আপকো দেখকর তো যমীন ডর জায়েগী, আপ যমীন সে কিউ ডরতি হ্যায়!!

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৮/২০০৮ - ৭:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-৫-

যে গাড়িটির সামনে এসে দাড়ালাম সেটিও একটি স্করপিও। তবে কালকের গাড়িটি নয়। ড্রাইভারও দেখলাম নতুন। এগিয়ে এসে সবাইকে নত হয়ে অভিবাদন জানিয়ে নিজের পরিচয় দিল মুহাম্মদ রফিক বলে। বলল, তাড়াতাড়ি চলুন, আপনারা এমনিতেই দেরি করে দিয়েছেন! হিন্দিতে কথা বলছিল, জিজ্ঞেস করে জানলাম, শিলিগুড়িতেই জন্ম, বড় হওয়া। তবে আদিপুরুষেরা ইউপি থেকে এসেছিলেন। সামনের সিটে তথা আর নীলু গিয়ে বসল, মাঝের প্রথমে শুভ, মাঝে আমি আর একপাশে শুক্লা। বলা বাহুল্য আমি ইচ্ছে করেই মাঝখানে গিয়ে বসলাম। শুভ বলল, গাড়ি যদি পড়ে তো তুমি কি মাঝখানে বসে বেঁচে যাবে নাকি? কান না দিয়ে চুপ করে বসি আর মনে মনে সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করি। টুকটাক কথা বলছে সবাই। বেশিরভাগই পাহাড়ের কথা। তথা দার্জিলিং সেন্ট পলসের ছাত্র। শুভ শিলিগুড়ি ডন বস্কো'র। কাজেই ওদের কাছে অফুরন্ত গল্প। আমাদের আজকের ড্রাইভারটি চুপচাপ বসে শুধু গাড়ি চালায় না কালকের ড্রাইভারের মত। সে বেশ কথা বলে সকলের সাথে। গাড়ি শিলিগুড়ি ছাড়ানোর আগে একটা ট্র্যাফিকে দাঁড়ানোতে আমি দেখলাম কয়েকজন হকার মাথার ঝাঁকায় করে লিচু বিক্রি করেছে। সবুজ লালে মেশানো লিচু। আমার তখনও এই মরশুমের লিচু খাওয়া হয়নি বিধায় বায়না ধরলাম লিচু খাব বলে! শুভ এক ধমক দিল, এই মেয়েটা খালি খাই খাই করে, কালও মোমো খাব মোমো খাব করে পাগলা বানিয়ে দিয়েছে! চুপ করে বস! খানিক বাদেই তো চুপ করে যাব আমি, বলে ব্যাজার মুখে চুপই করে গেলাম! ভাল ছেলে নীলু লিচুওয়ালাকে ডেকে লিচু কিনল আর আমি মন দিয়ে বসে লিচু খেতে লাগলাম।

