[ ১৯৭১ ভেতরে বাইরে প্রকাশের পর থেকেই ‘প্রথম আলো’ গ্রুপের অতিপ্রচার ও সত্যবিমুখ কিছু টকশোজীবিদের হেঁড়ে গলার চিৎকারে বইটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সচলে নজরুল ভাইয়ের প্রামাণ্য প্রবন্ধটি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে পথিকৃৎ হয়ে থাকবে। তাতে কেবলমাত্র ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সংক্রান্ত আলোচনা হওয়াতে বইটির অন্যান্য অংশ নিয়ে সম্পূরক আলোচনার জন্যই এই পোস্টের অবতারণা করা হয়েছিল।
এ কে খন্দকার পদাধিকারবলে মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলেই বিবেচিত। তিনি যদি সত্যকে বদলে দেবার জন্য কুখ্যাত প্রথমা প্রকাশনের খপ্পরে পড়েন সেক্ষেত্রে তাঁর ব্যাক্তিগত অবস্থানের চাইতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহুগুণে হুমকির সম্মুখীন হয়। এই প্রেক্ষিতে বইটির যথাসম্ভব পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই চলমান নিবন্ধে সেই চেষ্টাটিই করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে আলোচিত বইটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে বিদগ্ধ লেখকদের বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং অন্তত তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই পর্বে সে সকল বইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রচেষ্টা করা হয়েছে। মন্তব্য অংশে সকল পাঠকের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ]
সময় প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখিত সুবিশাল এই বইটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। বইটির ভূমিকায় অধ্যাপক মামুন স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ
বাংলাদেশি জেনারেলদের মন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও বই নয়। এ বইয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে, স্বাধীন দেশে বসবাস করে, বিজয়ী হয়ে তারা কেন পরাজিত বাহিনীর দর্শন ধারণ করেন? লক্ষণীয় এখানে ২১ জন জেনারেলের মধ্যে ২০ জনই কাকুলে প্রশিক্ষিত। সুতরাং, কাকুল যে তাদের মধ্যে পাকিস্তান প্রত্যয় গেঁথে দিয়েছিল তা অস্বীকারের উপায় কি?
ভূমিকা অংশে অধ্যাপক মামুন আরও আশা করেছেন-
আমরা চাই, আমাদের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হবে। তারা বিজয়ীদের উত্তরাধকারী, বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারক-বাহক এবং সে কারণে মান্য করবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আমরা গর্ব করতে চাই আমাদের সেনাবাহিনী নিয়ে। ... ... একজন সৈনিককে আমার সহযোগী, আমার বন্ধু হিসেবে পেতে চাই, প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়। এটিই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের কামনা।
বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে এই কথাগুলির সাথে আমি সম্পুর্ণ একমত। যাই হোক, সমগ্র বইটি আপাতত এই পোস্টের আলোচনার আওতায় পড়ছে না। ২০১৫ সালে প্রকাশিত এর পরিমার্জিত সংস্করণে পরিশিষ্ট-২০ এ “শ্রদ্ধা করার মত মানুষ কমে যাচ্ছেন” শিরোনামে একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে যার আলোচ্য বিষয় “১৯৭১ ভেতরে বাইরে”। প্রবন্ধটি লেখার প্রেক্ষাপট উল্লিখিত আছে প্রথম অনুচ্ছেদেই যেখানে অধ্যাপক মামুন বলেছেন-
দেশজুড়ে এখন বিতর্ক চলছে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের বই নিয়ে যার নাম ১৯৭১ ভেতরে বাইরে। এর একটি কারণ তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের উপ চীফ-অব-স্টাফ যার স্থান ছিল কার্যত জেনারেল ওসমানীর পরেই। তাছাড়া যেসব সেনাকর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন যুদ্ধে, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। ১৯৭১ সাল থেকে প্রতিটি সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁকে নিয়ে ততটা বিতর্ক হয়নি, যতটা হয়েছে মে জে শফিউল্লাহকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ের কথা যদি ধরি, তা হলে জেনারেল শফিউল্লাহর দায় খানিকটা বেশি হলেও, অন্য সেনা কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না। পারেন না এ কে খন্দকারও, কারণ তিনি ছিলেন বিমান বাহিনীর প্রধান। কিন্তু মৃদুভাষী এ কে খন্দকার সমাজে সজ্জন হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার এমপি ও মন্ত্রী হয়েছেন। মন্ত্রী না থাকার সময় যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্দোলনের সঙ্গে জেনারেল মইনের সময় যুক্ত হয়েছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম করে। ফোরামের তিনি ছিলেন সভাপতি। সে জন্য সবার ধারণা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের নিস্পত্তিকৃত বিষয় গুলি নিয়ে তার কোনও প্রশ্ন ছিলনা। এখন দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের মৌল বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। এ কারণেই ‘প্রথমা’ প্রকাশিত ১৯৭১ ভেতরে বাইরে বইটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বইটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার এ কারণে যে, বইটি এ কে খন্দকারের লেখা যিনি মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাধ্যক্ষ ছিলেন এবং যিনি শুধু বীরোত্তম নন স্বাধীনতা পদকও পেয়েছেন। তাঁর তত্ত্ব সব মেনে নিলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে, যা আমরা হতে দিতে পারিনা। [ পৃষ্ঠা নং- ৬৮৪/৬৮৫ ]
অধ্যাপক মামুন আরও লিখেছেন-
আমার সবচেয়ে অবাক লেগেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বা এর পটভূমি সংক্রান্ত সাধারণ তথ্যও তাঁর জানা নেই দেখে। এ জন্য বলি, ইতিহাস তো শুধু বর্তমান বা নতুন প্রজন্মের জন্যই নয়, পুরনো প্রজন্মের বিশেষভাবে সেনা কর্মকর্তাদের জানা উচিৎ। অনেকে ক্রুদ্ধ হয়ে বলছেন তাকে এমপি করা হয়নি বা মন্ত্রী করা হয়নি দেখে তিনি ক্রুদ্ধ। এটি বোধ হয় ঠিক নয়। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি অসুস্থ, এবং খুব সম্ভব এমপি নমিনেশনও চাননি। খন্দকার ভক্ত অনেকে এত বিপর্যস্ত যে, তারা বলছেন বইটি তাঁর লেখা নয়। অন্য কারও লেখা এবং একটি ষড়যন্ত্রের গন্ধ তাঁরা পাচ্ছেন। সবকিছু মেনে নিলেও বলতে হবে বইটি এ কে খন্দকারের লেখা এবং দায় দায়িত্ব তাঁর। ইতোমধ্যে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সেটিতে সজ্ঞানে তিনি সংশোধন করে বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন এবং এতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকেও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়েছেন। [ পৃষ্ঠা নং- ৬৮৫ ]
যারা বিভিন্ন ভাবে খন্দকারের এপোলজিস্ট হিসেবে ডেভিল'স এডভোকেসি করেছেন তাঁরা এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। অধ্যাপক মামুন একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে “কাকুল সেনা একাডেমী” থেকে প্রশিক্ষন লাভের সঙ্গে “পাকিস্তানি” মানসিকতা ধারণের একটি যোগসূত্র দেখাতে চেয়েছেন। এবং এর মূল উপাদান তিনি গ্রহন করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সেনা কর্মকর্তার লেখা বই ও সাক্ষাৎকার থেকে। আগ্রহী পাঠক বইটি পড়লে চিন্তার নতুন খোরাক পাবেন বলেই আশা করা যায়।
সূচীপত্র প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ লিখিত বইটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। বইটির ভূমিকায় অধ্যাপক সাইয়িদ বলেছেনঃ
লক্ষ করছি সাম্প্রতিককালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশে ও বিদেশে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অনেক গ্রন্থের রচয়িতা যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সামরিক ও বেসামরিকভাবে যুক্ত ছিলেন তারা তাদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ পুস্তক ও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থগুলো কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। অনেক সময় মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন লেখক ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। হতে পারে তা পরস্পরবিরোধী তথ্য ও চিন্তাধারা। এ ধরণের বিতর্কমূলক লেখার মাধ্যমে অনেকসময় সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। কখনও বা সত্য আড়াল করে ইতিহাসের প্রবহমানতাকে বিভ্রান্তির আবর্তে নিয়ে যায়। এই সামগ্রিক অবস্থাকে সামনে রেখে “মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি” বইটি লিখিত। প্রকাশিত-অপ্রকাশিত তথ্য ও সততা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়“মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি” বইটি।
এই বইটিরও পূর্ণ অংশ আপাতত এই পোস্টের আলোচনার আওতায় পড়ছে না। এতে “বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব” শীর্ষক পঞ্চদশ অধ্যায়ে একটি আলোচনা যুক্ত হয়েছে যার আলোচ্য বিষয় “১৯৭১ ভেতরে বাইরে”। শুরুতেই অধ্যাপক সাইয়িদ বলেছেন-
পঞ্চদশ অধ্যায়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপ্রধান এ কে খন্দকার লিখিত বইয়ে জাতির সামনে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ব্যাখ্য প্রদান করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত জবাব দেবার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি বইটির সকল অধ্যায় পর্যালোচনা করলে সচেতন পাঠকমাত্রই দেখতে পাবেন যে রাজনীতিবিদদের কারনেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হয়েছে। তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা অবদানকে অবমূল্যায়ন করে কিংবা ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে অল্প ক্ষয়ক্ষতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হত এই ধরণের মন্তব্য বইটিকে অর্বাচীন বিতর্কের ভেতরে ঠেলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ২৫ মার্চের পরেও যিনি কর্মরত ছিলেন তিনি কি করে দুই বার বর্ডার থেকে ফিরে এসে পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন। তাকে পাকিস্তানিরা সন্দেহ করেনি কেন? [ পৃষ্ঠা নং- ২৬৮ ]
সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ অধ্যাপক সাইয়িদ মুক্তিযুদ্ধে সাত নং সেক্টরের উপদেষ্টা ও ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন। তিনি গণপরিষদে বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান প্রনয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য। ‘শুধুমাত্র’ সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পূননির্মানের চেষ্টা করেছেন খন্দকার। দুই দশকের প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনযুদ্ধ একেবারেরই অস্বীকার করে গেছেন তিনি। তাই, তাঁর আড়াল করে রাখা চিত্রটি জানার জন্য একাডেমিক বিশ্লেষণেরর পাশাপাশি তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের অবস্থানটিও জানা জরুরী। এই প্রেক্ষিতে এই বইটি গুরুত্বের সাথে পঠিত হবার দাবি রাখে।
একাত্তর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই সংকলন গ্রন্থটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। প্রয়াত অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমদকে উৎসর্গীকৃত বইটিতে সম্পাদক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছে রুদ্র সাইফুল এবং চিন্ময় দাসের। বইটির ভূমিকায় বলা হয়-
এ কে খন্দকারের পুরো বই ঘেঁটে বাঙ্গালীদের প্রতি তার সহমর্মিতার কথা কোথাও পাওয়া যায়না। বিহারীদের হাতে সারা বাংলাদেশে যে হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি নিহত হল মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে, সে খবর খন্দকার পাননি। এক্ষেত্রে কেবল আওয়ামি লীগকে দোষারোপ করলে চলবে না কেননা তখন তো তিনি কলকাতায় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝখানেই বসবাস করছিলেন। থিয়েটার রোডে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের পাশের ঘরেই তিনি থাকতেন। এছাড়া, রক্তপিপাসু পাকিস্তানি হায়েনাদের নয় মাসব্যাপী নারকীয় হত্যাকাণ্ডের উল্লেখও তার বইতে নেই। আছে কেবল ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল করা হলে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের বিমানবাহিনীর গাড়িতে করে আজিমপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যাওয়ার সময় পথেঘাটে পড়ে থাকা ২৫ মার্চের গণহত্যার শিকার হাজারো লাশের কথা। এ কে খন্দকার ২৭ মার্চ যেমন স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের থেকে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখতে বলেছিলেন, তেমনি গোটা যুদ্ধের নয় মাস তিনিও পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে নিহত লাখ লাখ মানুষের স্তূপাকার লাশ থেকে তার চোখ দুটো সরিয়ে রেখেছিলেন।
