আমি বাগদত্তা, তোমরা আমার বিয়ে দিচ্ছ না কেন?

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: সোম, ১১/০২/২০০৮ - ৪:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রবিবার ছুটিরে দিনে সবই চলে আলস্যে ভর করে। বেলা ১২টায় নাশতা তো প্রায় বিকেলে দুপুরের খাওয়া। সেলফোনে কখন সংক্ষিপ্ত বার্তা এসেছে জানতে পারিনি। হঠাত্ সুমেরুর চীত্-কারে চমকে উঠি, বন্ধুবর শুভজিত বিয়ের নেমন্তন্ন পাঠিয়েছে সেলফোন মারফত সংক্ষিপ্ত বার্তায়। সে বম্বে থেকে ফিরছে ট্রেনে করে, ট্রেন থেকেই বিয়ের নেমন পাঠিয়েছে, "আগামীকাল আমার বিয়ে। বিশেষ কিছু বন্ধ-বান্ধব শুধু নিমন্ত্রিত, সন্ধেয় হাজির থাকবেন আর কোন গিফট আনিবেন না।" আমি নিজের ফোন সাথে সাথেই চেক করি, নেমন কী সু একলাই পেল? নাহ! আমিও পেয়েছি। একই মেসেজ এসেছে দেখা গেল। সাথে সাথেই ফোন গেল অন্য বন্ধুদের কাছে, ওরাও কী নেমন পেয়েছে? শুভর ফোন তখন নট রিচেবল।

জানা গেল, বেশ কয়েকজন একই মেসেজ পেয়েছে, তবে এই বার্ড ফ্লুয়ের সময় মুরগী হতে কেউই রাজী নয় বলে কেউই বিশ্বাস করতে রাজী হল না! ফোন গেল শুভেন্দু'দার নিকট, শুভেন্দু'দা শুভ'র বস, 'দৃক ইন্ডিয়া'র ডিরেক্টর। তিনি বললেন, আজকে তিনি শুভদের বাড়ি যাবেন, ফিফথ মে শুভর বোন তুন্নুর বিয়ে ঠিক হয়েছে, সেই বিষয়ে শুভ'র মা'য়ের সাথে কথা বলতে! শুভর কি কেস জানতে চাইলে বললেন, শুভর বিয়ের প্রোগ্রাম ঠিক হয়েছে, থার্ড মার্চ থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠানমালা, চলবে সেই টেনথ ডিসেম্বর অব্দি! ঢোক গিলে জানতে চাই, তার প্রপোজাল কী লেখা হয়েছে? জবাব এল, শুভ ফিরুক বম্বে থেকে, প্রপোজাল লেখা হয়েই যাবে, টাকা পয়সা স্যাংশান করাতে তো হবেই!

ফোন কেটে দিয়ে সুমেরুকে জিগাই, কি হচ্ছে এসব বলতো? আলাভোলা মুখে সে জবাব দেয়, কী করে বলব? রাত ১০টার দিকে ফোনে মেসেজ। শুভেন্দু'দা লিখেছেনম 'বাগেশ্বরী দেবীর আরাধনায় মত্ত ভক্তবৃন্দ, আগামী কাল সন্ধ্যা সাত ঘটিকায় 'বহু' আকাঙ্খিত, অবি-রামরত, এক প্রার্থনা সভায় ড্রিংক ইন্ডিয়ার দরবারে মিলিত হওয়ার অভিপ্রায় কর্মরত। আপনি সেই কর্ম তত্পরতায় সামিল হইলে ড্রিংক ইন্ডিয়া বাধিত থাকিবে। আশা করি আপনার সক্রিয় উপস্থিতি দেবীর আরাধনাকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলবে। প্রার্থনাযোগ্য দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে সামান্য কুমড়ো ও সজনে পরিবারভুক্ত ফুল থাকিবে যা যথেচ্ছভাবে আপনারা দেবীকে উৎসর্গ করিয়া নিজ মনোবাঞ্ছা পূরণ করিতে পারিবেন। এত সংক্ষিপ্ত সময়য়ের মধ্যে সহজভাবে নিমন্ত্রণের জন্য মার্জনীয়।'

আমি আবার ফোন করি শুভেন্দু'দাকে, কী করছেন, কেমন আছেন টাইপ খেজুর চলে খানিক। জানতে পারি, তিনি কাজ করছেন। বাজারে যা কুমড়োফুল পেয়েছেন সব নিয়ে এসেছেন, আজকে যদি না পান সেই ভয়ে। কে ভাজবে জানতে চাইলে বলেন, সে হয়ে যাবে। ফোন বন্ধ হয়। যথারীতি তখনও শুভ থাকে নট রিচেবল।

একটু আগে শুভকে ফোনে ধরা যায়, যেটুকু বোঝা গেছে, সে নেমেছে ট্রেন থেকে এবং বিবাহের কার্যাদি সম্পন্ন করছে কোথাও একটা। কন্যে কে তা এখনো রহস্যে আবৃত। হঠাত্ মনে পড়ল, কিছুদিন আগে চাঁদিপুরে বেড়াতে গিয়ে সবাই যখন ঝিনুকের তৈরি নানা দ্রব্য কেনা-কাটা করছে শুভ তখন কিনেছিল ছোট্ট এক সিঁদুর কৌটো! ধারণা করেছিলাম, তুন্নুর বিবাহ আসন্ন বলে ও‌ই সিঁদুর কৌটো কেনা হল!

মাতাল অবস্থায় ইদানিং শুভ প্রায়শই বলছিল, " আমি বাগদত্তা'। তোমরা আমার বিয়ে দিচ্ছ না কেন?

বোধ হইতেছে, বন্ধুগণের ভরসায় না থাকিয়া শুভজিত নিজের বিবাহ নিজেই সম্পন্ন করিতে কালীঘাটের দ্বারস্থ হইয়াছে!

সন্ধ্যা আসন্ন, অনতিবিলম্বে পর্দা উঠিবে নাটক হইতে। দেখা যাক কী হয়।।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখা যাক কী হয়

------------
মুহাম্মদ২০১৭

অনুভূতিশূন্য কেউ একজন এর ছবি

ক্যামনে কী?
মুরগী বানাইসে।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

তারপর?


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

খবর দিয়া যাইবা । নাইলে টেনশনে থাকমু ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

অ্যা!



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শেষমেশ কী হইছিলো? গল্পের নায়ক কি নায়িকাকে চিনতে পেরেছিলো নাকি বিশাল জংশনে দুজনে বিপরীত ট্রেনে চড়িয়া বসিয়াছিলো?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

শ্যাজা এর ছবি

প্রস্তুতি ছিল সম্পন্ন আর বন্ধুরাও সব ছিল হাজির। কুমড়োফুল ভাজা হয়েছিল সাথে ছিল আগমনী গান। ভদকা, হুইস্কি, রামের ঢালাও আয়োজন ছিল সকলের জন্যে। নতুন বধুর জন্যে ছিল রেড ওয়াইন। একের পর এক ভাজা হয়ে আসছিল তোপসে, ভেটকি আর সরপুঁটি-রা। হাঁড়িতে রান্না হচ্ছে রেওয়াজী খাসি আর নতুন আলু'র দম। রুটি আসবে বধুর আগমনের পরে।

অপেক্ষায় অপেক্ষায় প্রহর কেটে যায়। স্ব-বন্ধু শুভজিত কনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা। কনে বেরিয়ে আসে না। গাড়ির পেছনের সিটে পড়ে আছে নতুন কেনা স্যুটকেস, যাতে কনের জন্যে ঘুরে ঘুরে কেনা শাড়ি, জুতো আর আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি।

বন্ধুর বিয়ের উপযুক্ত সাজ পোষাকে সকল বন্ধুপত্নীগণ। যার জন্যে এত আয়োজন তারই দেখা নেই কেবল।

একফোঁটা মদ না খেয়েও শুভ টাল-মাটাল। নতুন কেনা পাঞ্জাবী, চুড়িদার, কোলাপুরি চপ্পল আর গলায় জড়ানো চাদর। লম্বা চুলের পনিটেল সহযোগে আক্ষরিক অর্থেই শুভ নতুন জামাই।

কনের মোবাইল সুইচড অফ। বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন বেজে যায় কেবল, কেউ তোলে না।

কনের শেষ মুহুর্তের বিশ্বাসঘাতকতায় শুভর প্রণয় পরিণয়ে রূপান্তরিত হয় না শেষ পর্যন্ত। যুদ্ধে পরাজিত হত-ক্লান্ত শুভজিত ঝুলন্ত কাঁধে ফেরত আসে, যেখানে সকলে অপেক্ষা করে আছে মন খারাপ মন খারাপ মন খারাপ


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অনেক সময় নীরবতা বলে দেয় অনেক কথা।

তারপরেও এমন শেষাংশ মেনে নেওয়া যায় না। ...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

শ্যাজা এর ছবি

হুমম..
মেনে নেওয়া যায় না ঠিকই কিন্তু মেনে না নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী! বর ভদ্রলোক আজকে রিতিমত অসুস্থ। সামলে উঠতে সময় লাগবে।

ঘটনার ভিতরেও অনেক ঘটনা থাকে, এখানেও নিশ্চয়ই আছে যা আমার জানা নেই।

শুভর বিয়ে নিয়ে উৎফুল্ল ছিলাম, ফাটা বেলুনের মত চুপসে আছি আজ সারাদিন।।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটা একটা কথা!!!!



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

শ্যাজা এর ছবি

সেই তো!!!


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বুঝলাম, রেহেল লাইন বহে সমান্তরাল, কেইস।
কোনো সমস্যা নাই।
বেটার লাক নেক্সট টাইম!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

toxoid_toxaemia এর ছবি

আহারে বেচারা, এইভাবে ছ্যাঁকা খেতে হবে ভাবতেই পারেনি। আমারও খারাপ লাগছে পড়ার পর।

~~ টক্স ~~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।