গাড়ি আবার পাহাড়ের দিকে। আর আজকের রাস্তা কালকের থেকেও ভয়ংকর! আমাদের ড্রাইভারটি অদ্ভুত। সে বাঁকের মুখেও গাড়ির হর্ন বাজায় না। পাহাড়ের গায়ের ছায়া দেখে নাকি বুঝতে পারে, ওপর থেকে কোন গাড়ি নেমে আসছে কিনা! হাত পা ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল ওর এই হর্ণ না বাজানো দেখেই। গাড়িও প্রচন্ড স্পীডে চালায়, বলে আমি রোজ এই রাস্তায় পাহাড়ে উঠি আর নামি, প্রাণের ভয় আমারও আছে, একটা ছেলে আছে আমার, মরতে আমিও চাই না। কাজেই আপনারা ভয় পাবেন না। শুক্লা একটু বেশিই চেঁচামেচি করছিল ভয়েতে তাই ও‌ই ভাষণ মুহাম্মদ রফিকের। খানিকটা ওঠার পরেই পুরুষেরা গাড়ি থামাতে বললেন, তারা ছোট প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে যাবেন! রফিক গাড়ি দাঁড় করাল একটা সাইড ধরে, পুরুষেরা আড়ালে চলে গেলেন। আমি আর শুক্লা গাড়িতে বসে পাশের খাদ আর দূরের তরাই দেখছি, পাহাড়ের গায়ে দূরে দূরে ছোট ছোট গ্রাম দেখা যায়। থাকে থাকে চায়ের গাছেরা উঠে গেছে পাহাড় বেয়ে। এখানে চা বাগানে কোন সেড ট্রি নেই। রফিক বলল, রোদ তো লাগে না খুব একটা। ঠান্ডা জায়গা, শেড ট্রি'র দরকারই নেই। সমতলের বাগানগুলোতে শেড ট্রি আছে, আসার পথে নিজেই দেখে এসেছি। মন দিয়ে দেখছিলাম আর শুক্লার সাথে কথা বলছিলাম। আমাদের দু'জনকেই চমকে দিয়ে মুহাম্মদ রফিক আমার দিকে তাকিয়ে বল; ওঠে, ' আপ মুসলিম হ্যায় না?' আপনি মুসলিম না? শুক্লা সাথে সাথেই জানতে চায়, তুমি কি করে বুঝলে? রফিকের ত্বরিত জবাব, মুসলমানকা চেহরে পে এক আলগই হি রওনক হোতি হ্যায়! ইনার চেহারা দেখলেই বোঝা যায় যে উনি মুসলিম! আমি সত্যিই থ! কথা বাড়াই না আর। শুক্লাও চুপ করে গেছে। আমার পাশে বসা অনিন্দ্যসুন্দরী শুক্লাকে দেখার পরও কেউ আমার চেহারায় রওনক দেখতে পায় আর মুসলিম বলে শনাক্ত করে! চুপ তো হয়ে যাওয়ারই কথা।

গাড়ি এগোয়। এক অদ্ভুত নিয়ম পাহাড়ে। এখানে কেউ অকারণ হর্ণ বাজায় না। কেউ কাউকে ওভারটেক করার চেষ্টাও করে না। নেমে আসা গাড়িটিকে পাশ দেয় নিজে খাদের ধারে চলে গিয়ে। যে গাড়িটি উঠছে সে খাডের ধারে চলে যায় আর যে নামছে সে পাহাড়ের গা ঘেঁষে নামে। রফিক দুর্দান্ত গাড়ি চালায়। সে জানাল, গতকাল সে নাকি একটি হর্ণ নষ্ট গাড়ি নিয়ে পাহাড় থেকে নেমেছে। বলল, হর্ণ থাকলেই অসুবিধে। না থাকলে নিশ্চিন্তে গাড়ি চালানো যায়। আমি শক্ত হয়ে বসে থাকি সামনের সিটটিকে দুহাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি উপরে ওঠে। শুভ মাঝে মাঝে আমাকে বলে, সিটটা ছিঁড়ে যাবে যে! শুক্লা একবার চেঁচিয়ে উঠে ধমক খেয়েছে রফিকের কাছে, রফিক বলেছে, আপনারা এরকম করলে কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট হবেই! হাজার পাঁচেক ফিট উপরে ওঠার পরে থেকেই পাহাড়ী গ্রাম দেখা যেতে লাগল। ছোট ছোট গ্রাম। পাহাড়ের ঢালে ঢালে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পাহাড়ী ছাগলের মত রাস্তা ছেঁড়ে পাহাড় বেয়ে উপরে উঠছে। স্কুলযাত্রী স্মেয়েরা সালোয়ার কামিজ আর ওড়নার ইউনিফর্মে দল বেঁধে পথ হাঁটছে। মহিলারা মাথায় কুড়িয়ে আনা ডালের আঁটি নিয়ে খাদের ধার দিয়ে পথ চলছেন। নেপালী চেহারা, নেপালী পোষাক। বাচ্চাগুলো খেলছে রাস্তার ধারে ধারে। রেলিংএ বসে গল্প করছে জোড়ায় জোড়ায় পাহাড়ী যুবক-যুবতী। কোথাও বা বয়স্ক কয়েকজন মানুষ বসে আড্ডা দিচ্ছেন রাস্তার ধারের একটুখানি শেডের তলায় বসে। ওদের দেখে, এতসব দেখেও আমি সাহস সঞ্চয় করতে পারলাম না, একটু রিল্যাক্সড হয়ে বসে দুপাশের দৃশ্য দেখার!

