বাঁয়ে যে চিত্রকর্মটি দেখছেন, তার শিরোনাম পাইপ হাতে বালক। ১৯০৫ সালে পাবলো পিকাসো প্যারিসে বসে ছবিটি আঁকেন। শিল্পীর বয়স তখন সবে ২৫, প্যারিসের বোহেমিয়ান পাড়ায় মাত্র বসবাস গেড়েছেন। হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে যে আমেরিকার সাবপ্রাইম ক্রাইসিস-এর সাথে ১০০ বছরের অধিক পুরনো এই ছবিটির কি সম্পর্ক থাকতে পারে? কিন্তু কেঁচো একটু খুঁড়তে গেলেই যে সত্যটি বেরিয়ে পড়ে, তা হলো পিকাসোর বালক আর সাবপ্রাইম সমস্যা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
(খল)নায়কের নাম গ্রীনস্প্যান
গত পোস্টে দেখা গেলো যে ২০০১-০২ এর মন্দা নিরাময় করতে গিয়ে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ, সংক্ষেপে ফেড, সুদের হার কমিয়ে ১%-এ নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য বিনিয়োগ ও কেনাকাটা আবার চাঙ্গা করে তোলা। এবং এও দেখেছিলাম যে পলিসিটি আপাতদৃষ্টে সফল হয়েছিল। এই প্রসংগে ফেড'এর তৎকালীন চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রীন্সপ্যান সম্পর্কে একটু বলার সময় হয়েছে।
গ্রীন্সপ্যান ১৯৮৭ সালে রোনাল্ড রেগানের শাসনামলে ফেড'এর চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত হন। এই পদটি শুধু আমেরিকা নয় বরং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির জন্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ পজিশন। চেয়ারম্যান এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ-রাই আমেরিকার সুদের হার নির্ধারণ করেন - উদ্যোক্তারা সহজ়ে ব্যবসার পুঁজি পাবে কি পাবে না, লোকজনের ঘরবাড়ি কেনার সামর্থ্য হবে কি হবে না, তার অনেকটাই নির্ভর করছে ফেড কত বেশি বা কত কম সুদের হার ধার্য করে দিল তার উপর।
গ্রীন্সপ্যান যৌবন বয়সে উগ্র (অনেকে বলেন উন্মাদ) রক্ষণশীল লেখিকা অ্যায়েন র্যান্ডের শিষ্য ছিলেন। প্রৌঢ় বয়সে এসে তাকে মার্কিন অর্থনীতির শিখরে বসিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট রেগান। পরবর্তীতে প্রথম বুশ এবং বিল ক্লিনটন এই দুজনের শাসনামলের সময়ে গ্রীন্সপ্যান বেশ সদর্পেই ফেডারেল রিজার্ভের নেতৃত্ব দেন।
বদনা লিমিটেড - ১৯৯৬-এ মতিঝিলের শেয়ার ধ্বস
৯০-এর দশকের মাঝামাঝি যখন ডটকম বুদবুদ প্রথম সৃষ্টি হয়, তখন পর্যালোচকদের অনেকেই বলেছিলেন যে শেয়ারবাজার বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে, একে থামানো উচিত। ১৯৯৫-৯৬ এর দিকে এসে শেয়ার সূচক Dow Jones Index ঘোড়ার বেগে ছুটতে আরম্ভ করে। বাংলাদেশেও সেই সময়ে শেয়ার বাজারের নেশা তৈরী হয়েছিল - ১৯৯৬ সালের কথা বলছি। কাজকাম বাদ দিয়ে বন্ধুবান্ধব থেকে টাকা ধার নিয়ে এমনকি জমি-জমা বিক্রি করে মতিঝিলে শেয়ারের খেলায় নেমেছিলো হাজার হাজার মানুষ। এবং তাদের প্রায় সবাই ধরাও খেয়েছিলো, কারো কারো ক্ষেত্রে বিশাল ধরা, একেবারে সর্বস্ব-খোয়ানো ধরা।
ঢাকা স্টক মার্কেটে যেটা হয়েছিল, সেটা ছিল একটা ক্লাসিক স্পেকুলেটিভ বাবেল (speculative bubble)। হুজুগ থেকে সৃষ্ট বুদবুদ বলতে পারেন। হালাল রাস্তায় চিন্তা করলে শেয়ারবাজি কিন্তু বেশ সরল। অমুক কম্পানীর পণ্য উৎকৃষ্ট, ব্যবস্থাপনা চৌকষ, মার্কেট কব্জা। আমি জানি যে গ্রামীন ফোন একটা সলিড কম্পানী, এর মোবাইল মানুষ খাবেই, গ্রামীণও প্রতি বছর লাভের খাতায় থাকবেই। তাই গ্রামীণের শেয়ার কিনলে আমি বছর কে বছর ভালো মুনাফা পাবো, ভালো ডিভিডেন্ড খাবো, আমার শেয়ারের দাম উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।
