কথা বলবো বইশেয়ার ডট কম নিয়ে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে পড়ার বইপত্রের জন্যে নীলক্ষেত নামে চমৎকার একটা জায়গা অহরহ ঘুরে আসতাম। ডিপার্টমেন্টাল বইপত্র ছাড়া বাকি সমস্ত বই-ই সেমিস্টার শেষে কমদামে বেচে দিতাম নীলক্ষেতে, সেটার কিছু অংশ ব্যয় হতো নতুন টার্মের বই কেনার পেছনে। হলবাসীদের কিছু বাড়ত সুবিধা ছিলো। টুথপেস্ট, মাসুদ রানা শেয়ারের মতো একই বই দিয়ে কাজ চলে যেতো পুরো উইং-এর সমস্ত ছেলেপিলের।
ধরা যাক, ভার্সিটি পড়ুয়া কারো কাছে পুরানো বইয়ের দোকান খুব অনায়াস নয়। অথবা বড়ভাইদের সাহায্য নেয়াও কঠিন। সেই ক্ষেত্রে তার পুরোন বইয়ের গন্তব্য সেই পোকার উদর- নয় ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা। রাম হয়তো গল্পের বই পড়তে ভালোবাসেন, এরফান জেসাপের ডেথ সিটি খুঁজে পাচ্ছেন না। অথচ তারই পরিচিত শ্যামের কাছে আছে সেই বইটাই- শ্যাম খুঁজছেন শামসুল হকের ছোটগল্প, যেটা অনাদরে পড়ে আছে রামের কাছে। ঠিক এইসব ক্ষেত্রে একটা চমৎকার মাধ্যম হতে পারে বইশেয়ার ডট কম।
উদ্যোগটা নিয়েছে ঢা.বি’র ব্যবসায় প্রশাসন স্নাতক ছোট ভাই মিশুক। তার কথায়, এই উদ্যোগ- “ইন্টারনেটে সবার জন্য বুকশেলফ তৈরি করার প্রয়াস”।
বইশেয়ারে সবাই নিজের বই এর একটা বুকশেলফ তৈরি করতে পারবে। বুকশেলফে বই, নোট, রিপোর্ট, ম্যাগাজিন ইত্যাদি অ্যাড করা যাবে। তারপরে এটা সে কি করতে চায়, ধার দিতে নাকি বিক্রি করতে অথবা দান করে দিতে, সবই বলে দেয়া যাবে। যদি মাসুদ রানার সংকেত ছোটভাইদের না দেখিয়ে লুকিয়ে রাখতে চায়, তবে সেটা কাউকে না দেখিয়ে ব্যক্তিগত হিসেবেও মার্ক করা যাবে।
তৈরী করা যাবে নিজের প্রোফাইলটাও। কোন বই খুঁজে পেলে সেটি কার কাছে আছে, তার পরিচয় কী, এলাকা কোনটা অথবা একই ক্যাম্পাসে পড়ে কি-না, জানা যাবে সেটাও।
লুল্পুরুষ পাঠকদের জন্যেও সুব্যবস্থা। নিজেদের মধ্যে মেসেজ চালাচালির জন্যে আছে মেসেজবক্স। লগিন করা থাকলে এই মেসেজবক্স ব্যবহার করে সুন্দরী সহপাঠিকাকে মেসেজ পাঠানো যেতে পারে।
আপনার কাছে কি কি বই আছে সেটা বুকশেলফে দেয়ার পরে, চাইলে সেটি ফেসবুকে শেয়ার করতে পারবেন। তাহলে রামশ্যামের সমস্যাও সমাধান হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে বসার ফাঁকেই।
গল্পের বই বা পড়ার বই বাদ দিলে নজরুল স্যারদের চোথা/স্লাইডও শেয়ার করতে পারবেন এখানে। ফ্লুইডের দুই যুগ পুরানো চোথা এভাবে পেলে পলাশী জুড়ে আর দৌড়াদৌড়ি করতে হতো না। থিসিসের প্রেসেন্টেশন স্লাইড বা গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই- জমিয়ে রাখা যাবে সেটার ডিজিটাল ভার্শনটাও।
সংক্ষেপে এই হলো বইশেয়ার ডট কম। আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি, টুকটাক ঘোরাঘুরি করে পছন্দ হয়েছে। গুডরিডসের মতো বিশালতা আপাততঃ নেই, তবে যেহেতু দেশীয় উদ্যোগ- মনে হয় আমরা সবাই টুকটাক নিজেদের বইপত্রে শেয়ার করলে জমে যেতে সময় লাগবে না।
কাজেই বই শেয়ার করুন। কে জানে, হয়তো পাশের বাসার পাঠকের কাছেই অযতনে পড়ে আছে আপনার খুঁজতে থাকা ছোটগল্পের বইটা।
মন্তব্য
