আমাদের ধরিত্রীপুর গ্রামে মক্তব আছে এক জোড়া, স্কুল তিনটা-তার মাঝে একটা গার্লস। হাইস্কুল থাকলেও কলেজ নাই। পাশের থানা সোহাগগঞ্জের ডিগ্রী কলেজ আমাদের হাট থেকে তেরো মাইল, ছয় সাতটা পোলাপান শেয়ারের সিএনজিতে করে কলেজ যায় কেবল। আমরা ধরিত্রীপুরের লোকজন চাষবাস করি, মিডলইস্টেও গ্রামের লোক আছে দুই কুড়ির মতন। গঞ্জের হাটে আখের কলের ব্যবসা আছে কয়েকজনের, গোটা কতক তাঁত আছে। আর আছে মশা, দৈত্যের মতন গলার স্বর তাদের, গান গেয়ে গেয়ে তারা আমাদের ক্লান্ত করে। এককভাবে হাস্যকর রকমের ক্ষুদ্র তারা, কিন্তু তাদের দলগত প্রচেষ্টা মোটেই হালকা করে দেখা যায় না। মগজে একবার ঢুকতে পারলেই রীতিমতো পেয়ে বসে তাদের গুনগুনানো সুর। কষ্ট হয়, বড় কষ্ট হয় তখন। অক্ষমতার কষ্ট, ঘুম না হবার কষ্ট, চিন্তা বয়ে বেড়ানোর কষ্ট।
ধরিত্রীপুরে তাই আজকাল রাত আসে আতঙ্কের বাতাস নিয়ে। মশার প্রকোপে ঘুমানো যাবে না রাতে, এই আশঙ্কায় সন্ধ্যা হতে না হতে দোকানপাট বন্ধ, গৃহিণীরা গবাক্ষ আটকায়, নির্বাচনের পরে চেয়ারম্যানের বানায়ে দেওয়া জারুলতলার বাঁধানো পাথুরে বেঞ্চে আড্ডার বদলে কর্তাদের থাকতে হয় ঘরে। হাটের মুখে সেলিমের চায়ের দোকানে আগে মেট্রিক পাশ আর ডিগ্রী ফেল তরুণেরা ক্যারমবোর্ডের গুটিতে ভর দিয়ে সন্ধ্যা পার করতো, আজকাল তাদের অনেকেই সস্তায় কেনা রঙিন চাইনিজ টিভিগুলায় চোখ রাখে সন্ধ্যার পর- খাবার ডাক আসার আগ পর্যন্ত মুম্বাই আর কলকাতার নায়িকাদের নাচ দেখে ভেতরে ভেতরে তারা বাতাসের বিপরীতে শিক ভেঙে যাওয়া ছাতার মতোই তড়পাতে থাকে। এদের পাশাপাশি সন্ধ্যার পরে পড়তে বসার চিরকালীন দলটাও ধরিত্রীপুরে আছে, কিন্তু বরাবরের মতোই তারা সংখ্যায় কম।
ঘরের বাইরে বেরুতে হলে এই গরমেও শীতের মতো সর্বাঙ্গ ঢাকা ছাড়া উপায় নাই। মজিদ মাস্টারের বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় অঙ্ক কষে বের হওয়া কিশোরের দল, সদ্য বিবাহিত মাকসুদের বাড়ি থেকে বৌ দেখে ফিরে যাওয়া হাস্যজ্বল কিশোরীরা, পাঁচদিন শহরের মেসে কাটিয়ে বিষ্যুদবার সন্ধ্যার ট্রেন ধরে রাতে গ্রামে ফেরা চাকুরেরা সেই পন্থা মেনেই বাড়ি ফেরে। বাড়ির ঢোকার মুখে হাট করে দরজা খোলা তাদের কপালে থাকে না, এতটুকু ফাঁক পেলেই যে ঘরে ঢুকে পড়ে প্যানপ্যানানি মশার দল!
গঞ্জের হাটে তাই মশারীর ব্যবসা জমজমাট সব চাইতে আজকাল। এতোদিন হাটের মুখে আক্কাস বেডিং দোকানটায় সহজে পা পড়তো না মানুষের, ইদানীং কিন্তু নিয়ম করে যেন গোটা ধরিত্রীপুরই হানা দিচ্ছে আক্কাসের দোকানে। রাতে দিনে নিরাপদ ঘুমের সন্ধানে থাকা থাকা গ্রামবাসী মশারী কেনে। একবিংশ শতাব্দী আজকাল, সুগন্ধী ও কটুগন্ধী মশার কয়েল কেনা থেকেও বিরত থাকে না কেউ। বিক্রি বাড়ে অ্যারোসল আর অন্যান্য মশকনাশকের। কাজের পরে আমরা ঘুমাতে চাই কেবল, কাজের পরে মগজে কোনো মশাকে আশ্রয় দিতে চাই না আমরা। আমরা তাই ঘুম কিনতে পারি না বলে মশারী-কয়েল আর অ্যারোসল কিনতে থাকি মুহুর্মুহু।
আর এভাবেই আমাদের সমস্যার সমাধান হয়। অন্ততঃ প্রাথমিক ভাবে, আমাদের তাই মনে হয়। কারণ সন্ধ্যার পর মশারী ঢাকা অন্তঃপুরে উৎপাত তো অর্ধেকের চেয়েও কমে যায় মশাদের। গৃহিণীরা রান্নাঘরে প্রচুর কয়েল জ্বালান, হেঁশেল আর কয়েলের ধোঁয়ায় দু চোখে কিছু জল তাদের গড়ায় বটে, কিন্তু মশক সেনাদলের সঙ্গীত আর কামড়ের চাইতে সেটাকে তাদের সঙ্গত কারণেই বড় তুচ্ছ বলে মনে হয়। ঘরের কিশোরী তরুণীরা এদিকে হিন্দী অথবা কলকাতার অথবা স্বদেশী সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের ওপর তাদের একাধিপত্য ফিরে পায়, কারণ চারিদিকে ডবলজাল দেয়া মশারী টানানো হয়েছে হাটের মুখে সেলিমের দোকানেও, সেখানে ক্যারামের গুটি আবারো যুবকদের সন্ধ্যার উপর ফিরে পেয়েছে পূর্ণ নিয়ন্ত্রন। তদুপরি সেলিমের পুরির দোকানটায় চাইলেই একেকদিন এক এক বড়ভাই পালা করে চা সিঙ্গারা খাওয়ায় পোলাপানদের। দোকানের বাইরে কয়েল জ্বলে ধিকিধিকি, আর দোকানের ভেতরে লাল গুটি পকেটে ফেলা উল্লসিত খেলোয়াড়েরা ভুলে যায় গত কয়েকটি মাসে কীরুপে মশাদের আগমনে ভারী আর চিন্তাশীল হয়ে উঠেছিলো তাদের মস্তিষ্ক। কিন্তু মশা যেহেতু এখন নাই, অতএব চিন্তার আর কি প্রয়োজন আছে বলো।
মশার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ধরিত্রীপুরের চিরকালীন নিরাপদ আর নিস্তরঙ্গ জীবনে ফিরে যেতে পেরে আমাদের বড় ভালো লাগে।
কিন্তু একদিন হাটের মুখে সেলিমের দোকানে- না, সন্ধ্যায় নয়- বরং কাঠফাটা রোদের জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দুপুর, হাটের সামনে ইউনিয়ন পরিষদের বানানো পিচের রাস্তায় খড় শুকানো হচ্ছে বলে যখন চায়ের দোকানের ছায়ায় বসেও সোনালী বিভ্রম হয় চোখে, তখন শুক্রবার ছুটির দিন বলে আমাদের এগিয়ে আসা জমায়েতে নতুন করে যেন ছায়া ফেলে মশারা। ফ্রিজের আরসি-কোলা খেতে খেতে তৈয়ব আমাদের বলে যে মশা জিনিসটা আসলে একেবারে খারাপ না। বরং আগের মশারী ছাড়া দিনগুলাই তার ইদানীং ভালো বলে মনে হয়।
সহসা এ এক রহস্য হয়ে যায় আমাদের কাছে। মশারীহীন কালের সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভালো বলে মনে হয় তৈয়বের কাছে, আমরা বুঝি উঠি না তা। আমরা বরং জিজ্ঞেস করে উঠি, যে তৈয়বের বক্তব্যটা কী।
আরসি-কোলার প্লাস্টিকের বোতলের নীচের দিকটায় লালচে কালো তরল তলানিটির দিকে তাকিয়ে তৈয়ব বলে, ‘আমার কিন্তু মনে লাগে যে আগের মশারী ছাড়া দিনগুলানই ভালা আছিলো। এই যেমুন, তুমরা মনে করো আগে মশারা ক্যামনে ফাল পারতো মাথার চাইরপাশে। একবার মাথায় ঢুইকা পরতে পারলে ত হইছিলোই। তহন তো আর চেষ্টা কইরাও ঘুম আইতো না চোক্ষে।... আর অখন হইছে জ্বালা, কিচ্ছু চিন্তা করনের টাইম পাই না, কিছু পড়নের, কিছু ভাবনের উপায় নাই। সন্ধ্যা হইতে না হইতেই খালি ঘুম আইসা যায় চোক্ষে। এইভাবে ঘুমায়া জীবনের দামী সময় নষ্ট করন ঠিক না আসলে।’
হাটের মুখের সেলিমের দোকানে বড় অদ্ভুত হয়ে আমাদের কাছে আসে এই কথা। শালার ব্যাটা কয় কী! ঘুম আসলে ঘুমানো ভালো, সারাদিন কাজ করে এসে ঘুমানো আরো মধুর, চিন্তাবিহীন সন্ধ্যা অথবা রাত অথবা দিন কেবল সিনেমা নায়িকার স্তন না হলে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার খেলা দেখে পার করে দেয়ার চাইতে স্ফূর্তির তো আর কিছু নাই- এসবই তো ধ্রুব সত্য বলে জেনে এসেছি আমরা শিশুকাল থেকে। সেই ধারণা আরো পোক্ত হয়েছে মার্বেল খেলা কৈশোরে, ভেতরে সিমেন্ট বসানো ভিত্তিতে বসে গেছে গঞ্জের বড় ভাইদের মুখে শুনে। কিন্তু এই শেষ দুপুরের সোনালি খড় শুকানো বিভ্রম মুহুর্তে তৈয়ব আমাদের বেশ বিভ্রান্ত করে দেয়। মশারা মগজে ঢুকলে কোনদিক দিয়ে ভালো হয়, তা আমাদের বোধের গম্য হয় না কিছুতেই।
সেই দুপুরে আমরা তৈয়বকে একটি বিরলতম প্রজতির গর্দভ বলে আখ্যা দিয়ে প্রসঙ্গের পরিবর্তন ঘটালেও, অল্প কদিন পর থেকেই আমাদের কাছে আরো কিছু খবর এসে পৌঁছায়। কানে আসে যে উত্তরপাড়ার জুয়েল, দামপাড়ার উত্তম, কাঠপট্টির শফিক; এবং আরো কয়েকজন পরিচিত বা স্বল্প পরিচিত বা কেবল নামে পরিচিতেরাও তৌফিকের মতবাদে বিশ্বাস রাখে। তারা নাকি বলে যে মশারীবিহীন সময়ই অপেক্ষাকৃত ভালো ছিলো তাদের কাছে। তখন চিন্তা করা যাইতো, রাত জেগে কাজ করা যাইতো, গঞ্জের স্কুলে পড়ানো বই পুস্তকে যা যা ভুল আছে- নতুন সিলেবাসের সাথে যা যা মিলে না- একবিংশ শতাব্দী আজকাল, ইন্টারনেট থেকে সেই ভুলগুলা বাইর করে সবুজকালিতে আন্ডারলাইন করা যাইতো। ইচ্ছামতন রাত জেগে এখন মশারীর সেই বদ্ধ আবরণে ফের আটকা পড়তে তাদের আর ইচ্ছা করে না। তাদের দুয়েকজন মশারী ব্যবহার করতেও অস্বীকৃতি জানায়।
আমরা কিছুতেই বুঝতে পারি না যে যখন কাজের প্রয়োজন নাই, তখন এই পোলাগুলা আরো কাজ করতে চায় কেনো। বুঝি না যখন ঘুমের প্রয়োজন, তখন রাত জেগে হুদাই স্কুলের সিলেবাসের জন্যে সবুজ কালি দিয়া আন্ডারলাইন করতে হবে কেনো- স্কুলে স্যার ম্যাডাম নাই? তারা কি বইসা বইসা ঘাস কাটে?
আমাদের করোটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এই ভাবনায় যে যখন আহার, বিশ্রাম আর বিছানা হাতছানি দিয়ে ডাকে- তখন কীসের টানে মানুষ দ্বারস্থ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় চিন্তার?
জুয়েল, শফিক আর উত্তমেরা- সাথে সাথে আমাদের আড্ডার তৈয়ব- এইভাবে এক ভিন্ন মাত্রায় আমাদের ধরিত্রীপুরের সামনে চলে এলেও হাটের মুখের সেলিমের দোকানের চা-পুরির আড্ডা ছাড়া গঞ্জের মূল জীবনযাত্রায় কোথাও তারা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই বলে যে সংকট দেখা দেয় কেবল পারষ্পরিক সংশয়ের উপস্থিতিতেই। কাজেই যখন উত্তরপাড়া, দামপাড়া আর কাঠপট্টির লোকজন ধীরে ধীরে শোরগোল তুলে যে জুয়েল, উত্তম আর শফিকের জন্যে তাদের এলাকায় মশার উপদ্রব পুনরায় বেড়ে গেছে; তখনই প্রথমবারের মতো গ্রামের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ওই বিরল স্বভাব যুবকেরা একটি প্রভাবক হিসেবে উপস্থিত হয়।
জানা যায়, জুয়েল অথবা শফিক অথবা উত্তমের বাড়িতে ঢুকলেই- হতে পারে সেই প্রবেশ কোনো কাজ বা কোনো অকারণ আলাপচারিতা কেন্দ্র করে- আর রক্ষা হয় না এলাকাবাসীর। ঝাঁকে ঝাঁকে মশার পাল নাক মুখ কানের গহবরের মাঝ দিয়ে ঢুকে যায় সেইসব আগত মেহমানের মস্তিষ্কে। সারা রাত নির্ঘুম কষ্টে কাটানো ছাড়া তখন অতিথির আর কিছু করবার থাকে না। এলাকার মানুষ প্রথমে এই নতুন সমস্যাটিকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করে, কিন্তু ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে বেশ কয়েকবার। উত্তম, না হলে শফিক, না হলে জুয়েল, না হলে তাদের মতোই অন্য কারো বাড়িতে দাওয়াত পেয়ে অথবা স্বতস্ফূর্ত প্রবেশ করলেই করোটিতে মশা ঢুকে যায় অতিথির। তখন তাদের মাথার যন্ত্রণা নাকি অসীম হয়ে পড়ে। বস্তুত, এমনটাই তো হবার, আহার-বিশ্রাম আর সঙ্গমের নৈশ জীবনে মাথায় অনবরত মশার প্যানপ্যানানি সহ্য করবে কেনো মানুষ?
অতএব এলাকার মানুষজন এরকম বেশ কিছু ঘটনার পরে আর বিষয়টিকে যুবকগণের খামখেয়ালী বলে লঘু করার প্রয়াস পায় না। তারা বরং বেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। গ্রামবাসী বলাবলি করে, ‘শুয়োরের বাচ্চারা, তোরা নিজেরা মশার কামড় খাইলে খা, কিন্তু আমগোরে কামড় খাওয়াস ক্যা রে?’
হাটের মুখে মশারীতে দরজা-জানালা ঢাকা সেলিমের চায়ের দোকানে পুরি খেতে খেতে আমরা তাই অপেক্ষা করি যে কখন আমাদের তৈয়ব, এবং তারই মতো অন্যান্য মশা প্রতিরোধ বিরোধী মানুষেরা, মত পাল্টাবে। তদুপরি যেহেতু আমাদের আশিকই এক সন্ধ্যায় তৈয়বের পড়ার ঘরে ঢুকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো মশায়, অশেষ কষ্ট যেহেতু আশিককে সহ্য করতে হয়েছে দিন তিনেক ধরে, অতএব আমাদের ধারণা হয় যে এই বিষয়ে তৈয়বকে চাপ প্রয়োগ করার অধিকার আমাদের রয়েছে। আর এটাও তো আমাদের জ্ঞাত যে সমষ্টির মতের মুখে একার প্রতিবাদ সমাজে টেকে না কখনো।
কিন্তু আমাদের হতাশ হতে হয়। গ্রামবাসীর কটুবাক্য আমাদের মুখ থেকে বারংবার কানে ঢুকবার পরেও ক্যারমের লাল গুটি পকেটে ফেলবার সময় তৈয়ব শক্ত মুখে বলে, ‘তুমাগোর লাইগা আমি মশারী টানামু ক্যা? তুমরা নিজেরা মশারী কিন্যা তুমাগো ঘরে লাগায়া রাখো, আমার বাড়িত তুমাগোরে আসতে কইছে কেডা?’