স্পেকুলেটিভ বাবেল-এর ক্ষেত্রে এই সব লজিক কাজ করে না। কম্পানীর প্রডাক্ট ভালো কি মন্দ, তার ম্যানেজারগণ জিনিয়াস না গাধা, এই সব কেউ হিসাব করে না। আমি শুধু জানি যে গত সপ্তাহে বদনা লিমিটেড-এর শেয়ারের দাম ছিল ৫০ টাকা, আজকে সেটা ১০০ টাকা, এবং আগামী সপ্তাহে সেটা ১৫০ টাকা হয়ে যাবে। তাই আমি ১২০ টাকা দিয়ে হলেও সেই শেয়ার যে কোন ভাবে আজকে কিনবো, তারপর আগামী সপ্তাহে সুন্দরমত ১৫০ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে কড়কড়ে লাভ গুণবো। মানে, ভবিষ্যতে দাম বাড়ার আশায় আজকে বেশী দাম দিয়ে কেনা। এটাই স্পেকুলেশান, হুজুগ।
কিন্তু বুদবুদ যখন ফাটে, তখন একেবারে মাথার উপর ফাটে। হঠাৎ যদি কেউ বলে বসে - বদনা লিমিটেডের শেয়ার তো ভাই আমি কিনবো না, ওদের বদনা তো এখনো প্রডাকশনেই যায়নি - ঠিক তখনই লাগে ভ্যাজাল। যেই ব্যাটা ১২০ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনেছিলো ১৫০ টাকায় বেঁচার আশায়, হঠাৎ সে টের পায় তার শেয়ারের কোন ক্রেতা নেই। কোনমতে তার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্যে ১২০ কেন, ১০০ টাকায়ও তখন সে শেয়ার ছেড়ে দিতে রাজী থাকে - যদি ভালোয় ভালোয় আরেকটা গাধার কাছে গছিয়ে দেয়া যায়! কিন্তু ততক্ষণে মার্কেট-ব্যাপী প্যানিক শুরু হয়ে গেছে, লোকজন কোনমতে শেয়ার বেঁচে দিয়ে বাপের থেকে ধার নেয়া টাকা উদ্ধার করতে পারলেই বাঁচে। তখন ক্রেতার অভাবে তীব্র গতিতে শেয়ারের দাম নীচে নামতে থাকে।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে এসে যে ধ্বস নেমেছিলো, তা অনেকটা এমনই ছিল। অবশ্য যতদূর মনে পড়ে, সেখানে শেয়ারের দাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলে পাবলিককে কিছু অসৎ স্টকব্রোকার প্রতারিতও করেছিল।
স্পেকুলেটিভ বাবেল অবশ্য নতুন কিছু না। যুগে যুগে এমনটা হয়েছে। ১৬৩০-এর দশকে হল্যান্ডে টিউলিপ ফুল কেনাবেঁচা নিয়ে বিরাট এক বাবেল সৃষ্টি হয়েছিল, যেটা টিউলিপ-মেনিয়া হিসাবে আজও বিখ্যাত। মাইক ড্যাশ-এর এই নিয়ে একটি সুপাঠ্য বই আছে।
হুজুগের রাজা Asymmetric Alan
তো ৯০-এর দশকের শেষের দিকে নিউ ইয়র্কের শেয়ার বাজারেও বিরাট বুদবুদ সৃষ্টি হলো। কিভাবে ডাও জোন্স সূচক বেড়েছে, তার নজির এখানে পাবেন। ১৯৭২ সালে এই সূচক ১০০০-এ পৌঁছায়। তারপরের ইতিহাস নিম্নরূপ -
১৯৮৭ - ২০০০
১৯৯১ - ৩০০০
০২/৯৫ - ৪০০০
১১/৯৫ - ৫০০০
১০/৯৬ - ৬০০০
০২/৯৭ - ৭০০০
০৭/৯৭ - ৮০০০
০৪/৯৮ - ৯০০০
০৩/৯৯ - ১০,০০০
০৫/৯৯ - ১১,০০০
খুব অল্প সময়ের মধ্যে সূচক দ্বিগুন তিনগুন হয়ে গেল। কেউ কেউ বলতে লাগলেন - আরে বুঝো না তো, ইন্টারনেট-ভিত্তিক অর্থনীতি এক নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি করবে, তাই শেয়ারের চড়া দাম আসলে ঠিকই আছে। ক্ষুদ্র সংখ্যক কিছু লোক ইতিহাসের পাতার দিকে তাকিয়ে বললেন যে - না, এমন বুদবুদ আগেও হয়েছে, এবারও হচ্ছে। ফেড তুমি এই আগুনে একটু পানি ঢালো, গ্রীন্সপ্যান তুমি সুদের হার প্রয়োজন মত বাড়াতে থাকো। বাজারের গতি প্লীজ একটু মন্থর করো।
কিন্তু গ্রীন্সপ্যান তাদের কথা শোনেননি। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ - এই সময়ে তার পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিলো কিন্তু তিনি তার কর্তব্য পালন করেননি। নতুন শতাব্দীতে এসে যখন সবার টনক নড়লো যে ইন্টারনেট স্টক ভালো কিন্তু আসলে অত ভালো না, তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে। ঢাকার শেয়ার বাজারের মত নিউ ইয়র্কেও শুরু হলো প্যানিক। সড়সড় করে ডাও জোন্স পড়তে লাগলো - ১১,০০০ থেকে ৭,০০০-এর কোঠায় নেমে এসেছিল সূচক শেষমেষ।
তাই মন্দার বর্গী এলো দেশে। গ্রীন্সপ্যান বাবাজি এইবার অ্যাকশনে নামলেন। দরকারের সময় সুদের হার তিনি কখনো বাড়াতেন না, কিন্তু বাবেল ফেটে গেলে সুদের হার কমাতে গ্রীন্সপ্যানের জুড়ি কেউ ছিল না। এই কারনে তার শাসনামলের পলিসিকে এখন asymmetric বলে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি হুজুগ থামাতে কিছু করতেন না, কিন্তু হুজুগ ফেঁসে গেলে ঠিকই অনেক কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন। আরে বাবা, বাবেলটা হতে দিস কেনো? হুজুগ সময়মত থামালে তো এত ঝামেলা বাঁধে না। কিন্তু গ্রীন্সপ্যান একটা না, বরং দু'দুটা বাবেলের সৃষ্টি করেছিলেন। প্রথম বাবেল, ডটকমের ধাক্কা তিনি নিজেই সামলেছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় বাবেল সাবপ্রাইমের খেসারত এখন দিতে হচ্ছে অন্য সবাইকে।
লিকুইডিটি থেকে বাবেল কিভাবে তৈরী হয়?
সুদের হার যখন অনেক কম থাকে তখন সবাই ঋণ নিতে রাজী থাকে। অর্থনীতিতে প্রচুর টাকা ঘোরাফেরা করে। পরিভাষায় একে excess liquidity বলা হয়। বাজারে টাকা যে অনেক বেশী, এই কথা দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
কিন্ত টাকা তো আর এমনি এমনি ভেসে বেরাবে না। সেটা দিয়ে কিছু একটা কেনা দরকার। সহজ কথায় টাকা খোঁজে সম্পদ। Liquidity chases assets.
সাধারণ মানুষ বড় অংকের টাকা পেলে যেই কাজটা সবচেয়ে বেশী করে, তা হলো স্থাবর সম্পত্তি কেনা। যেমন ফ্ল্যাট অথবা বাড়ী। ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারনে এই সকল স্থাবর সম্পত্তির দাম তখন বাড়তে থাকে। অন্যান্য ক্যাটেগরির সম্পদের দামও পাশাপাশি বেড়ে যায় - জমি-জমা, স্টক বা শেয়ার। এমন কি লিকুইডিটি-প্রসূত বাবেল যখন চরমাকৃতি ধারণ করে তখন আমরা দেখতে পাই যে নানা রকম 'exotic assets', যেমন ধরেন শিল্পকর্ম অথবা অ্যান্টিক (antique) সামগ্রীর দামও বেড়ে গেছে। কেনার যখন আর কিছু বাকি থাকে না, তখনই লিকুইডিটি দৌড়ায় এই সব পেইন্টিং আর অ্যান্টিক-এর পেছনে। সাইসাই করে দাম বেড়ে যায় এগুলার।
এটাকে এক রকম অমোঘ নিয়মও বলা যেতে পারে - যদি পেপার পত্রিকায় পড়েন যে অমুক পেইন্টিংটি দামের দিক থেকে নতুন বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেছে, তখনই বুঝবেন যে ডাল মে কুছ কালা হ্যায় - বুঝে নিতে হবে যে বুদবুদ বড় হতে হতে শেষ সীমানায় চলে গেছে, ফাটতে আর বেশী দিন বাকি নেই।
কেয়ামতের আলামত - ভ্যান গখ ও পিকাসো
এই কারনেই শুরুতে পিকাসোর শরণাপন্ন হয়েছিলাম। পাইপ হাতে বালক চিত্রকর্মটি ২০০৪ সালের মে মাসে নিলামে ওঠে। এবং ১০৪ মিলিয়ন ডলারের রেকর্ড মূল্যে বিক্রি হয়ে ভ্যান গখের পূর্ববর্তী রেকর্ড ভঙ্গ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ভ্যান গখের রেকর্ডটিও সৃষ্টি হয়েছিল আরেক লিকুইডিটি বুদবুদেরই কল্যাণে। সেই ১৯৯০ সালে ভ্যান গখের আঁকা ছবি - ডাক্তার গাশে'র প্রতিকৃতি - ৮২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন জাপানী ব্যবসায়ী রিওই সাইতো। জাপানের মিরাকেল অর্থনীতির শেষ উল্লাসের দিন তখন। ৮০'র দশকের asset-price bubble-এর চরম বাড়াবাড়ি প্রায় শেষ পর্যায়ে, আর কিছুদিনের মধ্যেই জাপান নিপতিত হয় সুদীর্ঘ এক মন্দায়, যার রেশ তারা আজ পর্যন্ত ঠিকমত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জাপানের স্থবিরতার সুযোগ নিয়ে গত দশ বছরে চীন আবির্ভূত হয়েছে এশিয়া মহাদেশের নতুন অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসাবে।
ভ্যান গখের রেকর্ড টিকেছিল ১৪ বছর কিন্তু পিকাসোর রেকর্ড মাত্র দুই বছরের মাথায় মুছে গেলো। ২০০৬ সালে গুস্তাভ ক্লিম্ট-এর একটি পেইন্টিং বিক্রি হয় ১৩৫ মিলিয়ন ডলারে। কিন্তু এই রেকর্ডও বেশী দিন টেকেনি। একই বছর অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম ধারার দুটি চিত্রকর্ম - ভিলেম ডি কুনিং'এর একটি এবং জ্যাকসন পোলক'এর একটি - নিলামে বিকোয় যথাক্রমে ১৩৭ মিলিয়ন এবং ১৪০ মিলিয়ন ডলারে। (এই লিংকে সবগুলা পেইন্টিং-এর বিবরণ দেয়া আছে।) ২০০৬ সালে এই খবরগুলো যখন পত্রিকায় দেখতাম, তখন মনে পড়তো ভ্যান গখের ছবি নিয়ে আশির দশকে তোলপাড়ের কথা। বুঝেছিলাম যে খেলা ওভারটাইমে চলে গেছে, কিছুদিনের মধ্যেই এই বাবেল ভেঙ্গে পড়বে, ঠিক দিনক্ষণ নিশ্চিত না হলেও কেয়ামতের আলামত সবই পরিষ্কার।
এবং শেষমেষ হলোও তাই। ২০০৭ এর মাঝামাঝি এসে বিশ্ববাজারে হঠাৎ করেই সেন্টিমেন্ট নেতিবাচক মোড় নিল। আজ ছয় মাস পরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এই সর্বশেষ বাবেলের ফেটে-যাওয়া ময়লা ফেনার উপর। এই বাবেল সৃষ্টির সিংহভাগ দোষই বর্তায় ওয়াল স্ট্রীটের চামচা ফেড চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রীন্সপ্যানের উপর। তিনি গত বছর রিটায়ার করেছেন। এবং গত ছয়মাস ধরে অনেকটা নির্লজ্জভাবেই নিজের সাফাই গাইছেন, তার নানান ভূল সিদ্ধান্তের জন্যে অজুহাত বানাচ্ছেন। একটা যুক্তি খাড়া করিয়েছেন এই রকম - যে asset-price bubble যখন ঘটে, তখন সেটাকে বাবেল হিসাবে সনাক্ত করা দুরূহ, তাই আমি সেই সময় সুদের হার বাড়াইনি বা অন্য কিছুই করিনি। এইসব ফালতু প্যাঁচাল আর কি। একটা বইও লিখেছেন এইসব আগডুম-বাগডুম যুক্তি দিয়ে।
সব মিলিয়ে ধারণা করছি যে জ্যাকসন পোলকের রেকর্ডটি বেশ কয়েক বছর টিকবে। বাঁয়ে দেখছেন সেই ছবিটি - নম্বর ৫, ১৯৪৮।
P.S. প্রশ্ন উঠতে পারে যে speculation আগে না liquidity আগে। উত্তর হলো বাজারে অতিরিক্ত লিকুইডিটি থেকেই speculation-এর জন্ম হয়, যদিও এটা সব ক্ষেত্রে সত্য নয় - যেমন বাংলাদেশের বেলায়। তবে সেখানেও জমি-জমা বেঁচে ধার-কর্জ করে লিকুইডিটি সৃষ্টি করা হয়েছিল, বাজারে speculation করার উদ্দেশ্যে।
টাইমলাইন
১৯৯৫-২০০০ - টেলিকম ও ডটকম প্রসূত শেয়ার বাবেল
২০০১-২০০৩ - ডটকম ধ্বস, শেয়ার বাজারের পতন
২০০৪-২০০৬ - সাবপ্রাইম বাবেল, পুনরায় শেয়ার বাজারের উত্থান
২০০৭ - আজতক - সাবপ্রাইম ক্রাইসিস
অর্থনীতি সিরিজের পূর্ববর্তী পোস্ট
গাড়ি চলে না - বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘোর ঘনঘটা
১০০ ডলারের তেল, আর আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যত
মন্তব্য
এক্সেলেন্ট!!! খুব জটিল বিষয় চট করে মাথায় ঢুকে গেল। বুঝে গেলাম গত কয়েকবছর ঘটে যাওয়া এবং এখন ঘটতে থাকা অনেক বিষয়। অর্থনীতি বিষয়ে আপনার গুরু মানলাম। এখন বলেন অর্থনীতি নিয়ে পড়তে কোথা থেকে শুরু করা উচিৎ। আমার অনেক ইচ্ছার মত এই উচ্ছাস হয়ত শিঘ্রী শুকিয়ে যাবে। তবু ...
থ্যাঙ্কস।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হেহে ধন্যবাদ। আমার জীবনে পড়া সবচেয়ে সহজবোধ্য ইকনমিক্স বই লিখেছেন MIT'র Blanchard সাহেব। তার এই বই আন্ডারগ্র্যাডদের জন্যে লেখা, কিন্তু মাথা পরিষ্কার করার জন্যে আমি এখনও এই বইয়ের শরণাপন্ন হই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এটাকে নিয়মিত বা সাপ্তাহিক আকারে ছাড়া যায় না? বছরখানেক ধরে রয়েসয়ে লিখতে পারলে কিন্তু জটিল বই বা ব-e হবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
অসাধারণ হয়েছে। অনেক জটিল বিষয় সহজবোধ্য করে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার নয়। হুজুগে বুদবুদ ফাটার স্পষ্ট কারণটা বুঝতে পারলেও, লিক্যুডিটি বুদবুদ ফাটার কারণটা কি?
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
ধন্যবাদ। খুবই ভালো প্রশ্ন করেছেন। আসলে হুজুগে বাবেলের শেষ পর্যায়ে এসে খেলোয়াড়েরাও টের পেয়ে যান যে এখন জুয়া খেলা চলছে, আমি বেশী দাম দিয়ে যেই asset কিনলাম (শেয়ার বা প্রপার্টি), সেটার উপর লাভ করতে হলে তার থেকেও বেশী দামে বিক্রি করতে হবে। এমন অবস্থায় তাড়াতাড়ি বেঁচে দেওয়াই শ্রেয়, কিন্তু সেটা অনেক ক্ষেত্রেই হয় না কারন বাবেল আরো কয় মাস বা কয় বছর চলবে, কেউ নিশ্চিত বলতে পারেন না।
কিন্তু বাজারে 'সেন্টিমেন্ট' একবার নেগেটিভ হয়ে গেলে এই জুয়া খেলার পুরো ভিত্তিটাই কেঁপে ওঠে। এবং হুজুগের সেন্টিমেন্ট যে কি কারনে, কখন বা কেনই নেগেটিভ হয়, সেটার কোন ধরা-বাঁধা সদুত্তর অর্থনীতিবিদদের জানা নেই। হয়তো সাইকিয়াট্রিস্ট-রা আরো ভালো বুঝবেন!
লিকুইডিটি বাবেলটা ফাটার কারনটা বোঝা আরেকটু সহজ। (অবশ্য এতটুকু বলে নেই যে হুজুগের বাবেল আর লিকুইডিটি বাবেল অনেক সময় হাতে হাত ধরেই সৃষ্টি হয়, সিয়ামিজ টুইন-দের মত।) বাবেল ফাটা অনেক ক্ষেত্রেই সুদের হার বাড়ার সাথে সম্পৃক্ত। ১% সুদের হারে যেই excess liquidity'র সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সুদের হার ৪% বা ৫%-এ চলে গেলে লিকুইডিটি'র সাপ্লাই হ্রাস পায়। ঋণ নিতে ইচ্ছুক লোকের সংখ্যা কমে যায়।
প্রপার্টির উদাহরণ দিয়ে জিনিসটা বোঝানোর চেষ্টা করি। আমি cheap liquidity'র যুগে ব্যাংকের থেকে বড় অংকের টাকা ধার করে একটা বাড়ি কিনলাম মাত্র ১% সুদে। এই সুদের হারে আমাকে ব্যাংকের মাসিক পেমেন্ট দিতে হচ্ছে ৭৫ টাকা। কিন্তু বাড়ি থেকে ভাড়াই আমি পাচ্ছি ১০০ টাকা, তাই পেমেন্ট দিয়েও আমার ২৫ টাকা বাড়তি থাকছে মাসে মাসে। বাড়িতে ইনভেস্ট করে ভালো লাভ করছি। ঋণ তো আমি নেবোই এমতাবস্থায়।
কিন্তু যদি সুদের হার বেড়ে যায় ৫% পর্যন্ত, দেখা গেলো ব্যাংক আমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে মাসিক পেমেন্ট বেড়ে গেছে আমার - এখন থেকে সুদে-আসলে প্রতি মাসে ১৫০ টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু ভাড়াটে এখনো ১০০ টাকাই দিয়ে যাচ্ছে। তার মানে আমার নিজের পকেট থেকে এখন ৫০ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাড়িটা ধরে রেখে আমার কি আসলেই লাভ হচ্ছে?
বাড়িটা বেঁচে দিতে পারতাম, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ৫% সুদের যুগে বাজারে নতুন ক্রেতার সংখ্যাও কম। তাই কার কাছে বেঁচবো? বাড়ির দাম (আমার asking price) কি কমিয়ে দেবো, ক্রেতা টানার আশায়? কতটা কমালে এই scarce liquidity-র দিনে আমি নতুন ক্রেতা পাবো? অন্যদিকে ভাড়া বাড়ানো যায়, কিন্তু ভাড়াটে যদি চলে যায়, যদি নতুন ভাড়াটে না পাই? এইসব দুশ্চিন্তা।
তাই দেখা যাচ্ছে যে পারস্পরিক লেনদেনের যে সুদের হার, সেটা বেড়ে গেলেই cheap liquidity-র যুগের অবসান হয়। কি কারনে সুদের হার বাড়তে পারে, সেটা নিয়ে আরো পোস্ট দেওয়ার ইচ্ছে আছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
হুম। এইবার বোঝা গেল!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
খুব সহজেই অনেককিছু জানা হচ্ছে ।
বাবলের ইতিহাস, অর্থনীতি খুব ভালো করেই বুঝে গেলাম।
আপনার ক্লাস নিয়মিত করবো।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
সামনের পর্বে সাবপ্রাইম ক্রাইসিস নিয়ে আরো জানতে চাই। ভালো লাগছে খুব।
আমি একটু বেশি ক্ষুধার্ত ও প্রায়-নির্বোধ ছাত্র। তাই প্রশ্ন করবো বেশি। আগাম মার্জনা প্রার্থনীয়।
১.
সাবপ্রাইম ধাক্কার পর সিটি ব্যাংক, ইউবিএস, মর্গ্যান স্ট্যানলে র মতো ঘাঁগু ঘোড়েল প্রতিষ্ঠানেরা এখন মধ্যপ্রাচ্যের তেলটাকা আর চীনা-সিঙ্গাপুর এর কাঁচাটাকার দ্বারস্থ। গত এক-দুই মাসের খবর তাই বলছে।
চীন-সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ ফান্ডের পেছনে সরকারি নিয়ন্ত্রণই মূল, সেটা বলাই বাহুল্য। তেলটাকাও মধ্যপ্রাচ্যের সরকার নিয়ন্ত্রিত।
সামনের দিনগুলোতে এইসব ক্ষমতার লড়াইয়ে তেলটাকা ও কাঁচাটাকার প্রভাব আরো বাড়বে। এই প্রবণতা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার মেরুর এশিয়ার দিকে হেলে পড়ারই ইঙ্গিত বলে, অর্থনীতিবকলম আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বোধ হচ্ছে।
আশা করবো, আপনি এ নিয়ে বিস্তারিত লিখবেন।
২.
আমি গত ডিসেম্বরে খুব অল্প সময়ের জন্যে (মাত্র ১০০ ঘন্টার মতোন) বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমার বন্ধুবান্ধব এখন মোটামুটি কোন একটা চাকুরিতে স্থিত হয়েছে, অথবা লম্বা সম্পর্কের জের ধরে প্রেমিকাকে বিয়ে করে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছে।
আমি দেখেছি, তারা তাদের সদ্য শেষ করা ভার্সিটি জীবনের টিউশনি থেকে সঞ্চিত সামান্য টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। (এখনকার জেনারেশন আসলেই কুল!)
আমার মনে হয়েছে, উচ্চাকাঙ্খী ইয়ং জেনারেশনের মাঝে শেয়ারবাজার নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই প্রবণতাকে আপনি কীভাবে দেখেন? এটা কি কোন ক্ষণস্থায়ী বুদবুদের ইঙ্গিত?
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
সৌরভ,
১) আপনি Sovereign Wealth Fund এর কথা বলছেন নিশ্চয়ই। SWF নিয়ে বিতর্ক বেশ নতুন, সাবপ্রাইমের ধ্বসের পরে গত ৩-৪ মাসেই এই নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। সত্যি বলতে SWF নিয়ে আমি বিষদ পড়াশোনা করিনি, শুধু পত্রিকার ফিনানশিয়াল পাতায় যে সব আর্টিকেল পড়েছি, সেটাই বলতে পারি। কিছু কিছু দেশ SWFদের স্বাগত জানাচ্ছে, যেমন যুক্তরাজ্য। আবার কিছু কিছু দেশ হয়তো শিওর না। কিন্তু ব্যাংকগুলা যেই পরিমান বাজে ঋণের বোঝা নিয়ে বসে আছে, তাদের ব্যালেন্স শীট recapitalize করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। যদি টগবগ ঘোড়ায় চড়ে রাজার কুমার আসে সৌদি বা চীনা SWFএর বেশে, তাইলে ব্যাংকগুলা তাকে স্বাগতই জানাবে। বড় MNCদের দেশপ্রেম নেই, কারন তাদের কোন দেশ নেই, তারা চিনে শুধু টাকা। আর এটাও পড়েছি যে SWFগুলা সাধারণত ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে না। SWF না হয়ে যদি প্রাইভেট সেক্টর থেকে ব্যাংকের রাজার কুমার আসতো, তাহলে তারা ব্যাংকের অপারেশনাল দিকে হস্তক্ষেপ করতো। তাই ব্যাংকরা মহাখুশী। ক্যাপিটালও আসলো, আবার ম্যানেজমেন্টের স্বাধীনতাও বব্জায় থাকলো।
তবে এটা ঠিক যে বিশ্ব অর্থনীতির centre of gravity আস্তে আস্তে মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, চীনের দিকে সরে যাচ্ছে। ভারতীয় কম্পানীরা পশ্চিমে গিয়ে বড় বড় takeover bid দিচ্ছে, যেটা পাঁচ বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। ১০ বছর পরে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, চিন্তাই করা যায় না। SWFদের এই নতুন তৎপরতা সেই বড় ট্রেন্ডেরই আরেকটা ধারা। মালিকানা বিদেশীদের কাছেই চলে যাচ্ছে। এটা নিয়ে পশ্চিমে political backlash হবে কি না সেটা বলা মুশকিল, কারন পশ্চিমের মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ উভয়ই বড় MNCর পকেটে!
২) শেয়ার বাজারের অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্যটা যদি ভাবেন, তাহলে সেটাতে পার্টিসিপেট করা কিন্তু খারাপ জিনিস না। শেয়ার বাজার মূলত একটা ক্যাপিটাল তোলার পন্থা। ধরেন একটা কেমিক্যাল তৈরীর কারখানা expansion plan হাতে নিতে চায়। কিন্তু পর্যাপ্ত ক্যাপিটাল তাদের হাতে নেই। বাজারে শেয়ার ছেড়ে নতুন ক্যাপিটাল তারা তুলতে পারে। এইভাবে দেখলে শেয়ার বাজার দেশের ব্যবসা বাণিজ্য আর শিল্পায়নের সহায়ক হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৯৬-এর মত হুজুগ বোধ হয় চলছে না এখন মতিঝিলে - যখন পত্রিকার প্রথম পাতার বড় হেডলাইন দেখবেন শেয়ার বাজার, যখন খালা ফুফুদের শুনবেন শাড়ী গয়না বাদ দিয়ে শেয়ার নিয়ে আলাপ করছে, তখন বুঝবেন নতুন বাবেল শুরু হয়েছে। সেই অবস্থায় বোধ হয় এখনো যায়নি!!
তবে শেষ কথা বাংলাদেশের জন্যে তার সাধারণ মানুষের হাল। এই নিয়ে শত শত পোস্ট দেয়া যায়। সেই জ্ঞান আমার নেই, তবে কিছু কিছু লেখা ভবিষ্যতে দিতে চাই। আপাতত দৃষ্টিপাত ব্লগের দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবো - সেখানে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যত, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ে ইদানীং চমতকার সব লেখা আসছে। বিশেষ করে আমের এবং জ্যোতি'র লেখাগুলা পড়তে বলবো। অনেক কিছু শিখেছি তাদের লেখা পড়ে। আশা করি সচলেও এই জাতীয় লেখা আমরা দেখতে পাবো অচিরে।
http://www.drishtipat.org/blog/category/economy/
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
১। SWFএর কথাই বলছিলাম। ইদানিং কালের অবস্থা দেখে, মাঝেমাঝেই মজা করে বলি, আহহারে, জাপানি বাদ দিয়ে চাইনিজ ভাষাটা শিখি নাই কেনো? কিংবা আরবি।
২। হ্যা, হুজুগ চলছেন না বোধহয়।
আরিগাতো আপনাকে, এতো সময় ব্যয় করবার জন্যে। অন্য জায়গাগুলো অনুসরণ করবার চেষ্টা করবো।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
সুবিনয় মুস্তফী,
আপনার লেখাটা পড়তে ভালো লাগছে শুধু না আবার নতুন করে মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সময়কার ঘটনা গুলো। এ ব্যাপারে আমার কিছু মন্তব্য আছে, কিন্তু সেটা পরে, এখন আপনাকে লিখছি অন্য একটা কারণে - নিজের একটা দরকারে। আপনি যেহেতু বর্তমানে অর্থনীতির ছাত্র - বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে postdevelopment এবং foreign aid এর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আপনার জানা কোন reference আছে? আমি দেখাতে চাইছি যে development এর ব্যর্থতা বা ভুল নীতির কারণে বাংলাদেশ আরো বেশী করে বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা ঋণ আমাদের সমাজের ইসলামীকরণের জন্য মূলতঃ দায়ী। যদি এমনকি পরোক্ষ ভাবেও সম্পর্কিত কিছু আপনার জানা থাকে, অনুগ্রহ করে আমাকে জানালে আমার খুবই উপকার হবে। ধন্যবাদ।
বিঃদ্রঃ উপরের অনুরোধটি আসলে সবার কাছেই - কারো এ বিষয়ে কোন রেফারেন্স জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।
২-৩টা বইয়ের নাম মাথায় আসছে কিন্তু এগুলা স্পেসিফিকালি বাংলাদেশ নিয়ে না, সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্ব নিয়ে।
১) NYU প্রফেসর উইলিয়াম ঈস্টারলি একটা বই লিখেছেন সম্প্রতি। The White Man's Burden: Why the West's Efforts to Aid the Rest Have Done So Much Ill and So Little Good. লেখকের ওয়েবসাইটে এই বইয়ের অনেক রিভিউ-এর লিংক আছে।
২) নোবেল বিজয়ী জোসেফ স্টিগ্লিট্স লিখেছেন Globalization and Its Discontents. এই বইয়ে লেখক আইএমএফ আর বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য শর্তাবলীর কঠোর সমালোচনা করেছেন। উল্লেখ্য যে স্টিগ্লিট্স বিশ্ব ব্যাংকের প্রধাণ অর্থনীতিবিদ ছিলেন, তাই তিনি একদম ভেতর দেখেছেন এদের চাল।
৩) দাতাদের হারামিপনা নিয়ে আরেকটা বই - John Perkins - Confessions of an Economic Hitman. বইয়ের শিরোনাম থেকেই আন্দাজ করতে পারেন একেবারে inside story।
৪) Gerald Meier'এর Leading Issues in Economic Development বইটা থেকেও উপকৃত হতে পারেন।
এর বেশী তেমন বলতে পারছিনা আনফরচুনেটলি। এখন আর ছাত্র নই, নাহলে Athens একাউন্ট ঘেটে কিছু একাডেমিক পেপার বের করার চেষ্টা করতে পারতাম। হায়, অনেকদিন ধরে কোন অ্যাক্সেস নেই।
আর সৌরভকে যেমন বলেছি অর্থনীতি আর রাজনীতি বিষয়ে জেনারেল রিসোর্স হিসাবে আপনি নির্দ্বিধায় অন্য ব্লগারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যদিও সবাই ইংরেজীতেই লিখেন, নিজের বিষয়ে জ্ঞানের জাহাজ একেকজন তারা - অর্থনীতি বিষয়ে জ্যোতি ও আমের, রাজনীতি বিষয়ে রুমি আহমেদ, আর উভয় বিষয়ে আড্ডাফিকেশান-এর শমসেরের বিষদ একাডেমিক জ্ঞানের উপর আস্থা রাখা যায় বলে বিশ্বাস করি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমি আসলে specifically বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসে যথেষ্ট উদাহরনের অভাবে আটকে গেছি। আমাদের দেশের জন্য রেহমান সোবহানের লেখা কিছু আছে কিন্তু একটু পুরানো। অন্যান্য ব্লগের নাম জেনে উপকৃত হলাম, ওখানে চেষ্টা করে দেখবো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মনে হচ্ছে আপনি "ছোটদের সহজ অর্থনীতি" শীর্ষক কিছু একটা লিখছেন। ফাটাফাটি হচ্ছে। আমি সব বুঝতে পারছি!.....
লেখাটার শেষের দিকে এসে অর্থনৈতিক বাবল আর "পাইপ হাতে বালকে"র সম্পর্ক আবিষ্কার করে বিস্মিত এবং পূলকিত বোধ করেছি! অসাধারণ!!
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আরো পোস্ট লেখার ইচ্ছে আছে এই নিয়ে, আশা করি এঞ্জয় করবেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
মজার নিউজ - কিছু ভাষাবিদ Subprime কে ২০০৭ সালের Word of the Year ঘোষণা করেছেন! বিবিসি সংবাদ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
সুবিনয় মুস্তফী, লেখাটা পড়তে পড়তে এটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। একসময় বিপদগ্রস্ত লাগলো নিজেকে। মনে হলো, এটা পড়ছি কেন? পড়ে বুঝেও যাচ্ছি। এই জিনিস কখনো বুঝিনি, বুঝতে চাইও না। রাষ্ট্র বা বিশ্ব অনেক পরের জিনিস, ব্যক্তিগত অর্থনীতিরও কিছুই বুঝি না।
কঠিন বিষয় সহজ করে বলার কৌশলটা আপনি জানেন। চালু থাকুক আপনার এই সিরিজ।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
নতুন মন্তব্য করুন