মিরিক যখন আর হাজার খানেক ফুট উপরে, তখন রফিক গাড়ি হঠাৎ করেই দাঁড় করালো একটা জায়গায়। দুম করে খাদের ধারে নিয়ে গিয়ে আচমকা ব্রেক। ও মাগো ও ও বলে শুক্লার কান ফাটানো চীৎকারে রফিক ক্ষেপেই গেল এবার। কি হল? কি হল? আপনি চেঁচালেন কেন ওরকম করে? নীলু বোঝানোর চেষ্টা করে রফিককে, প্রথমবার পাহাড়ে চড়া তো, ভয় পেয়ে গেছে! শুক্লা ভেবেছিল রফিক বোধ হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে গাড়ির। সকলেই একে একে নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। রফিক জানাল, এটা একটা সানসেট পয়েন্ট। এখান থেকে সবচেয়ে ভাল দেখা যায় সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়। খানিক নেমে ঘুরে ফিরে দেখে নিন সবাই। যে বাঁকটি ঘুরে গাড়িটি এসে দাঁড়াল, সেখানে একটা জায়গা বানানো আছে। কয়েক থাক সিঁড়ি বেয়ে একটা খোলা হলমত জায়গা। মাথার উপর ছাদ, চারপাশ খোলা। সকলেই একে একে গিয়ে উঠে পড়লে সেখানে। আমি কিছুতেই খাদের ধারের ও‌ই পয়েন্টে যাব না। দাঁড়িয়ে থাকি গাড়ির গা ঘেঁষেই রাস্তার উল্টোদিকে গিয়ে ছবি তুলি, যেটুকু আসে আর কি পাহাড়ের ধার থেকে। চারপাশের দৃশ্য দেখে বাক্যহারা আমি। বর্ণনা করে বোঝাবো সে সাধ্য আমার নেই। রফিক এগিয়ে এসে বলে, এখানে এসেও আপনি দেখবেন না? চলুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি, দেখুন, কিছু হবে না। হাত ধরে রফিক নিয়ে যায় সেই সানসেট পয়েন্টে। সিঁড়ি বেয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে যাই সেখানে। রফিক দেখায়, ও‌ই দেখুন, লোকে এর ছাদে উঠে বসে আছে! তথা আর শুভ'র কানে কানে শুক্লা ততক্ষণে সেই 'রওনক'এর কথা বলে দিয়েছে আর তারপর আমাকে হাত ধরে ওখেন নিয়ে যাওয়া দেখে সকলেই নতুন খোরাক পায়। আমি পাত্তা দিই না।

দূরে পাহাড়ী গ্রামদূরে পাহাড়ী গ্রাম

যতদূর চোখ যায় কালচে সবুজে ঢাকা পাহাড়। দূরে দূরে পাহাড়ি গ্রাম সব পাহাড়ের ঢালে ঢালে। নাম না জানা সব লম্বা লম্বা গাছেরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কালচে সবুজ তাদের রং। বিশাল বিশাল সব চারপেয়ে খাম্বা বিছিয়ে আছে পাহাড়ের গায়ে গায়ে, বিদ্যুতের তার বেয়ে আধুনিকতার আলো এসেছে পাহাড়ে। কবে কে নিয়ে এসেছে এসব? কে এভাবে পাহাড় কেটে কেটে রাস্তা বানিয়েছে? কত প্রাণ হয়তো গেছে এই রাস্তা বানাতে গিয়ে, পাহাড়ের গায়ে ও‌ই অতিকায় সব খাম্বা বসাতে গিয়ে। রাস্তার ধারে ধারে সব মিশনারী স্কুল। সাদা শার্ট আর রংবাহারী স্কার্ট পরা পাহাড়ি মেয়েরা কলকাকলি করে স্কুলের সামনে। তাদের মাখনের মত মসৃণ আর ফর্সা রঙে জেল্লা বাড়ায় রঙীন স্কার্ট। আমি অবাক বিস্ময়ে শুধু দেখি। কে কি বলে যায় কানে আসে না। মাঝে মাঝে কানে আছড়ে পড়ে সমবেত হাসির শব্দ।