এই বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টেলিভিশনে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারটি (ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট কর্তৃক গৃহীত, সরদার ফজলুল করিম কর্তৃক অনূদিত) পূর্ণ আকারে সংকলিত হয়েছে। বইটির পরবর্তী অংশে প্রথমেই সংকলিত হয়েছে অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের প্রবন্ধ “এ কে খন্দকারের বই সম্পর্কে কিছু কথা”। সুলিখিত এই প্রবন্ধের কিছু অংশ আবার উদ্ধৃত করছিঃ
পরিশেষে এ কে খন্দকার সাহেব সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি। তরুণ বয়সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। গভীর স্বদেশপ্রেমের দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। কিন্তু ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে তার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। আমি বলব আমাদের অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তা সম্পর্কে এ কথা বলা যায়। স্নেহভাজন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তার একটা বইয়ে পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর কাকুল মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষণের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। এ কে খন্দকার সাহেবের মতো আমাদের বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা গভীর স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছেন, অনেকে শহীদও হয়েছেন। তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে আমরা যেন কোনো কার্পণ্য না করি। খন্দকার সাহেব তার সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে যা মনে হয়েছে লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার শ্রদ্ধার অভাব ছিল। বলতে হয় অত্যন্ত সীমিত প্রেক্ষাপটে, সীমিত দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি উনিশশ' একাত্তরের জটিল পরিস্থিতিকে নিরীক্ষণ করেছেন, যার প্রকাশ তার বইয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। [ পৃষ্ঠা নং- ৪২ ]
এছাড়াও এই বইয়ে স্থান পেয়েছে আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রবন্ধ “একটি সমন্বিত চক্রান্তের অংশ”, মুনতাসীর মামুনের প্রবন্ধ “শ্রদ্ধা করার মত মানুষ কমে যাচ্ছে” (এটি পোস্টের প্রথমেই আলোচনা করা হয়েছে), ডঃ কাজী খলীকুজামান আহমদের প্রবন্ধ “১৯৭১ ভেতরে বাইরে নিয়ে তিনটি প্রশ্ন”, অধ্যাপক আবু সাইয়িদের “ইতিহাস ও সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ”, নাদীম কাদিরের “খন্দকারের নির্বোধ কল্পনা” সহ সর্বমোট ৩০টি প্রবন্ধ যাতে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আব্দুল করিম খন্দকারের বইটিকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সবগুলো প্রবন্ধ একই মানসম্পন্ন না হলেও হাতের কাছে রাখার মত ‘রেডি রেফারেন্স’ হিসেবে বইটি চমৎকার। যারা খন্দকারের বইটি পড়ে বা না পড়ে বগল বাজাচ্ছেন তাদেরকে অনায়াসে এই ক্ষুদ্র (পূর্বোল্লেখিত দুটি বইয়ের তুলনায়) বইটি ধরিয়ে দেবার মত উগ্র আচরণ ( ) করা যেতে পারে।
পাদটীকাঃ
খন্দকার সাহেবের বইয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে এই সিরিজের শুরু। এক বছরে এই ব্যাপারে কিছু পরিমাণে ছাপা বই সহজলভ্য হওয়াতে এই সিরিজের সমাপ্তি টানছি। আগ্রহী পাঠকেরা প্রয়োজনে পোস্টে উল্লিখিত বইগুলো সংগ্রহ করে হাতের কাছে রাখতে পারেন। ধারাবাহিকতার স্বার্থে পূর্বোক্ত পর্বসমূহের লিঙ্ক এখানে সংযুক্ত করা হল।
মন্তব্য
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বিজ্ঞান লেখা কই?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
উগ্রতা পরিহার করুন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রিয় সাক্ষী, তোমার এই সিরিজটা সত্য উদ্ঘাটনের পথে এক অসামান্য উপাদান হয়ে রইল।
"প্রশ্ন উঠতে পারে, ২৫ মার্চের পরেও যিনি কর্মরত ছিলেন তিনি কি করে দুই বার বর্ডার থেকে ফিরে এসে পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন। তাকে পাকিস্তানিরা সন্দেহ করেনি কেন?" - এই প্রশ্ন নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় না কেন সেই প্রশ্নটা ওঠাও দরকার বলেই মনে করি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লহমাদা, প্রশ্ন করার মত উগ্রতা আজকাল কেইবা করতে চায়?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর বইটা পড়িনি এখনো।
ডঃ মুনতাসির মামুন এর বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি মিলিয়ে পড়তে হবে পাকিস্তানি জেনারেলদের মন। মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো কেনো ম্লান হয়ে গেলো বোঝার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া, মুক্তিযুদ্ধ থেকে বেনিফিশিয়ারি হওয়া সামরিক এলিটদের মানসিকতা জানার বিকল্প নেই।
আপনার এই সিরিজটা জরুরী ছিলো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মোরশেদ ভাই,
যুগল বইয়ের প্রিকুয়েল হিসেবে 'পাকিস্তানি জেনারেলদের মন' বইটির কথা এই বইয়ের ভূমিকাতেও বলা আছে, তাই আলাদা করে আর উল্লেখ করি নি।
এই কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। (অধ্যাপক সাইয়িদের পুরো বইটি আমিও পড়ার সময় পাইনি, ঐ অধ্যায়টুকুই পড়া হয়েছে কেবল। পূর্বপাঠের অভিজ্ঞতা থেকে এনার লেখা ভালই লাগে।)
[ বিদ্রঃ এই সংক্রান্ত আরো কোনও বইয়ের কথা জানা থাকলে জানাবেন ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আগের পর্বগুলো পড়ে ফেলতে হবে
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
তার চেয়ে বরং উল্লিখিত বইগুলো পড়ে ফেলুন, সেটা বেশি কার্যকর হবে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইন্টারেস্টিং হইল খন্দকার সাহেবের আর কোন আওয়াজ নাই।
অজ্ঞাতবাস
মাস ২/১ আগে যমুনা টিভিতে একবার খোমা দেখা গেছিল বদ্দা। সেইখানে তার বক্তব্য ছিল "যাহা বলিয়াছি সত্য বলিয়াছি"। এর পরে তারে নিয়া 'বেনিফিট অব ডাউট' টুকুও নাই আমার।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রয়োজনীয় লেখা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দেবদ্যুতি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
চমৎকার একটা কালেকশন দাঁড়ালো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আরেক পর্ব আসবেঃ পূর্বাপর বনাম ভেতর বাহির
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভালো একটা সিরিজ হলো। আলোচনার সূত্র হিসাবে এই পোস্টে বার বার ফিরে আসতে হবে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কোনও কিছু বাদ পড়লে জানায়েন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সিরিজটা আবার শুরু থেকে পড়তে হবে। বইগুলোও।
স্বয়ম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কত্ত কি পড়া বাকি, কত্ত কি লেখা বাকি! কেন যে সময় আমাকে পিষে ফেলছে! এত পড়েন কি করে? সচলে না ঢুকলে আমি একটা অন্ধকূপেই পচে মরতাম।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
হ, মুইও তাই কই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সূত্র: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এর কলাম 'এই বইটির প্রকাশ কি একটি সমন্বিত চক্রান্তের অংশ (২)' লিঙ্ক: http://goo.gl/OH1tOu
প্রিয় অতিথি লেখক,
আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত "একটি সমন্বিত চক্রান্তের অংশ" পুরোটাই ওপরে উল্লিখিত "ইতিহাস বিকৃতির পাঠোদ্ধার" বইটির ৪৩ থেকে ৪৯ পৃষ্ঠায় সংকলিত হয়েছে। ভাল থাকুন।
পুনশ্চঃ অনুগ্রহ করে মন্তব্যে নাম ব্যাবহার করবেন, নামহীন আলোচনায় অস্বস্তি লাগে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’-এর মহাসচিব জনাব হারুন হাবীব এর সাক্ষাৎকার-
লিঙ্ক :- জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না
নতুন মন্তব্য করুন