ফিসফিসিয়ে শীত এসেছিল, থেকেও গেল বেশ কিছুদিন। হিম কনকনে উত্তুরে হাওয়ায় কাঁপিয়ে- ঝাঁপিয়ে দিচ্ছিল, মাঝে মধ্যেই অবশ্য চলে যাচ্ছিল অন্য কোনোদিকে, অন্য কোথাও, কিন্তু আবার ফিরেও আসছিল। এবার যেন চলেই গেল দুম করে। মাঘের সবে চব্বিশ। বাঘ পালাবে কেন, শীতই পালিয়ে গেল।
কমলালেবুর খোসাখানি টিপে চোখে জল ঝরিয়ে দেওয়ার দিন নেই আর। আমি এখন বড় হয়ে গেছি বোধ হয়। সব ভুলে যাই তাও ভুলি না সেই উন্মাতাল গন্ধ নিয়ে চোখে এসে লাগা দু-চার বিন্দু, আর জ্বালা করে ওঠা চোখ। ভুলে যাই পাসওয়ার্ড, এই নিয়ে বোধ হয় চারবার করে পাসওয়ার্ড নতুন করে নিয়ে তবে এই পাতা অব্দি আসতে পারলাম। তাতে কী। অতসব মনেই বা রাখতে হবে কেন।
খানিক আগে উড়ালপুলের উপর দিয়ে হাঁটছিলাম। ছড়ানো সব বাহুগুলোর এমাথা, ওমাথা, আন্দুল রোড, ঘুরে আবার জিটি রোড, আবার ঘুরে এসে সবচাইতে উঁচু জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে চোখ গেল টোলের দিকে। অনেকটা নিচে সেই টোল। সারি সারি গাড়ি স্লো মোশানে যাচ্ছে, আসছে। হালকা কুয়াশায় ঢাকা গঙ্গা বেশ দূরে। আমি না তো দূরদর্শী আর এখন তো অদূরদর্শীও নই তাই দেখতে পাই না অতদূরে। হাওড়া ব্রিজ দেখতে পেয়ে যাই তবু কেমন করে যেন।
একজন বয়স্ক মানুষ রেলিংএর ধারের ওয়াকওয়েতে দাঁড়িয়ে হাত-পায়ের খিল ছাড়াচ্ছিলেন। আমি রোজই তাঁর সামনে দিয়ে যাই, আজ দূর থেকে দেখতে পেয়েই একমুখ হাসলেন, কাছে যেতেই বললেন, অনেকদিন বাদে বেরুনো হল? পালটা হেসে বললাম, হ্যাঁ, বইমেলা চলছিল, ভোরে বেরুনো হয়নি এই ক'দিন। তিনি মন দিলেন কসরতে, আমি এগিয়ে গেলাম আন্দুল রোডের দিকে, নামতে লাগলাম নীচের দিকে।
নীচে নামা কত সোজা! উঠতে গেলেই হাঁফ ধরে! চড়াই, উৎরাই, আবার চড়াই আবার উৎরাই। ঠান্ডা এবং আরামদায়ক বেশ জোর একটা হাওয়া, বলা ভাল দামাল হাওয়া। ঠিক যেন ফ্রেজারগঞ্জের নীরব, নিথর সমুদ্রের ধারের ভোরের হাওয়াটুকু এই উড়ালপুলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
একজন গর্ভবতী নারী গায়ে চাদর জড়িয়ে খুব ধীরপায়ে হাঁটছেন এই ঊরালপুলে, সঙ্গে তার বর, হাতটি ধরে রেখে তিনিও ততটাই ধীরপায়ে হাঁটছেন। গল্প করতে করতে দুজনে হাঁটছেন। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য সেই নারীর। রাতের ঘুম তখনও চোখে-মুখে, খানিকটা ছড়িয়ে থাকা সিদুর, খানিকটা ক্লান্তি আর অনেকখানি শান্তি তাঁর আশে-পাশের হাওয়ায়, ওই উড়ালপুলে, পুল ছাড়িয়ে গঙ্গার দিকে তিনি ছড়িয়ে দিচচ্ছেন, ভাসিয়ে দিচ্ছেন, দিতে দিতে ধীরপায়ে হাঁটছেন। একটা হাত বরের হাতে, অন্য হাতটি পেটের উপর, অনাগত সন্তানের গায়ে। আমার চলা ধীর হয়, খানিকটা ওই হাওয়া আমিও শরীরে, মনে মেখে নিয়ে এগিয়ে যাই তাঁদের ছাড়িয়ে।
মন্তব্য
উড়ালপুল শব্দটা নতুন ঠেকলো। ফ্লাইওভার নাকি?
ঠিক কোন জায়গায় বসে লিখেছেন জানতে ইচ্ছে করছে। চমৎকার বর্ণনা।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শীতের বর্ণনা দিলেন এমন সময়ে যখন শীত প্রায় নেই বললেই চলে।
উঁহ, কি শীত! অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা আপনার!
খুবই সুন্দর একটা বর্ণনা।
। ভোরের কলকাতা শহর দেখতে খুবই সুন্দর, বিশেষত গঙ্গার ঘাটের পাশে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় এক অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হয়।
ডাকঘর | ছবিঘর
ভিক্টোরিয়ার সামনের উড়ালপুল কি ? ভাল লাগলো। বিশেষভাবে শেষ প্যারাটা। হৃদয়ের গভীরে নাড়া দিয়ে গ্যাছে।
সুন্দর বর্ণন। ভাল থাকবেন।
আমার শীতের কোন লেখা পড়লে মনে হয় শীতই ভালো, আবার বর্ষার কোন লেখা পড়লে মনে হয় এর উপর কিছু আছে নাকি! দুটোই ভালো লাগে বুঝি যখন দেখি চলে যাবার পর মনটা খারাপ হচ্ছে।
ভালো লেগেছে আপনার লেখাটা।
বাহ্, সুন্দর তো

“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
শীত আসে যায়। কিন্তু এভাবে দৃষ্টি দেয়া হয় না। লেখা পড়ে নতুন করে মনে পড়ল আমরা ষড় ঋতুর দেশের মানুষ।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
facebook
বাহ!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
নতুন মন্তব্য করুন