১০০ ডলারের তেল, আর আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যত

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: শুক্র, ০৯/১১/২০০৭ - ৭:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

small

সকালে কাজে এসে ই-মেইল খুললেই দেখি আধা ডজন রিপোর্ট বসে আছে ইন-বক্সে, এক পাতা কি দু'পাতায় বিশ্ববাজারের লেটেস্ট হাল-হকিকত। সারাদিনে আরো আধা-ডজন রিপোর্ট আসে। গত কয়েকদিন যাবত সব রিপোর্টে ঘুরে ফিরে একটা কথাই চলে আসছে - তেলের দামের বিস্ময়কর উর্ধ্বগতি।

তেলের দামের রকেট গতি
কয়েক বছর আগেও - ১৯৯৯ সালে এক ব্যারেল তেলের দাম ছিল ১৬-১৭ ডলারের মত। ৯/১১ বা ইরাক যুদ্ধ সত্ত্বেও ২০০৩ সাল অব্দি সেই দাম ৩০ ডলার পেরোয়নি - কিন্তু তারপর থেকে কি যেন পাগলামো শুরু হলো। নিম্নে এক ব্যারেল তেলের বছরশেষ মূল্য দেয়া হলো-

২০০৪ - ৩৮ ডলার
২০০৫ - ৫০ ডলার
২০০৬ - ৫৮ ডলার
২০০৭ নভেম্বর - ৯৬ ডলার (এই সপ্তাহে)

ধারনা করা হচ্ছে ইতিহাসে প্রথমবারের মত তেলের দাম ১০০ ডলার পার হয়ে যাবে, এবং সেটা এই বছরই। বিজ্ঞমহল নানাবিধ কারন দর্শান এর পিছনে - গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতির রমরমা প্রবৃদ্ধি তার অন্যতম। আমেরিকা-ইউরোপ ছাড়াও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো প্রবল গতিতে এগিয়ে গেছে - বিশেষ করে চীন ও ভারতের প্রবৃদ্ধির হার তাক লাগানোর মত।

তেল মানেই জ্বালানী। অর্থনীতির ইঞ্জিন সচল রাখতে চাইলে তেলের বিকল্প নেই। ভারত-চীন যত এগুচ্ছে, তেলের চাহিদাও তত বাড়ছে - এই দুটো দেশেই এক বিলিয়ন করে লোক থাকে, মানে মানবতার এক তৃতীয়াংশই হয় চীনা নয় ভারতীয়। তাই এদের অর্থনীতি যদি এমন বল্গাহীন বেগে ছুটে, তাহলে তেলের দামের উপর চাপ তো পড়বেই।

সরবরাহে হাজারো সমস্যা
অন্যদিকে আছে যোগান সমস্যা। মধ্যপ্রাচ্যে চলছে অনবরত টেনশন। ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সংঘাত তো অনেক পুরনো, তার উপর এসে যোগ হয়েছে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন আর ইরানের বিরুদ্ধে বুশ সরকারের নানান হুমকি। ইরাক ও ইরান দুটি দেশই বিশাল তেলের খনির উপরে বসে আছে। এবং তেলের যে আন্তর্জাতিক বাজার, সেটা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন টেনশনের প্রতি অত্যন্ত সেন্সিটিভ। একটা খারাপ খবর এলেই দড়াম করে দাম ৫-১০ ডলার বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।

আরো ফ্যাক্টর আছে। রাশিয়া আরেক তেল-সমৃদ্ধ দেশ - তার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন এককালে কেজিবির প্রধান ছিলেন, তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরেই প্রচুর রংবাজী করছেন - তার সবচেয়ে স্মরণীয় উদাহরণ দুই বছর আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ইউক্রেনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে তার অর্থনীতি পঙ্গু করে দেওয়ার প্রচেষ্টা। পুতিন-কে তেলের বাজার বাঘের মত ভয় পায় - ভদ্রলোক এরপরে যে কি বলবেন বা করবেন, কারো কোন আইডিয়া নেই।

আবার দুনিয়া জুড়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তেলের খনির প্রোডাকশনও কমে আসতে শুরু করেছে - সেটা মেক্সিকো থেকে শুরু করে ইউরোপের অদূরে নর্থ সী-র (North Sea) তেলের খনিতে পরিলক্ষিত হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে সৌদি আরবের তেলের প্রোডাকশনও এখন নিম্নগামী - কিন্তু সৌদি সরকার সে তথ্য প্রাণপণে চাপা দিয়ে রাখছে। এদিকে উত্তর গোলার্ধে শীত চলে এসেছে - জ্বালানী তেলের চাহিদা ডিসেম্বর-জানুয়ারীতেই সবচেয়ে বেশী।

সব কিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে যেই সময়ে তেলের চাহিদাটা বাড়ন্ত, ঠিক সেই সময়েই তেলের যোগান নিয়ে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তেলের দাম ১০০ ডলারের রেকর্ড ভঙ্গ করবে, সেটা মোটামুটি অনিবার্য।

তেলের দামের পাশাপাশি ন্যাচারাল গ্যাসের দামও বাড়তির দিকে। বাংলাদেশ বেশ ভালো ন্যাচারাল গ্যাস রিজার্ভ-এর উপর বসে আছে, এটা আমাদের জন্যে সুসংবাদ। কিন্তু তেলটা আমাদের আন্তর্জাতিক বাজার থেকেই কিনতে হয়।

বাংলাদেশের কি হবে?
কথা হচ্ছে তেলের দাম যদি পার্মানেন্ট একটা উঁচু স্তরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে আমাদের কি হবে? এটা মোটামুটি ধরে নিয়েছেন অনেকেই যে ৫০ ডলার কেনো, তেল আর কোনদিন ৭০ ডলারেও নামতে পারে কিনা সন্দেহ। এই নতুন সত্যের মোকাবেলা কিভাবে করবেন আমাদের সরকার? তাদের কি এই বিষয়ে কোন ভাবনা আছে? দ্রব্যমূল্যের যে বেপরোয়া স্ফীতি গত দুই-তিন বছরে বাংলাদেশে দেখা গিয়েছে, তার অনেকটা সরকারী মহলের অর্বাচীন অর্থনৈতিক পলিসির ফলাফল তো অবশ্যই, সাথে সাথে অনেক যোগান সমস্যাও আছে আমাদের। কিন্তু এসবের পাশাপাশি তেলের দামটা একেবারে উপেক্ষা করা যায় না।

আসলে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এখন সমগ্র বিশ্বেই ত্রাহি-ত্রাহি রব উঠেছে - সেটা চীন-ভারতে যেমন সত্য, ইউরোপ-আমেরিকাতেও ঠিক ততটাই সত্য। বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক কিভাবে মূল্যস্ফীতিকে দাবিয়ে রাখবে, সেই সমস্যা নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে - বিশেষ করে জ্বালানী আর খাবারের দাম এবছর বিশ্বব্যাপী বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে এই সমস্যাটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে। আর গরীব দেশে মূল্যস্ফীতি আরো খারাপ জিনিস - খাদ্যদ্রব্যের উর্ধ্বগতি মূলত নিম্ন আয়ের লোকের জন্যেই সবচেয়ে বেশী কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের নীতি-প্রণেতারা কি ভাবছেন? আমাদের অর্থনীতিবিদদের কি পরামর্শ? গত ১৫ বছর যাবত বাংলাদেশ ৫-৬% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সেটা চালিয়ে রাখা কি সম্ভব হবে? দেশে কর্ম সংস্থানের অভাবে প্রতি বছর রেকর্ড পরিমান লোক দেশ ত্যাগ করছে - ২০০৪/৫ সালে আড়াই লাখ লোক অভিবাসী হয়েছে, ২০০৫/৬ সালে তিন লাখ, ২০০৬/৭ সালে ইতিমধ্যে সোয়া চার লাখ! সরকারী পরিসংখ্যান মতেই গত ২১ বছরে প্রায় অর্ধকোটি বঙ্গসন্তান দেশত্যাগ করেছে। শিক্ষিত লোকের থেকে বেশী গেছে স্বল্প-শিক্ষিত স্বল্প-আয়ের লোক - মূলত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর তথা দূরপ্রাচ্যের দেশে গতর খেটে পয়সা উপার্জনের লক্ষ্যে। দেশের অর্থনীতির চাকা যদি কোন কারনে থমকে দাঁড়ায়, বা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যদি নিম্ন আয়ের লোকের নাভিশ্বাসের কারন হতে থাকে, তাহলে দিনে দিনে আরো লোক দেশত্যাগ করবে, একান্ত বেঁচে থাকার তাগিদেই।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জ্বালানীর দাম, তেল-গ্যাস থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ পানি সহ অন্যান্য রিসোর্সের জন্যে প্রতিযোগিতা (যেগুলো ভবিষ্যতে দেশে দেশে সংঘর্ষের কারন হয়ে দাঁড়াবে), এই সব দেখলে মাঝে মাঝে ভয় হয়। আজকের কথা বাদ দেই, ১৫ বা ২০ বছর পরে দেশে জীবনযাত্রার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে - সেটা কি ভালো হবে নাকি আরো মন্দের দিকে যাবে?

এই সব বিষয়ে সচলদের কি ভাবনা? আপনাদের মতামত কাম্য।

P.S. Peak oil theory এবং ভবিষ্যতের জীবনযাত্রায় তার প্রভাব - এই বিষয়ে ইন্টারনেটের সবচেয়ে জ্বালাময়ী ব্লগার মার্কিন লেখক জেম্‌স কুন্স্‌ট্‌লার (James Kunstler)। তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন এই নিয়ে, এবং প্রতি সোমবার তার ব্লগে তিনি নতুন লেখা দেন। পড়ে দেখতে পারেন - বিশেষ করে মার্কিন প্রবাসী সচল যারা তারা কুন্স্‌ট্‌লারের যুক্তিতে অনেক ভাবনার খোরাক পাবেন।

P.P.S. দৃষ্টিপাত ব্লগার জ্যোতি রহমান - তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অর্থনীতিবিদ - বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের মূল্যস্ফীতির কারন অনুসন্ধান করে চমৎকার কিছু লেখা লিখেছেন। লিংক এখানে


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

তেলের দাম বাড়ার কাহিনি শুনলাম আজ। শুধু বাড়লে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না, কিন্তু এই দামটাই স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যায়, সেটাই আসলে সমস্যা।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ঈষৎ অর্থনৈতিক মন্দা পড়বে, এমন অগ্রীম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তখন হয়তো চাহিদা কমলে তেলের দামটা একটু পড়তির দিকে যেতে পারে। কিন্তু তাও খুব বেশী নামবে তেমন আশা কেউ করছেনা।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশকে ঠান্ডা মাথায় বসে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা আর জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত বেশ খারাপ, বৈশ্বিক ঊষ্ণায়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে বাংলাদেশের, ১৭ শতাংশ ভূমি সমুদ্রগর্ভে চলে যাবার সম্ভাবনা আছে ২০২০ সালের মধ্যে। এই ভূমির বেশির ভাগই ঊর্বর, খাদ্য উতপাদনে আঘাত আসবে শুরুতেই। উদ্বাস্তু ভূমিহারাদের চাপে অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলেও আবাদী জমি কমে আসবে। এ সময়ের আগেই বাংলাদেশের গ্যাসের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়বে বহুগুণে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সাথে সুসম্পর্কের অভাবে আমদানীকৃত তেলগ্যাসও অনেক মূল্য দিয়ে কিনতে হবে। ভারি শিল্পের সম্প্রসারণ শক্তির অভাবে ব্যাহত হবে অনেকখানি।

বাংলাদেশের উচিত খুব দ্রুত নেপাল, ভূটান ও ভারতের সাথে চুক্তি স্থাপন করে নেপাল আর ভূটানের বিশাল জলশক্তিসম্পদ কাজে লাগানো। নেপাল আর ভূটানের পাহাড়ি নদীগুলি থেকে বিপুল পরিমাণে শক্তি আহরণ সম্ভব। এ ব্যাপারে উদ্যোক্তা ও ভোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ-নেপাল-ভূটান-ভারত একযোগে বিদেশী বিনিয়োগ আহ্বান করতে পারে। এছাড়া যে বিপুল সৌরশক্তি এখনও তিলেকমাত্র কাজে লাগানো হয়নি (কাপড়, গোবর, শস্য শুকানো বাদে), সেটিকেও ট্যাপ করতে হবে। বিদ্যুতের পেছনে যত কম তেলগ্যাস খরচ করা যায় ততই মঙ্গল।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কিন্তু তাদের মাথা তো কিছুতেই ঠান্ডা হইতেছে না..........



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

সেইটাই। ভবিষ্যতের কোন চিন্তা আদৌ তাগো আছে, এমন ভুল ভাবার কোন কারন নাই। মাথায় একটা দৃশ্য ভাসে - ২০২৫ সাল, দক্ষিণাঞ্চল থেকা কোটি কোটি রেফ্যুজি উত্তরের দিকে ধাবমান। কাঁটাতার আর সেনা মোতায়েন কইরাও পার্শ্ববর্তী দেশগুলা পারতাছে না মানুষের স্পিলওভার বন্যা থামাইতে। হয়তো একটু ড্রামাটিক, কিন্তু মাথায় এই দৃশ্যটা ভাসে...

হিমুর কমেন্টগুলা কার কাছে পাঠানো যায়? দেশনেত্রী, জননেত্রী, নাকি ফখরু?

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সৌরভ এর ছবি

তেলের দাম বাড়ার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, পুরো পৃথিবীতে আগামী ২০-২৫ বছরের মাঝে একটা মাৎস্যন্যায় তৈরি হবার সম্ভাবনা দেখি।
বড় মাছেরা সব্বাই তেলে ভরা ছোট মাছেদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দিগন্ত এর ছবি

আমি আপনাদের মত এতটা নেগেটিভলি ভাবছি না। আমার ধারণা আমরা নতুন টেকনলজি দিয়েই এটার মোকাবিলা করব। ৭০ ডলার যদি প্রতি ব্যারেলের দাম হয় তাহলে হাইড্রোজেন জ্বালানী আর প্রাণীজ শেল থেকে তেল প্রসেস করার চাহিদা বাড়বে। অলটারনেটিভে রিসার্চ ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে। অথবা আগেরবারের মত নতুন নতুন তেলের খনি আবিষ্কার হবে, এবার হয়ত মহাসাগরের মাঝে।

মুশকিল হল আমেরিকার নিজেরি মনে হয় তেল নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথা নেই। ওদের দেশে এতটা প্রাণীজ শেল রিজার্ভ আছে সেটা থেকে তেল বের করার ব্যাপারে ওদের মাথাব্যাথা নেই। আর কোনো দেশ থেকে টেকনলজি তত ভাল আসছেও না আজকাল। ব্রাজিলের ইথানল বা ভারতীয় জাত্রোফা ১০% চাহিদা কমাতে পারে কিন্তু এগুলো সাময়িক সমাধান মাত্র।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দিগন্ত, আপনার কথাই যেন ঠিক হয়। অল্টারনেটিভ সোর্স এখন বেশী দরকার। ক্যানাডায় টার স্যান্ড্‌স এর কথা পড়েছিলাম - সেটা কি ডেভেলপ করা হচ্ছে? ইথানলের বড় সমস্যা হচ্ছে, যে যেই গম বা ভুট্টা থেকে ইথানল তৈরী হয় সেটা আর মানুষ বা পশুর খাবার তৈরীর জন্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, এবং তাই খাদ্যদ্রব্যের আন্তর্জাতিক দামও এই কারনে উধ্বমুখী। ইথানল সংস্কৃতির বেশ সমালোচনা হয়েছে এই জন্যে। এমন কি বায়োফুয়েল-কে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলা হয়েছে সাম্প্রতিককালে!!

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের জন্যে কোনটা যুতসই সস্তা প্রযুক্তি, এবং কত তাড়াতাড়ি সেটাতে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু এই জন্যে দরকার বুদ্ধিদীপ্ত, ভবিষ্যতমুখী নেতৃত্ব এবং সেটা আমাদের কপালে ঠিক জুটছে না!!

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

টার স্যান্ডস পরিবেশের বেশ ভালোরকম ক্ষতি করে। তার ওপর এর হাইড্রোজেনেশন দরকার হয় ভারি অংশটাকে ভেঙে ফেলার জন্যে, সে জন্যে বাষ্পের দরকার, সেই বাষ্পের জন্য দরকার জ্বালানি (প্রাকৃতিক গ্যাস, যা কিনা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। কিছু ছাগু তাই এর প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়ার শক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে।), আলবার্টা প্রদেশের সারফেস ওয়াটারের তিনভাগের একভাগ লেগে যাবে এই হাইড্রোজেনেশনে।। এর পরিবহনও সহজ না, আর অনেকখানি জায়গা লাগে প্রক্রিয়াজতকরণে। আর কার্বন নিঃসরণ হয় ভয়াবহ, ২৯ শতাংশ বেশি শক্তি যোগানের বিপরীতে ৪১ শতাংশ বেশি গ্রীনহাউসগ্যাস নিঃসরণ ঘটে এতে। সব মিলিয়ে, এটা খুব একটা ভালো বুদ্ধি না, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

কানাডার তো এ ব্যাপারে মাথাব্যাথার কোনো কারণ দেখিনা, ওদের তো প্রচুর তেল রিজার্ভ। আমার মনে পড়ে, তেল রিজার্ভে ওদের স্থান বিশ্বে তৃতীয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

তেল রিজার্ভ তো খুব বেশিদিনের জন্য নেই। আগেভাগেই মাথাব্যথা হওয়া ভালো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

ইয়োরোপ তেমন একটা উদ্বিগ্ন না শক্তির ব্যাপারে। উত্তর আফ্রিকায় বিশাল এক নবায়নযোগ্যশক্তিপ্রকল্প নিয়ে প্রস্তাব পর্যায়ে কাজ চলছে। তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া আর লিবিয়ার বিশাল বায়ুশক্তি আর সৌরশক্তি, সাথে মরক্কোর ভূতাপশক্তি মিলিয়ে গোটা ইয়োরোপের বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটানো যাবে। এখন জার্মানিতে একজন প্রান্তিক ভোক্তা প্রতি কিলোওয়াটঘন্টার জন্য ২০ সেন্ট খরচ করেন, তখন ৩ সেন্টে কিনতে পারবেন বিদ্যুৎ।

ইথানল আর জাত্রোফার আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, এদের চাষ উৎসাহিত করা হলে জীববৈচিত্র্য বিপুল পরিমাণে ব্যাহত হবে, কারণ মূলত বনভূমি ও তৃণভূমি নিশ্চিহ্ন করেই এদের প্ল্যান্টেশন গড়ে উঠবে। একবোরেই মরুময়, অনাবাদী জমিতে যদি চাষ সম্ভব হতো, তাহলে ব্যাপারটা যুৎসই হতো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দিগন্ত এর ছবি

হিমুর সাথে আমি কিছুটা হলেও দ্বিমত পোষণ করি। আমার মনে হয়না অন্ততঃ আমাদের দেশে (ভারত) অদূর ভবিষ্যতে কোনোদিন বিদ্যুত দিয়ে তেলের চাহিদা মেটানো যাবে। কারণ, তেল হল মোবাইল ফুয়েল, যা গাড়ির সাথে থাকে। আমাদের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর মধ্যেই প্রচুর লোড নেয়, বিদ্যুতয়ান বাড়ালে আরো লোড নিতে পারবে।
আর বিদ্যুত আমাদের দেশে মোটামুটি শস্তা। উত্তর-পূর্বের বিদ্যুত আসবে আর এরপরে নেপাল আর ভুটানের বিদ্যুতও আছে। এর পরে আছে বায়ুশক্তি, যেটাতে আমরা এখন পৃথিবীতে চতুর্থ। কিন্তু ওই যে বললাম, তেলের অভাব বিদ্যুতে মেটে না। তাই আমাদের গাড়ি আর মোটরবাইক বিক্রির সাথে সাথে তেলের চাহিদা বাড়তেই থাকবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হিমু, দিগন্ত

বিদ্যুত চালিত গাড়ি, বাস ইত্যাদির কি রকম পোটেনশিয়াল? আমাদের বিদ্যুত জেনারেশনে সমস্যা আছে জানি, কিন্তু সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রিক গাড়ি কি টেকনিক্যালি বানানো সম্ভব?

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

ইলেকট্রিক গাড়ি ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বহুদিন যাবৎ, নানাভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, সমস্যা হচ্ছে রিফুয়েলিং নিয়ে। গাড়িগুলি চলবে মন্থরগতিতে, ঘনঘন চার্জ নিতে হবে, এগুলি হচ্ছে ঝামেলা। তেলের বিকল্প হিসেবে ফুয়েলসেল সম্ভবত চালু হবে বড় স্কেলে, যা হাইড্রোজেন পুড়িয়ে চলবে।

পাবলিক ট্র্যান্সপোর্ট সহজেই বিদ্যুতায়িত করা যায়। মনোরেল বা ট্রামের প্রবর্তনের এটাই সুবিধা।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।