-২-
সে রাতের ট্রেনযাত্রা সত্যিই খুব মজার ছিল। আমি আমার তেনাকে খুব মিস করছিলাম, আর যাই হোক তাকে কলকাতাতেই রেখে দিয়ে আমি তারই বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাচ্ছি আর বেচারা এখানে সকাল থেকে রাত কখনো বা এক সকাল থেকে পরেরদিন রাত অব্দি কাজ করছে, অপরাধবোধ তো হবেই! আমারও হচ্ছিল, বারে বারেই এসএমএস করছিলাম। ফোনও করছিলাম খানিক পরে পরেই। আমার খারাপ লাগছে বুঝতে পেরেই বোধ হয় বলে, বেড়ানো এঞ্জয় কর!
শুক্লার আবার সেই প্রথম রাত্রিকালীন ট্রেনযাত্রা বিধায় সে প্রবল উৎসাহে জানালার বাইরে চোখ রেখে ঠায় বসে। রাতের অন্ধকারে ছো্ট কোন খাল দেখা গেলেও ওই দ্যাখ গঙ্গা দেখা যায় বলে মাঝে মাঝেই শুক্লাকে গঙ্গাদর্শন করাচ্ছিল শুভ! শুক্লা বয়সে সকলের ছোট আর খুব হাসিখুশি এক মেয়ে। সবেতেই সে প্রবল মজা পায় আর মন খুলে হাসে হা হা করে। একবার তো সে বাইরের অন্ধকারে খালকেই গঙ্গা বিশ্বাসও করে ফেলল। শুভ, নীলু (নীলায়ণ) আর তথা তাদের রেডিমিক্স উপভোগ করছে, সাথে সিগারেট। ভর সন্ধেতে আলো জ্বলা ট্রেনের কামরায় ৯জনের এক ডিব্বাতে পাঁচজন মানুষের হুল্লোড় চলে ক্রমাগত। দ্রুত হাতবদল হয় সিগারেট এদিক ওদিক দেখে নিয়ে, টিটি আসছে কিনা, অন্য কোন যাত্রী টয়লেটে যাবে বলে এদিকে আসছে কিনা। কারও আসার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ামাত্রই সিগারেট সহ হাত জানালার বাইরে। কেন কে জানে সেদিনের অত হুল্লোড়েও অন্য কোন যাত্রী কোন আপত্তি করেনি বা কোন অভিযোগ করেনি। যা করাই খুব স্বাভাবিক ছিল।
পাশের কম্পার্টমেন্টে শুভর জ্যেঠুর ছেলে শুভ্র ছিল, সে মাঝে মাঝেই উঠে এসে এই কামরার আড্ডায় বসছিল। এই আড্ডা ফেলে কতক্ষণ আর বাবা-কাকাদের সাথে বসে থাকা যায়! রাতে শোওয়ার সময় শুক্লা আর আমাকে বলা হল আপার বার্থে গিয়ে শুতে, আমার সেটাই নিরাপদ বলে বোধ হলেও শুক্লা কিছুতেই উপরে চড়তে রাজী নয়, তার ভয়, সে ঘুমের মধ্যে ঠিক নিচে পড়ে যাবে উপরের বাঙ্ক থেকে! অগত্যা পুরুষেরা সব মিডল আর আপার বার্থে, প্রমীলাবাহিনী লোয়ার বার্থে। কারো সাথেই বিছানা বালিশের কোন বন্দোবস্ত নেই (থাকেও না সাধারণত)। টুকিটাকি জিনিসপত্র সহ পিঠে ঝোলানো স্যাক রাতের বেলা হয়ে যায় বালিশ। নিজের নিজের বার্থে সকলেই শুয়ে পড়ে সাড়ে বারোটা নাগাদ।
নীলু, শুভ খুব বেশিক্ষণ জেগে থাকার মত অবস্থাতেও ছিল না। ওদের দুজনারই প্রবল নাসিকা গর্জন আসতেও সময় লাগে না। জলতেষ্টা পায় আমার, কিন্তু খাব কী? মিনারেল ওয়াটারের সব কটা বোতল খালি! রেডিমিক্সের পরে আর মিক্স রেডি করতে গিয়ে এক লিটারের একডজন মিনারেল ওয়াটার খাল্লাস! সীটের তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সবকটি খালি বোতল। সীটের এক কোনায় বসে ঢুলতে থাকা তথাকে বলি, জলের ব্যবস্থা কর যেভাবেই হোক। কিন্তু তথা কোথা থেকে ব্যবস্থা করবে? জানলার পাশে এসে বসে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে, অপেক্ষা, ষ্টেশন এলে নেমে গিয়ে খাওয়ার পানি কিনবে। শুক্লা সীটের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে কোলের কাছে জাপটে ধরে রাখে নীলুর ব্যাগ (বলা বাহল্য যে ওটি নীলুর ক্যামেরার ব্যাগ) আর মাথা জানলার দিকে তুলে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। তথার বাক্যে; উটপাখির মত গলা বাড়িয়ে বাইরের অন্ধকার দেখে শুক্লা । কি দেখে কে জানে। বাইরে প্রবল বৃষ্টি ঝরে পড়তে থাকে অবিরত।
আমি ঘুমানোর চেষ্টা করি। এপাশ ওপাশ ( যেটুকু করা যার আরকি) করি ঘুম না আসায়। চোখ লেগে আসে। চমকে চমকে উঠি খানিক পরপরই। অজনা ভয়ে চোখের পাতা এক হয় না। জেগে আছে শুক্লাও, জানালার বাইরে চোখ রেখে ঠায় মাথা উঁচিয়ে রেখে জেগে আছে শুক্লা। বলি, ঘাড় ব্যথা করে না তোর? ঘুমো না এবার! ঘুমচোখে হাসে শুক্লা, জানোতো, জীবনে প্রথমবার রাতের ট্রেনে কোথাও যাচ্ছি, দারুণ লাগছে, ঘুমুতে ইচ্ছে করছে না একটুও! অথচ এই শুক্লাই যে কোন জায়গায় যে কোন সময় বসে বসেই দিব্যি ঘুমিয়ে নেয় পাশে বসে থাকা মানুষটির কাঁধে মাথা রেখে। কখনো বা গুটিসুটি মেরে ঠিক একটুখানি শোওয়ার জায়গা বানিয়ে নিয়ে পাশের লোকের কোলে মাথা রেখে বেখবর ঘুমোয়। পাশে বসে থাকা মানুষটি যে সব সময় নীলুই হয় তা নয়, কোন বন্ধু বা সহযাত্রী যে কেউ হতে পারে সে। আজ জেগে থাকে শুক্লা। জানালার কাঁচ বেয়ে গড়িয়ে নেমে যেতেই থাকে অঝোর বৃষ্টির ধারা...
-চলবে-
মন্তব্য
এই কথাগুলো ছাড়া লেখাটা ভালো লেগেছে ঃ-)।
নন্দিনী
নন্দিনী,
ভাল লাগা -না লাগাটুকু জানিয়েছেন, ধন্যবাদ।
ওই কথাগুলো কেন খারাপ লেগেছে জানালে আরও খুশি হতাম। আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
চলুক। তবে আরেকটু তাড়াতাড়ি চলুক।
----------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ কীর্তিনাশা।
চেষ্টা করব একটু তাড়াতাড়ি লিখতে।
আসলে লিখতে বসলেও অনেক সময় লেখা হয় না। পড়েই সময় কেটে যায়..
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
নাহ্... এবার ওদিকটায় যেতেই হবে... মন টানছে... সেদিন অমিতদার সাথে কথা হলো ইয়াহুতে... তারও আহ্বান... সাথে তো আপনার এই জার্নি বাই ট্রেন আছেই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঘুরেই যান..
ডিসেম্বর -জানুয়ারীতে আমাদেরও যাওয়ার প্ল্যান আছে আরেকবার। আপনারা প্ল্যান-প্রোগ্রাম ঠিক করেন, সময় মিললে আমরাও জুটে যেতে পারি
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
৪ বছর আগে আমরা দিল্লি থেকে রাতের ট্রেনে কলকাতা আসি, কেমন জার্নি দেখার জন্য, সবাই ইনজয় করলেও আমার প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে যায় উপরের বান্কে থেকে, যাইহোক আপনার এ লেখাটা বেশি তারাতারি শেষ হয়ে গেল
তারপর ....
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শ্যাজা আপু, তোমার লেখাটা আজকেই পড়লাম।শুক্লার কথা শুনে বেশ মজা পেয়েছি।নন্দিনী হয়তো মেয়েদের ছোট করা হয়েছে মনে করছেন, জানিনা কেন!!! হাইট ফোবিয়ার কথাটাও তো মাথায় রাখতে হবে।উপরের বার্থে আমি ঘুমানো তো দূরের কথা ঠায় বসে থাকি আমার আবার শোয়া বিশেষ ভাল কিনা তাই মাঝে মাঝে বিছানায় ঘুমালেও সকালে উঠে মেঝেতে পাওয়া যায়।উঁচু বার্থকে কিভাবে ভরসা করি বল !!
জম্পেশ যাত্রা
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন