লোমহর্ষক

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বুধ, ১৭/১০/২০০৭ - ১০:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

কিছু কিছু নিউজ আছে, পাঠককে খাবি খেতে হয়। সৃজনশীলতার সাথে যে মানসিক ব্যাধির একটা যোগসূত্র আছে, সেটা জানতাম। উইকিপিডিয়ার আত্মহত্যা ক্যাটেগরি এক ঝলক দেখলেই তার প্রমাণ মিলে। ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানতে পারি যে বাস্তবিক অর্থেই শত শত লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী, ইত্যাকার ক্রিয়েটিভ পাবলিক জীবনজ্বালা সইতে না পেরে কোন না কোনভাবে ভবলীলা সাঙ্গ করেছেন।

কিন্তু গত কয়েকদিনের মধ্যেই দুইটা নিউজ দেখলাম যা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে লেখকরা এখন আর নিজেকে খুন করেই ক্ষান্ত নন, তারা অপরকে হত্যা করতেও সংকল্পবদ্ধ!

কেস স্টাডি ১)

পোল্যান্ডের এক বিজ্ঞাপনী সংস্থার মালিক ছিলেন ডারিয়ুশ জানিশুস্কি। ২০০০ সালে পোল্যান্ডের রত্‌স্লাভ (Wroclaw) শহরের অদূরে নদীর তীরে তার মৃতদেহ আবিষ্কার করা হয়। লোমহর্ষক সে ঘটনা। জানিশুস্কি-র লাশ পরীক্ষা করে পুলিশ বুঝতে পারে যে মৃত্যুর পূর্বে তার উপরে ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হয়েছিল, এবং তাকে অভুক্ত রাখা হয়েছিল। অবশেষে গলায় ফাঁস দিয়ে, হাত-পা বেঁধে তাকে নদীতে নিক্ষেপ করা হয় এবং তিনি ডুবে মারা যান। জানিশুস্কি খুন হবার পর অনেকদিন কেটে যায়, কিন্তু রত্‌স্লাভ-এর পুলিশ বাহিনী এই ঘটনার কোন সুরাহা করতে পারেনা। কে খুন করেছে বা কেনই বা এহেন নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে - তার কিছুই তারা বুঝে উঠতে পারেনা।

কিন্তু তিন বছর পরে বেশ অপ্রত্যাশিতভাবেই তদন্তের শিকে ছিড়ে যায়। একটি উপন্যাসের কথা পুলিশের গোচরে আসে। উপন্যাসের নাম এমোক (Amok বা উন্মত্ত), থ্রিলার জাতীয় বই । লেখকের নাম ক্রিস্টিয়ান বালা - ৩৩ বছর বয়স, দর্শনশাস্ত্রে গ্র্যাজুয়েট, একাধারে ফটোগ্রাফার ও সাহিত্যিক। এমোক তার প্রথম উপন্যাস। কেউ কেউ বলেন, ইন্টারনেটের এক বুলেটিন বোর্ডে উপন্যাসটির উপরে এক আলোচনা থ্রেড-এর মাধ্যমে বালা পুলিশের নজরে আসেন, আবার কোন কোন রিপোর্টে বলা হয় যে পুলিশ একটি বেনামী ফোন পেয়েছিল। তাদেরকে বলা হয় এমোক বইটি একটু পড়ে দেখতে। উপন্যাস পড়ে পুলিশ বুঝতে পারে জানিশুস্কি হত্যার মত অবিকল একটি খুনের গল্প বইটিতে লেখা আছে। তারা বালা'কে পাকড়াও করে জেরা করতে আরম্ভ করে, এবং আস্তে আস্তে বিস্ময়কর এক গল্প বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল বালা'র। তিনি সন্দেহ করতেন যে তার স্ত্রী নতুন প্রেমিক হিসেবে ডারিয়ুশ জানিশুস্কি-কে গ্রহণ করেছেন। পুলিশ ধারণা করে যে প্রবল ঈর্ষার বশবর্তী হয়েই বালা তার প্রতিপক্ষের জীবননাশের সিদ্ধান্ত নেন। আরো জানা যায় যে জানিশুস্কি গায়েব হয়ে যাওয়ার মাত্র চার দিন পরেই তার মোবাইল ফোনটি বালা ইন্টারনেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন যে ফোনটি তিনি এক ক্যাফেতে কুড়িয়ে পেয়েছেন। এটি ছিল বালা'র বিরুদ্ধে বড় প্রমাণগুলির একটি।

গত মাসে আদালত বালা'র শাস্তি ঘোষণা করে। ২৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড। কোর্টে এও জানা যায় যে বালা তার স্ত্রী'র আরেক সন্দেহভাজন প্রেমিকের উপর তথ্যসংগ্রহ করছিলেন। (হয়তো নতুন উপন্যাসের মাল-মশলার জন্যে!)

ক্রিস্টিয়ান বালা-র কাহিনী বিবিসি-তে

আগামীকাল - মানুষখেকো মেক্সিকান সাহিত্যিক-এর গল্প


মন্তব্য

অয়ন এর ছবি

বালার কাহিনী নিয়াই তো এখন আরেকটা উপন্যাস লেখা হবে।

অমিত আহমেদ এর ছবি

হতবাক!


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একমাত্র মানুষই পারে ক্রিয়েটিভলি হিংস্রতা করতে

হিমু এর ছবি

খেয়ে ফেলাই ভালো। মেক্সিকান আদমখোরের গল্পটা বলেন শুনি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।