টিউবর্গ ও ড্রিংক ইন্ডিয়া
------------------
তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে ক'দিন। ক'দিন হলো? দু-তিন হবে বোধ হয়। হুঁ। পরশুর আগের দিন মানে তরশু দুপুর থেকে হু হু বাতাস। ঠান্ডা। শিরশিরে। তারপর বোধ হয় রাত থেকে শুরু হল। পরদিন ভোররাতে সে চলে যাবে। চেষ্টা করেও তাড়াতাড়ি ঘুমুনো গেল না। ড্রিংক ইন্ডিয়া, টিউবর্গ আর শুভজিত। এগারোটা বেজে গেলে আমাদের গেটে তালা পড়ে যায় মাসুদ-কাঁকনের বাড়ির মত। এখানে কোনো সাগর নেই, যার বাড়িতে এমন সব রাতে গিয়ে বডি ফেলে দেওয়া যায় তাই জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই হয় একতলার ফ্ল্যাটে। বৌদি মোবাইল ফোনে কাজের মেয়ের প্রেমের ঝামেলা মেটাচ্ছিলেন। রাত বারোটায়। সহৃদয়া বৌদি চাবি দিলে গেট খুলে চারতলার বাসস্থানে। টিউবর্গের ঝিমুনিতে বইভর্তি স্যুটকেস-ব্যাগ খালি করে খালি স্যুটকেসে খালি ব্যাগ ভরে দেওয়া হয়।
রিয়্যালিটি/ রিয়্যালিটি
----------------
স্টার প্লাসে সাচ কা সামনা- সত্যের মুখোমুখি। ৬টা সত্যি কথা বললে এক লাখ টাকা পুরষ্কার। ১১টা সত্যি কথা, ৫লাখ। ১৫টা সত্যি, ১০ লাখ। এভাবেই বেড়ে যেতে থাকে পুরষ্কারের অংক। আপনি একুশ খানি সত্যি কথা বলে ফেলুন, পেয়ে যাবেন এক কোটি টাকা। একটা মিথ্যে- খেল খতম। সত্যি-মিথ্যে কে ধরবে আর কী করে? নো চিন্তা। পলিগ্রাফ মেশিন কী করতে আছে? প্রশ্ন গুলো কেমন? আপনি কী আপনার স্ত্রী-পার্টনারকে সত্যি সত্যি ভালবাসেন? না বললে পলিগ্রাফ খচে যাবে আর হ্যাঁ বললে বউ। তবে রিয়্যালিটি শো বলে কথা। আপনি বলতে বাধ্য হবেন যে আপনি আপনার বউ-পার্টনারকে সত্যি সত্যিই ভালবাসেন না। হ্যাঁ। পলিগ্রাফ মেশিন আপনার সত্যি-মিথ্যের ফরমান জারী করলে আপনি ক্ল্যারিফাই করতে পারেন, যে আপনি ভালবাসেন না বাট কেয়ার করেন! গুড.. তাতে বউ খচে খচুক, আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন এক কোটি টাকার দিকে। অতএব এগিয়ে চলুন পরবর্তী প্রশ্নের দিকে, আপনি কী অন্তর্জালে কাওকে আপনার নগ্ন ছবি পাঠিয়েছিলেন? আপনি আর স্বীকার করতে পারলেন না, অমনি জিতে যাওয়া দশ লাখ টাকা চলে গেল শূণ্যতে, একটা মিথ্যের দৌলতে। মন্দ নয়..
শো'য়ের প্রশ্নকর্তা রাজীব খান্ডেলওয়াল। চেনেন নিশ্চয়ই, সেই যে আমীর সিনেমার নায়ক। 'সাচ কা সামনা' মানে এই সত্যি-মিথ্যের খেলাটিতে গেলে কেমন হয়? রাজীব শো'টা হোস্ট করছে
মোর ঘুমো ঘোরে গেলে মনোহর..
-------------------------
ঘুমিয়েছিলাম গভীর নিদ্রায়। অচেতন প্রায়.. তুমি চলে গেলে। যাবে বলেই এসেছিলে, তবু চলে গেছ এ যেন বিশ্বাস হতে চায় না.. কবে থেকে ঘুমোচ্ছিলাম যেন? মনে পড়ে না। .. রক্তক্ষরণ হয়, গোলাপী রঙের রক্ত.. তুমি দেখেছ কখনো গোলাপী রঙের রক্ত? বয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই..
ঘুম ভেঙে যায়, ক্ষরণ থামে না..
বুকের ধুকপুকুনি জানান দেয় হৃদপিন্ড নামক একটি বস্তু আছে ভেতরে, আর সে এমন জোরে ঢাক বাজায় যে পুজোর ঢাকে আগাম কাঠি পড়ল বলে ভ্রম হয়.. শিরায় উপশিরায় আছড়ে আছড়ে পড়ে নার্গিস। থরথর কাঁপে আঙুলগুলি, উজাড় হয়ে যায় বনকে বন। মরে পড়ে থাকে এক জঙ্গল সুন্দরী গাছ।
কবে থেকে যেন বাংলাদেশের নাম হয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তান। রাজাকার। মুসলমান। দেশভাগ, হিন্দু-মুসলমান, পিতৃপুরুষের ছেড়ে আসা ঘরবাড়ি আর অপরিসীম ঘৃণা সব এসে বসত করে ওল্ড মঙ্ক গোল্ড রিজার্ভে। রাত গভীর হয়। পুলিশের কোয়ার্টারে এসে ট্যাক্সি থামে। ডাল রান্নায় কোনো নাতুনত্ব নেই। সব একই রকম। মুগ-মুশুর-মটর সবই এক। পাল্টে পাল্টে যায় শুধু বন্দর। এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে এগিয়ে যায় জাহাজ। নতুন গঞ্জ, নতুন মানুষ, আর সবুজে সবুজ.. সওদাগরের নাও গিয়ে ভেড়ে জামাতীদের দেশে..
