আজ কোজাগরী পূর্ণিমা। মা লক্ষ্মীর আরাধনা চলছে বাড়িতে বাড়িতে, দোকানে-বাজারে... জানলার বাইরে অন্ধকার আকাশ মাঝে মাঝেই আলোকিত হয়ে উঠছে নি:শব্দ আলোর ফুলঝুরিতে...অনেকদূর অব্দি উঠে যাচ্ছে ছুঁড়ে দেওয়া বাজি, ঝুরঝুরে আলো যেন ঝরে ঝরে পড়ছে আর ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার আকাশে...
টুনিবাল্বগুলো ঝিকমিক ঝিকমিক জ্বলছে নিভছে জানালায়, বাড়ির বারান্দায়।। আনন্দ আনন্দ।। সবাই মেতেছে আনন্দে। উত্সবে। এমনও সন্ধ্যায় এত আনন্দ দেখেও কোথাও যেন মেঘ জমে। কালো হয় আকাশ। প্রশ্ন জাগে মনে, লক্ষী মানে কী? সে কী ধনলক্ষী না কন্যালক্ষী? কন্যাসন্তানকেও নাকি লক্ষী বলে! তবেই কী ঠাকুর দেখতে আসা কোন এক জননী সকলের অলক্ষে প্যান্ডেলের পেছনের চেয়ারে পরিত্যাগ করেন তাঁর আড়াই মাসের কন্যালক্ষীকে?
'এসো মা লক্ষ্মী বলে আদর করে বধূবরণ হলো' নাজমা জামানের গানের লাইন মনে পড়ে। এভাবেই একদিন মা লক্ষী বধূ হয়ে ঘরে এসেছিল এক মেয়ে। ধরা যাক তার নাম অনামিকা। স্নেহময় পিতার আদরের কন্যালক্ষ্মী অনামিকা আরেকজনের ঘরের লক্ষী হয়ে যায়। ধুমধামের সাথে বধূবরণও হয়। ঘরের লক্ষী অনামিকাকে কুক্ষিগত করে ধনলক্ষীর আরাধনায় ব্যস্ত হয় অনামিকার স্বামী। দেবী লক্ষীর কৃপায় ধনবান স্বামী আরো ধনবান হয়। ঘরের লক্ষী অনামিকা তখন শুধুই ভোগের বস্তু। যেন সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা ধনলক্ষী, যখন খুশি বের করলেই হল।
এই ভোগের অবধারিত ফলস্বরূপ অনামিকা গর্ভবতী হয়। সন্তান সম্ভাবনায় অনামিকা নিজের অতীত বর্তমান ভুলে যায়। ডুব দেয় অনাগত দিন-সন্তানের অপেক্ষায়। মনের কোণে গোপনে লালন করে স্বপ্নএকটি কন্যালক্ষীর! অনামিকার স্বামীর আকাঙ্খা পুত্রের। অবাধ্য অনামিকা জেনে শুনেই স্বামীর বিপরীত আকাঙ্খা করে। পিত্রালয়ে অনামিকা জন্ম দেয় কন্যালক্ষীর। রুষ্ঠ হয় অনামিকার স্বামী। কোন খোঁজ নেয় না সে ঘরের লক্ষী আর কন্যালক্ষীর। স্বজন- সুজনে পরামর্শ দেয়, কন্যা তো ঘরের লক্ষী! নারাজ কেন হও/ আবার পুত্র হইবে এইবার কন্যা মানিয়া লও! মানিয়া লিতে লইতেও কাটিয়া যায় মাস কয়। অবশেষে মানিয়া না লইয়া গত্যন্তর নাই বিধায় সে শ্বশুরালয়ে যায় মাস ছয় পর। দর্শন করে কন্যার মুখ। প্রথমবার। মাস ছয় পর।
মন্তব্য
দারুণ একটা বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ।
______________________
চিৎকার করি জ্বলেপুড়ে ছারখার
তবুও আমি নাকি অশুচি
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
দীর্ঘশ্বাস!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
থ্যাঙ্ক্যু মৃন্ময়
অ বিপ্লবদা,
বেশি দীর্ঘশ্বাস ফ্যালাইতে নাই, শ্বাস ক্ষয় হয়! ছোডো ছোডো শ্বাস ফেলেন মিঞা, ছোডো ছোডো
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
একটা ব্যাপারে আমার কনফিউশন আছে।
সৃষ্টির দেব ব্রহ্মা হলো বিদ্যাদেবী সরস্বতীর স্বামী, বিশ্বপালক বিষ্ণু হলো ধনদেবী লক্ষ্মীর স্বামী, আর ধংসের দেবতা শিব পার্বতীর স্বামী।
কিন্তু এদেশে মা লক্ষ্মীদের কেন বলা হয় - তোর যেন শিবের মত পতি হয় ? শিব তো নেশাতে আসক্ত, যোগ্য বর হলো কি করে! আমাদের মা-লক্ষীদের জীবন আমরা অপাত্রে দান করতে এত উৎসাহী কেন?
তবে আধুনিক অনেক লক্ষ্মী নিজেই প্রলয় নাচন নাচতে জানে। সংখ্যা বাড়ুক, সমস্যা চলে যাবে। আসলেই কি আজকাল ছেলেমেয়েতে তেমন ফারাক করা হয় ? আমরা অনেকেই দুটি কন্যাতেই দারুণ খুশি। বাবার যত্ন মেয়ের কাছ থেকেই বেশি আসে।
আসলে দুই রকমই হয়। ছয় মাস পরে নিজের সন্তানের মুখদর্শন করে যে, সে-ও পিতা, আবার তৃতীয়-চতুর্থ কন্যা সন্তানকে বুকে করে দেবীর মর্যাদাও দেন কোন কোন পিতা।
আমি আমার পুত্রহীন পিতার তৃতীয় কন্যাসন্তান। আমি এবং আমার বোনেরা কখনও কোন বঞ্চনার স্বীকার হই নি।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
বজলুর রহমান,
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যের শেষের দুটি লাইনের কথা বলছি। আজকাল অনেকেই দুটি কন্যাসন্তান নিয়ে খুশি হন। আপনি লিখেছেন 'অনেকেই' 'সবাই খুশি হন' এই কথাটা কিছুতেই বলা গেল না! আর এই 'অনেকেই' যারা, তারা কিন্তু শহুরে সমাজের। আর এই শুহুরে সমাজের বাইরে পড়ে রয়েছে বিস্তির্ণ গ্রামাঞ্চল। যেখানে বেশির ভাগ মানুষই এখনো অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত। সেসব জায়গার চিত্রটি কী? প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে থাকে, কোথাও কোন কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে জন্মের পরেই গলা টিপে, কাউকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয় পুকুরে, কোথাও বা মাকেই মেরে ফেলা হয়, কেন সে পরপর দু-তিনবার কন্যাসন্তানের জন্ম দিল।
আর শহুরে সমাজে? এখনো বহু বহু পরিবারেই মেয়ের জন্মের পরেই শুরু হয় যৌতুক জমানো। টাকা, গয়না, পিতল/কাঁসার বাসন, ছোট ছোট ইনভেষ্টমেন্ট এখানে ওখানে। যার যেমন সামর্থ।
যদি সত্যিই এমন হত, যদি সত্যিই ছেলেতে-মেয়েতে ফারাক না করা হত! ভারতবর্ষে কন্যাভ্রূণ হত্যা এখন একটি প্রধান সমস্যা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বহু রাজ্যেই পুরুষের চাইতে নারীর সংখ্যা কম। সবচাইতে কম নারী উত্তর প্রদেশে, যে রাজ্যে ভারতের রাজধানী অবস্থিত!
তিথি,
ঠিক বলেছিস, দুই রকমই হয়। তবে দ্বিতীয় যে পিতার কথা বললি, সেরকম পিতা খুব কম। তুই সৌভাগ্যবান যে ওরকম পিতার কন্যা হয়ে জন্মেছিস। আমি দেখেছি একটা পুত্রসন্তানের জন্যে প্রতিবছর কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়ে গেছেন এক মহিলা। একে একে আট কন্যা। প্রতিবারই মহিলা হাসপাতালে যেতেন আর ভদ্রলোক শয্যা নিতেন কন্যার আগমনের আশঙ্কায়। কন্যার জন্মের খবরে দু-তিন দিন ঘরের দরজা দিয়ে পড়ে থাকতেন না খেয়ে না দেয়ে। বাড়ির লোকের আশঙ্কা হত, হার্টফেল করে মরে না যান! মেয়েদেরকে ছেলেদের মত সব জামা কাপড় পরাতেন। কোন ফ্রক-জামা ঐ মেয়েরা পরতে পেত না। পিয়া,শিমু ,নিপু, বিহু। এর পরে মেয়েদের নাম আর রাখেননি সেই পিতা। মা'ই নাম রাখতেন। নবমবারে তাঁর কপালে শিকে ছেঁড়ে, ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু একটা মজার ব্যপার হল, ভদ্রলোক বৌকে কোনরকম অত্যাচার করতেন না মেয়ের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন বলে আর ঐ মেয়েদেরও যথেষ্টই ভালবাসতেন। ছেলের জন্মের পরে তিনি ক্ষ্যান্ত দেন, বৌয়ের অপারেশন করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। আর এই ভদ্রলোকটি কোন অশিক্ষিত গ্রাম্য লোক নন। একজন উচ্চশিক্ষিত আর বেশ ভালো রকম প্রতিষ্ঠিত এক মানুষ।
এরকম বহু ঘটনা চোখে দেখেছি, নিজের দেশেও আর এদেশেও। শুধু কানে শোনা বা খবরের কাগজে পড়া নয় রে তিথি...
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
বাজে লেখা।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
নতুন মন্তব্য করুন