কেন যামিনী না যেতে জাগালে না, বেলা হল মরি লাজে (শেষ পর্ব)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৪/০৪/২০১৫ - ১:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ ১৯৭১ ভেতরে বাইরে প্রকাশের পর থেকেই ‘প্রথম আলো’ গ্রুপের অতিপ্রচার ও সত্যবিমুখ কিছু টকশোজীবিদের হেঁড়ে গলার চিৎকারে বইটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সচলে নজরুল ভাইয়ের প্রামাণ্য প্রবন্ধটি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে পথিকৃৎ হয়ে থাকবে। তাতে কেবলমাত্র ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সংক্রান্ত আলোচনা হওয়াতে বইটির অন্যান্য অংশ নিয়ে সম্পূরক আলোচনার জন্যই এই পোস্টের অবতারণা করা হয়েছিল।

এ কে খন্দকার পদাধিকারবলে মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলেই বিবেচিত। তিনি যদি সত্যকে বদলে দেবার জন্য কুখ্যাত প্রথমা প্রকাশনের খপ্পরে পড়েন সেক্ষেত্রে তাঁর ব্যাক্তিগত অবস্থানের চাইতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহুগুণে হুমকির সম্মুখীন হয়। এই প্রেক্ষিতে বইটির যথাসম্ভব পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই চলমান নিবন্ধে সেই চেষ্টাটিই করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে আলোচিত বইটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে বিদগ্ধ লেখকদের বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং অন্তত তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই পর্বে সে সকল বইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রচেষ্টা করা হয়েছে। মন্তব্য অংশে সকল পাঠকের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ]

১। বাংলাদেশি জেনারেলদের মন

সময় প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখিত সুবিশাল এই বইটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। বইটির ভূমিকায় অধ্যাপক মামুন স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ

বাংলাদেশি জেনারেলদের মন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও বই নয়। এ বইয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে, স্বাধীন দেশে বসবাস করে, বিজয়ী হয়ে তারা কেন পরাজিত বাহিনীর দর্শন ধারণ করেন? লক্ষণীয় এখানে ২১ জন জেনারেলের মধ্যে ২০ জনই কাকুলে প্রশিক্ষিত। সুতরাং, কাকুল যে তাদের মধ্যে পাকিস্তান প্রত্যয় গেঁথে দিয়েছিল তা অস্বীকারের উপায় কি?

ভূমিকা অংশে অধ্যাপক মামুন আরও আশা করেছেন-

আমরা চাই, আমাদের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হবে। তারা বিজয়ীদের উত্তরাধকারী, বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারক-বাহক এবং সে কারণে মান্য করবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আমরা গর্ব করতে চাই আমাদের সেনাবাহিনী নিয়ে। ... ... একজন সৈনিককে আমার সহযোগী, আমার বন্ধু হিসেবে পেতে চাই, প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়। এটিই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের কামনা।

বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে এই কথাগুলির সাথে আমি সম্পুর্ণ একমত। যাই হোক, সমগ্র বইটি আপাতত এই পোস্টের আলোচনার আওতায় পড়ছে না। ২০১৫ সালে প্রকাশিত এর পরিমার্জিত সংস্করণে পরিশিষ্ট-২০ এ “শ্রদ্ধা করার মত মানুষ কমে যাচ্ছেন” শিরোনামে একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে যার আলোচ্য বিষয় “১৯৭১ ভেতরে বাইরে”। প্রবন্ধটি লেখার প্রেক্ষাপট উল্লিখিত আছে প্রথম অনুচ্ছেদেই যেখানে অধ্যাপক মামুন বলেছেন-

