চলচ্চিত্র - খালেদ হোসেইনি'র The Kite Runner

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: শুক্র, ২৫/০১/২০০৮ - ৭:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoদ্বিধাহীন চিত্তে একটা অসাধারণ চলচ্চিত্র আপনাদের কাছে রিকমেন্ড করার জন্যে লিখতে বসলাম। আফগান বংশোদ্ভূত ডাক্তার ও লেখক খালেদ হোসেইনি'র The Kite Runner উপন্যাসটি ২০০৫ সালে প্রকাশের পরে লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে সারা বিশ্বে। এপিক এক কাহিনী - আমির এবং হাসান নামের দুটি আফগান বালকের আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বাঁধা জীবনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে এক দুঃখ-ভারাক্রান্ত ইতিহাস। সত্তরের দশকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল শহরের যাদুময় জীবনযাত্রা, পশতুন এবং হাজারা সম্প্রদায়ের দ্বন্দ-মিল, অতঃপর রাজনৈতিক সংঘাত এবং রুশ সেনাবাহিনীর আফগান দখল, আফগান উদবাস্তুদের দেশত্যাগের রোমহর্ষক কাহিনী, বিদেশ-বিভূঁইয়ে লাখো উদবাস্তুর আবার শূন্য থেকে জীবন শুরু করা, এদিকে আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান এবং তাদের বীভৎস বর্বরোচিত শাসন - অনেক অনেক কিছু স্থান পেয়েছে এই কাহিনীতে।

সময় ছিল বছরখানেক আগে যখন টিউব বা বাসে উঠলেই মানুষের হাতে হাতে এই বইটা দেখতাম। বেস্ট-সেলারেরও বাপ। সেই বইটিকেই চলচ্চিত্রায়ন করেছেন সুইস চলচ্চিত্রকার মার্ক ফর্স্টার। (এই ভদ্রলোক কয়েক বছর আগে Monster's Ball ছবিটি বানিয়েছিলেন - Deep South'এর বর্ণবিদ্বেষ এবং সাধারণ মানুষের ঘৃণা ও ভালোবাসা নিয়ে সেই ধারালো ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন হালে বেরি, বিলি বব থর্নটন এবং সদ্য প্রয়াত অস্ট্রেলীয় অভিনেতা হীথ লেজার। উল্লেখ্য যে হালে বেরি এই ছবিতে অভিনয় করেই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেত্রী হিসেবে সেরা অভিনেত্রীর অস্কার জয় করেন।)

তো মার্ক ফর্স্টার-এর নাম দেখে শুরুতেই ভরসা পেয়েছিলাম। কি আর বলবো - এত অপূর্ব একটা ছবি অনেক দিন পরে দেখার সৌভাগ্য হলো। চিন্তা করেন শেষ কোন ইংরেজী মুভিটা দেখেছেন যেটা আড়াই ঘন্টা লম্বা ছিল, কিন্তু শেষ হবার পরে মনে হয়েছে 'আহারে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল? আরও কতক্ষণ যদি চলতো...' ফর্স্টার সেইরকম করে ছবিটা বানিয়েছেন - মুভির স্ক্রিপ্ট, পরিচালকের মেধা আর বিশেষ করে এডিটরের অসামান্য কাজের প্রশংসা করতেই হয় - নিমেষে পুরো সময়টা চলে গেছে!

autoআরো প্রশংসা করি নবীন অভিনেতাদের - যারা এই ছবির প্রাণ। হলিউডের প্রডাকশন হলেও ছবির প্রায় ৮০-৯০% ডায়ালগ ফারসি ভাষায় - বোঝার সুবিধার্থে ইংরেজী সাবটাইটেল দেয়া আছে। বিশেষ করে আমিরের ভূমিকায় জাকারিয়া ইব্রাহিমি আর হাসানের ভূমিকায় হাজারা গোষ্ঠীর বালক আহমাদ খান মাহমুদজাদা - এই দুই শিশু-শিল্পী হৃদয়-কাড়া অভিনয় দেখিয়েছেন। এরা জীবনে আগে কখনো অ্যাক্টিং করেননি। আমিরের পিতার ভূমিকায় চমৎকার অভিনয় করেছেন ইরানী অভিনেতা হুমায়ুন এরশাদী - কিংবদন্তীতুল্য ইরানী পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামি'র The Taste of Cherry চলচ্চিত্রে তাঁকে শেষ দেখেছিলাম বছর পাঁচেক আগে। দারুন অভিনেতা তিনিও।

পরিচালকের কথা আরেকবার উল্লেখ করতে চাই - সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা সংস্কৃতিকে তিনি যেই সম্মান ও সংবেদনশীলতার সাথে তুলে ধরেছেন, তার জন্যে তার সাধুবাদ প্রাপ্য। হ্যাঁ একেবারে শেষে এসে একটু খটকা লেগেছে - কিন্তু আফগান দৃশ্যগুলোর বেলায় একবারও patronizing বা আপত্তিকর বা অপমানজনক মনে হয়নি। এই ছবিটা যে কেন এক গাদা অস্কার মনোনয়ন পেলো না, সেটাই ঠাহর করতে পারলাম না। হলশুদ্ধ লোক যেখানে একাগ্র চিত্তে, পিন-পতন নীরবতায় ছবিটা দেখলো।

আরেকটা কারনে ছবিটা বাংলাদেশে ব্যাপক হারে প্রদর্শন হওয়া উচিত বলে মনে করি। আমরা সবাই তালেবানের দুঃশাসনের কথা শুনেছি, পড়েছি। দাড়ি না রাখলে পুরুষদের কি করা হতো, 'ব্যভিচার'-এর কি কি শাস্তি তারা দিতো, এই সব জানা কারো বাকি নেই আজ। কিন্তু চোখের সামনে সেই পাশবিক বর্বরতার চিত্রায়ন যখন করা হয় - ৪০ ফুট উঁচু রঙ্গীন পর্দায় যখন দেখি কিভাবে একটা মানুষের মাথায় পাথর মারলে সেটা ফেটে ঘিলু বেরিয়ে যায়, তখন একদম পেটে লাথি খাওয়ার মতো লেগেছে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বাড়াবাড়ি, জামাত-শিবির এবং অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা আমাদের দেশকে কোন জাহান্নামের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে, তার একদম বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। যারা দেশে ফিল্ম ক্লাবের সাথে জড়িত আছেন, তাদের অনুরোধ করবো এই ছবিটা শতবার বাংলাদেশে দেখানো হোক, হাজারো তরুন দেখুক এই ছবি, দেখুক শিখুক জানুক বুঝুক কি রকম জানোয়ার ঘুরঘুর করে আমাদের মাঝে।

P.S. দুঃখজনক তবে সত্য যে এই ছবিতে একটা রেপের দৃশ্য চিত্রায়নের কারনে শিশু অভিনেতাদের আফগানিস্তান ছেড়ে আরব আমিরাতে চলে যেতে হয়েছে। হলিউডের জন্যে একটা কালিমা হিসেবেই দেখতে হয় সেটা। কিন্তু ছবির গুণগত মান তাতে কোনভাবেই হের-ফের হয় না। অকুন্ঠ চিত্তে রিকমেন্ড করা গেলো।

P.P.S. অল্প কয়েকদিনের জন্যে দেশের বাইরে যাচ্ছি, net access অনিশ্চিত, তাই হয়তো পার্টিসিপেট করতে পারবো না। পুনরায় ফিরিয়া আলাপ হইবে নিশ্চয়!

মুভির ট্রেইলার


মন্তব্য

ধ্রুব হাসান এর ছবি

দাদা রিভিয়্যু তো দারুন করেছেন, বাহ! দেখি সোমবারের মধ্যে দেখা যায় কিনা! দেখা থাকলে আরো মন্তব্য করার সাহস পেতাম, দেখে না হয় আবার করবো, কি বলেন? একটা ভালো কথা বলেছেন সচলের সাথে দেশের তরুন ,যারা চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবেন সিরিয়াসলী তাদের ইনভলব্‌ করা গেলে ভালো হতো! তাদের কর্মকান্ড আর আমাদের এখানের বা গোটা দুনিয়ার কারেন্ট চলচ্চিত্র ভাবনার একটা আদান প্রদান সহজেই করা যেত! তাছাড়া প্রত্যেকের নিজস্ব কালেকশন থেকেও উপকৃত হতে পারতাম!
ও আরেকটা কথা যোগ করি এই উপন্যাসের আরেকটা হিন্দী ভার্সনের ছবি দেখেছি আমি কিছুদিন আগে, যদিও ছবিটা ২০০৪ এর শেষে বানানো, এখনো রিলিজ হয়নি; নামও এক, কাইট রানার!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

সংশ্লিষ্ট লিঙ্কসমূহ

১. The Kite Runner ব-e
সাইজ: ১.৩ মেগাবাইট
ফরম্যাট: পিডিএফ

২. The Kite Runner সিনেমা (ড়্যাপিডশেয়ার ডাউনলোড)
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত
পাসওয়ার্ড: SilentGround.org
সাইজ: ৬৯৫.৫১ মেগাবাইট
রিজলিউশন: ৬০৮x২৫৬

৩. টরেন্ট (এই পাতায় নানান সাইজের নানান ফরম্যাটের কয়েকটি লিঙ্ক আছে)

বইটা এখনও পড়িনি। দেখিনি ছবিটাও। এমনকি ডাউনলোড পর্যন্ত শুরু করিনি। লিঙ্কগুলো পেয়ে ভাবলাম, আগে শেয়ার করি সকলের সঙ্গে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

ধ্রুব হাসান এর ছবি

থাঙ্কু ভাই, কিন্তু য়্যুসার নেইমটা দিলেন না?

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ড়্যাপিডশেয়ার থেকে .rar-এ প্যাকেটকৃত এই সাতটি ফাইল ডাউনলোড করে নিয়ে খুলবার সময় এই পাসওয়ার্ডটা বসাতে হবে। য়্যুজার নেইমের কোনও প্রয়োজন হবে না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

ধ্রুব হাসান এর ছবি

thanks

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ সুবিনয়। এই ছবি নিয়ে সচলে আলোচনা করার জন্য।
ছবিটা দেখার আগে বইটা পড়া দরকার, এই বোধ থেকে এখনও ছবিটা দেখিনি। কিন্তু সর্বত্র প্রশংসা পড়ছি, ছবির ও উপন্যাসের।

সন্যাসীকে ধন্যবাদ বইয়ের লিংক দেয়ার জন্য। ডাউনলোড করে ফেলেছি। আমাদের লাইব্রেরিতে বইটা নেই। আমাজন থেকে কিনবো বলে উইশ লিস্টে তুলে রেখেছি। কিন্তু আগে কেনা বইগুলো সব পড়া হয়নি এখনও। আর কাজের কথা বাদ দিলাম।

আফগানিস্তানের এরকম কাহিনী নিয়ে হলিউড ছবি বানাতে এগিয়ে এলো। হয়তো আফগানিস্তান এখন পৃথিবীর আগ্রহের বিন্দু বলে। বাংলাদেশ নিয়ে এরকম কাহিনী বা ছবি হয় না? বাংলাদেশের কী এমন কাহিনী আছে যা বিশ্বকে বলা যায়, বা বিশ্ববাসী আগ্রহ ভরে শুনবে? সচলরা একটু ভাবনা-চিন্তা করে জানাবেন কি? এরকম কিছু লিখতে পারলে মনে করতাম জীবন স্বার্থক।

খালেদ হোসেইনি-র দ্বিতীয় উপন্যাস এখন বাজারে। সমান আগ্রহে পড়ছে পাঠকরা। এমডি করার পর ডাক্তারি বাদ দিয়ে ফুলটাইম লেখক হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। অবিশ্বাস্য সাফল্যও পেয়েছেন।

সচলে ফিল্ম-আগ্রহী ব্লগার কি খুব কম? অন্য কেউ ছবিটা দেখে থাকলে রিভিউ করুন। নিদেনপক্ষে একটা মন্তব্য।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি

বইটা শেলফ থেকে বার করেছি কম করে হলেও বার দশেক, কিন্তু একবারও পড়া হয়নি মন খারাপ ...। সন্ন্যাসীকে ধন্যবাদ। ইউটিউবে তুলে দিতে পারলে বেশ হতো খাইছে ...।

মুস্তফীদার রিভিউটা আরাম করে পড়লাম। আমি বই বা সিনেমার রিভিউ সাধারণত পড়ি না, অনেক কাঁচা রিভিউয়ার পুরো কাহিনীটা বলে দিয়ে পঠন বা দর্শনের আনন্দ মাটি করেন বলে। এই লেখাটাকে একটা কাঠামো-রিভিউ হিসেবে ধরে নেয়া যায় অকুণ্ঠচিত্তে। ধন্যবাদ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রানা মেহের এর ছবি

প্রচ্ন্ড ভাল ছবি।
শুধু সোহরাব কে মুক্ত করা একটু বেশী
হিরোইক হয়ে গেছে।
আফগান মিউজিক আর গান অসাধারণ।
রেপ হবার পর হাসান যখন হেটে আসে
বলে, চল আগা সাহেব অপেক্খা করছেন।
এতো কষ্ট হয়।

বাংলাদেশের দেশ প্রেমের ছবি গুলো
সাধারণত বিশাল কান্নাকাটি
আর বীর মুক্তিযোদ্ধার (অথবা তার সন্তানের) শহীদ হবার
বাইরে যেতে পারেনা। অন্তত আমার দেখা মতে।
নাহলে আমাদের কাহিনী কম ছিলনা
শোহাইল মতাহির চৌধুরী

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।