আশ-পাশটা একটু ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে জিনিসপত্র লজের কামরায় নামিয়ে রেখে ঝটপট বেরিয়ে পড়লাম, সূর্যাস্তের পরেও খানিকক্ষণ যে আলো-আঁধারি থাকে তাতে যেটুকু বা যা দেখা যায় আরকী ! সরু পীচরাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে বুঝতে পারলাম হালকা চড়াই বেয়ে উঠছি। দুপাশে তাকিয়ে দেখা গেল, রাস্তার দু ধারেরই জমি বেশ নিচু। গাছপালায় ঢাকা উঁচু-নিচু জমিকে এই আলো-আঁধারিতে জঙ্গল বলেই বোধ হয়। বেশ ভয় ভয় লাগে। ছোট ছোট সাইনবোর্ডের দেখা পাওয়া যায় ছোট্ট মোড়ের কাছে, যার বেশির ভাগই হোটেল-মোটেলের বিজ্ঞাপণ। সঙ্গী ভদ্রলোকের তৃষিত নয়ণ এদিক ওদিক খুঁজেই চলে প্রার্থিত একটি বিজ্ঞাপণের খোঁজে। মোড়ের মাথায় গাছের গায়ে লটকানো সেই বিজ্ঞাপণও চোখে পড়ে, 'বিদেশী মদ পাওয়া যায় এখানে' অ্যারো দিয়ে দিক নির্দেশনাও আছে আর দূরত্বের পরিমাপও আছে তাতে, ৩কিলোমিটার! আজ্ঞে হ্যাঁ, ভদ্রলোক মদের দোকানের খোঁজেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলেন তবে বেশ দমে গেলেন ওই তিন কিলোমিটার দেখে।
রাস্তার দু'ধারে ছোট ছোট সব দোকান, নানারকমের পসরা তাতে। ঝিনুকের তৈরি নানা জিনিস, টেরকোটার অজস্র সৌখিন গৃহসজ্জার জিনিস থেকে নিয়ে নানা রকমের গয়না, বাঁকুড়ার বিখ্যাত পোড়ামাটির ঘোড়ারা সারসার দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সব দোকানেরই সামনে। বেনারসি পানের দোকান থেকে নিয়ে মুড়ি-তেলেভাজার দোকানেরও কমতি নেই। সব দোকানেই জ্বলছে ঝলমলে বিজলি বাতি। আরেকটা জিনিস দেখলাম সব দোকানেই আছে, ক্যামেরার রোল। প্রতিটি দোকানেই ছোট্ট বোর্ডে লেখা আছে, এখানে সাদা-কালো ও রঙীন ক্যামেরার রোল পাওয়া যায়। অভাব নেই ঠান্ডা পানীয়েরও। মাইকে বাজছে হিন্দী গান। মাইকের খোঁজে এদিক-ওদিক তাকাতে চোখে পড়ল, রাস্তার ধারে ত্রিপল বিছিয়ে ঢেলে বিক্রি হচ্ছে সব সিডি-ক্যাসেট। মাইক বাজিয়ে শোনানো হচ্ছে লেটেষ্ট হিন্দী গান, যা ষ্টকে আছে দোকানীর।
দোকানের সারি পেরিয়ে খানিক দূরেই রাস্তা আটকে রেখেছে লাল-সাদা লোহার পোল, রেললাইনের লেভেল ক্রসিংএ যেমনটি থাকে। ঝকঝকে তকতকে ওই রাস্তার দুই ধারে ল্যাম্পপোষ্টের সারি, যাতে ইতিমধ্যেই জ্বলতে শুরু করেছে সোডিয়াম বাতি। সন্ধ্যার অন্ধকার তখনো ঘনায়নি, আধো আধো আলো আঁধারির মাঝে জ্বলছে অনুজ্জ্বল মরাটে হলদে বাতি।
ডানদিকে চোখ পড়তেই দৃষ্টি আটকালো দিগন্তজোড়া জলে। এই ঘনায়মান সন্ধ্যায় জলের রঙ কালচে। দূরে দেখা যায় জলের মাঝে জ্বলছে টিমটিমে বাতির সারি। ধারণা করি, হয়তো ওদিকেও আছে এমনই কোন এক রাস্তা। মুগ্ধ, অভিভূত চোখে তাকিয়ে থাকি জলের দিকে। মৃদু-মন্দ ঢেউ বোঝা যায় এই আঁধারেও। প্রাকৃতিক কোন লেক হবে এটা।! দিগন্তবিস্তৃত ওই জলের দিকে তাকিয়ে নিমেষেই কেটে যায় ক্লান্তি, উবে যায় ভোর থেকে নিয়ে সারাদিনের এই হ্যাপা আর ধকল।
বরাবরই জল আমার ভাল লাগে। পাহাড় না সমুদ্র কেউ জিজ্ঞেস করলে সাগরকে বেছে নিতে আমার একটুও সময় লাগে না। জলের কাছে এলে আমি সবকিছু ভুলে যাই মুহুর্তে। বিস্তৃত জলের সামনে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হয়। অস্তিত্ব হারায় ছোট-বড় সমস্যারা সব। অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে পলকেই মন ভরে যায়। জলের ধারে চুপচাপ বসে থাকতে পারি ঘন্টার পর ঘন্টা। সে সাগর হোক বা নদী। কিংবা গাছে ঢাকা আমাদের গ্রামের ছায়া ছায়া শানবাঁধানো সেই পুকুর। কিচ্ছুটি না করে শুধু জলের দিকে তাকিয়ে থেকেই কাটিয়ে দিতে পারি গোটা একটা দিন।
আশে পাশে কেউ নেই যাকে জিজ্ঞেস করা যায় এটি লেক নাকি পাহাড়ী কোন নদী। হেঁটে যাই রাস্তা ধরে, অন্ধকার ঘন হয়, জলের উপর বিছিয়ে আছে কুয়াশা। নিস্তব্ধ চরাচর। জলের সরসর শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই। এমনকি ডাকে না একটি পাখিও। যেন সকলেই চুপ করে দেখছে শান্ত এই প্রকৃতির রূপ। রাস্তার অন্যদিকে অনেক নিচুতে আবছা দেখা যায় খোলা মাঠ, দূরে পাহাড়ী গাঁয়ে জমাট বেঁধে আছে অন্ধকার। চাদর ভেদ করে ঠান্ডা কামড় বসায় গায়ে। ফেরার পথ ধরি, কাল সকালে এখানেই আবার ফিরব বলে...
মন্তব্য
সংক্ষিপ্ত কিন্তু চমৎকার লেখা। ! ছবি দিন না প্লিজ।...
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ছবি দিতে পারছি না বিপ্লব'দা। ছবির আকারে সমস্যা। ফটোর দুকানে ফ্যালাইয়া সাইজ করতে হইব আমি যার কিছুই পারি না, যিনি পারেন তিনি চরম ব্যস্ত
আপনাকে ধন্যবাদ।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
ছবি দিতেই হবে-১ দফা, ১ দাবি।
লেখা ভাল হয়েছে।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ছবি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি...
ধন্যবাদ অনেক।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
কোথায় ছবি?
জবাব চাও!!!
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
নতুন মন্তব্য করুন