দেশজুড়ে এখন বিতর্ক চলছে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের বই নিয়ে যার নাম ১৯৭১ ভেতরে বাইরে। এর একটি কারণ তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের উপ চীফ-অব-স্টাফ যার স্থান ছিল কার্যত জেনারেল ওসমানীর পরেই। তাছাড়া যেসব সেনাকর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন যুদ্ধে, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। ১৯৭১ সাল থেকে প্রতিটি সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁকে নিয়ে ততটা বিতর্ক হয়নি, যতটা হয়েছে মে জে শফিউল্লাহকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ের কথা যদি ধরি, তা হলে জেনারেল শফিউল্লাহর দায় খানিকটা বেশি হলেও, অন্য সেনা কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না। পারেন না এ কে খন্দকারও, কারণ তিনি ছিলেন বিমান বাহিনীর প্রধান। কিন্তু মৃদুভাষী এ কে খন্দকার সমাজে সজ্জন হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার এমপি ও মন্ত্রী হয়েছেন। মন্ত্রী না থাকার সময় যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্দোলনের সঙ্গে জেনারেল মইনের সময় যুক্ত হয়েছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম করে। ফোরামের তিনি ছিলেন সভাপতি। সে জন্য সবার ধারণা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের নিস্পত্তিকৃত বিষয় গুলি নিয়ে তার কোনও প্রশ্ন ছিলনা। এখন দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের মৌল বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। এ কারণেই ‘প্রথমা’ প্রকাশিত ১৯৭১ ভেতরে বাইরে বইটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বইটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার এ কারণে যে, বইটি এ কে খন্দকারের লেখা যিনি মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাধ্যক্ষ ছিলেন এবং যিনি শুধু বীরোত্তম নন স্বাধীনতা পদকও পেয়েছেন। তাঁর তত্ত্ব সব মেনে নিলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে, যা আমরা হতে দিতে পারিনা। [ পৃষ্ঠা নং- ৬৮৪/৬৮৫ ]

অধ্যাপক মামুন আরও লিখেছেন-

আমার সবচেয়ে অবাক লেগেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বা এর পটভূমি সংক্রান্ত সাধারণ তথ্যও তাঁর জানা নেই দেখে। এ জন্য বলি, ইতিহাস তো শুধু বর্তমান বা নতুন প্রজন্মের জন্যই নয়, পুরনো প্রজন্মের বিশেষভাবে সেনা কর্মকর্তাদের জানা উচিৎ। অনেকে ক্রুদ্ধ হয়ে বলছেন তাকে এমপি করা হয়নি বা মন্ত্রী করা হয়নি দেখে তিনি ক্রুদ্ধ। এটি বোধ হয় ঠিক নয়। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি অসুস্থ, এবং খুব সম্ভব এমপি নমিনেশনও চাননি। খন্দকার ভক্ত অনেকে এত বিপর্যস্ত যে, তারা বলছেন বইটি তাঁর লেখা নয়। অন্য কারও লেখা এবং একটি ষড়যন্ত্রের গন্ধ তাঁরা পাচ্ছেন। সবকিছু মেনে নিলেও বলতে হবে বইটি এ কে খন্দকারের লেখা এবং দায় দায়িত্ব তাঁর। ইতোমধ্যে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সেটিতে সজ্ঞানে তিনি সংশোধন করে বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন এবং এতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকেও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়েছেন। [ পৃষ্ঠা নং- ৬৮৫ ]

যারা বিভিন্ন ভাবে খন্দকারের এপোলজিস্ট হিসেবে ডেভিল'স এডভোকেসি করেছেন তাঁরা এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। অধ্যাপক মামুন একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে “কাকুল সেনা একাডেমী” থেকে প্রশিক্ষন লাভের সঙ্গে “পাকিস্তানি” মানসিকতা ধারণের একটি যোগসূত্র দেখাতে চেয়েছেন। এবং এর মূল উপাদান তিনি গ্রহন করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সেনা কর্মকর্তার লেখা বই ও সাক্ষাৎকার থেকে। আগ্রহী পাঠক বইটি পড়লে চিন্তার নতুন খোরাক পাবেন বলেই আশা করা যায়।

২। মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি

সূচীপত্র প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ লিখিত বইটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। বইটির ভূমিকায় অধ্যাপক সাইয়িদ বলেছেনঃ

লক্ষ করছি সাম্প্রতিককালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশে ও বিদেশে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অনেক গ্রন্থের রচয়িতা যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সামরিক ও বেসামরিকভাবে যুক্ত ছিলেন তারা তাদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ পুস্তক ও আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থগুলো কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। অনেক সময় মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন লেখক ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। হতে পারে তা পরস্পরবিরোধী তথ্য ও চিন্তাধারা। এ ধরণের বিতর্কমূলক লেখার মাধ্যমে অনেকসময় সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। কখনও বা সত্য আড়াল করে ইতিহাসের প্রবহমানতাকে বিভ্রান্তির আবর্তে নিয়ে যায়। এই সামগ্রিক অবস্থাকে সামনে রেখে “মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি” বইটি লিখিত। প্রকাশিত-অপ্রকাশিত তথ্য ও সততা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়“মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি” বইটি।

এই বইটিরও পূর্ণ অংশ আপাতত এই পোস্টের আলোচনার আওতায় পড়ছে না। এতে “বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব” শীর্ষক পঞ্চদশ অধ্যায়ে একটি আলোচনা যুক্ত হয়েছে যার আলোচ্য বিষয় “১৯৭১ ভেতরে বাইরে”। শুরুতেই অধ্যাপক সাইয়িদ বলেছেন-

পঞ্চদশ অধ্যায়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপ্রধান এ কে খন্দকার লিখিত বইয়ে জাতির সামনে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ব্যাখ্য প্রদান করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত জবাব দেবার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি বইটির সকল অধ্যায় পর্যালোচনা করলে সচেতন পাঠকমাত্রই দেখতে পাবেন যে রাজনীতিবিদদের কারনেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হয়েছে। তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা অবদানকে অবমূল্যায়ন করে কিংবা ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে অল্প ক্ষয়ক্ষতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হত এই ধরণের মন্তব্য বইটিকে অর্বাচীন বিতর্কের ভেতরে ঠেলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ২৫ মার্চের পরেও যিনি কর্মরত ছিলেন তিনি কি করে দুই বার বর্ডার থেকে ফিরে এসে পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন। তাকে পাকিস্তানিরা সন্দেহ করেনি কেন? [ পৃষ্ঠা নং- ২৬৮ ]

সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ অধ্যাপক সাইয়িদ মুক্তিযুদ্ধে সাত নং সেক্টরের উপদেষ্টা ও ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন। তিনি গণপরিষদে বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান প্রনয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য। ‘শুধুমাত্র’ সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পূননির্মানের চেষ্টা করেছেন খন্দকার। দুই দশকের প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনযুদ্ধ একেবারেরই অস্বীকার করে গেছেন তিনি। তাই, তাঁর আড়াল করে রাখা চিত্রটি জানার জন্য একাডেমিক বিশ্লেষণেরর পাশাপাশি তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের অবস্থানটিও জানা জরুরী। এই প্রেক্ষিতে এই বইটি গুরুত্বের সাথে পঠিত হবার দাবি রাখে।

৩। ইতিহাস বিকৃতির পাঠোদ্ধার

একাত্তর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই সংকলন গ্রন্থটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। প্রয়াত অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমদকে উৎসর্গীকৃত বইটিতে সম্পাদক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছে রুদ্র সাইফুল এবং চিন্ময় দাসের। বইটির ভূমিকায় বলা হয়-

এ কে খন্দকারের পুরো বই ঘেঁটে বাঙ্গালীদের প্রতি তার সহমর্মিতার কথা কোথাও পাওয়া যায়না। বিহারীদের হাতে সারা বাংলাদেশে যে হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি নিহত হল মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে, সে খবর খন্দকার পাননি। এক্ষেত্রে কেবল আওয়ামি লীগকে দোষারোপ করলে চলবে না কেননা তখন তো তিনি কলকাতায় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝখানেই বসবাস করছিলেন। থিয়েটার রোডে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের পাশের ঘরেই তিনি থাকতেন। এছাড়া, রক্তপিপাসু পাকিস্তানি হায়েনাদের নয় মাসব্যাপী নারকীয় হত্যাকাণ্ডের উল্লেখও তার বইতে নেই। আছে কেবল ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল করা হলে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের বিমানবাহিনীর গাড়িতে করে আজিমপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যাওয়ার সময় পথেঘাটে পড়ে থাকা ২৫ মার্চের গণহত্যার শিকার হাজারো লাশের কথা। এ কে খন্দকার ২৭ মার্চ যেমন স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের থেকে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখতে বলেছিলেন, তেমনি গোটা যুদ্ধের নয় মাস তিনিও পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে নিহত লাখ লাখ মানুষের স্তূপাকার লাশ থেকে তার চোখ দুটো সরিয়ে রেখেছিলেন।

এই বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টেলিভিশনে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারটি (ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট কর্তৃক গৃহীত, সরদার ফজলুল করিম কর্তৃক অনূদিত) পূর্ণ আকারে সংকলিত হয়েছে। বইটির পরবর্তী অংশে প্রথমেই সংকলিত হয়েছে অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের প্রবন্ধ “এ কে খন্দকারের বই সম্পর্কে কিছু কথা”। সুলিখিত এই প্রবন্ধের কিছু অংশ আবার উদ্ধৃত করছিঃ

পরিশেষে এ কে খন্দকার সাহেব সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি। তরুণ বয়সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। গভীর স্বদেশপ্রেমের দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। কিন্তু ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে তার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। আমি বলব আমাদের অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তা সম্পর্কে এ কথা বলা যায়। স্নেহভাজন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তার একটা বইয়ে পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর কাকুল মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষণের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। এ কে খন্দকার সাহেবের মতো আমাদের বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা গভীর স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছেন, অনেকে শহীদও হয়েছেন। তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে আমরা যেন কোনো কার্পণ্য না করি। খন্দকার সাহেব তার সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে যা মনে হয়েছে লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার শ্রদ্ধার অভাব ছিল। বলতে হয় অত্যন্ত সীমিত প্রেক্ষাপটে, সীমিত দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি উনিশশ' একাত্তরের জটিল পরিস্থিতিকে নিরীক্ষণ করেছেন, যার প্রকাশ তার বইয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। [ পৃষ্ঠা নং- ৪২ ]

এছাড়াও এই বইয়ে স্থান পেয়েছে আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রবন্ধ “একটি সমন্বিত চক্রান্তের অংশ”, মুনতাসীর মামুনের প্রবন্ধ “শ্রদ্ধা করার মত মানুষ কমে যাচ্ছে” (এটি পোস্টের প্রথমেই আলোচনা করা হয়েছে), ডঃ কাজী খলীকুজামান আহমদের প্রবন্ধ “১৯৭১ ভেতরে বাইরে নিয়ে তিনটি প্রশ্ন”, অধ্যাপক আবু সাইয়িদের “ইতিহাস ও সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ”, নাদীম কাদিরের “খন্দকারের নির্বোধ কল্পনা” সহ সর্বমোট ৩০টি প্রবন্ধ যাতে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আব্দুল করিম খন্দকারের বইটিকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সবগুলো প্রবন্ধ একই মানসম্পন্ন না হলেও হাতের কাছে রাখার মত ‘রেডি রেফারেন্স’ হিসেবে বইটি চমৎকার। যারা খন্দকারের বইটি পড়ে বা না পড়ে বগল বাজাচ্ছেন তাদেরকে অনায়াসে এই ক্ষুদ্র (পূর্বোল্লেখিত দুটি বইয়ের তুলনায়) বইটি ধরিয়ে দেবার মত উগ্র আচরণ ( চোখ টিপি ) করা যেতে পারে।

পাদটীকাঃ
খন্দকার সাহেবের বইয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে এই সিরিজের শুরু। এক বছরে এই ব্যাপারে কিছু পরিমাণে ছাপা বই সহজলভ্য হওয়াতে এই সিরিজের সমাপ্তি টানছি। আগ্রহী পাঠকেরা প্রয়োজনে পোস্টে উল্লিখিত বইগুলো সংগ্রহ করে হাতের কাছে রাখতে পারেন। ধারাবাহিকতার স্বার্থে পূর্বোক্ত পর্বসমূহের লিঙ্ক এখানে সংযুক্ত করা হল।

খন্দকারের ভেতর-বাহির (অমনিবাস)


মন্তব্য

ইয়ামেন এর ছবি

হাততালি

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাইদ এর ছবি

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক

বিজ্ঞান লেখা কই?

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

উগ্রতা পরিহার করুন চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

প্রিয় সাক্ষী, তোমার এই সিরিজটা সত্য উদ্ঘাটনের পথে এক অসামান্য উপাদান হয়ে রইল।

"প্রশ্ন উঠতে পারে, ২৫ মার্চের পরেও যিনি কর্মরত ছিলেন তিনি কি করে দুই বার বর্ডার থেকে ফিরে এসে পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন। তাকে পাকিস্তানিরা সন্দেহ করেনি কেন?" - এই প্রশ্ন নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় না কেন সেই প্রশ্নটা ওঠাও দরকার বলেই মনে করি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

লহমাদা, প্রশ্ন করার মত উগ্রতা আজকাল কেইবা করতে চায়?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর বইটা পড়িনি এখনো।
ডঃ মুনতাসির মামুন এর বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি মিলিয়ে পড়তে হবে পাকিস্তানি জেনারেলদের মন। মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো কেনো ম্লান হয়ে গেলো বোঝার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া, মুক্তিযুদ্ধ থেকে বেনিফিশিয়ারি হওয়া সামরিক এলিটদের মানসিকতা জানার বিকল্প নেই।

আপনার এই সিরিজটা জরুরী ছিলো।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মোরশেদ ভাই,
যুগল বইয়ের প্রিকুয়েল হিসেবে 'পাকিস্তানি জেনারেলদের মন' বইটির কথা এই বইয়ের ভূমিকাতেও বলা আছে, তাই আলাদা করে আর উল্লেখ করি নি।

মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো কেনো ম্লান হয়ে গেলো বোঝার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া, মুক্তিযুদ্ধ থেকে বেনিফিশিয়ারি হওয়া সামরিক এলিটদের মানসিকতা জানার বিকল্প নেই।

এই কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। (অধ্যাপক সাইয়িদের পুরো বইটি আমিও পড়ার সময় পাইনি, ঐ অধ্যায়টুকুই পড়া হয়েছে কেবল। পূর্বপাঠের অভিজ্ঞতা থেকে এনার লেখা ভালই লাগে।)

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

[ বিদ্রঃ এই সংক্রান্ত আরো কোনও বইয়ের কথা জানা থাকলে জানাবেন ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

চলুক

আগের পর্বগুলো পড়ে ফেলতে হবে

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তার চেয়ে বরং উল্লিখিত বইগুলো পড়ে ফেলুন, সেটা বেশি কার্যকর হবে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইন্টারেস্টিং হইল খন্দকার সাহেবের আর কোন আওয়াজ নাই।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মাস ২/১ আগে যমুনা টিভিতে একবার খোমা দেখা গেছিল বদ্দা। সেইখানে তার বক্তব্য ছিল "যাহা বলিয়াছি সত্য বলিয়াছি"। এর পরে তারে নিয়া 'বেনিফিট অব ডাউট' টুকুও নাই আমার। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

স্যাম এর ছবি

চলুক

তাহসিন রেজা এর ছবি

প্রয়োজনীয় লেখা।
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক হাসি

দেবদ্যুতি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসিব এর ছবি

চমৎকার একটা কালেকশন দাঁড়ালো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আরেক পর্ব আসবেঃ পূর্বাপর বনাম ভেতর বাহির শয়তানী হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভালো একটা সিরিজ হলো। আলোচনার সূত্র হিসাবে এই পোস্টে বার বার ফিরে আসতে হবে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কোনও কিছু বাদ পড়লে জানায়েন।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

সিরিজটা আবার শুরু থেকে পড়তে হবে। বইগুলোও।

স্বয়ম

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

কত্ত কি পড়া বাকি, কত্ত কি লেখা বাকি! কেন যে সময় আমাকে পিষে ফেলছে! এত পড়েন কি করে? সচলে না ঢুকলে আমি একটা অন্ধকূপেই পচে মরতাম।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সচলে না ঢুকলে আমি একটা অন্ধকূপেই পচে মরতাম।

হ, মুইও তাই কই হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বইটি পড়ে এখন এয়ার ভাইস মার্শালের (অব) চরিত্রটি বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এবং পরেও তিনি ‘দোদিল বান্দা’ ছিলেন। প্রয়াত রুহুল কুদ্দুস সাহেব বলেছেন, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় রমনা রেসকোর্সের মাঠে যৌথ কমান্ডের নেতা জেনারেল অরোরার কাছে হানাদারদের নেতা জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের সময়ের কথা। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন এ কে খন্দকার। কিন্তু তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। কলকাতা থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার প্রস্তুত। তাজউদ্দীন সাহেব রুহুল কুদ্দুসকে পাঠালেন খন্দকারকে খুঁজতে।
রুহুল কুদ্দুস তাঁর বাসায় গিয়ে দেখেন, তিনি তখনও সেখানে। ঢাকায় যেতে গড়িমসি করছেন। রুহুল কুদ্দুস তাঁকে তাড়া দিতেই খন্দকার বললেন, তিনি তো এখনও পোশাকটোশাকও পরেননি। রুহুল কুদ্দুস বললেন, দরকার নেই পোশাক পরার। দেরি করলে রমনার মাঠে ঠিক সময় পৌঁছতে পারবেন না। রুহুল কুদ্দুসই তাঁকে টেনেহিঁচড়ে হেলিকপ্টারে তুলে দেন। ঢাকা যাত্রার জন্য তখন হেলিকপ্টারের পাখা ঘুরছে।

সূত্র: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এর কলাম 'এই বইটির প্রকাশ কি একটি সমন্বিত চক্রান্তের অংশ (২)' লিঙ্ক: http://goo.gl/OH1tOu

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

প্রিয় অতিথি লেখক,
আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত "একটি সমন্বিত চক্রান্তের অংশ" পুরোটাই ওপরে উল্লিখিত "ইতিহাস বিকৃতির পাঠোদ্ধার" বইটির ৪৩ থেকে ৪৯ পৃষ্ঠায় সংকলিত হয়েছে। ভাল থাকুন। হাসি

পুনশ্চঃ অনুগ্রহ করে মন্তব্যে নাম ব্যাবহার করবেন, নামহীন আলোচনায় অস্বস্তি লাগে। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’-এর মহাসচিব জনাব হারুন হাবীব এর সাক্ষাৎকার-

৭ মার্চের ভাষণের সময় আপনি কি রেসকোর্স ময়দানে ছিলেন?

অবশ্যই। সেদিন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি দল মঞ্চের কাছাকাছি ছিলাম। ‘জয়বাংলা বাহিনী’ মঞ্চের চারদিক ঘেরাও করেছিল। ৭ মার্চ সকাল থেকে আমরা বসে আছি রমনা রেস কোর্সে। বলা হয়, দশ লাখ লোকের জমায়েত হয়েছিল। আমি যতটা দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাটা পুরো ভরে গেছে; রেসকোর্স পুরোটা ঠাসাঠাসি, শাহবাগ, প্রেসক্লাস, কার্জন হলের রাস্তা ভরা। লোকসমাগম ১০ লাখেরও বেশি হবে। বঙ্গবন্ধু এলেন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে। তার চেহারা ছিল বিমর্ষ, দেখে ক্ষুব্ধ মনে হচ্ছিল। উনি এসেই তার বক্তব্য শুরু করলেন।

মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার (অব.) তার লেখা ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ বইটিতে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ শেষে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন। আপনি সেদিন রেসকোর্সে ছিলেন। আসলেই কি বঙ্গবন্ধু তাই বলেছিলেন?

এ কে খন্দকারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। কিন্তু তার এই বক্তব্যের ইতিহাস সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আমি বাধ্য। ৭ মার্চ আমি রমনা রেসকোর্সের ঐতিহাসিক মঞ্চের কাছে ছিলাম। ওইদিন কম করে হলেও রেসকোর্স থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, কার্জন হল এবং প্রেসক্লাব এলাকায় সব মিলিয়ে ১০ লাখ লোক সমাগম হয়েছিল। অবাক করার মতো ব্যাপার যে, তারা কেউ যা শুনলেন না, শুনলেন কেবল জনাব এ. কে. খন্দকার, যিনি তখনও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন অফিসার! এই ধরনের দাবি ইতিহাসের ভয়ংকর অপলাপ, এর সঙ্গে ইতিহাস সততার বিন্দুমাত্র মিল নেই।

মনে আছে, পরের দিন রেডিওতে প্রচার হওয়া ভাষণের কথাও। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানুষ শুনেছে। আমার বিশ্বাস, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এ রকম একটি চরম বিভ্রান্তিকর দাবি তুলে খন্দকার সাহেব গণমানুষের ‘কালেকটিভ মেমোরি’ বা সম্মিলিত স্মৃতিতে আঘাত করেছেন। এ রকম উদ্ভট কথা কেন ছাপা হলো, কী বিবেচনায় ছাপা হলো, তা বইটির প্রকাশকই ভালো বলতে পারবেন।

৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে তা জনাব এ কে খন্দকার বিশ্বাস করেন না। এটা বলে তিনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন? কিছু কিছু ব্যক্তিগত মত এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু এ কে খন্দকার তো কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন। কাজেই বিষয়টি আমাকে ভাবায়। বইটি এমন এক সময় প্রকাশ পেয়েছে যখন দেশে এবং বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চলছে।

বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিলেও তো ভাষণটি আছে...

আমার নিজের স্মৃতি থেকে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণের পুরোটাই বাঙালিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের ধারাবাহিক নির্যাতন-শোষণের বর্ণনা ছিল; ছিল জাতির কাছে আসন্ন যুদ্ধের ইঙ্গিতসম্পন্ন নেতার চূড়ান্ত নির্দেশনা। ‘দ্য স্পিচ দ্যাট ইনস্পায়ার্ড হিসট্রি’ নামে একটি বই হাতে এসেছে আমার সম্প্রতি লন্ডন থেকে। একেবারে আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া বক্তৃতা তুলে ধরা হয়েছে ওতে, যেসব বক্তৃতা ইতিহাস তৈরি করেছে। ওতেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি স্থান পেয়েছে। বলা হয়েছে, ভাষণটি কী করে একটি জাতির স্বাধীনতার জন্ম দিল। আমার আক্ষেপ হচ্ছে, জাতির মৌল ইতিহাস বিকৃত করার মাঝে কোনো কৃতিত্ব থাকতে পারে না। এতে জাতি প্রতারিত হয়।

এ কে খন্দকার তার বইয়ে এও বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এটা কতটুকু সত্য?

আবারও বলি, তিনি আমার খুবই পরিচিতজন। তবু একটি প্রশ্ন করতে চাই। তিনি তো মুজিবনগর সরকার কর্তৃক নিয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি। মুজিবনগর সরকার হয়েছিল ১০ এপ্রিল। শপথ হয় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১। সেদিনই স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রটি পাঠ করা হয়, যাতে প্রথম ছত্রেই বলা আছে, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার পর আমরা এই সরকার গঠন করছি। সেখানে নতুন করে ৪৩ বছর পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি এ ধরনের কথা বলার কী যৌক্তিকতা আছে, আমার বোধগম্য নয়। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, ২৬ মার্চ একটি ‘ক্ল্যানডেনস্টাইন রেডিওতে’ শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। সারা বিশ্বের পত্রপত্রিকায়, এমনকি পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় একই কথা বলেছে। ভারতের পত্রপত্রিকায় বলা হয়, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধারাও বেশির ভাগ জীবিত। তারা সবাই জানেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সারা দেশে সে ঘোষণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই আজ এত বছর পর কেন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তোলা হলো জানিনা।

লিঙ্ক :- জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।