বই নিয়ে

সুহান রিজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন সুহান রিজওয়ান (তারিখ: শুক্র, ২৬/০৭/২০১৩ - ১১:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গুডরিডস নিয়ে হিমু ভাইয়ের পোস্ট দেখে মনে হলো আরেকটা উদ্যোগ নিয়েও কথা বলা যায়। আন্তর্জালে তথ্য ভাগ নেয়ার সুবিধাটা যেহেতু আছেই, সেটার ব্যবহারে সবার লাভবান হওয়ারই কথা।

কথা বলবো বইশেয়ার ডট কম নিয়ে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে পড়ার বইপত্রের জন্যে নীলক্ষেত নামে চমৎকার একটা জায়গা অহরহ ঘুরে আসতাম। ডিপার্টমেন্টাল বইপত্র ছাড়া বাকি সমস্ত বই-ই সেমিস্টার শেষে কমদামে বেচে দিতাম নীলক্ষেতে, সেটার কিছু অংশ ব্যয় হতো নতুন টার্মের বই কেনার পেছনে। হলবাসীদের কিছু বাড়ত সুবিধা ছিলো। টুথপেস্ট, মাসুদ রানা শেয়ারের মতো একই বই দিয়ে কাজ চলে যেতো পুরো উইং-এর সমস্ত ছেলেপিলের।

ধরা যাক, ভার্সিটি পড়ুয়া কারো কাছে পুরানো বইয়ের দোকান খুব অনায়াস নয়। অথবা বড়ভাইদের সাহায্য নেয়াও কঠিন। সেই ক্ষেত্রে তার পুরোন বইয়ের গন্তব্য সেই পোকার উদর- নয় ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা। রাম হয়তো গল্পের বই পড়তে ভালোবাসেন, এরফান জেসাপের ডেথ সিটি খুঁজে পাচ্ছেন না। অথচ তারই পরিচিত শ্যামের কাছে আছে সেই বইটাই- শ্যাম খুঁজছেন শামসুল হকের ছোটগল্প, যেটা অনাদরে পড়ে আছে রামের কাছে। ঠিক এইসব ক্ষেত্রে একটা চমৎকার মাধ্যম হতে পারে বইশেয়ার ডট কম।

উদ্যোগটা নিয়েছে ঢা.বি’র ব্যবসায় প্রশাসন স্নাতক ছোট ভাই মিশুক। তার কথায়, এই উদ্যোগ- “ইন্টারনেটে সবার জন্য বুকশেলফ তৈরি করার প্রয়াস”।

বইশেয়ারে সবাই নিজের বই এর একটা বুকশেলফ তৈরি করতে পারবে। বুকশেলফে বই, নোট, রিপোর্ট, ম্যাগাজিন ইত্যাদি অ্যাড করা যাবে। তারপরে এটা সে কি করতে চায়, ধার দিতে নাকি বিক্রি করতে অথবা দান করে দিতে, সবই বলে দেয়া যাবে। যদি মাসুদ রানার সংকেত ছোটভাইদের না দেখিয়ে লুকিয়ে রাখতে চায়, তবে সেটা কাউকে না দেখিয়ে ব্যক্তিগত হিসেবেও মার্ক করা যাবে।

তৈরী করা যাবে নিজের প্রোফাইলটাও। কোন বই খুঁজে পেলে সেটি কার কাছে আছে, তার পরিচয় কী, এলাকা কোনটা অথবা একই ক্যাম্পাসে পড়ে কি-না, জানা যাবে সেটাও।

লুল্পুরুষ পাঠকদের জন্যেও সুব্যবস্থা। নিজেদের মধ্যে মেসেজ চালাচালির জন্যে আছে মেসেজবক্স। লগিন করা থাকলে এই মেসেজবক্স ব্যবহার করে সুন্দরী সহপাঠিকাকে মেসেজ পাঠানো যেতে পারে।

আপনার কাছে কি কি বই আছে সেটা বুকশেলফে দেয়ার পরে, চাইলে সেটি ফেসবুকে শেয়ার করতে পারবেন। তাহলে রামশ্যামের সমস্যাও সমাধান হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে বসার ফাঁকেই।

গল্পের বই বা পড়ার বই বাদ দিলে নজরুল স্যারদের চোথা/স্লাইডও শেয়ার করতে পারবেন এখানে। ফ্লুইডের দুই যুগ পুরানো চোথা এভাবে পেলে পলাশী জুড়ে আর দৌড়াদৌড়ি করতে হতো না। থিসিসের প্রেসেন্টেশন স্লাইড বা গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই- জমিয়ে রাখা যাবে সেটার ডিজিটাল ভার্শনটাও।

সংক্ষেপে এই হলো বইশেয়ার ডট কম। আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি, টুকটাক ঘোরাঘুরি করে পছন্দ হয়েছে। গুডরিডসের মতো বিশালতা আপাততঃ নেই, তবে যেহেতু দেশীয় উদ্যোগ- মনে হয় আমরা সবাই টুকটাক নিজেদের বইপত্রে শেয়ার করলে জমে যেতে সময় লাগবে না।

কাজেই বই শেয়ার করুন। কে জানে, হয়তো পাশের বাসার পাঠকের কাছেই অযতনে পড়ে আছে আপনার খুঁজতে থাকা ছোটগল্পের বইটা।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আজকেই দেখা হলো মিশুকের সঙ্গে। দারুণ একটা উদ্যোগ।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

জয়েন করছি---

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

চলুক

আয়নামতি এর ছবি

খুউব ভালো একটা উদ্যোগ উত্তম জাঝা! আপনার দেয়া লিংকে গিয়ে একটু উঁকি দিয়ে এলাম হাসি

তারেক অণু এর ছবি
রকিবুল ইসলাম কমল  এর ছবি

বই পত্রের হার্ড কপি শেয়ার করার জন্য উদ্যোগটি খুবই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু কপিরাইটেড গল্প-উপন্যাস-কবিতার বই গুলোর ডিজিটাল ভার্সন এভাবে গন-শেয়ার করার আইডিয়াটি কতখানি আইনানুগ হবে তা কি ভেবে দেখা হয়েছে? আর, যেহেতু বলছেন এই সাইটটিতে বিক্রি করার অপশনও থাকবে তাহলে আমার বই ডট কম এর মত বাজারের সম্ভাব্য যত বই আছে সেগুলো অনুমতি ছারা স্ক্যান করে অনলাইনে বিক্রি করার একটা কালোবাজার তৈরী হয়ে যাবার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

উদ্যোক্তা আপনার প্রশ্নের উত্তর আমায় পাঠিয়েছেন ফেসবুকে।

ভাইয়া আমি বইশেয়ার এর এই খারাপ দিকটির ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। আমি একটি রিপোর্ট বাটন তৈরি করা নিয়ে কাজ করছি। যেখানে কোনও একটা ডিজিটাল আইটেম কেউ যদি পাইরেসির জন্য শেয়ার করে তাহলে সেটা অন্যরা মিলে রিপোর্ট করতে পারবে। সেক্ষেত্রে কোনো রিপোর্ট পেলে আমি আইটেমটির পাবলিক ভিজিবিলিটি বন্ধ করে দিব।

এই মুহূর্তে কোনও বই রিপোর্ট করতে চাইলে আপনারা এই ফিডব্যাক ফর্মে পাঠিয়ে দিতে পারেন। আমি সাইটের সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য পাইরেসি উৎসাহিত করতে চাইনা।

আমরা ডিজিটাল আইটেম রেখেছিলাম শুধু নিজেদের তৈরি করা নোট বা রিপোর্টের জন্য। কিন্তু বই এর ব্যাপারে হার্ডকপি বই শেয়ার করার ব্যাপারটাই আমরা উৎসাহিত করতে চাই।

আরও একটা ব্যাপার, বইশেয়ারে কোনও ডিজিটাল আইটেম বইশেয়ার এর নিজস্ব সার্ভারে রাখা যায়না। সেটা ড্রপবক্স বা গুগল ড্রাইভ বা অন্য কোনও তৃতীয় পক্ষের সার্ভার এ রেখে লিঙ্কটা শেয়ার করতে হয়। তাই এসব ওয়েবসাইটে সরাসরি গিয়ে রিপোর্ট করে আসা যেতে পারে লিঙ্ঙ্কটির পাইরেসির ব্যাপারে।

আর ভাইয়া প্লিজ আমাকে আরও যত বেশি সংখ্যক পারা যায় সাজেশন দিবেন। এই মুহূর্তে আর কোনও ফিডব্যাক আর সাজেশন থাকলে এখানেই আপনারা জানাতে পারেন, আমি এই ব্লগটা ফলো করছি। পাশাপাশি এই ফিডব্যাক ফর্মে কিছু পাঠালে আমি সরাসরি সেটা দেখতে পারব। ধন্যবাদ

আমরা ডিজিটাল আইটেম রেখেছিলাম শুধু নিজেদের তৈরি করা নোট বা রিপোর্টের জন্য। কিন্তু বই এর ব্যাপারে হার্ডকপি বই শেয়ার করার ব্যাপারটাই আমরা উৎসাহিত করতে চাই।

রকিবুল ইসলাম কমল  এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার উদ্যোগ সফল হোক।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাহ দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

আশালতা এর ছবি

আরিহ্‌ দারুণ তো! দেঁতো হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

খুব-ই ভালো উদ্যোগ! ঘুরে আসতে হয় একবার!

শাফায়েত এর ছবি

হাততালি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দেখে এলাম... চমৎকার হাততালি
প্রথম বইটা দেখেই নস্টালজিক হয়ে গেলাম ... এই বই এখনও কারো কাছে থাকতে পারে ভাবতেই পারিনি হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তানিম এহসান এর ছবি

গতকাল দেখা হল মিশুকের সাথে, এটা নিয়েই কথা বলছিল। সুহান, চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার উদ্যোগ।

স্বয়ম

মেঘা এর ছবি

আমার নিজের বই কাউকে দিয়ে দিতে ইচ্ছা করে না। আবার অনেক না পড়া বই আছে সেগুলো খুঁজে পাই না। বিরাট মুশকিল ইয়ে, মানে...

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন উদ্যোগ
ইসরাত

শাফায়েত এর ছবি

উদ্যোগ ভালো কিন্তু যে হারে নোট-চোথা-লেকচার শেয়ার দেয়া হয়েছে দেখলাম সেটা সাইটের ভাবমূর্তির জন্য খারাপ, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি এগুলো দেখে। হ্যা এগুলো অনেকের কাজে লাগে সত্য কিন্তু বইশেয়ারের সাইট বই আদানপ্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, এবং চোথা পড়ে পাশ করার মতো বাজে সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করাও ঠিক না।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোলাকুলি

-এস এম নিয়াজ মাওলা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নজরুল স্যারদের চোথা/স্লাইডও শেয়ার করতে পারবেন এখানে। ফ্লুইডের দুই যুগ পুরানো চোথা এভাবে পেলে পলাশী জুড়ে আর দৌড়াদৌড়ি করতে হতো না

- বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল বিভাগে খোঁজ নিলে আরও এমন মহান সব অধ্যাপকদের মহৎ সব চোথাকর্মের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেইসব সেনোযোয়িক বা মেসোযোয়িক যুগের চোথাকর্মকে নাদান শিক্ষার্থীদের পাঠযোগ্য আকারে অক্ষয় তাম্রফলকে লেখার ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ করার আবদার জানাই।

অটঃ উল্লেখিত মহান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, "তুমি বাপু সোনার কলম দিয়ে লিখলেও ফ্লুইড মেকানিক্‌সে পাশ করতে পারবে না"। আমি চিরদরিদ্র মানুষ তাই আজতক সোনার কলম যোগাড় করতে পারিনি। যেহেতু সোনার কলমের বদলে ৩ টাকা দামের ইকোনো বলপেন দিয়ে লিখেছিলাম তাই এক দফাতেই ফ্লুইড মেকানিক্‌স পাশ করে গিয়েছিলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আজ পোস্টে দেয়া লিংকে ক্লিক করে দেখলাম বইশেয়ার-এর সাইটটা আর নেই। পেশাদারিত্বের অভাবে এমন অনেক ভালো উদ্যোগ অকালে মাঠে মারা যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।