অবধারিত ভাবে বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠলেই প্রশ্ন থাকে, কোন দলে পক্ষপাত তোমার ? বাংলাদেশ হলে প্রশ্নকর্তা আরো একটু লক্ষ্যভেদী হতেই পারেন। বলতেই পারেন, ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা ??
জীবনের প্রথম তিন বিশ্বকাপে আমি ব্রাজিল, এবং কেবল ব্রাজিল। তখনো ইউরোপের ফুটবল দেখি না নিয়মিত, খেলার পাতায় এতো প্রচার পান না ইউরোপ, লাতিন আর আফ্রিকার পায়ের জাদুকরেরা।
এখন, আরো এক যুগের পর, যখন ইউরোপের ক্লাবগুলোতে ছড়িয়ে আছে পছন্দের খেলোয়াড়েরা, যখন ফেসবুক-টুইটার প্রতিনিয়ত বদলে দেয় পছন্দ অপছন্দের ধরন, যখন সব কিছু আতস কাঁচের তলায়, তখন আর ব্রাজিল এবং কেবল ব্রাজিলে আটকে থাকি না আমি। বলা ভালো, থাকতে পারি না।
আমার ব্যক্তি ধারণা, এই বিশ্বকাপ পর্তুগীজ আর স্প্যানিশ ভাষী কোনো দলের। সেই প্রসঙ্গে নিজের ব্লগে লিখেছিলাম কদিন আগে, প্রেডিকশনের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না এ মুহুর্তে।
এই মুহুর্তের লেখাটা, শুধুই বিশ্বকাপ নিয়ে। কোনো দল নয়, শুধুই বিশ্বকাপ।
ফুটবলারদের কাছে সে সিলিকনের পৃথিবীতে সোনার পাতে লাপিস লাজুলিতে মোড়া এক টুকরো অমরত্ব। চায়ের কাপের বিকেলে সে উঁচু গলার আড্ডা, শেষ না দেখা তর্ক। রিও’র বস্তি থেকে রাশান রাজপ্রাসাদ- সে উড়ে বেড়ায় যত্রতত্র।
তবু মনে হয় তার শৌর্য সবচেয়ে বেশি দীপ্ত আমাদের মহল্লায়, আমাদের কলোনীতে, আমাদের দালানের দেয়ালের রঙে; আমাদের গলাগলি বন্ধু থেকে গালাগালি শত্রু হয়ে যাওয়ায়, আমাদের নাপিতের দোকানের চুল কাটায়, আমাদের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া ফুটবল টিমে, আমাদের পত্রিকা পরিসংখ্যান, আমাদের ফেসবুক ফ্যাক্টের ফাইটে।
অথচ আমাদের লোনলী লগ্নের লগআউট করা ভাবনায় আমরা যখন ফিরে দেখি, আমরা অনুসন্ধান করি কারণের, আমরা ভাস্করাচার্যের শূণ্যে ফিরে ফিরে আসি। আমাদের গ্রোয়িং জিডিপির সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার, আমাদের শ্রমকে শক্তি করে তোলা আঁটোসাঁটো মিডফিল্ড, আমাদের অপমান আর দুর্নীতি সয়ে যাওয়ার অভেদ্য ডিফেন্সও আমাদের আশা দেয় না। আমাদের অপোনেন্টের ডাগআউটে দুইশো বছরে সব লুটে নেয়া স্ট্রাটেজির কোচ, আমাদের প্রতিপক্ষরা রেফারির নজর এড়িয়ে সীমান্ত হত্যার ফাউল করে যায়। আর আমাদের ট্যাকটিকসে প্রশ্ন ফাঁসের গলদ, আমাদের ফর্মেশনে তেতাল্লিশ বছরের পুরনো পশু জিইয়ে রাখার ভুল, আমাদের গোলে বল জড়াতে পেলে ম্যারাডোনার প্রয়োজন হয় না, আমরা নিজেরাই এক একজন আন্দ্রেস এসকোবার। আমাদের পরিণতি ভিভিয়ান ফো।
তবু মানুষ স্বপন দেখে। স্বপ্ন দেখেই চেকস্লোভাকিয়ার কীপারকে এগিয়ে আসতে দেখে না-মানুষী এক দুঃসাহসে বলে কিক করেন পেলে, জয়ের বাসনায় দেবতাদের নিয়ম ভেঙ্গে হাত দিয়েই অলিম্পাসের চূড়ো ছুঁয়ে আসেন ম্যারাডোনা। মানুষ তার কল্পনার সমান, অথবা তার চেয়েও বেশি তার দৌড়।
আর মানুষের কল্পনাশক্তির সর্বগ্রাসী প্রতীক ফুটবল। যতদিন ফুটবল থাকবে, আশাও থাকবে ততদিন। ততদিন ফাউল থাকবে, থাকবে সেটাকে কাটিয়ে যাওয়া ড্রিবলিং।
সেই ফুটবলের উৎসব চলে এলো আরো একবার। আহ, বিশ্বকাপ !
এই ব্লগ-ফেসবুক আর অফলাইনের সিওটু মোড়া দুনিয়ায় সেই বিশ্বকাপ সবুজ আমাজনের গন্ধ উড়িয়ে আনা একমাসের অক্সিজেন।
ব্রাজিল, হিয়ার উই আর !!
মন্তব্য
ব্রাজিল, হিয়ার উই আর।
অনেক শুভকামনা সুমন।
ভালো থাকবেন।
-----------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আহ্, আপনার লেখার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। যথানিয়মে মুগ্ধ করেছেন।
গোঁসাইবাবু
আপনার এই শুভকামনা ছড়িয়ে যাক গোটা অন্তরীক্ষে।
অনেক ধন্যবাদ সুহান।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা ছিল। কারো কারো লেখা ছাড়া কোন কোন সময় নেহায়েত পানসে হয়ে থাকে, বিশেষত পুরানো সচলরা এটা যদি বুঝতেন!
বিশ্বকাপে কিছু পরপর লিখুন, আমরা পড়ার অপেক্ষায় থাকি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আহ, সুহান!!
তোমার খুরে নমস্কার!! খুব আশা করেছিলাম তোমার একটা লেখার---এই মাহেন্দ্রক্ষনে।
একটা মাস--জমজমাট কাটুক সবার !
কদিন ধরে বড্ড আশা করেছিলাম, সচলের পাতায় বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে সুহান রিজওয়ানের একটা লেখা।
খেলাধুলার বড় আসরগুলো নিয়ে সচলে লেখটা তাঁর নিয়মিতই বলা চলে। প্রায় হতাশই হয়ে পড়েছিলাম। যাক, শেষ পর্যন্ত লেখাটা আসলো এবং খেলার পর্দা ওঠার আগ পর্যন্ত অক্সিজেনের কাজটাও করবে ধারনা করছি।
ধন্যবাদ, সুহান। খেলা শুরুর আগের উত্তেজনায় রসদ জোগানোর জন্য।
মরি! মরি! কেবল সুহানই ফুটবল নিয়ে লিখতে পারেন আর কেউ পারে না নাকি!
আমি লিখলে সুহান তো মাঠের বাইরে চলে যাবেন তাই লিখি না
থাক ছেলেটা কিছু করে খাচ্ছে খামোখাই তার বাড়াভাতে ছাই ফেলা কেনু
ইয়ে...আজকের খেলায় ইংল্যাণ্ড না ইতালি র্যা? কে জিতবে বলেন দেখি?
মুগ্ধ, মুগ্ধ আর মুগ্ধ হলাম। আশায় রইলাম আরেকটি লেখার।
এ এস এম আশিকুর রহমান অমিত।
নতুন মন্তব্য করুন