মহাকালের গায়ে দস্যু তোমার বিশ্রী বুটের ক্ষত

সুমন সুপান্থ এর ছবি
লিখেছেন সুমন সুপান্থ (তারিখ: বুধ, ১৫/১২/২০১০ - ৫:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তীব্র হয়ে হিম নেমে এসেছে এখানে। মাঝে মাঝেই অমল-ধবল তুষারে ঢেকে যাচ্ছে সব। গাছ-পালা। চরাচর। সব। রক্তের ভেতর যেটুকু উষ্ণতা বা ছিলো অবশিষ্ট, এমন ডানাকাটা হিমের ভেতর সেটা যেন ঘুমিয়ে না পড়ে তাই আমরা কেউ কেউ গরম পানিতে অন্দর মহল ভেজাতে যাচ্ছি দুরের শুড়িখানায়!
আর গ্রামে আমার যে বোনের নাম রাহেলা, আমার যে বোন বহ্নিশিখা, মায়ের ঔষধের টাকা, ছোটভাইয়ের স্কুলের ফিস, বাড়ি ভাড়ার টাকার হিসেবের সঙ্গে নিজের মাইনের টাকা মিলে না বলে একদিন তারা মিলিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। একদিন তারা পরষ্পর এক হয়ে ইতিহাসের সুলতানা রাজিয়া, মহাকালের ইলামিত্র হয়ে ঢাকার রাস্তায় নেমে ফৌজি বুটের তলায় পৃষ্ট হয় আর অবাক চোখে তাকায়। তার ভাইদের কোথাও দেখা যায় না! তারা বহুদুরে, স্বপ্নের লাল আলো নিভিয়ে দিয়ে, শুড়িখানায় বেহেড! শুধু বোনেরা জানে কিংবা তারা আগাম অনেক কিছুই জানতে পারে; তারা জানে আবারো লুণ্ঠিত হতে চলছে তার সবুজ আঁচল! হলুদ-মরিচের গন্ধমাখা মায়ের আটপৌঢ়ে দশহাতিখানা!
তখন তারা বেহিসেবী হয়ে উঠে। তারা দুঃসাহস দেখিয়ে বলে ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’।
আর যারা তাদের প্রভু, আমাদের মাথার মাথা; আঙুলির এক ইশারায় তাদের পোষা জন্তুরা হামলে পড়ে আমার বোনের উপর। বলে ‘মারার মতো মারতে চাই’
আমরা তখন দূরে গা গরমের ঔষধ গিলি! ব্লগ লিখে ফালতু আবেগের ঝালাই দিই। আর আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠি। কেননা তখনো শীতরাত্রির নির্জনতা কাঁপিয়ে দিয়ে আশুলিয়া কি সাভারে ৩১টি পোড়া মানুষের লাশ সাজানো হচ্ছে। তাতে কাবাব কাবাব গন্ধটা আমাদের মুনিবদেরই নয় শুধু, আমাদেরও ক্ষুধা তৃষ্ণাকে উসকে দিচ্ছে আরো!

[ শিরোনাম,ছবি,ছবি-শিরোনাম কৃতজ্ঞতা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ]


মন্তব্য

মণিকা রশিদ এর ছবি

"শুধু বোনেরা জানে কিংবা তারা আগাম অনেক কিছুই জানতে পারে; তারা জানে আবারো লুণ্ঠিত হতে চলছে তার সবুজ আঁচল! হলুদ-মরিচের গন্ধমাখা মায়ের আটপৌঢ়ে দশহাতিখানা!"
অনেকদিন পরে তোমার লেখা। একটানে পড়ে ফেললাম! অসাধারণ!

____________________________
শান্তিও যদি সিংহের মত গর্জায়, তাকে ডরাই।
--নরেশ গুহ

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোট একটা লেখা অথচ অনেক শক্তিশালী এর আবেদন। অসাধারণ শব্দ চয়ন। ধন্যবাদ।

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বর্বরতার শেষ কোথায় ? আমরা এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি চাই।

সহজ সরল

অতিথি লেখক এর ছবি

সরকার, আর মালিকপক্ষ
কতো কিছুই তো করছে এদের ভালোর জন্য!
প্রত্যেক মৃতের পরিবার পাবে এক লাখ টাকা!
হয়ে যাবে লাখোপতি!
আর কী চাই??
__________________________________________
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ষড়যন্ত্রতত্ত্বপ্রবণতা, মুখস্ত লক্ষ্যে আঙুল তোলার প্রবণতা, আর বলির পাঠা কুরবানী দিয়ে সমস্যা সমাধা করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কোন সরকারই কোন সমাধান আনতে পারবে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বড্ড পুনরাবৃত্তির গল্প। এরকম হচ্ছে, হয়ে যাচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে।

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

অনেকদিন পর একটা লেখা......
যে যন্ত্রণাটা তীব্রভাবে গতকাল থেকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ভেতরটা সে অনুভূতি এ লেখাতেও...
জানেন ভাইয়া, মাঝে মাঝে চরম অক্ষমতায় নিজের উপরই নিজের ঘৃণা হয় তখন মনে হয়... দুর্দান্ত কয়েকজন বিপ্লবী প্রয়োজন এ দেশের এখন....
কিংবা চরমপন্থী...

-------------------------------------------------------------------
নির্জলা নৈবেদ্য


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

অর্বাচীন [অতিথি] এর ছবি

প্রতিদিনে প্রতিরাতে চুরি হয়ে যাওয়া মনুষ্যত্বের চিতায় আগুন দিয়ে মানুষ হয়ে বেঁচে উঠি বারবার !!

অতিথি লেখক এর ছবি

উফ...পালাতে চাই এসব থেকে, পালিয়ে বাঁচতে চাই...তাই নিজেকে ঘৃণা। মউ এর মত স্বপ্ন দেখি বিপ্লবের
- মেঘলা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ! কুর্ণিশ জানাই।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

বহুদিন আগে বলা হয়েছিলো, আর কতদিন এমন চলবে... চলছেই চলছেই চলছেই...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

মাহবুব এর ছবি

লেখার আবেদন ভাল। কয়েক মাস আগে আচমকা কিছু মেয়ে যখন ঢিল মেরে নিকুঞ্জ তে আমার গাড়ির কাচ ফাটিয়ে দিল তখন জানিনা কেমন লেগেছিল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।