ফেব্রুয়ারি মাসটা কোনভাবেই উৎসবের নয়, ইতিহাসের শুরু থেকে কোনকালে ছিলও না। ১৯৫২ থেকে শুরু করে ২০০৪, কিংবা ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৩, সবশেষে ২০১৫, সবগুলো ফেব্রুয়ারিই ছিল হারানোর। তার মাঝে সবে ধন নীলমনি বইমেলাটা ছিল। সেটাই আজ অনেক বড় একটা হাহাকারের নাম। কেউ কি ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শুনেছেন? মাহমুদুজ্জামান বাবু’র চ্যাপ্টামতন গানটা না, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া মূল গানটা? সেখানে ‘করি বাংলায় হাহাকার’ অংশটা শোনার সময় মনে হয়, আসলেই বুঝি হাহাকারে গায়কের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। বইমেলা গেলে কেন যেন ইদানীং ওই অংশের মতন বুকচেরা এমন একটা হাহাকার বেরিয়ে আসে। আমরা কি এই বইমেলা চেয়েছিলাম? অবশ্য, একুশের রাতে যে পরিমাণ ‘হিন্দি গান সহকারে প্রভাতফেরি’ হচ্ছে, তাতে বইমেলার আর কিইবা দোষ।
এবার আমার একটুখানি শহরটাতে আবার গেছিলাম, বইমেলা দেখতে। সাথে প্রতিরাতে মঞ্চনাটক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুফতে। এবারের নাটক জমছে না। কে জানে, আমিই হয়তো ভুল দিনে যাচ্ছি। মাসুম রেজার একটা নাটক মঞ্চস্থ হল সেদিন। নাম মনে নাই। নাটকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটা শুনে পিত্তি জ্বলে গেল। জী, ঠিকই দেখছেন। ‘জয় বাংলা’ একটা মৃদু অথচ সুগভীর স্লোগান। বিন্দুর মাঝে সিন্ধু। এই ভাবগম্ভীর স্লোগানটা যখন পুঁথিপড়ার মতন সুর করে ‘জ্যঅঅঅঅওওওওইয়ে বাআআওংলাআআআ’ এইরকম অননুকরণীয় একটা বিজাতীয় উচ্চারণে উপস্থাপন করা হয়, তখন বুকে ধাক্কা লাগে। এরা জীবনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটা শুনেছে? মুক্তাঞ্চলে খালেদ মোশারফেরটা না শুনুক, মুজিবনগরে তাজউদ্দীন-সৈয়দ নজরুলেরটা না শুনুক, নিদেনপক্ষে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুরটা? ভাগ্যিস, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের কোনও অনুভূতি নাই, এমন অশালীন স্বরে জাতির জন্মডাকটা দিলে কারও ‘উসকানি’ লাগে না!
প্রিয় মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্য প্রায় ৩ দিন অপেক্ষা করে ফেললাম। এখন পর্যন্ত তিনি কোনও মাধ্যমে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। অসংখ্য প্রইচিত-অপরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষীদের তড়িৎ-ডাক মারফত, ব্যাপারটা ‘না জানা’ এখন তার পক্ষে অসম্ভব। তিনি মানী লোক, তাঁর মানহানি অবশ্যই কাম্য নয়। তাঁর মতানুসারে, তাঁর অনেক বইকেও আমার এখন বেশ অশালীন (যেহেতু ব্যাপারটা আপেক্ষিক) মনে হতেই পারে। সে বইগুলো মানুষকে পড়তে মানা করব ভাবছি। যেমন, জলমানব পড়ে আমার ‘ইকথিয়ান্ডারানুভূতি’ প্রবলভাবে আঘাত পেয়েছে। যাঁরা আলক্সান্দর বেলায়েভের মূল বইটি পড়েছেন, তাঁদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, তাঁরা যেন জলমানব বইটি না পড়েন। পড়লে গা শিউরে উঠতে পারে। বইটির শুরুতে একটা দূর্বল ‘আত্মপক্ষ সমর্থন’ থাকলেও, তা ইকথিয়ান্ডারানুভূতিকে আহত না করার মত যথেষ্ট নয়। ও হ্যাঁ, নিজামীবিহীন মতিউর রহমানের কুখ্যাত ‘প্রথমা’ থেকে এবার গণহারে অবঃজেনারেলদের স্মৃতিকথা প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই। বইগুলো অধিকাংশই মহান মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ। এ পর্যন্তও কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা অন্যখানে। আগ্রহী হয়ে দুটো বই হাতে নিয়েছিলাম। দুটো বইয়েরই প্রথমা কর্তৃক দাবিকৃত লেখক ‘প্রয়াত’। এসব স্মৃতির সপক্ষে ‘বদলপ্রয়াসী’ এবং ‘বদরবান্ধব’ মতিপ্রকাশকের কি প্রমাণ আছে? কেউ জানেন? খন্দকার সাহেবের মত এনাদের সম্মানের বিস্কুট নিয়েও যদি টানাটানি পড়ে, ক্ষতিপূরণটা কে দেবে? বার্সেলোনার জার্সি পড়া বাবুকাকা?
১। গতবারেই এর প্রথম পর্ব কিনে ফেলেছিলাম, দ্বিতীয় পর্বেও দেরি করিনি। এবার ঢাকাকমিক্স থেকে বেশ কিছু মানসম্মত বাংলা কমিক্স দেখলাম, ওগুলোও কিনে ফেলতে হবে। (হায় ঝাকানাকা!)
২। শিশু একাডেমি’র এই জীবনী গ্রন্থমালাটা দারুণ। বহুদিন বাজারে অনুপস্থিত থাকা কিছু বই প্রথম সুযোগেই কিনে ফেললাম। ভাগ্নে-ভাগ্নীর জন্যই কিনব ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদের মামাটাই এখনও বড় হয়ে ওঠেনি কিনা! কাঙাল হরিনাথ বাদে নতুন প্রচ্ছদগুলো ভাল লাগে নি। এই গ্রন্থমালায় হাশেম খানের প্রচ্ছদগুলোই(যেমন, এখানে মুকুন্দ দাসের প্রচ্ছদ) সবচেয়ে ভাল ছিল।
৩। জাতীয় জাদুঘরের এই প্রকাশনাগুলো ভাল লাগল। ছাপার মান আরও ভাল হবে আশা করি।
৪। মুক্তিযুদ্ধ একটা ‘উসকানিমূলক’ ঘটনা বৈকি। আর রাজাকারের ছড়া তো বহুত মানী রাজাকারের বিরুদ্ধে অসভ্যতা করতে উসকানি দিয়ে চলে নিরন্তর। ‘দলিলপত্র’ ব্যাপারটাও বেশ উসকানিমূলক, মিথ্যা প্রচারণার মানহানি করে ছাড়ে। ডানের বইটাতে লেখকের সাথে ভাষ্য মিলছে না দেখে কৌতূহলী হয়ে কিনে ফেললাম, সময় করে পড়ে দেখব।
৫। একেবারে আসিফ নজরুল কিংবা তুহিন মালিকের টক-শো’র মতন সামঞ্জস্যবিহীন।
৬। এইবারে কিছু হালাল বই। মানবজাতির ইতিহাস ইজ ঠুউউ মেইনস্ট্রিম, ইউ নো। নোয়াহ হারিরি জীবনে বাঁয়ের বইটার মতন একটা বই লিখে দেখাতে পারবে? নাছতেক মিডিয়া হুদাই এই লোকটারে মাথায় তোলে। মাঝের বইটা বেশ ইন্টারেস্টিং, এই প্রকাশনীর কোনও বইতেই মূল্য ছাপা নেই। যত ইচ্ছা তত দাম রাখা যেতে পারে, একেবারে সূদবিহীন সামাজিক প্রকাশনা যাকে বলে! ডানেরটা নিয়ে রায়হান, স্বপ্নাহত কিংবা বিডিয়ারের মতন ‘জৈবপদার্থবিদের’ দৃষ্টি আকর্ষন করছি। ইহার মূল্যবান তথ্য মোতাবেক গবেষণায় আপনাদের অশেষ ফায়দাহ হবে।
০৯ ফাল্গুন, ১৪২২
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
কোনও এক বাংলাদেশ
মন্তব্য
প্রথমার বইগুলোর প্রতি আমার এলার্জি আছে কিন্ত ব্যাপার হচ্ছে বিষয়বস্তুর কারণে এড়াতে পারিনা। এই কয়েকদিন আগেই নীলুফার হুদার "কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ" কিনলাম। '৭৫ নিয়ে একটু জানার জন্য। আমি কয়েকদিন ধরে চিন্তা করছিলাম খলিলুর রহমান '৭৫ নিয়ে কেন লিখছেন না। দেখলাম প্রথমায় চলে এসেছে এবার। তেমনিভাবে হান্নান শাহ (ইনি রংপুরে নিজের প্লাটুন নিয়ে বঙ্গবন্ধু খুনের পক্ষে মিছিল করেছিলেন। রেফারেন্স: নীলুফার হুদার বই) বা ৪৬ ব্রিগেডে থাকা (বিগ্রেডিয়ার ছিলেন মনে হয় ঐ সময়) হাফিজের কাছ থেকেও বই আশা করি। সম্ভবত প্রথমা থেকেই আসবে। আমার ধারণা কি, সম্ভবত প্রথমা ধরে ধরে সংশ্লিষ্টদের কাছে যাচ্ছে আর বই লিখতে বলছে। বই বের হলে সমস্যা দেখিনা। ভুল থাকলে কেউ না কেউ তো তা ধরতে পারবেন।
ইয়ে শিরোনামে বাংলা কী?
- ইমতিয়াজ।
আমিও বহুদিন খলিলুর রহমানের বইয়ের আশায় ছিলাম। মুশকিলটা হল, তিনি প্রয়াত। প্রতিবাদ করবেন কে? খলিলুরের ঘাড়ে বন্দুক রেখেই কিন্তু মতি মিয়া পয়সা কামাবে। দুর্নাম হলে হবে খলিলুরের। প্রথমা-য় আমারও এলার্জি আছে।
গু-ট্রান্সলেটর ব্যাবহার করুন, উসকানিমূলক প্রশ্ন না করে লাইনে আসুন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগে আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী আমাদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমার মাস্টার্স থিসিসেরও সুপারভাইজার ছিলেন! যাই হোক, তার এই বইয়ের পুরো নাম হওয়া উচিৎ ছিল "মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি, অথবা আমি কিন্তু রাজাকার ছিলাম না!" ২০০০ সালে এই বই যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন বাজারে গুজব ছিল যে আচৌ নাকি তলে তলে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার মতলব করছিলেন; সেই রাস্তা পরিষ্কার করার জন্যই এই বইটা লেখেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতলে তার দলবদল হয়ত ঠেকান যেত না!
তারিক আলীর "ইসলাম কুইনটেট" নিয়ে আপনার মত জানতে আগ্রহী। পশ্চিমা ইসলামভীতিকে কাউনটার দিতে যেয়ে তিনি এই বইগুলিতে ইসলামকে (আমার মতে) আনরিয়ালিসটিকালি লিবারেল বানিয়ে ফেলেছেন। প্রথম বইটা (ডালিম গাছের ছায়া) নাকি (তারিক আলীর নিজের ভাষ্য অনুযায়ী) এডওয়ার্ড সায়িদের অনুমোদন পেয়েছিল!
হুমম... এই দোনোমনা'র কাহিনী জানা ছিল না।
পড়িনি ভাই, পড়ে জানাব (জানানোর মত হলে)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠেই গানটা এখনও আবার শুনছি পুঁচকে ভাজতিসহ
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
পুলাপাইনেরে বাচ্চা পাইয়া উসকানি দেওন ভালা না!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নামকরণ দেইখাতো পুরাই ঘাবড়ায় গেছি। আপনি তো সব বই কিনে ফেললেন! মাঝে মাঝে হতাশার কথা বলেন, ভাল লাগে না।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
গতবার বইমেলার পোস্টে আনন্দ-উচ্ছাস বেশি হয়ে গেছে, এখন ব্যালান্স করি!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনার লেখার সাথে সাথেই বইমেলায় ঘুরি, বই দেখি। আপনার এই পোষ্ট গুলোর সব গুলোই পড়ছি।
সোহেল ইমাম
আপনার রিক্সাচিত্রের জন্যও কিন্তু অপেক্ষায় থাকি!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শিশু একাডেমি কিন্তু বেশ ভালো ভালো কিছু শিশুতোষ বই প্রকাশ করেছিল সত্তর আশির দশকে। খালেদা এদিব চৌধুরী, হুমায়ুন আজাদ, ইমদাদুল হক মিলনের বেশ কযেকটি বই বার হয়েছিলো এই শিশু একাডেমি থেকেই। কিন্তু এখন কি আর তেমন একটা ভালো বই আসে সেখান থেকে? ২০১৪ সালের মেলায় গিয়ে দেখি শিশু একাডেমির স্টলটিতে তেমন লোক সমাগম নেই বললেই চলে. আমি অবশ্য কযেকটি বই কিনেছিলাম শুধু নিজের জন্যেই (হাশেম খানের প্রচ্ছদ আর অলংকরণের লোভে)
গুডরিডস
শিশু একাডেমি এবার বহুদিনের মুদ্রণ-বহির্ভুত বইগুলো পুনমুদ্রণ করেছে এবং চমৎকার কিছু নতুন বই এনেছে। ভাগ্নে-ভাগ্নীদের জন্য কিনতে গিয়ে আমিই একগাদা কিনে ফেলেছি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মানিব্যাগ পুরাই ফতুর হইবার লাইগছে।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
হ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
'প্রেত' পড়ে মোহিত হয়েছিলাম, 'দানব' পড়ে আহত। ঐরকম কাহিনি নাকি, নূতন বোতলে পুরোনো মদ?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
১।
আমার কাছে দানবই বেশি ভাল লেগেছে, কেন কে জানে? দুটো পড়েছিলাম একসাথে।
২।
নিজের বোতলে নিজের মদ ঢাললে তো আহত হতাম না। উনি অন্যের মদ ঢেলেছেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দুঃখিত, তিথীডোর।
অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বইটার নাম 'সেরিনা' হবে, 'জলমানব' নয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন