গোড়া থেকে শুরু করা যাক। দুনিয়ার এতো জায়গা থাকতে ভূটান নামের দেশটা থেকেই যে অর্থনীতির প্রথাগত চর্চায় একটা বড়-সড় ধাক্কা আসতে পারে, সেটা বোধ হয় কেউই আশা করেননি। সাধারণ মানুষ ভূটানকে চিনে কিভাবে? আমার কাছে 'ভূটান' মানে হলো মনের ক্যানভাসে দুটো ছবি -
১) হিমালয়ের দেশ। পর্বত-পরিবেষ্টিত, দুর্গম। অনাদিকাল ধরে প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা কঠিন পরিশ্রমী কিছু পাহাড়ী মানুষ।
২) হাফ-প্যান্ট পরিহিত এক রাজা যাকে প্রথম সার্ক সামিটের সময় বিটিভির পর্দায় দেখে স্কুল-ছাত্র আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম! এ কেমন রাজা? অফিশিয়াল অনুষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রীয় ভোজসভাতে হাফ-প্যান্ট পরে চলে এসেছে?! আমি স্কুলে যাই, আমি হাফ-প্যান্ট পরি, আমার না হলে মানায়। কিন্তু একটা দেশের রাজা? না জানি কেমন দেশ...
সেই রাজা - যিনি এখন আর রাজা নেই, তার ছেলের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন - তার নাম ছিল জিগমে সিংগে ওয়াংচুক। ভূটানের জাতীয় চরিত্র গঠনের পেছনে তার বিরাট অবদান। বিশেষ করে আধুনিকতার প্রবল ঝাপটা কিভাবে এই ছোট দেশকে আক্রান্ত করতে পারে, সেটা ভেবে ভেবে তিনি অনেক রকম ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। ভূটানের সমাজ সনাতনী, সনাতনী অর্থনৈতিক কাঠামো। রাজার কি উচিৎ সমাজের সমস্ত দরজা-জানালা বহির্বিশ্বের কাছে হাট করে খুলে দেওয়া? বাইরে থেকে আমদানীকৃত নানান দোষে দেশের 'দুষ্ট' হবার পথ সুগম করে দেয়া?
নাকি তাঁর উচিৎ কেবল মেপে মেপে বাইরের প্রভাবগুলোকে ঢুকতে দেয়া? রাজা এই দ্বিতীয় পথই বেছে নেন। ভূটানে আধুনিক বিশ্বের আগমন সহজ়ে ঘটেনি। বিদ্যুৎ, টিভি, ইন্টারনেট - সব কিছুই এই দেশে পৌঁছায় অনেক দেরীতে, এবং অনেক হিসাব করে।
*
আধুনিকতার বিভিন্ন নিদর্শন বর্জন করার পাশাপাশি ভূটানের রাজা আরেকটা জিনিস প্রত্যাখ্যান করেন, যেই জিনিস পৃথিবীর মোটামুটি সব দেশেই এক বাক্যে স্বীকৃত এবং ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই জিনিসের নাম জিডিপি - gross domestic product বা মোট জাতীয় আয়। একটা অর্থনীতির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-আয়তন মাপার জন্যে এখন পর্যন্ত এটাই সবচাইতে গ্রহণযোগ্য, বহুল ব্যবহৃত সূচক। এই জিডিপি নিয়ে কিছু শর্টে আলাপ করি -
জিডিপি জিনিসটা মাপা হয় বাৎসরিক ভিত্তিতে। ধরেন দুটো দেশ - একটার নাম বগুড়া, আরেকটার নাম মাগুরা। বগুড়ার মোট জিডিপি ১০০ টাকা, আর মাগুরার জিডিপি ২০০ টাকা। এর মানে মাগুরার অর্থনীতি সাইজ়ে ঠিক ডবল বগুড়ার তুলনায়।
আবার ধরেন দুই দেশের জনসংখ্যা সমানে সমান - উভয় দেশে ১০০ জন করে। এর মানে মাথাপিছু জিডিপি বগুড়াতে হচ্ছে ১ টাকা (১০০/১০০), আর মাগুরাতে জনপ্রতি ২ টাকা (২০০/১০০)। অর্থাৎ মাগুরার লোক অপেক্ষাকৃত বেশী ধণী। তাদের জীবনযাত্রার মান বগুড়ার থেকে উন্নততর, কারন তারা এই বাড়তি টাকা দিয়ে আরো বেশী দ্রব্যসামগ্রী বা সেবা কিনতে পারছে।
এইখানে বলা নিষ্প্রয়োজন যে 'জীবনযাত্রার মান' বা standard of living জিনিসটা শুধুমাত্র বস্তুগত দিক থেকেই হিসাব করা হচ্ছে। অন্তরের সুখ জিডিপি দিয়ে মাপা যায় না - আর রাজার আপত্তিও সেখানেই, তবে সেই কাহিনী পরে।
*
এইবার অন্য কেস দেখি। ধরেন মাগুরার জিডিপি ২০০ টাকা হলেও ওদের জনসংখ্যা আসলে ১০০ নয়, সেটা ৪০০। তার মানে মাগুরার মাথাপিছু জিডিপি এখন কত? মাত্র ৫০ পয়সা (২০০/৪০০)। মানে মাগুরার অর্থনীতি এক দিক দিয়ে বগুড়ার থেকে বড় হলেও প্রকৃত বিচারে, মানে মাথাপিছু বিচারে মাগুরার লোক আসলে বগুড়ার লোকের থেকেও অনেক গরীব।
ঠিক কতখানি গরীব? পুরোপুরি অর্ধেক গরীব - মাগুরায় ৫০ পয়সা, বগুড়ায় ১ টাকা।
মাথায় বেশী জট লেগে যাবার আগে আরেকটা হিসাব দেই - জিডিপির বৃদ্ধির হার। ধরেন, এক বছরে বগুড়ার জিডিপি ১০০ থেকে গিয়ে দাঁড়ালো ১০৫-এ। মানে গত বছর ওরা মোট ১০০ টাকার জিনিসপত্র আর সেবা তৈরী করেছিল। এর পরের বছর ১০৫ টাকার সামগ্রী আর সেবা বানাতে সক্ষম হয়েছে। (আগেই বলেছি যে জিডিপি বাৎসরিক হিসাব।)
তাহলে বৃদ্ধির হার কত? সোজা হিসাব - ৫%। এটাই বগুড়ার জাতীয় প্রবৃদ্ধি।
বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে মূলত যেই জিনিসটা মাপে, তা হলো অর্থনীতির শরীরে তেজ কতখানি। ধরেন বগুড়া অপেক্ষাকৃত ছোট একটা দেশ, কিন্তু ওদের অর্থনীতি বেশী সচল। ওদের প্রবৃদ্ধি বছরে ৫%। অপর দিকে মাগুরা সাইজে বড় হলেও ওদের অর্থনীতি মোটামুটি অচল। টেনেটুনে বছরে ২% করে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে এক সময়ে গিয়ে কিন্তু বগুড়া ঠিক ঠিক মাগুরাকে ধরে ফেলবে এবং অতিক্রমও করে যেতে পারে। তবে বরাবরের মতই, যেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো গড়পরতা বা মাথাপিছু বা per-capita হিসাবটা। সেটা দিয়েই ধণী-গরীবের প্রকৃত চিত্রটা আরেকটু পরিষ্কার হয়।
*
ধরে ফেলবে এবং অতিক্রমও করে যেতে পারে - কিন্তু কদ্দিনে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমাদের প্রফেসর মজার এক নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছিলেন তড়িঘড়ি হিসাব করার জন্যে - rule of 72. এই বাহাত্তুরের নিয়মে কি বলে? এতে বলে যে একটা দেশের প্রবৃদ্ধির হারকে নীচে রেখে ৭২ দিয়ে ভাগ দাও। তাহলে যেই সংখ্যাটা পাবে সেটা দিয়ে তুমি জানতে পারবে অর্থনীতির সাইজ় ডবল হতে কত বছর লাগবে।
উদাহরণ দেই। পন্ডিতরা হিসাব করে বলেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরে ৬% হারে বেড়েছে। বাহাত্তুরের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের দেশের জিডিপি দ্বিগুণ হয়ে যাবে ঠিক ১২ বছরের মাথায় (৭২/৬=১২)।