আজকেই দেখা হলো মিশুকের সঙ্গে। দারুণ একটা উদ্যোগ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জয়েন করছি---
খুউব ভালো একটা উদ্যোগ আপনার দেয়া লিংকে গিয়ে একটু উঁকি দিয়ে এলাম
facebook
বই পত্রের হার্ড কপি শেয়ার করার জন্য উদ্যোগটি খুবই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু কপিরাইটেড গল্প-উপন্যাস-কবিতার বই গুলোর ডিজিটাল ভার্সন এভাবে গন-শেয়ার করার আইডিয়াটি কতখানি আইনানুগ হবে তা কি ভেবে দেখা হয়েছে? আর, যেহেতু বলছেন এই সাইটটিতে বিক্রি করার অপশনও থাকবে তাহলে আমার বই ডট কম এর মত বাজারের সম্ভাব্য যত বই আছে সেগুলো অনুমতি ছারা স্ক্যান করে অনলাইনে বিক্রি করার একটা কালোবাজার তৈরী হয়ে যাবার সম্ভাবনাও থেকে যায়।
উদ্যোক্তা আপনার প্রশ্নের উত্তর আমায় পাঠিয়েছেন ফেসবুকে।
ধন্যবাদ। আপনার উদ্যোগ সফল হোক।
বাহ
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আরিহ্ দারুণ তো!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
খুব-ই ভালো উদ্যোগ! ঘুরে আসতে হয় একবার!
দেখে এলাম... চমৎকার
প্রথম বইটা দেখেই নস্টালজিক হয়ে গেলাম ... এই বই এখনও কারো কাছে থাকতে পারে ভাবতেই পারিনি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গতকাল দেখা হল মিশুকের সাথে, এটা নিয়েই কথা বলছিল। সুহান,
চমৎকার উদ্যোগ।
স্বয়ম
আমার নিজের বই কাউকে দিয়ে দিতে ইচ্ছা করে না। আবার অনেক না পড়া বই আছে সেগুলো খুঁজে পাই না। বিরাট মুশকিল
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
দারুন উদ্যোগ
ইসরাত
উদ্যোগ ভালো কিন্তু যে হারে নোট-চোথা-লেকচার শেয়ার দেয়া হয়েছে দেখলাম সেটা সাইটের ভাবমূর্তির জন্য খারাপ, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি এগুলো দেখে। হ্যা এগুলো অনেকের কাজে লাগে সত্য কিন্তু বইশেয়ারের সাইট বই আদানপ্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, এবং চোথা পড়ে পাশ করার মতো বাজে সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করাও ঠিক না।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
- বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল বিভাগে খোঁজ নিলে আরও এমন মহান সব অধ্যাপকদের মহৎ সব চোথাকর্মের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেইসব সেনোযোয়িক বা মেসোযোয়িক যুগের চোথাকর্মকে নাদান শিক্ষার্থীদের পাঠযোগ্য আকারে অক্ষয় তাম্রফলকে লেখার ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ করার আবদার জানাই।
অটঃ উল্লেখিত মহান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, "তুমি বাপু সোনার কলম দিয়ে লিখলেও ফ্লুইড মেকানিক্সে পাশ করতে পারবে না"। আমি চিরদরিদ্র মানুষ তাই আজতক সোনার কলম যোগাড় করতে পারিনি। যেহেতু সোনার কলমের বদলে ৩ টাকা দামের ইকোনো বলপেন দিয়ে লিখেছিলাম তাই এক দফাতেই ফ্লুইড মেকানিক্স পাশ করে গিয়েছিলাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আজ পোস্টে দেয়া লিংকে ক্লিক করে দেখলাম বইশেয়ার-এর সাইটটা আর নেই। পেশাদারিত্বের অভাবে এমন অনেক ভালো উদ্যোগ অকালে মাঠে মারা যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন