কয়েকদিন আগে নতুন সরকারের কি কি করণীয়, এই বিষয়ে পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করলেন যে পাওয়ার সেক্টর-কে ঢেলে সাজাতে হবে। যথেষ্ট পরিমানে বিদ্যুত উৎপাদন করতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন কি করে হবে? দৈনিক লোডশেডিং-এর কারনে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সবসময়ই বিঘ্নিত হচ্ছে। দিনে ৫ বার, ১০ বার কারেন্ট চলে যাওয়া কোন ব্যাপার না। এটা একটা অস্বাভাবিক, অসহ্য পরিস্থিতি - প্রতিদিনই যদি আমরা কয়েক ঘন্টা করে অন্ধকারাচ্ছন্ন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকি, তাহলে আমরা কি করে নিজেদের ২১ শতকের প্রকৃত নাগরিক বলে দাবী করবো? ১০০টা চ্যানেলে ২০০টা মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখে নিজেদের আধুনিক ভাবার কোন কারন নেই।
'অস্বাভাবিক' কেন বললাম? আমার সবসময় একটা ধারণা ছিল যে অনুন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে কারেন্ট সাপ্লাই জিনিসটাই অনিশ্চিত। ঠিক যেমন উন্নত বিশ্বে বিদ্যুৎ প্রবাহ সবসময় সুনিশ্চিত। শত হোক, বিদ্যুত উৎপাদন তো উন্নয়নেরই একটা মূল সূচক। কিন্তু ধারণা কিছুদিন আগে ভূল প্রমাণিত হলো। কয়েক মাস আগে কায়রো গিয়েছিলাম বন্ধুর নিমন্ত্রণে, তার বাসাতেই উঠেছিলাম। সারা জীবন শুনে এসেছি, মিশর হলো আরব বিশ্বের দারিদ্র্য এবং অনাচারের একটা প্রধাণ কেন্দ্র। এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুড এখানে শক্তিশালী হয়েছে, গরীব জনগোষ্ঠী থেকে ইসলামিস্ট মুভমেন্টের সৈনিকেরা উঠে আসছে। হেন তেন।
হতে পারে সবই সত্যি। কিন্তু যখন আমার বন্ধুর বাসায় গেলাম - এয়ারপোর্ট থেকে আধ-ঘন্টা দূরে এক শহরতলীতে ছয়-তলার ফ্ল্যাটে, ধরেন উত্তরা ১২-১৪ নম্বরের মতো আমেজ - তাজ্জব হয়ে দেখলাম যে রমজান মাসের ঠা-ঠা গরমেও কারেন্ট ঠিকমতো চলছে ২৪ ঘন্টা, ছয়-তলা উপরেও কল থেকে পানির ফ্লো দিব্যি জোরালো! আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের কারেন্ট যায় না? সে কিছুটা অবাক হয়ে বললো, কই না তো? প্রায় তো ১৫ বছর ধরে আছি এই দেশে, বিদ্যুত বিভ্রাট কায়রোতে সচরাচর ঘটতে দেখিনি। এই কথা শুনে আমার মুখ কিছুটা তেঁতো হয় - এই আরবের বাচ্চারা যদি পারে, আমরা কেন পারবো না?
*
যারা ব্যবসা বাণিজ্যে শিল্প কারখানার সাথে জড়িত, তারা আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হন বিদ্যুতের স্বল্পতার কারনে। যখন চট্টগ্রামে বেসরকারী ব্যাংকে চাকুরী করতাম বহুকাল আগে, তখন দেখতাম যে বেসরকারী প্রায় সব ব্যাংকই নিজস্ব জেনারেটর বসিয়ে কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু কাজের সূত্রে যখনই আসাদগঞ্জ-খাতুনগঞ্জের চিপাগলির ভিতর গিয়েছি সোনালী আর জনতা ব্যাংকের অফিসে, প্রায়ই দেখেছি নিকষ অন্ধকারে ফাইল-পাতির মাঝে সমাসীন বসে আছেন ট্রেড বিভাগের প্রিন্সিপাল অফিসার। মোমের আলোয় সই করছেন এল,সি, আর পেমেন্ট।
আর গার্মেন্টস তথা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রির সাথে যারা জড়িত আছেন, তারাও বলতে পারবেন ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-স্বল্পতা কত বড় একটা বাধা। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত গ্রাফ অনুযায়ী ৮০% কম্পানী বলছে যে বিদ্যুত সাপ্লাই বাংলাদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা বড় অন্তরায়। (ভারতে সেই একই কথা বলছে মাত্র ৩০% কম্পানী, কেনিয়াতে প্রায় ৪৫%, আর ভিয়েতনামে মাত্র ১৫% কম্পানীর এই অভিযোগ।)
করণীয় কি? নতুন সরকার মানে নতুন যাত্রা। ক্যাবিনেট যখন ঘোষনা করা হলো, দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো পোর্টফোলিওর সাথে শক্তি/জ্বালানী/বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছেন। সাহসী পদক্ষেপ, কিন্তু এটা কি বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক? পত্রিকা থেকে হাসিনার সম্পূর্ণ পোর্টফোলিও তালিকা তুলে দিলাম -- six ministries - energy and power, housing and public works, women and children affairs, religious affairs, defence and establishment — and two divisions — cabinet and armed forces.
বহুত দায়িত্ব। আমার তো মনে হয় এনার্জি মিনিস্ট্রির বিশাল গুরুত্ব মাথায় রেখে এর ফুল-টাইম দায়িত্ব একজন যোগ্য মন্ত্রীর হাতে তুলে দিলে তিনি পারতেন। এতো কিছুর সাথে এনার্জি মিনিস্ট্রি নিজের হাতে ধরে রাখার পেছনে কি কারন থাকতে পারে, তা আমার বোধগম্য নয়।
*
সে যাই হোক। আজকে ডেইলি স্টারে একটা লেখা এসেছে দেখলাম ইফতি ইসলামের। নতুন সরকার কিভাবে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারেন, তার কিছু সাজেশান দিয়েছেন তিনি - ছয় দফা একশন প্ল্যান। আর্টিকেলটা দেখার আগে প্রশ্ন আসতে পারে - এই ইফতি ইসলাম সাহেব কে? তিনি এবং তার কম্পানী Asian Tiger Capital Partners-এর নাম এর আগে কেউ কেউ শুনেছেন। এই বিষয়ে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়ার অবকাশ আছে হয়তো।
ইফতি ইসলাম একজন প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। বাংলাদেশী মানুষ তবে পশ্চিমের বড় বড় ব্যাংকে (সিটিগ্রুপ, ডয়চে ব্যাংক, মেরিল লিঞ্চ)-এ বিভিন্ন সিনিয়র পদে কাজ করেছেন অনেকদিন। যতদূর জানি, তিনি মূলত লন্ডনবাসী, তবে 'এ টি ক্যাপিটাল'-কে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে গেছেন দুই বছর আগে।
এ টি ক্যাপিটাল-এর মূল উদ্দেশ্য কি? ইফতি ইসলামের ভাষ্য মতে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া আর ভিয়েতনামের মত বাংলাদেশ-কে আরেকটা এশিয়ান টাইগারে পরিণত করা। আর সেই বাঘা-করণের প্রক্রিয়াটা কি হবে? সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর (emerging markets) প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। ইফতি ইসলাম বলছেন যে সেই বিশাল ক্যাপিটালের প্রবাহের কিছুটা বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়াই তার ফার্মের উদ্দেশ্য। এই পুঁজির আগমনের ফলে দেশের ভেতর বিনিয়োগ বাড়বে, শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোতে এই টাকা সঞ্চালন করা যাবে। এবং তা থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই তো গেলো থিওরি। bdinvest নামে গুগল গ্রুপের কল্যাণে গত কয়েক মাস ধরে ইফতি ইসলামের লেখালেখি হাতে আসছে। তিনি যে লেখালেখিতে ভালো, অর্থনীতি/উন্নয়ন এইসব বিষয় নিয়ে অনেক ভেবেছেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তার কম্পানী আর কিছু করুক না করুক, খুব রেগুলার ভিত্তিতে একটা সাপ্তাহিক রিপোর্ট তৈরী করে দেশের অর্থনীতিতে নতুন কি কি ডেভেলমেন্ট হলো, সেগুলো ব্যাখ্যা করে। সেই রিপোর্টগুলো মাঝে মাঝে পড়ি এবং নিঃসন্দেহে সেগুলো থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। যতদূর জানি, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এই রকম নিয়মিত সাপ্তাহিক রিপোর্ট আর কেউ তৈরী করছে না। ত্রৈমাসিক জাতীয় একটা রিপোর্ট এডিবি তৈরী করে, কিন্তু সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক কিছু নেই। আরো যা শুনেছি, এ টি-র রিপোর্টের সিংহভাগ লেখা ইফতির কলম থেকেই বেরোয়। তার আন্ডারে হরেকরকম বিবিএ/এমবিএ-দের কর্মনিষ্ঠা নিয়ে তিনি যে খুব একটা সন্তুষ্ট নন, এমন গুজব শুনেছি। ('কর্মক্ষেত্রে ফেসবুকের কুপ্রভাব উদাহরণ সহিত ব্যাখ্যা করো!')
তবে আসল কথা হলো কি - ফলেন পরিচয়তে। রিসার্চ রিপোর্ট লেখা এক জিনিস। আর কাজের কাজ অন্য জিনিস। এতো আর্টিকেল, এডিটোরিয়াল-এর ভীড়ে এ টি ক্যাপিটাল আসলে কি কাজ করছে বা করতে পারবে, তার কোন সুনিশ্চিত চিহ্ন এখনো দেখিনি। ইফতি ইসলাম পশ্চিমে তাঁর হাই-ফ্লাইয়িং ক্যারিয়ার স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে দেশে গেছেন আধুনিক ফাইন্যান্সের কিছু একটা দাঁড় করাতে, তার জন্যে এক রকমের সাহস লাগে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার কম্পানীর আসলে কি ভূত-ভবিষ্যত, সেটা এখনো অপরিষ্কার। ভিন্ন মতাবলম্বীরা হয়তো তার সম্পর্কে একটু ঘাটাঘাটি করে তাকে পুঁজিবাদের দালাল বা নব্য সাম্রাজ্যবাদের বেনিয়া আখ্যা দেবেন -- সেটা নিয়েও বিশেষ কিছু বলার নেই।
আজকের লেখার মূল উদ্দেশ্য তাঁর ডেইলি স্টারে লেখাটা নিয়ে। অয়নের পোস্ট আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলো যে জ্বালানী আর বিদ্যুৎ নিয়ে জাতীয় বিতর্ক আবারো ঘণীভূত হতে যাচ্ছে।
ছয় দফা একশন প্ল্যান নিম্নরূপ --
- কয়লা নীতি বিষয়ে তড়িৎ সিদ্ধান্ত
- নতুন গ্যাস ফিল্ড সন্ধানে সচেষ্ট হওয়া
- স্বল্প মেয়াদে উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে ভাড়াকৃত পাওয়ার প্ল্যান্ট আনা
- বিদ্যুত আর জ্বালানীর দাম একটা যথাযথ পর্যায় ধার্য করা
- সিস্টেম লস কমানো
- অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যে একটা নতুন এজেন্সি স্থাপন করা
এর মধ্যে ১ আর ৩ নিয়ে আপাতত কিছু বলার আছে। বাকিগুলো নিয়ে আরেক সময় হয়তো কিছু লিখবো।
১) কয়লা নীতি -
বিদ্যুৎ উৎপাদন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন যে ২০১১ সাল নাগাদ তিনি ৫০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন নিশ্চিত করবেন, ২০১৩ নাগাদ ৭০০০ মেগাওয়াট আর ২০২১ নাগাদ ২০,০০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে আমরা বানাচ্ছি মাত্র ৩৫০০ মেগাওয়াটের মতো (কারো মতে ৩৮০০)। মানে প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের শর্টেজ প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট। ইফতি বলতে চাচ্ছেন যে ৫০০০ মেগাওয়াট তৈরীর কোন সম্ভাবনা আমাদের নেই, যদি না আমরা ফুলবাড়ির কয়লা কাজে লাগাই। এর ফলে সাধারণ মানুষের যেই ক্ষতি-বিচ্যুতি হবে, তা নিয়েও লিখেছেন দুই লাইন।
ফুলবাড়ি নিয়ে বিতর্ক তো আছেই। এই বাদেও বাংলাদেশের মতো অতিমাত্রায় ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আদৌ কোন রকম গ্রাউন্ড এক্সপ্লোরেশান করা সম্ভব কি না, এবং করলেও তার নিয়ম-নীতি আর প্যারামিটার কি হবে, এই বিষয়ে আলাপ আলোচনার সময় এসেছে।
৩) ভাড়াকৃত পাওয়ার প্ল্যান্ট -
ইফতি বলতে চাচ্ছেন যে স্বল্পমেয়াদী ভাড়াটে পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্যে দেশে-বিদেশে টেন্ডার আহবান করা উচিৎ। এই টেন্ডারবাজির ফলে যে কি পরিমাণ দুর্নীতি সম্ভব, তার উপর নজর রাখবে কে? যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব কুক্ষিগত করেছেন?
