একটা ভয়ংকর সপ্তাহ গেলো। ২০০৮ সাল যে খারাপ যাবে তা নিয়ে কখনোই তেমন কোন সংশয় ছিল না। কিন্তু নতুন বছর শুরু হতে না হতেই যে এহেন দুঃসংবাদের মিছিল চলে আসবে, তা বোধ হয় কেউই আশা করেনি। সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে, তারপর সপ্তাহ যত গড়িয়েছে, মুড তত অন্ধকার হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টায় সবাই কোনমতে হাঁপ ছেড়ে বাড়ি গেছে।
অবিরত রক্তক্ষরণ
বাজার আজ পর্যুদস্ত, ভীত সন্ত্রস্ত। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, সবাই বুঝতে পারছে। কতখানি পতনের পরে যে আবার ঠাই মিলবে কেউ জানে না। এর আগের এক লেখায় বাজারের সেন্টিমেন্টের কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম যে একবার মার্কেট সেন্টিমেন্ট-এ ভয় ঢুকে গেলে তাকে আবার আশ্বস্ত করা কঠিন। গত এক সপ্তাহে এই সেন্টিমেন্ট একেবারে চুরমার হয়ে গেছে, সবাই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
যারা বিবিসি সিএনএন-এর সংবাদ ফলো করেন, তারা হয়তো দেখে থাকবেন কি ঘটছে। স্টক মার্কেট দিয়ে শুরু করা যাক। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের ডাও জোন্স সূচক ৫০০ পয়েন্ট পড়ে গেছে। লন্ডনের ফুটসি (FTSE) সূচক হারিয়েছে ৩০০ পয়েন্ট। টোকিওর নিকেই (Nikkei) সুচক নেমেছে ৫০০ পয়েন্ট। আর হংকং-এর হাং সেং (Hang Seng) সূচক খুইয়েছে ১৫০০ পয়েন্ট।
উইকেন্ড চলে আসায় রক্তপাত একটু থেমেছে। কিন্তু আসছে সোমবার সকাল থেকেই আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যাবে।
*
গেল সপ্তাহে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যাংকগুলা তাদের সর্বশেষ লাভ ক্ষতির হিসাব দিয়েছে। এই কম্পানীগুলা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর তাদের ফলাফল ঘোষণা করে। জানুয়ারী থেকে মার্চ - এই প্রথম তিন মাসকে বলা হয় 'প্রথম ত্রৈমাসিক' বা first quarter। একই হিসাবে এপ্রিল থেকে জুন হলো Q2, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর Q3 আর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর হচ্ছে Q4।
২০০৭ সালের শেষ তিন মাসের রেজাল্ট বেরিয়েছে। একেবারে চক্ষু উল্টানোর মতো অবস্থা। বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলার অন্যতম মেরিল লিঞ্চ Q4-এ এসে ১০ বিলিয়ন ডলার লোকসান ঘোষনা করেছে। আরেক দানব সিটিগ্রুপ-ও ১০ বিলিয়ন ডলার লস করেছে। অন্যান্য বড় বড় প্রতিষ্ঠান জ়ে পি মর্গান, ইউ বি এস (UBS), মর্গান স্ট্যানলি, সবাই বিশাল বিশাল ধরা খেয়েছে।
এদিকে চাকরি ছাটাই শুরু হয়ে গেছে - লিম্যান ব্রাদার্স (Lehmann Brothers) ১,৩০০ লোককে বরখাস্ত করার ঘোষনা দিয়েছে, আর সিটিগ্রুপ থেকেও ২০,০০০ লোক চাকুরিচ্যুত হবে এমন জোর গুজব চলছে।
আর মরার উপর খাড়ার ঘা? তেলের দাম আর খাবারের দামের উর্ধ্বগতির ফলে সমগ্র বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেপরোয়া গতিতে দৌড়াচ্ছে। পুঁজির ঘাটি খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি গত ১৭ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায় চলে গেছে!!!
নাক চেপে ধরুন...
আসলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত চলছে এখন। গত ৫ বছর ধরে যেই রকম লাগামহীন স্বেচ্ছাচার দেখা গেছে, বেহিসাবী বাড়াবাড়ি চলেছে, বিশেষ করে হাউজিং সেক্টরে, এইসব তারই প্রতিদান। সাবপ্রাইম বিপর্যয়ের পুঁতিগন্ধময় নাড়িভুড়িতে প্রবেশ করবো আজ। যারা এই সিরিজের আগের অধ্যায়গুলা পড়েছেন, তাদের জন্যে আজকের আলোচনা বুঝতে কোনই বেগ পেতে হবে না। একেবারে নতুন পাঠকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আগের খন্ডগুলো একবার কুইক ঝালাই দিয়ে নিতে পারেন। তাহলে আজকের প্যাঁচাল বোঝা সহজতর হবে।
- গাড়ি চলে না (১) - বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘোর ঘনঘটা
- গাড়ি চলে না (২) - পিকাসো, টিউলিপ, ডটকম ও সাবপ্রাইম
- গাড়ি চলে না (৩) - ফিনিক্স থেকে বসুন্ধরার বাব্ল
- গাড়ি চলে না (৪) - শাজাহানের স্বপ্ন আর তার বাস্তবায়নের উপায়
ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি যে ডটকম ধ্বস আর ৯/১১-র ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে ঘোর বিপর্যয় নেমে আসে। মন্দা ঠেকাতে গিয়ে ফেড চেয়ারম্যান গ্রীনস্প্যান অস্বাভাবিক ভাবে সুদের হার কমিয়ে ফেলেন। স্বাভাবিক বা 'নিউট্রাল' সুদের হার যেখানে ৪-৫% ধরা হয়, সেখানে গ্রীনস্প্যান তা নামিয়ে আনেন ১%-এ। ২০০৩ সাল তখন। শুধু তাই না, সুদীর্ঘ এক বছর তিনি সুদের হার এতো নীচে রেখে দেন। ফলে অর্থনীতিতে সস্তায় ঋণ নেবার হিড়িক পড়ে যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ঋণের নেশায় মাতোয়ারা হয়ে যায়।
ঋণ দিয়ে কি করি?
ব্যবসা আর আমজনতা - এই দুই দলের ঋণ নেওয়ার কারন ভিন্ন। একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয় ব্যবসার প্রসারের উদ্দেশ্যে। ধরেন একজন গার্মেন্টস মালিক এত বেশী রপ্তানীর অর্ডার পাচ্ছেন যে তিনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, আরো ৫০০টা সেলাই মেশিন দরকার হবে তার। এই মেশিন কিনতে তার টাকার দরকার। টাকার খোঁজে তিনি ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে পারেন। সুদের হার যদি কম হয়, তাহলে গার্মেন্টস মালিক নির্দ্বিধায় ঋণটা তুলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেশিন কিনে আরো বেশী শার্ট বানানো শুরু করে দিবেন।
এটা হলো ব্যবসায়িক বিনিয়োগ। ভালো জিনিস। ৫০০টা মেশিন চালাতে আরো ৫০০ জন কর্মী দরকার। তাই নতুন কর্মসংস্থান হলো, বেকারত্ব কমলো, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লো, শিল্পায়ন অগ্রসর হলো, রপ্তানী আয়ও বৃদ্ধি পেলো। অনেক দিক থেকেই লাভ।
কিন্তু সাধারণ মানুষ? সুদের হার কমলে ওদের কি লাভ? যেটা দেখা যায়, সুদের হার কমলে সাধারণ মানুষ high-priced items এর দিকে বেশী ছোটে। সেটা ঘরের জন্যে টিভি, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন হতে পারে। আরো স্বচ্ছল হলে নতুন গাড়ি হতে পারে। অল্প সুদে এগুলোর কিস্তি ম্যানেজ করা সহজ হয়ে যায়। এটাকে বলে consumer credit।
তবে সুদের হার কমে গেলে সাধারণ মানুষ যে জিনিসের দিকে আরো বেশী ঝোঁকে তা হলো স্থাবর সম্পত্তি। ফ্ল্যাট বা বাড়ি বা জমি। চক্রবৃদ্ধি সুদের হিসাব কষলে দেখবেন যে ৩০ বছরে ৬% সুদ আর ৩০ বছরে ৪% সুদ - এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক আছে। মাসিক কিস্তি অনেক কমে আসে। আর সুদ যদি নেমে আসে ১%-এ, তাহলে তো কথাই নেই! ধরতে গেলে এক প্রকার বিনা সুদেই আপনি বাড়ি কেনার লোন পাচ্ছেন। এমতাবস্থায় বাড়ি না কেনাটাই উজবুকের কাজ হবে।
নিকৃষ্ট ঝুঁকির কাছে টাকা দিতে নেই...
কিন্তু কথার পেছনেও কথা আছে। মাহফুজ আর ছোটন আমার দুই ভাইয়ের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। একজন কুম্ভকর্ণ, আরেকজন চটপটে কর্মঠ। একজন ঋণ পাওয়ার অযোগ্য, আরেকজন বেশ ভালো মতোই যোগ্য। প্রথমজন subprime বা নিকৃষ্ট ঝুঁকি, দ্বিতীয়জন prime বা উৎকৃষ্ট ঝুঁকি।
এখন প্রশ্ন হলো সুদ ১% হলেও কি আপনি জেনে শুনে ভূল মানুষকে ঋণ দেবেন? জেনে শুনে একজন সাবপ্রাইম গ্রহীতাকে টাকা ধার দেবেন? বুদ্ধিমান বা দায়িত্বশীল হলে আপনি তা করবেন না। কারন সেই লোকের তো কোন আয় বা উপার্জনই নেই। ওকে ধার দিলে আপনার নিজের টাকাটাই খোয়া গেলো।
কিন্তু - কিন্তু আপনার নিজের টাকা যদি না যায়? ধরেন আপনি শুধু middleman, মধ্যস্থতাকারী। ব্যাংক আর মাহফুজের মধ্যে সমন্বয় করে দিয়ে আপনি কমিশন খাবেন, তারপরে কাট মারবেন। তখন কি হবে? তখন শুধুমাত্র আপনার সুপারিশে, না জেনে না বুঝে ব্যাংক একটা খারাপ লোন দিলেও দিয়ে ফেলতে পারে। পরে গিয়ে মাহফুজ যখন টাকা ফেরত দিতে অপারগ হবে, তখন শুধু ব্যাংকই ধরা খাবে। Middleman তার কমিশন নিয়ে তদ্দিনে পগার পার।
সাবপ্রাইম - অসাধু কার্যকলাপের কারখানা
সাবপ্রাইম ক্রাইসিস অনেকটা এভাবেই তৈরী হয়েছে। ১% সুদের যুগে সাধু এবং অসাধু (অনেক অনেক অসাধু) পন্থায় অযোগ্য নিকৃষ্ট মানের লোকের কাছে ঋণ গছিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ জেনে বুঝে ঋন দিয়েছে, কেউ কেউ না জেনে middleman জাতীয় সংস্থার কথা শুনে ঋণ দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকিং সিস্টেমে যেই জিনিসটা একেবারেই অপরিহার্য, তা হলো আপনার ঋণগ্রহীতার সম্ভাব্য default risk সঠিক ভাবে নিরুপণ করা। সাবপ্রাইম ক্রাইসিসের সময়ে ব্যাংকিং-এর এই বিসমিল্লাহ'র নিয়মটা, খোদ কলেমা'টাই সবাই ভুলে গিয়েছিল। অথবা ইচ্ছা করে উপেক্ষা করেছিল। আজেবাজে লোকের কাছে ছলেবলে কৌশলে কোটি কোটি ডলার, হাজার কোটি ডলারের ঋণ দেওয়া হয়েছিল।
কি আশায় যে এই সব ঋণ পাশ হয়েছিল, আজ তা বোঝা মুশকিল। কিন্তু সত্যি কথা হলো এই যে সেই সময় কেউই বাধ সাধেনি। সবাই বরং হাত-তালি দিয়েছে। বুশ সরকার বলেন, ফেড চেয়ারম্যান গ্রীনস্প্যান বলেন - সবাই তখন কেবল বাহবাই জানিয়েছে। বলেছে 'হাউজিং তুমি এগিয়ে যাও। সবারই বাড়ি কেনার অধিকার আছে। এই অধিকার রক্ষায় আমরা ঘোর সংকল্প'।
কিন্তু কথাটা ঠিক না। সবারই কি আসলে বাড়ি কেনার 'অধিকার' আছে? যে লোক অলস, অকর্মণ্য সে কোন সাহসে বাড়ি কিনবে? সে কিভাবে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করবে? কিম্বা যার পড়াশোনা কম, যার চাকরি হলো ম্যাকডনাল্ডস-এ বার্গার বানানো, সে কোন ভরসায় তার সামর্থ্যের বাইরে বাড়ি কিনতে যাবে? তার সামর্থ্য অনুযায়ী যদি তাকে ঘর ভাড়া করেই থাকতে হয়, তাহলে কি তার সেটাই করা উচিৎ না? বাকি দুনিয়ার মানুষ তো তাই করে!
মুশকিল হলো গ্রীনস্প্যানের সৃষ্ট হাউজিং বাব্লের সময় এই সব কমন সেন্সের কথা, এই সব নিতান্ত সাধারণ বুদ্ধির কথাও বেশীর ভাগ মানুষই ভুলে গিয়েছিল। সরকার, ফেড, মিডিয়া - কেউ একবারও প্রশ্ন তোলেনি যে কি সব যাচ্ছেতাই কাজ হচ্ছে মার্কেটে।
অপর দিকে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক, মিডেলম্যান, আর ঋণগ্রাহক সাধারণ মানুষ, এরাও কেউ এইসব হক-কথায় কান দেয়নি। সবাই লাভ গুণতে ব্যস্ত ছিল কি না...
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু
ফলে যা হবার তাই হয়েছে। শত কোটি ডলার, হাজার হাজার কোটি ডলারের ঋণ আজ খেলাপী হয়েছে। ডানে বাঁয়ে ব্যাংক আর মর্টগেজ ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে। পর্বত প্রমাণ লোকসান দিচ্ছে এরা।
সাধারণ মানুষও আর বাড়ির পেমেন্ট মেটাতে পারছে না। এদের মধ্যে অনেকেরই কিন্তু কখনোই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য ছিল না। তাও তারা ঋণ নিয়েছিল। হাজার হাজার লোক এখন ঘর থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে, ঘরছাড়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে জঘন্য এক অবস্থা তৈরী হয়েছে।
তবে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হলো ঋণ প্রদান করতে গিয়ে জোচ্চুরিগুলা। একেবারে ফেডের নাকের তলায় যে কত বিভিন্ন রকমের শয়তানী হয়েছিল, ভাবলে এখন তাজ্জব লাগে। কিন্তু গ্রীনস্প্যান সাহেব কিছুই দেখেননি, কিছুই বোঝেননি। তিনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছেন। যখন ঘুম থেকে একটু আড়মোড়া দিয়ে উঠেছেন, তখন বাড়ি বিক্রির চমৎকার সব পরিসংখ্যান দেখে আবার হাসিমুখে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে গেছেন।
কর্তব্যে চরম অবহেলার যে নজির তিনি দেখিয়েছেন, সেটাই আবার প্রতিফলিত হয়েছে অন্যত্র - ব্যাংক ম্যানেজারের গাফিলতিতে, ফিনানশিয়াল প্রেস এবং টিভির উজবুক রিপোর্টার আর কমেন্টেটরদের নির্বোধ উল্লম্ফনে।
আগামী পর্বে হাউজিং সেক্টরের নানান অপকীর্তির বিশদ বিবরণ দেওয়ার আশা রাখি। তবে NINJA লোনের কথা বলেই আজকে শেষ করবো। NINJA মানে No Income, No Jobs or Assets। মানে ঋণগ্রাহকের এসব কিছুই নেই - না কোন চাকরি, না কোন আয় উপার্জন, না কোন ধন-দৌলত। এমন লোককে যখন বাড়ি কেনার জন্যে ঋণ দেয়া হয়, সেটাকে বলে NINJA ঋণ। গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এমন কিম্ভুত কিমাকার ঋণও অঢেল হারে পাশ হয়েছে, লক্ষ লক্ষ ভাদাইম্মা লোক এমন ঋণ নিয়ে বাড়ি 'কিনেছে'। যেই দেশে এই সব অপকর্ম ঘটতে পারে, সে দেশের অর্থনীতিতে কিভাবে মঙ্গল আশা করা যায়?
মন্তব্য
কমেন্ট করার জন্যে লগইন করলাম।
গত সপ্তাহর খবরগুলো আসলেই ভয়ংকর অনুভূতি তৈরি করবার মতোন।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
গ্রীনস্প্যানের উত্তরসূরী নতুন চেয়ারম্যান বেন বের্ন্যাংকি (Ben Bernanke) প্রচন্ড চাপের মুখে আছেন। এই মাসের ৩০ তারিখে ফেডের মিটিং আছে। মন্দা আবার আসছে - এই ভয়ে তিনি সুদের হার ০.৫০% কমাবেন, এটা প্রায় লিখিত হয়ে আছে। তার ফলাফল কি হয় দেখা যাক।
এমনিতে বের্ন্যাংকি অর্থনীতি শাস্ত্রে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে তার যেই পরিমান গবেষণা ছাপা হয়েছে, তার কোথাও কোন জুড়ি নেই। বলা হয় যে সমগ্র পৃথিবীতে আর কোন ব্যক্তি নেই যিনি সেন্ট্রাল ব্যাংকিং-এর খুঁটি-নাটি সম্পর্কে এত কিছু জানেন। সেই বেচারা বের্ন্যাংকি-কেই এখন বসানো হয়েছে গ্রীনস্প্যানের ময়লা সাফ করার জন্যে। তিনি কিভাবে এই মিরাকেল সমাধা করেন সেটাই সবাই দেখার জন্যে অধীর আগ্রহে বসে আছে।
বেন বের্ন্যাংকির ছোট প্রোফাইল - বিবিসি থেকে
The Education of Ben Bernanke - নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটা অসাধারণ (এবং অনেক লম্বা) প্রোফাইল
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অসাধারণ!
সাবজেক্টটা একসময় খুব প্রিয় ছিল। পরে আর পড়া হয়নাই। গাধা প্রকৃতির মানুষতো। খুব দ্রুত পড়াশোনার পাট চুকায়া হাপ ছাড়ছি। অনেক বছর পর আপনার কল্যানে আবার পড়তাছি। খুব ভাল লাগছে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
একটা ফাটাফাটি সিরিজ। ব্যাপারগুলো জানি তবে এতো সুন্দর করে লিখতে পারবো না, তাই জাঝা দিলাম।
আপনি এক কাজ করুন। "... for dummies" সিরিজের বইগুলোর স্টাইলে বাংলায় "নাদানদের অর্থনীতি" নামে (বা অন্য কোনও নামে) একটা বই লিখে ফেলুন।
সিরিয়াসলি বলছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হাহা আপনের অশেষ মেহেরবানী আরিফ ভাই কইসিলো এইটারে ই-বই করতে। সিরিজ শেষ হইলে করুম। তয় এইটা শেষ হইলে মূল্যস্ফীতি নিয়া আরেকটা সিরিজ শুরু করার ইচ্ছা আছে। যদি পাবলিক ইটা না মারে, দ্যাট ইজ!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বেন বেনার্ণকি র কালো চোখমুখ দেখতে হচ্ছে খবর-টবরে ইদানিং। বেচারি, গ্রীনস্প্যানের পাপের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে।
এরপরের লেখায় স্ট্যাগফ্লেশন (Stagflation) শব্দটা থাকবে, আশা করছি।
বুশ বাবাজির আশ্বাস শুনেও তো কোন কাজ হলো না দেখি।
এই বছরটা এইরকমই যাবে মনে হচ্ছে।
উহ, একটা তেলের কুয়ো যদি থাকতো, তাহলে লোকজনের সর্বনাশে নিজের পৌষ মাসটা অনুভব করতে পারতুম। এক কাজ করা যেতে পারে, ভূট্টার চাষ শুরু করা যায়!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
উপরে উল্লেখিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টের শেষের দিকে এসে বিস্মিত হলাম। বোঝা যাচ্ছে যে বাব্লের দোষ শুধু গ্রীনস্প্যানের একার না। গ্রীনস্প্যানের অধীনে ফেডের একজন গভর্নর হিসেবে বের্ন্যাংকিও সেই আমলের সুদের হার নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন!! উদ্ধৃতি -
Bernanke must be regarded as one of the intellectual authors of the low-rate policy that fed the housing bubble.
Bernanke is also firmly opposed to the notion that central banks should raise rates to prick bubbles in the stock market or elsewhere.
তাজ্জব বনে গেলাম একেবারে। গ্রীনস্প্যানের একার দোষ দিয়ে আর লাভ কি তাহলে? যদিও এটা ঠিক যে কথাবার্তা আর সংযত আচরনের কারনে বের্ন্যাংকি-কে তার পূর্বসুরীর থেকে কম ideological ভাবা হয়। তবুও...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
দারুণ হচ্ছে। এই বিষয়গুলো চোখের সামনে দেখি, কিন্তু এভাবে ব্যাখ্যা পাইনি। আপনার চশমা ধার করে চমৎকার দেখতে পাচ্ছি এখন।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
এই সিরিজ পড়ার পর আমার তো নিজেকে অমর্ত্য সেন মনে হচ্ছে আজকাল
বিনা পরিশ্রমে এমন ভাবে যদি বাকি বিষয়গুলাও শিখতে পারতাম
-----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
হাহাহ আরে ধুর, ঐ অমর্ত্য ব্যাটা কিছু জানে না কি। হালায় চাপা মাইরা নোবেল পাইছে
Just kidding! অমর্ত্য সেনের মূল অবদান Welfare economics এর উপরে একটা আলাদা কোর্সই ছিল আমাদের। বাপ রে বাপ। বস মানুষ। কি চিন্তা-ভাবনা তার। অর্থনীতির পুরা সনাতনী মডেলরেই সে চ্যালেঞ্জ দিয়া বসচে। এই কারনে orthodox ধারার অনেক অর্থনীতিবিদ তারে পাত্তা দিতে চায় নাই। কিন্তু শেষ হাসি সেই হাসলো।
আরো ইন্টারেস্টিং যেই ব্যাপারটা - তা হইলো বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলার বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অনেক বাঙ্গালি আছেন - বিশেষ করে ওপারের। NYU তে আছেন দেবরাজ রায়, ক্যাম্ব্রিজে আছেন পার্থ দাশগুপ্ত, কর্নেল-এ আছেন কৌশিক বসু, MIT তে আছেন অভিজিত ব্যানার্জি। ভাবতেই অবাক লাগে এতোগুলা ডাকু অর্থনীতিবিদ বাংলার মাটি থেকে আসলো! আর প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের ইউনুস তো আছেনই।
নোবেল পাওয়ার পরে নোবেলওয়ালাদের জন্যে একটা আত্মজীবনী লিখেছিলেন অমর্ত্য। সেখানে তার ঢাকায় বড় হওয়ার কাহিনীও আছে। পড়ে দেখার মত।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনি লেখেন তো ভাল, কিন্তু বড় নেগেটিভ লেখেন। আপনি পরের সংখ্যায় অবশ্যই আমার অনুরোধ মেনে পজিটিভ কিছু লিখবেন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ডুবাইছেন! সিরিজের নামই তো 'গাড়ি চলে না'! পুরা গ্লোবাল ম্যাক্রো অবস্থা দেখলে তো বর্তমানে পজিটিভ বেশী নাই। আপনে কিছু পজিটিভ টপিকের উদাহরণ দেন, দেখি কি লেখা যায়
P.S. পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিবিদদের দাপট নিয়ে লেখলাম উপরে। এই বিষয়ে আপনের মন্তব্যের অপেক্ষায়...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
সুবিনয় ভাই:
আপনার এই সিরিজের আমি আগ্রহী পাঠক। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে অনেক লেখালেখি নেটে, সে তুলনায় বাংলা ভাষায় ইকনোমিকস-ফিন্যান্স কিংবা বিজনেসের লেখা তেমন চোখে পড়ে না।
আপাতত: সময়ের টানাটানিতে আছি। ফ্রি হলে আপনার এ সিরিজটাই আগে পড়বো।
ধন্যবাদ।
এই সিরিজের যারা পাঠক তারা হয়তো গত দুইদিন যাবত এশিয়া ও ইউরোপের স্টক মার্কেটের অনবরত অপ্রতিরোধ্য পতনের খবর দেখেছেন, টিভিতে বা পত্রিকায়। একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গেছে সব। ভাগ্যক্রমে গতকাল নিউ ইয়র্কের বাজার বন্ধ ছিল - মার্টিন লুথার কিং-এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে সরকারী ছুটি ছিল। নাইলে কি হতো কে জানে।
যাই হোক, আজকে নিউ ইয়র্ক খোলার আগে আগেই ভয় পেয়ে ফেডের বস বের্ন্যাংকি এই কিছুক্ষণ আগে এক জরুরী মিটিং ডেকে সুদের হার এক ধাক্কায় ০.৭৫% কমিয়ে দিয়েছেন। সবাই তাজ্জব হয়ে গেছে এই খবরে। এতোদিনের বাড়াবাড়ির এই তাহলে পুরস্কার! শোনা যাচ্ছে, একই সাথে অন্যান্য সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলাও সমন্বিতভাবে অতিসত্ত্বর সুদের হার কমাবে - ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড, ইত্যাদি।
দেখা যাক কি ঘটে। খেলা জমেছে বেশ!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আজকে স্টক মার্কেটের খবর পড়ে আবারো ঝালাই দিলাম। বাকী পর্বগুলা আরো তাড়াতাড়ি ঝাড়েন। দারুন সময়োপযোগী সিরিজ।
========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"
এখানে অর্থমন্ত্রী বলছেন আমেরিকার অর্থনীতি ধসলে আমাদের লাভ - ওরা কাজ আউটসোর্স করতে বাধ্য হবে। তা সত্ত্বেও তাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে আমাদের স্টক মার্কেট ২ দিনে ৪ হাজার পড়ে গেছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সুবিনয় ভাই:
এটা ই-বুক করেন, প্লিজ।
নতুন মন্তব্য করুন