আশিক তখন তার পুরানো ভোগান্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৈয়বকে ‘ঘাড়ত্যাড়া’ বলে অভিহিত করলে সেলিমের দোকানের ঠাণ্ডা পুরিও যেন উত্তেজনার আভাস পায়। শুরু হয় বিতণ্ডা। এক পর্যায়ে বিশেষ জোরালো গলায় তৈয়ব যখন বলে বসে, ‘আমার কথা ফাইনাল। আমি মশারী টানামু না। রাত জাগলে আমার কামের সুবিধা হয়, মশা আমার দরকার।’- তখন আমরা আসলে ভেতরে ভেতরে দমে যাই তার গলায় দৃঢ়তার আভাস লক্ষ করে। আমাদের মনে হয়, তৈয়ব একটু বেশিই করলো যেন। মনে হয় আমাদের, এই তৈয়ব-উত্তম-শফিক-জুয়েলরা একটু বেশিই করে ফেলছে এবার।
একান্ত নিজস্ব আড্ডার গণ্ডীতেই এভাবে জনৈক বিরল স্বভাব যুবাকে আমরা যখন সমষ্টির মত মানাতে ব্যর্থ হই, তখন এরকম অন্যান্য যুবকদের সম্পর্কেও আমাদের কৌতুহল বেড়ে যায় অনেকখানি। আমাদের মনে হয়, তাদের বক্তব্যও সরাসরি শোনা দরকার। আমরা ঠিক করি ক্রমান্বয়ে জুয়েল, উত্তম, শফিক আর এরকম যারা যারা আছে, আমরা তাদের বাড়ি যাবো। কিন্তু মাথায় মশা দ্বারা আক্রান্ত হবার চিন্তাটাও আমাদের মাথায় হানা দেয় একইসাথে, তাই সন্ধ্যার বদলে বেলা থাকতেই একদিন শুক্রবার দুপুরের নামাযের পরে আমরা সদলবলে বেরিয়ে পড়ি।
হাঁটাপথে উত্তরপাড়াই যাত্রাপথে সবার আগে উঠে আসে বলে আমরা প্রথমে জুয়েলের বাড়ির আঙিনায় ঢুকি। ঘর থেকে আমাদের ডাক শুনে জুয়েল বেরিয়ে আসলে তাকে অনুরোধ করা হয় মশা প্রতিরোধে আমাদের সাহায্য করবার জন্যে। অনুরোধকারীদের বক্তব্য শোনার পরে জবাবে জুয়েল লাজুক হেসে জানায় যে মশক বিরোধী প্রচারণায় আমাদের সাথে হাত দিতে তার ইচ্ছা করে না। দিনে সোহাগগঞ্জের বাজারে ক্যাশ সামলে রাতে জাগা তার জন্যে বেশ কঠিন নাকি। সে বলে, যে রাত জেগে বই পড়তে আর সিনেমা দেখতে তার ভালো লাগে, মশারা তার তাই উপকারেই আসে। এরকম উপকারী একটি প্রাণীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠাটা তার জন্যে উচিৎ কি না, জুয়েল আমাদের উদ্দেশ্যে সেই প্রশ্ন রাখে বরং। তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমরা বদলে কী এমন বই সে পড়ে আর কী এমন সিনেমা সে দেখে, এই প্রশ্ন করি জুয়েলের মুখের ওপর। উত্তরে কী কী সব লেখক আর চিত্র পরিচালকের নাম যেন আওড়ে যায় জুয়েল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তাদের মাঝে বাদবাকি কাউকে আমরা চিনতে পারি না কিছুতেই। আমাদের আসাদের দিলচসপি ছিলো গল্পের বই পড়ায়- আজকাল শহরতলীর এক ব্যাংকে পাঁচদিন কাজ করে বিষ্যুদবার সন্ধ্যায় সে গ্রামে ফেরে বলে পড়ার অবসর হয় না তার, সেই আসাদ পর্যন্ত জুয়েলের আওড়ানো কোনো লেখকের নাম চিনতে পারে না। অতঃপর আরো কিছু আলাপচারিতার পরে যখন আমরা ব্যর্থ হই জুয়েলকে আমাদের উদ্দেশ্যের যথার্থতা বোঝাতে, তখন আমাদের আসলে কেমন বিরক্ত লাগে তার প্রতি।
মশারী টানানোর অনুরোধ নিয়ে এরপরে আমরা যাই দামপাড়া, উত্তমের কাছে। বাইরের ঘরে বসে স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি গায় উত্তমকে আমরা বলি যে এলাকার লোকের দাবি, মশাদের ঘরে ঢুকতে না দেওয়া হোক আর মশারী টানানো হোক। আর এটা তো সত্যি যে মশা বাড়লে মশারী টানানোটাই সাধারণ নিয়ম। মাঝের বহু বছর ধরিত্রীপুরে মশার উপদ্রপ সহনীয় পর্যায়ে ছিলো, আমাদের তাই মশারী নতুন করে টানানোর দরকার পড়ে নাই। এর আগে তো সকলেই ঠিক ঠিক মশারী ব্যবহার করতো। সমবেতের দীর্ঘ এই বক্তব্য শুনে উত্তম কিছু চিন্তা করে বলে বোধ হয়। অতঃপর সে বলে যে, কোনোকিছু আগে হয়ে আসছে বলেই তা ঠিক হবে এর কোনো মানে নাই। টিভিতে দেখা স্বাস্থ্যআপার মতো উদাহরণ দিয়ে উত্তম আমাদের শোনায় যে আগে তো লোকে কলেরা বসন্তে লাখে লাখে মারা যাইতো, আজকাল মরে না ক্যান? ... কারণ আজকাল লোকজনে ইঞ্জেকশন নেয়। উত্তম বোদ্ধার ধরনে আমাদের মত দেয় যে, একবিংশ শতাব্দীতে মশাকে এতোটা ভয় পাওয়া ঠিক না। যেমনটা সেলিমের দোকানের বহু পুরাতন ক্যারামবোর্ডে গুটি ফেলার ব্যর্থতা যেভাবে আমাদের চেপে ধরে প্রায় সন্ধ্যাতেই, এ মুহুর্তে উত্তমের উত্তর শুনে আমরা তেমনই এক অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি সকলে। বোঝা যায়, আমাদের বিবেচক অনুরোধে কোনো ফলই হবে না এখানেও। কিছু সময়ের পর মাথা নিচু করে উত্তমের বাড়ি থেকে তাই বেরিয়ে আসতে দেখা যায় জনতার ছোট জমায়েতটিকে।
... এবং, কাকতাল বলে মনে হয় না আমাদের কারোই, বাড়িকে মশকবিহীন করবার অনুরোধ করে আমরা ব্যর্থ হই কাঠপট্টির শফিকের বাড়িতেও। আমাদের অনুরোধ শোনার পরে মোটা চশমার আড়াল থেকে চোখ গরম করে শফিক বলে যে, স্কুলে স্যার ম্যাডামেরা বাচ্চাদের সব ভুল শিখাইতেছে। নতুন সিলেবাসে যে দুই আর দুই যোগ করলে চার হয়, আমাদের গ্রামের স্কুলগুলার দুই দু’গুণে পাঁচের পুরাতন নামতার সাথে নাকি একদমই যায় না সেই পড়াশোনা। শফিকের কাছ থেকে জানা যায়, ইচ্ছা থাকলে আজকাল পড়ালেখার সবকিছু ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। অতএব রাত জেগে জেগে সে বাচ্চাদের অঙ্ক বইগুলার ভুল বের করে, সবুজ কালি দিয়ে দাগিয়ে রাখে যা কিছু পুরাতন তত্ত্বকথা। শফিক ভারী গলায় আমাদের বলে, সে চায় না বাচ্চারা স্কুলে ভুল শিখুক, বরঞ্চ তার চাহিদা ম্যাট্রিক ইন্টারে স্ট্যান্ড করে আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরা শহরে পড়তে যাক। আমরা প্রায় বিকেল হয়ে আসা আলোয়, একটু একটু ফুরিয়ে আসা সূর্যে আমাদের বহুক্ষণ হাঁটতে থাকা পায়ের ক্লান্তি নিয়ে শফিকের সেই স্বপ্নের কথা শুনি। মোটা চশমার এ যুবক রাত জাগা অনলস চোখ নিয়ে আমাদের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে, আমরা শুনি, মশারা না থাকলে কীভাবে শীত আর গরমের রুক্ষ রাতগুলোতে কাজ করে যেতে পারবে মানুষ?
...কাজেই সেই সন্ধ্যায় সমস্ত জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পরিচিত ধারণার বাইরের অংশ থেকে আমাদের কাছে বার্তা আসে, ঠাণ্ডা পুরি চিবোনোর ফাঁকে ফাঁকে, সমষ্টির বাইরেও নিজের মতো করে মতামত দিতে আর বাচ্চাদের মতো অর্থহীন কাজ করতে সক্ষম কিছু কিছু লোক। কিন্তু হাটের মুখে সেলিমের দোকান, তাতে মিইয়ে যাওয়া পুরি আর আধভাঙ্গা হাতলের চায়ের কাপ আর ছোট চায়ের গ্লাসের মতো জাগতিক পরিবেশ বেষ্টিত হয়েও সেই সত্য আবিষ্কারে আনন্দিত হয় না আমাদের জমায়েত, কেবল বোধ হয়- কাজটা ঠিক করেনি আমাদের তৈয়ব। ঠিক করেনি জুয়েল, শফিক, উত্তম। আর এও মিথ্যা নয় যে তাদের বিরল অপরাধের কারণে মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে ধরিত্রীপুরের যে কেউই। আড্ডার দুয়েকজন উত্তপ্ত গলায় বলে যে, এলাকায় যদি এইবার কারো ম্যালেরিয়া হয়, তাহলে ওই শালাদের ধরে শক্ত মাইর দেওয়া উচিৎ।
আর এই জাগতিক ক্রোধে আক্রান্ত হয়ে জমায়েত ঘরে ফিরে যাবার আরো কিছুদিন পেরুলে, আমরা লক্ষ করি, যে আমাদের সেলিমের দোকানের আড্ডার ক্রোধ যেন ক্রমশ সঞ্চারিত হয়ে ওঠে গোটা ধরিত্রীপুরে। চাউর হয়ে গেছে ততদিনে, যে তৈয়ব-শফিক-উত্তম-জুয়েলেরা মশারী টানায় না, অ্যারোসল দেয় না, কয়েল জ্বালায় না তাদের ঘরে। তবু সে এক আশ্চর্য পরিহাস, এলাকাবাসী যেন ক্রমশ উৎসুক হয়ে যায় ফি দিন, অনাহুত হয়ে অকারণে ওসব যুবকদের অন্তঃপুরে ঢুকে পড়ার প্রবল ইচ্ছা তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় যেন ভূতের মতো- যেন তারা নিজেরাই চায় যে মশা তাদের কামড় দিক। তারপর সেই অনাহুত অকারণ অতিথি এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মশাপ্রেমী যুবকদের প্রতি, আগ বাড়িয়ে মশার কামড় খাওয়াটা যেন এক অদ্ভুত উভমুখী খেলা তাদের জন্যে।
জনরোষের গতি কখনো কখনো ধরিত্রীপুর গ্রামের পেছনের বহতা নামের নদীর চাইতেও বেশি বোধ হয়। যুবকদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ দেয়ার হুমকি তাই দেয়া হয় প্রতিনিয়ত। হাটের মুখের জটলায় শেষ বিকেলে, নিমদীঘির ঘাটে যখন দুপুরে স্নানে নামে এলাকার ছেলে বুড়ো; সেখানে কান পাতলে ঠিক শোনা যায় গুঞ্জন আর অসন্তোষ। গ্রামের লোকেদের বিশ্বাস পোক্ত হতে থাকে দিনের পর দিন, এ নিখাদ সত্য যে শয়তানের সাক্ষাৎ চ্যালা না হলে এভাবে রাত জেগে মশার পূজা দেয়া সম্ভব না। এই ব্যাখ্যা অনুসরণে যুবকদের অতীত হাতড়ে যোগসূত্র বেরিয়ে যায় যে শফিক শালা তো কম্যুনিষ্ট ছিলো এক কালে, আর উত্তম তো এখনো মালাউন।
সেলিমের দোকান যেটা হাটের মুখে, তাতে বসে ক্যারমের গুটির সাথে মনে মনে এই যুবকদেরও আমরা আঘাত করি ক্রমাগত। শফিককে, জুয়েলকে, উত্তমকে। কিন্তু, সত্যি কথাই বলি, তৈয়বের প্রতি আমাদের জমায়েত এই ক্ষোভ ধারণ করে না একটুও। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে আমাদের তৈয়বও সেই একই অপরাধ করছে, যাতে অপরাধী শফিক জুয়েল উত্তমেরা; কিন্তু মানুষকে না জানলে বন্ধুত্বের আর দাম কী! দীর্ঘদিন ধরে সেই দাম চুকিয়ে এসে আমরা জানি যে আড্ডার তৈয়ব একেবারেই সাধারণ দুপেয়ে মানুষই বটে, অন্যান্য আলোচ্যদের মতো মশার বেশে থাকা শয়তানের পূজা সে দেয় না কিছুতেই।
... এসব দ্রোহ আর অসন্তোষ নিয়েই ধরিত্রীপুরে এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিলো যেমনটা যায়, কিন্তু ব্যস্ততা মানুষকে প্রায়শই ভুলিয়ে দেয় যে পূজার অর্ঘ্যরুপে জীবনও কিছু কিছু নিয়ে যায় আমাদের থেকে। কাজেই ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়া শফিক আমাদের অসন্তোষের জীবনে হঠাৎ নিয়ে আসে আলোড়ন। বহু বহু দিন পরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে, না কি শফিকের মৃতদেহটি আচমকা আবিষ্কার হয়েছে বলে এই আলোড়ন ওঠে- সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু বিচলিত ভাব কাটিয়ে উঠে দুঃখিত হবার পর্যায়ে আসার অবকাশ আমাদের হয়ে ওঠে না, কারণ সমষ্টির ধরিত্রীপুর স্বস্তির একটা হাঁপ ছেড়ে বলে- মরছে ভালা হইছে। ঘরের ভিত্রে এমনে মশার চাষ করবো আর ম্যালেরিয়া হইবো না? ইনসাফ নাই দুনিয়ায়?
হাটের মুখে আমরা জমায়েতে পুরির সাথে আরসি-কোলা খাই বেশি গরম পড়লে। আর ভাবি, ধরিত্রীপুরের বাসিন্দারা যথার্থ বলছে। হেলাফেলার দায় মৃত্যু মানবে কেনো? ঘরে মশা না ঢুকালে কি শফিক এভাবে মরতো ম্যালেরিয়া হয়ে? ... আড্ডায় আমরা নিশ্চিত হই, শফিক অকালে নিজের মৃত্যু নিজে এনেছে ডেকে।
অথচ আরো কিছু দিন পেরোলে, আমাদের আড্ডাকে স্থাণু করে দিয়ে ম্যালেরিয়া ছোবল দেয় আবার। তৈয়ব মারা যায় এবার। সমষ্টির ধরিত্রীপুর দুঃখিত হয় না বিচলিত হবার সময় শেষে, তারা আবারো স্বস্তির হাঁপ ছাড়ে। বোধ হয়, এ মৃত্যু যেন প্রত্যাশিতই ছিলো তাদের কাছে। তারা যেন নিশ্চিত জানে যে মশক নিধন না করলে অংকুরেই-ম্যালেরিয়ায় মরণ নিশ্চিত। গ্রামের মাঝে হতবুদ্ধি হয়ে থাকি কেবল আমরা। ক্যারামের গুটির সন্ধ্যা ফুরায় একের পর এক, আমরা চা খাই কাপের পর কাপ, পুরিতে হাত ছোঁয়াই না আর অনুযোগ করি- জীবনের কাছে- কেনো তোরই ম্যালেরিয়ার মরণ হলো রে তৈয়ব! বন্ধু আমার, কেনো তুই মশা নিয়ে মেতে উঠলি এতো!
আর ওদিকে ম্যালেরিয়া, মশার মতোই সর্বগামী সে, ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে তার টোল নিতে। তৈয়বের পরে উত্তম, উত্তমের পরে জুয়েল। ম্যালেরিয়ার মহামারী আঘাত হানে প্রত্যেককেই, যারা অস্বীকার করেছিলো মশার অবাধ বিচরণে সন্তরণে বাঁধা দিতে। সমষ্টির ধরিত্রীপুরে ক্রমশ বিস্তৃত হতে থাকে প্রশান্তি, ভালোলাগা। কারো মৃত্যুতে খুশি হয়ে ওঠা- আমরা সভ্য সমাজ- আমাদের সাজে না, কিন্তু এতো অস্বীকারের উপায় নেই, একরকম প্রতিষ্ঠিতই এই বিশ্বাস যে, নিজের মৃত্যু এই বিরল স্বভাব যুবকেরা ডেকে এনেছে অপ্রয়োজনে, প্রায় বিলাসিতায়। দামপাড়া, উত্তরপাড়া, কাঠপট্টি- এসব এলাকার কিছু অংশ আর আমাদের আড্ডা ছেড়ে সেই ধ্বনি, সেই বিশ্বাসের ধ্বনি, সেই সত্য অথচ তিক্ত ধ্বনি বাতাসে বাতাসে ঘুরপাক খায় ধরিত্রীপুরের, বহতা নামের নদীটা বয়ে যায় সেই বিশ্বাস নিয়ে।
গণমানুষের মশকভীতি যেন এতোদিনে নাড়া দিয়ে যায় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদেও। চেয়ারম্যানের আদেশে খাকি রঙের জামা গায়ের চৌকিদার আর শহরতলীর গোটা কতক লোক এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্রামের মশক নিধন কর্মযজ্ঞে। প্রতিটি ঝোপের আড়ালে আড়ালে সশব্দে ছড়িয়ে দেয়া হয় সাদা রাসায়নিক ধোঁয়া, প্রতিটি বদ্ধ ডোবায় তেল ঢেলে দেয়া হয় হিসেব করে, প্রতিটি নালা হয় সাফ। পরের ইলেকশনেও ভোটের দাবি করে চেয়ারম্যান সাহেব হাসতে হাসতে বলেন, ‘মশার এক্কেরে গুষ্টি শুদ্ধো বিনাশ কইরা দিমু- বোঝলেন না! ...আরে মশাই যদি না থাকে, তাইলে ম্যালেরিয়ায় আর মানুষের মরণ ক্যামনে হইবে বলেন!’
আর মশা জন্মানোর প্রচণ্ড প্রতিকূল সেই পরিবেশে, সেই নিরুপদ্রব ধরিত্রীপুরে আমাদের ঘুম আসে খুব শান্তিতে। এক ঘুমে পেরিয়ে যায় আমাদের রাত।
তবু কখনো সেলিমের দোকানের ক্যারাম সন্ধ্যা শেষে, কখনো রাতের খাবারের শেষে একবিংশ শতাব্দীর বিস্ময় আবিষ্কার রঙিন টিভিতে স্বদেশী বা বিদেশী তরুণী দেখতে দেখতে, কখনো নেহাত সাদামাটা দিনের শেষে বালিশে মাথা রাখলেই আমাদের মনে পড়ে তৈয়বের কথা। মনে হয়, এ কেমন ম্যালেরিয়া তোরে টেনে নিলো রে বন্ধু- এ কেমন নিষ্ঠুর ম্যালেরিয়া।
কিন্তু সেই সর্বগামী ম্যালেরিয়ার রহস্য ভেদ করা খুব ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে আমাদের জন্যে। বালিশে মাথা রেখে মশকবিহীন নিরাপদ পরিবেশে আমাদের বরং চোখ ভারি হয়ে আসে ঘুমে। নির্বিঘ্ন ঘুমে আমাদের ধরিত্রীপুরে রাত শুরু হয়ে যায়।
মন্তব্য
ম্যালেরিয়া থেকে কতদিন আর পালিয়ে থাকা যাবে?
ঈর্ষা।
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ভালো লাগলো মশা তাড়ানোর গল্প
Jaraahzabin
উত্তম
facebook
অনেক দিন পর গল্প! ভালো হইসে।
শেষ করে মনে হলো, রূপকটা কোথায় কোথায় যেন ঠিক মিললো না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি আসলে গল্পটা এখন দেয়ার প্ল্যানে ছিলাম না। হঠাৎ সচলের জন্মদিনে মনে হলো একটা ব্লগ নামাই, তাই দিয়ে দিছি। এই গল্পে টুকটাক আরো কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে- দেখি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খালি ভ্রু কুঁচকালেই চলবে ? বইমেলা থেকে কেনা বইগুলার রিভিউ কো ??
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অ.ট.
সুহান, একটা প্রশ্ন ছিল। আপনার 'স্বাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ' রিপ্রিন্ট হচ্ছে?
এ বইটার জন্য আমার কোনো বই-ই আনানো যাচ্ছে না। কেমন কথা বলেন! প্রিন্ট শুরু হলে ধৈর্য্য ধরতে পারি।
না হলে ওটা বাদেই অন্যগুলো আনাবো। তাই উত্তরটা জরুলি। ভালু থাকুন।
স্বাক্ষী না হে! বানানটা: সাক্ষী
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এহহে! মারাত্মক ভুল রে!
ভুল কৈলেই হৈল? আন্নে আঁর অনুভূতিত আঘাত দিবেন, হেডি চৈলত ন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দেবদ্যুতি
ভালো লেগেছে অবশ্য আবার পড়তে হবে, বোধহয় কয়েকবার, পড়ে নেব
দেবদ্যুতি
ইনবক্সে বা খোমাখাতায় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
আপনিও ভালো থাকুন
ঠিকাছে সুহান
তবু আমরা ধরিত্রীপুরের বাসিন্দারা চিরকালীন নিরাপদ আর নিস্তরঙ্গ জীবনে ফিরে আসতে পারবো না। এই ঘুমও কি খুব স্থায়ী হবে? মানুষও মশকের মতো নিধন হবে। তবে কি নিশ্চিন্তপুরের ঘুম আসে চোখে?
আপনাদের লেখার জন্য অপেক্ষা করি। অপেক্ষার অবসানে প্রাপ্তিযোগের তৃপ্তিময় সমন্বয় ঘটলে মনে হয়, আমি যা লিখছি কিচ্ছুটি হচ্ছে কি? ভাল থাকুন।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
কেউ তো কারো মতো লিখতে পারে না। একদিন নিশ্চয়ই আপনার নিজস্ব ধারার কিছু গল্প আসবে সচলের পাতায়।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ
রূপক গল্প, খুব খুব খুব ভালো লাগলো। চমৎকার লেখনি।
সাদা মেঘদল
গল্পটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। তোমার সাবলীল বর্ণনা আমার সবসময়েই ভাল লাগে, কিন্তু একাধিকবার পরেও কেমন যেন একটা খটকা লেগে থাকছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
স্পর্শ ভাইরে দেয়া উত্তরটা কপি আপনের জন্যে। দেখি, সামনে এই গল্পের খটকাগুলা নিয়া কাজ করতে পারি কি না।
কাৎলাহার বিলের বাতাস দক্ষিণ মৈশুণ্ডির ভূতের গলিতে ঘুরপাক খেয়ে গেল!
আমারও মনে হয় গল্পটা নিয়ে আরো কাজ করা দরকার। কারণ, আমার হিসেবে (ক) ধরিত্রীপুর মশকমুক্ত হবার কথা না (খ) মশকমুক্ত না হলে ধরিত্রীপুরের মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারার কথা না (গ) মশক ভালোবাসে এমন যুবকরা ক্রমাগত ম্যালেরিয়ায় মারা যাবার কথা, মশক থাকুক আর না থাকুক ধরিত্রীপুরে ম্যালেরিয়া থাকবেই। এগুলো আমার চিন্তা, এগুলো বিবেচনা করার বাধ্যবাধকতা গল্পকারের নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কস্কি মমিন, এতোদিনেও ওইসব বাতাস কোঞ্চিপামুখী না হলে ক্যাম্নে কী
গল্পটা নিয়ে কাজ করবো আরো। লিখতে গিয়ে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা ভেবে বারবার হতাশ হয়েছি।
এই গল্পটি তার গদ্যশৈলীর কারুকার্যের জন্যই পাঠকের কাছ থেকে অধিক মনোযোগ দাবী করে। আমার ভুল হতে পারে কিন্তু দ্বিতীয় বারের মতো গল্পটি পড়ার করার পর মনে হল - নীড় পাতায় থাকা দুই নম্বর সেরা সন্দেশের চেতনাই এই লেখাটি ধারণ করে। সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ পাণ্ডবদার হিসেব প্রায় পুরোপুরি মিলে যাবার কথা যদিও আশঙ্কা করি মশকবিহীন ধরিত্রীপুরের সমর্থকরা ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও মশক পছন্দ করা মানুষদের ক্রমহ্রাসমান সংখ্যাই যে তাদের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার মূল কারণ তা বুঝে উঠতে পারবেনা।
অ.ট: সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। খুব শ্রদ্ধা করি এমন একজনকে বইটা উপহার দিতে চেয়েও পারিনি। শুদ্ধস্বরের ফেসবুক পেইজে দেখেছিলাম বইটা এপ্রিলের শেষ নাগাদ পুনঃপ্রকাশিত হতে পারে যদিও আমি মে এর মাঝামাঝি সময়ে খোঁজ করেও বইটি পাইনি। শেষ পর্যন্ত হয়ত আমার কপিটাই দিয়ে দিতাম কিন্তু আমার খুব কাছের এক বন্ধু বইটা পড়তে নিয়ে যাবার পর মার্ক টোয়েনের পদাঙ্ক অনুসরণ করার ফলে সেটাও করতে পারিনি। বইটা কি এখন সহজলভ্য?
আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন
বইটা প্রকাশে কিছু জটিলতা হচ্ছে। আপনি সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণের ফেসবুক পেইজে সংযুক্ত থাকতে পারেন। কোনো আপডেট থাকলে সেখানেই আগ্রহীরা সবার আগে জানতে পারবেন।
শেষ কবে সুহানের গল্প পড়ছি ভুলে গেছি! এই গল্পটার মধ্যে মশকের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর গদ্যশৈলী। আমি শিল্প টিল্প তেমন বুঝি না। কিন্তু এই গদ্যটা অন্যরকম লেগেছে। ভালো লাগা জানালাম
গল্পটা গতকালই পড়ছিলাম মোবাইল থেকে। ল্যাপিতে নেট ছিল না বলে মন্তব্য করা হয়নি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক দিন পর সুহান ভাই।
গল্পটা একটু দীর্ঘায়িত লাগলো, সাথে কিছু খটকা। মশা থাকুক বা না থাকুক ম্যালেরিয়া তো থাকার কথা, ঘাপ্টি মেরে, আশে পাশে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নাহ, গল্পের খটকাটা মশাদের চাইতেও বেশি প্যানপ্যানপৌনিক হয়ে গেছে দেখছি।
পড়ার জন্যে ধন্যবাদ
এ ভাবে সব এলাকার মশা নিধন হৌক। সুনদর হোয়েছে লেখা।
সুহান, গল্পের বর্ণনা ভালো লেগেছে।
কিন্তু সব মিলিয়ে খুব বেশি কিছু মানে বের করতে পারলামনা।
লেখকের ভুল হতে পারে কিংবা পাঠকের।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
লেখকেরই ভুল, নিশ্চিত থাকুন।
নতুন মন্তব্য করুন