চীনের দিকে তাকাই - ওদের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি মোটামুটি ১০% করেই এগোচ্ছে প্রায় তিন দশক ধরে। তাহলে অর্থনীতি দ্বিগুণ হতে লাগে মাত্র ৭ বছর, বেশীর বেশী ৮ বছর (৭২/৭=১০)। আর ত্রিশ বছর ধরে যদি এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে, তাহলে বুঝতেই পারছেন যে ১৯৭৯ সালে দেং-এর চীনের তুলনায় ২০০৯ সালের হু-এর চীন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ৮ বছরে দ্বিগুণ, ১৬ বছরে চারগুণ, ২৪ বছরে আটগুণ এবং ৩২ বছরে ১৬গুণ বৃদ্ধি! বাস্তবের হিসাবেও তাই বলে - চীনের অর্থনীতি গত ত্রিশ বছরে আয়তনে প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে।
*
আর রুল অফ ৭২ দিয়ে আমরা তাহলে খুব সহজেই একটা গরীব দেশের পক্ষে 'ধরে ফেলতে' কি রকম সময় লাগবে, সেটা চটপট বের করে ফেলতে পারি। সেই মাগুরা-বগুড়াতে ফিরে যাই।
- মাগুরার জিডিপি ছিল ২০০, বাড়ছে বছরে ২% করে।
- তাহলে সেটা ডবল হয়ে ৪০০ হতে লাগবে ৭২/২ - আরো ৩৬ বছর ।
- বগুড়া ছিল ১০০, বাড়ছে বছরে ৫% করে।
- সেটা ২০০ হতে লাগবে ১৪ বা ১৫ বছর (৭২/৫)।
- এবং সেখান থেকে আবার দ্বিগুণ হয়ে ৪০০ হতে লাগবে আরো ১৫ বছর। মোট ত্রিশ বছর।
মানে ৩০ বছর যেতে না যেতেই বগুড়া বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবে মাগুরার তুলনায়। এখানে যারা গণিত নাড়া-চাড়া করেন, তারা দেখবেন যে আসল হিসাবটা ২৫ বছরের মতো।
*
এই যে প্রক্রিয়া, এর নাম দেয়া হয়েছে convergence - এক হয়ে যাওয়া, মিশে যাওয়া। আরেকটু কথ্য ভাষায় বলে catching up process। এখন প্রশ্ন হলো যে বাস্তবে কোন গরীব দেশ কি আসলেই ধণী দেশকে ধরে ফেলতে পারছে? ক্যাচ-আপ কি আদৌ হচ্ছে? উত্তর হলো - হ্যাঁ। শেষ উদাহরণ আসছে ইউরোপ থেকে।
১৯৮৯ সালে বার্লিন ওয়ালের পতনের সময় দুই সাইডের দেশগুলোর মধ্যে ধণ-দৌলত টাকা-পয়সায় যথেষ্ঠ ফারাক ছিল। পশ্চিম ইউরোপ বেশী ধণী ছিল, আর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অপেক্ষাকৃত গরীব ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে এসে পূর্ব ইউরোপের ছোট অথচ দ্রুত গতির দেশ স্লোভেনিয়া প্রথমবারের মতো একটি পশ্চিমা দেশকে ছাড়িয়ে যায়। ওদের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৪-৫%। আর সেই অথর্ব অভাগা পশ্চিমা দেশের নাম পর্তুগাল - প্রবৃদ্ধি ১-২%-এ উঠাতেও ওদের কষ্ট হতো।
এখন পূবের আরেক দেশ চেক প্রজাতন্ত্রও পর্তুগালকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। আর স্লোভেনিয়া যদি তাদের জওয়ানি জোশ তথা প্রবৃদ্ধির হার ৫%-এ ধরে রাখতে পারে, তাহলে কয়েক বছর পরে গ্রীস এমনকি স্পেন-কে ধরে ফেলাও তাদের জন্যে অস্বাভাবিক হবে না। তখন জনস্রোত বা মানুষের অভিবাসন কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবে, ভাবুন! একদম উল্টো পথে এগোবে সব...
মন্তব্য
সত্যি বলতে কী, জিডিপি বিষয়ে আমার পূর্বধারণা কিছুটা অস্পষ্টই ছিলো। হয়তো অর্থনীতির ছাত্র নই বলে কিংবা এ বিষয়টাতে খুব বেশি গা করিনি বলে। এ পোস্ট থেকে বিষয়টা আগের চাইতে আরেকটু স্বচ্ছ হলো। ধন্যবাদ আপনাকে। মজা পেলাম লেখাটা পড়ে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনাকে কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। যেসব জিনিস থিওরীটিক্যালি পড়লে বুঝে উঠা কঠিন সেই গুলোই আপনার লেখায় এত ভালভাবে উঠে আসে যে চিন্তা করতে কষ্ট করতে হয় না
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
গুরু, এই প্রথমবারের মতোন জিনিসটা বুঝতে পারলাম। আমার আশেপাশে অনেক জ্ঞাণী-গুণী লোকের বসাবাস, ওনাদেরও জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু বুঝলাম এই প্রথম। আমি খারাপ ছাত্র সন্দেহ নাই, কিন্তু আপনি ভালো মাস্টার
ভূটানের বিষয়টা কি শেষ করলেন?
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
না, ইট্টু বাকি আছে। রাজা মশাইয়ের বহুত বুদ্ধি!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ভুটানের রাজা ওয়াংচুকের গল্ফ কো?
আইবো আইবো, সবুর। গল্ফ সব একলগে কই দিলে অয়নি, ক?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
স্যালুট। বিষয়টাকে এইভাবে পানির মতো বইয়ে দেয়ার দক্ষতার জন্য। তবে ভুটানপর্ব শেষ করবেন আশা করি।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
আমার ধারণা ছিলো আমি একাই জিডিপি জিনিসটা ঠিকঠাক বুঝি না... কিন্তু এখন দেখি অনেকেই এইটা বোঝেনা...
আর ভুটানের কাহিনী কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অর্থনিতির জটিল বিষয়গুলো সহজে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
চলুক আপনার লেখা।
জিডিপি ব্যাপারটা একদম ক্লিয়ার হয়ে গেল। ধন্যবাদ।
আরে, বুস্তার্সি!!
আমাদের ম্যক্রো-অর্থনীতির প্রফেসর খুব মজার লোক, তিনি এইরকম সরস আলোচনা ক'রে বুঝিয়েছিলেন হিসেবের প্যাঁচঘোচ। আপনি তাঁর কথা মনে করিয়ে দিলেন।
হায়, মাইক্রোর ভদ্রলোকের ক্লাসে জেগে থাকার একমাত্র উপায় ছিলো ল্যাপটপ খুলে নেটে পরিভ্রমণ। আপনি মাইক্রোর ক্লাস নেবেন তো এর পর?
মাইক্রো অতিশয় জঘন্য জিনিস, দাদা। খুবই হাই-লেভেলের অংকের আধিক্য, যেই কারনে ঐ জিনিস কখনো আমার ধাতে সইলো না। পোস্টগ্র্যাজুয়েট টেক্সট বইয়ের ভেতর দেখবেন খালি পাতার পর পাতা দুর্বোধ্য ইকুয়েশান।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
তা পোস্টগ্রাজুয়েটের মাইক্রো পড়ালে আমরা অজ্ঞজনে বুঝব এমন ভাবলেনই বা কেন?
আপনি অ-আ-ক-খ পড়ান না ইকোনোমিক্সের, তাই আমাদের পক্ষে ঢের হবে।
আগে একবার কইসিলাম, আবার কই: "নাদানদের অর্থনীতি" নামে একটা বই লেইখা ফালান। সিরিয়াসলি!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আমিও জানাইলাম দাবী
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
হ
মঞ্চায় তো কত কিছুই লেখতে, তবে এখন পর্যন্ত আসলে ব্লগ ফর্ম্যাট-টাই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ঠেকতেছে এই রকম বিষয় নিয়ে লেখালেখির জন্যে। রেগুলার কিছু শর্ট, সহজপাচ্য পোস্ট দিয়া যাই আপাতত। স্বাধীন ভাই তার রিকোয়েস্ট পোস্টে যা যা জানতে চাইছিলেন, ঐগুলা ধীরে ধীরে কভার করার ইচ্ছা আছে। কাজেরও প্রেশার, দেখি কোথায় যায় সব।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। উনারইতো সাত খানা বউ ছিলো, সব বোনকে একসাথে বিয়ে করেছিলেন
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সাআআতটা!!! শুনে খুব ভাল্লাগলো....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এইটা জানা ছিল না। রাজার দেখি বারো মাসই পৌষ মাস! তবে উইকি ঘেটে জানলাম, উনি সাত বোন না, চার বোন-কে বিয়ে করেছিলেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এইজন্য এত বুদ্ধি!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
...........................
Every Picture Tells a Story
অর্থনীতির সহজ পাঠ যে!
দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু জিডিপি'র হিসেবে সবচাইতে ভাল করছে মালদ্বীপ, এরপরে আছে ভুটান। তবে ধূমপায়ীরা ওখানে গেলে ধাক্কা খেতে পারেন। তামাক রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ, চোরাবাজারে চড়া দামে বিড়ি ফুঁকতে হবে!!
কনভারজেন্স নিয়ে আলাপ হচ্ছিল তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন-ডেভিডের সাথে। তিনি মূলত 'সিগমা' কনভারজেন্স নিয়ে কাজ করেন, যেখানে সময়ের ব্যবধানে কতগুলো দেশের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের ব্যবধান কমে যাবার প্রবণতা দেখা হয়। হার্ভাডের ব্যারো'রা 'বেটা'কনভারজেন্স বা 'ক্যাচিং আপ' নিয়ে কাজ করেন। 'গ্যামা' নিয়ে আলোচনা নাইবা করলাম।
সূত্রগুলোর মধ্যে সমস্যা আছে মনে হল। আমি দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার (ভুটানসহ) প্যানেল নিয়ে কাজ করছিলাম। দেখলাম যে প্যানেলে আয় বৈষম্য বাড়ছে, সেখানে লেভিন সহগ কনভারজেন্স দেখাচ্ছে। উদ্ভট!!!
অর্থনীতির সূত্রগুলোতে আস্থা না রাখা বোকামি, আর বিশ্বাস রাখা চরম বোকামি!!!!
হাহা আপনি তো ভালো টেকনিকাল বিষয়ে চলে গেলেন! সিগমা-বেটা নিয়ে ক্লাসে কিছু শিখেছিলাম। তবে হ্যাঁ - এই লেখাটা মূলত বেটা-কনভার্জেন্স নিয়েই ছিলো। গরীব দেশ কিভাবে ধণীদের কাছে যেতে পারে।
তবে গামা-টা কি জিনিস? আপনার কাছে ইন্টারেস্টিং তথ্য আর লেখা পাওয়া যাবে মনে হচ্ছে। খোদার নামে শুরু করে দেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অর্থনীতির জটিল বিষয় জলবৎ তরলং করে বর্ননা অসাধারন হয়েছে।
তবে এই হিসেবটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাটা কঠিন হবে। এখানে জিডিপির নানা সংস্করন আছে। BB, BSS, IMF, ADB প্রত্যেকের হিসেব পরিসংখ্যানের সুত্র আলাদা। এটা দিয়ে বোঝার উপায় নেই আমরা ভালো আছি না খারাপ আছি।
আবার সরকার দলীয় অর্থনীতিবিদ বলেন আমরা খুব চাঙা আছি। কিন্তু বিরোধীদলীয় অধ্যাপক বলেন আমরা ধ্বংসের শেষ সীমানায় দাড়িয়ে আছি। বোঝা খুব কঠিন।
ভূটানের বিষয়ে মূলতবী আলোচনা শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
এই BSS টা কি? জিডিপির নানা সংস্করন-ই বা কি জিনিস? আমি তো জানি বিবিএস হিসেব করে বের করে, বাকি সকলে তার রেফারেন্স দেয়। তবে প্রবৃদ্ধির আগাম হিসেব দেবার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান-ভেদে শতাংশের তারতম্য হয়, কারণ কেউ আগাম হিসেব করে স্ট্যাটিসটিক্যালি, আর কেউ করে জেনারেল ইক্যুলিব্রিয়ামে।
আপনি কি গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস নিয়ে বলতে যাচ্ছেন সুবিনয় ভাই? আমি গত বছর ভুটান ঘুরে আসলাম, জিগমে নামগেল ওয়াংচুক আর তার বাবার এই নীতির ব্যাপারে ওদের রিয়্যাকশনও (ওদের পত্র-পত্রিকায়) দেখলাম। ইন্টারেস্টিং লাগলো।
আমার জিনিসটা ভাল লেগেছে। ভুটান অনেক অন্যরকম একটা দেশ, গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেসের মত কনসেপ্ট ওদের পক্ষে প্রয়োগ করা সম্ভব। এখানে বজ্রায়না বুদ্ধিজমেরও প্রভাব আছে। কিন্তু জিনিসটা ওরা এখনো এডজাস্ট করছে। এটা অন্যান্য দেশে এপ্লিকেশনটা, বিশেষত বাংলাদেশে, একটু ট্রিকি হবে মনে হয়।
জিডিপি গ্রোথের ব্যাখ্যাটা ভাল ছিল!
হ্যাপিনেস নিয়েই লিখতে চাচ্ছিলাম, আরেকটু ধীরে সুস্থে। জিনিসটা ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে উপরমহলে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
হওয়ারই কথা। জিডিপিকে আমার আইকিউ-এর মত লাগে, অসম্পূর্ন।
নর্ডিক মডেলগুলো কেমনে লাগে আপনার?
আপনার অর্থনীতির পাঠগুলো খুব ভালো লাগে। সহজ, প্রাঞ্জল ভাষায় কঠিন জিনিষগুলো লিখে ফেলেন।
আপনার সব অর্থনীতি সক্রান্ত লেখাগুলো একসাথে করা যায় কিনা একটু ভেবে দেখবেন কি?
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
সাধারণত এই জাতীয় সব লেখা 'অর্থনীতি' ট্যাগ দিয়ে ট্যাগ করে রাখি আমি। দেখি আরো কিছু লেখা জমা হোক। কোন এক সময় জোড়া-তালি দেয়া যাবে, ই-বুক বা অন্য কিছু।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনার সাথে নিয়মিত থাকলে ভবিষ্যতে আমি যে অর্থনীতির পন্ডিত হতে পারব সেই ভরসা রাখি ।
যাক , এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে বাংলাদেশের জিডিপির হিসাবে সবসময় গরমিল পাই । একেক সংস্থা একেকভাবে হিসাব করে ।
জিডিপি কিভাবে মাপা হয় , পদ্ধতিটা জানতে আগ্রহী ।
বাংলাদেশের জিডিপি বিষয়ে কিছু কনফিউশন আছে সম্ভবত - উপরে অতিথি আর মাহফুজের কথাতেও একই মনে হইলো। যদিও অতীত জিডিপি নিয়ে ব্যাস-কম বেশী হওয়ার কথা না, কাছাকাছিই থাকা উচিত। মাঝে মাঝে historical GDP সংশোধন করা হয় - এইটা সব দেশেই করে।
তবে ভবিষ্যত জিডিপি কি হতে পারে, সেই বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। তখন পলিটিক্স ঢুকে যায়!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
৭২ এর নিয়মটাতে পৌঁছাতে গিয়ে কালকে একটু সময় লাগলো। ম্যালেরিয়া থেকে ওঠার পর আমার গাণিতিক গতি ঢাকার রাস্তায় ল্যামবোরগিনির মতো হয়ে গেছে । তাছাড়া বুইড়া হইয়া গ্লাম ।
অঙ্ক করে যা দেখলাম,
(1 + r)N = 2
অর্থাৎ, বৃদ্ধির হার r আর বছরের সংখ্যা N হলে, মূল পরিমাণ দ্বিগুণ হবার সমীকরণ।
এখন লগ নেই দুই পাশে।
N ln (1 + r) = ln 2
লগকে সিরিজে এক্সপ্যান্ড করলে পাবো,
N (r - 0.5 * r2 + 0.33 * r3 - 0.25 * r4 + ... ) = ln 2 = 0.693
এখন খাচ্চইরা লগ সিরিজটাকে ছাঁটি। সরলীকরণের খাতিরে একে বর্গ বা ঘন পর্যন্ত আমলে রেখে বাকিটা ছেঁটে ফেলা যায় (যেহেতু বৃদ্ধির হারের মান একটা নির্দিষ্ট সীমার ভেতরেই থাকে এবং সাধারণত এর মান একের চেয়ে কম, তাই উচ্চঘাত ক্রমশ নগণ্য হতে থাকবে)।
যদি বর্গকেও আমলে না নিই, তাহলে পাবো,
N * r = 0.693
বর্গকে আমলে নিলে পাবো,
N (r - 0.5 * r2) = 0.693
এখন আরেকটা বোঝা পড়ায় আসি। যেহেতু বামপাশে একটা জিনিস ছেঁটে ফেলছি, তাহলে হিসাবের জটিলতায় না গিয়ে ডানপাশটাকে সামান্য বাড়িয়ে একটা ভদ্রসভ্য সংখ্যায় নিয়ে গেলেই তো হয়। একদাম ০.৭২। অঙ্ক কষে দেখলে দেখা যায়, ৩-৭% এর জন্য ৭২ এর আশেপাশেই থাকে সংখ্যাটা।
N * r = 0.72
বৃদ্ধি হারকে দশমিকে না ধরে শতকরা হারে হিসেব করতে গেলে ডানদিকের দশমিকও হাওয়া হয়ে যাবে।
রইলো,
N * r = 72
মানে,
N = 72 / r
মিলায় দিলাম গোঁজামিল দিয়া
এইটা একটা ভালো জিনিস দিসো। এক সময় অনেক অংক করতাম আর বুঝতাম। উপরের লগ, লনের সূ্ত্রগুলা দেখে সব মনে পড়ে গেলো আবার। দুঃখ যে এ-লেভেলের পরে সব জানাগুলা আস্তে আস্তে হারায় গেলো।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমি একাউন্টিং এর ছাত্র। জিডিপি নিয়ে আমার ধারনা ততটা স্বচ্ছ ছিল না। প্রফেসরদের লেকচার থেকে তেমন কিছু বুঝতে পারি নি। আজ বুঝলাম। ভালো লাগলো লেখাটা।
ধন্যবাদ আপনাকে!
আপনের নিক-টা সরেস। এই গানটা অনেক শুনতাম এককালে! টিভির এন্টেনা বন-বন করে ঘোরে...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বাহ দারুণ একটা লেখা! এরকম লেখা আরো চাই।
কিন্তু রাজার গল্প যে বলা হলো না!! শিগগিরি ছাড়েন বাকিটা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মানুষ নাকি থাবড়াইয়া (অন্যের) গালে ৫ আঙ্গুলের দাগ ফেলে দেয়। আমি দিলাম ৫ তারকা।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আমি আপনের প্রথম বাক্য পইড়া ঘাবড়াইয়া গেছিলাম এট্টু!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বস্, জটিল হইছে
এরপর ভুটানের রাজার গল্প আর একটা দেশের ক্ষেত্রে জিডিপি কিভাবে পরিমাপ করে তা নিয়ে পড়ার আশা রাখি (হে হে হে, এমন স্টাইলে লিখলাম যেন ব্যাপারটা আমার হাতে )
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আপনে তো আমার মনের কথাটাই কড়া ডিফেন্ডারের মতন ইন্টারসেপ্ট করে ফেললেন!
তবে হ্যাঁ, জিডিপি বিষয়ে সব কথা এখানে বলা হয়নি, কিছু বাকি রেখেছি, পোস্ট-টা বেশী লম্বা হয়ে যাচ্ছিল।
যারা convergence নিয়ে আরেকটু জানতে চান, তারা এই সহজ করে বানানো স্লাইডগুলো চেখে দেখতে পারেন। ভদ্রলোক কিছু ভালো উদাহরণ দিয়ে দিয়েছেন।
আর রণ'দা থেকে শুরু করে সকল মন্তব্যকারীকে অশেষ ধন্যবাদ। সচলপাঠকদের পজ়িটিভ ফিডব্যাকের কারনেই এইসব ঘোলাটে বিষয় নিয়ে লেখার দুঃসাহস পাই!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে সুবিনয় ভাই। প্রথমত আমার মত একজন অতিথি লেখকের কথা রেখে এরকম একটি লেখা দেবার জন্য। আপনার লেখা পড়ে প্রথম যেটা বুঝেছিলাম তা হলো আপনি কঠিন জিনিসগুলো সহজ করে বলতে জানেন। এখনি আলোচনায় গেলাম না। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। যদি কোন প্রশ্ন আসে তবে জানাব।
নতুন মন্তব্য করুন