ক্রিকইনফো-তে জানা গেলো যে ২০১০ সালের পর থেকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমকে আর কোন সফরের আমন্ত্রণ জানাবে না। তারা বলছে যে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের এক দশক পরেও বাংলাদেশ টীম সেই স্ট্যাটাসের স্বার্থকতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারত আজ অব্দি বাংলাদেশকে ঘরোয়া কোন টেস্ট সিরিজ খেলতে আমন্ত্রণ জানায়নি। জিম্বাবুয়ের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশের হুট-হাট করে টেস্ট প্রাপ্তি ব্যাপারটা কখনোই বোধগম্য হয়নি। আইসিসি-তে ভারত ব্লকের ভোট ভারী করার উদ্দেশ্য হয়তো সফল হয়েছিল, আর বড়-সড় নতুন কমার্শিয়াল মার্কেট পাওয়া গিয়েছিল। খেলার নিরন্তর বাণিজ্যিকীকরণ ক্রিকেটকে কোথায় ঠেলে নিয়ে গেছে, তা নিয়ে আগে লিখেছি। দুঃখের বিষয় এই যে বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়ায় কেবল বৃহৎ শক্তির জন্যে একটা দাবার গুটি হিসাবেই ব্যবহৃত হলো। এর সাথে তাল দিয়েছিল সাবের চৌধুরীর মত কিছু লোক।
কোন অবকাঠামো ছাড়াই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিলাম। মাত্র দুটো খুটি ছিল - এক, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে ম্যাচ বিজয়, যেই খেলার সত্যিকারের কাহিনী নিয়ে সংশয় আদৌ কোনদিন যাবে না। দুই, আইসিসি ট্রফি বিজয়, যেটা খুশীর কারণ ছিল অবশ্যই, কিন্তু আরো কিছু আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলে সেগুলো জিতে, একটা ঘরোয়া ফার্স্ট-ক্লাস লীগ দাঁড় করিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।
সেসব কিছুই করা হয়নি। বরং বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের খেলার মাঠে বলির পাঠা বানানো হয়েছে, আর ক্রিকেটাঙ্গনে দেশের মান-মর্যাদা এক দশক ধরে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। ১০ বছরে ৫৭টা টেস্ট ম্যাচে মাত্র একটা বিজয় - তাও সেই হাইস্কুল টীম জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। কালে-ভদ্রে একটা-দুইটা ওয়ান-ডে ম্যাচ জিতিয়ে পাবলিককে এখন আর বুদ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। "কার্ডিফ! কার্ডিফ!" জাতীয় রব তো অনেক শুনেছি। আর কত?
এমনকি যেই ভারতের সবচেয়ে বেশী লাভ হয়েছে আইসিসি ভোটিং ব্লকে বাংলাদেশকে এনে, সেই ভারতই বাংলাদেশকে একবারও খেলতে ডাকেনি! এই হলো প্রতিদান।
আইসিসির প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ মদদে ক্রিকেট খেলার ইন্টেগ্রিটি গত এক দশকে বিভিন্নভাবে বিনষ্ট হয়েছে। ডালমিয়া আর স্পীড মার্কা নেতৃত্ব টিভি চ্যানেলের দালালী ছাড়া আর কিছুই করতে শিখেনি। জিম্বাবুয়ে আর বাংলাদেশের এই লুলিয়ে চলারও আদৌ কোন শেষ আমরা দেখবো - সেই আশা করতে পারছি না। না হলে দুই টীমকে অনেক আগেই টেস্ট খেলা থেকে সাময়িক বিরতি দেয়া উচিৎ ছিল। তা না করলে দেখা যাবে কিছুদিন পরে সেটা নিজে নিজেই চালু হয়ে গেছে - যখন আমাদের বেশীর ভাগ খেলা ঘরের মাঠে বসেই খেলতে হবে।
মন্তব্য
পোস্টের সাথে একমত। খুব, খুব লজ্জার বিষয়। বাংলাদেশের উচিত ছিলো বেশি করে বড় পরিসরের ম্যাচ খেলা। জিম্বাবুয়ে আর কেনিয়ার সাথে, কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে। বছরের এক ঘরোয়া লীগ ছাড়া বড় পরিসরের খেলা কই হয়? তাও সেই লীগে খেলা হয় পিকনিকের আমেজে। এসব সমাধান কিভাবে কী হবে ভেবে পাই না।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
- বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায় তখন কাঠামোর অবস্থা কি এতো খারাপ ছিলো যতোটা এখন? কাঠামো উন্নত করার সুযোগ আর সম্ভাবনা তখন যথেষ্টই ছিলো। কিন্তু করা হয় নাই। তখন শুরু করলেও এতোদিনে সেটা মহীরূহ হয়ে যেতো। এখন ইটস টু লেইট!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বাজে অবস্থা দেখি। আসলেই লজ্জার বিষয়।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
একটি শক্তিশালী ক্রিকেট অবকাঠামো ছাড়া এই সমস্যার কোন সমাধান নাই । টেস্ট খেলার ৯ বছর পরও আমরা একটা দল হিসাবে দাড়াতে পারলাম না শুধু এই কারনেই।
একটি শক্তিশালী ঘড়োয়া ক্রিকেট অবকাঠামো ছাড়া এই সমস্যার কোন সমাধান নাই । টেস্ট খেলার ৯ বছর পরও আমরা একটা দল হিসাবে দাড়াতে পারলাম না শুধু এই কারনেই।
যেমন কর্ম তেমন ফল।
বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়ায় (অর্জন করায় নয়) শত শঙ্কার মধ্যে আশান্বিত হয়েছিলাম এটা ভেবে যে, এই জোয়ারে যদি অবকাঠামোটাকে ঠিক করা যায়! ঘরোয়া ক্রিকেট লীগে তিন-চারদিনের ম্যাচ বেশি বেশি খেলা চালু করা হবে এই আশাও ছিলো মনে। নিদেনপক্ষে বাংলাদেশ অন্য দেশগুলোর সাথে আরেকটু বেশি বেশি খেলার সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করতে পারবে- এই আশায় ছিলাম অনেকদিন পর্যন্ত। আমার এখনো মনে হয়, সে সময় টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়াটা ভুল ছিলো, কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস ও জোয়ারটাকে কাজে লাগাতে পারলে আজকের দিনে কেউ এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারতো না। আমরা সেটা করতে পারি নি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
একমত, গৌতম। আমার ভাবানাও তেমনটাই ছিল। আশাও ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে আমরা কেবল পিছিয়েছি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
যে গরু দিয়ে হালচাষ হয় না, মইও চলে না- তার জন্য হাইল্যাও না, জাইল্যাও না বলে একটা কথা আছে। সেইরকম গরু মারা গেলে সেই সার দিয়া ফুল বাগান করা যাইতে পারে।
বিসিসি, বাফুফে, দুইটার মেজর রিস্ট্রাকচারিং, পারলে ওভারহলিং দরকার।
লজ্জা! ভীষন লজ্জা!!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমরা দুঃখ বা লজ্জা পেয়ে লাভ নেই। যাদের বোধ থাকা দরকার সবচেয়ে বেশি, তারাই তো নির্বিকার।
আমারতো মনে হয় জাতি হিসেবে লজ্জিত হওয়ার মতো আমাদের অন্য অনেক বিষয় আছে। ক্রিকেটের উন্নতি যতটা হয়েছে তাতে কখনো একটু হয়ত বিব্রত এবং আশাহত লাগতে পারে কিন্তু লজ্জিত হওয়ার কোনো কারন নেই। একজন সাকিব বা আফতাব কিংবা একজন আশরাফুল বা কাপালির মতো খেলোয়াড় আমরা এখন পাচ্ছি সেটাও কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার একটা সুফল। আমাদের একজন ভাল খেলোয়াড়ও আর্ন্তজাতিক এক্সপোজার না পেলে সে ম্যাচ উইনার খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবে না। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়াটা অন্যদের জন্য না হলেও অন্তত বাংলাদেশের জন্য ভাল ফলাফলই বয়ে এনেছে । একটু ধীর গতিতে হলেও নিশ্চিতভাবেই উন্নতি হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। তাই সাবের সাহেবদের ভূমিকা আমার কাছেতো যুক্তি সঙ্গতই মনে হচ্ছে। এছাড়া ভারতের কাছ থেকে প্রতিদান আশা করাটাই বা কতটুকু সঙ্গত?
উন্নতি যে হচ্ছে তার দুটো উদাহরন দিতে পারি; সম্প্রতি বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্টে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটা এবং ভারতের আই সি এল -এ কাপালিদের পারফরমেন্স স্পস্টতই বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির ইঙ্গিতবাহী। কিন্তু চিন্তাটাকে অসম্ভব পথে যেতে দেওয়া ঠিক হবে না। আমারতো মনে হয় শ্রীলঙ্কার মত একটা মানে পৌছতে আমাদের আরও ১০-১৫ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতি হিসেবে আমাদের সম্ভবত কিছু সহজাত সমস্যা রয়েছে। যেমন আমরা তাড়াতাড়ি সবকিছু ভূলে যায় তেমনি দ্রুত ফলাফল না এলে যেন বিশ্বহতাশে পরিনত হই।
আনেককেই দেখেছি কেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা বা ভারতের মত খেলতে পারছে না সেটা ক্যালকুলেট করছে। যেন এটা সামান্য একটা ব্যাপার যা করে ফেললেই এরা একেকটা জয়সুরিয়া বা তেন্ডুলকার হয়ে যাবে।
আর এক সমস্যা হল সকলেই নিজেকে বিশেষজ্ঞ ভাবতে শুরু করি। একটা ঘটনা বলি, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট চলছে ঢাকায়। বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে। অমনি আমাদের নিউজ এডিটর বলে উঠলেন "সাহস কত মুরালিধরনরে হাঁটু গাইরা মারতে যায়"। একটু শর্ট অব লেনথ বল হাটু গেড়ে সুইপ করাটা দোষের কিছু ছিলনা, টপ এজ হয়ে অউট হয়ে গেছে । আর এ ব্যাপারে স্পোর্টস রিপোর্টারদের অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। কনক্লুশন টানার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি মিসগাইড করে স্পোর্টস রিপোর্টাররা। একটা ম্যাচ জিতলে তারা এমনভাবে বিষয়টাকে তুলে ধরে যেন বাংলাদেশ ভারতের সমান হয়ে গেছে। অন্তত সাধারন লোক বিষয়টাকে ওভাবেই বিশ্বাস করে।
২০১০ সালের পর থেকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমকে আর কোন সফরের আমন্ত্রণ না জানানোর ঘোষনা দেয়া সত্বেও ক্রিকেটে বাংলাদেশ ধীর গতিতে হলেও নিশ্চিতভাবেই উন্নতি করছে।
ধানসিঁড়ি
প্রিয় ধানসিড়ি,
উন্নতি করছে মানলাম। কিন্তু খেলাধুলায় ১০ বছর প্রায় দুই জেনারেশন এর সমান। আমার মনে হয় বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেট খেলোয়াড় রা যে পরিমান সুযোগ সুবিধা পায়। বাংলাদেশের সেরা ছাত্র, বড় শিক্ষক, লেখক, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদরা তার ধারের কাছেও প্রৃষ্টপোষকতা পায়না।
ক্রিকেট অনেক দেখে ফেলেছি। বাংলাদেশ জিতলে যদিও এই আমিই জামা খুলে মাথায় পাগড়ী বেধে লাফা লাফি করি! তার পরও আবেগের উপর আর কত দিন??
দুয়েক দিনের একটু পুলোকের জন্য আর কত লজ্জা বয়ে বেড়াব? যেটা পারিনা সেটা স্বীকার করলেই তো হয়।
আমার চেনা ক্রৃড়ামোদীরা এখন ইউরোপিয়ান লীগ দেখে।
লাথিচড় খেতে আর ভাল্লাগেনা।
মাঝে মাঝে মনে হয় শালার এই ক্রিকেট কেই 'না' ভোট দিই।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কোথাও একটা ভালো খবর নাই দেশ নিয়া...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
কিন্তু স্বল্প সংখ্যক সেরা ছাত্র, বড় শিক্ষক যারা পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন তাদের আউটপুটটা কি ?
আর ঈর্ষাজাগানিয়া বেশি টাকা পয়সা কিন্তু কেবল দেশের সেরা কজন খেলোয়াড়ই পেয়ে থাকে। যেমন পেয়ে থাকে সংগীতের ওপরের সারির কিছু তারকা, সিনেমা বা টিভির কজন তারকা। আর এটা ঘটে থাকে এ কারনেই যে ওইসব লোকগুলোকে কমার্শিয়ালি এক্সপোজ করা সম্ভব হয়। এদের পারিশ্রমিকের সাথে তাদের পারফরমেন্সের আনুপাতিক সম্পর্ক কিন্তু নেই। এটাও সম্ভবত বাজার অর্থনীতির তেলেসমাতি।
ধানসিঁড়ি
লেখার সর্বাংশের সাথে সহমত, শুধু একটা প্রশ্ন। পাকিস্তানের সাথে বিজয়ে সংশয়টা কোথায় ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কিছুই ১০০% প্রমাণিত হয়নি - কিন্তু এরকম কথা অনেক হয়েছে সেই খেলাকে ঘিরে
http://news.bbc.co.uk/sport2/hi/cricket/1570669.stm
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
নতুন মন্তব্য করুন