ব্লগের লেখা চুরি - আমাদের কী করণীয়

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: শুক্র, ২০/০২/২০০৯ - ৬:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুজিব মেহদীর পরপরই ইমরুল কায়েসের লেখা চুরির ঘটনা - দুঃখজনক এবং আশংকাজনক। নাম প্রকাশে ইমরুলের সংকোচটা বুঝি, কিন্তু সমর্থন করতে পারছিনা। ইশতির প্রথম মন্তব্য থেকেও আমার অবস্থানটা এখানে ভিন্ন। বুঝিয়ে বলি।

ব্লগে প্রচুর ভালো লেখা আসছে। এই ব্লগ সহ আরো পাঁচটা ব্লগে। তবে সচল একটু আলাদা, কারন লেখকের মান বিচার না করে আজকাল সচলত্ব পাওয়াই মুশকিল হয়ে গেছে। অনেক সময় দেখবেন, মেইন পেজের বাম পাশে এক লাইনে ৫-৬টা লেখা বসে আছে, সব পাঁচ-তারা লেখা। এটা এখন মোটামুটি নিত্য ঘটনা। সচলের গড় মানের একটা বেশ ভালো সূচক।

আমার ধারণা সচলে এই রকম অনেক লেখা নিয়মিতই আসছে, যেগুলোর প্রতি লোভী বা নীতিহীন 'লেখক'-দের নজর পড়েছে, যারা নেক্সট বইমেলায় যেই ৩-৪টা বই ছাড়বেন তার মাল-মশলা খুঁজছেন। সচলে যদি তারা হাত দেন, তাহলে কে জানবে? বা জানার চান্স কতোটুকু? মুজিব ভাই জেনেছিলেন দৈবক্রমে। ইমরুল কায়েস জেনেছেন একই ভাবে, মেলায় বইয়ের পাতা উল্টাতে গিয়ে। এই দুজনের একজনও যদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পাতা না উল্টাতেন, তাহলে কে জানতো? কোন সুযোগ কি ছিল? আমার তো মনে হয় না। চিরকাল এই চুরির ঘটনা অজানা থেকে যেতো।

এই বছরের মেলায় যদি এমন বই থেকে থাকে, যেখানে হিমু বা জেবতিক বা ইশতির লেখা কেউ চুরি করে বসিয়ে দিয়েছে, কয়জন র‌্যান্ডম পাঠক সেটা জানবে বা বুঝবে? আমার ধারণা একজনও না। এখনো ইন্টারনেটের বিস্তার অত গভীরে যায়নি, আর বাংলা ব্লগ জিনিসটার সাথে এখনো ম্যাক্সিমাম দেশী পাঠক মোটামুটি অপরিচিত। গতকাল সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠানে গেলাম, সেখানে কিছু দেশীয় সাংবাদিকের সাথে দেখা হলো। যার সাথে গিয়েছিলাম, সে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বললো - ও বাংলা ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করে। সেখানে উপস্থিত যারা ছিলেন, তারা বাংলা + ব্লগ, এই শব্দ দুটো পাশাপাশি আগে তেমন শোনেননি, সেটা বুঝতে পারলাম। কেউ কিঞ্চিত আগ্রহ দেখালেন, কেউ অবাক হলেন, কারো মুখে হালকা ব্যঙ্গাত্মক হাসি। কেউ আবার একেবারেই নির্লিপ্ত।

মানে সাংবাদিক গোষ্ঠী, যাদের কাজই লেখালেখি নিয়ে, তারাই অনেকে বাংলা ব্লগ সম্পর্কে জানেন না, বা কেয়ার করেন না। ফারুক ওয়াসিফ বা বিপ্লব রহমানের মত ব্লগার/সাংবাদিক এখনো ক্ষুদ্র মাইনোরিটি। এরাই যদি না জানেন, তাহলে আমজনতা কয়জন আর ব্লগ চিনবে বা জানবে? ধীরে ধীরে হয়তো পরিচিতি বাড়বে, একদিন রেজওয়ান বা রাগিবের মতো ব্লগার হয়তো মূলধারার লেখকের মতই পরিচিত হবেন সবার কাছে। কিন্তু সেই দিল্লী এখনো বহু বহু দূর।

এই ফাঁকে অনেক চুরির ঘটনা ঘটবে। ব্লগ থেকে চুরি করা সহজ আর ধরা কঠিন। তার মানে কি, আমাদের সবাইকে এই নিয়ে মনের গভীরে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হবে? রাগিব জানালেন যে তিনি ইতিমধ্যে তার লেখাগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন। এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে, যে একজন ভালো লেখক চুরির ভয়ে পাবলিক ডোমেইন থেকে তার লেখাগুলো নিয়ে যাচ্ছেন? এতে রাগিব ভাইয়ের কোন ক্ষতি নেই, সবচেয়ে বেশী ক্ষতি আমাদের মত পাবলিকেরই।

চোর ঠেকাতে লেখা সরাতে হলে সেটা দুঃখজনক। আবার অন্যের বইয়ের পাতায় নিজের লেখা অজান্তে চলে আসবে, সেই প্রেশারে নিজেরই বই ছাপাতে হবে আগে থেকে - এটাও তো গ্রহণযোগ্য নয়। মুজিব ভাইয়ের ক্ষেত্রে সেটা কাজে দেয়নি।

তাহলে প্রতিকার কি? আমার ধারণা এরকম ঘটনা কখনোই আমরা ১০০% বন্ধ করে দিতে পারবো না। চুরি ঘটবেই। কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা চুপচাপ বসে থাকবো।

প্রতিটা লেখা-চুরির ঘটনাকে বিরাট করে ফলাও করে প্রচার করা এখন জরুরী। একবার দুইবার তিনবার চারবার যখন এরকম ঘটনা মানুষের কাছে উন্মোচন করা হবে, তখন পঞ্চমবার চুরি করার আগে চোর দুইবার চিন্তা করবে। হয়তো পঞ্চমবারেও চোরের মনে ভয় ঢুকবে না। হয়তো ৫০বারের বার গিয়ে সেই ভয়টা সে পাবে, যে ব্লগ থেকে মারলে আমার কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাওয়ার চান্স আছে। সেই ভয়টা যতদিন আমরা চোরের মনে ঢুকাতে না পারছি, ততদিন আমাদেরই উলটা ভীত হয়ে থাকতে হবে।

এটাই আসল প্রতিষেধক। ডিটারেন্স থিওরি। চুরি করার পরিণতি যে কতো খারাপ হতে পারে, সেটা হাড়ে হাড়ে বোঝানোর দায়িত্ব সবার আগে আমাদের উপরেই বর্তায়। কারন আমরাই বেশী ভিক্টিম হবো। ব্লগ আর ব্লগার এখন চুরির জন্যে একটা অতি সহজ টার্গেট হয়ে আছে। আমরা যদি এখন থেকেই অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান না নেই, তাহলে এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে আরো অনেক ঘটবে। চোর-বৃন্দ আমাদের বাঁশ মেরেই যাবে। সেটা কেউ জানবে, কেউ জানবে না। ইমরুলের মতো অনেক লেখক কষ্ট পাবেন, ব্যথিত হবেন।

মুজিব মেহদী যে কি অসাধারণ জরুরী আর মূল্যবান কাজ করেছেন তার প্রতিবাদ মুভমেন্টের মাধ্যমে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি এই মেসেজটা জায়গা মতো পাঠিয়ে দিয়েছেন যে লেখকের স্বত্ত্ব জিনিসটা এখনো পুরোপুরি মগের মুল্লুক হয়ে যায়নি।

এই জন্যেই আমি ইমরুলকে আবারো অনুরোধ করবো, আপনি এই লোকের পরিচয় জানান। আপনি নিজে থেকে যদি শোরগোল না করতে চান, তাহলে আরো অন্যান্য অনেকে আছে যারা প্রেস, ব্লগ, ফেসবুকে এই নিয়ে নিজেরাই শোরগোল তুলতে পারবেন। নিজের প্রতি প্লীজ সুবিচার করুন, আর ভবিষ্যতের ব্লগার লেখকদের অবস্থানটা আরেকটু শক্ত করতে সাহায্য করুন। অশেষ ধন্যবাদ।


মন্তব্য

রাফি এর ছবি

সহমত।
শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয় অন্তর্জালেও সেই কুলেখক এবং চোর এর নাম প্রকাশ কর ইমরুল।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অমিত আহমেদ এর ছবি

লেখার সাথে একদম একমত।
চোরদের মনে ভয় ঢোকাতেই শোরগোল তোলা দর্কার। আমাদের সবার জন্যই।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

রেজওয়ান এর ছবি

অত্যন্ত সময়োপযোগী লেখা।

সাংবাদিকদের না জানার ব্যাপারটি অনেকটুকুই হয়ত ইচ্ছাকৃত। আমি গত বছর দশেক ধরেই দেখে আসছি তারা বিভিন্ন লেখা ছাপায় পত্রিকায় যার নীচে লেখা থাকে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। কিন্তু সেই লিন্ক কখনই দেয়া হয়না, আমরা কখনও জানতে পারি না দেশ বিদেশের কার লেখাটি চুরি হয়ে গেল। যখন ফটোব্লগার নাজিনা মহসিন তার ছবি মানবজমিনে ছাপানোর জন্যে সম্পাদককে ফোন করে জানতে পারে তার ছবিটি নাকি মানবজমিনের কম্পিউটার থেকে পাওয়া গেছে। এভাবেই হয়ত আমাদের দেশের কিছু সাংবাদিক অভ্যস্ত। ব্লগকে যদি পাত্তা দিতে হয় তাহলে তাদের অনেকেরই জারিজুরী ফাঁস হয়ে যাবে।

মুজিব মেহেদীকে অনেক ধন্যবাদ সাহসের সাথে এগিয়ে আসার জন্যে। তাকে ঠেকানোর জন্যে যে গ্রুপটি লেগেছে (তারাও সাংবাদিক!!) তাদের কথা হচ্ছে চুরি চামারী নিয়ে এত শোরগোল কেন কারন এসব তো হয়েই থাকে। অন্তর্নিহিত কারনটি হয়ত সবারই অনুমেয়।

আমার মনে হয় আমাদের দেশে কপিরাইট নিয়ে অ্যাওয়ার্নেস ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। ক্রিয়েটিভ কমন্সের মত ব্যবস্থা চালু করতে হবে প্রচারণা সহ। যারা এতদিন চুরি করে অভ্যস্ত ছিল তাদের জানাতে হবে দিন শেষ এখন, পাবলিক অনেক সচেতন।

এ নিয়ে যতটুকু না আইনের সাহায্য পাওয়া যাবে তার চেয়ে প্রচারেই কাজ হবে। কারন এইসব চোরের অনেকেই তো সমাজের গন্যমান্য লেখক বুদ্ধিজীবি হবার আশাই এমন করছেন। প্রতিবাদ ও প্রচারে লাভের পরিমাণই বেশী - লোকজন ব্লগের কথা জানবে, নতুন লেখকদের আবিস্কার করবে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

হিমু এর ছবি

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের ব্যাপারে রেজওয়ান ভাইয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শসূচক লেখার অপেক্ষায় আছি।

পাশাপাশি আইনী প্রতিকার সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছি আমরা। ক্রিমিন্যাল কোর্ট না সিভিল কোর্ট, কোন কোর্টে নিয়ে চোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যায়, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আইন-কানুনের একটা কাঠামো আমাদের সাপোর্ট করবে আদৌ সেই ভরসা করছি না। কর্তৃপক্ষের প্রায়োরিটির তালিকায় ব্লগারদের লেখা চুরির ঘটনা কোথাও স্থান পাবে না। তাই আমাদের জন্যে name and shame অস্ত্রটা ছাড়া উপযুক্ত বেশী অস্ত্র নেই। কিন্তু সেটাই বা কম কিসে? খুব তাড়াতাড়ি যে কোন বিষয় নিয়ে আজকাল শোরগোল তোলা যায়। সেই ব্যাটা আর জীবনে চুরির সাহস পাবে না। আর তার নামও চিরতরে ভূলুন্ঠিত হবে। তুই রাজাকারের মতো "তুই লেখা-চোর" লেবেলটা আমরা ওর কপালে সুপার-গ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিতে চাই।

রাগিবের কথাটাও তো সত্যি। বিদেশে আছি বলে বা ব্লগে লেখি বলে তো নিজের লেখা চুরির ওপেন সার্টিফিকেট দিয়ে দেইনি!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

থার্ড আই এর ছবি

গতকাল সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠানে গেলাম, সেখানে কিছু দেশীয় সাংবাদিকের সাথে দেখা হলো। যার সাথে গিয়েছিলাম, সে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বললো - ও বাংলা ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করে। সেখানে উপস্থিত যারা ছিলেন, তারা বাংলা + ব্লগ, এই শব্দ দুটো পাশাপাশি আগে তেমন শোনেননি, সেটা বুঝতে পারলাম।

সুবিনয়ের দৃষ্টিতে দেশীয় সাংবাদিক কারা সেটি পরিস্কার নয়। ওনি যদি লন্ডন থেকে প্রকাশিত সংবাদ পত্রে কর্মরতদের দেশীয় সাংবাদিক বলে থাকেন তবে হতাশ হবার কিছু নেই। এখানে সকলেই শখের সাংবাদিকতা করেন। ঐটা প্রেশা না। বিলেতে বাংলা কমিউনিটিতে সাংবাদিকতা করে জীবন নির্বাহ করেন এমন লোকের সংখ্যা হাতে গুনা কয়েকজন, সুবিনয়ের হয়তো তাদের সাথে দেথা হয়নি। আর যারা মূল ধারার গন মাধ্যম গুলোতে কাজ করেন, তারা বাংলা মিডিয়ার আশে পাশে আসেন না।

আর সেই বিচারে বিলেত থেকে প্রকাশিত সংবাদ পত্রগুলো অনেকটা আমাদের দেশের মফস্লল শহর থেকে প্রকাশিত সংবাদ পত্রের মতই। তাই এদের কাছে সুবিনয় মুস্তফি অপরিচিত নাম হওয়া ,কিংবা বাংলা ব্লগ সর্ম্পবে অজ্ঞতায় অবাক হবার কিছু নাই।সেই সূত্র ধরে সকল সাংবাদিকের ব্লগ বিষয়ে অজ্ঞতার সনদ না দেয়াই ভালো। আর ব্ণগ যেহেতু প্রযুক্তি নির্ভর একটি মাধ্যম তাই প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব যার মধ্যেই রয়েছে তিনিই ব্লগ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবেন, এটিই স্বভাবিক।

আর লেখা চুরি সম্পর্কে সুবিনয়ের প্রস্তাব আমি সমর্থন করি।

-------------------------------

স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

লোকাল পেপার না, বিবিসি বাংলা বিভাগ আর ঢাকার ডেইলি স্টারের ছিল তারা।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

