এই বিতর্কে যাবো কি যাবো না, সেই চিন্তা করতেছিলাম। পরে ভাবলাম কি আছে দুনিয়ায় - যারা ইচ্ছা করে ভুল বুঝবে তারা ভুলই বুঝে যাবে, আর যারা খোলা মনে পড়বে, তাদের মন সব সময়ই খোলা। প্রেজুডিস বা বিদ্বেষ জিনিসটা কি রকম, এইটা অনেক লেভেলেই প্রত্যক্ষ করছি এই জীবনে - তার কয়েকটা উদাহরণ মাথায় আসতেছে এই মুহুর্তে।
- ইংরেজী মিডিয়াম বনাম বাংলা মিডিয়াম
- গুলশান-বনানী বনাম নাখালপাড়ার পোলা
- বড়লোক বনাম মধ্যবিত্ত বনাম নিম্নবিত্ত
- ভদ্রলোক বনাম রিকশাওয়ালা
- 'আঁতেল' বনাম নন-আঁতেল
- ঢাকার পোলা বনাম 'মফু' বা 'মফিজ'
- ক্যাডেট বনাম নন-ক্যাডেট
- গ্রামের কাজিন বনাম শহরের কাজিন
- হিন্দু-খৃস্টান বন্ধু বনাম মুসলিম, ইত্যাদি।
এইগুলা তো গেলো কেবল দেশের কথা। বিদেশে যে প্রতিদিন প্রতি বেলায় আরো কয়শো রকমের নতুন বৈষম্য দেখতেছি, তা নিয়ে বলতে গেলে উপন্যাস লেখা ছাড়া উপায় থাকবে না।
*
লেখাটা অফিসে বসে কাজের ফাঁকে লেখতেছি, তাই খাপছাড়া লাগলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নেই। কনফুসিয়াসের পোস্ট, পরবর্তীতে তিথি, হিমু, শিমুল আরো অন্যান্যের কমেন্ট পড়লাম। ইংলিশ মিডিয়াম নিয়ে বিষোদগার অন্তত আমার জীবনের গত ১৫-২০ বছর ধরে দেখতেছি, শুনতেছি। প্রথম প্রথম পিত্তি একটু জ্বলতো। অনেকদিন ধরে তাও জ্বলে না। মাঝে মাঝে এই ব্লগ বা অন্যান্য ব্লগে যা দেখি, সেটা সেই পুরানো বিদ্বেষ বা বিষোদগারেরই অনলাইন সংস্করণ। এইটা নিয়েও বিশেষ বিচলিত হবার কিছু দেখি না। তবে হাসি পায় বিদেশে ইমিগ্র্যান্ট পাবলিক যখন দেশীয় ইংলিশ মিডিয়ামদের গাইল দেয়। সাহিত্যে যারে বলে irony।
*
ইংলিশ মিডিয়ামের অনেক পোলাপানের, অনেক স্কুলেরই প্রবলেম আছে। এই কথা সবার আগে আমিই বলি। অনেক স্কুল আছে - কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে এই সব জায়গায় - যেইখানে স্কুলের বাউন্ডারির ভিতরে বা ক্লাসের ভিতরে ছাত্রদের বাংলায় কথা বলা নিষেধ। এই স্টুপিড আইন বজায় রাখা অসম্ভব - কিন্তু তাও কেউ কেউ এই নিয়মটা বানায়। কেন তারা এইটা করে তা আমার আন্দাজে নাই - হয়তো একটা সেকেন্ড-হ্যান্ড ঔপনিবেশিক মানসিকতা, হয়তো একটা ফালতু সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। কিম্বা হয়তো তারা চায় সারাক্ষণ চর্চার মাধ্যমে ছাত্রদের ইংলিশটা এক্কেবারে ফ্লুয়েন্ট হয়ে যাক। কিম্বা সবগুলা কারনের মিশ্রণও হতে পারে।
যেই কারনেই হোক এই সব স্কুলে বাংলার 'নীচু স্ট্যাটাস' আর ইংরেজীর উচ্চ স্ট্যাটাস নিয়ে একটা বাজে ধারনা স্টুডেন্টদের মনে একেবারে ছোটকালে ঢুকায় দেওয়া হয়, সেইটা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত ফলাফল হোক। যেহেতু অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কালচার নিজস্ব একটা বুদবুদের মতো, তাই এদের ছাত্র-ছাত্রীরা এই মানসিকতা নিয়েই বড় হয়, অন্তত এ-লেভেল পর্যন্ত। বুদবুদ থেকে বেরুবার আগে তারা আর কোনভাবে চিন্তা করতে পারে না।
(ও-লেভেল = ম্যাট্রিক। এ-লেভেল = ইন্টার।)
*
কিন্তু অনেক স্কুল আছে যেইখানে বাংলা ভালো মতোই শিখানো-পড়ানো হয়। ভূগোল-রসায়ন সব ইংরেজীতেই শিখতেছে কিন্তু বাংলা টিচার আছে, বাংলা ক্লাস আছে, বাংলা সাহিত্য আর ব্যাকরন বই, সব কিছুই আছে। আমি আর আমার ক্লাসমেটরা ছোটবেলায় কায়কোবাদ আর সুফিয়া কামালের কবিতা মুখস্থ করছি। ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত 'আমার বই' সিরিজ পড়ছি। কে ঐ শোনালো মোরে আজানের ধ্বনি। কালো মানিক হোক বা বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী, সব পড়ছি। গোলাম সাকলায়েনের একের ভেতর পাঁচ থেকে গ্রামার শিখছি। ভাব সম্প্রসারণ বা সারাংশ করছি - দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মোহিতে, জাতীয়।
বাংলা শেখাটা বড় ইস্যু না। দেশের বেশির ভাগ ইংরেজী মিডিয়াম ছাত্রছাত্রীরা ও-লেভেলে বাংলা সাবজেক্টে পরীক্ষা দেয়। তাই বাংলা পড়া, জানা, বোঝাটা এদের জন্যে কোন সমস্যা না। আমি যখন কলেজে এ-লেভেল পড়ি - কাকরাইলের উইলসে - তখন ক্লাসের পোলাপানদের জন্মদিনে সবচেয়ে ভালো গিফট ছিলো হুমায়ুন আহমেদের বই। কেউ কেউ এক জন্মদিনে পাঁচ-ছয়টা করে হুমায়ুনও পাইতো। এইটা প্রায় ১৫ বছর আগের কথা - তখনও হুমায়ুন কিছু ভালো বই লেখতো। আমার ক্লাসের পোলাপান সুনীল, শীর্ষেন্দু আর সমরেশের বিরাট ভক্ত ছিলো। রমনার ঐপারে বইমেলায় যাওয়া রেগুলার ব্যাপার ছিলো। একেবারে সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন এই অভিযোগ তাই খাইতে রাজী না।
*
তবে অনেক কিছুর মতোই এইখানেও অর্থনৈতিক শ্রেণী বিভেদের ব্যাপারটা প্রবলভাবে কাজ করে। মার্ক্স বুড়া ঠিকই কইছিলো। ক্লাস ক্লাস ক্লাস - সব কিছু ছাপায় দেয় এই ক্লাস সিস্টেম। এ-লেভেল ছিল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার থেকে। আমার বাসা যেমন নাখালপাড়ায়, আমার ক্লাসমেটদের বেশীর ভাগ থাকতো মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, সিদ্ধেশ্বরী, কাকরাইল এই সব জায়গায়। এলিফেন্ট রোড, মহাখালি থেকে কিছু পোলাপাইন আছিলো, এমন কি পুরান ঢাকা থেকেও কয়েকজন। এরা সবাই সাধারন মধ্যবিত্ত বড়জোর উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের পোলাপান ছিল। সেই হিসাবে এরা 'নর্মাল' ছিল।
তবে আমার ও-লেভেল ছিল গুলশানের এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত সেই স্কুলে ছিলাম, গুলশান এক আর দুইয়ের মধ্যেখানে। খুব কঠিন বয়স। আমার বাপ, যে কি না গ্রামের ছেলে ছিল, ঢাকায় একটা ফার্মাসিউটিকাল কম্পানীতে চাকরি করতো, নাখালপাড়ায় বাড়ি তার - উনি যে কি বুঝে আমারে সেই স্কুলে পাঠাইছিলো, সেইটা ঠিক শিওর না। কিছুটা আন্দাজ করতে পারি - স্কুলের নিজের বাস ছিল তাই আনা-নেওয়া নিয়া বাড়তি টেনশন নাই - আর উনি সব সময়ই বলতেন ইংরেজী জানতে হবে ঠিক মতো, ভূল ভ্রান্তি ছাড়া।
তবে উনি নিজেও বোধ হয় বুঝেন নাই স্কুলের কালচারটা কেমন। পড়াশোনা একেবারেই খারাপ ছিল না - সাকলায়েন আর সুফিয়া কামাল ঐখানেই পাইছিলাম। তবে স্কুলের ছাত্রদের ব্যাকগ্রাউন্ড, তাদের অর্থ-বিত্ত আমার নাখালপাড়ার পরিবার, আমার বিক্রমপুরের বাপের থেকে পুরা ভিন্ন ছিল। উদাহরণ দেই - ক্লাস সিক্সে আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে ছিল যারা - মিশরের রাষ্ট্রদূতের ছেলে মোহাম্মদ, বাংলাদেশের তৎকালীন চতুর্থ-সর্বোচ্চ বড়লোকের (মরহুম ইব্রাহিম মিয়া) ছেলে পারভেজ, বাটা কম্পানীর কান্ট্রি ম্যানেজারের ছেলে শামীম। বিরাট স্টিল কারখানার মালিক-শিল্পপতির ছেলে মুখতার, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের পাইলটের ছেলে ইশতিয়াক, বিলেত ফেরত বাংলাদেশী ডিপ্লোম্যাটের ছেলে জাফর। আরো আসছিলো পরে - ইরাকী রাষ্ট্রদূতের ছেলে আলি, জাতীয় পার্টির এক এমপির ছেলে রাফি। এমনকি এরশাদের মাগী জিনাত মোশাররফের ছেলে (রানা মনে হয় নাম ছিল) সেই পোলাও আমাদের সাথে এক মাস ক্লাস করছিলো, সেভেন কি এইটে।
এইটা এরশাদের শাসনামলের কথা, তাই রাফি বা রানা'র কি রকম ঠাটবাট আন্দাজ করতে পারেন। রাফি খোদার তিরিশটা দিন বিরাট এক পাজেরো হাঁকায় আসতো। পাইলটের পোলা ইশতিয়াক প্রতিদিন অবিশ্বাস্য রকমের দারুন দারুন টিফিন নিয়ে আসতো। ক্লাসের অনেকেরই ছিল চকচকে নতুন নাইকি জুতা, দামি গেম এন্ড ওয়াচ এইসব। বলা বাহুল্য এরা প্রায় সবাই গুলশান বনানী আর বারিধারার পোলাপান ছিল। কিছু ধানমন্ডি। হাতে গোনা কিছু 'নর্মাল' ফ্যামিলির পোলাপান - সাইফুল মহাখালির, আমি তেজগাঁর। পুরাপুরি মিসফিট।
এদের সাথে পাল্লা দেওয়া আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না। নাইকি জুতা ছিল না, সুন্দর জামা কাপড় ছিল না। যখন কেউ জানতে চাইতো আমি কই থাকি, ছোট মনে বলতাম নাখালপাড়া। ক্লাসের পোলাপানরে সচরাচর আমার বাসায় আনতাম না। আমার আম্মা এই জিনিসটা বুঝতে পারছিলো। তাই বনানীতে শামীমের বাসায় বার্থডে পার্টি বা লালমাটিয়াতে রাফির বাসায় সন্ধ্যার দাওয়াতে আমাকে কখনো যাইতে দিতেন না। বলতেন - ওরা আমাদের মতন না, ওদের সাথে বেশী মেশা উচিত না। আমি তো আকাশ থেকে পরি। পুরা ক্লাসে সব মিলায় আছিই আমরা মাত্র এক ডজন ছাত্র, সবাই একদম ভাইয়ের মতন। এদের সাথে আমি কেমনে হিসাব করে মিশি বা না মিশি?! তাই একই সাথে আমি বড় হইছি ইনসাইডার আর আউটসাইডার হিসাবে। ওদের জীবন যাত্রা, কথাবার্তা, মনমানসিকতার সাথে খুব ভালো ভাবেই পরিচিত, ওরা অনেকে আমার ভালো বন্ধুও আজকে পর্যন্ত। কিন্তু একই সাথে আমি কখনোই ঐ জগতের না, ছিলামও না আর হইতে চাইলেও কোনদিন পারতাম না। হাজার রকমের মানসিক কমপ্লেক্স সৃষ্টি হইতে পারতো আমার এই রকম একটা পরিবেশে। সেইটা না হওয়ার বড় কারন ছিল অন্যদের থেকে পড়াশুনায় ভালো ছিলাম, আর বাসার পরিবেশ খুব পোক্ত ছিল। সেইটাতে আগে একটু যাই, পরে আবার শিল্পপতি রাষ্ট্রদূতদের কাছে ফিরতেছি।
