ছিল। ১৯৯১ সালে জাহিদ হাসান মারা গেলে আমরা বুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম এই শিল্পকর্মটি নষ্ট না করার জন্য। কিন্তু যথাযথ পূর্বানুমতি না নেয়ার অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ শিল্পকর্মটি মুছে ফেলে। বলা হয়েছিল ঐ দেয়ালে আর কোন চিত্রই আঁকতে দেয়া হবে না। অবশ্য পরে সেই দেয়ালে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন সরকারের আমলে নানা নেতাদের ছবি আঁকা হয়েছে। সেটা নিয়ে নানা কীর্তিকাহিনীও হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা সরকারের চির বশংবদেরা সংশ্লিষ্ট পাঁচ বছর সময়ে ঐ ছবি আর মুছতে দেয় না।
দুই, ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমরা অনুমতি চেয়েছিলাম শহীদ মিনারের পেছনে ইএমই বিল্ডিং-এর অংশটুকুতে আমাদের খরচে ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক দেয়ালচিত্র আঁকার। কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সোজাসাপটা না করে দিয়েছিল। আমরা বাধ্য হয়ে তখন রাস্তার উলটো দিকে তীতুমীর হলের বাইরের দেয়ালে সেই চিত্র আঁকি। আমাদের কাঙ্খিত দেয়ালটুকুতে পরে ঠিকই 'অমুক নেতার মুক্তি চাই' জাতীয় দেয়াল লিখন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ইএমই বিল্ডিং-এর গায়ে 'মুক্তি চাই'-এর দেয়াল লিখন না মুছলেও এক বছরের মধ্যে সংস্কার কাজের নামে তীতুমীর হলের দেয়ালে আঁকা ভাষা আন্দোলনের চিত্রগুলো মুছে দিয়েছিল।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডবদার মন্তব্য জায়গা মতো পৌঁছে গেছে। কাল ডিজাইন দেখানো হবে কর্তৃপক্ষকে
খুবই ভালো উদ্যোগ ! কিন্তু ট্যাকনিকাল সমস্যা এড়াতে ভিসি/প্রো-ভিসির পারমিশন নিয়ে নিয়েন!
"ফেসবুকের রঙিন ছবির চাইতে সেই মনোছবির পিক্সেল অনেক বেশি উজ্জ্বল"....খুব চমৎকার একটি কথা বলেছেন এবং এটি বোধহয় শুধু বুয়েট নয় যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আপনাদের দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার সেই সময়টুকু আর একবার মুক্তির রঙে রঙিন হয়ে উঠুক....কর্মসূচি সফল হোক....শুভ কামনা রইল।
দারুণ উদ্যোগ...
সাধুবাদ রইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারন উদ্যোগ।
নতুন মন্তব্য করুন