প্রয়োজন - প্রকৌশলী প্রজন্ম (অথবা, আইজাক নিউটনের কান্না)

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৭/২০০৮ - ৯:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

ভাইয়েরা ও বোনেরা, গত লেখার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে অনেক সেক্টরের ভবিষ্যত প্রসপেক্ট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে আমাকে মোটামুটি বিপাকে ফেলে দিলেন! আফটার অল, আমি তো প্রকৌশলী না, স্রেফ অর্থনীতির লোক। যেই লেখাটা লিখছি, সেটা মূলত অর্থনীতিবিদরা যেটাকে ফান্ডামেন্টালস (fundamentals) বলতে ভালোবাসেন, সেই ফান্ডামেন্টালস-এর উপর ভিত্তি করে লেখা।

যেমন ধরেন বস এসে আমাকে হয়তো বললো - আচ্ছা লন্ডনের দোকানপাট, মানে রিটেইল সেক্টরের কি ভূত-ভবিষ্যত? আমি তখন একটু ভ্রু কুঁচকে বলবো - আসলে, পল, বুঝলা তো, লন্ডনের মানুষ দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করার টাকা বা সাহস পায় কোথা থেকে? ধর, এইখানে তিনটা বড় ফান্ডামেন্টাল -

- চাকরির বাজার, এখনো পজিটিভ কিন্তু পড়তির দিকে
- বাড়ির দাম, একদম ধ্বস নেমেছে সম্প্রতি
- ক্রেডিট কার্ড - আগের চেয়ে পাওয়া অনেক কষ্ট, সুদের হারও আগের তুলনায় বেশী।

সব মিলিয়ে ফান্ডামেন্টাল-গুলো বেশ নড়বড়ে - তাই রিটেইল বাজারের ভবিষ্যতও মোটামুটি আন্ধার। যদিও হয়তো দেখবা যে এক দুই মাসের জন্যে নিউজ ভালো চলতেছে, কিন্তু সব সময় মনে রাখবা যে ফান্ডামেন্টালস-ই সত্য। মাধ্যাকর্ষ শক্তির মতই এটার বিপরীতে বেশীদিন যাওয়া সম্ভব না। ফান্ডামেন্টালস অনুযায়ী তাইলে বাজার নামতে বাধ্য -- এবং ঠিক-ঠিকই আজকে দেখা গেল যে, রিটেইলের পতন শুরু হয়েছে!

*

প্রকৌশলীদের নিয়ে সাহস করে লিখতে গিয়েছিলাম এই ফান্ডামেন্টালস সম্পর্কে যা জানি, তার উপর ভরসা করে। প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর সম্পর্কে হয়তো স্বচ্ছ ধারণা নেই, কিন্তু কিছু কিছু সেক্টরের খুঁটি যে খুব শক্ত, কিছু কিছু দেশে - সেটা ফান্ডামেন্টালসের উপর নির্ভর করেই বলছিলাম আর কি!

যাক আর প্যাঁচাল না বাড়িয়ে অন্য উদাহরণগুলোর দিকে যাই।

উদাহরণ ২)
তিন বছর হয় লন্ডন এসেছি, আর বিলেতে সব মিলিয়ে পাঁচ বছর। এখন থাকি পূর্ব লন্ডনের স্ট্র্যাটফোর্ডে - যেখানে আর চার বছর পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০১২ সালের অলিম্পিক গেমস। সেই উপলক্ষে পুরো এলাকা জুড়ে কন্সট্রাকশানের বিশাল জোয়ার বইছে। পুরানো দালানকোঠা, বাড়িঘর, দোকানপাট, গুদামঘর, অনেক কিছুই সরকার দখল করে নিয়েছে - মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে। এবং সে সব ভেঙ্গেচুড়ে তার বদলে তৈরী করা হচ্ছে বিশাল বিশাল ইমারত। স্টেডিয়াম হবে, জিমনেশিয়াম হবে, সুইমিং পুল হবে। অলিম্পিয়ানদের থাকার জন্যে অলিম্পিক ভিলেজ হবে। ইতিমধ্যে বিরাট বিরাট রং-বাহারী দালান উঠে গেছে কয়েকটা, আমার ঘরের জানালা দিয়েই দেখতে পারি। এসব আবাসিক দালানে খেলোয়াড়েরা থাকবেন - আবার গেমস শেষ হবার পরে ফ্ল্যাটগুলো আমজনতার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝে ভাবি এই পাড়াতেই থেকে যাই, খেলার একদম পাশেই থাকবো, হয়তো স্টেডিয়ামে গিয়ে দুই-একটা খেলাও দেখতে পারবো। ফেডারার বনাম লেইটন হিউইট যেমন দেখলাম গত মাসে উইম্বেল্ডনে।

কিন্তু চার বছর পরে কোন তীরে গিয়ে ঠেকবো, কে বলতে পারে? আমার ভীষণ পা-চুলকানি রোগ আছে। সেই যে ১৯৯৯ সালে আমার তৎকালীন বস আমাকে ঢাকা থেকে ট্র্যান্সফার করে পাঠিয়ে দিলেন চট্টগ্রামে, তারপরে থেকে আর ঢাকায় থাকা হলো না। মোটামুটি বেদুইন জীবনই চলছে। ৯৯-এর পরে মোট ৪টি দেশের ৭টি শহরে থাকা হলো। বাড়ি বদল করেছি ১১বার। সামনের মাসে আবার বদলাবো - বাড়ি নম্বর ১২। কিভাবে এক জায়গায় থিতু হয়ে থাকতে হয়, সেই ফর্মূলাটাই বেমালুম ভূলে গেছি! তাই এখন থেকেই ২০১২ সালের প্ল্যান করতে যাওয়াটা স্রেফ ছাগলামি।

*

যাকগে, একটু দূরে চলে এলাম। কথা হচ্ছিল, লন্ডন অলিম্পিক নিয়ে। এই গেমস বাদেও এই শহরে আরেকটা বিশাল প্রকল্প পাশ হলো মাত্র গতকাল। প্রজেক্টের নাম ক্রসরেইল। লন্ডনের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত দ্রুত যাতায়াতের সুবিধার্থে এই বৃহৎ প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। লন্ডনের মত চমকপ্রদ শহরের বর্ণাঢ্য ইতিহাসেও এরকম একটি ব্যাপক প্রকল্পের নজির মেলা ভার। ১৯৯০ সাল থেকে এর চেষ্টা তদবির শুরু হয় - প্ল্যান পাশ হতে লাগে ১৮ বছর! যাক তবে অবশেষে প্ল্যান পাশ হয়েছে, রানী-বুড়িও গতকাল তার রাজ-স্বাক্ষর দিয়ে দিয়েছেন। নির্মাণ কাজ শুরু হবে অতি শিগগির! প্রজেক্ট শেষ হয়ে প্রথম ট্রেনগুলো চলাচল শুরু করবে আজ থেকে ৯ বছর পরে - ২০১৭ সালে।

অন্তত প্ল্যানে তাই বলে। যদিও প্রায় সবাই জানেন যে এই রকম বৃহদাকৃতির এবং দীর্ঘ-মেয়াদের প্রজেক্ট প্রায় কখনোই টাইম মতন শেষ হয় না। বাজেট বলা হয়েছে ১৬ বিলিয়ন পাউন্ড অথবা ৩,২০০ কোটি ডলার। আমরা এটাও জানি যে শেষমেষ গিয়ে দেখা যাবে এই বাজেট ভেঙ্গে-চুড়ে আরো অনেক বেশী টাকা খরচ হয়ে গেছে।

এতো সবের মানে কি? এর মানে হলো এই যে কমপক্ষে আগামী ১০-১২ বছর ধরে লন্ডন তথা বিলাতে কন্সট্রাশন সেক্টরে স্বর্ণযুগ চলবে। নির্মানকাজে যত ধরনের প্রকৌশলী বিদ্যাবুদ্ধি খাটানো যায়, সব এই প্রকল্পগুলোতে পাইকারী হারে প্রয়োগ করা হবে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের এখন আর পায় কে?

আর এই দেশের সবচেয়ে বড় যেটা সমস্যা - এদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মন-মানসিকতা একদমই শুকিয়ে মরে কাঠ হয়ে গেছে। কয়দিন পরপরই এই নিয়ে পেপারে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে। স্কুলের বাচ্চাদের বিজ্ঞান পড়তে উৎসাহী করানো হয় না। মাধ্যমিক স্তরে ভালো গ্রেডের আশায় ওদের সহজ সাবজ়েক্টের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। ছাত্রদের সহজ যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ করতে কষ্ট হয়, ক্যাল্কুলেটার ছাড়া তারা প্রায় পঙ্গু। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার উপর একদম বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। ওরা বলছে এমন হারে grade inflation হচ্ছে যে উৎকৃষ্ট থেকে মাঝারি মানের ছাত্র সবাই A গ্রেড পাচ্ছে। আর গরু গাধাদের ধরে ধরে সহজ B, C গ্রেড দিয়ে দেয়া হচ্ছে। খারাপ ছাত্রের যে ফেল করা উচিৎ, সেই চিন্তাটাই সমগ্র দেশ থেকে উঠে গেছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর এসব বেলুন-ফুলা গ্রেডে বিশ্বাস করে না। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (অক্সফোর্ড, ক্যাম্ব্রিজ, ইম্পেরিয়াল, ইত্যাদি) ওদের নিজেদের ভর্তি পরীক্ষা চালু করছে। উদ্দেশ্য মিডিওকার এ-গ্রেড-ধারী ছাত্রদের বন্যার ভেতর থেকে সত্যিকারের মেধাবীদের তুলে আনা।

খুব খারাপ খবর, রাইট? এট্টু খাড়ান! এর থেকেও খারাপ খবর আছে! এই দেশে ছাত্রের অভাবে এখন বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সায়েন্স ডিপার্টমেন্টগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। কিম্বা কাটছাট করছে। ছাত্র নেই, পড়াবে কাকে? প্রফেসরদের বেতন দিয়ে আর কি হবে?! এই দুষ্ট চক্রের শেষ কোথায়? যেহেতু রসায়ন ফিজিক্স গণিতে যথেষ্ঠ পরিমানে ভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট বেরিয়ে আসছে না, তার মানে হলো স্কুলে শিক্ষকতা করার মতো বিজ্ঞান শিক্ষকও আর পাওয়া যাচ্ছে না!! হার্ড সায়েন্সের স্কুল শিক্ষকদের এখন বিশাল কদর। বিদেশ থেকে টিচার আনা হচ্ছে ঠেক দিয়ে রাখার জন্যে, কিন্তু অন্তর্নিহিত সমস্যার কিভাবে সমাধান হবে কেউ জানেনা। সমাজ তো বটেই, সরকারের বিজ্ঞান বিমুখ মনোভাব ও আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে এ দেশের নামী দামী বিজ্ঞানীরা সাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকা চলে যাচ্ছেন সেখানকার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় বা রিসার্চ ইন্সটিটিউটে গবেষণা করতে।

মানে এক সামগ্রিক ক্রাইসিস বিরাজ করছে এই দেশের বিজ্ঞান শিক্ষায়। দুঃখ লাগে ভাবতে যে এটাই আইজ্যাক নিউটনের দেশ। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বরেণ্য বিজ্ঞানী। মাইকেল হার্ট বলেছিলেন যে নিউটন ইতিহাসের সর্বাধিক প্রভাবশালী মানুষের কাতারে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছেন! ভাবতে খারাপ লাগে এটাই বয়েল আর হুকের দেশ, ফ্যারাডে আর কেলভিনের দেশ। এখানেই ওয়াট আবিষ্কার করেছিলেন বাষ্প-চালিত ইঞ্জিন, ডারউইন সমাধান করেছিলেন বিবর্তনের রহস্য। এখনো ফের্মার শেষ থিওরেম খ্যাত এন্ড্রু ওয়াইলস আর স্টিফেন হকিং আছেন। কিন্তু তারা এখন exception, নিয়ম বহির্ভূত উদাহরন। বিলেতের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও সমাজ সবকিছুই বিজ্ঞানীদের প্রতিকুলে চলে গেছে।

*

আবার ফিরে আসি ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়। মোদ্দা কথা হলো এই যে ওদের কাছে প্রজেক্ট আছে, প্রজেক্টের টাকাও আছে, কিন্তু প্রকৌশলী নেই। এর লাভ কাড়ছেন বহিরাগত ইঞ্জিনিয়ারেরা। আমার দেখা একটা কেস বলি। হাসান ভাই এক্স-বুয়েট। গ্লাসগোতে আমার খুব নিকট বন্ধু ছিলেন। উনি জিওটেকনিকাল লাইনের মানুষ, আমার এক বছর সিনিয়র। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, বুয়েটে রেজাল্ট তেমন ভালো ছিল না। গ্লাসগোর দোকানে কামলা খেটে তিনি পড়ার খরচ চালাতেন। কম্পিউটারের অ আ ক খ জানতেন না। পুরো ক্লাস যেখানে এসাইনমেন্ট জমা দেয় টাইপ করে, উনি হাতে লিখে এসাইনমেন্ট দিতেন। একটা ওয়ার্ড ফাইল কিভাবে নাড়াচাড়া করতে হয় তার কোন আইডিয়া ছিল না, এমন অবস্থায় তিনি আমার কাছে আসেন, মাস্টার্স থিসিস লেখার ব্যাপারে সাহায্য চাইতে!!

অথচ এই হাসান ভাইয়ের রেজাল্ট ছিল দুর্দান্ত। তার প্রফেসর বলতেন, "তোমার ফান্ডামেন্টালস তো চমৎকার। কম্পিউটার জানা কিন্তু প্রকৌশল না। তোমার সেই প্রকৌশল জ্ঞান আছে।" যাই হোক, খুব ভাল রেজাল্ট নিয়ে পাশ করলেন। আমার ছয় মাস আগে চাকরি পেয়ে গেলেন। চাকরিতে ঢুকে ডানে বাঁয়ে চার ছক্কা মারা শুরু করলেন। প্রফেসরের মতই তার কাজের বসও তাকে একদম ফেরেশতা জানেন। শুধু ফেরেশতাই না, পরিশ্রমী ফেরেশতাও। রাত জেগে এখনো পড়াশোনা করেন কাজ-সম্পর্কিত, ওদিকে বৌ ঘুমায়। হাসান ভাই কাজে ঢুকার আগে বলতেন - ধুর মিয়া আমি ইংরাজি-মিংরাজি জানি না, কম্পিউটার জানি না, আমারে কেডায় চাকরি দিবো? অথচ তিনি এখন ফাটিয়ে চাকরি করছেন। আমি যে কথাটা ওনাকে প্রতিদিন বলতাম, এবং এখনো যেটা প্রযোজ্য, তা হলো - সত্যিকারের সহায় হলো জ্ঞান। এই দেশে ইংরাজি-মিংরাজি বলার লোক আছে, কম্পিউটার টেপার লোকও আছে অঢেল। কিন্তু জ্ঞান-ওয়ালা লোকের হলো সংকট। হাসান ভাইয়ের যেহেতু জ্ঞান আছে, তাই তিনি অহেতুক টেনশন করছেন। ইংরেজী বলাটা আস্তে আস্তে রপ্ত হয়ে যায়, অন্তত কাজ চালানোর মত। অভ্যাস হয়ে যায়, কনফিডেন্স চলে আসে। ওয়ার্ড এক্সেল নিয়ে খেলাও সেই একই রকম। ঘিলু থাকলে এসব আটকে থাকে না। আর হাসান ভাই তো আর খালি মাথা নিয়ে বুয়েট পাশ করেননি। এখন যখন শুনি, তিনি কাজে ভালো করছেন, গ্লাসগোতে ঘর-বাড়ি কেনার কথা ভাবছেন, খুবই ভালো লাগে।

লন্ডনে আরো ইঞ্জিনিয়ার চিনি। সিভিল, ট্রান্সপোর্ট লাইনের লোক। পাশ করে ধামাধাম চাকরি। কিছুতে আটকায় না। শুধু এখানে একটা মাস্টার্স করতে এসেছিলেন, থিসিস জমা দিয়ে পরদিনই চাকরিতে জয়েন। এরকম উদাহরণ ভূড়ি ভুড়ি। যখন ক্রসরেইলের কাজ পুরোদমে শুরু হবে, তখন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা কেবল বাড়বেই। হ্যা, মাস্টার্স করতে পয়সা যোগাড় করা সহজ নয়। কিন্তু এক বছর সেই কষ্ট স্বীকার করতে যারা রাজি আছেন, যারা সেই নিদারুন দারিদ্র্যের সাথে একটা বছর বসবাস করার সাহস রাখেন, তাদের বাকি ক্যারিয়ার যে মোটামুটি ফকফকা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

(এই লেখা মনে হয় না আজকে শেষ হবে, তাই পোস্টিয়ে চলে যাচ্ছি। আগামী খন্ডে সমাপ্য। ঈমানে কইলাম।)


মন্তব্য

জিফরান খালেদ এর ছবি

আইনের ছাত্র হয়া কোনো লাভই হয় নাই তাইলে?

ধুরো শালার বিলাত...

পেট্রোলিয়াম আইন বা পুরকৌশল আইন বলে কিছু আছে? থাকলে আওয়াজ দিয়েন...

বাঁচন তো লাগবো...

আইচ্ছা, আপনে কি ওয়াটারলুর দিকে যাইতেসেন?

সবজান্তা এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফী, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো ভেবে পাচ্ছি না। কারণটা বলি,

গত অনেক দিন যাবৎ আমার সাথে অনেকের তর্ক হচ্ছে পড়াশোনার মূল ব্যাপার নিয়ে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, মানুষের জ্ঞান আর তার মাথাটাই আসল। ইংরেজী বলা, স্মার্টনেস ইত্যাদি যোগ্যতার অবশ্যই দরকার আছে, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। যার বেসিক যত ভালো, সেই যোগ্যতর - অন্তত আমার কাছে। অনেকেই আমার সাথে শক্ত দ্বিমত পোষণ করেছেন। অনেকে আনস্মার্ট পাবলিক ইউনিভার্সিটির ছাত্রর তুলনায় তুলনায় প্রাইভেট ভার্সিটি পাশ ছাত্রদেরকে এগিয়ে রেখেছেন। হতে পারে অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ছোট আর অধিকাংশ প্রাইভেটের ছাত্রদের তুলনামূলক জানার পরিধি কম , কিন্তু তাদের মুখে ইংরেজীর খই ফোটে, তাঁরা নিজেদের সুন্দর করে প্রেজেন্ট করতে পারে।

আমার খুব মন খারাপ হয়ে যেত। আমি ভাবতাম এ যুগে একটা লোক শুধু মাত্র একটা ভাষায় দক্ষতা নেই দেখে, নাগরিক কেতা-দুরস্ততা নেই দেখেই বাতিলের খাতায় চলে যাবে ? তাঁর গাণিতিক প্রতিভা কিংবা বিশ্লেষণী ক্ষমতার কোনই দাম নেই ?

আপনার এই চমৎকার লেখা পড়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত হলাম। পৃথিবীতে এখনো মাথার কদর আছে তাহলে !


অলমিতি বিস্তারেণ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আপনার কথাটা ঠিক। ভিতরে সলিড মাল থাকা লাগে, খালি ইংলিশে ফটর ফটর করলেই হয় না। অবশ্য এইটা খেয়াল রাখবেন যে বাংলাদেশের জব মার্কেট এখনো বেশ অপরিপক্ক। বিশেষ করে মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করতে গেলে ইংলিশ ফটর ফটরটাই অপরিহার্য গুণ। যে যতো ইংলিশ বলতে পারবে, সে তত তাড়াতাড়ি সাবান-বিড়ি বেঁচা কম্পানীতে উন্নতি করতে পারবে। আমার অভিজ্ঞতায় অন্তত তাই বলে। কিন্তু আপনাদের লাইন আর বিবিএ/এমবিএ-তো এক না। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ টেকনিকাল জ্ঞান না থাকলে আর সব গুণই বৃথা।

অবশ্য তার মানে এই না যে ক্যাবলার মত চলতে হবে। এই দেশে আইসাই ছোট চুল আর জেল মারা শিখছি কি না! চোখ টিপি এইসবও দরকার একটা পর্যায়... যাকে বলে - টু লুক দ্য পার্ট...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সৌরভ এর ছবি

এইটা সিরিজ হোক।

লন্ডনের ক্ষেত্রে অলিম্পিক নিয়ে যেটা বললেন, উনিশশো ষাটে সেটা ঘটেছে টোকিওতে। এই বছরের বেইজিং অলিম্পিককে ঘিরে গত কয়েক বছর থেকে বদলাচ্ছে পুরো বেইজিং ও চীন। এই একটা ইভেন্টকে কেন্দ্র করে শহর পাল্টায়, দেশ পাল্টায়। আমূল পাল্টে যায় সবকিছু।

ছাত্র না পাওয়ায় ভার্সিটি বন্ধ, সেই গল্প অনেক জায়গাইতেই। জাপানে বাচ্চা-কাচ্চা নেই, স্কুলও বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।

পৃথিবীতে আগামী দশ-পনের বছরে এইসব অস্থিতিশীলতা অন্যরকম কোন পরিবর্তন এনে দেবে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হিমু এর ছবি

সিরিজটা চলা জরুরি। আগামী পর্বে মনে হয় আমার মুশকিল আসান হোলেও হোতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাহাহা

আপনের আবার মুশকিলটা কি বুঝলাম না?

আপনে তো উচ্চশিক্ষিত এঞ্জিনিয়ার... আমরা তো তাও না...

হিমু এর ছবি

হ রে ভাই, শিক্ষা উঁচু হইতে হইতে এমন উচ্চ হইসে যে এখন আর নাগাল পাইতাসিনা!


হাঁটুপানির জলদস্যু

জিফরান খালেদ এর ছবি

ধুর মিয়া! আপনে খালি চাপা ছাড়েন...

সুকঠিন চাউকরি তো ঠিকই বাগাইবেন দ্রুতই...

হযবরল এর ছবি

আগামী খন্ডে সমাপ্ত না হলেও সমস্যা নেই। পড়তে বেশ উপাদেয় লাগছে।

দ্রোহী এর ছবি

আমি লন্ডন যামুগা!


কী ব্লগার? ডরাইলা?

জিফরান খালেদ এর ছবি

আয়া পড়েন... আমার খাওনের একটা জায়গা হয়...

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আয়েন আয়েন। সিভিল হইলে কুনো লছ নাই, লেইখা দিলাম।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

তাইলে পোলাপানরে অখন থাইক্যাই ফিট করি! কি কন? মানে কানে মন্ত্র ঢুকাইতে থাকি- বিদ্যা হইলো ইঞ্জিনিয়ারিং! ডিগ্রি লইলে ইঞ্জিনিয়ারিং। পড়তে হইলেও...
খুব ভালো হচ্ছে হে! পোলাপান মাজার বেল্টে টাইট মেরে দাঁড়াবে!
আগামী পর্বে কোন কোন বিভাগের প্রকৌশলীর কদর বেশি? (পুরানগুলা ছাড়া।) চাই।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অংকে কাঁচা ছিলাম, এখনো আছি। সব অর্থেই। সুতরাং ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চিন্তা করারও সাহস হয়নি। এই জীবন তো বৃথা গেলো। পরজন্মে কী জাতের ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়, সে বিষয়ে একটা দিশা এই সিরিজের শেষে থাকবে তো? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই পর্বটা কেমন যেন আলোচনা/মন্তব্য টাইপের হয়ে গেছে। আরেকটু ফোকাসড হলে জমত।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শামীম এর ছবি

হুম .... আমার কাঁচঘেরা কক্ষের বাইরের দিকে অনেক লেখার প্রিন্ট স্বচ্ছ টেপ দিয়ে লাগানো আছে। বেশির ভাগই (সবগুলো না) আমার লেখা (একটু লজ্জা লজ্জা ভাব)। ওখানে আপনার এই লেখাটাও যাবে।

আমি নিশ্চিত ছাত্ররা এটারও সফটকপি/হার্ডকপি চাইবে।

আর introduction to Civil engineering কোর্সের কলিগকে বলব এটা বিতরণ করতে। অনুপ্রেরণা পেট্রোল/ডিজেল/অকটেনের চেয়েও অনেক বেশি চলার শক্তিদায়ক।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

থ্যাংক্স শামীম ভাই, আমি সিরিজের শেষে এটা পিডিএফ করে কোথাও আপলোড করে দেব। তখন যদি চেনা-জানা ছাত্র-ফ্যাকাল্টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন, কৃতজ্ঞ থাকবো। শুধু আপনার ভার্সিটি না, অন্যত্রও। আমাদের দেশে অল্প-বয়েসী ছাত্রদের জন্যে সঠিক ক্যারিয়ার প্ল্যানিং জিনিসটার যে কত বড় অভাব, সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝি। সারা জীবনের মোড় ও গতি বদলে দেওয়ার ডিসিশনগুলো - বিবিএ পড়বো না প্রকৌশল না মেডিসিন না অন্য কিছু - সব কিছু তাদের নিতে হয় আধ-কানা অবস্থায়। বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনের পীড়াপীড়িতে। খুবই যন্ত্রণাদায়ক ব্যবস্থা। আশু নিরসন দরকার।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

শামীম এর ছবি

পি.ডি.এফ. এর অপেক্ষায় থাকলাম .... .... চলুক
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অয়ন এর ছবি

আমি একটু কই।

পুলাপান সায়েন্স পড়ে না দেইখা ইন্জিনিয়ার হইতে পারে না, দুইদিন পর সায়েন্স পড়ে না দেইখা ব্যাংকেও চাকরী পাইবো না কয়া রাখলাম। ওয়াল স্ট্রীটে এখন গণিতবিদ আর পদার্থবিদগো রমরমা অবস্থা, প্রুগ্রামারগো লয়া টানাটানি। ইন্ডিয়াতে এখনই এই ঢেউ লাগছে, বাংলাদেশে কখন লাগে ঠিক নাই। হয়তো একটু দেরী হইতে পারে, তবে ধাক্কা যে লাগবো সেইটা নিচ্চিত। ধাক্কা লাগার আগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

রাফি এর ছবি

কলজেটা ঠান্ডা হইল। পরিবেশ প্রকৌশল বিষয়ে আরেকটু খোলাসা কইরা কন।
তাতে মনটাও জুড়াইব।
লেখা চলুক......।।অত তাড়াহুড়া করতেছেন কেন।
তথ্য আমার অধিকার, এইটা আদায় করতে দেন......

---------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

বাংলাদেশ থেকে কি সরাসরি এ্যাপ্লাই করলে নিবে? নাকি, ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী লাগে?

উপভোগ্য সিরিজ ,,, চলতে থাকুক
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শিমুল এর ছবি

উপভোগ্য সিরিজ,চলতে থাকুক।তবে প্রকৌশলি ভাইজান'রা বিশেষত টেলিযোগাযোগ,কম্প্যুটার আফনেরা আফ্রিকা টেরাই মারতে পারেন।বিলাত কিংবা আম্রিকা'র তুলনায় টেকা-পয়সা কম পাইবেন না,বাড়তি পাবেন সম্মান।

সবজান্তা এর ছবি

টেলিযোগাযোগের কথা কি আরেকটু ভাইঙ্গা বলা যায় ? কোথায় সুযোগ, ক্যামনে কী ?


অলমিতি বিস্তারেণ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঠিক। ভিতরে সলিড মাল থাকলে টেকনিক্যাল জ্ঞান অর্জন শুধুমাত্র 'লেগে থাকা'র বিষয়।

সিরিজ চলুক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সুন্দর লেখা। আফসোস হচ্ছে কেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলাম না!

শামীম এর ছবি

গল্পটা জানেনতো ....

ঐ যে এক ভদ্রলোক সব ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে থাকতে লাগলো। তারপর, বিড়াল পোষা শুরু করলো; বিড়ালের দুধের জোগান দিতে গরু; গরুকে রাখার জন্য রাখাল; তারপর রাখালের খানাপিনা ইত্যাদি দেখার জন্য নিজের বউ ....

শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে কিচ্ছু হয় না ... সব কাজই মাল্টি-ডিসিপ্লিনারী টিম ওয়র্ক। কাজেই আফসোসের দরকার নাই .... .... খালি ঠিক সময়ে, ঝোপ বুঝে .....
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নন্দিনী এর ছবি

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কি অবস্থা যদি এক্টু আলোকপাত করেন ভালো হয় । ধন্যবাদ ।

নন্দিনী

অতিথি লেখক এর ছবি

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে লেখবেন কি??

------------------
উদ্ভ্রান্ত পথিক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।