*
অয়নের লেখা থেকে উঠে আসছে এশিয়া এনার্জির শেয়ারের দামের হঠাৎ উর্দ্ধগতি। পুরো শেয়ার বাজার যেখানে ডুবন্ত, সেখানে এশিয়া এনার্জির দাম উঠার পিছনে একটাই কারন থাকতে পারে। তা হলো এই কম্পানীর শেয়ার নিয়ে যারা খেলা করেন, তারা আশা করেছেন যে ফুলবাড়ি প্রকল্প হয়তো আবার নতুন করে এখন এগুবে। কি কারনে কারবারীদের এই আশা সেটা জানা প্রয়োজন।
তার থেকেও বেশী প্রয়োজন এই মুহুর্তে জাতীয় এনার্জি পলিসি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, সমাজের সর্বস্তরে। সেই আলোচনায় কলামিস্ট আর ব্লগার, কৃষক আর মজুর, বিজ্ঞানী আর অর্থনীতিবিদ, বাম আর ডান, সবারই একটা জোরালো ভয়েস থাকা প্রয়োজন বলেই মনে হচ্ছে।
মন্তব্য
অয়নের ওখানে করা কমেন্ট এখানে আবার করলাম । পুরো শেয়ার বাজার ডুবন্ত কথাটা ঠিক । তবে প্রতিবছর বছরের শেষ থেকে শুরু করে পরবর্তি বছরের শুরুর প্রথম সপ্তাহে শেয়ার মার্কেট একটু চাঙা থাকে । এটা জানুয়ারি ইফেক্ট নামে পরিচিত । যথানিয়মে জানুয়ারি প্রথম দিকের চাঙাভাব প্রথম সপ্তাহ শেষে মরে গেছে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অয়নের এই পোস্টটার কথা বলেছেন কি?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
জ্বী এটাই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমার তো মনে হয় স্বল্পমেয়াদী/বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুত কেন্দ্র ইত্যাদি দিয়ে টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। এম্নিতেই টেন্ডারকরে দেশে এনে কাজে লাগাতে লাগাতে ৯-১২ মাস সময় লেগে যাবে, আর অনিয়মতা তো হবেই।
ঢাকা আর চট্টগ্রামের আবর্জনাই লোড শেডিং এর সবচাইতে বড় সমাধান। বিডিয়ার দিয়ে ময়লার কালেকশনের ব্যাবস্থাপনা আর মিলিটারির হাতে প্লান্ট স্থাপনের দ্বায়িত্ব দিলে টেন্ডার ফেন্ডার সহই বছর শেষে দুই একটা চকচকে নতুন প্লান্ট দেখা যাবে।
সারের ডিমান্ড দেশে সরাবছর এক রকম থাকে না। এ সময় চট্টগ্রামের সার কারখানা গুলো বিশেষ করে কাফকো ও চিটাগাং ইউরিয়া রপ্তানীর জন্য সার উতপাদন করে, অথবা বন্ধ থাকে, তবে এদের বাতসরিক গ্যাস কোটা অটুট থাকে। চুক্তিগত ভাবে এদের কেউই বড় আপদের সময় (force majeur) সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে পারবে না, অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার চাইলে এদের উতপাদন শিডিউল নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। এদের যা সাইজ, তাতে ১০০-২০০ মেগাওয়াটের আলাদা পাওয়ার প্লান্টে এদের থাকবেই, থাকবে না শুধু জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুত পাঠানোর ব্যাবস্থা। বর্ষা ও শীত মওসুমে সারের আভ্যন্তরীন ডিমান্ড যখন কম থাকে ও কাফকো সরকার এদের থেকে এই ব্যাবস্থাটা আদায় করতে পারে। এতে হয়ত কয়েকটা জাপানী একটু রাগ করতে পারে। এই বাজারে কয়েকটা জাপানী রাগালে বাংলাদেশের লোকশান আর কি?
আরেকটি লেখায় ইস্টার্ন রিফাইনারির নাফথা রপ্তানীর কথা বলেছিলাম। নাফথার এনার্জি কন্টেন্ট প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে খুব একটা খারাপ না, কোন কোন ক্ষেত্রে একে গ্যাস টারবাইনেও ব্যাবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় গ্যাস গ্রীডের অপর চাপ কমাতে দুই একটা গ্যাস চালিত পাওয়ার প্লান্টে নাফথা ব্যাবহার উপযোগী করা যাতে পারে। তা ছাড়া এখন বাজার বেশ এফিশিয়েন্ট নাফথা পাওয়ার প্লান্টও পাওয়া যাচ্ছে। ভারত তো গত বছরই একটা নাফথা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বানালো। ইস্টার্ন রিফাইনারির মত ব্রাউনফিল্ডে এরকম একটা প্ল্যান্ট করলে গতানুগতিক থেকে মেগাওয়াট প্রতি খরচও অনেক কম পড়বে।
আমি যদ্দূর জানি এশিয়ান টাইগার এখনো ফান্ড যোগাড়ে ব্যস্ত। আসল কাজের (ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং) কদ্দূর কি করতে সেটা নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং এর কোন মডেল এখনো বাংলাদেশে তৈরী হয় নি। যতই পুঁজিবাদের দালাল বা নব্য সাম্রাজ্যবাদের বেনিয়া বলি না কেন, এইরকম একটা মডেল আসলেই দরকার বাংলাদেশের জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন