প্রবাসে থাকা এক বন্ধু ছুটি কাটাতে বাড়ি এসেছিলেন বইমেলার সময় ধরে। বইমেলা না হওয়াতে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা করে, টুকটাক কাজকর্ম করে সময় কাটাচ্ছেন। আজকে আমার সাথে দেখা করতে এসে আমাকে দিয়ে গেলেন তিনখানা বই। আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি- প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা আর বকুলকথা। বইগুলো দেখেই একমুখ হাসি আমার। সুবর্ণলতা বইটি আমার আছে, সেটা পড়ে বকুল কথা পড়ার সাধও হয়েছিল কিন্তু পরে আর কেনা হয়নি কাজেই পড়াও হয়নি। আজ অনেকদিন পরে যেন একটি ইচ্ছেপূরণ হল...
ইদানিং বেশ বই উপহার পাচ্ছি। হাশেম খান নিজের লেখা বই দিয়ে গেলেন, ঢাকায় গিয়ে পেলাম ইমরুল হাসানের বই। ইমরুলের সৌজন্যে পরিচিত কাজল শাহনেওয়াজ দিলেন তাঁর গল্প সংকলন, আর কবিতার বইও। ছোটবোন দিল সৈয়দ মুজতবা আলি'র শবনম।
সেই কোন ছেলেবেলায় কেউ একজন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আমি তোকে একটা বিশাল লাইব্রেরি বানিয়ে দেব! অনেক অনেক বই থাকবে সেখানে, সব তোর! আমি তখন ভাবতেও পারতাম না, গোটা একটা লাইব্রেরি আমার? সত্যি! তখন যে আমার গল্পের বই পড়বার অনুমতি ছিল না, লুকিয়ে বই পড়তাম আর ধরা পড়লেই বকুনি। মনখারাপ করে বসে থাকলেই আকছারই পেতাম ওই প্রতিশ্রুতি, তোকে আমি একটা গোটা লাইব্রেরি দেব! আমি বিভোর হয়ে যেতাম সেই লাইব্রেরি র স্বপ্নে...
ছেলেবেলা কখন যেন চুপটি করে চলে গেছে না জানিয়েই। সে একা যায়নি, সাথে করে নিয়ে গেছে অনেক কিছুই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে পাশের বাড়ির সেই ছেলেটাও। সাথেই হারিয়েছে দশ বছরের এক মেয়েকে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতিও। স্মৃতিতে ধুলোর চাদর বিছিয়েছে সময় আর একসময় পুরোপুরি ঢাকাও পড়েছে কবে যেন। আজ আবার মনে পড়ে গেল...
কলেজ ষ্ট্রিট খুব একটা দূরে না হলেও যাওয়া হয়ে ওঠে না বই কেনার জন্যে। বইমেলা ঘুরে ঘুরে লিষ্টি মিলিয়ে মিলিয়ে তাই বই কিনি। দুই হাত নুয়ে আসে ভারে, প্লাষ্টিক কেটে কেটে বসে হাতে। ভিড়ের বাসে ঠেলে ঠুলে জায়গা করি নিজের, বইয়ের। ক'দিন শুধুই বই ঘেঁটে দিন কাটানো। পড়া হয় না তারপরেও সব বই। ভিড় বাড়ে বইয়ের তাকে। এক সারিকে পিছনে ফেলে সামনে বাড়ে আরেক সারি। এখন আমার ছেলেবেলা হলে বলতাম, এ আমার লাইব্রেরী!
বই দিয়েছে সুমেরুও। হারিয়ে যাওয়া নকশী কাঁথার মাঠ আবার খুঁজে বের করেছে সে, এনে দিয়েছে আমায়। আমি সেই নকশী কাঁথায় হাত বুলাই শুধু... মন ভরে যায়, উদাসও হই... মন কেমন করে ওঠে... আবার তাকে রেখে দেই আমার নকশী কাঁথার মাঠকে... ওর আলমারী ভরা সব বইও এখন আমার কাছে... আকারে বড় হয়েছে আমার লাইব্রেরী। ছেলেবেলা এখন আর নেই তাই পড়া হয়ে ওঠে না সব বই। দিন গুলি কখন যেন ছোট হয়ে গেছে আর সময় টুক করে ঢুকে পড়েছে কম্পিউটারে। আমি তারে খুঁজে বেড়াই স্ক্রিনে, ধুলো জমে আমার লাইব্রেরিতে...
মন্তব্য
ভার্চূয়্যাল বন্ধুত্ব, ই-বুক এসবের ভীড়ে লাইব্রেরীটা শুধু শখের মাধ্যম হয়েই থাকবে হয়তো আরোও কিছুদিন।
আমার আশঙ্কা এরপরে শখ করেও কেউ লাইব্রেরী করবে না। জায়গাটা হয়তো একটা পিসির জন্য বরাদ্দ করা লাগবে।
মানুষ বাড়ছে। জায়গা কমছে। প্রযুক্তি বাড়ছে। আবেগ কমছে। এরকম আরো অনেক ইকুয়েশন আজকাল অনেক বেশী প্রমিনেন্ট। অনেক বাস্তব।
আপনার লাইব্রেরীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সিডিতেও তো স্ক্র্যাচ পড়ে। তাই ধূলো পড়া লাইব্রেরীতেও ক্ষতি নেই। তাওও সেটা বহাল থাকুক
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
লুত্ফুল আরেফীন,
ক্ষমা করবেন, আপনার নামটি ঠিকমতো লেখা গেল না।
মানুষ বাড়ছে। জায়গা কমছে। প্রযুক্তি বাড়ছে। আবেগ কমছে।
আবেগ কী আসলেই কমছে? আমার তা মনে হয় না। আবেগের প্রকাশ হয়তো কমেছে,আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়তো সব সময় আমরা এখন আর চলি না, অনেক হিসেব-নিকেশ, অনেক গোনা-গুনতি এখন আমরা করি বটে কিন্তু আবেগ আছে ঠিক বরাবরের মতই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
কলেজ স্ট্রীট নামটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। চারিদিক শুধু সাড়ি সাড়ি বই আর মাঝখানে আমি একা। লাইব্রেরী যেন একটা ছোট স্বর্গ।
অয়ন,
কলেজ ষ্ট্রিট নামটা বরাবরই আমার কাছে একটা স্বপ্নের মত ছিল। প্রথমবার যেদিন কলেজ ষ্ট্রিটের বইপাড়ায় যাই বেশ কিছু চেনা মানুষের সাথে, সেদিন ইচ্ছে করেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম অন্য সবার কাছ থেকে, অচেনা কিন্তু স্বপ্নের কলেজ ষ্ট্রিটে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়েছি দলছুট হয়ে। কিনে ফেলেছিলাম যত রাজ্যের বই এমনিতে যা হয়তো কখনোই কিনতাম না।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
নিজের একটা লাইব্রেরি গড়ে তোলার চেয়ে আনন্দের কিছু এখন পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। কলেজ লাইব্রেরিটাকে খুব মিস করি, তাই নিজের লাইব্রেরির স্বপ্ন এতোটা কাতর করে।
মুহাম্মদ২০১৭
ঠিক বলেছেন মুহাম্মদ।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
তোমার লাইব্রেরী আরো লাই পাক।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
কল্লোলদা সেদিন লিখেছিল, আজ আবার মহীনের সেই গানটা মনে পড়ে গেল।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
সেদিন ঐ খোলা মাঠে গান শুনতে না যাওয়ার দু:খ আজ আবার জেগে উঠল। এই দু:খ থাকবে অনেকদিন।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
জায়গা বদলের কারণে জীবনে এ পর্যন্ত তিনবার ব্যক্তিগত লাইব্ররি বানাতে হয়েছে। প্রথমটি নাগালে নেই, দ্বিতীয়টি বিলুপ্ত। সর্বশেষটি এখনো গড়ছি। কমপিউটার দিনরাতের অনেকটা সময় খেয়ে ফেললেও বিছানায় যাওয়ার সময় ওই লাইব্রেরিতে হাত বাড়াতে হয়।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
জুবায়ের,
ঠিক একই কারণে আমারও প্রথম দুটি লাইব্রেরি এখন আর নেই।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
আমি তো মোটামুটি যাযাবর জীবন কাটাই, যেখানেই যাই একটা লাইব্রেরী বানিয়ে ফেলি।
এখনও আছে একটা।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ফকির বাপের মিসকিন পুত্র আমি। চুরি-চামারি করে বহু কষ্টে ৩ শেল্ফ বড় একটা লাইব্রেরি গড়েছিলাম দেশে। প্রবাসে এসে বদলে গেল সব। টেক্সবুক কেনার টাকাই যোগাড় হয় না, লাইব্রেরির বিলাসিতা তো দূরের কথা!
চুরি-চামারির কথায় মনে পড়ল, এইরকম চুরি চামারি আমিও অনেক করেছি। ৪টে বই পড়তে এনে ফেরত দিতাম ৩টা। চেয়ে আনা বই ফেরত দেওয়ার তাড়া আমার নিজের কোনোকালেই ছিল না, অপেক্ষা করে থাকতাম, কবে বইয়ের মালিক বই ফেরত চাইবে। চাইলে অবশ্য দিয়ে দিতাম তবে না চাইলে...
আপনি নিজের টেক্সট বই কেনার টাকা নিজে যোগাড় করেন এর চাইতে বড় গর্বের ব্যপার আর কী হতে পারে। নিজের লাইব্রেরি না থাকার দু:খের চাইতে এ অনেক বেশি সুখের বিষয়। অভিনন্দন আপনাকে।
ভাল থাকুন।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
শ্যাজাদি,
এটিই বোধহয় নির্মম বাস্তবতা। ...
শুনতে পাই, এখন অনলাইনে দৈনিক পত্রিকা পড়ার ধুম দেখে বড় বড় সংবাদপত্রের মালিকরাও নাকি তাদের কাগজের বিক্রির কমতি দেখে উদ্বিগ্ন।
আমারো হয়েছে, আপনার দশা। সারাদিন অনলাইনে কাজ করার পর বাসায় ফিরে এখন আর কোনো বই পড়তে ইচ্ছে করে না। নির্ঘুম রাতও অজান্তে জড়িয়ে পড়ে অন্তর্জালে। ...
(দিদি, ইদানিং সচলে আপনি কিন্তু খুব অনিয়মিত। একটু নিয়মিত লিখবেন প্লিজ।)
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লবদা,
শুনতে পাই, এখন অনলাইনে দৈনিক পত্রিকা পড়ার ধুম দেখে বড় বড় সংবাদপত্রের মালিকরাও নাকি তাদের কাগজের বিক্রির কমতি দেখে উদ্বিগ্ন।
ঠিক বলেছেন। আমাদের বাড়িতেই দেখেছি আব্বার জন্যে বরাবরই বেশ কিছু খবরের কাগজ আসত ইংরেজি বাংলা মিলিয়ে। এখন যা দু'টি কাগজই সীমাবদ্ধ। ভোরবেলা আব্বা নেটে বসেই বাদবাকি কাগজগুলো পড়ে নেন।
আমি শুধু সচলে নয় বিপ্লবদা, সর্বত্রই বেশ অনিয়মিত ইদানিং। তবে পোষ্ট না দিলেও পড়তে চেষ্টা করি আপনাদের সবার লেখাই। সব সময় হয়ে ওঠে না যদিও।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন সব সময়।
---------
অনেক সময় নীরবতা
ব লে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
আপনার লেখাটি পড়ে চিন্তা করে দেখলাম, গত কয়েক বছরে আমি মনিটরের স্ক্রিনে যতো লেখা পড়েছি, তার দশ ভাগের এক ভাগও পড়িনি কাগজের বই বা পত্রিকা হাতে ধরে। এটা ভালো কি খারাপ, জানি না। তবে এটাই বাস্তবতা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সন্ন্যাসি বাবু,অনেক ক্ষেত্রেই এটা বাস্তবতা হলেও এখনও এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বই-পত্রিকা হাতে করেই পড়তে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। নেট থেকে লেখা নামিয়ে প্রিন্ট নিয়ে লেখা পড়তে দেখেছি অনেককে। কারণ হিসেবে বলেন, 'নেটে পড়তে জুত পাই না।'
যারা বিদেশে থাকেন তাদের অবশ্য নেট থেকে পত্র-পত্রিকা পড়া ছাড়া খুব একটা উপায়ও নেই। পোষ্টাল সার্ভিসের খরচও তো কম নয়। আর সে সময় সাপেক্ষ ব্যপারও তো বটেই।
ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে দ্রুতগতির নেট 'সস্তা এন্ড টিকাও' মাধ্যম।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
নতুন মন্তব্য করুন