গেলোবার যখন গ্রেট ডিপ্রেশন হলো, ১৯২৯-এর স্টক মার্কেট ক্র্যাশের পরে, শুনেছি যে ওয়াল স্ট্রীটের বাঘা বাঘা স্টক ট্রেডার-রা নাকি লোকসানের যাতনা সইতে না পেরে তাদের উঁচু অফিস-অট্টালিকার জানালা থেকে ঝাঁপ দিতেন। অনেকে বলেন যে এটা নিতান্তই একটা রং-চড়ানো গুজব ছাড়া আর কিছু না। আবার কারো কারো মতে অন্তত দুইজন ইনভেস্টর ১৯২৯-এর ক্র্যাশে ঝাঁপ দিয়ে তাদের ভবলীলা সাঙ্গ করেছিলেন।
সে যাই হোক, যেই কথাটা সত্য তা হলো যে জানালা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করাটা এখন আর সম্ভব না, কারন ওয়াল স্ট্রীট বা লন্ডনের স্টক মার্কেটের ট্রেডিং ফ্লোর-গুলোর জানালা এখন এমনভাবে তৈরী করা হয় যে সেগুলো খোলার কোন উপায় নেই। অত বড় রিস্ক নিতে বিল্ডিং-ওয়ালারা ভরসা পায় না আর কি।
*
৮০ বছর পরে যেই ক্রাঞ্চ আমাদের সামনে নানা মাত্রায় আবর্তিত হচ্ছে, তার একটা মাত্রা হলো এই ইনভেস্টর বা ট্রেডারদের সুইসাইড। কেউ কেউ আবার নকল সুইসাইডও করছেন! এবং করে ধরাও পড়েছেন। এখন পর্যন্ত কয়েকটা কেস দেখা যাক -
সেপ্টেম্বর ২০০৮
অলিভান্ট হেজ় ফান্ডের উচ্চ পদস্থ পরিচালক রস স্টিফেনসন লন্ডনের বাইরে এক রেল স্টেশনে গিয়ে চলন্ত ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেপ্টেম্বর মাসে লীম্যান ব্রাদার্সের পতনের ফলে অলিভান্ট ব্যবসায় বিশাল ধাক্কা খায়। যার ফলে স্টিফেনসন এই চরম পরিণতি বেছে নেন।
অক্টোবর ২০০৮
লস এঞ্জেলেস নিবাসী ব্যবসায়ী কার্তিক রাজারাম লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রচুর টাকা খাটিয়েছিলেন। প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার। অনেক জায়গার মতো লন্ডনেও স্টকের দাম পড়েছে ক্ষিপ্র গতিতে গত এক বছর ধরে। সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মিস্টার কার্তিক খালি নিজের জীবন কেড়ে নেননি। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে কেনা একটা বন্দুক হাতে নিয়ে তিনি একে একে তার পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেন। তার শাশুড়ি ইন্দ্রা। তার বড় ছেলে কৃষ্ণ। আর তার স্ত্রী সুবাশ্রী। আরেক রুমে পাওয়া যায় দুই ছোট ছেলে গণেশ আর অর্জুনের লাশ। আর তাদের পাশে তাদের খুনী বাবা কার্তিকের নিষ্প্রাণ দেহ। হাতে ধরা সেই বন্দুক।
ডিসেম্বর ২০০৮
ঠিক ক্রিসমাসের আগে দিয়ে HSBC ব্যাংকের কর্মকর্তা ক্রিস্টেন শ্নোর-কে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় লন্ডনের অভিজাত হোটেল কার্লটন টাওয়ারে, তার হোটেল রুমে। হের শ্নোর তার বেল্ট গলায় পেঁচিয়ে ঝুলে পরেন। ফলাফল - মৃত্যু। ধারনা করা হয় যে শ্নোর ২০০৭ সালে লন্ডনে স্থানান্তর হবার পরে বেহিসাবী আর উচ্ছৃংখল জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন। হাই-ক্লাস পতিতা আর কোকেইন সেবন ছিল তার এক প্রকার নেশা।
ডিসেম্বর ২০০৮
রেনে-থিয়েরি ম্যাগোঁ দ্য লা ভিল্হুশে ছিলেন ফরাসী ফাইনানশিয়ার। দুঃখজনকভাবে তিনি বিশ্বচোর বার্নার্ড ম্যাডোফ-এর জোচ্চুরির শিকার হন। নিজের টাকা তো তিনি ঢেলেই ছিলেন, তার কথায় ম্যাডোফ-এর কাছে টাকা বিনিয়োগ করেন মোনাকো ও প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার রাজপরিবারের সদস্যবৃন্দ। এবং ইউরোপের আরো কিছু অতিকায় ধণী লোক। নিজের দায়বদ্ধতার গ্লানি সহ্য করতে না পেরে ভিল্হুশে এক গাদা স্লিপিং পিল খান এবং তার বাঁ হাতের কব্জি কেটে ফেলেন।
জানুয়ারী ২০০৯
গত সপ্তাহে আত্মহত্যা করেন পৃথিবীর শীর্ষ ১০০ বড়লোকদের অন্যতম, জার্মান ব্যবসায়ী এডোলফ মার্কেল। ৭৪ বছরের এই বৃদ্ধ ছিলেন ড্রাগ কম্পানী আর সিমেন্ট কম্পানী সহ আরো নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। রস স্টিফেনসনের মত মার্কেল-ও তার শহরের অদূরে এক ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দেন। ধারনা করা হচ্ছে যে, তার অধীনস্থ একটি কম্পানী সময়মত ব্যাংক ঋণের পেমেন্ট করতে পারছিলো না। অথচ মৃত্যুকালে তার নেট সম্পত্তির মূল্য ছিল ৯.২ বিলিয়ন ডলার অথবা প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা।
জানুয়ারী ২০০৯
এতোগুলো জেনুইন মৃত্যুর ভীড়ে একটা নকল আত্মহত্যার কথাও বলা উচিৎ। মার্কিন ব্যবসায়ী মার্কাস শ্রেংকার লক্ষ লক্ষ ডলার জোচ্চুরির দায়ে অভিযুক্ত হন। প্রায় নিশ্চিতভাবেই দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলের ভাত তিনি খেতে যাচ্ছিলেন। মাথায় এলো আইডিয়া। তার ব্যক্তিগত সিঙ্গেল ইঞ্জিন প্লেনে চড়ে উড়াল দিলেন। আলাবামার এয়ারস্পেসে এসে একটা ভূয়া রেডিও কল দিলেন - SOS। দুটো মিলিটারি বিমান সাথে সাথে উড়ে গেল তাকে বাঁচাতে। প্লেনের কাছে এসে তারা দেখেন যে প্লেনের দরজা খোলা, প্লেন নিজে নিজেই অটোপাইলটে উড়ছে, আর পাইলটের কোন চিহ্ন নেই। কিছুক্ষণ পরে ফ্লোরিডায় প্লেনটি ক্র্যাশ করে। ওদিকে শ্রেংকার-কে পরে খুঁজে পাওয়া যায় অন্য আরেক ক্যাম্পিং সাইটে। হলো গ্রেফতার - এরপর আসবে বিচার।
আর শ্রেংকারের বৌ মিশেল দিয়েছে তালাকের পরোয়ানা। মিশেলের মতে শ্রেংকার তার বৈবাহিক জীবনেও পর-নারীর সাথে চীটিং করছিলো।
*
আত্মহত্যার এই ট্রেন্ড নিয়ে নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন আর ইন্ডেপেন্ডেন্ট পত্রিকার দুটো লেখা।
মন্তব্য
অর্থ বা ডলার সর্বস্ব জীবন হলে এর চেয়ে ভালো কোনো পরিণতি এদের কাছে আশা করাটাই তো ঠিক নয়..! বিশাল অংকের ধাক্কা খাওয়ার পরও এদের যা থেকে যায় তাতেই আমাদের সাত জনমেরও স্বপ্ন হয়তো। তবু এরকম আত্মহত্যার ট্রেন্ড দেখলে মনে হয় যে এদের এমনটাই হওয়া উচিৎ..।
এরা কি আসলে আদৌ মানুষের জীবন কাটিয়েছিল..?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কড়চা ভাল হইছে। তবে সবই খারাপ খবর।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
কমই বলছিলাম যা দেখতেছি। Portfolio.com এই আত্মহত্যার ট্রেন্ডের উপর কড়া নজর রাখতেছে। এখন পর্যন্ত মোট সুইসাইডের সংখ্যা ১৩-তে গিয়ে দাঁড়াইছে, এদের হিসাবে। আরো কত হবে কে জানে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
শ্রেঙ্কারের খবরটা আজকে সকালে অফিসের পথে BBC Radio তে শুনে নিজের অজান্তেই হো হো করে হেসে ফেললাম। আধাপাকা প্ল্যানিং এর নতুন হাইট।
এরা তো রুই কাতলা। বড় বড় প্রেসারে পড়ে আত্মহত্যা করছে। কয়দিন পর সাধারন মানুষ আত্মহত্যা শুরু করবে। অর্থনীতি সিম্পলী ফ্রি ফল করছে। কোথায় থামবে কোন ঠিক ঠিকানা নাই।
গতমাসে আমার স্ত্রীর কোম্পানীতে ৪% ছাটাই হল। প্রায় ৬০০ লোককে ছাটাই করেছিল। আমার স্ত্রীর কিছু হয়নি। ভেবেছিলাম ফাঁড়া কেটেছে। গতকাল ঘোষনা দিয়েছে মার্চের মধ্যে নুন্যতম আরো ৮০০র মত লোক ছাটাই করবে।
আমার অফিসে এখনও কিছু বলছে না। তবে মাঝে মাঝে ইমেইল আসছে উপরের লেভেলে পরিবর্তনের কথা ঘোষনা দিয়ে। পরিবর্তনের কারন - দুর্বল অর্থনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা।
সুতরাং কিছুদিন পর দেখবেন সাধারন জনগন খেতে না পেয়ে আত্মহত্যা শুরু করেছে। কেয়ামত মনে হয় বেশী দূরে নাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
পৃথিবী জুড়েই অবস্থা বেশি ভালো না। সবদিকেই বাজে খবর।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
অর্থনৈতিক দুরবস্থাই সবগুলো মৃত্যুর প্রধান কারন নাও হতে পারে।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
ক্রিস্টেন শ্নোর মত বেহিসেবী লোকজনের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেন। ক্রেডিট ক্রাঞ্চ হোক বা না হোক এটা হরহামেশা দেখা যায়। কিন্তু আমি একেবারেই বুঝতে পারলাম না এডোলফ মার্কেল-এর ব্যাপারটা। তার আত্মহত্যা করার দরকার পরল কেন একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হমম.. কেয়ামত আসলেই আর বেশি দুরে নেই। লাখে লাখে লোক চাকরি হারালে ক'দিন পড়ে সকার খুঁজতে হারিকেন নিয়ে নামতে হবে।
আত্মহত্যা নিয়েই গত গল্পটি আমার! আর আপনাও আত্মহত্যা নিয়েই লিখলেন! জার্মান মার্কেল এবারের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। তারপরও আত্মহত্যা করাটা একারণে অস্বাভাবিক। তবে কোথায় কি কারণ লুকিয়ে আছে, আমরা কি জানি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আপনার লেখা পড়ে আমাদের দেশী চাপিলা আর পুঁটি মাছ গুলা যদি ঐ কাম করতে যায় খুশী হই
...........................
Every Picture Tells a Story
দিনকাল ভালো না। আজকে রেডিওতে শুনলাম মাইক্রোসফটও নাকি ছাঁটাই করবে। সব সেক্টরেরই অবস্থা কেরোসিন!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
দিনকাল ভালো না। আজকে রেডিওতে শুনলাম মাইক্রোসফটও নাকি ছাঁটাই করবে। সব সেক্টরেরই অবস্থা কেরোসিন!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
কালকে দেখলাম কানাডিয়ান টেলিকম জায়ান্ট নরটেল ব্যাংক্রাপ্সি প্রোটেকশনের এপ্লাই করছে
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
জীবনের চেয়ে এদের কাছে দেখি টাকাই বড়ো ছিল!
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
দুইটা ভেজাইল্যা কুশ্চেন, আমার মাথায় জট খুলছে না তাই ভাবলাম এক্সপার্ট এডভাইস নেই
১। এখনকার লেজেগোবরে অবস্থা দেখলে মনে হয় মূলত ০১ এর ঘটনার পরে সরকারের বাঁধ ভাঙ্গা সহজ ঋণ দেয়া আর তাই নিয়ে ছিনিমিনি খেলাকেই দায়ী করতে হয়। কিন্তু এক দিক থেকে আজকের হিসেবে সেটাকে 'স্টিমুলাস প্যাকেজ' বলেই মনে হচ্ছে। এক দশক পরে আমার মনে হচ্ছে সারা বিশ্ব একই বোকামী আবার করতে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, সহজ ঋণের সুযোগ নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান ক্যান্সারের মত ফুলে ফেঁপে উঠেছিল (যাদের কাছে আমাদেরও রুটিরুজি আটকা) সেগুলোকে ডায়েটিং করে শুকিয়ে যেতে দিলে আর জড়হীনগুলোকে মরতে দিলে কিছু সময় পরে ইকনমি আপনিই রিকভার করবে।
২। আরো ভ্যাজাল হল, আজকের ঝামেলার জন্য মূলত দায়ী করা হয় আমেরিকান হাউজিং ক্রাইসিস আর আমেরিকান ইকনমিকে, কিন্তু গত ছমাসে যা দেখলাম তাতে ডলারই একমাত্র নিজের যায়গায় আছে, পাউন্ড, কানাডা-অস্ট্রেলিয়ান ডলার, রূপী, ইউয়ান সবই ধ্বসে গেছে, ডলার নিজের যায়গায় আছে। উল্টোটাই কি হওয়া উচিৎ ছিলনা?
ইট্টু বুঝাইয়া বললে বড় খুশী হইতাম। আর আলাদা পোস্ট দিলে তো কথাই নাই
ফরিদ
নতুন মন্তব্য করুন