*
আমার আব্বা আমাদের সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে একই সাথে ইংলিশ আর বাংলা গল্পের বই কিনে দিতেন। আমার সবচেয়ে প্রথম বই প্রগতি প্রকাশনের রাশিয়ান বাচ্চাদের বই আর লেডিবার্ড সিরিজের ইংরেজী বই। আক্ষরিক অর্থেই দুপুরে বাংলা গল্প আর বিকালে ইংরেজী গল্প পড়ে আমি আর আমার ভাইরা বড় হইছি। যখন আট বছর বয়স হইলো, তখন বইমেলায় যাওয়া শুরু করি। প্রতি ফেব্রুয়ারী মাসে একদিন আমরা বইমেলায় যাই - সোজা সেবা প্রকাশনীর স্টলে! কিনো জুল ভার্ন আর তিন গোয়েন্দা, কিনো ওয়েস্টার্ন আর কিশোর ক্লাসিক।
ঐদিকে আমার আম্মা হইলো হুজুর - উনি কইতো এতো গল্পের বই পড়লে কি বেহেশতে যাবি? বাজান এইবার নবীর জীবনটা একটু বাইর কইরা পড়ো। হজরত ওমরের বইটা পড়ো, রাবেয়া বসরীর বইটা পড়ো। সেগুলাও সব পড়ছি। আব্বা সব সময় বাসায় Bangladesh Observer রাখতো, তাই খবর পড়তাম ক্লাস ফাইভ কি সিক্স থেকে। স্পোর্টস নিউজ দিয়ে শুরু - গাভাস্কার আর স্টেফি গ্রাফ, ভিভ রিচার্ডস আর বরিস বেকার - পরে আস্তে আস্তে ওয়ার্ল্ড নিউজের পাতায় প্রবেশ, গর্বাচেভ আর রেগান। এই সব মনে পরে। আব্বা রিডার্স ডাইজেস্ট, টাইম পত্রিকা আনতো অফিস থেকে, তাও গিলতাম। এমন কি কবিতার বইও (ইংলিশ আর বাংলা দুটাই) আব্বা কিনে দিছিলো একবার। সুকান্ত আর ব্রাউনিং একই দিনে পাইছিলাম, ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ি তখন ।
তখন জানতাম না কিন্তু এখন বুঝতে পারি, এই রকম বাপ লাখে একটা।
*
এইবার গুলশান বনানীদের কাছে ফেরত যাই। ইংলিশ মিডিয়ামের সেই গোষ্ঠীর ছাত্রদের প্রোফাইলটা কি রকম। এরা অনেকেই দেশ মাটি সংস্কৃতি থেকে পুরাপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল। এদের অনেকের বাসায় বাপ-মা আংকেল-আন্টিরা দিন-রাত ইংলিশ বলতো। এই সব পোলাপানদের অনেকে বাংলায় লেখতে পারতো না, ভালোমত পড়তে পারতো না। এবং এই নিয়ে ওদের কোন মনোকষ্টও ছিল না। দেশে বড়লোক হইতে গেলে, বড়লোক থাকতে গেলে বাংলা জানাটা জরুরী না। তবে কি যে জরুরী সেইটা আপনেরাই বিচার কইরেন।
এইখানে একটা মজার ব্যাপার উল্লেখ না করলেই না। এই সব পোলাপান কিন্তু ইংরেজীতেও যে খুব একটা ভালো ছিল তা না। হয়তো মেকী মার্কিন এক্সেন্ট-এ চংবং করে কথা বলতে পারতো। স্যাটেলাইট টিভি, ভিসিআর (ফ্রেন্ডস ইত্যাদি) থেকে শিখে শিখে স্টাইল করে ইংরেজ়ী বলে তারা। হেই ডুড জাতীয়। কিন্তু এক পাতা ইংরেজী লেখতে দেন। চোখমুখ লাল হয়ে যাবে। জীবনে একটা বই কি, হয়তো একটা পেপারও খুলে দেখে নাই। এদের ইংলিশ আর বাংলার মধ্যে কোয়ালিটির তফাত বেশী না।
এক সময় এই জাতের লোকেরা ইংলিশ মিডিয়ামের একটা বড় অংশ ছিল। এরা দেশে ১৮ বছর থাকতো। তারপর আমেরিকা চলে যাইতো। ৪ বছর paid holiday কাটাইতো আমেরিকার কোন এক ইউনিভার্সিটিতে। তারপরে দেশে ফিরা বাপের ব্যবসার হাল ধরতো। মাঝখানের ৪ বছর হইলো দেদারসে পার্টি করার সময়। শাদা-কালা মাইয়া লাগানোর সময়, ড্রিংক্স-ড্রাগস নিয়ে মাস্তি করার সময়। দামী গাড়ি চালানো আর পয়সা উড়ানোর সময়, বিদেশী ফ্রেন্ডদের ইমপ্রেস করার সময়। এদের চরিত্র আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে। আমেরিকাতে দেখছি এক দল, এখন ৯/১১-র পরে লন্ডনেও এই দলের সংখ্যা অনেক অনেক বাড়ছে।
এদের কিছু কিছু বাংলা মিডিয়াম সংস্করণও পাবেন নামীদামী স্কুলগুলাতে - বিশেষ করে সেন্ট জোসেফ, নটরডেম আর হলিক্রস জাতীয় স্কুলের ভিতরে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে। এদের কেসটাও একটু পিকুলিয়ার। এদের অনেকের মধ্যেই superiority complex আর inferiority complex একই সাথে কাজ করতে দেখছি। ঢাবির আইবিএ-তে যখন ছিলাম, তখন এই রকম দেখছি কম না। এক কথায় বলতে গেলে ওরা ছিল - 'ইংলিশ মিডিয়ামের থেকেও বেশী ইংলিশ!' কথায় কথায় ইংলিশ ফুটানোর স্বভাব ছিল, ভূল কি ঠিক হিসাব নাই। আমরা কেউ বাংলায় উত্তর দিলেও সেই ছেলে হয়তো ইংরেজীতেই বলে যাবে। ভাষার ব্যাপারটা খুবই সূক্ষ্ম। ছোট-খাটো ভূলও কানে বাজে। ভূল করাটা খারাপ জিনিস না। কিন্তু আজাইরা জাহির করতে যাওয়াটা হাস্যকর ঠেকতো।
আবার অন্যরকমও দেখছি। আমার জীবনে দেখা ইংরেজী লিটারেচারের সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল রানা নামের এক ছেলে (মোশাররফ না!)। উত্তরায় বাসা, ঢাকা কলেজের ছাত্র, তারপর ঢাবি ইংলিশ ডিপার্টর্মেন্ট। জাহাজ ছিল। এমন কিছু তার পড়া বাকি ছিল না। চসার আর মিল্টন থেকে শুরু করে জয়েস আর এলিয়ট পর্যন্ত। ইংরেজী সাহিত্য যেমন জানতো, বাংলা সাহিত্যও তেমন। ওর ইয়ারে পরীক্ষায় রেকর্ড মার্ক পাইছিলো যা শুনছিলাম, এখন অস্ট্রেলিয়াতে এক কলেজে পড়ায়।
আইবিএতে যেইদিন ঢুকি, সেইদিন ক্লাসে ৮০ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ১২ জন আমরা ইংলিশ মিডিয়াম, আর বাকি ৬৮জন বাংলা। পরবর্তী সময়টা অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং ছিল আমাদের সবার জন্যেই। চার বছর পরে আমরা সবাই জিগরি দোস্ত। কিন্তু শুরুর দিকে এডজাস্ট করতে দুই পক্ষেরই কম বেশী সময় লাগছিলো।
*
তাইলে ঐ আর কি। ইংলিশ মিডিয়ামের জীবনটা একটা বাবেল। সেই বাবেলটা কতখানি পুরু হবে, ছেলেটা কতখানি উজবুক হয়ে বের হবে, সেইটার জবাবদিহিতা পুরাপুরি সিস্টেমের না। এইখানে পারিবারিক পরিবেশ, বাপ-মার মন-মানসিকতা, এমনকি শহরে ভৌগোলিক অবস্থান - আমার দেখামতে এই সব জিনিসই মুখ্য। আর ইংলিশ মিডিয়াম সেই ব্যাপারগুলাকে reinforce করে।
স্কুলের পর্ব শেষ করে চলে আসলে এদের অনেকেরই চোখ ফুটে। বুঝতে পারে যে গুলশান বনানী is not equal to বাংলাদেশ। যাদের ব্যাকগ্রাউন্ডটা একটু সাধারণ ছিল, তাদের জন্যে এই এডজাস্টমেন্ট-টা খুব বেশী কষ্টকর হয় না। কিন্তু যাদের ঐরকম বনানী বারিধারা স্টাইলে জীবন, তারা আগে যেইভাবে চিন্তা করতো, পরেও একইভাবে চিন্তা করে।
ওদের জন্যেও যাওয়ার জায়গা আছে। আইবিএ-তে না গিয়ে পড়বে আই ইউ বি-তে। আই ইউ বি জাতীয় কিছু বিশেষ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীই হইছে এই কারনে, এইসব পোলাপানদের দেশে চার বছর একটা পার্টির জায়গা করে দেওয়ার জন্যে। ভালো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি যেমন আছে, ঐরকম ফালতু আলাল-দুলাল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিও আছে।
তবে কথার পরেও অনেক কথা থাকে। ইংলিশ মিডিয়ামের alienation effect নিয়ে বলার আছে। বাংলা মিডিয়ামের insularity বা কুপমুন্ডকতা নিয়ে বলার আছে। আইবিএ-র প্রথম দুই বছরের অভিজ্ঞতাও খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। সেই সব নিয়ে আরেক দিন সময় পাইলে লিখবো।
কমেন্টে বেশী গাইল দিয়েন না ভাই।
মন্তব্য
"পছন্দের পোস্টে যুক্ত" করা হলো ।
অসাধারণ!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
চমৎকার হয়েছে পোস্টটা, কেন যেন মনে হচ্ছে শেষের দিকে ফট করে শেষ হয়ে গেলো ("সুন্দরী" বসের জন্যে না তো ?), এর পরবর্তী অংশটা চটপট শেষ করে ফ্যালেন।
তবে আপনার লেখায় আমার নাম উল্লেখ করার পর বিষোদগারের কথা বলেছেন দেখে স্পষ্ট অস্বস্তিবোধ করছি। ইংরেজি মাধ্যমের ব্যাপারে কোন বিষ আদৌ সঞ্চয় করেছি বলে মনে পড়ে না, উদগার তো দূরের কথা। মাধ্যম ইংরেজি হোক, বা বাংলা, বা আরবী, সেই মাধ্যমে পড়াশোনা করে যদি কেউ নিজের দেশ সম্পর্কে নিস্পৃহ বা বীতস্পৃহ হয়, সেই মাধ্যমকে তার দায় নিতে হবে। তর্ক চলতে পারে, নিজের দেশ সম্পর্কে ভালোবাসার ব্যাপারটা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ কি না, কিন্তু স্কুলে কি আমরা শুধু লগারিদম-বার্মার জলবায়ু-ভাব সম্প্রসারণ-এসে শিখতেই যাই?
ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রদের নিয়ে আলোচনাকে আপনি যদি "ইংরেজি মাধ্যমের ওপর নির্মম আক্রমণ" হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, তাহলে ব্যাপারটা ভুল দিকে চলে যাবে। ইংরেজি মাধ্যম থেকেই শুধু বুদ্বুদবালক তৈরি হচ্ছে না, তৈরি হচ্ছে বাংলা আর আরবী মাধ্যম থেকেও, সচলায়তনে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এর সদস্যরা, তা-ও এই বুদ্বুদবালকদের নিয়েই, মাধ্যম নিয়ে নয়। বুদ্বুদবালক তৈরি হচ্ছে, তার নিরসনে মাধ্যমের ভূমিকা যদি চোখে না পড়ে, তবে তা নিয়ে লোকজন অভিযোগ করবেই।
ইমিগ্র্যান্টদের দেশ নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে কি নেই, তা আমরা দৃষ্টিপাত ব্লগে চোখ বুলালেই বুঝতে পারি। তারা অভিবাসী হতে পারেন, কিন্তু দেশ নিয়ে মমত্ববোধটুকু বোধহয় কামিয়ে ফেলেননি। তবে আপনি যে নামগুলি আপনার লেখায় উল্লেখ করেছেন, তারা কেউ অভিবাসী নন, অনাবাসী ছাত্র বা কর্মজীবী, আপনারই মতো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হায় হায় আমি তো দেখি হুদাই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরী করলাম! বিষোদগার বলতে আমি যেই কয়জনের নাম বললাম তাদের কিন্তু মীন করি নাই। তোমারে তো নাই-ই! সাধারনভাবে বুঝাইছি। পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝি আছে অনেক। রাগ-ঝাল আছে। থাকা অস্বাভাবিক না। একজন লেখছিলো কয়েক মাস আগে, ও-লেভেল এ-লেভেল সব সনদ বাতিল করতে হবে! মনে আছে নিশ্চয়ই? ঐ জাতীয় পোস্টারদের জন্যেই এই লেখাটা আরো বেশী।
আর বিদেশে থাকাটা অপরাধ না। আমি নিজে বাইরে থাকি। বিদেশে থেকে দেশের চিন্তা করা, দেশ নিয়ে লেখালেখি করাটাও অপরাধ না। হইলে আমি বড় দোষী। কিন্তু একটা পুরা মিডিয়ামের ছাত্রদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন করাটা আমার কাছে বরাবরি কটু লাগে। টোয়েইন বলছিলো, patriotism is the last refuge of the scoundrel। আমাদের মত দেশে যেখানে এলিট শ্রেনী সব লুটেপুটে খাইলো, আর সুবিধাবাদী বুদ্ধি-বেশ্যা চারিদিকে (যাদের সন্তানেরা সবাই safely out of reach), সেইখানে টোয়েইনের কথাটা আরো বেশী মাথায় রাখি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমার মনে হয় টোয়েইন জোর দিতে চেয়েছিলেন last শব্দটার ওপরে, scoundrel এর ওপর নয়। দেশপ্রেমিক শব্দটার রাজনৈতিকীকরণ এত বেশি হয়েছে যে সাধারণ মানুষের দেশ নিয়ে মমত্ববোধ বা নরম জায়গাটুকুকে টোয়েইন এর উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে স্কাউন্ড্রেল বলে চালিয়ে দেয়ার বিপজ্জনক প্রবণতা তৈরি হতে পারে। সাধারণ মানুষের first refuge দেশপ্রেম, আমরা এটা কয়েক হাজার বছর ধরেই দেখে আসছি। স্কাউন্ড্রেল সেই কাতারে সবার শেষে গিয়ে দাঁড়ায়, যদি টোয়েইনের কথা ছুঁড়ে ফেলে দিতে না চাই।
আপনি যে পোস্টটির কথা স্মরণ করলেন, সেই পোস্টটিতে আমিও কিছু মন্তব্য করেছিলাম, সেগুলি স্মর্তব্য হতে পারে, যদি আপনার হাতে সময় থাকে। পুরো একটা মাধ্যমের ছাত্রদের অভিযুক্ত করাটা, আবারও বলি, নাৎসীবাদের মতোই শোনায়, কিন্তু যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিনের আলোচনা চলছে, সেটি পুরো মাধ্যমের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ছাত্রদের দিকে আঙুল তুলে নয়। ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রদের কেউ ফাঁসিতে চড়াচ্ছে না, কেউ তাদের ঘাড় ধরে কোন জায়গা থেকে বারও করে দিচ্ছে না, শুধু বলছে, কেন এ লেভেল পড়ুয়া একটা দামড়া ছেলে জানবে না একুশে ফেব্রুয়ারিতে কী হয়েছিলো। এই অজ্ঞতা হয়তো উচ্চমাধ্যমিক কিংবা দাখিল পরীক্ষার্থী কোন ছাত্রের মধ্যেও থাকতে পারে, খুবই স্বাভাবিক, আজকাল যা পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে নিজের ইতিহাস নিয়ে মূর্খতাও একটা বড় যোগ্যতা, একটা ফ্যাম, একটা হাইপ। এই অজ্ঞতা নিয়েই অভিযোগ, মাধ্যম নিয়ে নয়। এই অভিযোগকে আপনি যদি ঠেলেঠুলে ইংরেজি মাধ্যমের একজন ছাত্র হিসেবে নিজের ঘাড়ে নেন, তাহলে আপনি ভুল অভিযোগের শিকার করছেন নিজেকে।
আর আমি সত্যিই জানি না এখন ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা কেমন, তারা কী জানে অথবা জানে না। কাজেই আমার নিজের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেও কিছু বলবো না এ ব্যাপারে। আপনার সম্ভবত যোগাযোগ আছে ইংরেজি মাধ্যমের বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের সাথে, কাজেই তাদের হালহকিকত আপনি আমার চেয়ে ভালো জানবেন। আপনি যদি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ পুরোপুরি ফাঁপা, আমি আপনার কথাকেই সত্যি বলে ধরে নিয়ে খুশি হবো। আমিও চাই আমাদের দেশে বাচ্চাগুলি, তা সে গুলশানের কোন ইংরেজি মাধ্যমের হোক, কাঁঠালবাগানের কোন বাংলা মাধ্যমের হোক কিংবা নেকমরদের কোন আরবী মাধ্যমের হোক, দেশ নিয়ে জানুক, ভাবুক, কারণ দেশটাকে তাদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে আমাদের।
হাঁটুপানির জলদস্যু
"এই অজ্ঞতা নিয়েই অভিযোগ"
হিমু, এই অজ্ঞতার কারনটা কি হইতে পারে, সেই বিষয়ে তোমার মতামত কি? আমার নিজের এই বিষয়ে যা চিন্তা ভাবনা, সেইটার জন্যে ভিন্ন পোস্টের প্রয়োজন হবে। ইন ফ্যাক্ট, এই পোস্টে যত কমেন্ট আসছে, তার উত্তর ঠিকমতো দিতে গেলে নতুন পোস্ট ছাড়া উপায় নাই। আপাতত তোমার ভিউজ শুনতে আগ্রহী।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমার ধারণা, এ ব্যাপারগুলি সম্পর্কে বাচ্চাদের কোন কৌতূহল গড়ে ওঠার সুযোগই হয়ে উঠছে না। সম্ভবত স্কুলে এ ব্যাপারে কোন সক্রিয় উদ্যোগ নেই, দায়সারা "সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান" দিয়ে বছরের কয়েকটা দিন পার করা হচ্ছে, ঘরে ফিরে এসেও এমন কোন সুযোগ ঘটছে না এসব ব্যাপারে আলোচনার, কারণ ঘরে টিভি, ইন্টারনেট আর ফোন আছে। নানারকম উত্তেজক ঘটনা আছে জীবনে, পঞ্চাশ বা একশো বছর আগে ক্যাম্নেকী হয়েছিলো, সেটা আর ব্যাপার না অনেকের কাছেই।
আমাকে স্কুলে পিটিয়ে বা বাসায় ঠেঙিয়ে কোন কিছু শেখানো হয়নি। স্কুলের বইতে জিনিসগুলি কর্কশভাবে উল্লেখ করা ছিলো শুধু। কিন্তু আমি বেড়ে ওঠার সময় স্কুলে আর বাড়িতে যে চর্চাগুলোর মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেগুলি আমার কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছে। আমি নিজেই খোঁজ করে বই খুলে পড়েছি, কিছু না বুঝলে আমার বাবা বা ভাইকে জিজ্ঞেস করেছি। আজকে বাচ্চাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো অনেক কিছু আছে, তারা কোন কিছু না জেনেই শুধু টিভির সামনে বসে বছরের পর বছর পার করে দিয়ে দামড়া হয়ে যেতে পারে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি যদ্দুর বুঝি তা হলো এই রকম -
'কৌতুহল', 'সক্রিয় উদ্যোগ' - এগুলা এই বিচারে অবান্তর জিনিস। শোষক শ্রেণীর কোন মানুষ এইভাবে চিন্তা করে না, তাদের কাছে এইসব বুলি মাত্র। আধা ডজন চাকর-ড্রাইভার-দারোয়ান বেষ্টিত হয়ে যে বড় হইছে, তার মেন্টালিটি চিন্তা করো। যেই ছেলে বাপের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া গাড়িতে চড়ে অভ্যাস তার দিক থেকে ভাবো। অবলীলায় যে লাঞ্চ বা ডিনারে ৫০০০ টাকা বিল তুলতে পারে, তার কাছে অনেক কিছু পাওয়া যাইতে পারে - কিন্তু 'দেশের প্রতি মমত্ববোধ' আশা করাটা মোটামুটি বৃথা।
এইদিক থেকে আগানো ছাড়া বেশি কোন পথ খোলা নাই বলেই মনে করি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
মুশকিল হচ্ছে, শুধু যে এই পদের ছেলেমেয়েরাই দেশ সম্পর্কে কম জানে (আর কম জানাটাকেই স্বাভাবিক মনে করে) তা নয়, আপনি খোঁজ করে দেখুন, অস্বাভাবিক বিত্তবান নয় এমন পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এই একই প্রবণতা মাধ্যম নির্বিশেষে কাজ করে।
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, আপনার ভেতরে তো মেরে পিটিয়ে দেশের প্রতি দরদ গজানো যাবে না। এটা মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহল থেকেই আসে। "সক্রিয় উদ্যোগ" তার ফলশ্রুতি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
"আপনি খোঁজ করে দেখুন, অস্বাভাবিক বিত্তবান নয় এমন পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এই একই প্রবণতা মাধ্যম নির্বিশেষে কাজ করে।"
Exactly এই কথাটাই আমি বলেছি এবং বলতে চেয়েছি। বড়লোকের পোলাপান অধিকাংশই উন্নাসিক হয় সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু মধ্যবিত্ত এর পোলাপানরাও কিন্তু একই স্রোতে গা ভাসাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবার ( অন্তত মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনেক বেশি বলে আমার বিশ্বাস ) এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের ভূমিকা কেন যথেষ্ট না সে নিয়েই আমার প্রশ্ন ছিলো।
ইংরেজী মাধ্যমের কিছু ছাত্রকে দেখে এবং পড়িয়ে আমার মনে হয়েছে, স্কুলের পাঠ্যক্রম যথেষ্ট নয়, ছাত্রকে দেশের ব্যাপারে জানাতে।
---------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কিছু কথা মাঝখানে বলে ফেলি।
আমার মনে হয় 'স্বদেশপ্রেম' নিয়ে আপনি যে উক্তিটা করেছেন, সেইটা আসলে Mark twain এর না। বরং ডঃ জন্সন নামে বহুল পরিচিত Samuel Johnson এর। ১৭৭৫ সালের ৭ এপ্রিলের সন্ধ্যায় জনসন সাহেব উক্তিটি করেছিলেন বলে কথিত আছে। তবে কি কারনে মহামতি জন্সন উক্তিটি করেছিলেন তার উল্লেখ নেই।
এইতো গেল উদ্ধৃতি নিয়ে কথা।
আপনার অধিকাংশ কথার সাথে আমি সহমত। কিন্তু হয়ত একটু বেশি সহমত হিমু'র সাথে।
কে কোন মাধ্যম থেকে কি শিখে আসল, সেইটা দেখার বিষয় না। আজ বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে যদি শুনি কেউ বাংলা নববর্ষ কি জানেনা, বা সে care করে না, আমার পক্ষে মাথা ঠান্ডা রাখা মুস্কিল----কিছুই বলা যায় না, একটা কিল ও দিয়ে বসতে পারি। আমার এই চরম ভাবাপন্ন মতের সাথে, আমি জানি, অনেকেই দ্বি-মত পোষন করবেন। কিন্তু শুধু এইটুকু ভেবে দেখুন--- এরকম উদাসীন হয়ে, সারাটা দেশের মানুষ ও সংস্কৃতির কে কাঁচকলা দেখিয়ে কিছু লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে, আপনারই আশেপাশে---মাথাটা গরম হয় না?
সমাজে শ্রেনী বৈষম্য থাকবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে নানান স্তরে। কিন্তু যে দেশে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, সেই দেশের ভাষা, সংস্কৃতি আর সাধারন মানুষকে আমি কিসের বশে উপেক্ষা করব? আর এই 'ব্যারাম'টা আমার যদি হয়েই থাকে, সব কিছু বুঝে উঠতে পারার বয়স এলে, আমি কেন শুধরানোর চেষ্টা করব না? আমি কি শুধু সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক পরিবেশ এইসব কারনকে দোষী করে নিজে গাঁড়ল থেকে যাব?
মানুষ হিসেবে তাহলে আমার অর্জনটা কি? মাঠে চরে বেড়ানো কিছু চার পেয়ের চেয়ে আমি কি কোনো অংশে উন্নততর?
আবারো বলছি, ইংরাজী, বাংলা মিডিয়াম বিষয় না। নিজের দেশকে যদি হাস্যকর ঠেকে, তাহলে দেশে না থাকাই ভালো।
এবং আমার ধারনা, এরা কেউ শেষমেষ দেশেও থাকে না।
I stand fully corrected. বিকালেই গুগলে চেক করে দেখছিলাম যে জন্সনের উক্তি। আলসেমি করে বসেছিলাম।
আপনার বাকি কমেন্টের বিপরীতে নতুন তেমন কিছু বলার নাই। আগে যা বলছি, সেটারই পুনরাবৃত্তি করবো। এলিট শ্রেণীর যেই চৌর্যবৃত্তি-লুন্ঠন মানসিকতা দেশটারে সর্বস্বান্ত করছে, সেই একই মানসিকতা থেকে ইংলিশ মিডিয়ামের জন্ম, তার ছাত্রদের অজ্ঞতার জন্ম। একই মানসিকতার কারনে গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের সাধারণ একটা ছাত্রের ইংরেজী জ্ঞান কয়েক যুগ পিছায় দেওয়া হইছে।
এই কথাটা আগেও অন্য জায়গায় বলছি। আমার বাবা বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে বড় হয়ে তাঁর ইংরেজীর যেই দখল, সেইটা আজকের নটরডেম সেন্ট জোসেফদের থেকে হাজার গুনে ভালো। এইটা কেমনে সম্ভব? ইংরেজী ভাষা একটা tool মাত্র, এইটা এতোখানি politicize কিভাবে হইলো, কে করলো, আর তাতে লাভ-লোকসানই বা কাদের হইলো?
এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাওয়াটা অস্বস্তিকর। ইংলিশ মিডিয়ামদের কিল ঘুষি দিতে চাওয়াটা অনেক বেশী সহজ।
P.S. সংস্কৃতির ধারক-বাহকদের দুই একজনের কথা উল্লেখ না করলেই না। কবি আসাদ চৌধুরী, অভিনেতা আলী জাকের আর স্বাধীনতার চেতনাধারী আসাদুজ্জামান নূর - এদের সবার মধ্যে কমন জিনিসটা কি জানেন? এরা সবাই নিজেদের বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করাইছে। আমার কথাটি ফুরোলো।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
শেষ প্যারাগ্রাফের সাথে একমত।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা সময় স্কলাস্টিকায় মাস্টারী করেছিলাম। তখন দেখেছি যে শেখ হাসিনা পুত্র জয়, ডঃ কামাল হোসেন পুত্রী দীনা, সৈয়দ শামসুল হক পু্ত্র দ্বিতীয় ওখানকার স্টুডেন্ট ছিল। খারাপ লেগেছিল দেখে। এদের মধ্যে আমি বাংলা সংস্কৃতির তেমন কিছুই দেখিনি।
তখন বারবার সেলুকাস সাহেবকে মনেমনে ডাকতাম। কি বিচিত্র এই দেশ!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেই যদি আমার সেই লেখা ( যেটা থেকে বিতর্কের সূত্রপাত ) আপনাকে আঘাত করে থাকে। সত্যি কথা বলতে কি, আমি ওই লেখাটা প্রকাশ করার আগেও বেশ কিছুক্ষণ ভেবেছিলাম, প্রকাশ করবো কিনা, কারন আমি বুঝতেই পারছিলাম কিছুটা অনাকাংখিত ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে।
আমি সেই লেখাতেও বলেছি, আবারও বলছি, ইংরেজী মাধ্যমের সবাই এমন নয়। আমার এক বন্ধু অয়ন যে এখন ওয়াটারলুতে পড়ছে, আপাদমস্তক ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্র হওয়া সত্বেও চমৎকার বাংলা বলতে পারে, চলনসই বাংলা লিখতেও পারে। শুধু তাই নয়, যারা কিছুদিন আগে আমার একটি লেখা খেয়াল করেছিলেন যেখানে আমি বলেছিলাম আমাদের একটি ই-ম্যাগাজিনের কথা, আমাদের ফোরাম গল্প.নেট থেকে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত, তার মূল আয়োজক কিন্তু অয়ন নিজেই। শুধু তাই নয়, ওর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বোধের যে স্পষ্ট এবং পরিচ্ছন্ন প্রকাশ আমি দেখেছি, আমি বাজি লেগে বলতে পারি তেমনটা অধিকাংশ বাংলা মাধ্যমের ছাত্রের মধ্যেও নেই। এর পরই বলতে হয়, এই ব্লগের লেখক সুবিনয় মুস্তফীর কথা। ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্র হয়েও উনার বাংলা লেখার ক্ষমতা এবং পড়ার গন্ডী চোখ বুঁজে অধিকাংশ বাংলা মাধ্যমের ছাত্রকেও লজ্জা দিবে। এ দুজন ছাড়াও আরো কিছু লোককে চিনি এবং কথা জানি, যারা ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্র হয়েও বাংলাকে হৃদয়ে রেখেছেন সর্বাংশে। তাই আবারও বলছি উন্নাসিকতা ইংরেজী মাধ্যমের সবার জন্য নয়।
কিন্তু এরা সংখ্যায় গরিষ্ঠ নয়। এদের বাইরে আমি যে সংখ্যাগুরু ছাত্রকে চিনি, তারা এক অদ্ভুত সত্ত্বা লালন করে। আমার বর্তমান ছাত্র থেকে শুরু করে অনেক আরো অনেক ছাত্রকেই দেখেছি যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একদম বেসিক ধারণাটাই রাখে না এবং আমার কাছে সবচেয়ে ভীতিকর ব্যপার যেটা মনে হয়েছে যে তারা আদৌ নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলেই ভাবে না। সবারই একটাই ধারণা এ লেভেল দিয়ে বাইরে চলে যাবো। দেশ নিয়ে আমার মাথা ব্যথা করে কি হবে। এবং সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে যে, মুস্তফী দাদা যেই অতি উচ্চবিত্ত শ্রেণীকে নির্দেশ করলেন এই উন্নাসিকতার জন্য, আমি কিন্তু তার চেয়েও খারাপ চিত্র দেখেছি। আমার ছাত্র কিংবা আরো অনেককেই দেখছি যারা উচ্চবিত্ত নয়, খুব বেশি হলে উচ্চ মধ্যবিত্ত। তাদের সবার ধারণা এটাই। আমার কাছে আতংক জাগানিয়া মনে হয়েছে, যে এই মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি কি ভূমিকা পালন করছে ?
যাই হোক, আগামী কাল পরীক্ষা একটা, তাই আর বাড়াবো না।
আশা রাখি, মুস্তফী দাদা, আমার লেখাতে আঘাত পাননি। আর যদি পেয়েও থাকেন, তার জন্য দুঃখিত, আমার লেখার উদ্দেশ্য কোন অংশেই এমন ছিলো না যে শুধু মাত্র ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্ররাই উন্নাসিক।
ভালো থাকবেন।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার লেখায় কোন আঘাত পাই নাই, নিশ্চিত থাকেন প্লীজ। আপনে আর কনফু দুইজনই মিসআন্ডারস্ট্যান্ড করলেন - এইটা খারাপ লাগলো। আরে এইভাবে করলে কি ফাইট করা যায় বলেন?!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অসাধারন পোস্ট। শিক্ষা ব্যবস্থাটারে জগাখিচুড়ী বানায়া ফালাইছে। বড়োলোকগো ইংলিশ মিডিয়াম.... মধ্যবিত্তের জন্য ইংলিশ ও বাংলা মিডিয়াম মিক্সড (ভিকারুন্নিসা - আইডিয়েল স্কুল টাইপ) আমগো মতো নিন্ম মধ্যবিত্তের ছোট লোকগো জন্য সরকারি স্কুল.... আর গরীব এবং গ্রামের সাধারন মানুষের সন্তানদের জন্য জেএমবি নেতাদের মাদ্রাসা ........
আপনের কথার সাথে ১৫০% একমত। শিক্ষাব্যবস্থা এখন power structure একটা এক্সটেনশন। সেই দিক থেকে চিন্তা করতে হবে। ক্ষমতা এবং বিত্ত সব এলিট শ্রেণীর হাতে কুক্ষিগত রাখার জন্যে ৪-৫ রকম সিস্টেম বানানো হইছে। এইটা দেশের এলিটরাই সবচেয়ে ভালো জানে। এবং জেনে বুঝেই এইটা তারা চালু করছে, বজায় রাখছে।
সবজান্তার ছাত্র বলছিলো কোপাকুপি। এইটা রোগ না, রোগের সিম্পটম। আসল রোগ তো সমাজ আর অর্থনীতির রগে রগে। ঐ ছেলেকে দোষ যদি দেই, তার থেকে বেশি দোষ দেবো তার বাপ-মার। আর তার থেকেও বেশী দোষ বর্তায় সেই ছেলের চারিপাশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উপর।
কিন্তু সেই ময়লা ঘাটার থেকে ছেলেটাকে বকা দেওয়াটাই সহজতর।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
চমতকার আলোচনার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের এই হযবরল টাইপের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আর কি বলার আছে নতুন করে! আপনে তো ঠিক জায়গাতেই হাত দিছেন,
আসলেই কি আমরা এর বাইরে দাড়িয়ে কিছুই বিচার করতে পারি? যদি কোন দিন ক্লাস নাও থাকে তবুও হয়তো আমাদের মগজের ক্লাসটা ঠিকই আমাদের ডোমিনেন্ট করে যাবে!
তবে আপনার এই লেখা পড়ে আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগছে কিন্তু যাকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম সে মানুষটা নাই আর। একটু ব্যাখ্যা করি, আমারও জগা খিছুড়ী টাইপ পড়ালেখার ব্যাকগ্রাউন্ড! শুরুতে কিছুদিন ইংলিশ মিডিয়াম,তারপর বাংলা মিডিয়াম,আবার কিছুদিন ইংলিশ মিডিয়াম, তারপর উলটো মিডিয়াম মানে আরবী/উর্দু (৩ বছর),আবারো যথারীতি বাংলা মিডিয়াম। এই করতে করতে ইন্টার পাস করে ফেললাম। তারপর ঐ বুদ বুদ থেকে বেড়িয়ে নিজেই গিয়ে পড়লাম আরেক বুদ বুদে, প্রথমে অর্থনীতি (২ মাস), তারপর সাংবাদিকতা(১ বছর), তারপর ফাইনালি চারুকলা (প্রথমে ভাস্কর্য, শেষে পেইন্টিং)।আবার এখন মনে হইতাছে এটলিষ্ট গত ৭টা বছর আমার এনিমেশনের উপর ভালো মতো পড়া উচিত ছিলো! যাক যে কথা বলতে আমার এতসব ফিরিস্তি তা হলো আমিও আখেরে কি আমার বাবার মতো কনফিউসড্ হয়ে গেলাম? এই কথা বলার কারণ হলো, আমার বাবার জন্ম ১৯৩১ সালে (আব্বা বয়স লুকাতো, আমি একদিন হিসাব করে তাকে বলেছিলাম, আব্বা আপনি এতো বুড়া? উনি হেসে ছিলেন অনেক্ষন, এরপর কেউ তার বয়স জিজ্ঞেস করলে বলতেন আমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, ও সন তারিখসহ বলে দেবে আমি কত বুড়া!) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায়, যে গ্রামে জন্ম তার পাশেই বার্মার খিরাম অঞ্চল(তখন রেঙ্গুনের সাথেই ব্যবসা বাণিজ্যের হতো চট্টগ্রামের লোকজনের)। সো তিনি লেখাপড়া করেছেন গ্রামের স্কুলে (দাড়োগা বাড়ী স্কুল), তারপর সোজা করাচী গিয়ে শেষ করেছেন গ্রাজুয়েশন। তার ইংরেজী এতোটাই ভালো ছিলো যে আমি প্রায় তাকে বলতাম, আপনি কেন আমাদের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদেন না, স্কুলের টিচার রা যেভাবে ইংরেজী শেখান আমি তার প্রায় কিছুই বুঝি না। কিন্তু আপনারটাতো ঠিকই বুঝি। উনি খুশী হয়ে বলতেন, আমরা হলাম ইংরেজ আমলের ছাত্র আমাদেরটাতো ভালো হবেই। তখন আমি একটু ফোড়ন কেটে বলতাম, কিন্তু আপনি তো বাংলা লিখতে পারেন না! উনি সাথে সাথে প্রতিবাদ করতো, কিন্তু সত্য হলো আসলেই তিনি বাংলা ঠিক মতো লিখতে পারতেন না, প্রায় আমাকে চুপি চুপি এসে বলতেন, দেখতো এই চিঠিটা ঠিক আছে কি (এরশাদের পিরিয়ডে হঠাত করে বড় বড় ঠিকাদারীর টেন্ডারগুলো বাংলায় দেয়া শুরু হলো)! তো যা বলছিলাম, এই মানুষটা বা তার সমসাময়িক আরো অনেককেই দেখেছি ইংরেজীটা ভালো বলতেন ও লিখতেন,কিন্তু বাংলা বলতেন ভালো তবে লিখতে পারতেন না। এদের একটা বড় অংশ কিন্তু পাকিস্তান আন্দোলনে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছিলেন, আবার তাদের সেই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান মাত্র ২৪-২৫ বছরের মাথায় এসে ভেঙ্গে গেল। আমি যা ধরতে চাইছি তা হলো, এই মানুষগুলোর ভিত তৈরী হয়েছিলো উপনিবেশিক শাসনামলে, তারপর এক উপনিবেশ থেকে মুক্ত হতে গিয়ে ঢুকলো ধর্ম নামক আরেক উপনিবেশে! কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তারা বুঝে গেলেন ধর্মই একটা জাতির একমাত্র ভিত্তি হতে পারেনা (অথচ এই ধর্মই গোটা ভারতটাকে ভেঙ্গে টুকরো করে দিলো! বিনিময়ে আমার লাভ করলাম গালভরা স্বাধীনতা ১৯৪৭-এ)! সো আমার বাপদের প্রজন্ম ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হলেন, তারপর শিখলেন আবার উর্দু, তারপর আবার বাংলায় এসে থিতু হলেন! আমাকে এই ব্যাপারটা প্রবলভাবে ভাবায়, যে প্রজন্ম এরকম একটা জগাখিচুড়ী মার্কা শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতর গেল, নিজের আইডেনটিটি ঠিক করতে যে প্রজন্মের গেল ২৫ থেকে ৬০ বছর তারা কি করে নতুন প্রজন্মকে তুলে দেবেন একটা সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা; যা একই সাথে নিজেদের জলবায়ু সম্পর্কে দিবে সম্যক জ্ঞান আবার গোটা পৃথিবী থেকেও করবেনা বিচ্ছিন্ন?
আমি জানিনা ঠিক, যেহেতু ঐ প্রজন্ম বা তার একটু পরের প্রজন্মটাই এখনো দেশের কর্ণধার বা হর্তাকর্তা তাই হয়তো আমরা এখনো একটা জগাখিচুড়ি টাইপ শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে আছি! আজকের মাদ্রাসা শিক্ষা, ইংরেজী শিক্ষা বা বাংলা শিক্ষা সবই মনে হয় আমাদের পূর্বের দ্বিধাবিভক্ত ইতিহাসেরই আউটপুট! এই ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে যদি আপনি একটা লেখা তৈরী করতেন তবে আমার মতো মাথা মোটা মানুষের একটু উপকার হতো। ধন্যবাদ আপনাকে আবারো।
আজকের মাদ্রাসা শিক্ষা, ইংরেজী শিক্ষা বা বাংলা শিক্ষা সবই মনে হয় আমাদের পূর্বের দ্বিধাবিভক্ত ইতিহাসেরই আউটপুট! এই ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে যদি আপনি একটা লেখা তৈরী করতেন
দাদা এই বিষয়ে লেখার মতন মগজ আমার হইবে না! আমার কাছে মনে হয় বরং এরশাদ আমলের নানা ট্রেন্ডের সাথে ইংলিশ মিডিয়ামের উত্থানটা মাপা যায়। 'সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন' নামের বস্তুটা চাচাই তৈরী কইরা গেছিলো... এই angle থেকা একটু ভাবনা চিন্তা করা যাইতে পারে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অতি উপাদেয় লেখা। অনেক কিছুই জানা ছিলোনা। জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
ব্যাট-সিগনালের মত সুবিনয় মস্তফী-সিগনাল বাতি জ্বালায় বসে ছিলাম এতক্ষণ ধরে! পোস্টের প্রতিটা কথার সাথে সর্বতো ভাবে একমত। কথাগুলো আপনার মতে করে গুছিয়ে বলা আর কারো জন্য দুষ্কর। ভেতর থেকে দেখেছেন ব্যাপারটা আপনি।
শ্রেণির কথা এত খোলামেলা ভাবে বলার জন্য ধন্যবাদ। আমার নিজেরও এই হালচাল দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়িনি, তবে একই ধরনের ব্যাপারগুলো আমারো দেখার সুযোগ হয়েছে। "আই অ্যাম ফ্রম সেন্ট যোসেফ অ্যান্ড আই অ্যাপ্রুভ দিস মেসেজ!"
বড়লোকের পোলাদের দিকে যে কত্ত তাকিয়ে থেকেছি! কোনদিন সেগা তো কোনদিন নতুন গাড়ি। আমার মত ছেলেপুলেদের জন্য ছিল খোলা মাঠে দৌঁড়াদৌঁড়ি আর সেবা প্রকাশনীর বই।
যারা সেই বাব্লে ছিল, তারা আজও সেখানেই আছে। না, আজও সেটা নিয়ে তাদের কোন দুঃখ-বেদনা নেই। যেমন আছে, ভালই তো আছে। সুন্দরী মেয়েগুলো পায়, আধুনিক সরঞ্জামগুলো পায়। আগে তো এগুলোর জন্য বিদেশে যেতে হত, আজকাল দেশেই জোটে ভুরি ভুরি।
ব্রিটিশ আমলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুরুষের লক্ষ্য ছিল আইসিএস হওয়া, এযুগের বিনোদিনীর লক্ষ্য হল চটুল কোন গাড়িয়াল ধরে ঝুলে পড়া। সেই যুগে যারা 'নরমাল' ছিল, তারাই আজকে 'অফশুট', কারণ পুরো সমাজ দৌঁড়চ্ছে বিত্তবানের অনুকরণ করার দিকে। বাস্তবের চেয়ে পারসেপশন বড়। বৈভব না থাকুক, বিত্তের ভান করতে কী লাগে!
সুন্দরী নিয়া কাইন্দো না ভাইজান... জান্নাতে হুর পরী নসীব হইবে, ঈমানে কইলাম! বাকি কথাগুলার সাথে একমত।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এটাই সবথেকে ভাল বলেছেন।
আমাদের দেশে কিছুদিন আগে অবধি বাংলা/ভার্নাকুলার মিডিয়ামের সাথে ইংরেজী মিডিয়ামের একইরকম ক্লাস ডিফারেন্স ছিল। তখন ইরেজী মিডিয়ামে খরচা ছিল অনেক আর বাংলা মিডিয়াম ছিল ফ্রি। তবে পরে সরকারিভাবে কম খরচে ইংরেজী মিডিয়াম স্কুল চালু হবার পরে ব্যাপক হারে ছেলেপুলেরা এইসব স্কুলে ভর্তি হতে থাকে। এখন জব-মার্কেটও এদের পক্ষে। তাই ইচ্ছা থাকলেও উপায়ের অভাবে লোকজনে সবাই তাদের বাচ্চাকে যে কোনো ভাবে ইংরেজী মিডিয়ামেই পড়াচ্ছে। আগের জেনারেশনে যে ক্লাস-গ্যাপের ফলে দূরত্ব তৈরী হচ্ছিল - তা আজকে আর নেই। ভেবে দেখুন তো একই মাঠে খেলার সময় যদি পাঁচজন ইংরেজী মিডিয়াম আর ছ'জন বাংলা মিডিয়ামের থাকে তাহলে বন্ধুত্ব হতে সমস্যা কোথায়?
এখন এখানে সমস্যা হল গ্রাম-বনাম শহরের। সেটাও লিখতে থাকলে আবার সুবিনয় মুস্থাফীর মত বড় আরেকটা আর্টিকেল হয়ে যাবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভালো বলছেন। একটা সাধারণ ছাত্র কেন ইংরেজী ভালো জানবে না, যেইখানে আমাদের বাপ-দাদারা অনর্গল ইংরেজী জানতো - এই জিনিসটাই আমার মাথায় খেলে না। বাংলা আর ইংরেজী মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ কবে থেকে হইলো? শ্রেণী বিভেদ বজায় রাখতে গিয়ে এইসব বানোয়াট বৈষম্য সৃষ্টি করা হইছে। ভারত তাও একটু ভালো অবস্থায় আছে এই দিক দিয়ে।
P.S. পোস্ট লেখা নিয়ে গড়িমসি কইরেন না কিন্তু।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
সুবিনয় মুস্তাফী ভাই, আপনার পোষ্টের বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত।
কোন মাধ্যমের প্রতি বিদ্ধেষ নাই আমার। তবুও বলবো, আপনি বা দুয়েকজন ব্যতিক্রম বাদে গোটা সমাজের চিত্র কিন্তু আলাদা। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, সন্তান কি ধরনের মানষিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে তা অনেকটাই নির্ভর করে বাবা—মা'র উপর। বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত সমাজের ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ুয়া সন্তানদের আজব মানষিকতা কিন্তু তাদের বাবা—মা'র ঔপনিবেশিক মানষিকতার প্রতিফলন।
কি মাঝি? ডরাইলা?
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রাম এবং শহরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভেদটা আমার নিজ চোখে দেখা। শহরের ছেলেমেয়েরা গ্রাম থেকে আসা ছেলেদের (গ্রাম থেকে মেয়েরা খুব কম আসে) যে তীব্র অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে সেটা অসম্ভব দৃষ্টিকটু। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাম থেকে আসা ছেলেদের স্টেরিওটাইপ করা হয় মাথায় উপচে পড়া তেল, ইন করা শার্ট ও পায়ে থাকবে সেন্ডেল- এভাবে।
বৈষম্য শুধু ইংরেজী মাধ্যম কিংবা মাদ্রাসারা সাথে না, প্রতিটা ক্ষেত্রেই বৈষম্য আছে এবং তার অনেকগুলোর সাথেই আমরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ইংরেজী মাধ্যমের কাছে বাংলা মিডিয়াম যেমন অস্পৃশ্য, তেমনিভাবে বুয়েটের কাছে মেডিকেল, মেডিকেলের কাছে ঢাবি, ঢাবির কাছে চবি এভাবে চলতেই থাকে।
ইংরেজী মাধ্যমের কাছে বাংলা মিডিয়াম যেমন অস্পৃশ্য, তেমনিভাবে বুয়েটের কাছে মেডিকেল, মেডিকেলের কাছে ঢাবি, ঢাবির কাছে চবি
লাজওয়াব। খুবই ভালো বলছেন। সমাজের প্রতি স্তরে অসমতা আর বিদ্বেষ। ইংলিশ মিডিয়াম তার মাত্র একটা ডাইমেনশন। এবং বেশ সহজ টার্গেট!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এক দেশে তিন শ্রেণীর জন্য তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা- এটা নিয়ে বৈষম্যমূলক অভিযোগের পরও যদি এর কোন একটা খুব কার্যকরী হতো তাহলে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতাম। ইংরেজী মিডিয়ামে ইংরেজীর উপর জোর দেয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে সুবিনয়ের কথাতেই- লিখতে দিলে পোলাপান একটা পৃষ্ঠাও ইংরেজীতে লিখতে পারে না। বাংলা মিডিয়ামে শুধু মুখস্থবিদ্যার উন্নতি ছাড়া আর কিছুর উন্নতি হয় বলে আমার মনে হয় না। তাও আগে অনেক কিছু মুখস্থ করা লাগত বলে অল্প কিছু হলেও মাথায় ঢুকত। আমাদের সময় থেকে অবজেকটিভ পরীক্ষা বলে একটা উদ্ভট জিনিষ চালু হয়েছিল (এখনো আছে কিনা আমি জানি না), যার দৌলতে কোন কিছু না পড়ে অতি অল্প মুখস্থ করলেই পার পাওয়া যায়। জানার এবং বোঝার কোন ব্যাপারই নাই। আর বাংলাদেশের আরবী মিডিয়াম তথা মাদ্রাসায় পড়ে কেউ আরবী শিখতে পারে বলেও আমার মনে হয় না। নিজের একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা বলি। বাসায় ছোটবেলায় কম-বেশী আমরা সবাই মাদ্রাসা পড়া হুজুরের কাছে আরবী পড়েছি। জের, যবর, পেশ এগুলা একেবারে বেসিক লেভেলেই শেখায়। আমেরিকায় এসে এক ইয়েমেনী ছাত্রের কাছে আরবী ভাষা শিখতে গেলাম। পরিচিত চিহ্নগুলোকে আমি যখন জের, যবর, পেশ উচচারণ করে পড়ছি, সে তখন উলটে পড়ে আর কি। বলল আরবীতে এরকম কোন উচচারণই নাই, এসব উদ্ভট উচচারণ আমি কোত্থেকে শিখেছি? বুঝলাম এগুলো উর্দু-ফার্সিপ্রেমী শালাদের কাজ। আরবীর মধ্যে উর্দু আর ফার্সী ঢুকায়ে খিচুড়ি লাগায়ে দিছে। আর ওটাই আমরা পড়ছি আরবী হিসাবে। মাদ্রাসা যেটাকে আমরা ধর্মভিত্তিক স্কুল বলি, এরকম কোন শব্দও আরবীতে নেই এবং আমাদের দেশের মত আলাদা আলাদা কোন সিস্টেমও নাই, অন্তত ইয়েমেনে। বাংলাদেশের মাদ্রাসা কাহিনী শুনে সে কতক্ষণ হাঁ করে ছিল। আরবীতে সাধারণ স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, সবকিছুকেই মাদ্রাসা বলা হয়। সে হিসেবে আমিও মাদ্রাসাতেই পড়ে আসছি এবং এখন মাদ্রাসায় পড়াই ।
দেশপ্রেমের বিষয়টা নিয়ে আর কিছু বললাম না। এটা সংজ্ঞায়িত করাই খুব সমস্যা। যে লোক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরাজয়ে কেঁদে ফেলছে, সেই একই লোক দেখা যায় ব্যবসা করার সময় দেশের __মেরে দিচ্ছে। প্রথম উদাহরণ দিয়ে যদি বলি ঐ লোকের দেশপ্রেম আছে, তবে পরেরটা কি? আর পরের উদাহরণ দিয়ে যদি বলি ঐ লোকের দেশপ্রেম নাই, তবে প্রথমটা কি?
কড়া কমেন্ট। খেলো দেশপ্রেম খুব বিরক্তি উদ্রেক করে। আপনে দুর্যোগ ম্যানেজমেন্টের লোক, আপনে ভালো জানবেন দেশ কোন দিকে যাইতেছে। তারপরেও ২০২০ বা ২০৪০-এর বাংলাদেশ নিয়ে কোথাও কোন আলাপ শুনবেন না। এতোদিন পরেও আমাদের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কের কোন নিরসন করা গেল না। অন্য সবাই ভবিষ্যতের কথা ভাবে, আর আমরা পশ্চাদমুখী - আমাদের চিন্তা চেতনায় আর আলাপ আলোচনায়। এইভাবেই চলতেছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
পোস্টটা উপাদেয় হয়েছে।
একটা বিষয় মানি, ব্যতিক্রম কখনও প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। সুবিনয় মুস্তফী, ইংরেজী মাধ্যমের প্রশ্নে আপনি অবশ্যই একজন ব্যতিক্রমী উদাহরণ। কয়জন আর এরকম হয়েছে বা এখনও হয়?
প্রাসঙ্গিক মনে করেই সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টানছি। এখানকার স্কুল পর্যায়ের তুমুল প্রতিদ্বন্দিতার কথা অন্য কোথায়ো বলা যাবে। ভাষার ব্যাপারটা যেটুকু জানি বলি। মূলত ইংরেজী মাধ্যমেই কমবেশি স্কুলগুলোতে পড়ানো হয়। তবে কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, ছাত্রদের মাতৃভাষার ভিন্নতা। সিঙ্গাপুরের আনুষ্ঠানিক ভাষাই চারটি- ইংরেজি, ম্যান্দারিন (চীনা), মালে এবং তামিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, একটি সাধারণ ভাষায় (ইংরেজি) বিভিন্ন ভাষাভাষি ছাত্রদের জ্ঞান দানে এখানে বিশেষ কোনো সমস্যাই হয় না। আলাদা কোনো ক্লাসও গড়ে উঠে না, বা কোনো বিদ্বেষও এখানে জন্ম নেয় না।
তবে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিকই পড়ানো হয়। এর জন্য আছে আলাদা স্কুল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশি বাবা-মা'রা প্রতি শনিবার দুপুরে যান বাংলা স্কুলে। দেখতে ভালো লাগে যে, এই বাংলা স্কুলকে ঘিরে বাবা-মায়েরা বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে চান তাদের সন্তানদের মধ্যে। একই ব্যাপার ঘটে অন্য ভাষাভাষিদের জন্যেও।
মোদ্দা কথা হলো, শিক্ষাদানের জন্য থাকতে হবে একটা সাধারণ মাধ্যম(কমন ল্যাঙ্গুয়েজ)। সিঙ্গাপুর হয়তো কষ্ট করে ইংরেজিকে এই কাজে ব্যবহার করছে। আমাদের সেই সমস্যা নেই। ইংরেজি বা আরবি না, বাংলার চেয়ে সার্বজনীন মাধ্যম আর কি হতে পারে বাংলাদেশে? যাদের এত শখ তাদের জন্য না হয় আলাদা করে সপ্তাহে একদিন রইল ইংরেজি স্কুল বা আরবি মাদ্রাসা! আমার মনে হয়, এতে করেই আমাদের ছেলেমেয়েরা আরো ভালো ইংরেজি বা আরবি শিখতে পারবে। আর আমরাও বাঁচবো এই রেষারেষি থেকে।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
উন্নত বিশ্বের সিস্টেম থেকে শেখার আছে কিছু কিছু জিনিস। তবে এই কথাটার সাথে দ্বিমত পোষন করি।
যাদের এত শখ তাদের জন্য না হয় আলাদা করে সপ্তাহে একদিন রইল ইংরেজি স্কুল বা আরবি মাদ্রাসা!
দ্বিমতের পেছনে কারন অনেক, এখন অফিস থেকে বেরুতে হবে, কিন্তু এইটা নিয়ে সামনে একটা পোস্ট দেওয়ার চিন্তা আছে।
***
আমি যে ব্যতিক্রম এই কথাটাও মানতে ঠিক রাজী না। তাইলে কাকরাইলের উইলসে আমার সাথে পড়া আর ৩০ টা পোলাপানও ব্যতিক্রম বলতে হবে। আমি এইখানে একটা জিনিস খেয়াল করি। ধানমন্ডি-গুলশান এলাকার স্কুলগুলাতে এই cultural dislocation সমস্যা অতি প্রকট এবং বেশী করে উসকানো হয়। যেমন সাউথ ব্রীজ - অতিশয় সম্ভ্রান্ত লোকের পোলাপান পড়ে। সেই তুলনায় উইলস অনেক নর্মাল।
আরেকটা হইলো সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘুর ব্যাপারটা। আগে ইংলিশ মিডিয়াম মানেই ছিল বড়লোকের পোলাপান। এখন এত হাজারে হাজার ছেলেপেলে পড়ে যে সেইটা আর খাটে না। আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের মত আরো অনেক বাচ্চাকাচ্চা আছে এখন। নর্মাল ফ্যামিলি, বাংলাদেশের প্রতি নর্মাল অনুভূতি। কিন্তু আগের সেই পুরনো স্টেরিওটাইপ দিয়ে এখনো বাকি সবাইকে মাপা হয়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
একমত। বাংলা মাধ্যম থেকে পাশ করেও অনেকে উজবুক হয়ে বের হয় এইসব প্রভাবের কারণে। আর আপনার মত যারা, তারা ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করেছে বলে অনেক সময়ই স্টেরিওটাইপিং এর শিকার হয়।
অসাধারণ! চমৎকার বিশ্লেষণ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
লেখাটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, কমেন্ট গুলো কিছু পড়েছি বাকিগুলো পরে পড়ব ।
যা বলসেন ভাই ! আমি সেন্ট গ্রেগরীজ হাই এর ছাত্র ছিলাম। ছাত্র মোটামোটি খারাপ ছিলাম না, ক্লাসের মধ্যে প্রথম দশে থাকতাম ক্লাস সিক্সের পর থেকেই, তবে প্রথম দশের প্রথম দুইজনের যে superiority complex দেখেছি, তা তারা এখনো লালন করে !
হিহিহি ঠিক বলসেন, টাকার খেলা, আমি ছিলাম ভাদাইম্মা, কোন জায়গায় ভাল মত ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই নাই ওই সময়, IUB NSU তে পড়া মানে সেইরকম বিলাসীতা, বাবা ছিলেন সেন্ট গ্রেগরীজেরই কেমিস্ট্রির টিচার, এমনিতেই কোনমতে ফার্স্ট ডিভিশন, আমার উপর তিনি যারপরনাই বিরক্ত, যখন কোথাও চান্স পেলাম না, কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার হুজুগে এই প্রাইভেট ভার্সিটি AIUB, IUB তে না পারতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, IUB তে টিকে গেলাম, বছরে বছরে বাবার অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে গেল, ভার্সিটিতে আমার লাভ হয়েছিল কিছু খুবই ভাল বন্ধু, আর মনের আনন্দে math করতে পেরে, আমার calculus এ ভালবাসা তৈরী করেছিলেন পোদ্দার স্যার, তার কাছে আমি অন্তত চিরঋণী । আমরা এই বন্ধুরা তখন একইসাথে IUB আর ওই শ্রেনীর পোলাপানদের তামাশা দেখতাম আর ওদের পচাতেও ছাড়তাম না ।
- খেকশিয়াল
দেবদুলাল পোদ্দার? উনি তো ফিজিক্সের। তবে উনার কাছে পড়ার পর ফিজিক্সে আমারও আগ্রহ বেড়েছিল।
নাহ ! খেকশিয়াল সেই পোদ্দারের কথা বলছেন না। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
কিন্তু তুমি এইটা কি কইলা রাবাব ? DDP এর কাছে পড়ার পর তোমার ফিজিক্স প্রেম বৃদ্ধি পাইসে ? আমি যদিও উনার ছাত্র ছিলাম না, ছিলাম তারও গুরু, মানে রানা স্যার এর ছাত্র। কিন্তু উনার ব্যপারে যা শুনসি আর রানা স্যারকে যা দেখসি, আমার তো মনে হয় ফিজিক্স বিশেষত দ্বিতীয় পত্রের মডার্ন ফিজিক্সের দফা রফা করার জন্য এরাই যথেষ্ট।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার সময় যথেষ্ট ভুগেছি এদের কাছে পড়ে অর্জিত ফিজিক্স বেসিক এর জন্য।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কেন? তা কেন হবে? রানা স্যার অনেক আগে থেকেই কমার্শিয়াল হয়ে গেছেন। এখন পোদ্দার স্যার গুরু মারা বিদ্যা অর্জন করে ফেলেছেন। আমি নিজে কলেজে পড়া কালিন খেয়াল করেছিলাম রানা-গামী সব ফ্রেন্ডেরই কম বেশি বেসিকে প্রবলেম ছিল, কিন্তু পোদ্দার-গামীরা আর যে সমস্যাতেই ভুগতো না কেন, বেসিকে আটকাত না!
না আমি চন্দ্রনাথ পোদ্দার স্যারের কথা বলছিলাম , দেবদুলাল পোদ্দারকে চিনতে পারলাম না, পাইনি আমি, হয়ত দেখলে চিনব, আপনি কি প্রাক্তন আইউবিয়ান ? আমি ছিলাম ০০' ব্যাচে ।
- খেকশিয়াল
পোস্টটা চমৎকার হয়েছে, সন্দেহ নেই।
তবে আপনার পোস্টের বড্ড বেমানান জায়গায় আমার নামের উল্লেখ দেখে ভীষণ বিব্রত বোধ করছি।
আমার পোস্টটিতে কোথাও বিষোদগার করেছি বলে মনে পড়ে না। এবং সেখানে করা বাদবাকী আলোচনায় কেউ পুরো মাধ্যমের উপর কোন দোষ চাপিয়েছে এরকমটাও হয় নি। তারপরেও সেখান থেকে নেয়া সিদ্ধান্তের কল্যাণে আপনার এই পোস্ট এবং পোস্টে আমাদেরকে 'আয়রনি'র ধারক-বাহক বানিয়ে ফেলায় ভীষণ হতাশ হলাম।
একটা স্পর্শকাতন ইস্যুকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার সুফল পেয়েছিলাম একসময়, সেটা শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই আমার পোস্ট ছিলো। তার এরকম উল্টো অর্থ হয়ে যাবে আপনার কাছে এটা একেবারেই বুঝি নি।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কনফু ভাই, এতোটাই ভূল বুঝলেন! আপনের পোস্টটা বরং এই বিষয় নিয়ে উদারমনা লেখার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরন ছিল। সেই পোস্টটা পড়ে খুবই ভালো লাগছিলো। তার নীচে যা কমেন্ট আসছিল, তার সাথে বিতর্ক শুরু হয়, কিন্তু আপনার লেখা এবং দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ব্যতিক্রমী ছিল। তাই ভূল বুঝবেন না প্লিজ।
আপনার সেই চন্দ্রবিন্দু ফ্যান ছাত্রের জন্যে শুভেচ্ছা রইল। ভূল বোঝাবুঝির জন্যে আবারও apologies!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
কনফুর পোস্টে কমেন্ট করব ভেবেছিলাম, সময় হয়নি। এর মধ্যেই এই পোস্ট!
ভাল লাগল খুব। অন্যদিক থেকে আলোকপাত। প্রিয় ব্লগারদের কেউ ইংলিশ মিডিয়ামের দেখলে মনে আশা জাগে।
ইংলিশ মিডিয়ামদের নিয়ে ছোটকালে আমার খুব বাজে ধারণা জন্মেছিল গ্রীন হ্যারল্ডে পড়ুয়া আমার দুই কাজিন আর তাদের বন্ধুদের দেখে। দেখতাম ওরা বাংলা পারেই না, বাংলা নিয়ে ভীষণ উদাসীন, আমার '৭১ প্রীতি দেখে টিটকারি মারত আমাকে 'ফ্রিডাম ফাইটার' ডেকে। তবে সেটার কারণ হিসেবে ওদের বাসার পরিবেশ যে অনেকটাই দায়ী ছিল সেটা সেসময়েও বুঝতাম। একবার খুব মজা লেগেছিল ওদের স্কুলের ইয়ার বুকের একটা লেখা দেখে। 'লী বিউটি পারলার' এর চাইনিজ মালিকের ছেলে ২১ শে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিল। হোক সেটা ইংলিশে, আমার খুব ironic লেগেছিল যে একটা বিদেশী ছেলে ২১ নিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে একটা লেখা লিখতে পারে অথচ আমার কাজিনগুলো কেমন বিশ্রী রকমের উদাসীন! ওদের ভূগোল না ইতিহাস বই দেখেছিলাম সেসময় (৯০ এর দশকের শুরুর দিকে), ইন্ডিয়ান বা ব্রিটিশ, যেটা দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম আর ভেবেছিলাম, আহা, ওরা দেশের কথা শিখবে কোথায়! অবশ্য এটাও বুঝি, আমি নিজেও স্কুলের থেকে বাসাতেই দেশকে ভালবাসার কথা শিখেছি (আমার মা'য়ের প্রিয় উক্তি, 'কখনো ভুলে যাবে না, দেশ কিন্তু মায়ের মত')।
তবে ইংলিশ মিডিয়ামদের নিয়ে বাজে ধারণা অনেকটা বদলায় স্কলাস্টিকার একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে। ওরা 'তাসের দেশ' মঞ্চস্থ করেছিল। আমি সেসময় ছায়ানটের ছাত্রী। 'এরা আর কি করবে' এরকম ভাব নিয়ে ওদের অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরো টাস্কি খেয়েছিলাম বলা যায়। দুর্দান্ত পারফর্মেন্স ছিল। বেশ সম্মান জন্মায় আর হাতের পাঁচ আঙুল সমান নয় সেটা টের পেলাম। এরপর ব্যক্তিগতভাবে খুব কাছ থেকে ইংলিশ মিডিয়ামদের পেয়েছি অনেক পরে, সিঙ্গাপুরে গিয়ে (২০০৫-২০০৭)। ওখানে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে আন্ডারগ্র্যাড করছে। ওদের অনেকের সাথে দেশীয় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে পরিচয়। কিছু অবশ্যই টিপিকাল বড়লোকের বখা টাইপ, বাপের পয়সা উড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বাকিদের বেশিরভাগই অত্যন্ত 'নর্মাল' আর দেশপ্রমিক টাইপ। international students week এ বাংলাদেশকে ঠিকভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য এক পায়ে খাড়া। সেরকম একবার বাংলাদেশের ওপর ওদের করা একটা দুর্দান্ত প্রেজেন্টেশানের কথা কোনদিন ভুলব না। এখনো লিখতে গিয়ে বুকের ভিতর গর্ব লাগছে, দেশকে নিয়ে এরকম কাজ ঐদিন আর কোন দেশের স্টুডেন্টরা করেনি। ওরা প্রত্যেকে আমার খুব আদরের আর ওদের দেখে আমি খুব আশান্বিত হয়েছিলাম যে যাক, আমার ধারণা ভুল। এরা নাকউঁচা বা দেশ নিয়ে উদাসীণ না, there's still hope for us as a nation. তবে বাংলাদেশীদের একটা অনুষ্ঠানের সময় বাংলায় উপস্থাপনা করার ক্ষেত্রে অনেককে অতি লজ্জিত হয়ে যখন বলতে শুনেছি,'আপু, আমার বাংলার অবস্থা ভাল না, স্ক্রিপ্ট মনে হয় না লিখতে পারব' তখন পুরনো হতাশাটা কিছুটা ফিরে এসেছিল। বিশেষ করে যখন দেখতাম ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া আমার কোলকাতার দোস্ত ইন্দ্রনীলের বাংলা খুবই ভাল আর ও খুবই অবাক যে আমাদের দেশের সিন্যারিওটা একটু ভিন্ন - তখন বেশ খারাপ লাগত।
এছাড়াও দেশের প্রথম সারির একটি ইংলিশ দৈনিকে কর্মরতা আমার বোনের কিছু কলিগকে চিনতাম যারা ঐ মাধ্যমে পড়েছে। ওদের দেশপ্রেম নিয়ে কোনভাবেই প্রশ্ন তোলা যায় না। তবে বাংলা ভাষা নিয়ে সহজাত আতংটা ছিল কিনা জানিনা।
আমার নিজের ধারণা হয়েছে, ব্যাপারটা দেশকে নিয়ে নয়, ভাষা নিয়ে। কোন এক কারণে, সেটা স্কুল বা বাড়ির জন্য, বাংলা ভাষা নিয়ে একটা আতংক আছে সবার। তবে সেভাবে দেখলে বেশির ভাগ বাংলা মিডিয়ামে পড়ুয়াদেরও ইংলিশ আতংক আছে। তবে সেটা কিছুটা অবশ্যই ক্ষমা করা যায়, কারণ ইংলিশ হাজার হোক foreign language, আমাদের পরিচয়ের কোন অংশ নয়। বিশেষ করে আমাদের মত ভাষা নির্ভর একটা জাতির, যাদের দেশের নামেই ভাষাটা আছে।
আপনার লেখার সাথে আমি একমত পুরোটাই। জায়গাভেদে বিভিন্ন ইংলিশ স্কুলের বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদের ভিন্নতার কথা। খুব দুর্ভাগ্যবশত হয়ত পঁচা শ্রেণীটাই আমাদের কাছে বেশি হাইলাইটেড হয়ে এসেছে বা আমাদের কাছে এক্সপোজড্ হয়েছে যার কারণে এত দ্বন্দ্ব। honestly, আমি কোনদিন ভাবতাম না যে আপনি ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া। আগের রেশ ধরে আমার মনে হচ্ছে আপনি একটা exception (আপনার চমৎকার বাবা-মা'র কারণেই হয়তো)। কিন্তু আপনার লেখানুযায়ী আপনার অনেক বন্ধুদেরই বাংলা প্রীতির লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আমার এতদিনের ধারণা ভুল। আমার এই ধারণা ভুল হলেই অবশ্য আমি খুশি ।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
স্কলাস্টিকার পোলাপান বাংলায় ভালো প্রোগ্রাম করছে?? এইটা কি শুনাইলেন?? আমি বিশ্বাস 'কড়তে পাড়ছি' না। ওরাই তো সব নষ্টের মূল! নাক-উঁচা হিসাবে ওদের ভয়ংকর দুর্নাম - আমরাও দেখতে পারতাম না তেমন। কিন্তু পড়াশুনার ঘিলু সেই রকম...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনার পোস্টটি ভালো লাগল। সেন্ট যোসেফ, হলি ক্রস নিয়ে মন্তব্য যা করেছেন আমি হলি ক্রসের প্রাক্তন ছাত্রী হয়ে তা অস্বীকার করব না। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে একটি জিনিস বোঝার ছিল। হলি ক্রস কলেজে কিংবা নটরডেম কলেজেও ইংরেজিতে এখনও পড়াশোনা হয়। এর কারিকুলামগুলো যদিও বাংলাদেশ থেকেই ঠিক করে দেয়া হয় তবে তাদের পড়াশোনার মাধ্যমটি ইংরেজি। এই ছাত্র-ছাত্রী গুলো কিন্তু বাংলা মিডিয়াম পরিবেশ পেয়েই কলেজের সময় গুলো কাটায় এবং তাদের মধ্যে আংরেজি মিডিয়াম সলুপ ভাব দেখা যায় না। আপনি কি মনে করেন না আপনি একটি তথাকথিত সাধারণ ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছেন বলে (যেখানে বাংলা মিডিয়াম কালচারটি বেশি প্রচলিত) আপনার বা আপনাদের বাংলার প্রতি হেয় মনভাব বা দূর্বলতা কম? এটি কি একটি প্রচলিত দামি ইংরেজি স্কুলে থাকলে সমান ভাবে সত্য হত? আপনি নিজে কি বলতে পারবেন ঠিক কয়টি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে বাংলা আমার বইগুলো সঠিক ক্লাসের জন্যে সঠিক বইটি ব্যবহার করা হয়? আমার জানা মতে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল গুলোতে ছাত্র যদি ক্লাস ফোরে পড়ে তো ক্লাস টু-য়ের বাংলা বই তাদেরকে পড়ানো হয়।
(প্রশ্ন গুলো চ্যালেন্জ নয় বরং স্রেফ জানতে চাইবার আগ্রহ থেকেই করলাম।)
রাবাবের মত আপনার লেখা পড়ে এ ব্যাপারটা আমার মাথায়ও এসেছে যে আপনি উইলস্ লিটল্ ফ্লাওয়ারে পড়েছেন বলেই কি বাকি বেশির ভাগ ইংলিশ মিডিয়ামগুলোর থেকে আপনার বা আপনার বন্ধুদের পার্থক্য? (এ পার্থক্য আপনার অন্য স্কুলের অভিজ্ঞতাতেও পাওয়া যায়।) আমিও জানার আশায় থাকলাম।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভার্সিটিতে আসার আগে ইংলিশ মিডিয়াম সম্পর্কে আমার ধারণা অন্য সবার মতই ছিল। মনে হতো, তারা অন্য জগতের বাসিন্দা। কিন্তু ভার্সিটিতে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে যাদের পেয়েছি তাদেরকে মোটেই অন্য জগতের বাসিন্দা মনে হচ্ছে না। অন্য সবার মতো তারাও আপন হয়ে গেছে।
দেশের বর্তমান বৈষম্যমূলক শিক্ষা পদ্ধতির কোন আশু সমাধান আমি দেখতে পাচ্ছি না। কেবলই মনে হয়, এদেশের সরকার দিয়ে কিছু হবে না। তবে ভরসা করবো কার উপর?
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
রাগিব ভাই
এইটার জবাব ও সুবিনয় মুস্তাফী ভাই দিছেন ত
ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পাশ করে আগে যাইত আমেরিকা ।
ওইখানে বছর কয়েক মউজ মাস্তি করে দেশে ফিরে বাপের ব্যাবসার হাল ধরত।
৯/১১ এর পরে এখন আসে লন্ডন ,সিডনি , মেলবোর্ন আর টরন্টোতে ।
এদের আপনি দেখবেন না এই কারনে যে কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া সবাই একটা অন্য সার্কেলে চলাফেরা করে ।
সিডনির মত জায়গায় দেশ থেকে টিউশন ফি এনে বাড়িভাড়া হাত খরচ এনেও এরা নগদ টাকায় দামি গাড়ি কিনে চলাফেরা করে কারন সিডনির ট্রেনে বাসে পাবলিকের গ্যাদারিং! বেশি।
আর দেশ থেকে আনা টাকায় পোকার মেশিন এর সামনে না বসলে ত এদের পেটের মদ হজম হয় না ।
বাদ বাকি কাহিনি প্রকাশ করলে এই কমেন্ট আলোর মুখ দেখবো না
আর বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষা নিয়া যা কয় শুনলে কোনো সুস্থ মস্তিস্কের বাংলাদেশীর মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন।
আমি হিমু ভাইয়ের বলা "কৌতূহল"এর প্রসঙ্গে একমত। সবজান্তার পোস্টে এই প্রশ্নই ছিল আমার সুবিনয় মুস্তফীর কাছে। তাঁকে আগ্রহী রাখার পেছনে উৎস কী ছিল?
আমি ইদানিংকার অনেককে চিনি যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেও দেশকে অসম্ভব ভালবাসে, দেশের জন্য অনেক কিছু করতে চায়। ভাষা তাদের জন্য একটা বড় সমস্যা। ভাষার মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটি tool আমরা বিনাপয়সায় পেয়ে যাই দেখে মূল্য বুঝি না।
prejudice-এর ব্যাপারে আমি অনেক বেশি একমত। আমার বুয়েট-নটরডেম-সেন্ট যোসেফ-ইংরেজি মিডিয়াম -এর সবকয়টায় পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রতিটা পর্যায়ে দেখেছি প্রচন্ড রকম জাত্যাভিমান। আমরা কেউই এর ঊর্ধ্বে না। আমি প্রতিটি মাধ্যমের ত্রুটি স্বীকার করে নেই... এবং প্রত্যেকের চোখেই আমি গাদ্দার!
সমস্যা স্বীকার করে নেওয়াই যে সমাধানের প্রথম পথ, এটা আমরা সমাজের কোন স্তরেই বুঝি না। ঔপনিবেশিক আমলের সেই ভুলটা আমাদের আজ অব্দি ভুগায় -- পাছে একটা ভুল হয়ে যায়, পাছে পাছায় লাট সাহেবের লাথি পড়ে!
যদি কোনদিন আমজনতাকে ব্লগের শক্তি ও ধরণ সম্পর্কে ধারণা দিতে হয়, এই পোস্ট এবং এর প্রতিটি মন্তব্য তুলে দেওয়া উচিত। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পড়ে যুগপৎ মজা ও আনন্দ পেলাম।
আমি মনে করি অভিভাবকদের উচিত, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর পাঠ্যসূচী নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তাতে বাংলা উপাদান যোগ করার জন্যে চাপ দেয়া। ভাষার প্রশ্নে যদি ইংরেজি মাধ্যমের বাচ্চারা নিজের ভেতরে আদৌ কোন সংকীর্ণতা অনুভব করে, তাহলে তা দূর করা উচিত।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হিমু, সবজান্তা
আমার স্থির বিশ্বাস যে অনেক মধ্যবিত্ত বাপ-মা তাদের কর্তব্যে বিরাট গাফিলতি করতেছে। বাপ মার মধ্যে অতি দরকারী সচেতনতা না থাকলে বাচ্চাটার খবর আছে। এই ক্ষেত্রে বাচ্চার থেকে বাপ-মার দোষটা অনেক বেশী। ছেলেপেলের জীবনে তারা সবচেয়ে বড় প্রভাব। আর ১৪-১৫ বছর বয়সের মধ্যে যেই সব attitude/মনোভাব তৈরী হয়ে যায়, সেই সব চিরস্থায়ী হওয়ার আশংকা অনেক বেশী।
স্কুলের কারিকুলামের কথায় যদি আসেন। এইটা করানো কতখানি সম্ভব তা দেখার বিষয়। এই সব স্কুল চালায় যারা, সেই সব হেডমিস্ট্রেসদের প্রোফাইল কিন্তু সব একই রকম। স্কলাস্টিকার মিসেস মুর্শেদ, মেপেল লীফের মিসেস আলি, এবং অন্যান্য স্কুলের হেডমিস্ট্রেসরা সবাই সমাজের উপরতালার লোক।
আব্দুল গণি হাজারীর কবিতাটা মনে আছে? কতিপয় আমলার স্ত্রী? এরা সেই মানুষ। যাদের সাথে উঠবস করে, তারাও একই কাতারের। আমি এইটা খুব বিশ্বস্ত সূত্রে জানি যে মিসেস মুর্শেদ একজন নতুন ছাত্রের বাবা-মার ইন্টাভিউ না নিয়ে, সেই বাবা-মার "আর্থ-সামাজিক তাপমাত্রা" থার্মোমিটারে না মেপে কোন ছাত্রকে স্কলাস্টিকায় ঢুকতে দেন না। ফিল্টারিং প্রক্রিয়া যেইখানে এত শক্ত, এতটাই self-selecting, সেইখানে কিভাবে কারিকুলামে দেশ-দশের কথা শিখানো হবে তা আশা করা যায়? মিসেস মুর্শেদ আর মিসেস আলি চলাফেরা করেন ঐ আমলা ব্যবসায়ী মন্ত্রী রাজনীতিবিদ এমপি শিল্পপতিদের বৌদের সাথেই। এই শ্রেণীর কাছ থেকে কারিকুলাম বদল করার কোন মোটিভেশান পাবেন না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনার পোস্টটা দেখে একটা কাহিনী মনে পড়লো। যদিও ঠিক প্রাসঙ্গিক না, তবুও মজার জন্য বলি।
আমি একজন সৌভাগ্যবান মামাকে চিনি, যিনি তার ভাগ্নেকে একটি বিখ্যাত ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে ভর্তির জন্য নিজেও ইংরেজী জ্ঞানের পরীক্ষা দিয়েছেন। বাবা মার পাশাপাশি মামা এই প্রথম শুনলাম, কিন্তু বিশ্বাস করেছি কারন ভদ্রলোক নিজেই বলেছেন।
যাই হোক যদিও বলেছি নিছকই মজার জন্য কথাটা বললাম, তবুও ব্যাপারটা আমার কেন যেন ঠিক 'সুস্থ' মনে হয়নি।
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাধারায় দেশ সম্পর্কে এই অমনোযোগ তৈরীর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্যে কি আপনি এঁদের দায়ী করছেন সরাসরি?
সেক্ষেত্রে তো বিকল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে হবে। যেখানে মিসেস এক্স, মাদাম ওয়াই, ফ্রাউ জেডদের উৎপাত থাকবে না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এই মিসেসরা তো শুধু উছিলা। এজেন্ট মাত্র। যেইখানে মুজিবকন্যা হাসিনা, দেশনেত্রী খালেদা, সংবিধানের প্রণেতা ডঃ কামাল, এমনকি নুর আর সৈয়দ হকের পোলাপান পর্যন্ত এই সিস্টেমে পড়াশুনা করতেছে, তাইলে এদের চূড়ান্ত মদদ তো এই রাজনৈতিক/সাংস্কৃতিক হিপোক্রিটদের থেকেই আসতেছে না কি?
এরা ভালোই জানে দেশটা কে চালায় আর কেমনে চালাইতে হয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অনেক কাজের একটা কাজ হইলো এলিট শ্রেনীর ছেলেমেয়েদের পারস্পরিক পরিচয় ঘটানো। লং-টার্মে এই মিডিয়ামের প্রায় সবাই অন্য সবাইরে কোন না কোনভাবে চিনে। Two degrees of separation বড় জোর। গুলশান বনানীর ছেলেমেয়েরা গুলশান বনানীর বাইরে পারতপক্ষে বিয়ে শাদী করে না। ক্ষমতা আর বিত্ত একই মানুষ, একই এলিটের হাতে বন্দী রাখার পেছনে এই ভূমিকাও আছে এই স্কুলগুলার।
আর মাঝখান দিয়া মধ্যবিত্তরে একটা সংস্কৃতি ধরায় দিছে, সেইটা নিয়া মধ্যবিত্ত ভালোই ব্যস্ত, নিজেরে বাহবা দিতেছে অনর্গল। ঐদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো প্রকট হয়, সমাজে income inequality বাড়তে বাড়তে অবিশ্বাস্য পর্যায় চলে গেছে, বিশেষ করে গরীব মানুষের জীবিকা রক্ষার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়াইছে দেশ থেকে পালানো। সরি, বক্তৃতার মত শুনাইতে ভাল্লাগেনা। কিন্তু এই জিনিসগুলা একে অপর থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব বলেই বিশ্বাস করি। তুমি যেই জিনিসটার কথা বলো, দেশের প্রতি ফিলিং-এর অভাব, সেইটা ঠিকমতো আনতে গেলে দেখবা হয়তো সমাজের পুরা স্ট্রাকচারই ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে সব বানাইতে হইতেছে। দেশপ্রেমের অভাব আমাদের এলিটদের সৃষ্ট সার্বিক ক্রাইসিসের খুব ছোট একটা বাহ্যিক রূপ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
মুশকিল ঐখানেই। সম্পদের একটা বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে যারা, তাদের ছেলেমেয়েরা যদি দেশ সম্পর্কে উদাসীন হয়, তাহলে মুশকিল। এ কারণেই ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে রোগাপটকা মধ্যবিত্ত সংশয়ে ভোগে, পাছে তাকে ঐ মধ্যটুকু খুইয়ে নিম্নে চলে যেতে হয়।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বাহ্ বাঙ্গালী, বাহ্! আপনারে দিয়ে হবে......এক্কেরে পুরাপুরি একমত আপনার ব্যাখ্যার সাথে। তয় ছোট্ট একটা আপিত্তি আছিলো, আপনি হাসিনার আগে বিশেষন লাগাইলেন মুজিবকন্যা, আর খালেদার আগে লাগাইলেন দেশনেত্রী! ঘটনা কি কনতো? হাসিনার মতো খালেদার আগে কি জিয়ার বউ বেগম জিয়া/খালেদা লাগাইলে কি বেশী ফিট হইতো না আগেরটার লগে (মানে হাসিনার বিশেষনের লগে)?
দারুন পর্যবেক্ষন ক্ষমতা আছে আপনার।বলতে দ্বিধা নেই।চমত্কার
যারা রহ্মান
এতো বিলম্বে এই আলোচনায় প্রবেশ করার আর সাহস হচ্ছে না। মূল পোস্টের বিষয়টির ডালপালা বহু দিকে বিস্তৃত হয়ে গেছে। এবং তার প্রতিটিই খুব জরুরি মনে হচ্ছে। আমার ধারণা, এই ডালপালাগুলি নিয়ে সম্পূরক পোস্ট ও আলোচনা হলেও কাজের কাজ হবে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আপনাকে মিস করছি এই বিতর্কে। তবে এইখানেই শেষ না...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
শিক্ষার 'মাধ্যম' এর চেয়ে শিক্ষার 'মধ্যম' এ কে কি কিভাবে কোথায় আছে সেটাই আসল বিষয়।
বাংলা মিডিয়াম এ পড়ুয়া অনেককে দেখেছি তুখোড় ইংরেজির দখল রাখতে। আবার ইংরেজি মিডিয়ামের অনেকেই (লেখক স্বয়ং) ভালো বাংলা পারেন, দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবেন।
ফেরারী ফেরদৌস
জানি না এতদিন পর মন্তব্য করা ঠিক হবে কিনা। তবুও করলাম।
লেখক ইংরেজী মাধ্যমের ভিতরে যে এক শ্রেণী বৈষম্যের কথা বলেছেন বাংলা মিডিয়ামেও কিন্তু তা আছে।
মনে পড়ে নটরডেমে থাকতে ঢাক-ঢোলে এ বিষয়ে আমি লিখেছিলাম। আমি নিজেই এর শিকার হয়েছি। নটরডেমিয়ান নটরডেমিয়ানকে হেয় করতো অর্থনৈতিক দিক থেকে; ইংরেজী মাধ্যম তো অনেক দূরে।
আসলে দোষটা সবার আগে পরিবারের এবং নিজের। পরিবার মাথায় superiority বা inferiority complex ঢুকিয়ে দেয়।আমার মনে হয় মুস্তফী ভাইয়ের বাবা যদি ওরকম না হতেন তাহলে তিনি হয়ত আজ এ লেখাটি লিখতে পারতেন না।
নিজের ইচ্ছা থাকতে হবে জানার। যা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে খুবই কম।
ইংরেজী মাধ্যম সম্পর্কে আর একটি কথা এখন মাথায় আসলো। ইংরেজী মাধ্যমের আসল অবস্থা বোঝা যায় সরকারী ভর্তি পরীক্ষাতে। ওখানে ইংরেজী মাধ্যমের জন্য ইংরেজীতে প্রশ্নপত্রের ব্যবস্থা থাকে। তারপরও তাদের সংখ্যা দেখলে প্রচন্ড অবাক হতে হয়!!! যে কজন চান্স পায় তাদেরও দেমাগও ঐ রকম।
এই পোস্ট এ এতদিন পর কমেন্টানো ঠিক যুক্তিযুক্ত না । পোস্ট টা আগে চোখে পরে নাই তবে পুরা টুকু পরার পর না কমেন্টালে আমার নিজের বেশ অস্বস্তি লাগবে ।
ইংরেজি মাধ্যম এর ছাত্র-ছাত্রী দের নিয়া এমন ঢালাও মন্তব্য কোন প্রেক্ষাপট থেকে করলেন ঠিক বুঝলাম না। কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এর স্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পেলাম (একান্তই আমার নিজস্ব অভিমত )।
"মধ্যবিত্ত ইং-মিডের বাপ-মাদের বিরাট লাভ হইছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। দেড় লাখ টাকায় এক বছর চালানো যায়। ঐদিকে আমেরিকা গেলে কম সে কম ১০ লাখ টাকার ধাক্কা প্রতি বছর।"
আমেরিকা গিয়ে "নখরামি"(!) করার জন্য ১০ লাখ টাকা প্রতি বছর দিতে পারে না বলেই বাবা-মা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্যের মধ্যে best available higher education এর ব্যবস্থা সন্তানের জন্য করতে চায়, সন্তানটি যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হতে ব্যর্থ হয়। এখন ছাত্রটি এই চার বছর পার্টি করবে নাকি পড়াশুনা করে বাবা-মার কষ্টার্জিত উপার্জন তার উচ্চ শিক্ষায় বিনিযোগ এর ঋণ বিন্দু মাত্র হলেও শোধ করার চেষ্টা করবে এটা নিতান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তার মানসিকতার ব্যাপার অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের না!
আর রাগিব ভাইয়ার কাছে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানতে চাই "ব্যাঙের ছাতা উত্তর দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়ের "
এর সার্টিফিকেট বিক্রি বিষয়ক ব্যাপার টাও পুরাটুকু বোধগম্য হলো না। অনুগ্রহ করে ব্যাখ্যা করবেন কি? সবাই শুধু সার্টিফিকেট লাভ এর উদ্দেশ্যে ( বিশ্ববিদ্যালয়টি আদৌ সার্টিফিকেট বিক্রি করে নাকি সেটা নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ একটি প্রসঙ্গ ) পড়াশুনা করে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই চিনি যারা মোটামুটিভাবে সচ্ছল , শুধুমাত্র সেশন যানজট এড়ানোর জন্য নির্দ্বিধায় যথার্থ মানের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইসে যদিও বেশির ভাগ ই ব্যর্থ পাবলিক বিঃ এর একটি আসন অর্জন করতে এবং আমি মনে করি এটা তাদের দোষ নয় কেননা সদ্দিচ্ছা থাকা সত্তেও এবং যথেষ্ট পড়াশুনা করেও ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবেই এমনটির নিশ্চয়তা নেই।একটু আগে যদি গ্রাজুয়েট হয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়, সংসারে কিছুটা সাহায্য করা যায় তাতে অন্যায় কিছু দেখি না ! বাকি "এই হাজার হাজার ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়াদের সবার যদি বুয়েট অথবা মেডিকেল অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরার সৌভাগ্য হত তাহলে তো কথাই ছিল না । নিতান্ত শখের বসে সবাই নিশ্চয়ই কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় না।
(স্রেফ জানতে চাইবার আগ্রহ থেকেই মন্তব্যটি করলাম।)
সুবিনয় মুস্তফী'র লিখাটি পরে আমার একটি গল্পের কথা মনে পরে যাচ্ছে... শিয়াল ও তার আঙ্গুর খাওয়ার গল্প।
বৈষম্য সবখানেই আছে... আপনে নিজে বৈষম্যের শিকার বলে পুরো ইংলিশ মিডিয়াম এর ব্যাবস্থাকে দায়ী করতে পারেন না। এখানে যোগ্যতাও একটি ব্যাপার।
আর আলালের ঘরের দুলাল'রা যে শিক্ষার ক্ষেত্রে হাঁদা ভোঁদা হয় এটা ধরে বসে থাকা মূর্খতার শামিল।
আমাদের একশ্রেনীর মানুষের কাছে দুই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেন দুই চোখের বিষে পরিণত হয়েছে। এটার কারণ কি চাকুরীর বাজারে এইসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদের সাথে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের প্রতিযোগীতায় পরতে হচ্ছে তাই...???
শেষে এসে বলতে হয়... আঙ্গুর ফল টক।
আমি নিজে বাংলা মাধ্যম থেকে পড়াশুনা করেছি।
নতুন মন্তব্য করুন