গত লেখায় প্রবৃদ্ধি, ৭২-এর নিয়ম, ক্যাচিং আপ এই সব বিষয় নিয়ে এক গাদা প্যাঁচাল পারলেও আসল জিনিস নিয়েই তেমন আলাপ করিনি। জিডিপি দিয়ে অর্থনীতির সাইজ মাপে, বুঝলাম, অর্থনীতি বড় না ছোট, তেজী না নিস্তেজ, তাও বোঝা গেল। কিন্তু জিডিপি-র ভেতরে আসলে যায় টা কি? আর সেটা মাপেই বা কিভাবে?
এই বিষয়ে আগের লেখায় একটু হিন্ট ছিলো - তবে তার আগে আমাদের নাখালপাড়ার কাঁচা বাজারের কথা একটু বলবো। হিন্ট-টা ছিল এই যে এক বছরে একটা দেশে যতগুলা দ্রব্য-সামগ্রী তৈরী হচ্ছে আর যত সেবা বিক্রি হচ্ছে, সবগুলো একত্রে যোগ করলে আমরা পাই সেই বছরের জিডিপি। কিন্তু এই কথা বলা যত সোজা, করা যে তত সোজা না - তা সহজেই অনুমেয়।
Lies, damn lies and statistics
পূর্ব নাখালপাড়ায় সকালের বাজার। খোলা আকাশের নীচে চিপা রাস্তায় বাজার বসে - শুরু হয় মাটিতে বসা শাক-সব্জীওয়ালাদের দিয়ে, কাপড় বা প্লাস্টিক বিছিয়ে তার উপরে থরে থরে সাজানো আলু-পটল-শাক। এদের ছেড়ে একটু আগালেই পাবেন ডিমওয়ালার দল, আর তার একটু পরে মুরগী বিক্রেতা। ডজন ডজন পোলোর ভেতর শত শত মুরগী। খদ্দের আসছে, মুরগী বের করছে, টিপে-টুপে দেখছে, পছন্দ হলে দামাদামি করে নিয়ে নিচ্ছে, না হয় রেখে দিচ্ছে। এর পরে মাংসের দোকান, আর তারও একটু পরে মাছের বাজার। ছোটবেলায় আব্বার সাথে যখন বাজারে যেতাম, এই জায়গাটা ছিল আমার সবচেয়ে অপছন্দ। পায়ের তলায় মাটি না, শুধু প্যাঁকপ্যাকে কাদা - মাছের আঁশ, মাছের উচ্ছিষ্ট, বাতাসে মেছো গন্ধ। আর কোন এক কারনে এই মাছের বাজারেই হাউ-কাউ ছিল বাজারের অন্যান্য অংশ থেকে সবচেয়ে বেশী।
এই হলো আশি বা নব্বইয়ের দশকে নাখালপাড়ার সকালের বাজার, সন্ধ্যায় যেটা ট্র্যান্সফার হয়ে চলে যেতো আধা-মাইল দূরে রেললাইনের উপরে। সেই বাজার আরো বড়, এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমও অনেক বেশী হতো, কারন কাজ থেকে ফেরা মানুষের দল তখন বাজার করতে যেতো। ঢাকা শহরের মাত্র একটা পাড়ার কাঁচা বাজারের চিত্র, সারা দেশে এই রকম ডেইলি বাজার বসে হাজারে হাজার।
এই বাজারের ক্রয়-বিক্রয় - মানে জাতীয় জিডিপির প্রতি নাখালপাড়া বাজারের যে অবদান - সেটা কিভাবে মাপা সম্ভব?? আর দেশ জুড়ে এই রকম দশ হাজার বাজারের বিক্রি? প্রতিদিন, ৩৬৫ দিন? আরো আছে সারা দেশে লক্ষ লক্ষ দোকানপাট, মার্কেট আর সুপারমার্কেট, মিল কারখানা ফ্যাক্টরী, অফিস আদালত। আর কৃষি খাতের কথা তো এখনও বলিইনি।
নিঃসন্দেহে জিডিপি হিসাব করা কোন সহজ কাজ নয়। তারপরেও চেষ্টা চলে। পৃথিবীর সব দেশেই জিডিপি মাপার জন্যে আলাদা এজেন্সি বা ব্যুরো থাকে। এদের কাজ শুধু জিডিপি মাপাই না - বরং অর্থনীতির আরো নানান সূচকের হিসাব রাখা, যেমন বেকারত্বের হার, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানী-রপ্তানী, আরো অনেক কিছু। এই সমস্ত সংখ্যা-পরিসংখ্যান-ডাটা'র একটা সামগ্রিক নাম দেয়া হয় - national accounts। মানে একটা জাতির খতিয়ান। আর এই সার্বিক খতিয়ান মাপার উদ্দেশ্যে প্রতিটা এজেন্সিতে কাজ করেন অগুণতি পরিসংখ্যানবিদ আর অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশে এই সংস্থার নাম বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্স (BBS)। হেড অফিস ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত আর দেশ জুড়ে এর অনেকগুলো রিজিওনাল অফিস আছে। বৃটেনে আছে অফিস অফ ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স (ONS), যুক্তরাষ্ট্রে BLS, BEA ইত্যাদি।
জাতীয় ব্যুরোগুলোর পাশাপাশি আছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। যেমন ধরেন, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, OECD - এরা সকলেই বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক আর উন্নয়ন পরিসংখ্যানের উপর কড়া নজর রাখে। অনেক সময় দুই সংস্থার নম্বরের মধ্যে ব্যাস-কম দেখা যায়। এমনকি একই সংস্থার ভেতরেও হয়তো কোন পন্ডিত খুঁজ়ে খুঁজে বের করলেন যে অতীত পরিসংখ্যানে আসলে ভূল ছিলো, সেটা সংশোধন করা দরকার। এই রকম data revision বা data correction খুবই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। চীনা সরকার যেমন কিছুদিন আগে বললো যে ২০০৭ সালের প্রবৃদ্ধি আসলে ১২% না, ১৩% হবে।
ডিজরায়েলি যথার্থই বলেছিলেন - তিন রকম মিথ্যা কথা আছে। মিথ্যা, ডাঁহা মিথ্যা, আর পরিসংখ্যান! কিন্তু তার পরেও পরিসংখ্যানের প্রয়োজন আছে। একেবারেই কোন রকম মাপামাপি না করার থেকে ভূল-ভ্রান্তি সহ মাপামাপিও ফলপ্রসূ হতে পারে।
তিন খাতের তত্ত্ব
জিডিপি জিনিসটা এক দিক দিয়ে চিন্তা করলে রুবিক্স কিউবের সাথে তুলনা করা যায়। আপনি রুবিক্স কিউব যেভাবেই ঘুরিয়ে দেখেন না কেন, এর আকৃতি বদলায় না, শুধু রং বদলায়। একই ভাবে একটা দেশের জিডিপি বিভিন্ন উপায়ে মাপা যায়, কিন্তু ফলাফল প্রতিবার একই আসা উচিত। যেভাবেই মাপেন না কেন, জিডিপির সাইজে খুব বেশী হেরফের হওয়ার কথা না, যদিও চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে।
মূল যেই দুটো রাস্তা আছে, সেগুলো একটু ঘুরে আসি। একটার নাম সাপ্লাই, আরেকটার নাম ডিমান্ড। এর মধ্যে প্রথম রাস্তা, মানে সাপ্লাই বা production approach বোঝাটা অপেক্ষাকৃত সহজ। এর সার কথা আর কিছুই না। একটা অর্থনীতিতে তিনটা প্রধাণ সেক্টর থাকে - এদের উৎপাদন সব এক করে যোগ দাও - জিডিপি পেয়ে যাবে।
এই খাতগুলো কি কি? সহজ কথায় বললে কৃষি, শিল্প এবং সেবা। কিন্তু তাত্ত্বিকরা যেহেতু সব কিছুই একটু কায়দা করে বলতে পছন্দ করেন, তারা আবার ভিন্ন নাম দিয়েছেন। যেমন -
Primary sector - কৃষি, মৎস্য, বন, খনিজ, ইত্যাদি।
Secondary sector - শিল্প - সেটা ভারী শিল্প হতে পারে বা লাইট ম্যানুফ্যাকচারিং।
Tertiary sector - সেবা খাত - এখানে যত রকম সেবা আছে সব ঢুকাতে পারেন - ব্যাংকিং, ইন্স্যুরেন্স, মিডিয়া, বিনোদন, হোটেল-রেস্তোরা, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বহুত কিছু। ও হ্যাঁ, মোবাইল-ও।
এই লিস্ট দেখলে একটা বিষয় ফুটে উঠে। একটা দেশের উন্নয়নের সাথে সেই অর্থনীতির কাঠামোর নিবিড় যোগাযোগ আছে। অর্থনীতি যত বেশী complexity বা sophistication এর দিকে যাবে, দেশ তত উন্নত বা সমৃদ্ধশালী হবে। তাই এশিয়া-আফ্রিকার অপেক্ষাকৃত গরীব দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত primary sector টাই প্রধাণ - হয় ক্ষেত-খামার নয় বিভিন্ন রকম খনিজ উত্তোলন। কেনিয়ার যেমন আছে কফি, আর দক্ষিণ আফ্রিকার আছে মাটির নীচে সোনা-রূপা-হীরা।
এসব দেশে শিল্প বিপ্লব যখন ভালোমত সংঘটিত হবে, তখন সেকেন্ডারি খাত অর্থাৎ বিভিন্ন রকম কল-কারখানা বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই দ্বিতীয় স্টেজের সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর কথা বলা যেতে পারে। এরা ইতিমধ্যে শিল্পায়নের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। চেক'রা বানাচ্ছে গাড়ী, মালয়েশিয়া বানাচ্ছে টিভি - আর চীন বানাচ্ছে 'আলপিন থেকে এরোপ্লেন' পর্যন্ত।
উন্নয়নের তৃতীয় ধাপে উঠে গেলে দেখা যায় যে কৃষি বা লোহা-লক্কড় না, সেবা খাতটাই সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করেছে। নগরায়নের সাথে উন্নয়নের সম্পর্কটা এখানে আরেকটু পরিষ্কার হয়। ইতিমধ্যে সেবা খাতে পৌঁছে গেছে এমন দেশের উদাহরণ হিসাবে পশ্চিম ইউরোপ বেশ যুৎসই।
উপরের এই বিশ্লেষণটা আসলে নতুন কিছু না, যারা মার্ক্সবাদ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাদের কাছে এর অনেক কিছুই পরিচিত ঠেকবে। তিন খাতের তত্ত্ব (three-sector hypothesis) এর যে মূল কথা, তা হলো -
- উন্নয়ন যত এগোয়, সনাতনী খাতগুলোর উৎপাদন তত কমে যায় (তুলনামূলক বিচারে), আর ঠিক তেমনই সনাতনী খাতে শ্রমিকের প্রয়োজনও কমে যায়।
শ্রমিকের বিতরণের বিষয়টা আরেকটু ঘাঁটা যায়। খুব রাফ হিসাবে শ্রমের অনুপাতটা হলো ৭০-২০-১০। প্রাইমারী খাতের উপর নির্ভরশীল গরীব দেশে ৭০% লোক কাজ করে ক্ষেত-খামার-খনিতে, ২০% কাজ করে শিল্প-কারখানায়, আর মাত্র ১০% কাজ করে সেবা খাতে। অথচ উন্নত দেশের বেলায়, যেখানে সেবা খাত মুখ্য হয়ে উঠেছে, সেখানে হিসাবটা পুরো উল্টো। সেখানে মাত্র ১০% লোক পাবেন কৃষি আর খনিতে, বা হয়তো তার থেকেও কম। শ্রমিকদের বড়-সড় অংশ মিলবে অফিস আদালতে, বিভিন্ন সেবা প্রদানে তারা নিয়োজিত।
এই পৃষ্ঠায় বিশ্বের প্রতিটা দেশের শ্রম বন্টনের কাঠামো লিপিবদ্ধ করা আছে। বড়ই ইন্টারেস্টিং হিসাবগুলো।
খেয়াল রাখতে হবে যে তিন-খাত তত্ত্বের হিসাবটা রাফ হিসাব। বাস্তবে প্রতিটা দেশেই যে ৭০-২০-১০ অনুপাতটা মিলে যাবে, তা একেবারেই নয়। তবে একটা দেশের অর্থনীতির কাঠামো আর উন্নয়নের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা মোটামুটি আন্দাজ অবশ্যই পাওয়া যায়।
প্যাঁচাল বাড়ছে তাই আজকের মত শেষ কথাটা বলে শেষ করে দেই। উন্নয়নের চরমে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে tertiary মানে সাধারণ সেবা খাত দিয়েও ঠিক হচ্ছে না, তার থেকেও হাই-ফাই কিছু চলে আসছে। একে কেউ কেউ নাম দিচ্ছে quaternary sector - সেখানে থাকছে তথ্য প্রযুক্তি, কনসাল্টিং, এবং উঁচু মানের গবেষণা বা research & development। এই রকম অর্থনীতির উদাহরণ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের নাম আসবে সর্বাগ্রে। তবে এটা মনে রাখা দরকার যে এই অর্থনীতিগুলো এতই বিশাল যে তাদের অন্যান্য সেক্টরগুলো, এমনকি প্রাইমারী খাতের কৃষি বা মাছ ধরাকেও একদম ফেলে দেয়া যায় না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর চার নম্বর গম উৎপাদক দেশ।
আবার অনেক সময় ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক কারনে এই সনাতনী খাতের লবিগুলো অনেক জোরদার হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ ইউরোপ আর আমেরিকার শক্তিশালী কৃষি লবি প্রতিনিয়ত গরীব দেশের কৃষকদের বাঁশ মেরে যাচ্ছে, আর ওদিকে আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও জাপানের ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি সাগরের নিরীহ তিমি মাছগুলো মেরে ফেলতে সদা সচেষ্ট।
আগামীতে ডিমান্ড সাইড থেকে হিসাবটা দেখানোর ইচ্ছা আছে। আর জিডিপি-র আদি নির্মাতা সাইমন কুজনেৎসের কথাও না বললেই না।
মন্তব্য
দেখে রাখলাম, রাতে পাঠ করবো, মানে আমাদের রাতে...
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ঝরঝরে লেখা।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
পুরোটা পড়ার পরে একটা প্রশ্ন মাথায় এলো। ইকোনমিক স্টেবিলিটির কথা চিন্তা করলে তিন খাতের মধ্যে ভারসাম্যটা কেমন হবে? যেমন, কোনো দেশ সার্ভিস খাতের ওপর ৮০% নির্ভরশীল হলে তার অর্থনীতির ভিত্তি কতোটা মজবুত? অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়লে সার্ভিস সেকটর কি আগে মার খাবে না?
বাংলাদেশে যদি এগ্রিকালচার খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে শিল্প বা সার্ভিসে রাতারাতি বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা কি হঠাৎ করে বেড়ে যাবে? যদি না বাড়ে, তাহলে কোন কোন ফ্যাক্টর এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে? আর যদি বাড়ে, তাইলে আমরা আরো বেশি করে লোহালক্কড়ের কারখানা আর হাসপাতাল বানাই না কেন?
বাংলাদেশের হিসাবে আরো কিছু কনসার্ন আছে। যেমন, আমাদের লোকসংখ্যার অনুপাতে চাষোপযোগী জমি খুবই সীমিত, যদিও সমতলভূমি আর পলিমাটির কল্যাণে মাটি উর্বর। তাহলে আমাদের জন্য তো কৃষি বাদ দিয়ে শিল্প বা সেবার দিকে ঝোঁকাই ভালো?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঠিকই ধরেছেন। এই মন্দায় শুরু থেকেই মার খাচ্ছে যেই দেশগুলো তারা গত কয়েক বছরে শিল্প খাতকে বিরাট অবজ্ঞা করেছে, এবং মোটামুটি একতরফা ভাবেই কিছু মুখচেনা সার্ভিস খাতকে উঠিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য - দুই-ই খুব বেশী দোষী। এদের কাছে ফাইনান্স, রিটেইল এবং প্রপার্টি এতো বেশী প্রাধাণ্য পেয়েছিল, যে শিল্প কারখানার কান্ডারীরা কেঁদে মরতেন একটু সাপোর্টের আশায়। কিন্তু সেই সহায়তা তারা পাননি। এখন নতুন করে রব উঠছে যে ঐসব 'বানোয়াট' সেবা সেক্টর নয়, বরং শিল্পের মত কিছু সলিড কর্মকান্ডে সরকারের মন দিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার নানাবিধ সুবিধা আছে - স্বল্প শিক্ষিত যুবসমাজকে ভালো চাকরি দেয়া যায়, পাশাপাশি তারা কিছু সত্যিকারের স্কিল রপ্ত করতে পারে। সুন্দর শপিং মলের দোকানে দাঁড়িয়ে বাহারী কাপড় বেঁচা বা কল সেন্টারে ঘন্টার পর ঘন্টা বকবকের থেকে গাড়ি বা ইলেক্ট্রোনিক্স বানাতে শেখাটা আরো মূল্যবান বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশের রপ্তানী খাতও এতে বাড়ে। জার্মানী, জাপান উন্নতি করেছে এইভাবেই, হাউজিং বা ফাইনান্স বাবেল দিয়ে নয়।
বাকি প্রশ্নের উত্তর অচিরেই দেয়ার চেষ্টা করবো। কৃষি নিয়ে কিছু আলাপ গত বছর লেখা এই পোস্টগুলোতে পাবেন, আর নীচে আরিফ ভাইয়ের রিপ্লাইয়েও কিছু আছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
agriculture: 63%
industry: 11%
services: 26% (FY95/96)
ইন্টারেস্টিং দেখলাম বাংলাদেশের গ্রাফটা । এখানে কৃষিতে ৬৩% লোক নিয়োজিত , শিল্পে ১১% কিন্তু সেবাখাতে ২৬% !!!
এর মানে ঠিক বুঝলাম না । কৃষির পরেই সেবাখাত আমাদের শক্তিশালী খাত ! ২৬% সেবাখাতের শ্রম বেশ বড় একটা ব্যাপার হওয়ার কথা । কিন্তু এই সেবার ভোক্তারা কি কৃষিখাত ? কারন সেবাখাতের ভোক্তা হিসেবে শিল্পখাত হওয়ার কথা ( আমার ধারনা ) কিন্তু সেই খাত তো খুব দুর্বল ।
আমাদের আসল অবস্থা এই গ্রাফ দিয়ে কী বুঝাচ্ছে তাহলে ?
এই হিসাব আমাকেও বেশ অবাক করেছে। সেবা বলতে আমার এখানে মনে হচ্ছে স্বল্প আয়ের সেবা সেক্টর-টাই প্রধাণ হয়ে গেছে- যেমন ছোটখাট দোকানপাট, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহণ সেক্টর, এইসব। এগুলো আর প্রচলিত সেবা খাত যেগুলো উপরে লিস্ট করেছি, সেই সব মিলিয়ে পুরো সার্ভিস সেক্টরের সাইজ নেহায়েত ছোট হবে না। শিল্প যে দুর্বল ছিল (অন্তত ৯৫-৯৬ সালে) সেটা বোধ হয় ঠিক আছে। এখনো শিল্প দুর্বল আছে কিনা, নাকি গত ১৩ বছরে শিল্প আর সেবা আরেকটু সমানে সমানে এসেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে আবার গত কয়েক বছরে মোবাইল খাত চলে এসেছে খুব জোরে সোরে। সেবার ওজন ওদিক দিয়েও বাড়লো।
তবে আয়ের দিক থেকে সেবা (অন্তত অফিস-পাড়ার বাইরের যে সেবাগুলো) সেগুলো যে শিল্পকে খুব একটা বেশী ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে, এমনটা আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় না। আপ-টু-ডেট তথ্য না থাকাটা আসলেই ফ্রাস্ট্রেটিং!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমার ধারনা গত কয়েকবছরে আমাদের সেবাখাত শহরে বেশ বিস্তৃত হয়েছে । ঢাকায় এখন আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারী হাসপাতাল হয়েছে কয়েকটি , এদের কারনে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নেয়াটা কমেছে । আমি ৬ বছর আগে আমার বাবার অপারেশন করিয়েছি দেশের বাইরে , কিন্তু এবছর মায়ের অপারেশন করিয়েছি ঢাকা'তে ।
শিক্ষাখাতেও এর বিস্তৃতি ঘটেছে । আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে , আমাদের সময়ে আন্ডারগাজুয়েট লেভেলে ভারত যাওয়ার একটা প্রবনতা তৈরী হয়েছিল । অনেক ছেলেপেলে ভারতে পড়তে যেতো । কিন্তু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ( মনে হয় এগুলোর সংখ্যা শতক পেরিয়ে গেছে । ) চালু হওয়ায় এই প্রবনতাও এখন একদম নেই । ঢাকাতে আইএসডি'র মতো স্কুল হয়েছে ,তাই স্কুল লেভেলে দার্জিলিং এর বোর্ডিং স্কুলগুলোর চাহিদা কমে গেছে ।
পরিবহন খাতে অনেকগুলো বিলাসবহুল কোচ চালু হয়েছে । কোচে করে কলকাতা যাওয়া এখন সাধারন রেওয়াজ । সিলেটে যাওয়ার কোচ সার্ভিসগুলো খুবই উন্নত ।
ট্যুরিস্ট খাতেও বেশ বিনিয়োগ এসেছে । কক্সবাজারে হোটেলমোটেল জোনে এখন অজস্ত্র ছোটবড় হোটেল , সেন্টমার্টিনেও এখন হোটেলের ছড়াছড়ি । নতুন নতুন হোটেল হচ্ছে অন্যান্য জায়গাতেও । সিলেটেই গত ৩/৪ বছরে অন্তত ১০টি ভালো মানের হোটেল হয়েছে , দুটো ছোটখাটো রিসোর্ট হয়েছে ।
মোবাইল ফোনগুলোকে হিসাবের বাইরে রাখলেও , সব মিলিয়ে সেবাখাতের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো ।
===================
কিন্তু আমি জানতে আগ্রহী , এই সেবাখাতের বিস্তৃতি কি আদতেই একটি দেশের অগ্রগতি নির্দেশ করে কি না । এখানে যেহেতু শিল্পের বিকাশ তেমন একটা হচ্ছে না ( আমি নিজে মাঠে থেকেই দেখছি ) সেক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতায় আমরা প্রায় একই জায়গায় দাড়িয়ে আছি ।
এই একই জায়গায় দাড়িয়ে থাকার বা অনুল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সামনে দাড়িয়ে তাহলে সেবাখাতের এই বিস্তৃতি কি ঝুঁকিপূর্ণ নয় ?
মানে ভোক্তা তো বাড়ছে না , বা বাড়লেও এই বাড়া সাময়িক ।
সেই ক্ষেত্রে সেবাখাতের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে আপনি কী চোখে দেখেন ?
সাদা চোখে দেখলে সেবা ক্ষাতের বৃদ্ধিতে কোন বেশী সমস্যা নেই। অর্থনীতির বিকি-কিনির ইউনিট হিসাবে একটা মোবাইলের মিনিট কি একটা টি-শার্টের থেকে কোন অংশে কম দামী? হয়তো না।
কিন্তু এখানে আরো অনেক ব্যাপার জড়িত আছে। আমি একবার ভারতের সংখ্যাগুলোও চেক করলাম, এবং যা ভেবেছিলাম তাই দেখতে পেলাম। ভারতের সংখ্যাগুলো আরো সাম্প্রতিক, ২০০৩ সালের।
agriculture: 60%
industry: 12%
services: 28% (2003)
কৃষি যে ১৬ কোটি মানুষকে কাজ দিতে পারবে না, এইটা অবধারিত সত্য। সার এসেছে, সেচ এসেছে, আধুনিক কৃষির পক্ষে সম্ভব অনেক কম লোক দিয়ে অনেক বেশী শস্য ফলানো। গ্রাম থেকে থেকে তাই ভেসে আসছে উদ্বৃত্ত শ্রমিক। এদের জন্যে উচিৎ ছিল সরকার আর প্রাইভেট সেক্টরের শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া। শিল্পের সুবিধা হচ্ছে স্বল্প পরিসরের ফ্যাক্টরিতে অনেক মানুষকে কাজ দেয়া যায়। গ্রাম বা গঞ্জ থেকে চলে আসা স্বল্প শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের জন্যে শিল্প হলো কাজের একটা সহজ রাস্তা - যেটা আপনি চীন বা অন্যত্র দেখে থাকবেন।
কিন্তু হচ্ছে না। এর কি কারন? সরকারের অদূরদর্শিতা হয়তো বড় কারন। বিদ্যুত ছাড়া শিল্প কিভাবে গড়ে উঠবে? বিদ্যুত নেই। অবকাঠামো ছাড়া শিল্প কিভাবে অগ্রসর হতে পারে? অবকাঠামো নেই। রাস্তা-ঘাট নেই, ছয় লেনের হাইওয়ে নেই। জায়গা নেই, সরকারের হাতে অত টাকা নেই। সদিচ্ছা নেই, হয়তো উপায়ও নেই। অনেক নিরীহ মানুষকে উচ্ছেদ করতে হবে যদি সেই রকম চীনা লেভেলের ইনফ্রাস্ট্রাকচার বসাতে চান। চীন স্বৈরাচারী হওয়াতে সেটা করতে পারছে। ভারত গণতন্ত্রী হওয়াতে পারছে না। নন্দীগ্রাম বা শিংগুরের মত জমি-জিরাত জোরপূর্বক দখলের ঘটনা চীনে বেশুমার অহরহ ঘটছে। সবই তড়িৎ উন্নয়নের প্রয়োজনে, শিল্পায়নের প্রয়োজনে, রপ্তানী বৃদ্ধির প্রয়োজনে।
তাহলে চীন কি ঠিক আছে আর ভারত বা বাংলাদেশ ঠিক নেই? খুব প্যাঁচালো প্রশ্ন আসলে। বাংলাদেশের যুবকেরা শিল্পায়নের অভাবে ছুটছে বিদেশে। ঠিকই তো, সেবা খাত আর কত মানুষকে সাপোর্ট দিবে? তাই মিডেল ঈস্ট, তাই ইউরোপ - কোথাও বাকি নেই। কিছুদিন আগে পর্যন্ত অভিবাসী বছরে ছিল ২-৩ লাখের কোঠায়, এখন সেটা ৮ লাখে পৌঁছেছে। কাজ নেই, তাই চলে যেতে হবে যে কোন উপায়ে। প্লেনের চাকার খোলে করে হলেও যাবে।
ভারতে আইটি বুম নিয়ে সরকার এবং মিডিয়া এত বেশী লাফিয়েছিল যে নিম্নবিত্ত, স্বল্পশিক্ষিত মানুষদের কথা একদম ভূলেই গিয়েছিলো। কৃষি আর সেবার মাঝখানে চিপায় পড়েছিল শিল্প। এই রকম unbalanced growth শ্রমজীবিদের জন্যে ক্ষতিকর। এখন ভারত সেটা কারেক্ট করার চেষ্টা করছে। এবং Shining India মার্কা ফাঁপা অথচ দাম্ভিক স্লোগানের খেসারত দিয়েছে বিজেপি, ২০০৪ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির মাধ্যমে। কংগ্রেস সরকার অনেক SEZ বসাতে চাচ্ছে। শিল্প বাড়াবে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার বা রাজনীতিবিদদের সেই চেতনা আছে কি না, বলতে পারছি না। আদম বেপারীরা এই কয় বছর লাখে লাখে লোককে দেশ থেকে বের করে দিয়ে দেশের উপর প্রেশার কমিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেই দরজা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে কবে রাস্তা ঘাট তৈরী হবে, আর কবে শিল্প বিকাশ হবে? ভিয়েতনাম দেশটা আমাদের মতই ছিল। খুবই গরীব। কিন্তু ওরা এখন টিভি-ইলেক্ট্রোনিক্স বানাচ্ছে। অথচ ত্রিশ বছর হয়ে গেলো, বাংলাদেশ এখনো গার্মেন্টস আর চিংড়ি মাছে আটকে আছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অবকাঠামোগত উন্নয়ন না ঘটায় আমাদের শিল্পের বিকাশ ঘটছে না । খালেদা জিয়ার বাড়ি উচ্ছেদে আমাদের যে মনোযোগ তার চাইতে অনেক কম মনোযোগ বিদ্যুৎ এর উৎপাদন বাড়াতে । আর এর আগে তো লাভজনক ইন্ড্রাস্টি বলতে ছিল খাম্বা ইন্ড্রাস্ট্রি । এটাই আবার জায়গায় চলে এসেছে , শুধু জাতির ভাইয়ার জায়গায় সেই মেজর সাহেব চালকের আসনে , এই যা তফাৎ ।
আর ১৬% ব্যাংক ইন্টারেস্ট গুনে ব্যবসা করতে হলে ২৫% লাভ করতে হবে । ২৫% লাভ করার ব্যবসা বোধহয় দুনিয়াতে এখন আর নাই ।
খালেদার বাড়ি, নিযামীর প্লট এইগুলা শিল্প মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে দিয়ে দেয়া হোক। দুদক ২টাকার মুদি দোকান উচ্ছেদ করে, এইগুলা চোখে দেখে না।
চমৎকার আলোচনা চলছে। আমার মত অর্থনীতি কানার জন্য ব্যাপক কাজের। আলোচনায় আরেকটু যোগ করি। বাংলাদেশ আমদানী নির্ভর দেশ এবং আমাদের আমদানী দ্রব্যের সিংহভাগ (সম্ভবত) শিল্পজাত দ্রব্য। এদিক বিবেচনায় শিল্পের ওপরে জোর দিলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবিলিটি বাড়ে। সার্ভিসনির্ভর দেশগুলোর উন্নয়নের কারণ সম্ভবত কাঁচা টাকা। কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্য সবচেয়ে কম, শিল্পজাত দ্রব্য তারপর এবং সার্ভিস হলো সবচেয়ে দামী। সুতরাং বেশি টাকায় সার্ভিস বিক্রি করে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের কৃষিজাত পণ্য কেনা যায়, সেইসাথে শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে লাভে লাভ। - এইটা আমার ধারণা। ভুল হলে সুবিনয় তো আছেনই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গাড়ি চলতে থাকুক.........
লেখা ভালো লাগলো, যদিও শিরোনামটা সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত নয় তবে একটু দূরে বসে থাকে বিষয়ের থেকে। হয়তো সমৃদ্ধির পথ যে একমুখী সেটা নির্দেশ করে।
ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের লিঙ্কটা খুব কাজের, আমরা অনেক প্রজেক্টেই এর থেকে তথ্য ব্যবহার করে থাকি। এই প্রসঙ্গে একটা কথা, যদি আমেরিকার অংশটা দেখেন দেখবেন যে ওরা বেকারদেরকেও একটা শতাংশের হিসেবে ধরেছে। তুলনায় অনগ্রসর দেশগুলোর তথ্যে কিন্তু তা নেই প্রায় ক্ষেত্রেই, যদিও আনএমপ্লয়মেন্টের হার আমাদের অনেক বেশি।
আপনার চিঠি থেকে উদ্ধৃত করি:
এই মন্দায় শুরু থেকেই মার খাচ্ছে যেই দেশগুলো তারা গত কয়েক বছরে শিল্প খাতকে বিরাট অবজ্ঞা করেছে.... এখন নতুন করে রব উঠছে যে ঐসব 'বানোয়াট' সেবা সেক্টর নয়, বরং শিল্পের মত কিছু সলিড কর্মকান্ডে সরকারের মন দিতে হবে। ... সুন্দর শপিং মলের দোকানে দাঁড়িয়ে বাহারী কাপড় বেঁচা বা কল সেন্টারে ঘন্টার পর ঘন্টা বকবকের থেকে গাড়ি বা ইলেক্ট্রোনিক্স বানাতে শেখাটা আরো মূল্যবান বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশের রপ্তানী খাতও এতে বাড়ে। জার্মানী, জাপান উন্নতি করেছে এইভাবেই, হাউজিং বা ফাইনান্স বাবেল দিয়ে নয়।
আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর দেশগুলোর সমস্যা হলো এই যে আমরা দ্রুত উন্নতি চাই, তাই প্রকৃত শিল্পকে সমর্থন করার চেয়ে মল বানানোতে বেশি মন দেয়া হচ্ছে আজকাল। এর হাতে-গরম সুবিধাও আছে, দেখেশুনে মনে হয় দেশটা বুঝি রাতারাতি বিলেত হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভোটলোভী সরকারেরা এই সহজ পথে হাঁটার লোভ সামলাতে পারছে না। মাঝেমাঝে অবিশ্যি মিরাকেল হয়, যেমন ভারতে ফিল-গুড কর্মকান্ডের ধ্বজাধারী বিজেপি সরকারের পতন হলো যখন কৃষির প্রতি অবহেলা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো। মুশকিল হলো এই যে জীবনটা রূপকথা নয়, এখানে রাক্ষস যদিওবা মরে রাজপুত্রের অভিষেক হয় না। কংগ্রেস সরকার এসেও সেই ট্রাডিশনই চালাচ্ছে এক রকম, শুধু ফিল-গুড শব্দবন্ধটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় জাপান বা জার্মানীর পথে দেশ হাঁটবে আমাদের এ আশা পূরণ হবে বলে মনে হয় না।
আমি জানতাম বিজেপি কৃষি আর শিল্প দুটোকেই অবজ্ঞা করতো, অন্যদিকে কংগ্রেস কিছুটা হলেও শিল্প-বান্ধব (উপরে লিখেছি) আর গরীব কৃষকদের ঋণও ওরা শুরতেই মাফ করে দিয়েছিল। তবে আপনি বেটার জানবেন।
আর হ্যাঁ কৃষিভিত্তিক উন্নয়ন দিয়ে কিভাবে ১৬ কোটি লোককে উঠানো যায়, এই নিয়ে আমার ঘোর সন্দেহ আছে, যদিও এর বিপরীতে কোন লজিক থাকলে জানতে আগ্রহী ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
কৃষি ভিত্তিক উন্নয়ন আদতেই সম্ভব কি না বাংলাদেশের মতো ছোট ও জনবহুল দেশে , সেটা সত্যিই প্রশ্নের ব্যাপার । আমার মনে হয় না সেটা সম্ভব ।
তবে আমার মনে হয় কৃষি একধরনের স্থিতি দেয় অর্থনীতিতে , সবকিছুর পরেও এটা সত্যিকারেরই উৎপাদন খাত ; তাই আর যাই হোক , এই খাতে বাবেল হওয়ার সুযোগ নেই ।
ভারতের রাজনীতি আলাদা কিছু নয়, অর্থনীতি সেখানেও রাজনীতির স্থির করা পথেই চলে। তবে আমি আশা হারাই না। বাস্তবে কোনো মিরাকল হয় না যেমন, তেমনই ধীরে ধীরে লক্ষ্যে পৌছানোও অসম্ভব নয়, ধৈর্য হারালে চলে না।
একমাত্র কৃষি দিয়ে উন্নতি মনে হয় না আর সম্ভব আজকের পৃথিবীতে, কিন্তু যে দেশের যা শক্তি তাকে অবজ্ঞা করাটাও মূর্খামি। শিল্পের জন্য কৃষিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে, কিন্তু কৃষি ধ্বংস করার দরকার পড়ে না। বিজেপির অবহেলা সেটাই করছিলো, তার সংশোধন হয়েছে, মানুষের এই সচেতনতা আমাকে খুশী করেছিলো। মনমোহন সিং অনেক প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় বেশি বিচক্ষণ আর প্রগতিশীল, এখনো অবধি ভরসা রাখতে রাজি আমি। অন্ততঃ পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর নিয়ে যা হলো তার পর তথাকথিত বামপন্থীদের বিশ্বাস করার কারণ খুঁজে পাই না। এদের দোটানাটা বুঝি, কিন্তু গত তিরিশ বছরে এরা শুধু কাজই যে করে নি তাই নয়, নব অর্থনীতির পাঠ নিতেও ভুলেছে। যার ফল ভুগছে আজকের প্রজন্ম। শিল্পের সাথে অদ্ভুত শত্রুতা দেখিয়ে আজ হঠাৎ করে শিল্প বান্ধব সাজলে লোকে সন্দেহ করবেই। দু আড়াই দশক আগে পশ্চিমবঙ্গে সফল টেক্সটাইল মিল ছিলো প্রায় বত্রিশ'টা। কয়েক বছর আগের হিসেব মতো তা কমে দাঁড়িয়েছে ছ'খানায়। একটা নতুন মোটরগাড়ির কারখানা দিয়ে এই দীর্ঘকালের রোগ সারতো না। এবং সেটাও নিয়ম মেনে করার যোগ্যতা দেখাতে পারছে না এরা। ভরসা করি কী করে এরপর?
যে সব দেশ আয়তনের সীমাবদ্ধতা নিয়েও কৃষিতে সমৃদ্ধি আনছে তারা প্রযুক্তির ব্যাপক সাহায্য নিয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। বাংলাদেশের জন্য সেটা জরুরি ব'লেই আমার মনে হয়। রাতারাতি শিল্পোন্নত হওয়া যাবে না, ততোদিন কৃষির কথাও ভাবতে হবে। তবে ঘুরেফিরে সেই শিক্ষার প্রয়োজনের কথাটাই মনে আসে। দেশে সুশিক্ষিত কর্মী থাকলে তবেই শিল্পোন্নয়ণ সম্ভব, এবং সেই শিক্ষা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত হলে চলবে না। যাক, এর কোনোটাই অজানা কথা নয়, কী করে এর প্রয়োগ করা যায় সেই প্রশ্নের উত্তরটাই অজানা রয়ে গেছে।
এই ধরনের লেখা যখন পড়ি তখনই সচলায়তনে আছি বলে নিজের জন্য আনন্দ হয়। সুবিনয় মুস্তফীর জন্য আমার হ্যাটস অফ। কারণ আমি অর্থনীতিমূর্খ। আমার জন্য আপনি জ্ঞাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
১.
এমনটা কি তাত্ত্বিকভাবে হওয়া সম্ভব যে, পৃথিবীর সবক'টা দেশেই ৮০% সেবাখাত, ১০% শিল্প এবং ১০% কৃষিতে? আপাতত যতোটুকু বুঝি যে সম্ভব নয়। কিন্তু যদি সম্ভব হয়, তাহলে তখন পৃথিবীর চিত্রটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সমাজতান্ত্রিক সমাজে এইরকম চেষ্টাটাই বোধহয় করার কথা, যেটা সাম্যবাদে গিয়ে ঠেকবে। তখন আসলে উৎপাদনের চরিত্রটা কীরকম হবে? এ ব্যাপারে মার্কস-এঙ্গেলসের বক্তব্য জানতে চাচ্ছি না, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কী মনে হয়?
২.
ইউরোপিয়ান দেশগুলো এক ধরনের পরোক্ষ সমাজতান্ত্রিক সুব্যবস্থা চালু করেছে যেখানে সামাজিক নিরাপত্তাটা বেশ স্থিতিশীলতা পেয়েছে। কিন্তু এই পর্যায়ে আসতে এদের শত শত বছর ধরে সারা পৃথিবীকে শোষণ করতে হয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য না রেখে ইউরোপের মত এরকম পর্যায়ে সারা পৃথিবী কখনও কি যেতে পারবে?
৩.
অফটপিক: মনে করি, একটা দেশ নিজস্ব প্রয়োজনের সবকিছু টায়টায় উৎপাদন করলো। কারো কাছে রপ্তানিও করলো না, কারও কাছ থেকে কিছু আমদানিও করলো না। সেই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল নাকি যে দেশ অর্ধেক রপ্তানি আর অর্ধেক আমদানি করে সেই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। পুঁজিবাদী সমাজে কোনটাকে ভালো বলা হয়?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমি আমার মূল প্রশ্নে ফেরৎযাচ্ছি। আলোচনায় একটি চিত্র ফুটে উঠেছে যে শুধু কৃষিখাত বা সেবা খাত দিয়ে একটি মজবুত অর্থনীতি পাওয়া যাবে না। শিল্পখাতকেও বাড়াতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো, আর তার জন্য আবার প্রয়োজন টাকা।
এই টাকা আসবে কোথা থেকে? আমাদের সব খাত (শিক্ষা, স্বাস্থ, কৃষি, শিল্প আরো অনেক) তো শুধু টাকা নিয়েই যায়। সরকারের টাকার উৎস গুলো কি? শুধু ঋণের টাকায় কি উন্নতি করা যায়? যারা ঋণ দেয় তারাতো অনেক শর্তের বেড়াজাল ও দিয়ে দেয়।
আপনি ভিয়েতনামের উদাহরন দিয়েছেন। যদি এটুকু বিস্তারিত বলেন তারা কিভাবে উন্নতি করলো তাহলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হয়। আপনাকে পেয়ে ম নে হচ্ছে জানার ক্ষিদেটা আরো বেড়ে গেল। অর্থনীতির চাকা চলতে থাকুক........................।
এই টাকা আসবে কোথা থেকে? আমাদের সব খাত (শিক্ষা, স্বাস্থ, কৃষি, শিল্প আরো অনেক) তো শুধু টাকা নিয়েই যায়। সরকারের টাকার উৎস গুলো কি? শুধু ঋণের টাকায় কি উন্নতি করা যায়? যারা ঋণ দেয় তারাতো অনেক শর্তের বেড়াজাল ও দিয়ে দেয়।
খুব ভালো প্রশ্ন করেছেন। সাধারণত যে কোন সরকারের টাকার প্রধাণ উত্স হচ্ছে কর। অনেক রকম কর আছে - ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট (কেনাকাটার উপর কর), প্রপার্টি ট্যাক্স, কর্পোরেট প্রফিটের উপর কর, আমদানীর উপর কর, লাক্সারী বা বিলাসবহুল জিনিসের উপর কর, এমন কি sin tax - মানে তামাক মদ এসবের উপর উচ্চ হারে কর। কর নেওয়ার উত্স অনেক। এবং প্রগতিশীল কর ব্যবস্থার (progressive taxation) আসল কথা হলো বড়লোক বেশী কর দেবে, কম পয়্সার লোক কম কর দেবে। ইউকে-তে যেমন টপ ব্র্যাকেটে ৪০% ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়, নীচের তলার লোকদের জন্য সেটা ২২% বা তারো কম।
এবার নিজেকে প্রশ্ন করেন, আমাদের দেশে কোন বড়লোকের বাচ্চাটা ঠিক মত কর দেয়? কর ফাঁকি দেয় কয়জন? উন্নত দেশে (বা যেই দেশ উন্নতির দিকে যেতে চায়, সেখানেও) সরকার আর জনগণের মধ্যে একটা অলিখিত চুক্তি থাকে। আমি কর দেবো, তুমি সেই করের টাকা দিয়ে আমাকে উন্নত মানের সেবা দিবে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক। ট্রাফিক লাইট, সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা ঘাট। পুলিশ, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি।
এখন নিজেকে আবার প্রশ্ন করেন এই ডীলটা কেউ মানছে? ভালো সেবা না পেলে কর দিয়ে কি লাভ? শেষ বিচারে রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা বা সততা বা দক্ষতার আদৌ কোন বিকল্প নেই। আর উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে হলে ন্যায্য কর আদায় করা আর সেটা ঠিকভাবে খরচ কিভাবে করতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
আমাদের সরকারের কাছে আরেকটা টাকার সূত্র হচ্ছে বৈদেশিক সাহায্য। এটাও কি সুবন্টন হচ্ছে? নাকি তারেক-এর মত চোর বা এখন নতুন কোন চোর সব খেয়ে ফেলার ধান্দা করছে?
অবকাঠামো বানানোর জন্য অনেক স্বল্প আয়ের দেশ আজকাল public private infrastructure financing-এর পথে এগোচ্ছে। এটা নিয়ে এখনো যথেষ্ঠ পরিমানে পড়াশোনা করিনি। তাই না জেনে আপাতত মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকছি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমার জীবনের অর্থনীতি পাঠের তৃতীয় পর্যায় এটা
প্রথম পর্যায়ে মার্ক্সসের বই খুলে কিছু না বুঝে বোঝার ভান করে পার করে দিয়েছি অনেক বছর
দ্বিতীয় পর্যায়ে আনু মোহাম্মদ পড়ে অর্থনীতি একটু একটু বুঝলাম আর ভালো করে বুঝলাম যে অর্থনীতি জিনিসটা আমার পক্ষে বুঝে উঠা সম্ভব না তাই বুঝতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই
কিন্তু সুবিনয়ের (ছোটদের কার্লমার্ক্স) লেখাগুলো পড়ে মনে হচ্ছে অর্থনীতিও পড়ার বিষয়...
এই না হলে লীলেনদা!!!
কি চাল্লু একটা নাম দিয়ে ফেললেন, "ছোটদের কার্ল মার্ক্স"
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
উন্নয়ন যত এগোয়, সনাতনী খাতগুলোর উৎপাদন তত কমে যায় (তুলনামূলক বিচারে), আর ঠিক তেমনই সনাতনী খাতে শ্রমিকের প্রয়োজনও কমে যায়।
একটু সংশোধন করতে হচ্ছে (প্রফেসর নিশ্চয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)। আসলে উন্নয়ন এগোলে সব খাতেই উত্ পাদন বাড়ে কিন্তু অন্যান্য খাতের উত্ পন্নের মূল্য তুলনামূলকভাবে কমে যায় বলে জিডিপিতে তার শেয়ার কমে যায়। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির শেয়ার (মাছ ও বন বাদে) এখন প্রায় ষোল ভাগ, যদিও প্রবৃদ্ধির মূল প্রণোদনা আসে বাম্পার ফলন থেকেই। ম্যানুফ্যাকচারিং আর সার্ভিসে প্রতিদিনই নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। ক্রুগম্যানের ইন্টারন্যাশনাল স্পেশালাইজেশন আর চেঞ্জিং ইকনমিক জিওগ্রাফির কথা ধরলে দীর্ঘমেয়াদে কলার আবাদ কোথায় গিয়ে ঠেকে, জিডিপিতে কলার তুল্যমূল্য কত হয়, আর কলাচাষীর সংখ্যা ডেটা ট্রান্সফারকারীদের কত শতাংশ হবে তা ম্যাক্রোইকনমেট্রিক্স দিয়ে স্বয়ং লরেন্স ক্লেইনও বলতে পারবেন না।
এমনটা কি তাত্ত্বিকভাবে হওয়া সম্ভব যে, পৃথিবীর সবক'টা দেশেই ৮০% সেবাখাত, ১০% শিল্প এবং ১০% কৃষিতে?
সম্ভব নয় কেন? আসলে প্রতিটি নারীর গৃহসেবাকে জিডিপিতে আনলে সেবাখাতের অবদান বাংলাদেশেই ৮০ শতাংশ হবে, বাকি ২০ শতাংশ নিয়ে কৃষি আর শিল্পের কলহে লিপ্ত হবে।
অফটপিক: মনে করি, একটা দেশ নিজস্ব প্রয়োজনের সবকিছু টায়টায় উৎপাদন করলো। কারো কাছে রপ্তানিও করলো না, কারও কাছ থেকে কিছু আমদানিও করলো না। সেই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল নাকি যে দেশ অর্ধেক রপ্তানি আর অর্ধেক আমদানি করে সেই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল?
অটার্কি বনাম ওপননেস নিয়ে বিতর্ক একেবারে পুরনো। ওয়েলফেয়ার যে ওপেন ইকনমিতে বেশি তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর বর্তমান দুনিয়া খুব বেশি আন্তঃনির্ভর। রপ্তানি-আমদানি না করে পারা যায় না। আর বাণিজ্য তো হয় মানুষের প্রয়োজনেই। তবে পুঁজিবাদী দুনিয়ায় মন্দা শুরু হলে এর ঢেউ দ্রুত ছড়ায় বেশি আন্তঃসম্পর্কিত দেশে। তাই তাত্ত্বিকভাবে অটার্কিতে স্থিতিশীলতা বেশি থাকার কথা। তবে বাণিজ্যের মাধ্যমে মানুষকে তার অভাব সর্বোতভাবে পূরণ করতে দেয়ার মধ্যদিয়ে মাঝেমধ্যে অস্থিতিশীলতার যন্ত্রণা পোহানো অনেকটাই কানামামার মত বলে মনে হয়।
পড়তে পড়তে যেটা মনে হলো, শিল্পখাতে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে না রেখে শুধু সেবাখাত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুললে কলাপ্সের সম্ভাবনা খুব বেশী ...আসিয়ান দেশগুলোতে যখন শিল্পের প্রসার ঘটেছে তখন আমরা একটা সুযোগ হারিয়েছি ... যদিও গার্মেন্টস শিল্পের বাজারটা ভালো ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ
একটু ক্রেজী হতে পারে, তাও নিজের চিন্তাগুলো তুলে ধরছি:
এখন একটা সুযোগ তৈরী হতে যাচ্ছে ভারত আর চীনকে ঘিরে ... ভারত আর চীনের ইকনমির গ্রোথের সাথে সাথে সেখানে জীবনযাত্রার মান বাংলাদেশের সাথে একটা নির্দিষ্ট ব্যবধানে পৌঁছাচ্ছে ... তার মানে তখন তাদের সেবাখাত বড় হবে, শিল্পখাত আর কৃষিখাতে লোক হয়তো কমে যাবে, তাই শিল্প তো বটেই এমনকি কিছু কিছু কৃষিপণ্যের বেলায়ও হয়তো তারা বাইরের উপর নির্ভর করবে... ভৌগলিক সুবিধার কারণে আমরা সেটাকে টার্গেট করতে পারি .... নিজেরা অপেক্ষাকৃত কমখরচে শিল্পের উৎপাদন করতে পারলে তো কথাই নেই, এমনকি "জাপান-ইস্ট এশিয়া" মডেল অনুকরণে চীন-ভারতের বড় বড় কোম্পানীগুলোর কারখানা বাংলাদেশে স্থাপন (এইখানে অবশ্য অন্যপার্টির বিশ্বাসযোগ্যতাটা প্রশ্ন, টাটা তো গ্যাসের উপর দিয়া দাও মারতে চাইছিলো), খাদ্যরপ্তানী (যেমন গবেষণা করে বের করা যায় যে ভারতের-চীনের সচ্ছল পরিবার আর অসচ্ছল পরিবারগুলোর খাবার টেবিলের উপাদানের পার্থক্য কি, সেখান থেকে ক্রমবর্ধমান সচ্ছল মধ্যবিত্তের জন্য কোন খাবারগুলো তাদের বাহির থেকে আমদানী করতে হতে পারে সেটা বোঝা যাবে) ... প্লাস এই বিশাল দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যবিত্তায়নের সাথে সাথে ট্যুরিজম যে হারে বাড়বে, সেটাকে টার্গেট করে বাংলাদেশের দুচারটা শহরকে গড়ে-পিটে তোলা .... লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে চীনের মতো সমাজতন্ত্র থাকলে এসব করা মনে হয় সহজ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
হাহা চীনের মত সমাজতন্ত্র না, বলেন স্বৈরতন্ত্র। তবে আপনের ওভারঅল বুদ্ধিটা একদম ঠিকই আছে। পাশের দেশ বড়লোকির দিকে গেলে তার প্রভাব আমাদের উপর পড়বেই। এখন সেটাকে আমরা কোন দিকে নিতে পারি, সেটাই দেখার বিষয়। বাজে হবে যদি সম্পর্কটা আমেরিকা-মেক্সিকোর অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। মানে আমাদের বেকার শ্রমিক শুধু বর্ডার পারি দিয়ে অবৈধ অভিবাসী হিসাবে ভারত চলে যাওয়াটাকেই সলিউশন মনে করে। আর ভালো হবে যদি আমরা এই বিশাল বাজারকে নিজেদের কাজে লাগাতে পারি - সেটা শিল্পায়্ন দিয়ে হোক, বা সেবা বা কৃষিও।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এরকম ঘটার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই কারণ ভারত আর বাংলাদেশের দুদেশেই লোকজনের মধ্যে অধিকাংশই গরিব।
চিন বা ভারতের উন্নতি থেকে পাশের দেশগুলোর অবস্থার উন্নতি হবার খুব একটা সম্ভাবনা নেই, বরং বর্তমান উন্নত দেশগুলো নিজেদের দেশে যে বাজার হারাচ্ছে সেগুলো এইসব দেশে কিছুটা হলেও ফিরে পাবে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সাহস করে একটা কথা বলে ফেলি, আমার তো মনে হয় কৃষি আর শিল্প পরস্পরের সহায়ক শক্তি।
আলুর বাম্পার ফলনের পরে হিমায়ণের অভাবে যদি অর্ধেকটা ফেলে দিতে হয়, তাহলে মোটের ওপর দাঁড়ালো যে, আলুর বাম্পার ফলন হয়নি (মানে বাজারে যা এসেছে, তার দ্বিগুণ তো ফলেছিলো, পচে গেল ৫০ ভাগ।)।
তাহলে এরকম সম্পর্কগুলোর খতিয়ান তো এই জিডিপির হিসেবে নিশ্চয়ই থাকতে হবে।
ঠিক বললাম, নাকি মাইর খামু?!
.... .... লেখা জোস হচ্ছে। অর্থনীতির ধারাপাত। অব্যহত থাকুক!
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
লেখাটা কি অসম্পূর্ণ রেখেছেন ..? আলোচনাটা শেষ করেন নি মনে হয়....
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। এমনকি আমি হেন "অর্থনীতি দেখলে উল্টামুখে দৌড়ানো" পাবলিকও এইসব লেখা থেকে বুঝুক না বুঝুক বোঝার একটা চেষ্টা নিচ্ছে।
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাহলেই এই লেখাগুলো স্বার্থকতা পায়। আপনাকে ধন্যবাদ। কোথাও বেশী পেঁচিয়ে ফেললে বলবেন। আর সচলদের প্রশ্নগুলো এতোই ধারালো, যে আমি প্রতিনিয়তই আমার স্বল্প জানার সীমানায় গিয়ে হোঁচট খাই। দেখি, জাঁদরেল অর্থনীতিবিদ ধরেছি একজন, উনি যদি অন্তত q&a গুলোর আউটসোর্সিং নিতে রাজী থাকেন!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
জাঁদরেল অর্থনীতিবিদ ধরেছি একজন
কে সেই ভাগ্যবান, প্রফেসর?
আপনাকে তো তাহলে জগদীশ ভগবতী'র "দ্য মাডলস ওভার আউটসোর্সিং" আগে পড়ে নিতে হবে। নাহলে পরে পস্তাতে পারেন।
নতুন মন্তব্য করুন