জিজ্ঞাসু এর ছবি

সুবিনয় আপনার লেখাই হয়ত কেউ চুরি করে অর্থনীতির সহজপাঠ বই বের করে ফেলবে আপনি জানতেও পারবেন না। আসলেই চুরি নিয়ে শোরগোল হওয়া দরকার। তবে শুধু নেটে শোরগোল করলেই চলবে না। শোরগোলটা চোরদের পরিচিত মহলে যাতে পৌঁছে তারও ব্যবস্থা থাকতে হবে। পত্রিকার পাতায় এ খবরগুলো আসা উচিত। বাঙলাদেশে বেশিরভাগ প্রিন্টমিডিয়ার লোকজন লেখা চুরি করে বা একটু অদলবদল করে হরহামেশা চালিয়ে দেয় নিজের নামে (কৃতজ্ঞতা স্বীকার বা তথ্যসূত্র না দিয়েই)। এর প্রমাণ চোখের সামনে আমি দেখেছি ভুরিভুরি। দেশে যত পত্রিকা ছাপা হয়, তার মধ্যে নাম না জানা হাজারো পত্রিকা- দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ম্যাগাজিন আছে যেগুলো শুধু চুরির উপর নির্ভর করে প্রকাশিত হয়। জাতীয় দৈনিকেও পাঁচ থেকে দশ ভাগ লেখা ইন্টারনেট থেকে, এখান থেকে ওখান থেকে মেরে দেয়া ম্যাটার (যেসব সূত্রের তারা মূলত সাবস্ক্রাইবার নন)। কেউ জানে না কার লেখা কে চুরি করে যাচ্ছে। দেশের লেখক সাংবাদিকরা সস্তা হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই কারো লেখা চুরি করার আগে তাদের বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ জাগে না। কারণ যারা চুরি করে তারা সারাজীবনই চোর; তারা কোনদিন বুঝবেনা একটা লেখা তৈরি করতে লেখকের কতটুকু পরিশ্রম করতে হয়।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

জিজ্ঞাসু, আপনি একদম শুরুতে যেই কথাটা বলেছেন, সেটা আমিও ভেবেছি। সচল আর "না বলা কথা" ব্লগ - এই দুই ব্লগ মিলিয়ে অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট/প্রবন্ধের সংখ্যা বোধ হয় ৪০-এর মত হবে। আজকাল যা লেখি, তার বেশীর ভাগ এই বিষয় নিয়েই। একটা সুবিধা হলো যে হেডলাইন এত দ্রুত বদল হয়, যে কিছুদিন আগের লেখাও দেখা যাবে যে বাসি হয়ে গেছে, তাই রিসাইকেল নাও করা যেতে পারে। কিন্তু একটু অদল বদল করে দিলে বেশীর ভাগ লেখাই অন্যত্র চালিয়ে দেয়া যাবে।

আসলেই কিছু করার থাকবে না তাহলে। নাকি একটা সংকলন বই বানিয়ে ছাপিয়ে দেব?! Pre-emptive strike!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

Pre-emptive strikeটাই পচন্দ হইছে চলুক
ভালো ভালো প্রবন্ধগুলো পত্রিকায়/সাময়িকীগুলোতে ছাপিয়ে রাখাও একটা উপায় হতে পারে
অথবা প্রকাশনায় যদি এমন একটা ঐক্যমত তৈরী করা যায় যে একবার তৈরী হওয়া ই-বুকের একাংশ, বা পরিবর্ধিত বা পরিবর্তিত রূপকে ঐ ইবুকেরই আইএসবইএনের আওতায় কাগজে ছাপা বই হিসেবে পরে বের করলেও অসুবিধা নেই, তাহলে কিছুদিন পরপর নিজের লেখাগুলোর ব্যাকআপকে ইবুক করে রাখাটা একটা উপায় হতে পারে!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হিমু এর ছবি

লেখার মালিকানা অটুট রাখার জন্য যদি সেই শেষ পর্যন্ত ছাপার দ্বারস্থই হতে হয়, তাহলে ব্লগের স্বীকৃতি মিললো কই?

যেই ুৎমারানি ানকির পোলা চুরি করে, তারে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেটা বই থেকেই হোক আর ব্লগ থেকেই হোক। কইত্থিকা চুরি করলো সেইটা বড় না, চুরি করলো কি না সেইটা বড়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি
আলমগীর এর ছবি

কিচ্ছু করার নেই।
২০০৪ এ একটা বই ছিল আমার, হাবাগোবা টেস্কট বই। লিখতে সময় লেগেছিল মাসছয়েক। বইয়ের দাম ছিল ১০০ টাকা, সিলেটের এক সভ্রান্ত লাইব্রেরি সেটা ফটোকপি করে বাধাই করে ৮০টাকায় বিক্রি করত। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা সেটা নিয়ে আমার কাছে আসত। কী মজা দেখুন।

ফটোকপি বন্ধ করা সম্ভব হয় নাই। কারণ, প্রথমত, বিদেশী বই সবাই ফটোকপি করে, তাই ধরেই নিয়েছি সেটা সঠিক কাজ, দ্বিতীয়ত, কোন কুখ্যাত মাস্তানের সাথে খাতির ছিলো না।

আরো কাহিনী আছে, সব বলা সম্ভব না। আপনাদের অনেকেরই লেখা চুরি+বেহাত হয়ে গেছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

হিমু এর ছবি

মুস্তফীদার পোস্টের শিরোনাম বোধহয় " ... কী করবো" হবে। এখন যেটা আছে সেটা হয়ে গেছে এমন, শুড আই ব্লগলিফট?

এই চামে ব্লগলিফটিং [BLOGLIFTING] শব্দটা কয়েন করলাম। কারো ব্লগ থেকে বিনানুমতিতে লেখা চুরি করে নিজের নামে ছাপানোকে বলা হোক ব্লগলিফটিং।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করিলাম!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

এখনও হয় নাই। কি নয়, কী হবে বোধহয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হাঁচা নি?! সারাজীবন কি - থুক্কু, কী - শিখিয়া আসিলাম!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

এনকিদু এর ছবি

ব্লগলিফটিং এর বাংলা : ব্লগমারা


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

'ব্লগমারা' তো ঠিক খাপে খাপে মিললো না। দেহের বিভিন্ন অংশের নামের শেষে "মারা" যুক্ত করলেই ফিলিপ্স বাত্তির মত ফকফকা হয়ে যাবে। খাইছে

'ব্লগতস্কর' আর 'ব্লগলস্কর' ব্যবহার করা যায় ব্লগীয় চোর-পুলিশ বোঝাতে?

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

এই চুরদের কারণে আমি নিজে একাধিকবার ভুক্তভোগী - আমার প্রকাশিত অন্তত দু'টি বই থেকে টুকলিফাই করে কিছু চুর নিজেদের নামে অথবা বেনামে লেখা ছাপিয়েছে নানান পত্রিকায়। প্রবাসে বসেই সেটা জেনেছি। আমার অজান্তে যে আরও কিছু ঘটেনি, সে-কথাই বা কে বলবে! কপিরাইটের কথা উল্লেখ করা বই থেকেই যখন এতো অনায়াসে লেখা-ডাকাতি হতে পারে, তখন ব্লগের লেখা কতোটা অসংরক্ষিত, ভেবে অসহায় ও বিচলিত বোধ করি।

চুর আছে প্রকাশকদের ভেতরেও। এক প্রকাশক আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই আমার এক বই পুনর্মুদ্রণ করেছেন অন্তত একবার।

একটা কিছু করা দরকার, বুঝতে পারি। কিন্তু কী, মাথায় আসে না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পোস্টের সাথে সহমত। যতটা পারা যায় প্রতিরোধ করতে হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

রণদীপম বসু এর ছবি

চুরির ঘটনা ধরা পড়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট চোরের ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপটাই হওয়া উচিৎ সবাইকে বিস্তারিত জানানো, যা ইমরুল কায়েস করেনি। নির্দ্বিধায় চোরের নাম-সাকিনসহ প্রচার করে দেয়াই তো উচিৎ ! কায়েস তা না করলেও আমি কিঞ্চিৎ করে ফেলেছি। কিভাবে ?

আজ পাঁচটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো। অনুষ্ঠানে অনেক ব্লগারই উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শুদ্ধস্বরের সামনে আড্ডা মারতে মারতে একসময় ধুম্রসেবীদের বায়বীয় ইচ্ছা জাগ্রত হলে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছি। বড় প্রেম যেমন সরাসরি প্রকাশের প্রয়োজন হয় না, ধুম্র-ইচ্ছাও তেমনি। অতএব প্রচণ্ড ভীড় ঠেলে একাডেমীর গেট পেরিয়ে ছুটছি ব্লগার বিপ্লব রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, ষষ্ঠপাণ্ডব, শেখ জলিল, আবু রেজা এবং সাথে আমি। পাণ্ডবদা'র চপ-পেয়াজো সাপ্লাইয়ের সাথে সাথে বিপ্লব ভাইর নিজ হাতে কফি বিতরণ এবং সাথে সিগারেট সাপ্লাইয়ে বিপ্লব ভাই'র সাথে মুস্তাফিজ ভাইর সহযোগিতাকে ধ্বংস করে বেরসিকের মতোই তাদেরকে ফেলে ফের মেলাতে ঢুকছি বৌ-বাচ্চার টানে। পথেই দেখা হলো এক ছোট ভাই'র সাথে, যে সম্ভবত সাম-ইনের ব্লগার। তার একটা ছড়া + কমিকের বই দেখালো আমাকে। বের করেছে গণিত ফাউণ্ডেশন না কি যেন, যেখানে ইমরুল কায়েস তার লেখা চুরির বিষয়টি আবিষ্কার করে। কায়েসের সাথে ফেসবুকে আলাপের সূত্রে যেহেতু নিমরাজী অবস্থায় আমাকে চোরের নামটি বলেছিল, তাই ছোট ভাইটিকে জিজ্ঞেস করলাম সে অমুককে চিনে কিনা। ইতিবাচক উত্তর পেতেই সরাসরি বললাম, সে তো লেখা চোর ! চমকে উঠলো সে। কায়েসের বিষয়টি বললাম এবং এও বললাম যে অন্তর্জালে এ নিয়ে মাতামাতি ও ঘৃণা প্রকাশের বিষয়টি। জানি না কায়েস কিভাবে নেবে বিষয়টি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে বিষয়টি সবাইকে জানানো দরকার। আজ কাযেসের সাথে দেখা হয়েছে মেলায়, যদিও এ নিয়ে একান্ত আলাপের সুযোগ ছিলো না। তবে আমাদের মনে হয় এটা মনস্থির করে নেয়া উচিৎ যে, চোরকে এতোটা সমঝে চলার কিছু নেই। চোর তো চোরই।

অন্তর্জালের বিভিন্ন ওয়েবে ব্লগে পত্রিকায় আমার যে বিভিন্ন কিসিমের হালকা ভারী শত শত লেখা ও পোস্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলোর সাথে আমার বহুদিনের শ্রম-ঘাম-অধ্যবসায় ও নির্ঘুম সময় জড়িয়ে আছে। রয়েছে প্রিয়জনের প্রাপ্য সময় কেড়ে নেয়ার মর্মযাতনাও। নিজস্ব সীমাবদ্ধতার কারণে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়নি হয়তো। তাই বলে আমার সত্তা ধারণ করা এসব সৃষ্টি হাইজাক হবে চুরি হয়ে যাবে সত্ব বদল হয়ে যাবে এটা তো কখনোই মেনে নেয়ার মতো নয় ! অতএব এগুলো নিরাপদ রাখতে উপায় একটা খুঁজতে তো হবেই। রাগিব ভাই ব্লগ থেকে লেখা সরিয়ে নিলেন হয়তো। কিন্তু যে সব ওয়েব পত্রিকায় সাইটে সরানোর সুযোগ নেই, সেখানে কী উপায় ? বিষয়টি নিয়ে সবাইকেই ভাবতে হবে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

পলাশ দত্ত এর ছবি

এই জন্যেই আমি ইমরুলকে আবারো অনুরোধ করবো, আপনি এই লোকের পরিচয় জানান। আপনি নিজে থেকে যদি শোরগোল না করতে চান, তাহলে আরো অন্যান্য অনেকে আছে যারা প্রেস, ব্লগ, ফেসবুকে এই নিয়ে নিজেরাই শোরগোল তুলতে পারবেন।

একমত।। একমত।।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ব্লগ থেকে লেখা সরিয়ে নেওয়াটা সমাধান মনে হচ্ছে না। রাগিব ভাই পূণর্বার ভেবে দেখতে পারেন।
কারন যে চোর সে যে কোনো মাধ্যম থেকেই চুরি করতে পারে। মুজিব ভাইয়ের আস্ত বই চুরির জন্য পলাশকে ব্লগে ঢুকতে হয়নি।
মেলায় ঘুরে ঘুরে অখ্যাত লেখকদের বই কিনে একেকজনের একেক গল্প মেরে দিয়ে পরের বছর আমি বই বের করে ফেলতে পারবো... কেউ ঠেকাতে পারবে না... বুঝবেও না।

অতএব, প্রচারেই প্রসার... এধরনের অপরাধের কথা জানামাত্র তা সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি


ব্লগ থেকে লেখা চুরিতে আরামও বেশি। কষ্ট করে কম্পোজ করতে হয় না, অনেকের বেলায় প্রুফও দেখতে হয় না!


মূলধারার মাধ্যমগুলোতে ব্লগের প্রতি অবহেলার কারণ হতে পারেঃ

১) স্থান সংকুলানে সমস্যা। ব্লগে জায়গা অসীম বিধায় অনেক বিস্তারিত লেখা যায়।

২) লেখকের পরিচিতি। শৌখিন লেখকের ভাল লেখার চেয়ে কুলীন লেখকের আগোছালো লেখা আগে স্থান পাবে পত্রিকায়।

৩) লেখার মান। ব্লগের লেখাগুলো মানুষ স্রেফ নিজের জন্যই লেখে মূলত। এতে যে গা-ছাড়া ভাব থাকে, যেই অপরিশোধিত আবেগ থাকে, তা মূলধারার প্রচলিত মাণদণ্ডের সাথে খাপ খায় না।

৪) পূর্ব-প্রকাশিত লেখা। লেখা পূর্ব-প্রকাশিত হলে তা পত্রিকায় থাক পায় না। যদিও বা পত্রিকার মাধ্যমে তা নতুন পাঠকের কাছে যায়, তবুও।

৫) ব্লগের সীমিত সামাজিক প্রভাব। কোন বাংলা ব্লগই 'হাফিংটন পোস্ট' বা 'ডেইলি কোস'এর মত বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে পারেনি। একই সাথে, সবিশেষ চেষ্টা সত্বেও কেউ অ্যান্ড্রু সালিভানের মত বিরাট ব্যক্তিত্ব হয়ে ব্যক্তিগত ব্লগের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাঠক টানতে পারেননি। সে-কারণেই "ব্লগোস্ফিয়ারে আজ যা যা হল" জাতীয় কিছু মূলধারায় নেই।


শুধু চুরি নয়, যেকোন রকম অন্যায় বা অনাচারের কথাই জনসমক্ষে প্রচার করা উচিত। শাশ্বত হিসেবেই মানি আমি এটাকে। তবে, কখনও কখনও চাইলেও কিছু বলা যায় না। খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে প্রতাড়িত হলে ক্রোধের চেয়ে বেদনাটাই বুকে বাজে বেশি।

উদাহরণ দেই। আমি যদি হিমু ভাইয়ের কোন লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেই, তাহলে তাতে হিমু ভাই রাগের চেয়ে দুঃখ পাবেন বেশি। "ইশতি এমন একটা কাজ করতে পারলো?" কথাটাই ঘুরে-ফিরে বেশি আসবে। অনেক দিনের সম্পর্কের কারণেই একটা সংকোচ কাজ করতে পারে। মশা মেরে হাত গন্ধ করার চেয়ে দুঃখবোধ বেশি প্রবল হবে।

পক্ষান্তরে, আমার কোন লেখা যদি হিমু ভাই নিজের নামে চালিয়ে দেন, তাহলে আমার ভেতরেও "হিমু ভাই এমন একটা কাজ করতে পারলেন?" কথাটা ঘুরবে বেশি। পাশাপাশি, আমি নগণ্য মানুষ, একেবারেই নবীন হওয়াটারও একটি বিপরীত প্রভাব থাকবে। যে-আমি নিজের লেখা প্রকাশে কুণ্ঠিত, সেই আমি অন্যের বইয়ে নিজের গল্প নিয়ে বলার ব্যাপারেও সংকুচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ইমরুলের ভেতর এই কুণ্ঠাটাই দেখেছিলাম আমি। এ-ব্যাপারে আমার মতামত হলঃ

সিনিয়ার কোন ব্লগার একটু বেচারার অভিভাবকের ভূমিকা পালন করুন। ইমরুলের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ভাবে জেনে নিন সেই প্রকাশক/লেখকের নাম। তারপর প্রমাণাদি সহ একটা বিস্তারিত পোস্ট ছাড়ুন। সেই পোস্টই সর্বত্র বিতরণ করা হোক।

এক দিকে এই চুরির প্রতিবাদ এখনই করা দরকার। অন্য দিকে ইমরুলের সংকোচ আর কুণ্ঠার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। চোরগুলো ত্যাড়া কোন কথা বললে হয়তো ও ভদ্রতা করে কিছু বলবেই না আর!


যারা লেখক, পরিচিত, কিংবা যাঁদের বই প্রকাশের সম্ভাবনা আছে, তাঁদের ব্যাপার তো বুঝলাম। আমার মত লোকজনের নিরাপত্তা কোথায়? এটুকু বলেন শুধু। আমার তো প্রি-এম্পটিভ কিছু করার ইচ্ছা বা সম্ভাবনা নেই। ই-বুক করে রাখলে হয়তো একটা আইএসবিএন নম্বর পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতেও তো রক্ষা নেই। দেখা যাবে এবারে আর প্রি-প্রেসের ঝামেলায়ও না গিয়ে ধামাধাম প্রিন্ট-বাইন্ড-সেল শুরু করে দিয়েছে!

ক্রিয়েটিভিটির সংরক্ষণের জন্য কিছু আসলেই দরকার। রেজওয়ান ভাই, আমিও অপেক্ষায় আছি আপনার লেখা এবং সমাধানের। বাংলা ব্লগের সর্বজনস্বীকৃত ডিন হিসেবে দিক-নির্দেশনা দিয়ে পোস্টান, কুইক!


ফটোগ্রাফারদের জন্য দুঃখ হয় সবচেয়ে বেশি। লীলেন ভাই যেমন লিখেছিলেন, জীবনানন্দের কবিতা ফটোকপি করে বিলিয়ে চোর হতে আপত্তি নেই, ফটোগ্রাফি নিয়ে আমারও একই কথা। এত সুন্দর সব ছবি তো সবার দেখা উচিত! সমস্যা হল, চাইলেও মূল চিত্রগ্রাহকের নাম পাওয়া যায় না আর। চোরাই ছবিতেই বাজার সয়লাব।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নজরূল ভাইকে শতভাগ সমর্থন দিই। লেখা যে-কোনো ভাবেই চুরি করা যায়, কিন্তু ভালো লেখা- বা জনপ্রিয় লেখা চুরি করার আগে 'চুর'-কে একশ বার ভাবতে হবে, কারণ ভালো-লেখাটা মুখে মুখেই অনেক প্রছার পেয়ে যায়।
আর, যে কোনো চোরের পরিচয় প্রচার করতে কেউ দ্বিধা করবেন না আশা করি।
(শব্দশিল্পী)

এনকিদু এর ছবি

আমিও ইমরুলকে অনুরোধ করি লেখাচোরের পরিচয় প্রকাশ করার । এধরনের একটা দুটা লেখা চুরি হলেই যদি আমরা বার বার হাউ কাউ করার সংস্কৃতি তৈরী করতে পারি তাহলেই "ব্লগের লেখা চুরির জন্য নহে" এই কথাটি প্রতিষ্ঠা পাবে । অন্যথায়, "অন্তর্জালের সবকিছুই বিনা পয়সায় বিনা অনুমতীতে লভ্য" এই ভ্রান্ত ধারনার মত "ব্লগের লেখা চুরির জন্য" এই ধারনাটিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রেনেট এর ছবি

নতুন করে কিছু বলার নেই। আপাতত চোরদের চুরি ফাস করে দেয়াটাই একমাত্র উপায় মনে হচ্ছে।
পোস্টে উত্তম জাঝা!
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

মুজিব মেহদী এর ছবি

খুব শক্তি দিল এই পোস্ট। এটা দেখে যে, আমরা সবাই চাচ্ছি চুরিটা ঠেকাতে। সেটা ভাবতে হচ্ছে আমাদের লেখক অস্তিত্বটা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই।

আমার মনে হয়, মেধাস্বত্ব চুরি পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না, নিরুৎসাহিত করা যাবে ; এবং নিরুৎসাহিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় অবশ্যই প্রচার। চোরা সে উপাচার্যই হোক আর মন্ত্রীই হোক, শত্রুই হোক আর বন্ধুই হোক, সে চোরা। তাকে খাতির করা যাবে না। বন্ধুস্থানীয় বলে ইমরুল কায়েস একটা চোরকে খাতির করে অন্য ব্লগারদের প্রকারান্তরে ক্ষতি করতেই উদ্যত হয়েছেন বলতে হবে। কারণ তাঁর ওই চোরা বন্ধু অন্য ব্লগারদের গল্প দিয়ে যে আগামী বছর বই করে ফেলবে না তার নিশ্চয়তা কী? আমার তো আশংকা হয়, আগামী বছর পুরো বইয়ের গল্পই সে ব্লগ থেকে নিয়ে নেবে এই সাহসে যে, কই, কেউ তো কিছু বলে না!

ইমরুল কায়েস, চোরকে প্রশ্রয় দেবেন না প্লিজ, ঘৃণা দেবেন (প্রবচন যতই বলুক যে 'পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়')।
..................................................................................
ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকালে আমার কেবলই মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইতোমধ্যেই যে সে কাজটি করেনি, সেটাও কিন্তু বলা যাচ্ছে না।


অজ্ঞাতবাস

ইমরুল কায়েস এর ছবি

যে লোক এই কাজটা করেছেন তার সাথে আমার কথা হয়েছে । তিনি আমাকে বলেলেন , "আপনি তো আমাদেরই লোক , সমস্যা কি , অন্য কারও লেখা তো নেই নাই সেজন্য" । আমি বললাম "পরিচিত লোক সেটা ঠিক আছে , আমার বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করেছেন সেটাও ঠিক আছে (ন হয় মেনেই নিলাম) কিন্তু গল্পের কন্টেন্টে কোথাও আমার নাম না থাকাটা বা লেখাটার কোন কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করাটা খুবই খারাপ একটা কাজ হয়েছে |" তিনি এজন্য ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং মেলায় এই বইটি আর ডিসপ্লেতে থাকবে না বলে জানিয়েছেন । এছাড়া বইটার সাথে আরেকটা পাতা সংযুক্ত করে তাতে আমার নাম দেবেন বলে তিনি অঙ্গীকার করেছেন । তিনি আমাকে শুধু আশ্বস্ত করেছেন যে , শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি এই কাজটা করেছেন , এজন্য তিনি খুব সরি এবং ভবিষ্যতে এরকম আর করবেন না ।

ভদ্রলোকের সাথে আমার একসময় দীর্ঘদিনের একটা আন্তরিকতা ছিল । আসলে অনেক সেনসেটিভ ব্যক্তিগত বিষয় থাকে যা সবসময় ব্লগে লেখা যায় না । আমি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে ভদ্রলোকের নাম প্রকাশ করছি না , এজন্য যারা এই বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন এবং কমেন্ট করে নাম জানতে চেয়েছেন তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী ।

আসলে আমি আমার আগের পোস্টেই বলেছিলাম আমার পোস্টের উদ্দেশ্য কারও বিচার চেয়ে নয় বরং এই বিষয়টার আলোচনা যে ,"লেখা চুরি গেলে কি করা যাবে?"।

ভদ্রলোক যেহেতু বলেছেন যে এই কাজটা নিতান্ত ব্যক্তিগত পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে এবং ভবিষ্যতে আর এরকম হবে না সেহেতু আমি তার সাথে কথা বলে সবাইকে অন্তত এতটুকু বলতে পারি যে , আর কারও লেখা উনি নেন নি , ভবিষ্যতে এরকমটা উনি আর করবেন না । তাই এই মুহূর্তে নানাবিধ কারনে আমি চাচ্ছি না তার পরিচয়টা প্রকাশ পাক বা কোন ধরণের শোরগোল হোক এটা নিয়ে ।

......................................................
পতিত হাওয়া

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আমি তার সাথে কথা বলে সবাইকে অন্তত এতটুকু বলতে পারি যে , আর কারও লেখা উনি নেন নি , ভবিষ্যতে এরকমটা উনি আর করবেন না।

সহ-ব্লগার হিসাবে আপনার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তবে উপরোক্ত বিশ্বাসটুকু যে আপনার অজান্তে ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে পারে, আশা করি আপনি সেটা নিজেও বুঝবেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

তানবীরা এর ছবি

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটার সাথে একমত।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তুলিরেখা এর ছবি

কী ভয়ানক কান্ড শুরু হয়েছে!!!
এইভাবে লেখাটেখা মেরে চলেছে, ক্রমাগত!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।