দিল আফরোজ রেবা তবুও গান গেয়েই যান, বন্ধুয়া গেল কোন বা দ্যাশে/ কান্দো বসি মুই পাগল ব্যাশে/ ডাকে কাগা ঐ জালের বাতাক বসে/ ওরে মনোতে মোর লাগিল ধাগা/ কন্টে যাইয়া সোনা পড়িল বান্ধা/ আসিয়াও ক্যানো আর না ক্যানে আইসে/ ওরে নিয়া গেছে সোনা মুখের হাসি/ হাউশের শিঙ্গার মোর হইল রে বাসি..
এমনও ঘনঘোর বরিষায়
-------------------
দু'দিন নাকি তিনদিনের বৃষ্টি? তুমুল বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে আমি বেরোই আমার লম্বা ডাঁটির বাদামী ছাতাখানি নিয়ে। বাড়ি থেকে বেরোতেই বোঝা গেল, আজকেই তো হেঁটে বেড়ানোর দিন.. সদ্য জ্বর থেকে উঠে আর ছাতা বন্ধ করতে সাহস হল না, জিনসের পা উঠে যায় যতটা ওঠানো যায়, চটিজোড়া হাতে নিয়ে আমি হাঁটুজল ভেঙে ভেঙে এগিয়ে যাই ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে। গোটা শহর ভেসে গেছে এই দুই নাকি তিনদিনের বৃষ্টিতে? এমন বৃষ্টিদিনেও রাস্তায় লোক কম নেই, আপিস ফেরতা সব নারী-পুরুষেরা গোটানো প্যান্ট আর হাঁটুর উপর তুলে ধরা শাড়ি নিয়ে দৌঁড়ান বাসের পেছনে পেছনে। একখানি ট্যাক্সির পেছনে ছোটেন ডজনখানেক মানুষ। হুঁশ করে ট্যক্সিরা বেরিয়ে যায় কারো দিকে না তাকিয়ে। এক্সাইডের মোড় থেকে হাঁটুজল ভেঙে ভেঙে এলগিনের মোড়, গরম গরম পেঁয়াজু ভাজা খাই দোকানীর পলিথিনের তলায় দাঁড়িয়ে। স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায় মীনাক্ষীর। এমন দিনে এর থেকে ভাল আর কীই বা হতে পারত! আমরা হাঁটি ফোরামের দিকে। জল ভেঙে ভেঙে। ঠান্ডা লাগে, কাঁপুনি আসে, কিন্তু এমন দিন কী বারে বারে আসে? মাথার উপর অঝোর বর্ষা নিয়ে লম্বা ডাঁটির বাদামী ছাতা আর চটিজোড়া হাতে নিয়ে হাঁটতেই থাকি, এলগিন পেরিয়ে ল্যান্সডাউন, মিন্টোপার্ক তারপর আবার এক্সাইড..
শেয়ারের ট্যাক্সি, বিদ্যাসাগর সেতু, ভেসে যাওয়া উড়ালপুলের নীচের রাস্তা.. বাড়ি.. আদা আর গোলমরিচ দেওয়া গরম গরম চা.. দিল আফরোজ রেবা.. আর বহু বহুদিন পর এই ব্লগ ব্লগানি..
মন্তব্য
অ-সাধারণ । স্রেফ অ-সাধারণ ।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম । তুমুল গতি আর দুমড়ে মুচড়ে দেয়া সব সত্য-মিথ্যা-ভাষা-বুননের আশ্চর্য মিথষ্ক্রিয়া !
সন্দীপন কে মনে পড়ছিলো বারবার!
প্রিয় সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় । এই রকম জর্নালের একটা সিরিজ লিখুন না !
আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখালাম ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
অতখানি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নয় এ লেখা সুপান্থ, সে আপনিও জানেন আমিও জানি। তবু ভালো লাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে, ভালো ভালো কথা শুনতে কার না ভালো লাগে
-----------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
এতো দিন কোথায় ছিলেন........... !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নিজের মধ্যে ছিলাম রে ভাই.. এখনো আছি..
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
অসাধারণ!
অতিথি কেন বিপ্লবদা..
-----------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
চমৎকার গদ্য।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
চমতকার, অতীব চমতকার! (খণ্ড ত দেখায়না এখানে:))
অনেকদিন পর পেয়ে ভালো লাগলো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমারো ভালো লাগল তীরন্দাজ..
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
এই রিয়েলিটি শোর ব্যাপারটি দিনে দিনে যেন সব গ্রাস করছে। বাস্তবের হয়ে যাচ্ছে কমার্শিয়ালাইজেশন। মানুষের অনুভূতিগুলোকে কি কেউ একা থাকতে দেবে না?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
রেজওয়ান,
মজাটাই তো সেখানে। এমনি এমনিই কী আর নাম হয়েছে রিয়্যালিটি শো!
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
চমৎকার।
অফ টপিক : ভালো ডাল রান্না করা অনেক সিমিংলি কমপ্লিকেটেড রান্নার থেকেও কঠিন কাজ ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ধন্যবাদ অনিন্দ্য।
অফ টপিক : ভালো ডাল রান্না করা অনেক সিমিংলি কমপ্লিকেটেড রান্নার থেকেও কঠিন কাজ ...
আসলেই?
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
খুব মন খারাপ হল৷
-----------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
দমু,
'নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
ভালৈছে শ্যাজাদি।
ভালো লাগলো।
অতো কম আসেন কেনো আপনি?
...........................
কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দূর্দান্ত গতি লেখায়! খুবই ভালো লাগল।
নতুন মন্তব্য করুন