নীলু যখন জানতে পারে সন্তান ধারণে তার সমস্যা আছে ততদিনে তার বিয়ের বয়স দশ বছর পার। বিয়ের প্রথম কয়েক বছর সে নিজেও সন্তান চায়নি, পলুর পড়াশোনা, তার নিজের চাকরী, বাপের বাড়িতে সমস্যা, শ্বশুর বাড়িতে সমস্যা সব মিলিয়ে নীলু আর পলু ঠিক করেছিল যখন সব ঠিক হয়ে যাবে, পলুর চাকরী হয়ে যাবে, নীলু নিজের পড়াশোনা শেষ করবে তারপরেই তাদের বাচ্চাকে তারা আনবে পৃথিবীতে। জীবনের সব হিসেব যেমন মেলে না নীলু আর পলুর এই হিসেবও মেলেনি।
পলু হাকিম হয়েছে, নীলুর বাবা মেয়ের বিয়ে মেনে নিয়ে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছেন। মা মরা একমাত্র মেয়েকে কতকাল আড় নিজের থেকে দূরে রাখবেন তিনি। শ্বশুরমশাইয়ের স্বপ্নও পূরণ হয়েছে, ছেলে তার হাকিম হয়েছে। ঢাকায় নীলু থাকে একটা ভাড়াটে বাড়িতেপলুর পোষ্টিং নারায়ণগঞ্জে। স্কুলের চাকরী করাকালীন নীলু আরেকটা কাজ করত, গার্মেন্টস ফ্যাকট্রিতে একটা পার্ট টাইম চাকরী। তো পলু যখন চাকরী পেয়ে গেল, নীলু তার চাকরী-বাকরি ছেড়ে দিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ফেরত গেল। মাষ্টার্স কম্পলিট করে নীলু ঢাকায় এসে একটা ছোট কারখানা দিল, সুতোর। যে সুতো গার্মেন্টস ফ্যকট্রিতে লাগে। বিদেশ থেকে বান্ডিল বান্ডিল সুতো আসে, নীলুর ছোট্ট কারখানায় সেই সুতো ছোট ছোট রীলে ঢুকে বাক্সবন্দী অবস্থায় বাজারে যায়। ছোট হলেও ব্যবসা মন্দ না। নীলুর সময়ও কেটে যায়। কোন সপ্তাহান্তে নীলু যায় নারায়ণগঞ্জে তো কোন সপ্তাহান্তে পলু আসে ঢাকায়। নীলুর শ্বশুর, দেওর থাকে নীলুর কাছে। মাঝে মাঝে বাবাও আসেন। জীবনের গতি বেশ মসৃণ।
সব যখন স্থিত হয়ে আসে নীলু তখন মা হতে চায়। কিন্তু চাইলেই কী সব হয়! নীলুর মা হওয়া হয় না। ডাক্তার -বদ্যি -কবিরাজ -হোমিওপ্যাথি-টোটকা- তাবিজ সব হয়ে যায়। কিছুতেই কিছু হয় না। নীলুর শরীরে এমন কিছু অসুবিধে আছে যার জন্যে সে মা হতেই পারবে না। আত্মীয়-স্বজনরা পরামর্শ দিলেন, কলকাতা যাও, ওখানে বড় বড় সব ডাক্তার আছে, কিছু একটা হবেই ওখানে গেলে। দরকার হলে টেষ্ট টিউব বেবি নিয়ে নাও। নীলু পলু দুজনেই কলকাতায় আসে, যায় ডাক্তার বৈদ্যনাথ চক্রবর্তীর কাছে। চীকিৎসায় সাড়া দেয় নীলু, সন্তান সম্ভাবনা হয় তার। নিশ্চিন্ত, খুশি মনে দেশে ফিরে যায় নীলু। কিন্তু নীলুর জীবনে আরো অনেক ঘটনা ঘটার ছিল। ৩ মাসের সময় গর্ভপাত হয় নীলুর। সেই ধাক্কা সামলে নিয়ে নীলু আবার কলকাতায় আসে। কিন্তু নীলুর আর গর্ভ সঞ্চার হয় না। পাগলের মত নীলু দৌড়ে বেড়ায় ঢাকা-কলকাতা আর ঢাকায়। বুড়ো বাবাকে নিয়ে মাসের পর মাস পরে থাকে কলকাতায়। কিছুতেই কিছু হয় না।
সেবার নীলু দু'মাস কলকাতায় থেকে ঢাকা ফিরে যায়। ঢাকায় পৌঁছোয় সে ভোরবেলা, যাওয়ার খবর না দিয়েই নীলু ফিরে গিয়েছিল ঢাকায়, নিজের বাড়িতে। ডোরবেল বাজাতে পলু এসে দরজা খুলে দেয় আর নীলুকে দেখে চমকে ওঠে। পলুর চমকানো খেয়াল না করে নীলু ঘরে ঢুকে যায় ততক্ষণে নীলুর বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে নাইটগাউন পরা অল্প বয়েসী একটি মেয়ে। নীলুকে দেখেই যে ষ্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে দরজায়। নীলু চিনতে পারে মেয়েটিকে, নারায়ণগঞ্জে পলুর কোয়ার্টারের পাশের কোয়ার্টারেই থাকে মেয়েটি, ম্যাজিষ্ট্রেটের বউ।
ভাল করে তাকিয়ে দেখে নীলু পলুর দিকে, খালি গায়ের পলুর পরনে শুধু একটি লুঙ্গি। মেয়েটি সাত-আট মাসের অন্ত:সত্বা। পলকেই হাজরটা ভাবনা আসে নীলুর মাথায় কিন্তু তবুও নীলু যেন কিছুই বুঝতে পারে না। স্যুটকেস হাত থেকে নামিয়ে রেখে পাশেই বসে পরে নীলু। পলু ততক্ষণে খানিকটা সামলে নিয়েছে নিজেকে, বলে, নীলু, তুমি ওঠো, ভেতরে চলো, আমি তোমাকে বলছি সব। মেয়েটি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েই থাকে। কাউকে কিছু না বলে নীলু উঠে নিজের ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়, তাকায় ভেতরে, বিছানার পাশেই অগোছালো হয়ে পড়ে আছে খুলে রাখা শাড়ি, ব্লাউজ। পলুর শার্ট প্যান্ট। পেছন ফিরে নীলু জানতে চায় শ্বশুরের কথা, আব্বা কোথায়? পলু জবাব দেয়, আব্বা বাড়িতে গেছেন।
নীলু নিজের স্যুটকেস নিয়ে উল্টোপায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় পলুর শত ডাক অগ্রাহ্য করে। নীলু গিয়ে ওঠে তারই এক খালাতো বোনের বাসায়, যিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন অধ্যাপিকা, স্ত্রীরোগ বিষয়ের। তার কাছ থেকে নীলু জানতে পারে, ওই মেয়েটিকে পলু লুকিয়ে বিয়ে করেছে অনেকদিন। প্রেম চলছিল তারও অনেক আগে থেকেই, একদিন অশালীন অবস্থায় তাদের দুজনকে দেখতে পেয়ে মেয়েটির স্বামী তালাক দেয় মেয়েটিকে। তারপর থেকে সে পলুর কাছেই থাক, পলুর কোয়ার্টারে। সেই ম্যাজিষ্ট্রেট ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেছে অন্য কোথাও। নীলু ঢাকায় না থাকলেই মেয়েটিকে পলু তার বাড়িতে নিয়ে আসে, দুজনে থাকে নীলুরই ঘরে, তারই বেডরুমে। আত্মীয় স্বজনেরা এতদিনে মোটামুটি সবাই জেনেই গেছে পলুর দ্বিতীয়বার দ্বার পরিগ্রহের কথা। জানত না শুধু নীলু। বাচ্চা বাচ্চা করে নানান জায়গায় ছোটাছুটি, মাসের পর মাস কলকাতায় এসে থাকা, ডাক্তার দেখানো, চীকিৎসা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত নীলু জানতেই পারেনি কখন তার বাসরে চোর ঢুকেছে আর চুরি করে নিয়ে গেছে তার জন্মের ধন, তার সবচাইতে মূল্যবান পলুপাখি।
( এবারেও শেষ করা গেল না)
মন্তব্য
চিরন্তন বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী। বাস্তব থেকে তুলে নেয়া। আগের পর্বও পড়ে নিলাম। শেষাংশের অপেক্ষায় রইলাম।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
হায় প্রেম!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
কিছু বলার নাই
পড়ছি...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
মন আরো খারাপ করে দ্যান।
তাড়াতাড়ি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ইসস ... ভালবাসা বলতে আসলেই কিছু নেই। সব অল্প সময়ের ইমোসন। ইমোসন চলে গেলেই সবাই সব কিছু করতে পারে।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
নতুন মন্তব্য করুন