কাজে বেশ ব্যস্ত যাচ্ছে। ক্রিসমাস বন্ধের আগে দিয়ে হঠাৎ কাজের চাপ এত বেড়ে যাবে, ভাবিনি। কালকে বুধবার লন্ডনে ঈদ পালন করা হবে। সাধারণত চেষ্টা করি ঈদের নামাজটা খুব সকালে কোনমতে ধরার। অফিস তো আর কামাই দেয়ার উপায় নেই। কিন্তু কালকে সেটাও সম্ভব হবে কি না, বুঝতে পারছিনা। সকাল ৯.৩০-র সময়ে জাপানী ক্লায়েন্টের সামনে থাকতে হবে। ইশিমারু সাহেব আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের কাছে আগডুম-বাগডুম প্রেজেন্টেশান দিতে হবে। (এই ব্যাটার জন্যে আজকে আমি আর আমার ওলন্দাজ সহকর্মী জাপানীদের মত 'আ-কোমড়' মাথা নোয়ানো প্র্যাক্টিস করছিলাম। 'কোনিচিওয়া, ইশিমারু-সান।' শালার শালা।)
তার চেয়েও মেজাজ-খারাপিয়া ব্যাপার - কালকে রাতে অফিসের ক্রিসমাস পার্টি পড়েছে। 'অফিস ক্রিসমাস পার্টি' - এই শব্দ তিনটা অনেকটা বিভীষিকার মত। যারা রিকি জেরভাইস'এর 'দ্য অফিস' নামের কমেডি সিরিজটা দেখেছেন, তারা বুঝবেন কেন। গত বছর এই পার্টিতে গিয়ে বাজে স্টেক খেয়ে আমার ফুড-পয়জনিং হয়েছিল। কিন্তু সেটাও বড় সমস্যা না। সবচেয়ে পীড়াদায়ক লাগে এদের আন্তরিকতার অভাব। কেমন মেকি-মেকি ঠেকে এদের সব আনুষ্ঠানিকতা। নিজের অস্বস্তি ঢাকতে গিয়ে সবাই মদ খেয়ে পাড় মাতাল হয়ে যায় সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। কি বলছে, কি করছে, তারপরে আর কোন হুশ থাকে না কারো। পরের দিন দেরী করে অফিস আসে, হয়তোবা আসেই না, হ্যাংওভারের দোহাই দিয়ে। সত্যি বিচিত্র এদের উৎসব।
এর মধ্যে দিয়ে আমার ঈদটা মাটি। অবশ্য বিদেশে যে ঈদ কি রকম ভুয়া হতে পারে, তা যাদের কপালে এই দুর্ভাগ্য হয়েছে, তারাই বুঝবেন। কোন ঈদই না আসলে এটা। আম্মার হাতের সেমাই বা জর্দা নেই, সবার সাথে কোলাকুলি নেই, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দৌড়াদৌড়ি নেই, সালাম করে টাকা তোলার মতলব নেই। রাস্তাঘাটে কোন আমেজ নেই, রং বেরং এর কাপড় পরে এক রিকশায় পাড়ার সাতটা বাচ্চার চড়া নেই, সং সেজে উঠতি বয়সের ছেলেদের ঢং নেই। আটটার সংবাদে প্রেসিডেন্টের লক্ষ মানুষের সাথে কোলাকুলি নেই, রাতের বেলা হানিফ সংকেত নেই, হুমায়ুন বা আমজাদের নাটক নেই। নেই নেই নেই। এটা কোন ঈদ হোল? সারাদিনে হয়তো কয়েকটা টেক্সট, দুয়েকটা ফোন, বাসায় বাপ-মা ভাই-বোনদের সাথে একটু কথা বলা। এদিকে অফিসের শুকনা কম্পিউটার আর আমি। রাতে হয়তো বন্ধুদের সাথে একটু দেখা করা, খেতে যাওয়া (যেটা কালকে হচ্ছে না ক্রিসমাস পার্টির কল্যাণে), আর না পারলে উইকেন্ডে গিয়ে দাওয়াত খেয়ে আসা।
এই উৎসব-পালা-পার্বণগুলা খুব বেশী মিস করি। দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ, বইমেলা, পুজার সময়ে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে মন্ডা-মিঠাই খেয়ে আসা, একুশে ফেব্রুয়ারী, বসন্তের প্রথম দিনে ঢাবি ক্যাম্পাসে লাল-হলুদের মেলা, এমনকি বিজয় দিবসের কচুকাওয়াজ পর্যন্ত - সবই গত সাত বছর ধরে মিসের খাতায়। প্রতি বছরই ভাবি, এইবার ছুটিটা বুঝে শুনে নিতে হবে - যাতে ঈদ বা বইমেলা বা পহেলা বৈশাখের সাথে টাইম মিলিয়ে দেশে যাওয়া যায়। কিন্তু শেষমেষ আর হয়ে ওঠে না। যখন কাজের শিডিউল থেকে একটু অবসর মিলবে, তখনই ছুটি নেওয়া সম্ভব। সেই শিডিউল কি আর ২১ ফেব্রু বা ১৪ এপ্রিল চিনতে চায়?
যাক, এই ভাবনাগুলা আমার নিশ্চয়ই একার না। বাইরে যারা থাকেন তারা সবাই বুঝবেন এই না-পাওয়াটা। যারা দেশে আছেন, আশা করি তারা বেশী বেশী মজা করে আমাদেরটা পুষিয়ে দেবেন। এই প্রবাসী সচলের কথা ভেবে এক লোকমা পোলাও বেশী খেয়ে নিয়েন।
সচল পরিবারের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক! (ইন্সার্ট ভার্চুয়াল কোলাকুলি...)
মন্তব্য
ঈদ মোবারক।
এখানেও আজ ঈদ। ঈদ নাকি টিদ সে তো আসলে সব পোড়াকপালী প্রবাসীদের জানা। মনেও থাকে না যে কবে ঈদ, অথচ দেশে থাকতে দিন গুনতাম, এত দিন পরে ঈদ!
ভালো থাকুন। এক লোকমা পোলাও, আর বাকি সব খাবারগুলো (নাম করলাম না, তাহলে আপনার খেতে লোভ হয়ে যাবে!) একটু একটু করে আপনার এবং আর সব পোড়া কপালীদের নাম করেই নাহয় আজ খেয়ে নিবো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
ঈদমোবারক আপনাকে এবং সক্কলকে; অন্তত আমার গরু ভক্ষনের পুরনো লোভ জাগে এই দিনে! দেশে থাকতে মিস করতাম গরুর মাংসের সাথে ওয়াইট ওয়াইন (ভাবতাম সবাই মিলে যদি খাওয়া যেত!), আর এখানে মিস করি উতসবের আমেজটা (সেটা যে কোন বাঙ্গালী উতসবই হোকনা কেন)!
তবে আপনার এই কমেন্ট পুরোপুরি মানতে পারলাম না......'সবচেয়ে পীড়াদায়ক লাগে এদের আন্তরিকতার অভাব। কেমন মেকি-মেকি ঠেকে এদের সব আনুষ্ঠানিকতা। নিজের অস্বস্তি ঢাকতে গিয়ে সবাই মদ খেয়ে পাড় মাতাল হয়ে যায় সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। কি বলছে, কি করছে, তারপরে আর কোন হুশ থাকে না কারো। পরের দিন দেরী করে অফিস আসে, হয়তোবা আসেই না, হ্যাংওভারের দোহাই দিয়ে। সত্যি বিচিত্র এদের উৎসব।'......আমরা কি সবাই কম বেশী মেকি না? আমরাও কি আমাদের নানা উতসবে, এমন কি ডিসেম্বর মাস আসলেই যে রকম জ্বালাময়ী হয়ে উঠি! অথবা ঈদ আসলেই যেরকম ভালো মানুষ হয়ে আনন্দ করার আর দেয়ার চেষ্টা করি তাও কি খানিকটা মেকি মেকি নয়? আর এই ১০০% মেটেরিয়েলিষ্টিক সমাজেতো এটা হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক, তাই নয় কি? আর এর থেকে খানিকটা রিলিফ পেতে যদি মদ খেয়ে কেউ মাতাল হয়তো দোষের কি বলুন? আমারতো ভালই লাগে, মাতাল হও, মাতাল করো...এবং ভুলে যাও যা কিছু তোমার (পরের দিন যদিও মনে পরবেই)!...।হাহাহাহাহা...ঈদমোবারক with big cheers!!
অনুভূতিগুলো একই রকম!
"চারিদিকে গোলাগুলি
করছে বাজে পোলাগুলি,
এরই মাঝে সেরে ফেলি
ভার্চুয়াল কোলাকুলি ।"
ঈদ মোবারক। (+ ভার্চুয়াল কোলাকুলি!)
আমাদের এখানে ঈদে মজাই হয়। দল বেঁধে আমরা ঘোরাঘুরি করি বাঙ্গালীরা। সকালে বের হয়ে রাতে বাসায় আসি। মজাই লাগে।
ঈদ মোবারক।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মোবাইল বাখরাবাদ/জালালাবাদ না হৈলেই হয় @ মুর্শেদ ভাই।
কেউ আমারে একটু ঈদের মজা ধার দেন... সময়ে সুদ সহ ফেরত দেওয়া হইবেক।
দৃশা
ঈদ মোবারক।
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
"চারিদিকে গোলাগুলি
করছে বাজে পোলাগুলি,
এরই মাঝে সেরে ফেলি
ভার্চুয়াল কোলাকুলি ।"
আজ ঈদ ছিল। ৫০ মিনিট ড্রাইভের দুরত্বে বাংলাদেশ মসজিদে গিয়া নামাজ পড়ছি। কোলাকুলি করছি মাত্র ৪-৫জনের সাথে - কম সংখ্যার রেকর্ড মনে হয়।
ditto
ঈদ মোবারক। (+ ভার্চুয়াল কোলাকুলি সাবার সাথে! - রেকর্ডটাকে ব্যলেন্স করা দরকার)
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
'কচুকাওয়াজ' কথাটা কি
ইচ্ছে করে লেখা?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
লেট ঈদ মোবারক। (+ ভার্চুয়াল কোলাকুলি!)
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন