মৃত্যু বড় শীতল। ধীরে ধীরে চলে যায় উষ্ণতার অবশিষ্টাংসটুকু। মৃত্যু আসার আগেই কি তার ছায়া পড়ে মৃত্যুগামী মানুষটির মনে? মাত্র পনের দিন আগে একমাত্র ছেলেকে বিদায় দেওয়ার সময় এই নারী কি বুঝতে পেরেছিলেন ছেলের সাথে তাঁর এই শেষ দেখা? এই বিদায় শেষ বিদায়?
পরশু রাত অবধি তিনি ছিলেন এক নারী। এক মা। এক বোন। কারও একজনের ছেড়ে যাওয়া স্ত্রী। আচম্বিতে মৃত্যু এসে তাকে বানিয়ে দিয়ে গেল শুধুমাত্র এক 'বডি'। ডেডবডি। বরফঘরে, বরফের ট্রেতে তিনি শুয়ে আছেন একমাত্র সন্তানের প্রতীক্ষায়। ছেলে আসবে সাত সমু্দ্দুর পেরিয়ে মায়ের মুখে আগুন দিতে। শেষকাজ করবে মায়ের। শেষ দায়িত্বপালন মায়ের প্রতি।
তাঁর ছেলে প্রথমবার যখন সাগরপাড়ি দিয়েছিল পড়াশোনার উদ্দেশ্যে তখন এই মা জানতেন না যে ছেলে আমেরিকা গেল! মায়ের সাধ ছিল ছেলে কেমিষ্ট্রি পড়বে। কলকাতাতেই পড়বে। ছেলের সাধ, ইচ্ছা ছিল মায়ের থেকে ভিন্ন। সেই ইচ্ছাপূরণের নিমিত্তে মায়ের অজান্তেই আমেরিকা যাত্রা। মাসখানেক পরেই বন্ধুর টেলিগ্রাম( তিরিশ বছর আগে টেলিগ্রামই ছিল ত্বরিত যোগাযোগের ভরসা), মা অসুস্থ, শিগগির এসো! মা নেই ধরে নিয়েই ছেলে ফিরে এসেছিল স্বপ্ন-সাধ, পড়াশোনায় জলাণ্জলী দিয়ে। ফেরার টাকা ধার করে। সেবারে মা বেঁচেও ছিলেন আর সুস্থ্যও ছিলেন।
সময় গড়িয়েছে। সেই ছেলে জীবনে এতখানি সাফল্য পেয়েছে যে বছরে ছ্মাস গোটা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায় নানা কাজে। কখনও নিজের কম্পানীর ডিরেক্টর হিসেবে তো কখনও নিজের তোলা ছবির প্রদর্শনী নিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে। মা থাকেন অবিবাহিত ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে। বৌমা আর একমাত্র নাতি দশ বছর আমেরিকাবাসী। ছেলে ফিরে ফিরে আসে মায়ের টানে, মায়ের কাছে।
এবারেও ছেলে ফিরছে। কিন্তু মা আর নেই। বরফঘরে বরফের ট্রেতে শুয়ে আছে মায়ের দেহ। ঠান্ডা। শীতল।
মন্তব্য
একজীবনে কতগুলো গোপন দীর্ঘশ্বাসই যে মানুষের বুকে জমা হয় কেউ জানে না।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
কত সরব নি:শ্বাসও এমনি এমনি বাতাসে মেশে, মিলিয়ে যায়। হয়তো কেউ শোনে হয়তো শোনে না...
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
নতুন মন্তব্য করুন