রফিক বলে, চলুন এবার, দেরী হয়ে যাচ্ছে। এবার শুক্লা সামনে গিয়ে বসে নীলুর কাছে, তথা পেছনে আসে শুক্লার জায়গায় আর আমি আগের মতই মাঝখানে। ভয়টা যেন একটু একটু করে কমছে আমার। এখান থেকে রাস্তা মাঝে মাঝেই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছে। আবার হঠাৎ করেই দেখা যায়, পাহাড়ের একেবারে গায়ে এক বাঁক, বাঁক ঘুরে রাস্তা আর এপাশে গভীর খাদ! রোদ নেই একেবারেই। ছায়া ছায়া এক সবুজ ঠান্ডা এখানে। এই দুপুরবেলাতে শীত না লাগলেও বোঝা যায়, খানিক বাদেই নামবে হিম ঠান্ডা। গাছেদের রং দেখে মনে হল, এখানে কখনো‌ই হয়তো রোদ আসে না! দেবদারু আর পাইনের মাথা উঁচু বনের মাঝখান দিয়ে রাস্তা। বুঝতে পারি, পৌঁছে গেছি মিরিক। গাড়ি যেন হঠাৎ করেই এক শহরে ঢুকে গেল, পাহাড়ী শহর। রঙীন সব ঘর-বাড়ি। রঙীন ঝলমলে পোষাক পরা সব পাহাড়ী মানুষ। সকলের পরনেই সোয়েটার! নানা রঙের, নানা ডিজাইনের। দোকান-পাটও দেখা গেল। শহুরে সব জিনিসের নাম লেখা সব সাইনবোর্ড লাগানো দোকানে দোকানে।

শুনেছিলাম, মিরিকে নাকি লেক আছে একটা। পাহাড়ের উপর প্রাকৃতিক লেক। শুনেই কেমন যেন উত্তজনা হয়। শুনলাম, সেখানেই যাব। রফিক বলল, ওখানে পার্ক হোটেল আছে, সেখানে আমাদের পান-ভোজনের কথা আগে থেকেই বলে রেখেছে শুভ'র ভগ্নিপতি অনির্বান। রফিকের উপর হুকুম, ওখানেই যেন আমাদের নিয়ে যায়। গাড়ি গিয়ে যেখানে থামল, সেখানে যেন কোন মেলা বসেছে। প্রচুর মানুস দেখলাম, যাদেরকে দেখলেই বোঝা যায়, শহর থেকে এসেছে, বেড়াতে। সৌখিন সোয়েটার পরে সব ফুলবাবু-বিবিটি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে লেকের পাশের বিশাল জায়গা জুড়ে। পার্কিং খুঁজে নিয়ে রফিক পরে আসছে, আমাদেরকে বলল, এগোতে। আমি আর শুক্লা ছাড়া সকলেরই চেনা জায়গা কাজেই ওরা এগুলো, আমরাও পেছন পেছন। সত্যিকারের মেলাই বসেছে। তবে থাকে নাকি বছরভর। কারন এখানে ট্যুরিষ্টের অভাব কখনোই হয় না। যাওয়ার পথে এক ঝলক দেখে আমার মনে হল, এ যেন ডিসেম্বরের ওয়েলিংটনের ভুটানীদের শীতবস্ত্রের অস্থায়ী সেই বাজার। আছে নানারকম গিফট আইটেমের দোকান, নানা রকম সফট টয় শোভা বাড়াচ্ছে এই বাজারের। ধীর পায়ে আমরা লেকের ধারে পৌঁছুনোর আগেই রফিক এসে ধরে ফেলে আমাদের। মেলা ছাড়িয়ে আমরা লেকের ধারে গিয়ে পৌঁছুই। গাঢ় সবুজ দেখায় জলকে লেকের পাশের কালচে সবুজ পাইনবনের জন্যে। তবে বাঙালী যেখানেই যায় তার চিহ্ন রেখে আসে -কথাটা সত্যি প্রমাণ করল লেকের জলে ভাসমান অজস্র মিনারেল ওয়াটারের খালি বো্তল, চিপসের খালি প্যাকেট ও আরও নানা রকম বর্জ্যে। লেকের একধারের জলে গাঢ় শ্যাওলা আর তাতে অজস্র নোংরা আবর্জনা ভেসে বেড়াচ্ছে। হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর প্রাকৃতিল লেক দেখার সমস্ত উত্তেজনা শেষ! মিরিকের 'দ্য পার্ক'এর দিকে এগুলাম আমরা সকলে।

অসাধারণ রূপসী এক নেপালী মেয়ে দরজা থেকে এগিয়ে এল আমাদের দেখে। পরনে তার ছাপা সুতীর থ্রী কোয়ার্টার পা'জামা আর খাটো কুর্তার উপরে ফুলহাতা সোয়েটার। পায়ে সাধারণ একজোড়া চটি। তার মাখনরঙা ত্বক, কোমর ছাড়ানো একঢাল চকচকে কালো চুল আর মুখে ধরে রাখা হাসিটি দেখে সকলেরই যে নয়ণ তৃপ্ত হল সে'কথা বলাই বাহুল্য। মাঝারি আকারের একটা ঘরের একপাশে কাউন্টার, যাতে নানা রকম চকোলেট আর উপহার সামগ্রী সাজানো। গোটাকয়েক প্লাষ্টিকের চেয়ার টেবিল ঘর জুড়ে। আমরা ঘরের ভেতরে না বসে বারান্দায় বসলা। একতলা সমান উঁচু এই বারান্দায় আছে কয়েকটা বিশালাকারের ছাতা, যার তলায় পেতে রাখা রঙীন প্লাষ্টিকের চেয়ার টেবল। মেয়েটি এসে মৃদু হেসে জানতে চাইল, কি খাবেন? এদের সকলের দূর্ভাগ্য, এখানেও শুয়োর নেই! অগত্যা সকলের জন্যেই চিকেন মোমো। সাথে যার যেমন পছন্দ তেমন পানীয়। রফিক শুধু নিল ভেজ মোমো আর চা। মেঘলা আকাশ হঠাৎ করেই ঝকমক করে উঠল আর খলখলিয়ে হেসে সূর্যদেব দেখা দিলেন মিরিকের আকাশে। মুহুর্তেই চারপাশের সমস্ত রং কেমন অদ্ভুতভাবে বদলে গেল! সোনা সোনা রোদে কেমন সোনালী হয়ে গেল সবকিছু। টেম্পারেচার কত হবে তখন? খুব জোর আট ডিগ্রি সেলসিয়াস! আগের দিনই আমরা কলকাতার চল্লিশ ডি্গ্রি থেকে প্রায় সেদ্ধ অবস্থায় বেরিয়েছিলাম! রোদের ওম গায়ে মেখে আয়েস করে খেতে খেতেই দেখলাম বিশালাকারের সব ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে, হোটেলের আশে পাশে। ঘোড়ার লাগাম হাতে সব নেপালী মুখ। বোঝা গেল, এরা ট্যুরিষ্টদেরকে ঘোড়সওয়ারী করায়। আমরাও বাঙালী আর আমরাও ট্যুরিষ্ট প্রমাণ করতে সকলেই ঘোড়ায় চাপতে চাইল। এবং আমরা ঘোড়ায় চাপলাম।

সে এক কেলেংকারী কান্ড। ছোয়খাটো চেহারার নেপালী লোকগুলো কম করেও সাড়ে চার-পাঁচ ফিট উঁচু তাগড়া এক একখানা ঘোড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাপব তো বলেছি কিন্তু ঘোড়ার পিঠে চড়ব কি করে? রফিক প্রায় চ্যাংদোলা করে সকলকে ঘোড়ায় তুলে দিল একে একে! ঘোড়ায় চড়ল না শুধু শুক্লা। সে রফিকের সাথে ঘোড়ার পেছন পেছন হেঁটে এল। ঘোড়ার মালিক আমাদেরকে লেকটা এক চক্কর ঘুরিয়ে মেলার শেষ মাথায় আমাদের গাড়ির কাছে নামিয়ে দিল। ফেরার সময় হয়ে এল! রাস্তার ধারের একটা দোকান থেকে বীয়ার তোলার জন্যে শুভ আর নীলু গেল। পেছন পেছন আমরাও। এবং গিয়ে সেই দোকানের একটা কাউন্টারে চকোলেটের যা কালেকশন দেখলাম সে যে কোন বড়সড় চকোলেটের দোকানকেও হার মানায়। আমরা চকোলেট কিনলাম। রফিকের বাচ্চার জন্যে কিনে দিলাম একটা খেলনা আর দু রকম চকোলেট। হুড়মুড় করে আমরা আবার গাড়িতে। ঠান্ডায় রীতিমত কাঁপুনি ধরছে। হঠাৎ করে কোথা থেকে উড়ে এসেছে ঘন কুয়াশা। আর দেখতেই দেখতে সব ঘোর অন্ধকার। বেলা চারটেতে রফিক হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।

শুভকে জিজ্ঞেস করে রফিক, এই পাহাড়ের পিকে যাবেন স্যার? বৃটিশদের হেলিপ্যাড ছিল এক সময় ওখানে। মিরিক ছাড়িয়ে আমরা উঠে যাই আরও উপরে, ঘনঘোর কুয়াশায়! কিছুই দেখতে পাচ্ছি না চোখে, নিজের হাতের তালুও বোধ হয় মানুষের এতটা মুখস্ত থাকে না যতটা রফিক মুখস্ত করে রেখেছে সুবিশাল এই পাহাড়ের শরীরের শিরা-উপশিরাকে। মিনিট কয়েকের মধ্যেই একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়ি এসে থামে। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে রেখেছে রফিক। সেই আলোতে আমরা প্রত্যেকে যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। মিরিকের পিকে গাড়িতে চেপে পৌঁছে আমরা যেভাবে উচ্ছসিত হয়ে উঠলাম সে জাষ্ট অকল্পনীয়! সেখানে কেউ কারোর নয় আবার সকলেই সকলের ভীষণ আপন!
নীলু ছবি তোলে। আমরা পাগলের মত কুয়শাকে গায়ে মাখি। হাতে গলায় মুখে একে অন্যকে। মুঠো মুঠো কুয়াশা ছুণনরে দিই একে অন্যকে! হেডলাইটের আলোতে শুধু নিজেদের কেই দেখতে পাচ্ছি। ঘন কুয়াশা কিচ্ছু কিচ্ছুটি দেখা যায় না!

আমরা বাস্তবে ফিরি। গাড়িতে উঠে বসি। হেড়ে গলায় সকলে গান গায়। গলা মেলায় রফিকও। সারা রাস্তা রফিক তার প্রিয় কুমার শানু চালিয়ে আমাদেরকে মহা বোর করেছিল, এবার রফিক খানিক বোর হোক!

খানিকটা নিচে নামতেই কুয়াশা কেটে যেতে লাগল। নীলু বলে, আমরা জিরো ভিজিবিলিটি থেকে এখন ভিজিবিলিটিতে ঢুকছি! যেন ক্ষণিকের মধ্যেই কুয়াশা কেটে গেল আর আমি দেখলাম এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য! পাহাড় থেকে দুরে বহুদূরে নিচে খানিকটা যেন আলোর আভাস দেখা যায়। রফিক বলে, ও‌ই হল শিলিগুড়ি শহর! আর ও‌ই দেখুন ও‌ই যে তরাই দেখতে পাচ্ছেন ওটা হচ্ছে আমাদের ভারতের শেষ সীমানা, ওপাশে নেপাল! ও‌ই দেখা যায় হিমালয়! নিচেকার দৃশ্যকে আমার বাস্তব বলে মনে হয় না। যেন বিশাল বিশাল ব-অ-ড় এক ক্যালেন্ডারের পাতা, যে ক্যালেন্ডারের আকারের কোন সীমা-পরিসীমা নেই!

রাস্তার ধারের চা বাগানে নামবে বলে আমি ছাড়া সকলেই বায়না ধরে। নিরাপদ জায়গা দেখে নিয়ে রফিক গাড়ি থামায়। একে একে সকলেই নেমে যায় চায়ের বাগানে। শতেক বছরের পুরোনো কোমর সমান চা গাছের ফাঁক দিয়ে ঢাল বেয়ে তরতর করে নেমে যায় সকলেই, এমনকি শুক্লাও! বেশ খানিকটা নেমে গিয়ে সকলেই আমাকে ডাকে নিচে নামতে। আমি কোনমতেই নামতে রাজী নই দেখ রফিক বলে, 'আপকো দেখকর তো যমীন ডর যায়েগী, আপ যমীন সে কিউ ডরতি হ্যায়?! হাত ধরে রফিক নমিয়ে নিয়ে যায় চায়ের বাগানে। সকলেরই বয়েস যেন দশ-পনের বছর করে কমে গেছে। ছেলেমানুষি আনন্দে চায়ের পাতা ছিঁড়ি। বুক ভরে টেনে নিই তাজা বিশুদ্ধ বাতাস। হিমালয়ের বাতাস!

গাড়ি দ্রুত নেমে যেতে থাকে সমতলের দিকে।জানলার ধারে বসা আমি শরীরের প্রায় অর্ধেকটা জানলা দিয়ে বের করে তাকিয়ে থাকি পেছনপানে। রাস্তার ধারের লোকজন হাত নাড়ে, বিদায় জানায়। সম্পূর্ন অচেনা, জীবনেও কোনদিন দেখা না হওয়া মানুষদের ওভাবে বিদায় জানানো দেখে বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকাতে থাকে যেন। দ্রুত সরে যেতে থাকে, বদলে যেতে থাকা দু'পাশের দৃশ্যাবলী। আমরা নেমে যেতে থাকি সমতলের দিকে। দ্রুত।

ট্রেনের সময় হয়ে এল বলে‌...


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কত প্রাণ হয়তো গেছে এই রাস্তা বানাতে গিয়ে, পাহাড়ের গায়ে ও‌ই অতিকায় সব খাম্বা বসাতে গিয়ে।

কী আশ্চর্য! দৃষ্টি-সুখের মোহে অন্ধ বেশিরভাগই এই রূঢ় সত্য স্বীকারও করে না। ...

লেখা সেই রকম জাঝা হচ্ছে। হাসি
---
যুগল ছবিতে (বিপ্লব)


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

শ্যাজা এর ছবি

হাসি


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

শ্যাজাদি দুর্দান্ত হয়ছে
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

শ্যাজা এর ছবি

থ্যাঙ্ক ইউ দেবোত্তম..


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

অগ্নি এর ছবি

দৃশ্যের বর্ণনাশক্তি অসাধারণ। সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রাস্তার ধারের লোকজন হাত নাড়ে, বিদায় জানায়। সম্পূর্ন অচেনা, জীবনেও কোনদিন দেখা না হওয়া মানুষদের ওভাবে বিদায় জানানো দেখে বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে।

এই কামড়টা আমিও অনুভব করেছি বহুদিন...

০২

আপনার লেখাটা ভ্রমণ কাহিনী না হয়ে সত্যি সত্যি বেড়ানোর গল্প হয়েছে
ভ্রমণ কাহিনীগুলো বড়ো বেশি তাত্ত্বিক হয়
আর বেড়ানোর কাহিনীগুলো একেবারে জীবন্ত

০৩

হিন্দি একেবারেই বুঝি না বলে আপনার লেখার শিরোনামের আগা মাথা বুঝতে পারছিলাম না
এক সচল অনুবাদ করে দেবার পরে বুঝলাম আপনাকে দেখে পৃথিবীর (মাটির?) ভয় পাবার যথেষ্ট কারণ আছে

শ্যাজা এর ছবি

লীলেনজী,
ও‌ই লাইনটির ঠিকঠাক মানে দাঁড়ায়,
আপনাকে দেখে তো মাটি ভয় পেয়ে যাবে, আপনি মাটিকে কেন ভয় পান?

রফিকের এই এক লাইন সে'দিনকার সকলের বলা সমস্ত কথার মধ্যে সেরা লাইন বলে বিবেচিত হয়েছিল এবং রফিকের জন্য প্রবল হাততালি দেওয়া হয়েছিল। চা বাগানের ঢাল থেকে আমার হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তায় ওঠার সেই ছবিটি থাক একান্তই আমার জন্যে। নীলুকে একটা জোরদার তোফা দিতে হবে অমন একখান ছবি তোলার জন্যে!


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

মনজুরাউল এর ছবি

আজকের ড্রাইভারটি চুপচাপ বসে শুধু গাড়ি চালায় না কালকের ড্রাইভারের মত। সে বেশ কথা বলে সকলের সাথে।

এত বড় একটা লেখা। সব দিকই প্রায় ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু মনে হয় আদি দার্জিলিংবাসীরা যে খুব কম কথা বলে সেটা দেখতে পেলাম না। সবাই কম কথা বলে, তেমন না হলেও অধিকাংশই কম বলে।আমি প্রথম বার যাওয়ার সময় যে ড্রাইভার ছিল সে শিলিগুড়ি থেকে ঘুম পর্যন্ত একটি কথাও বলেনি! 'সেরিডন' মিলবে কি না জানতে চাওয়ায় হাত তুলে দেখিয়ে বলেছিল..উধার । ব্যাস।

আপনার থ্রুলি বর্ণনা চমত্ কার ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

শ্যাজা এর ছবি

মনজুরাউল,
কোথাও গেলে আমি ফিরে এসে সেটা নিয়ে লেখার চেষ্টা করি। জায়গাটা নিয়ে, সেখানকার মানুষজন নিয়ে, আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে। যেখানেই যাই খুব অল্প সময়ের জন্যে যাই আর কাছাকাছি যাই। খুব জোর দু'দিনের জন্যে। ও‌ইটুকু সময়ে যেটুকু দেখা যায়, শোনা যায় চেষ্টা করি সবটুকু দেখে নিতে, শুনে নিতে। আর লিখতে যখন বসি তখন চেষ্টা করি খুঁটিনাটিগুলোও লিখতে। মনে করার চেষ্টা করি, আর যেন কি দেখেছিলাম, কি যেন শুনেছিলাম!

এই উত্তরবঙ্গ সফরে শোনা খুব কম হয়েছে। একে একটা দলের সাথে যাওয়া তায় এত কম সময়ে বেড়ানো প্লাস বিয়েবাড়ি। জানেনইতো, দলবল মিলে বেড়াতে গেলে কি হয়। সারাক্ষণই হুল্লোড়, সারাক্ষণই কারো না কারোর লেগপুল। দু'দিন দুই ড্রাইভার ছাড়া স্থানীয় কোন মানুষের সাথে কথা বলার, কাছ থেকে দেখার সুযোগই হয়নি। এতসবের পরেও রফিকের কাছ থেকে শোনা কিছু হয়েছে। এই লেখাটা, বিশেষ করে এই পোষ্টটা যতটা আমার বেড়ানোর গল্প ঠিক ততটাই রফিকেরও গল্প। আমি রফিকের কথা বলব বলেই এই পোষ্টের শিরোনাম ওর বলা কথা থেকে নিয়েছিলাম। কিন্তু লিখতে গিয়ে আমি এত বেশি সময় নিয়েছি যে বেশির ভাগ কথাই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। সেগুলো উদ্ধার করতে হলে ওর সাথে যোগাযোগ করতে হয়। সেটা বেশ চাপের বলে বেড়ানোর গল্পটাকেই প্রাধান্য দিয়ে এটাকে শেষ করেছি।

রফিকের পূর্বপুরুষদের আদিবাস উত্তর প্রদেশে ছিল এটা আমি লিখেছি। আগেরদিনকার ড্রাইভারও বাঙালী ছিলেন, পাহাড়ী নন কিন্তু তিনি স্বল্পবাক ছিলেন। দরকারী কথা ছাড়া গল্প-টল্পের ধার দিয়ে যান নি। হতে পারে আমরা তার মালিকের অতিথি ছিলাম বলে, হতে পারে তিনি আসলেই কম কথা বলেন।

আর আদি দার্জিলিংবাসীদের কম কথা বলার ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। আমি দু'জন দার্জিলিংবাসীকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনি, তারা এই কলকাতাতেই থাকেন। একজন মিরিকের বাসিন্দা অন্যজন খাস দার্জিলিংএর। যে বিউটি পার্লারটিতে আমি যাই, সেখানে মিরিকবাসিনী লতা হেয়ার ড্রেসার আর দার্জিলিংএর জোজো বিউটিশিয়ান। লতা কাজের সময় চুপ করে মন দিয়ে কাজ করলেও অন্য সময় বেশ ভালই গল্প করে। আর জোজো? সে এক মিনিটও চুপ করে থাকতে পারে না। ফেশিয়াল করার সময় ইচ্ছে করে ঘুমের ভান করে থাকতে হয়, ওর বকবকানি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে!

আপনাকে ধন্যবাদ।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

রাফি এর ছবি

ছবিগুলো খুব সুন্দর তো!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অনিন্দিতা এর ছবি

আপনার লেখা পড়তে পড়তে মনে হল আমিও আপনার সাথে শিলিগুড়ি বেড়িয়ে এলাম।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।